মন_পাজড়ে_শুধু_তুমি_আছো?,পর্ব_১৩,১৪

0
1378

মন_পাজড়ে_শুধু_তুমি_আছো?,পর্ব_১৩,১৪
লেখিকা_মাইসারাহ_আরোহি?
পর্ব_১৩

আয়ানা হাঁটুর মাঝে মুখ গুঁজে বসে আছে এমন সময় অর্থি কাঁদতে কাঁদতে এসে বললো,
— “আয়ানা ভাইয়ের শোল্ডার ডিসলোকেটেড হয়েছে আর পায়েও আঘাত লেগেছে।ডক্টর বলেছে খুব দ্রুত সার্জারি করতে হবে।”
কথাটা শোনার সাথে সাথে আয়ানার মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো।আয়ানা নিজেকে কোনোমতে সামলে নিয়ে অর্থি কে জিজ্ঞেস করলো,
— “কি বলছো কি আপু? উনি এখন কোথায়? উনার সাথে কি তোমার কথা হয়েছে?”
— “না ভাই এখন রেস্টে রয়েছে ওকে ব্যথার ইনজেকশন দেয়া হয়েছে।আমি ওর টিমমেট রুদ্রর সাথে কথা বললাম। ওখানকার ডক্টর স্ক্যান রিপোর্ট দেখে সার্জারির কথাই বলেছেন।আর বলেছেন যে সার্জারি করার পরেও ওর কাঁধ ঠিক হবে কি না সেটা সিওর নয় আর যদিও হয় তবুও প্রায় ছয় থেকে সাত মাস সময় লাগবে।তবে পায়ের আঘাতটা কম ওটা একমাসের মধ্যেই রিকোভার হয়ে যাবে।” (অর্থি)
— “কিন্তু ওখানে তো কেউ নেই ওনাকে কে দেখবে? আর সার্জারি যদিও করে তাহলে তোমরা তো এখানে।” (আয়ানা)
— “রুদ্র বললো ভাই কালকেই ব্যাক করবে আর সার্জারিটা নাকি এখানেই করবে।আমি বুঝতে পারছি না কি হবে।আম্মু যদি এই খবরটা শোনে তাহলে কি যে হবে জানি না।” (অর্থি)
— “মনকে শক্ত করো আপু সবটাই ঠিক হয়ে যাবে।জানি যে শোল্ডার সার্জারিতে তেমন ভয়ের কিছু নেই কিন্তু একবার যখন ডিসলোকেটেড হয়েছে তখন এটা ঠিক হতেই বেশি সমস্যা। অনেকদিন কষ্ট করতে হবে।” (আয়ানা)
— “হুম তুমিও চিন্তা করো না।দেখছি আর কোনো খবর পাই কি না।” (অর্থি)
— “হুম।” (আয়ানা)

অর্থি যাওয়ার পর আয়ানা নিজের মনকে শান্ত করে অজু করে আসে এশার নামাজ পড়ার জন্য।নামাজ শেষে মোনাজাতে আয়ানা শুধু আজ অর্থের জন্য‌ই দোয়া করেছে বারবার আল্লাহকে বলেছে যাতে অর্থ খুব দ্রুত সেড়ে ওঠে।

!!
গতকালকে অর্থ দেশে ফিরেছে।ওর চোখ মুখের দিকে একদম তাকানো যাচ্ছে না হাত-পায়ে ব্যান্ডেজ,চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে দেখতে একেবারে কাহিল লাগছে।আজ অর্থের সার্জারি।বিকেলের দিকে ওকে হাসপাতালে এডমিট করা হয়।তবে অর্থ ভেতর থেকে খুব‌ই স্ট্র‌ং ও সবাইকে আশ্বস্ত করলো যে ওর কিছু হবে না ও একদম ঠিক হয়ে যাবে। অর্থ কে ওটিতে নিয়ে যাওয়া হলো।
অপারেশন থিয়েটারের বাইরে অর্থি, অর্থের আম্মু, অর্থের বাবা আর আয়ানা বসে আছে।সবাই খুব চিন্তিত।আয়ানা বারবার আল্লাহকে স্মরণ করছে।

দুই ঘন্টা পর ডক্টর ওটি থেকে বের হলেন। অর্থের বাবা এগিয়ে গিয়ে বললেন,
— “ডক্টর সবকিছু ঠিক আছে তো?”
— “ইয়াহ অপারেশন সাকসেসফুল। সবকিছুই ঠিক আছে।একটু পরে উনাকে কেবিনে দিয়ে দেওয়া হবে আপনারা গিয়ে দেখা করে আসবেন।” (ডক্টর)
— “ডক্টর আমার ছেলেটা ঠিক হয়ে যাবে তো? ও কি আবার খেলতে পারবে?” (অর্থের আম্মু)
— “দেখুন ওনার পায়ের আঘাতটা খুব একটা বেশি নয় মাস খানেক গেলে ঠিক হয়ে যাবে তবে ততোদিন একদম রেস্টে থাকতে হবে।আর কাঁধের ব্যাপারটা আমি যতোটা দেখলাম তেমন কোনো ভয় নেই,তবে ব্যথাটা প্রচুর সেটা সাড়তে মিনিমাম চার মাস লাগবে।আর প্রপার রেস্ট,টেক কেয়ার,প্রপার মেডিসিন এগুলো পেলে আরো তাড়াতাড়ি রিকোভার করতে পারবেন‌।আপনারা একটা কাজ করবেন সবসময় ওনার খেয়াল রাখবেন,ওনাকে যাবতীয় কাজে একজন হেল্প করলে খুব দ্রুত সেরে উঠা সম্ভব হবে।আর তখন তিনি মাঠেও ফিরতে পারবেন।” (ডক্টর)

কিছুক্ষণ পর অর্থকে কেবিনে দেওয়া হয়। অর্থের বাবা, আম্মু, অর্থি, আয়ানা চার জনেই যায় ওর সাথে দেখা করতে।ওরা তিনজনে অর্থের সাথে কথা বলছে আর আয়ানা এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে।ডক্টর অর্থের বাবাকে বললেন,
— “কালকে উনাকে রিলিজ করে দেওয়া হবে।আর তারপরে কিন্তু বাসায় ওনাকে একদম রেস্টে থাকতে হবে যাকে বলা হয় বেড রেস্ট।আর সবসময় ওনার পাশে কাউকে থাকতে হবে আর সে-ই উনার যাবতীয় কাজগুলো করবেন।”
— “ওকে ডক্টর।তবে আমরা চাইছি একটা নার্স অ্যাপয়েন্ট করতে আপনারা যদি কাউকে রেকমেন্ড করতেন তাহলে তাকেই অ্যাপয়েন্ট করতাম অর্থকে দেখভাল করার জন্য।” (অর্থের বাবা)

ডক্টর কিছু বলার আগে আয়ানা এগিয়ে এসে অর্থের বাবাকে বললো,
— “বাবা আমি একটা কথা বলবো?”
— “হ্যাঁ মা বল।” (অর্থের বাবা)
— “বাবা আমি বলছি যে কোনো নার্স অ্যাপয়েন্ট করার দরকার নেই।আমি আছি তো আমি উনার দেখাশোনা করবো।” (আয়ানা)
— “তুই করবি?” (অর্থের বাবা)
— “ইনি কে?” (আয়ানাকে দেখিয়ে ডক্টর)
— “ওহো আপনাকে তো বলা হয় নি।ও হচ্ছে অর্থের ওয়াইফ।” (অর্থের বাবা)
— “আরেহ উনাকেই তো আমাদের দরকার।কারণ একজন ওয়াইফের পক্ষে‌ই একমাত্র তার স্বামীকে যত্ন সহকারে দেখভাল করা সম্ভব।নার্সরা যা করতে পারে না একজন ওয়াইফ সেটাই করতে পারবে।শুনুন আপনি সবসময় অর্থের পাশে থাকবেন।আমি আপনাকে সবকিছু বুঝিয়ে দিচ্ছি।” (ডক্টর)
— “কিন্তু আয়ানা তুই কি পারবি মা?তোর নিজের‌ও তো কতো কাজ থাকে।” (অর্থের বাবা)
— “আপনি চিন্তা করবেন না বাবা, আমি ঠিক পারবো। ডক্টর আপনি আমায় বলুন কি কি ওষুধপত্র আছে‌।” (আয়ানা)
— “আপনি আসুন আমার সঙ্গে আমি আপনাকে চার্টটা দিয়ে দিচ্ছি।” (ডক্টর)
— “হুম চলুন।” (আয়ানা)

!!
একটু আগে অর্থকে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে।আজ হাসপাতাল থেকে দুজন হেলপার এসেছিলেন ওরাই অর্থকে ঘরে পৌঁছে দিয়ে গেছে। অর্থের এখন আর কোনো কাজ নেই সারাদিন শুধু বিছানায় শুয়ে থাকা।আয়ানা আগেই ঘর গুছিয়ে সব জিনিসপত্র ঠিকঠাক করে রেখেছে।
— “আমি রান্না ঘরে যাচ্ছি,আপনার জন্য স্যুপ বানাতে হবে একটু পরে একটা ওষুধ আছে।কোনো প্রয়োজন পড়লে আমায় ডাকবেন আমি সঙ্গে সঙ্গে চলে আসবো।কিন্তু একবার‌ও ভুল করে ওঠার চেষ্টা করবেন না।” (আয়ানা)

কথাটা বলেই আয়ানা কিচেনে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।তবে আয়ানা দরজার কাছে যেতেই অর্থ পেছন থেকে বলে,
— “কেনো করছো এসব?এসব তো তোমার কাজ নয়।”
অর্থের কথা শুনে আয়ানা দাঁড়িয়ে যায়। নিরর্থক একটা হাসি দিয়ে সামনে এগিয়ে এসে বলে,
— “এসব আমার কাজ নয় তাহলে কোনটা আমার কাজ?”
— “আই ডোন্ট নো।বাট আমার জন্য তুমি এতো ভাবছো কেনো?আমি চাই না আমার জন্য তোমার কোনো সমস্যা হোক।তোমার নিজের‌ও তো কাজ আছে তাই না।” (অর্থ)
— “হুম আছেই তো।আর এটাও আমার কাজের মধ্যেই পড়ে।আর আমি আপনাকে নিয়ে ভাবছি না।আমি বাবা আর মাকে নিয়ে ভাবছি।কারণ আপনাকে তারা বড্ড ভালোবাসে আপনার কষ্ট হলে তাদের অনেক কষ্ট হয়।তাই আমি সবটাই করবো যাতে আপনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠেন আর বাবা মা নিশ্চিন্ত হোক।” (আয়ানা)
— “কিন্তু আমি তো তোমার শত্রু সবসময় তো আমায় ইনসাল্ট করো।” (অর্থ)
— “হ্যাঁ করবোই তো ক্লাসলেস লোক না আপনি।যাওয়ার আগে তো খুব ভাব নিয়েছিলেন এক মাস শান্তিতে থাকবেন।এই জন্য আপনার শান্তি উড়ে গেলো।আমার থেকে মুক্তি চেয়েছিলেন এবার নিন আমাকে টলারেট করুন।” (আয়ানা)
— “হ্যাঁ আসলেই তুমি নজর দিয়েছো আমার শান্তিতে এজন্য এমনটা হলো।আহ হাতে কি ব্যথা।আবার পায়েও ব্যথা।কি করবো আমি সারাদিন এভাবে? একটু তো বাইরেও যেতে পারবো না।” (মন খারাপ করে অর্থ)
— “বেশ হয়েছে।এখন থেকে বাড়িতেই থাকবেন।এখন চোখ বন্ধ করে রেস্ট করুন।আমি স্যুপ করে আনছি।” (আয়ানা)

!!
একটা দিন এভাবে কেটে গেলো।আয়ানা সবসময় অর্থের পাশে ছিলো।যা যা করা দরকার সবকিছু করেছে।এখন‌ও ও অর্থের কাছেই আছে।
— “আপনি এভাবেই থাকুন আমি আপনাকে ফ্রেশ করে দিচ্ছি।” (আয়ানা)
— “ফ্রেশ করে দেবে মানে কি?আমি তো ওয়াশরুম যাবো।” (অর্থ)
— “ওহো চলুন আমি নিয়ে যাচ্ছি।” (আয়ানা)
আয়ানা অর্থকে আস্তে করে উঠিয়ে ধরে ওয়াশরুমে নিয়ে যায়।
— “হুম নিন এখন ফ্রেশ হোন।” (আয়ানা)
— “তুমি যাও,আমি কি তোমার সামনেই ফ্রেশ হবো নাকি?” (অর্থ)
— “ওহ স্যরি আমি যাচ্ছি।” (আয়ানা)

কিছুক্ষণ পর,
অর্থ বিছানায় শুয়ে আছে।আর আয়ানা ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছে।ওকে সকাল সকাল তৈরি হতে দেখে অর্থ বললো,
— “তুমি কি কোথাও যাবে?”
— “হুম একটু কাজ আছে।শুনুন আমি ডেট আর কাজু রেডি করে রেখেছি খিদে পেলে কিংবা কোনো প্রয়োজন হলে অর্থি আপুকে একটু ডেকে নেবেন।আর আমি তাড়াতাড়ি চলে আসবো শুধু যাবো আর আসবো।” (আয়ানা)
— “আচ্ছা ঠিক আছে।” (অর্থ)

আয়ানা বাসা থেকে বেরিয়ে সোজা গ্রাউন্ডে চলে আসে।সবাই এসে প্র্যাকটিস করছে।ওর কোচ‌ও আছে।কোচ ওকে দেখে বললেন,
— “আনান‌ইয়া তোমার এতো দেরি হলো কেনো? আর আগের দুইদিন‌ও তুমি এলে না? পরশু তো আমাদের ম্যাচ যাও তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে আসো প্র্যাকটিস করতে হবে।”
— “স্যার আপনার সাথে আমার জরুরি কিছু কথা ছিলো।এখন‌ই বলতে হবে কথাগুলো।” (আয়ানা)
— “আচ্ছা বলো।” (কোচ)
— “আসলে স্যার কাল থেকে আমি আর আসবো না।মানে আমি কিছুদিনের জন্য ব্রেক নিচ্ছি।আসলে স্যার আমার পারিবারিক সমস্যা আছে,জানি এই পথে আসার আগে আমাকে সেটা উপেক্ষা করতে হতো কিন্তু আমার কিছু করার নেই।সেজন্য আমি ব্রেক নিতে বাধ্য হচ্ছি।তাই আমার পক্ষে প্র্যাকটিসে আসা কিংবা ম্যাচ খেলা কোনোটাই আর সম্ভব নয়।” (আয়ানা)

আয়ানার কাছ থেকে এমন কথা যে কোচ আশা করেন নি সেটা তার মুখ দেখেই উপলব্ধি করা যাচ্ছে।উনি বেশি কিছু না বলে শুধু বললেন,
— “সব ভেবেচিন্তে বলছো তো?তোমার ক্যারিয়ারের কিন্তু অনেক ক্ষতি হবে আনান‌ইয়া।”
— “হোক,ভাগ্যে থাকলে সেটা পুষিয়ে নেওয়া যাবে।কিন্তু এখন এই লিভটা আমার দরকার।” (মুচকি হেসে আয়ানা)

চলবে

#মন_পাজড়ে_শুধু_তুমি_আছো?
#লেখিকা_মাইসারাহ_আরোহি?
#পর্ব_১৪

আয়ানার কাছ থেকে এমন কথা যে কোচ আশা করেন নি সেটা তার মুখ দেখেই উপলব্ধি করা যাচ্ছে।উনি বেশি কিছু না বলে শুধু বললেন,
— “সব ভেবেচিন্তে বলছো তো?তোমার ক্যারিয়ারের কিন্তু অনেক ক্ষতি হবে আনান‌ইয়া।”
— “হোক,ভাগ্যে থাকলে সেটা পুষিয়ে নেওয়া যাবে।কিন্তু এখন এই লিভটা আমার দরকার।” (মুচকি হেসে আয়ানা)
— “তুমি যখন সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছো তখন তো আমার আর কিছু বলার থাকে না।তবে এটুকু বলবো ফুটবলটাকে ছেড়ো না। তোমার মাঝে ট্যালেন্ট আছে চাইলে অনেকদূর এগোতে পারবে।সময় নাও তবে এটাকে ভুলে যেও না।আর আমি তোমাকে সবসময় সাপোর্ট করবো।তুমি যখন ইচ্ছা আবার গ্রাউন্ডে আসবে।আমাদের কারো কোনো আপত্তি নেই।আমরা সবসময় তোমাকে সাদরে গ্রহণ করতে প্রস্তুত।” (কোচ)
— “থ্যাংক ইউ সো মাচ স্যার।দোয়া করবেন আমার জন্য।” (আয়ানা)
— “অল দ্যা বেস্ট।” (কোচ)
আয়ানা আর সময় নষ্ট করে না সবার থেকে বিদায় নিয়ে আবার বাসায় ব্যাক করে।

!!
রাতে,
আয়ানা খাবার প্লেট হাতে করে এনে অর্থের পাশে বসে।প্লেটটা সেন্টার টেবিলের উপর রেখে ও অর্থকে ধরে বালিশে হেলান দেয়ায়।
— “আমার ভালো লাগছে না।আমি খাবো না।খাওয়াগুলো নিয়ে যাও।” (অর্থ)
— “তা বললে কি করে হয়,আপনার দুটো ওষুধ খেতে হবে।আর সেগুলো ভরপেটে।অত‌এব আপনাকে অল্প হলেও খেতে হবে।” (আয়ানা)
— “ভালো লাগছে না তো।” (অর্থ)
— “ভালো না লাগলেও খেতে হবে।না খেলে আরো অসুস্থ যখন হবেন তখন কি মনে করেন আপনার গার্লফ্রেন্ড আপনাকে পাত্তা দিবে? আর সবচেয়ে বড় কথা হলো আপনাকে তো আবার ফুটবল খেলতে হবে তাই না? তাহলে আর কথা বলবেন না খাইয়ে দিচ্ছি খেয়ে নিন।” (আয়ানা)

আয়ানার এই কথাটা শোনার পর অর্থ কেমন যেনো থম মেরে যায়।ও আর কিছু বলে না।আয়ানা‌ও নিঃশব্দে ওকে খাইয়ে দেয়।খাওয়া শেষে আয়ানা নিজের ওড়না দিয়ে অর্থের মুখ মুছিয়ে দেয়।অর্থ কিছু বলে না শুধু বাচ্চাদের মতো করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।
— “আরেকটু বসুন আমি প্লেটটা রেখে এসে ওষুধ দিচ্ছি।” (আয়ানা)
— “হুম।” (অর্থ)
আয়ানা প্লেটটা রেখে এসে অর্থকে ওষুধ খাইয়ে শুইয়ে দেয়।কিন্তু ঘুমানো বাদ দিয়ে ফ্যালফ্যাল করে আয়ানার দিকে তাকিয়ে আছে।তা দেখে আয়ানা ভ্রু কুঁচকে বললো,
— “ওমন ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন কেনো? আমার কি পাখা গজিয়েছে নাকি?”
— “অলটাইম এরকম খিটখিট করো কেনো? ভালো করে কথা বলতে পারো না?” (অর্থ)
— “ওই একটা গুণ‌ই না আমার মধ্যে নেই।আমার অতো ন্যাকামি করতে ভালো লাগে না তাই মুখে যা আসে বলে দেই।আপনার মতো ভীতুর ডিম ন‌ই বুঝলেন।” (আয়ানা)
— “আমি ভীতুর ডিম? হাও ডেয়ার ইউ সে মি ভীতুর ডিম?” (রেগে অর্থ)
— “ঠিকই তো বললাম।আপনি তো ভীতুর ডিম‌ই সেজন্যই তো আমাকে ভয় পান।চিন্তা করবেন না আপনার সেবা করছি ঠিকই কিন্তু স্ত্রীর অধিকার চাইবো না।” (আয়ানা)
— “সত্যি‌ই তুমি একটা ফালতু মেয়ে।যাও তো এখান থেকে।আমাকে একদম বিরক্ত করবে না।” (অর্থ)
অর্থের এমন ব্যবহারের কোনো নির্দিষ্ট কারণ আয়ানার জানা নেই।ও শুধু ভাবছে যে কি এমন বললো যার জন্য অর্থ রেগে গিয়ে এমন ব্যবহার করলো।তবে আয়ানা বেশি একটা গুরুত্ব দিলো না কারণ অর্থ তো অসুস্থ হয়তো সেই কারণেই এমন ব্যবহার করলো।

!!
দুই মাস পর,
খুব দ্রুত‌ই যেনো সময়টা কেটে গেলো।সময়ের সাথে সাথে অর্থের‌ও শরীরের উন্নতি হয়েছে।ওর পা এখন ঠিক হয়ে গেছে।কিন্তু হাতের ক্ষতটা সাড়তে আরো কিছুদিন সময় লাগবে। অর্থ শুয়ে ছিলো হঠাৎ আয়ানা একটা বাটি এনে ওর সামনে ধরে বললো,
— “নিন খেয়ে নিন।”
— “কি এটা?” (অর্থ)
— “নুডুলস।এখন ধরুন এটা খান।আমি যাই আমার এখন অনেক কাজ।মায়ের আবার প্রেসার বেড়েছে গিয়ে ওষুধ দিতে হবে।” (আয়ানা)
— “খাবো না আমি,আমার হাতে ব্যথা করছে।” (অর্থ)
— “আরেহ বাবা স্পুন দিয়েছি তো একটু কষ্ট করে খেলে কি হয়।” (আয়ানা)
— “শোনো আমার অতো দায় পড়ে নি যে তোমার কথামতো আমাকে খেতে হবে।আর তাছাড়া তুমি তো নিজেই বলেছিলে আমার সব কথা শুনবে।আমি যতোদিন সুস্থ না হ‌ই ততোদিন সাহায্য করবে।তো এখন‌ও আমি পুরোপুরি সুস্থ হ‌ই নি।তোমার কি উচিত না আমাকে সাহায্য করা?” (অর্থ)
— “সবসময় ঝগড়া না করলে আপনার হয় না মিস্টার বিচুটি পাতা? একবারে আমাকে তেজপাতা বানিয়ে ফেলছেন।দেখি ওদিকে সরুন আমাকে বসতে দিন।” (আয়ানা)

আয়ানার কথায় অর্থ একটু সরে যায়।তবে মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিক হয়ে বসে থাকে।
— “আবার ওদিকে গিয়ে বসেছেন কেনো? উফ বাবা এদিকে আসেন তো।আমি বলছি না আজ আমার অনেক কাজ।” (আয়ানা)
— “তো?” (অর্থ)
— “তো আবার কি এদিকে আসুন আপনাকে খাইয়ে দিয়ে তারপর তো আমি কাজে যাবো তাই না।” (আয়ানা)
— “আমি জানি তুমি বিরক্ত হচ্ছো কিন্তু দেখো আমি কি করবো।সেই কবে থেকে বাড়ি পড়ে আছি। সারাদিন এই ঘরে বন্দি থাকি আমার কি আর ভালো লাগে বলো? মনে হচ্ছে যেনো জেলখানায় আটকে আছি।” (অর্থ)
— “মনে হ‌ওয়াটাই স্বাভাবিক।এখন ওসব না ভেবে তাড়াতাড়ি হা করুন আর তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন।” (আয়ানা)
— “হুম।” (অর্থ)

আয়ানা অর্থকে চামচ দিয়ে নুডুলস খাইয়ে দিচ্ছে।অর্থ খাচ্ছে আর এক দৃষ্টিতে আয়ানার দিকে তাকিয়ে আছে।
— “জানি না কি এমন আছে তোমার মাঝে যা শুধু আমাকে আকর্ষণ করে।না চাইতেও শুধু তোমাকেই কাছে টানে। বারবার মনে চায় তুমি যেনো সবসময় আমার পাশে থাকো।কিন্তু কি কারণে এমন হয় তা আমার জ্ঞানের উর্ধ্বে।যতো ভাবি তোমাকে দূরে সরিয়ে রাখবো ততোই বেশি করে তোমার কাছে চলে যাই‌।কিছুতেই বুঝতে পারি না কেনো এসব হচ্ছে?তুমি কি জানো এমন কেনো হয় আমার? নাকি সবটাই শুধু এট্রাকশন?” (মনে মনে অর্থ)

আয়ানার দিকে তাকিয়ে এসব ভাবতে ভাবতেই অর্থ হঠাৎ চিৎকার করে ওঠে।আয়ানা তাড়াতাড়ি করে বাটিটা টেবিলের উপর রেখে অর্থকে জিজ্ঞেস করে,
— “কি হলো? কি হয়েছে আপনার? কোথাও কষ্ট হচ্ছে? আপনি এমন কেনো করছেন?”
— “ঝাল,পানি,পানি দাও আমাকে।” (অর্থ)

কথাটা বলেই অর্থ ঝালে ছটফট করতে থাকে।আয়ানা অর্থকে পানি দিতে গিয়ে দেখে ঘরে পানি নেই।
— “আপনি একটু অপেক্ষা করুন।আমি এক্ষুনি পানি আনছি।” (আয়ানা)
আয়ানা ছুটে নিচে চলে যায় পানি আনতে। কিন্তু ও পানি নিয়ে ঘরে এসে দেখে অর্থ একদম ঠিকভাবে বসে আছে ও আর ছটফট‌ও করছে না।আয়ানা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
— “আপনার ঝাল কমলো কিভাবে? পানি কোথায় পেলেন?”
— “কেনো টেবিলেই তো গ্লাসে অর্ধেক পানি ছিলো।” (অর্থ)
— “আপনি ওই পানি খেয়েছেন নাকি?” (আয়ানা)
— “হুম কি করবো খুব ঝাল লাগছিলো ওইজন্য এক ঢোকে খেয়ে ফেলেছি।” (অর্থ)
— “হায় হায় আপনি কেনো খেলেন ওই পানি?” (আয়ানা)
— “কেনো কি হয়েছে,ওতে বিষ ছিলো নাকি?” (ভ্রু কুঁচকে অর্থ)
— “না,ওটা আমার এঁটো পানি ছিলো।আর সেজন্য‌ই আপনাকে আমি তখন পানিটা দি‌ই নি।কিন্তু আপনি তো আমার এঁটো পানি‌ই খেয়ে নিয়েছেন।” (আয়ানা)

অর্থ ব্যাপারটাকে একটুও পাত্তা না দিয়ে সিম্পলি বললো,
— “আমি করে জানবো ওটা তোমার খাওয়া পানি?নিজেই তো নুডুলসে একশোটা মরিচ দিয়েছো।তাই আমার ঝাল লেগেছে আর আমি হাতের কাছে ওই গ্লাসটা পেয়েছি আর পানিও খেয়েছি।কিন্তু এতে কি এমন হলো?”
— “না কিছু হয় নি।যাই হোক আপনাকে আর নুডুলস খেতে হবে না।আমি বুঝতে পেরেছি আপনি একদম‌ই ঝাল সহ্য করতে পারেন না।” (আয়ানা)
— “বোঝার জন্য ধন্যবাদ।সব কথা যদি এমন তাড়াতাড়ি বুঝতে তাহলে বড়ই ভালো হতো।” (অর্থ)
— “এখন আমার ঝগড়া করার ইচ্ছে নেই। হিসেব তুলে রাখলাম পরে আপনাকে এর জবাব দেবো।এখন আমি যাই।” (আয়ানা)
— “হুম যাও যাও।আমাকে একটু শান্তি দাও।উফ ডিজগাস্টিং।” (অর্থ)

!!
আয়ানা ঘরে নেই।অর্থ শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছিলো।হঠাৎ টেবিলের উপর থেকে ফোন বাজার আওয়াজ হচ্ছিল।অর্থ তাকিয়ে দেখে আয়ানার ফোন বাজছে।অর্থ গলা চেঁচিয়ে আয়ানাকে ডাকতে থাকে।আয়ানা তখন ড্র‌ইংরুম গোছাচ্ছিলো অর্থের ডাক‌ও শুনতে পায় নি।জয়া শুনতে পেয়ে আয়ানাকে বলে,
— “নতুন ভাবি স্যার আপনাকে ডাকছে।”
— “আমাকে ডাকছে? কিন্তু আমাকে এখন ডাকছে কেনো?” (আয়ানা)
— “তা তো জানি না।আপনি গিয়ে দেখুন।” (জয়া)
— “হুম যাই।‌এই ছেলেটা একেবারে আমাকে জ্বালিয়ে মারে।” (আয়ানা)

আয়ানা বিরক্তি নিয়ে ঘরে যায়।গিয়ে দেখে অর্থ নিজের মতো টিভি দেখছে।
— “কি হয়েছে আমাকে ডাকছেন কেনো?” (আয়ানা)
— “তোমার ফোন এসেছিলো।” (অর্থ)
— “ওহ কে ফোন করেছিলো?” (আয়ানা)
— “আমি কি করে জানবো?আমি কি তোমার ফোন ধরি নাকি।” (অর্থ)
— “হুম তাও তো ঠিক। আচ্ছা আমি দেখছি।” (আয়ানা)

আয়ানা ফোন হাতে নিয়ে কললিস্ট টা চেক করতে যায় কিন্তু হিস্ট্রি দেখার আগেই আবার কল আসে।নম্বরটা অচেনা।আয়ানা ফোন ধরতেই অপর পাশ থেকে বলা হয়,
— “আয়ানা আমি জানি আমার কন্ঠ শুনলে তুমি কলটা কেটে দেবে।বাট প্লিজ ফোনটা কেটো না।আজ আমি তোমায় বিরক্ত করার জন্য ফোন দি‌ই নি।আমি তোমাকে স্যরি বলতে চাই আয়ানা।”

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here