মন_পাজড়ে_শুধু_তুমি_আছো?,পর্ব_১৫,১৬

0
1363

মন_পাজড়ে_শুধু_তুমি_আছো?,পর্ব_১৫,১৬
লেখিকা_মাইসারাহ_আরোহি?
পর্ব_১৫

আয়ানা ফোন হাতে নিয়ে কললিস্ট টা চেক করতে যায় কিন্তু হিস্ট্রি দেখার আগেই আবার কল আসে।নম্বরটা অচেনা।আয়ানা ফোন ধরতেই অপর পাশ থেকে বলা হয়,
— “আয়ানা আমি জানি আমার কন্ঠ শুনলে তুমি কলটা কেটে দেবে।বাট প্লিজ ফোনটা কেটো না।আজ আমি তোমায় বিরক্ত করার জন্য ফোন দি‌ই নি।আমি তোমাকে স্যরি বলতে চাই আয়ানা।”
— “স্যরি?আমাকে হঠাৎ স্যরি কেনো বলতে চাইছো? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।” (আয়ানা)
— “না আয়ানা স্যরি তো তোমাকে বলতেই হতো।আসলে এতো দিন আমি তোমাকে ভীষণ বিরক্ত করেছি।হয়তো আমার জন্য তোমার সংসারে অশান্তিও হয়েছে।আসলে আয়ানা আমি বুঝতে পেরেছি যে ভালোবাসা এক পাক্ষিক হয় না।এতো দিন আমি তোমাকে ভালোবেসেছি কিন্তু তুমি আমাকে বাসো নি।তাই হয়তো তোমাকে আমি বড্ড জ্বালিয়েছি কিন্তু আজ আমি ভুলটা বুঝতে পেরেছি।আমি আর কখনো তোমাকে বিরক্ত করবো না।” (অনিক)
— “সব‌ই বুঝলাম।কিন্তু হঠাৎ তুমি তোমার ভুলটা বুঝতে পারলে না মানে এতো দিন যখন আমি বোঝালাম তখন তো শোনো নি আজ এমন বলছো?ব্যাপারটা বুঝতে পারছি না।” (আয়ানা)
— “ওহ তোমাকে তো বলতেই ভুলে গেছি।আসলে গত মাসে আমি বিয়ে করেছি।বাবা-মা অনেকদিন ধরেই বলছিলো আর গত মাসে কিছুটা জোর করেই বিয়েটা দিয়ে দেয়।আর তারপরেই আমি আমার ভুলটা বুঝতে পেরেছি।আসলে আমি যাকে বিয়ে করেছি সে-ই আমার এই ধারণাটা ভেঙে দিয়েছে।এবার আমি বুঝতে পারছি এক তরফা ভালোবাসা হয় না।ভালোবাসতে গেলে দুজনের‌ই মনের মিল থাকতে হয়।এতদিন তোমাকে খুব জ্বালিয়েছি তাই আজ সবকিছুর জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।” (অনিক)

অনিকের কথা শুনে আয়ানা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে,ও কি বলবে বুঝতে পারে না।অনিক আবার‌ও বলে,
— “আমি জানি তুমি হয়তো ভাবছো হঠাৎ এতদিন পর কেনো এসব বলছি।আসলে এতদিন তো বুঝতে পারি নি।এখন সবটা বুঝেছি তাই এসব বলছি।পারলে ক্ষমা করে দিও আমায়।”
— “এভাবে স্যরি বলার দরকার নেই।ভালো থেকো।বেস্ট উইশেশ ফর ইউ এন্ড ইউর ওয়াইফ।” (আয়ানা)

কথাটা বলে আয়ানা ফোন রেখে দেয়।আয়ানা পেছনে ঘুরতেই দেখে অর্থ ওর দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে।আয়ানা একটু ঘাবড়ে গিয়ে বলে,
— “আপনি এখানে কেনো? আপনার না বিশ্রাম নেও‌য়ার কথা।”
— “ওই ছেলেটা কেনো তোমাকে বারবার ফোন করে?কে ওই ছেলেটা? আর ও ফোন করলে তুমি এমন আড়ালে এসে কথা বলো কেনো?” (অর্থ)
— “আপনি ঘরে যান, ওষুধ খেতে হবে এখন।” (আয়ানা)
— “আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি।” (অর্থ)
— “এতো কিছু আপনার জানতে হবে না। আপনি থাকুন না নিজের মতো।আমার মতো একটা থার্ড ক্লাস মেয়ের সম্পর্কে আপনি কেনো এতো কিছু জানতে ইচ্ছুক? আমি তো আপনার কেউ হ‌ই না তাই না?” (আয়ানা)

আয়ানার এই কথাটা শুনে অর্থ ভীষণ রেগে যায়।ও রেগে আয়ানার বাহু শক্ত করে চেপে ধরে বলে,
— “ভুলে যেও না আমাদের ডিভোর্সটা এখনো হয়নি,আমরা এখন‌ও স্বামী-স্ত্রী।সুতরাং সবকিছু জানার আমার অধিকার আছে।”
— “না নেই।শুধু বিয়ে করলেই স্বামী হ‌ওয়া যায় না মিস্টার অর্থ।স্বামী হতে গেলে কিছু দায়িত্ব পালন করতে হয়।” (আয়ানা)
— “এসব ফালতু কথা আমি শুনতে চাই না।যা জানতে চেয়েছি আমাকে বলো।আর লাস্টে কি বললে স্যরি?ওই ছেলেটা তোমাকে স্যরি বলছে কেনো? দেখো আমাকে সবকিছু বলো,আমি তো তোমাকে সব বলি তাহলে তুমি কেনো আমাকে বলবে না?” (অর্থ)

অর্থ ধীরে ধীরে ভীষণ উত্তেজিত হয়ে পড়ে,আয়ানা বুঝতে পারে ওর পক্ষে এতোটা উত্তেজিত হ‌ওয়া উচিত নয়।তাই আয়ানা মনে মনে ঠিক করলো অর্থকে সবটা বলেই দেবে।
— “আচ্ছা ঠিক আছে আপনাকে সবকিছু বলবো।কিন্তু এখানে না ঘরে চলুন,একটু শান্ত হয়ে বসুন তারপর বলবো।” (আয়ানা)
অর্থ আর কথা বাড়ায় না,ঘরে গিয়ে চুপটি করে বিছানায় বসে।
— “তোমার কথা শুনেছি এখন তো বলো পুরোটা।” (অর্থ)

আয়ানা মাথা নাড়ায়।তারপর জানালার ধারে গিয়ে বলতে শুরু করে,
— “ছেলেটার নাম অনিক।ওর সাথে আমার পরিচয় তিন বছর ধরে।রিয়া আপুর ফ্রেন্ডের ভাই ও‌।আজ থেকে তিন বছর আগে রিয়া আপুর ফ্রেন্ডের বার্থডেতে আমি আর রিয়া আপু গিয়েছিলাম আর সেখানেই অনিকের সাথে আমার প্রথম আলাপ।অনিক ছেলেটা ভীষণ ভালো মুহুর্তেই আমার সাথে বন্ধুত্ব হয়ে যায় তবে আমি স্রেফ ওকে বড় ভাইয়ের মতো সম্মান করতাম,বন্ধু মনে করতাম।আর বন্ধু ভেবেই ওকে ভাইয়া ডাকি নি নাম ধরেই বলেছি।কিন্তু ও হঠাৎ একদিন আমায় বলে যে ও আমাকে ভালোবাসে।কথাটা শোনার পর ভীষণ খারাপ লেগেছিল,কারণ এমন কিছু তো আমার কাঙ্ক্ষিত ছিলো না।আমি সরাসরি ওকে নাকচ করে দি‌ই।কিন্তু ও শোনে নি রোজ আমার পিছু নিয়েছে বারবার প্রপোজ করেছে। কিন্তু আমার থেকে কোনো আশানুরূপ ফল পায় নি।আসলে আমার পক্ষে ওকে কখনো ভালোবাসা সম্ভব না।কারণ ওকে আমি শুধু বন্ধু ভেবেছিলাম তাই বন্ধুকে ভালোবাসার মানুষের জায়গাটা দিতে পারি নি।আর ঠিক এইভাবেই তিনটা বছর ও আমার পিছুপিছু থেকেছে বুঝতাম ও আমায় অনেক ভালোবাসে কিন্তু আমি নিজের মনকে মানাতে পারি নি ইভেন আমি চাই‌ও নি নিজের মনকে ওর জন্য প্রস্তুত করতে।আর আপনার সাথে বিয়ে হবার পর তো ও আমার খোঁজ পায় নি তাই বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও ফোন করতো।তবে এখন ও নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছে তাই আজ স্যরি বললো।আমারই খারাপ লাগতো যে ওকে আমি এক্সেপ্ট করতে পারি নি।তবে আজ যখন বললো ও বিয়ে করেছে তখন অপরাধ বোধটা একটু হলেও কমলো।”

আয়ানার কথা শুনে কিছু সময় চুপ করে থাকে অর্থ।আনমনে কিছু সময় বসে থাকার পর ও বলে,
— “আগে যা হ‌ওয়ার হয়েছে।কিন্তু এখন থেকে কারো সাথে তুমি কথা বলবে না। তোমার নম্বর আমি চেঞ্জ করে দেবো।আর নতুন নম্বর শুধু আমার পরিবার আর তোমার বাবা-মা ছাড়া কেউ জানবে না।আর অন্য কোনো ছেলে সে তোমার ভাই হোক কিংবা বন্ধু কারো সাথেই তুমি কথা বলবে না।”
— “এহ শখ কত আপনি বললেন আর আমি শুনলাম,এত‌ই সহজ? আমি আপনার কোনো কথা শুনবো না।আমার যার সাথে ইচ্ছে আমি কথা বলবো।আর আপনার ইচ্ছে হলে সারাদিন অন্য মেয়েদের সাথে কথা বলুন আমি কিচ্ছু বলবো না।” (আয়ানা)
— “আচ্ছা বলছো যখন যাই জিহাকে একটু ফোন করি বেচারি কাল রাতে দশবার ফোন করেছে আমি ধরতেও পারি নি।যাই একটু কথা বলি।” (অর্থ)
— “খালি মোবাইলটা ছুঁয়ে দেখুন না,তারপর দেখাবো কত ধানে কত চাল।” (চোখ রাঙিয়ে আয়ানা)
— “যাহ বাবাহ তুমি‌ই তো বললে।” (অর্থ)
— “বলেছি বলেই করতে হবে নাকি? মাঝেমধ্যে অবাধ্য‌ও হতে হয়।যাই হোক ওষুধ দিচ্ছি খেয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন।সারাদিন ফোন আর টিভি দেখা স্বাস্হ্যের পক্ষে ক্ষতিকর।” (আয়ানা)
— “হুম ঠিক আছে।” (অর্থ)

!!

“বেবি গার্ল আই ওয়ান্ট দ্যাট চেরি চেরি চেরি
আই নিড দ্যাট চেরি চেরি চেরি
ক্যান আই বাইট দ্যাট চেরি চেরি চেরি
সিকুয়েইজ দ্যাট চেরি চেরি চেরি

নো বি আগবালুমো টাইপ অফ চেরি চেরি
ম্যাংগো নো বি টাইপ অফ চেরি চেরি
সি ইজ আ স্পেশাল টাইপ অফ চেরি
চেরি চেরি
মি আই ওয়ান্ট চেরি!”

ব্লুটুথ বক্সে গানটা ছেড়ে দিয়ে বিছানায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে অর্থ।আর আয়ানা ঘরে এসে গান বন্ধ করে দিলো।সঙ্গে সঙ্গে অর্থ চোখ খুললো এবং বিরক্ত হয়ে বললো,
— “গানটা বন্ধ করলে কেনো? কি সুন্দর গান শুনছিলাম মুডটাই নষ্ট করে দিলে।”
— “বেশ করেছি।কিসব গানের অবস্থা চেরি চেরি,একটু ভালো গান‌‌ও শুনতে পারেন না, সব শুধু লুচ্চা টাইপ গান।” (আয়ানা)
— “একদম বাজে বকবে না।এসব অনেক ভালো গান বুঝলে। আজকালকার দিনে এগুলোই চলে।” (অর্থ)
— “হুম জানি তো,কালে কালে আর কত কি দেখবো।যাই হোক উঠুন একটু ফ্রেশ হয়ে নিন।” (আয়ানা)
— “কেনো? কোথাও যাবো নাকি?” (অর্থ)
— “হুম সামনে থেকে একটু ঘুরে আসি।সবসময় তো ঘরেই থাকেন একটু বাইরে গেলে ভালো লাগবে।” (আয়ানা)
— “ইয়াহ ঠিক‌ই বলেছো,আচ্ছা একটু দাঁড়াও আমি হাত-মুখ ধুয়ে আসছি।” (অর্থ)

অর্থ আর আয়ানা দুজনে বাসা থেকে বেরিয়ে একটু সামনে হেঁটে যায়। অর্থের বাড়ি যেখানে আশেপাশে বেশ ফাঁকা পরিবেশটা জনকোলাহলমুক্ত।ওরা দুজনে এসে খোলা মাঠের সামনে দাঁড়ায়।মাঠে কিছু ছোট ছোট বাচ্চারা ফুটবল খেলছে।ওদেরকে খেলতে দেখে অর্থের আগেকার কথা মনে পড়ে যায়,সেই তিনমাস হলো ও ফুটবল থেকে বিরত আছে।ভাবতেই অবাক লাগে যে ছেলে আগে সারাদিন ফুটবল নিয়ে ব্যস্ত থাকতো সেই এখন সারাদিন ঘরে শুয়ে থাকে শুধুমাত্র ইনজুরির জন্য।অর্থ একদৃষ্টিতে বাচ্চাগুলোর দিকে তাকিয়ে একটা গভীর ঘোরের মাঝে হারিয়ে যায়।আয়ানা ওর মনের কথাটা বুঝতে পারে।আয়ানা অর্থকে হালকা ধাক্কা দিয়ে হুঁশ ফিরিয়ে এনে বলে,
— “অনেকদিন তো হলো আপনি খেলেন না। সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন কিন্তু এভাবে থাকলে তো চলবে না আপনাকে আবার ফিরতে হবে।ফুটবলটাকে ধরে রাখতে হবে।যান আজ একটু বাচ্চাদের সাথে খেলুন।বহুদিন এসব থেকে বিরত আছেন তাই নিজের অ্যাবিলিটিটাও তো দেখা উচিত।”

অর্থ আয়ানার দিকে সূক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
— “যাবো?”
— “হুম। আচ্ছা দাঁড়ান আমি ওদের ডাকছি।” (আয়ানা)
আয়ানা হাত দিয়ে ইশারা করে বাচ্চাগুলোকে ওদের কাছে ডাকে বাচ্চাগুলো ওর ডাক শুনে ছুটে চলে এলো।আয়ানা ওদেরকে বললো অর্থকে দলে নিতে। ওরা প্রথমে না করলেও পরে বললো,
— “আচ্ছা বেশ।তুমি তো বড়ো তাহলে তুমি একাই এক দল আর আমরা পাঁচজন এক দল।কি ঠিক আছে তো?”
— “হুম ঠিক আছে।আমি রাজি তোমাদের শর্তে।” (অর্থ)
— “আচ্ছা আসো আমরা খেলি।”

এতো দিন পরে মাঠে নেমে অর্থের ভীষণ ভালো লাগে।কোনো কিছুই বদলায় নি ও এখনো আগের মতোই খেলছে।অর্থ যেহেতু প্রফেশনাল ফুটবলার সেহেতু বাচ্চাগুলো ওর সঙ্গে পেরে উঠছে না।অর্থ একাই বাজিমাত করছে।অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও যখন ওরা অর্থের সঙ্গে পেরে উঠলো না তখন ছুটে আয়ানার কাছে গেলো আর বললো,
— “তোমার কথা শুনে আমরা ওকে খেলতে নিয়েছিলাম কিন্তু আমরা তো পারছি না।এবার তুমি আমাদেরকে হেল্প করো।আমরা জিততে চাই।”
— “তোমরা জিতবে।চলো তোমাদের দলে আমি খেলবো।” (আয়ানা)
আয়ানার মুখে কথাটা শুনে অর্থ খানিকটা অবাক হয়‌।ও জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বলে,
— “তুমি খেলতে পারো?”
— “একটু ধৈর্য ধরুন দেখতে পারবেন।” (আয়ানা)

আয়ানা মুচকি হেসে ওদের সাথে খেলায় যোগ দেয়।অয়ানা যোগ দেওয়ার পর থেকে অর্থের পক্ষে আর বাজিমাত করা সম্ভব হচ্ছে না কারণ আয়ানা একাই একশো।ও অর্থের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে ছুটে চলেছে।আর এক পর্যায়ে আয়ানা এতোটাই ভালো খেলে যে বাচ্চাদের টিম‌ই জিতে যায় আর অর্থ হেরে যায়।বাচ্চাগুলো তো ভীষণ খুশি আর ওদের সাথে আয়ানাও।সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে তাই বাচ্চাগুলো আর ওখানে না থেকে নিজেদের বাসায় ফিরে চললো।আয়ানা‌ও বাসায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়।

আয়ানা অর্থকে উদ্দেশ্য করে বললো,
— “চলুন সন্ধ্যা লেগে গেছে বাসায় যেতে হবে।”
— “ওয়েট আগে এটা বলো তুমি ফুটবল এতো ভালো করে খেলো কীভাবে?শুধু কি টিভিতে দেখে নাকি এর মাঝে অন্য কিছু আছে যা কেউ জানে না?” (ভ্রু কুঁচকে অর্থ)

চলবে

#মন_পাজড়ে_শুধু_তুমি_আছো?
#লেখিকা_মাইসারাহ_আরোহি?
#পর্ব_১৬

আয়ানা অর্থকে উদ্দেশ্য করে বললো,
— “চলুন সন্ধ্যা লেগে গেছে বাসায় যেতে হবে।”
— “ওয়েট আগে এটা বলো তুমি ফুটবল এতো ভালো করে খেলো কীভাবে?শুধু কি টিভিতে দেখে নাকি এর মাঝে অন্য কিছু আছে যা কেউ জানে না?” (ভ্রু কুঁচকে অর্থ)

হঠাৎ এমন প্রশ্ন করায় আয়ানা অপ্রস্তুত হয়।ও কি উত্তর দেবে বুঝতে পারে না।আয়ানাকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে অর্থ আবার‌ও বলে,
— “চুপ করে আছো কেনো,যা জানতে চাইলাম বলো।”
— “আরেহ আপনি যে কি সব বলেন।আমি তো খেলতেই পারি না।ওই টিভিতে যা দেখেছি তাই একটু আধটু পারি।তাও সেরকম ভালো না।আর আপনি অযথাই কিসব বলেন।” (আয়ানা)
— “ওহ আচ্ছা, বাট তোমার স্কিল জাস্ট আনবিলিভেবল।একটা অন্যরকম ট্যালেন্ট আছে তোমার মাঝে।” (অর্থ)
— “থাক হয়েছে আমার এতো প্রশংসা করতে হবে না।আপনার গার্লফ্রেন্ড জানতে পারলে রাগ করবেন।” (আয়ানা)

আয়ানার এই কথায় অর্থের ভীষণ রাগ হয়। অর্থ রেগে একটু জোরে করে বলে,
— “সব কথার মাঝে থার্ড পার্সন টেনে না আনলে হয় না তোমার?এত কিছু বলি বোঝো না তুমি কিছু? সবসময় একটা না একটা জিনিস উল্টা বুঝেই থাকো।এজন্য তোমাকে বলা আর গাছকে বলা দুটোই সমান।”
এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে অর্থ হনহন করে বেরিয়ে যায়।আয়ানা ওর এমন আচরণে তাজ্জব বনে যায়।
— “যাহ বাবাহ কি এমন বললাম যে এতো কথা শোনালো?আর এসব কি বলে গেলো আমাকে কি বোঝায় ও?আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না উনি কি সব বলে গেলেন।” (মনে মনে আয়ানা)
আয়ানা দ্রুত পায়ে অর্থের পিছুপিছু ছুটতে শুরু করে।

!!
আয়ানা আলমারি থেকে সব জামাকাপড় বের করে ব্যাগ গোছাচ্ছে।অর্থ বাসায় ছিলো না একটু বাইরে গিয়েছিলো।তবে মাত্র বাসায় ঢুকে ঘরে এসে অর্থ আয়ানাকে জামাকাপড় গোছাতে দেখে বললো,
— “জামাকাপড় গোছাচ্ছো যে,কোথাও যাবে?”
— “এ বাড়ি থেকে চলে যাবো।” (আয়ানা)
— “হোয়াট?কেনো?তোমাকে কি কেউ কিছু বলেছে?তুমি কেনো চলে যাবে?” (অর্থ)
— “বলেছে-ই তো।আমাকে শুধু কথা শোনায়।” (আয়ানা)
— “কে কথা শোনায়,তুমি শুধু একবার আমাকে বলো।” (অর্থ)
— “কেনো আপনি‌ই তো কথা শোনান। অলটাইম ফালতু মেয়ে,থার্ডক্লাস মেয়ে এসব বলেন।” (আয়ানা)
— “আচ্ছা তার জন্য স্যরি বলছি বাট তুমি প্লিজ যেও না।” (অর্থ)

অর্থকে কাকুতিমিনতি করতে দেখে আয়ানার মনের মধ্যে খুব শান্তি লাগে।কিন্তু ও আর বেশিক্ষণ ফাজলামো করতে পারে না তার আগেই অর্থের বাবা আর আম্মু আসেন।আর অর্থের বাবা বলেন,
— “আয়ানা মা কখন যাবি তুই?”
— “বাবা ও কোথায় যাবে? ও কি সব বলছে এ বাড়ি থেকে নাকি চলে যাবে।ও কে যেতে বারণ করো।” (অর্থ)
— “আরে চলে যাবে মানে কি? ও তো বাপের বাড়ি যাবে।তোদের বিয়ের পর তো ও একবার‌ও যায় নি।তাছাড়া ওর দাদু খুব অসুস্থ তাই ওর আব্বু আমায় ফোন করে বললো আয়ানা যাতে ওখানে গিয়ে ঘুরে আসে।” (অর্থের বাবা)
— “কিন্তু ও এখন কোথাও যাবে না ব্যাস।” (অর্থ)
— “এই কে আপনি? আপনার কথা শুনে আমি যাবো না এসব ভাবছেন? দেখুন বাবা আপনার ছেলেকে ভদ্র হতে বলুন।আমি যাবো উনি যেনো আমায় বিরক্ত না করে।” (আয়ানা)
— “আচ্ছা অর্থ ও গেলে তোর কি সমস্যা বাবা?” (অর্থের বাবা)
— “আরে সমস্যা কি বলছো,ও গেলে আমার কাজগুলো কে করবে?এখন আমার অনেক কাজ আমি একাডেমীতে জয়েন করবো।ওকে তো আমার সবকিছু রেডি করে দিতে হবে।আর তাছাড়া আমার খেয়াল তো এখন ও-ই করে।ও না থাকলে আমায় হেল্প করবে কে?” (অর্থ)
— “সে না হয় আমি আফসানাকে (সার্ভেন্ট) বলবো।” (অর্থের বাবা)
— “ওরা পারবে না।আমার রুটিন তো সব এই মেয়েটাই জানে।” (অর্থ)
— “আচ্ছা আমি বলি কি অর্থ তুই‌ও আয়ানার সাথে যা।বিয়ের পর তো তুই‌ও ও বাড়ি যাস নি।গিয়ে ঘুরে আয় দুজনের‌ও ভালো লাগবে আর ও বাড়ির সবাই‌ও খুশি হবে‌।” (অর্থের আম্মু)
— “তুমি একদম ঠিক বলেছো।অর্থ তুই যাচ্ছিস আয়ানার সঙ্গে।” (অর্থের বাবা)
— “কিন্তু বাবা…” (অর্থ)
— “কোনো কিন্তু নয়।” (অর্থের বাবা)

!!
অর্থ আর আয়ানা দুজনে আয়ানাদের বাসায় যাচ্ছে। অর্থ গাড়ি ড্রাইভ করছে আর আয়ানা তার পাশের সিটে বসে আছে।কিছুটা পথ যাওয়ার পরে অর্থ গাড়ি দাঁড় করায়।
— “আপনি এখানে থামালেন কেনো? আমাদের বাসা তো এখানে নয়,আরো পথ যেতে হবে তো।” (আয়ানা)
— “আমি জানি তোমাদের বাসা আরো দূরে।” (অর্থ)
— “তাহলে এখানে দাঁড়ালেন কেনো?” (আয়ানা)
— “বাহ রে বিয়ের পর আজ প্রথম শশুড়বাড়ি যাচ্ছি সবার জন্য তো গিফট কিনতে হবে।নাহলে সবাই কি ভাববে বলে তো।আর তাছাড়া তোমার দাদু অসুস্হ তার জন‌্য‌ও তো কিছু নিতে হবে।” (অর্থ)
— “ওহো ভুলেই গেছিলাম।” (আয়ানা)
— “তা তো যাবেই। আচ্ছা তুমি গাড়িতে বসো আমি সব কেনাকাটা করে আনছি।” (অর্থ)
— “আপনি একা পারবেন?নাহলে আমি আসি আপনার সাথে?” (আয়ানা)
— “না ইটস ওকে,পারবো আমি।” (অর্থ)

অর্থ একাই শপিংমলে যায়।সবার জন্য গিফটস কিনে নিয়ে অর্থ গাড়িতে এসে আবার ড্রাইভিং শুরু করে।প্রায় ২০ মিনিট পর ওরা আয়ানাদের বাসায় এসে পৌঁছে।দু’জনে বাসায় ঢুকতেই অর্থ আয়ানার আব্বু আম্মু দুজনকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে,কুশলাদি বিনিময় করে।তাছাড়া বাকি সবার সাথেও অর্থ হেসে হেসে সুন্দর করে কথা বলছে।কিন্তু অর্থের এতো ভালো ব্যবহার সব আয়ানার কাছে অদ্ভূত লাগছে,ও তো মুখ ফসকে সবার সামনে বলেই দিলো,
— “আজকে কি সূর্য দক্ষিণ দিকে উঠেছে নাকি? আপনি দেখি আমার বাড়ির সবার সাথে এতো ভালো ব্যবহার করছেন,আচ্ছা আপনি এতো ভদ্র কবে থেকে হলেন?শোল্ডার সার্জারির সাথে সাথে আপনার মাথার স্ক্রু গুলোও কি চেঞ্জ করে দিয়েছে নাকি ডক্টররা?”

আয়ানার এমন কথা শুনে অর্থ ওর দিকে দাঁত কটমট করে তাকায়।আয়ানার আম্মু আয়ানাকে ধমক দিয়ে বললো,
— “ছিঃ আয়ানা এসব কি বলছিস তুই।এসব কথা বলতে আছে?”
— “না আম্মু তুমি বুঝতেছো না।আসার আগেও এই লোকটা এতোটা ভালো ছিলো না কিন্তু এখন এতো ভালো হলো কিভাবে? এ তো দেখি গিরগিটির মতো মুহুর্তেই রং বদলাচ্ছে।” (আয়ানা)
— “তুমি আমাকে গিরগিটি বলছো? দেখেছেন আন্টি আমাকে কিভাবে সবার সামনে অপমান করছে।আচ্ছা আন্টি আপনাদের সাথে কথা বলা কি আমার অপরাধ?” (অর্থ)
— “না বাবা অপরাধ কেনো হতে যাবে।তুমি আমাদের সাথে কথা বলেছো তাতে তো আমরা খুশি হয়েছি।আর আয়ানা তুই ছেলেটার সাথে এমন কেনো করছিস?একটু চুপ কর।বাইরে থেকে এসেছিস চল তোরা ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিবি।” (আয়ানার আম্মু)
— “কিন্তু আম্মু তুমি বুঝতে পারছ না হঠাৎ এতো পরিবর্তন আমাকে বড়‌ই ভাবাচ্ছে।” (আয়ানা)
— “আহ আয়ানা কি হচ্ছে কি!এখন এসব বাদ দাও।যাও জামাইকে নিয়ে ঘরে গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে একটু রেস্ট করো।তারপর গিয়ে দাদুর সাথে দেখা করে আসবে।” (আয়ানার আব্বু)
— “আচ্ছা ঠিক আছে।” (মন খারাপ করে আয়ানা)
আয়ানা অর্থকে মুখ ভেংচি দিয়ে পাশ কেটে চলে গেলো।আয়ানার আম্মু ওর এমন কান্ডে বিরক্ত হলেন কিন্তু অর্থের সামনে কিছু বললেন না।পরে রিয়াকে বললেন অর্থকে ঘরে নিয়ে যেতে।

রিয়া অর্থকে‌ ঘর দেখিয়ে দিয়ে চলে যায়।অর্থ ঘরে গিয়ে দেখে আয়ানা মুখ ঘুরিয়ে বসে আছে।ও আয়ানার সামনে এসে বললো,
— “তখন সবার সামনে আমাকে অপদস্থ না করলে তোমার হতো না তাই না?”
— “ঠিক ধরেছেন আপনাকে অপদস্থ না করলে আমার একদম‌ই হতো না মিস্টার বিচুটি পাতা।” (আয়ানা)
— “এই একদম এসব আনকালচারাল নামে ডাকবে না।ডাকতে হলে অর্থ বলে ডাকবে নয় তো ওসব ফালতু কথা বলবে না।” (অর্থ)
— “দরকার‌ও নেই আমার আপনাকে ডাকার। আপনাকে ডাকার জন্য তো অনেকেই আছে।” (আয়ানা)
— “হুম আছে তো, তুমি না ডাকলে কি হবে আমার জন্য কি লোকের অভাব পড়বে? বাই দ্যা ওয়ে আমার জামা বের করে দাও আমি ফ্রেশ হবো।” (অর্থ)
— “হুম দিচ্ছি দাঁড়ান।” (আয়ানা)

আয়ানা ব্যাগ থেকে অর্থের জামাকাপড় বের করে দিলো।অর্থ সেগুলো নিয়ে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো।আয়ানা‌ও ততোক্ষণে ফ্রেশ হয়ে নেয়।
— “চলো তোমার দাদুর সঙ্গে দেখা করে আসি।” (অর্থ)
— “হ্যাঁ চলুন।বাট ওখানে গিয়ে কিন্তু বেশি প্যাকপ্যাক করবেন না দাদু আগেকার যুগের মানুষ আপনার অতো প্যাকপ্যাক সহ্য করতে পারবে না।” (আয়ানা)
— “আমি কি তোমার মতো তারছেঁড়া যে কোথায় কিভাবে আচরণ করতে হয় জানবো না?” (অর্থ)
কথাটা বলে অর্থ আগে আগে চলে গেলো।আয়ানা এতোক্ষণে বুঝতে পারলো অর্থ ওকে কি বলে সম্বোধন করলো।
— “কিহ আমি তারছেঁড়া‌।দাঁড়াও আজ ওর একদিন কি আমার একদিন।” (আয়ানা)
আয়ানাও রেগে অর্থের যাওয়া পথে ছুটলো।

!!
রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে সবাই নিজেদের ঘরে চলে গিয়েছে।কেউ কেউ আবার এতোক্ষণে ঘুমিয়েও পড়েছে। অর্থ আয়ানার কথামতো বারান্দায় দশপাক দিয়ে ঘরে এসে দেখে আয়ানা বিছানা রেডি করছে।
— “আপনার বিছানা তৈরি,যান শুয়ে পড়ুন।” (আয়ানা)
— “কিন্তু তুমি কোথায় ঘুমাবে?” (অর্থ)
— “কেনো? মেঝেতে।” (আয়ানা)
— “পাগল নাকি!!মেঝেতে জায়গা ক‌ই।ঘরে তো জিনিসপত্র দিয়েই ভরপুর,নিচে তো শোবার জায়গা নেই।এই অল্প জায়গায় কিভাবে ঘুমাবে?” (অর্থ)
— “কথাটা খারাপ বলেন নি।আচ্ছা আপনি ঘুমান আমি নাহয় রিয়া আপুর সাথে শোবো।” (আয়ানা)
— “হায়রে তারছেঁড়া।তুমি রিয়া যদি রিয়া আপুর সাথে ঘুমাও তাহলে তোমার আব্বু আম্মু যদি জানেন তাহলে কি ভাববেন?উনারা তো এসব জানেন না তাই না।” (অর্থ)
— “তাহলে আর কি করবে সারারাত দাঁড়িয়ে থাকবো।” (আয়ানা)
— “তার দরকার নেই,তুমি বরং আজকে বিছানাতে ঘুমাও।” (অর্থ)
— “আর আপনি কি সাত আসমানে যাবেন?” (আয়ানা)
— “না তো আমিও বিছানাতেই শোবো।” (অর্থ)

কথাটা শুনে আয়ানা চোখ বড় বড় করে বললো,
— “কিহ? আপনার সাথে আমি শুতে পারবো না।আমি তো আপনার সাথে কখনো একসাথে বিছানায় ঘুমাই নি।”
— “তাতে কি আজ ঘুমাও।আরেহ পরিস্থিতির সাথে নিজেকে এডজাস্ট করতে শেখো। তাছাড়া মাঝে কোলবালিশ দিও।আর সবচেয়ে বড় কথা আমার নিজের প্রতি কনফিডেন্স আছে তোমাকে কোনোরকম বিরক্ত করবো না‌।” (অর্থ)
— “না না আমার পক্ষে সম্ভব না।” (আয়ানা)
— “এমন ভাবে বলছো মনে হচ্ছে আমি পরপুরুষ।পরপুরুষের সাথে তোমাকে থাকতে বলছি।” (অর্থ)
— “তাই তো আপনি তো পুরুষ,আপনি তো নারী নন।আমার এসবে অভ্যেস নেই।” (আয়ানা)
— “আমার মনে হয় খুব অভ্যেস আছে।আমি কি পর নারীর সাথে থাকি নাকি।এতো করে বলছি বিশ্বাস হচ্ছেনা।ঠিক আছে সারারাত দাঁড়িয়েই থাকো,আমি শুয়ে পড়লাম আমার প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে।” (রেগে অর্থ)

অর্থ কপট রাগ দেখিয়ে বিছানার এক পাশে শুয়ে পড়লো।আয়ানা বেশ কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকলো।কিন্তু আর কোনো উপায় নেই বাধ্য হয়ে মাঝখানে বড় কোলবালিশ দিয়ে আয়ানা অর্থের বিপরীত পাশে শুয়ে পড়ে।একটু পরে দুজনেই গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়।

!!
সকালে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম ভাঙ্গে আয়ানার। পিটপিট করে চোখ মেলতেই ও নিজেকে কেমন আবদ্ধ উপলব্ধি করে।আয়ানা চোখ মেলে পাশে তাকাতেই দেখে অর্থ ওকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে আর ওর মাথাটা অর্থের বুকের উপরে।আয়ানা তৎক্ষণাৎ জোরে একটা চিৎকার করে লাফিয়ে উঠে পড়ে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here