মন_পাজড়ে_শুধু_তুমি_আছো?,পর্ব_১৯,২০

0
1327

মন_পাজড়ে_শুধু_তুমি_আছো?,পর্ব_১৯,২০
লেখিকা_মাইসারাহ_আরোহি?
পর্ব_১৯

আয়ানা একটু ইতস্তত বোধ করেই বলে,
— “আসলে আপু তোমার ভাইয়ের কি সত্যি কোনো গার্লফ্রেন্ড আছে? না মানে তুমি কি এই বিষয়ে কিছু জানো?”
— “ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড?আমার ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড আছে?” (অবাক হয়ে অর্থি)
— “হুম আপু আছে।আমাদের বিয়ের দিন রাতেই তোমার ভাই আমাকে বলেছে তার নাকি গার্লফ্রেন্ড আছে।ব্যাস এটুকুই আমাদের মাঝে এজন্য স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক‌ও নেই‌।” (আয়ানা)
— “কিন্তু সে কে? আমি তো এসব কিছু জানি‌ই না।” (অর্থি)
— “আমিও না আপু।উনি শুধু আমায় বলেছেন উনার গার্লফ্রেন্ড আছে আর উনি তাকে ভালোবাসেন।আর এটা বলার পরেই উনি উনার মতো আর আমি আমার মতো।আমি ভেবেছিলাম তুমি জানো কিন্তু এখন দেখছি তুমিও জানো না।” (আয়ানা)
— “না আয়ানা আমার মনে হয় এর মধ্যে কোনো গন্ডগোল আছে।দেখো আমি আমার ভাইকে যতদূর চিনি ওর গার্লফ্রেন্ড থাকলে ও নিশ্চয়ই বাড়িতে বলতো।হ্যাঁ বিয়েতে অমত করেছিলো তবে সেটা অন্য কারণে কিন্তু ওর যে গার্লফ্রেন্ড আছে এই কথাটা আমি ঠিক মানতে পারছি না।” (অর্থি)
— “কিন্তু আপু এটাই সত্যি উনি নিজের মুখে আমাকে বলেছেন।” (আয়ানা)

অর্থি ওর হাতের ব‌ইটা সাইডে রেখে আয়ানাকে বললো,
— “আমার মনে হয় অর্থ তোমার সাথে ইয়ার্কি করেছে।আসলে এই বিয়েতে ওর অমত ছিল জানি না কেনো যেনো ও বিয়ে জিনিসটাকে সহ্য‌ই করতে পারে না।ও বাবাকে বলেছিলো যে আমাকে জোর করে বিয়ে দিচ্ছ দাও বাট যাকে বিয়ে করবো সে কিন্তু আমার কাছ থেকে কোনো রকম সুযোগ সুবিধা পাবে না।অর্থ হয়তো সে কারণেই তোমাকে মিথ্যে বলেছে যাতে তুমি ওর কাছে স্ত্রীর অধিকার না চাইতে পারো।”
— “কিন্তু আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না। সর্বক্ষণ যেমন গার্লফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড করেন আমার তো
মনে হয় সত্যি কেউ না কেউ আছে।” (আয়ানা)
— “দেখো আয়ানা তোমার মনে হ‌ওয়া স্বাভাবিক।কারণ ও যে শুরুতেই এই কথাটা বলে তোমাকে সীমাবদ্ধ করে রেখেছে।তাই তোমার মনেই হতে পারে এটা সত্যি।কিন্তু একটা জিনিস আমাকে বলো অর্থের যদি গার্লফ্রেন্ড থাকতো তাহলে তো ও সারাদিন ফোনে কথা বলতো, সারাদিন বাইরে থাকতো ওর হাবভাব দেখেই বোঝা যেতো ওর কারো সাথে রিলেশন আছে। কিন্তু তুমি কি কখনো এমন কোনো লক্ষণ দেখেছো যেটা থেকে তুমি বলতে পারো এটা সত্যি?” (অর্থি)

অর্থির কথা শুনে আয়ানা বিষয়টা ভাবে।সত্যি‌ই এতদিন ধরে ওদের বিয়ে হয়েছে কিন্তু আয়ানা কখনো অর্থকে কারো সাথে ফোনে কথা বলতে দেখে নি,নিয়মিত দেরি করে বাসায় ফিরতেও দেখে নি।অর্থ সবসময় একদম রিল্যাক্স মুডে থেকেছে।আয়ানা সবকিছু শুরু থেকে ভাবছে, অর্থি আবার‌ও বললো,
— “আসলে অর্থ খুবই ছেলেমানুষ।কখন কি বলে নিজেও জানে না।আর মনে হয় ও কোনো একটা কিছু ভেবে তোমাকে এই কথাটা বলেছে যাতে তুমি ওর ব্যাপারে নাক না গলাও।আর এটাই ঠিক তুমিও ওর কথাকে সত্যি ভেবে নিজের মতো থেকেছো ওর কোনো কাজে নাক গলাও নি।কিন্তু আয়ানা আমি তো আমার ভাইকে চিনি ও এখন আর আগের মতো নেই। তোমার সাথে এক‌ই ছাদের তলায় থেকে তোমার সংস্পর্শে এসে ও একদম পাল্টে গেছে।ও আর আগের মতো নেই,ওর মধ্যে পরিবর্তন ঘটেছে।আর আমি এটাও বলতে পারি যে আমার ভাই শুধু তোমাকে ভালোবাসে,ওর ওসব গার্লফ্রেন্ড কিংবা প্রেমিকা কিছু নেই ওসব মিথ্যে কথা।ও মুখে যাই বলুক না কেনো মন থেকে ও তোমাকেই চায়,তোমাকেই ভালোবাসে,তোমার সাথেই থাকতে চায়।”
— “কিন্তু আপু…..” (আয়ানা)
— “আর কি কিন্তু কিন্তু করবে আয়ানা,
তুমি একটা মেয়ে তোমার পক্ষে একটা ছেলেকে দেখে খুব সহজে বোঝা উচিত তার মনে কি চলছে।আর তুমি আমার ভাই এর এতোটা কাছে থেকেও বুঝতে পারছো না যে ও তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছে।হুম আয়ানা অর্থ তোমার প্রেম নেশায় পাগল।ওকে একটু সুযোগ দাও দেখবে ও নিজেই তোমাকে সবটা বলে দেবে।আর ব্যাসিক্যালি আমিও এটাই চাই।তোমাদের দুজনকে একসাথে দেখলেই তো আমাদের সবার শান্তি।তুমি আর দূরে দূরে থেকো না আমি যা বলছি সেগুলো শোনো দেখবে সবকিছু একদম পরিষ্কার হয়ে গেছে। অর্থ নিজে থেকেই সব বলে দেবে।” (অর্থি)

অর্থি আয়ানাকে অনেক বোঝায়।আয়ানা‌ও অর্থির কথা বিশ্বাস করে তবে অর্থের মুখ থেকে সেটা না শোনার আগে আয়ানা কিছুতেই পুরোপুরি ভাবে সবটা মেনে নিতে
পারছে না।ওর মনে শুধু একটাই কথা অর্থ যেনো নিজের মুখে ওকে সবটা বলে।তবে এ বিষয়ে অর্থি আয়ানাকে ফুল সাপোর্ট করবে।

!!
দুইদিন পর,
আয়ানা ঘরের জিনিসপত্র গুলো নির্দিষ্ট জায়গায় গুছিয়ে রাখছে,এমন সময় ওর ফোন বেজে উঠে।আয়ানা ফোন হাতে নিয়ে দেখে এশা ফোন করেছে।
— “হুম এশা বল,কেমন আছিস?” (আয়ানা)
— “তোকে ছাড়া কি করে ভালো থাকবো বল।তোকে যে প্রতিনিয়ত খুব মিস করি।তুই কি আর গ্রাউন্ডে আসবি না? খেলবিনা কখনো ফুটবল?” (এশা)
— “না রে খেলবো আমি। আসলে সবকিছু থেকে তো বেরিয়ে এসেছি।এখন কি করে গ্রাউন্ডে যাবো বল।” (আয়ানা)
— “আরেহ কি করে মানে?তুই আন‌ইজি কেনো ফিল করছিস?তুই জানিস কোচ এভরি ডে তোর কথা বলে,তোর জন্য আমরা সবাই অপেক্ষা করি।তোকে ছাড়া আমাদের টিম অসম্পূর্ণ আনান‌ইয়া।প্লিজ তুই একবার আয় আমরা সবাই তোকে অ্যাপ্রিসিয়েট করবো‌।আর তাছাড়া ভাইয়া তো এখন সুস্থ,উনিও একাডেমীতে জয়েন করেছে তাহলে তোর আসতে কি সমস্যা?” (এশা)
— “হুম আচ্ছা ঠিক আছে আমি কাল থেকে আসবো।” (আয়ানা)
— “সত্যি??” (খুশি হয়ে এশা)
— “হুম সত্যি।” (আয়ানা)
— “আচ্ছা এখন রাখছি আমি গিয়ে এই সুসংবাদটা সবাইকে দেই।” (এশা)
— “উহু একদম না এটা সারপ্রাইজ থাকবে বুঝেছিস?” (আয়ানা)
— “আচ্ছা জানু একদম চিন্তা করিস না।আমি কাওকে বলছি না।” (এশা)
— “ঠিক আছে, আল্লাহ হাফেজ, রাখছি।” (আয়ানা)
আয়ানা কথা বলা শেষ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মুচকি হেসে আবার কাজে হাত লাগায়।

রাতে অর্থ আর আয়ানা দুজনে বসে আছে।এমন সময় আয়ানা অর্থকে বলে,
— “আপনাকে একটা কথা বলবো।”
— “হুম বলো একটা কেনো যতখুশী বলো।” (অর্থ)
— “অ্যা যতখুশী মানে? আমার তো একটাই কথা বলার আছে।” (আয়ানা)
— “আচ্ছা বাবা সেটাই বলো সমস্যা কি।” (অর্থ)
— “মানে হচ্ছে গিয়ে আমি আবার কাল থেকে কলেজে যেতে চাই।এতো দিন পড়াশোনা করা হয় নি তাই এখন থেকে করতে হবে।” (আয়ানা)
— “হুম ওকে যেও সমস্যা নেই।আই নো বাসার কেউ এই বিষয়ে আপত্তি করবে না।” (অর্থ)

অর্থের সায় পেয়ে আয়ানা মনে মনে খুশি হয় তবে সেটা প্রকাশ করে না।এখন থেকে ও আবার আগের মতোন কলেজে যাওয়ার কথা বলে গ্রাউন্ডে যাবে।তবে আয়ানার ভীষণ ভয় লাগে সবাই জানতে পারলে ওকে যদি ভুল বোঝে সেজন্য।কিন্তু ওর ধারণা কেও সহজে এগুলো জানতে পারবে না।তাই ও সবসময় নিশ্চিন্তেই থাকে।

!!
দেখতে দেখতে কয়েকটা দিন কেটে যায়।আয়ানা এখন প্রতিদিন প্র্যাকটিসে যায়,ও কামব্যাক করাতে ওর কোচ ভীষণ খুশি হয়েছে তাছাড়া ওর সাথে যারা থাকে তারাও অনেক খুশি।সবাই ওকে অ্যাপ্রিসিয়েট করে।আয়ানার‌ও মনটা প্রশান্তিতে ভরপুর কারণ ও ধীরে ধীরে ওর স্বপ্নের দিকে এগোচ্ছে।

আজ সারাদিনের প্র্যাকটিস শেষ করে আয়ানা অনেকক্ষণ আগেই বাসায় এসেছে।
তারপর শাওয়ার নিয়ে,লাঞ্চ করে একটু বিশ্রাম নিয়ে এখন খাতা কলম নিয়ে বসেছে।আয়ানা এখন বিছানায় শুয়ে শুয়ে খাতায় লেখালেখি করছে,তা দেখে অর্থ ওকে জিজ্ঞেস করলো,
— “এতো গভীর মনোযোগ দিয়ে লেখালেখি করছো তোমার পরীক্ষা নাকি সামনে?”
— “উহু পরীক্ষা নয়।আমি তো লিস্ট বানাচ্ছি।” (আয়ানা)
— “কিসের লিস্ট?” (অর্থ)
— “আরেহ আমার সাবান,শ্যাম্পু,ফেস‌ওয়াশ,স্নো,পাউডার, পারফিউম,কাজল,তেল,লোশন সব শেষ হয়ে গেছে।তাই কি কি লাগবে লিখছি একটু পরে লিমন (সার্ভেন্ট) ভাইকে দেবো।উনি এনে দিবেন।” (আয়ানা)
— “লিস্ট করা হয়ে গেলে রেডি হয়ে নিও।” (অর্থ)
— “কেনো,রেডি হবো কেনো?” (ভ্রু কুঁচকে আয়ানা)
— “কজ তোমাকে নিয়ে শপিং এ যাবো।আর লিস্ট টা লিমন ভাইকে দিতে হবে না।ওটা নিজের সঙ্গেই নিও আরো কি কি লাগে মনে করো।আমি সব কিনে দেবো।” (অর্থ)
— “আপনার টাকায় আমি কিছু কিনবো না।আপনি পরে খোঁটা দেবেন।” (আয়ানা)
— “হোয়াট ডু ইউ মিন বাই খোঁটা?আমাকে দেখে কি তোমার মনে হয় যে আমি তোমাকে এগুলো কিনে দিয়ে কথা শোনাবো?” (অর্থ)
— “না বলা তো যায় না আপনার কখন কি হয়।” (আয়ানা)
— “এসব ফালতু কথাবার্তা বন্ধ কর। সবসময় শুধু মেজাজটা খারাপ না করে দিলে তো তোমার হ‌য়‌ই না।” (রেগে অর্থ)

!!
বিকেলবেলা অর্থ আর আয়ানা শপিং এ যায়।তবে আয়ানা অর্থকে বলেছে ওকে যাতে কেউ চিনতে না পারে তাই বাধ্য হয়ে অর্থকে মাস্ক পরতে হয়েছে।আয়ানার যেগুলো লাগতো ও সবকিছু কিনে নিলো।
— “আমার সব কেনা শেষ।চলুন এখন বাসায় যাবো।” (আয়ানা)
— “তুমি গাড়ির কাছে গিয়ে দাঁড়াও,আমি পে করে আসছি।” (অর্থ)
— “আচ্ছা।” (আয়ানা)

আয়ানা শপিংব্যাগগুলো নিয়ে গাড়ির কাছে এসে দাঁড়ায়।অর্থ সব বিল পে করে গাড়ির কাছে আসতেই দেখে একটা ছেলে আয়ানার হাত ধরে আয়ানার সাথে কথা বলছে।এটা দেখে অর্থের মেজাজ গরম হয়ে যায়,ও সঙ্গে সঙ্গে ঝড়ের গতিতে গিয়ে ছেলেটার মুখে জোরে একটা পাঞ্চ করে।আর ছেলেটা তৎক্ষণাৎ ঠাস করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

চলবে

#মন_পাজড়ে_শুধু_তুমি_আছো?
#লেখিকা_মাইসারাহ_আরোহি?
#পর্ব_২০

আয়ানা শপিংব্যাগগুলো নিয়ে গাড়ির কাছে এসে দাঁড়ায়।অর্থ সব বিল পে করে গাড়ির কাছে আসতেই দেখে একটা ছেলে আয়ানার হাত ধরে আয়ানার সাথে কথা বলছে।এটা দেখে অর্থের মেজাজ গরম হয়ে যায়,ও সঙ্গে সঙ্গে ঝড়ের গতিতে গিয়ে ছেলেটার মুখে জোরে একটা পাঞ্চ করে।আর ছেলেটা তৎক্ষণাৎ ঠাস করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।অর্থ
ছেলেটার কলার চেপে ধরে দাঁড় করায় আর রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
— “হাউ ডেয়ার ইউ টাচ হার?অ্যান্সার মি হাউ ডেয়ার ইউ টাচ হার!”
ছেলেটা কিছু বলে না, অর্থের আরো রাগ হয় যার কারণে ও ছেলেটাকে আরেকটা থাপ্পড় মেরে দেয়।তারপর যখন অর্থ আরো একটা থাপ্পড় মারার জন্য হাত তোলে তখন‌ই আয়ানা কর হাতটা চেপে ধরে।
— “কি করছেন কি?ওকে এভাবে মারছেন কেনো?আরে ও আমার ক্লাসমেট।” (আয়ানা)

কথাটা শুনে অর্থ তৎক্ষণাৎ ছেলেটির করার ছেড়ে দেয়।ছেলেটা মার খেয়ে এখন অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।অর্থ কিছু বললো না হনহন করে চলে গিয়ে গাড়িতে বসলো।আয়ানা মুখ কাচুমাচু করে ছেলেটাকে স্যরি বলে তাড়াতাড়ি স্হান ত্যাগ করলো।

বাসায় এসে গেইটের সামনে গাড়ি রেখে অর্থ হনহন করে কাওকে কিছু না বলে সোজা ঘরে চলে যায়। অর্থ ঘরে গিয়ে আনমনে জানালেন ধারে গিয়ে দাঁড়ায়।আয়ানা সব শপিং ব্যাগগুলো হাতে করে এনে জোরে করে বিছানায় রাখে আর অর্থকে জিজ্ঞেস করে,
— “তখন ওইরকম ব্যবহার করলেন কেনো? আর সবচেয়ে বড় কথা হলো আপনি ওকে মারলেন কেনো? কি করেছিলো ও?”
— “ও তোমার হাত ধরে ছিলো।” (দাঁতে দাঁত চেপে অর্থ)
— “তো?ও আমার বন্ধু হয় আমার হাত ধরতেই পারে।” (আয়ানা)
— “না পারে না।তোমার হাত কোনো প্রোডাক্ট নয় যে, যে কেউ চাইলেই টাচ করবে।” (অর্থ)
— “শুনুন আমার হাত কে ধরলো না ধরলো তাতে আপনার কি? আপনি কেনো ওকে মারবেন? আর অযথা যে ওকে মারলেন একটা স্যরি তো বলতে পারতেন।কি ভাবলো ও?” (আয়ানা)
— “যা ভাবার ভাবুক আই ডোন্ট কেয়ার।আর আমি যা করেছি বেশ করেছি।ফার্দার আমার সামনে এমন ঘটনা ঘটলে আমি আবার সেইম কাজ‌ই করবো।” (অর্থ)
— “কেনো করবেন?এটা আমার হাত সুতরাং আমার হাত কে ধরবে না ধরবে ওটা আমার ব্যাপার।আপনার বলার কোনো রাইট নেই।” (আয়ানা)
— “একশো বার আছে।আমার যদি বলার রাইট না থাকে তাহলে তোমাকে স্পর্শ করার‌ও কারো রাইট নেই।মাইন্ড ইট।” (অর্থ)

কথাটা বলে অর্থ পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নেয় কিন্তু আয়ানা পথ আটকে দাঁড়ায় এবং জিজ্ঞেস করে,
— “আমার প্রশ্নের আগে উত্তর দিন। আমার বিষয়ে আপনার কেনো এতো সমস্যা?কেনো ওমন ব্যবহার করলেন?কেনো মারলেন ওকে?”
— “কারণ আমি…..” (অর্থ)
এটুকু বলে থেমে যায় অর্থ।আয়ানা ভ্রুযুগল কুঁচকে বললো,
— “আপনি কি?”
— “না কিছু না।সরো তো আমাকে যেতে দাও।” (অর্থ)
— “একদম না।এটাকে সিনেমা পান নি যে অর্ধেক বলে আপনি চলে যাবেন।একদম সাফ সাফ উত্তর দিন।তাড়াতাড়ি বলুন।” (আয়ানা)

তবুও অর্থ কোনো জবাব দেয় না।এবার আয়ানার ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেলো ও বারবার জিজ্ঞেস করতে থাকলো আর এক পর্যায়ে অর্থ মুখ ফস্কে বলে ফেললো,
— “কজ আই লাভ ইউ।ইয়েস আই লাভ ইউ।অ্যান্ড দ্যাটস হোয়াই আই ডোন্ট ওয়ান্ট অ্যানিওয়ান টাচ ইউ উইদাউট মি।আন্ডারস্ট্যান্ড?”
কথাটা শুনে আয়ানা নিরব দৃষ্টিতে অর্থের চোখের দিকে তাকায়।ও একদম নিরব হয়ে গেছে,ওর মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। অর্থের লালচক্ষু স্পষ্ট জানান দিচ্ছে আয়ানার প্রতি ওর ভালোবাসা জন্ম নিয়েছে।ও শুধু আয়ানাকে চায়।কিছুক্ষণ নিরব থাকার পর আয়ানা মিনমিন করে বললো,
— “শরীর ঠিক আছে আপনার?কোনো কিছু হয় নি তো? আপনি কি সজ্ঞানে আছেন নাকি মদ্যপ অবস্থায় আছেন?”
— “হোয়াট?কি বলছো এসব?আমি ভদ্র ছেলে আমি ড্রিংকস করি না।” (অর্থ)
— “তাহলে একটু থার্মোমিটার দিয়ে মেপে দেখি তো জ্বর এলো নাকি।” (আয়ানা)
— “জাস্ট শাট আপ।পাগল হয়ে গেলে নাকি?” (অর্থ)
— “হ‌ওয়ার‌ই তো কথা।আপনার কথা শুনে তো আমার গাঁ মাথা ঘুরছে।আচ্ছা আপনি সত্যি করে বলুন ঠিক আছেন তো?” (আয়ানা)

অর্থ চরম বিরক্ত হয়ে বললো,
— “ফাজলামো বন্ধ করো।এসব সহ্য হচ্ছে না কিন্তু।আমি সিরিয়িসলি বলছি।”
— “এহহ সিরিয়াসলি বলছি,ক্যারেক্টারলেস লোক একটা!!এই আপনি না বলেছেন আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে তাহলে এখন আবার কোন সাহসে আমাকে আই লাভ ইউ বলছেন?বলুন, উত্তর দিন।” (আয়ানা)
— “কোনোকিছু বলতে আমি পারবো না।আমাকে যেতে দাও।” (অর্থ)
— “না দেবো না।আজ আপনাকে সবকিছু বলতেই হবে।” (আয়ানা)

আয়ানা অর্থকে টেনে নিয়ে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো।
— “উফ কি হচ্ছে কি?এমন করছো কেন?” (অর্থ)
— “যা করছি বেশ করছি।এখন বলুন আপনার গার্লফ্রেন্ড থাকা সত্ত্বেও আপনি কেনো আমাকে আই লাভ ইউ বলছেন? টিটকারি মারছেন আমাকে?” (আয়ানা)
— “টিটকারি তাও আবার তোমাকে?তোমাকে টিটকারি মারার সাধ্য আমার আছে নাকি?গুন্ডা মেয়ে একটা।” (অর্থ)
— “আপনি গুন্ডা।আপনার ২৮ গুষ্টি গুন্ডা।” (আয়ানা)
— “একদম ফ্যামিলি নিয়ে কথা বলবে না বলে রাখলাম।” (অর্থ)
— “বেশ করবো।আর ভালো করে শুনুন আমি আপনাকে ভালোবাসি না।” (আয়ানা)
— “আই নো দ্যাট।আর আমার‌ও না তোমার মতো থার্ডক্লাস,ফালতু মেয়েকে ভালোবাসার কোনো ইচ্ছে নেই।আমিও তোমাকে ভালোবাসি না।” (অর্থ)

কথাটা বলে অর্থ উঠে দাঁড়ায়,আয়ানা ওর হাত খপ করে ধরে আবার বিছানায় বসায়।আয়ানখ চোখ রাঙিয়ে অর্থকে বললো,
— “এক পাও নড়বেন না এখান থেকে চুপচাপ এখানে বসবেন।আর কি বললেন আপনি আমাকে ভালোবাসেন না,তাহলে একটু আগে কেনো বললেন আপনি আমাকে ভালোবাসেন?ইয়ার্কি হচ্ছে আমার সাথে?আমাকে কি হাতের পুতুল পেয়েছেন?”
— “কোনো কিছু হচ্ছে না।সারাদিন ঝগড়া করে ঝগড়ুটে গুন্ডা মেয়ে ওকে নাকি আমি ভালোবাসবো।আমার কি ভালোবাসার মানুষের অভাব পড়েছে নাকি?” (অর্থ)
— “না না আপনার জন্য তো মেয়ের গোডাউন রেডি আছে।ক্যারেক্টারলেস লোক একটা!!জীবনে কতগুলো মেয়ের সাথে ফ্লার্ট করেছেন হ্যাঁ?” (আয়ানা)
— “হোয়াট ডু ইউ থিংক অ্যাবাউট মি আ’ম আ প্লে বয়?” (জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে অর্থ)
— “তা কখন বললাম আমি?” (আয়ানা)
— “বলা না বলা সমান।তোমার অন্যান্য কথা এটাই প্রমাণ করে যে তুমি আমার সম্বন্ধে ঠিক ভাবো।বাট বিলিভ মি ফ্লার্ট তো দূর জীবনে কোনো মেয়ের হাত‌ও স্পর্শ করি নি।কথা বললেও মাথা নিচু করে কথা বলেছি।আর তুমি আমার লাইফে আসার পর তো কোনো মেয়ের দিকে ফিরেও তাকাই নি। তাহলে তুমি কিভাবে বলতে পারো আ’ম আ প্লে বয়?” (অর্থ)

অর্থ এমনভাবে কথাগুলো বললো যে ওর চোখের চাহনি স্পষ্ট জানান দিচ্ছে আয়ানার কথায় ও ভীষণ কষ্ট পেয়েছে।আয়ানাও নিজের ভুল বুঝতে পারলো,ওর‌ও খারাপ লাগছে।কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর আয়ানা বললো,
— “আর আপনার গার্লফ্রেন্ড?সেই বিয়ের দিন থেকে এই একটা কথা বলেই তো একটা পাহাড় বানিয়ে রেখেছেন।তো আপনার গার্লফ্রেন্ড কোথায়?আদৌ কি আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে?”
— “না।মিথ্যে বলেছিলাম তোমায়।ওই মুহূর্তে বিয়ে করার কোনো ইচ্ছা ছিলো না আমার বাবা-মা জোর করে তাদের সিদ্ধান্ত আমার ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল।যার কারণে রেগে বাবাকে বলেছিলাম বিয়ে দিচ্ছ ঠিক আছে বাট যার সাথে দিচ্ছ তার সাথে কখনো আমার কোনো রকম সম্পর্ক গড়ে উঠবে না।আর ঠিক এই একটা কারণেই জেদ থেকে তোমাকে ওইদিন এই কথা বলেছিলাম।যাতে তুমি নিজে থেকে আমাকে ছেড়ে চলে যাও।কিন্তু আমি কখনো ভাবতে পারিনি তোমাকে ভালোবেসে ফেলবো।” (অর্থ)
— “হুম ভালোবাসা এমন একটা জিনিস যা বলে কয়ে আসে না।হঠাৎ করেই হয়ে যায়।কিন্তু আপনি কাজটা একদমই ঠিক করেন নি।এই একটা কথায় বাবা-মা যতটা কষ্ট পেয়েছে তার চেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছি আমি।একটা মেয়েকে যখন বিয়ের রাতে তার বর এই কথাটা বলবে তখন সেই মেয়েটার কত যে কষ্ট হয় সেটা আপনি বুঝবেন না।” (আয়ানা)
— “আমি জানি আমার ভুল হয়ে গেছে ইভেন মারাত্মক ভুল এটা।আর তার জন্য আ’ম এক্সট্রেমলি স্যরি।বাট বিলিভ মি আয়ানা আমি তোমার সঙ্গে ফ্লার্ট করছি না।আমি সত্যি‌ই তোমাকে ভালোবাসি।আর আমার জীবনে প্রথম নারী তুমিই।” (অর্থ)

অর্থের চোখের কোণে জল স্পষ্ট।এক প্রকার অনুশোচনা থেকেই ওর চোখের কোণে জল এসে গেছে।ও যাতে আর ভেঙে না পড়ে সেই জন্য আয়ানা বললো,
— “সে নাহয় বুঝলাম।কিন্তু আপনার মনে,সেখানে কে আছে হুম?”
— “এই মনে শুধু তোমার‌ই বসবাস‌।আমার #মন_পাজড়ে_শুধু_তুমি_আছো?।আর সারাজীবন তুমিই থাকবে।এই মনে,এই জীবনে,আমার বুকের বাম পাশে সব খানেই শুধু তোমার অস্তিত্ব।এ জীবনে শুধু তোমাকেই চাই।” (অর্থ)
— “আরেহ বাহ মিস্টার বিচুটি পাতা দেখছি আজ কবি সাহিত্যিকের মতো কথা বলছে।আজ তো কথায় বহুত চিনি মিশিয়েছেন।তা এতোদিন এসব চিনি মিশ্রিত কথা কোথায় ছিলো? নিত্যদিন তো বিচুটি পাতা আর নিম পাতার মতো ঝগড়া করতেন।আজ তো চিনি উতলে পড়ছে।” (মুখ ভেংচি কেটে আয়ানা)
— “তোমার থেকেই শেখা।নিজেই তো ঝগড়া করো।” (অর্থ)
— “বেশ করি।আরো করবো।বেশি করে করবো।আপনি অসভ্য আপনাকে তো পিটিয়ে সভ্য বানাবো।একদম তুলসি পাতার মতো বানাবো।” (আয়ানা)
— “আর, ভালোবাসবে না?” (অর্থ)

অর্থের এমন প্রশ্নে চুপ হয়ে যায় আয়ানা।কোনো রকম সাড়াশব্দ‌ও করছে না সে।তাই অর্থ একটু অভিমান নিয়ে বললো,
— “জানি জানি এমনটাই হ‌ওয়ার ছিলো।এই কারণেই বলতে চাইছিলাম না।আসলে কি বলবো কপালটা এতো খারাপ, এমনিতেই তো ঝগড়ুটে ব‌উ জুটেছে তার ওপর সে আবার আমাকে ভালো‌ও বাসে না।ধুর এতো দুঃখ যে কোথায় রাখবো।”

অর্থের কথা শুনে ওর দিকে আর চোখে তাকায় আয়ানা।অর্থ ওকে একটু জেলাস ফিল করানোর জন্য বলে,
— “আজ খেলা দেখতে একটা মেয়ে এসেছিল।আমায় বললো সে আমাকে পছন্দ করে।তাই ভাবছি কালকে গিয়ে একটু আই লাভ ইউ বলে দেবো।বেচারি এতো পছন্দ করে আমাকে।”
— “খালি বলে দেখুন না তারপর আপনার মাথা মাথার জায়গায় থাকে কি না দেখুন।আই লাভ ইউ কথাটা সস্তা না।যাকে তাকে বলবেন আর আমি সহ্য করবো?অতো ভালো মানুষ আমি না।ঘর করছেন আমার সাথে আর অন্যকে বলবেন আই লাভ ইউ।আপনার আই লাভ ইউ আমি কেঁচি দিয়ে টুকরো টুকরো করে কাটবো।” (রেগে আয়ানা)
— “এতো রেগে যাচ্ছো কেনো গো?মাত্র‌ই তো বললে আমি তোমার কেউ না,আমাকে ভালোবাসো না।” (অর্থ)
— “হুম বলেছি তো।” (আয়ানা)
— “তাহলে আমি অন্য কাউকে আই লাভ ইউ বললে তোমার কি?” (অর্থ)
— “ঠ্যাং ভেঙে দেবো কিন্তু।বেশি বাড়াবাড়ি হচ্ছে।অসভ্য ইতর প্রাণী।নিম পাতা, বিচুটি পাতা।একবারে খারাপ,বাজে ছেলে,পচা ছেলে।কিচ্ছু বোঝে না,আমড়া কাঠের ঢেকী একটা!” (দাঁত কটমট করে আয়ানা)
— “এই আমড়া কাঠের ঢেকী মানে কি?” (অর্থ)
— “এটা জানেন না? বাগধারা পড়েন নি জীবনে?” (আয়ানা)
— “পড়েছি তবে ছোটবেলায় আমার মনে নেই।” (অর্থ)
— “আমড়া কাঠের ঢেকী মানে অপদার্থ। আপনি একটা অপদার্থ বুঝেছেন।” (আয়ানা)
— “তোমার‌ই তো স্বামী।” (অর্থ)

আয়ানা মুখ ভেংচি কেটে তাকালো।অর্থ সাথে সাথে ওকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেয়।আয়ানাও কিছু বলে না,শুধু কান পেতে অর্থের হার্টবিট শুনছে।অর্থের হার্টবিট স্পষ্ট জানান দিচ্ছে ও আয়ানাকে সত্যি ভালোবাসে।কিছু সময় চুপ করে থাকার পর আয়ানা মিনমিন করে বললো,
— “ইস দিস আস।”

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here