মন_পাজড়ে_শুধু_তুমি_আছো?,পর্ব_২১,২২
লেখিকা_মাইসারাহ_আরোহি?
পর্ব_২১
আয়ানা মুখ ভেংচি কেটে তাকালো।অর্থ সাথে সাথে ওকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেয়।আয়ানাও কিছু বলে না,শুধু কান পেতে অর্থের হার্টবিট শুনছে।অর্থের হার্টবিট স্পষ্ট জানান দিচ্ছে ও আয়ানাকে সত্যি ভালোবাসে।কিছু সময় চুপ করে থাকার পর আয়ানা মিনমিন করে বললো,
— “ইস দিস আস।”
— “আই নো।এন্ড আই লাভ ইউ মোর এন্ড মোর।” (অর্থ)
— “বুঝতে পেরে গেছেন?” (আয়ানা)
— “ইয়েস।আমি জার্মান ভাষা কিছু কিছু জানি।ইস লিবে দিস মানে আই লাভ ইউ আর ইস দিস আস মানে সেইম টু ইউ অথবা আই লাভ ইউ ঠু।” (অর্থ)
— “হুহ জার্মানি গিয়ে এসবই শিখে এসেছেন।আর ওইজন্যই আমাকে গুগল ঘেঁটে মানে বের করে দেখতে হলো।” (আয়ানা)
— “এটুকু কষ্ট নাহয় আমার জন্য করলেই।” (অর্থ)
— “আমার বয়েই গেছে আপনার জন্য কষ্ট করতে।এখন সরুন আমি হাত-মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হবো।” (আয়ানা)
— “আচ্ছা ঠিক আছে যাও।ওহ আরেকটা কথা একটু পরে এক মগ কফি করে দেবে প্লিজ।” (অর্থ)
— “পারবো না।নিজে বানিয়ে নিন।” (আয়ানা)
— “প্লিজ আয়ানা,দেখো তোমার হাতের কফি ভীষণ ভালো হয়।” (অর্থ)
— “ওহ আচ্ছা তাই,তা এতো দিন তো বলেন নি। এতদিন তো শুধু আমার দুর্নাম করে গেছেন।আর আজ একেবারে ভালোবাসা উতলে পড়ছে যে।” (আয়ানা)
— “এভাবে বলো না।আগেই তো তোমাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি বাট তুমি তো পাত্তাও দেও নি।” (অর্থ)
— “ভালো করেছি।এখন আপনিও যান তো গিয়ে বাইরের জামাকাপড় চেঞ্জ করুন।আর কফি সময় মতো পেয়ে যাবেন।” (আয়ানা)
— “থ্যাংক ইউ।” (মুচকি হেসে অর্থ)
আয়ানা বাচ্চাদের মতো ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
!!
সকালে আয়ানা অনেকক্ষণ আগেই ঘুম থেকে উঠে গেছে।তবে অর্থ এখনো ঘুমাচ্ছে।আয়ানা অর্থের জন্য একটা স্পেশাল জিনিস বানিয়ে নিয়ে ঘরে গেলো।কিন্তু অর্থের ওঠারও নাম নেই,ও পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।আয়ানা অর্থের পাশে বসে ওকে ডাকতে থাকলো।
— “এই মিস্টার বিচুটি পাতা,এই অর্থ।আরে কি হলো উঠুন না।দেখুন কত বেলা হয়ে গেছে।” (আয়ানা)
— “আমার শরীরটা ভালো লাগছে না।পেটের মধ্যে কেমন যেনো করছে।আমাকে একটু বিশ্রাম নিতে দাও।” (ঘুম ঘুম কন্ঠে অর্থ)
— “আরেহ তার জন্যই তো ডাকছি। আপনি উঠুন তো,দেখুন আপনার জন্য স্পেশাল একটা জিনিস এনেছি।এটা খেলে আপনার সব অসুখ সেরে যাবে।আপনি তাড়াতাড়ি উঠে খেয়ে নিন তো।কি হলো উঠুন।” (আয়ানা)
অর্থ আড়মোড়া ভেঙে ঘুম থেকে উঠে বসলো।
— “কি এনেছো দেখি?” (অর্থ)
— “এই তো।” (গ্লাসটা অর্থের সামনে ধরে আয়ানা)
অর্থ ভালোভাবে গ্লাসটা খেয়াল করে।গ্লাসে সবুজ রঙের পানীয় রয়েছে।
— “কি গো এটা?দেখতে তো বেশ সুন্দর। কোনো স্পেশাল জুস নাকি?” (অর্থ)
— “স্পেশাল তো বটেই তবে আপনি খেয়ে দেখুন।নিন একবার ট্রাই করুন।” (আয়ানা)
অর্থ খেতে চায় না কিন্তু আয়ানা ওকে খাওয়ার জন্য ইশারা করে।বাধ্য হয়ে অর্থ এক চুমুক মুখে নেয়।কিন্তু মুখে নিতেই অর্থ ওয়াক থু বলে মুখ থেকে সবকিছু বের করে দেয়।
— “ওয়াক থু,কি এটা?ছিঃ ভীষণ তেঁতো।কি খেতে দিয়েছো আমায়?” (অর্থ)
— “নিম পাতার রস।” (দাঁত কেলিয়ে আয়ানা)
— “হোয়াট?তোমার কি মাথায় সমস্যা আছে? তুমি এই সকাল সকাল আমাকে এসব খাওয়াচ্ছো?ওয়াক কি ভীষণ তেঁতো।মুখের ভেতরটা কেমন যেনো করছে।ছিঃ।” (অর্থ)
— “সবকিছু একদম কারেক্ট আছে।আপনি তো কাল থেকে বলছেন আপনার পেটে কেমন যেনো করছে,তো আমি বুঝতে পেরেছি আপনার কৃমি হয়েছে।আর কৃমি তাড়ানোর সবচেয়ে ভালো উপায় নিম পাতার রস।শুধু তাই নয় এটা খেলে আপনার অন্যান্য রোগও সেরে যাবে।খাওয়ার রুচিও বাড়বে।” (আয়ানা)
— “খাওয়ার রুচি মাই ফুট,আর ওসব কৃমি টৃমি নেই আমার।উফ সকাল সকাল মেজাজটা গরম করে দিলো ফালতু মেয়ে একটা।” (রেগে অর্থ)
রাগ করে অর্থ কোনোকিছু মুখে না দিয়েই তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে একাডেমীতে চলে যায়।
!!
দুপুরে,
ট্রাউজারের দুই পকেটে হাত ঢুকিয়ে ক্লান্ত হয়ে হেলতে দুলতে বাসায় প্রবেশ করে অর্থ।ড্রইংরুম থেকেই ও চেঁচাতে শুরু করে,
— “আম্মু ও আম্মু!আম্মু আমার ভীষণ খিদে পেয়েছে আমাকে খেতে দাও।”
— “আচ্ছা বাবা আগে বাইরের জামাকাপড় ছেড়ে আয় আমি তোকে খেতে দিচ্ছি।” (অর্থের আম্মু)
— “হুম আম্মু যাচ্ছি।” (অর্থ)
— “শুধু বাইরের জামাকাপড়-ই না একেবারে শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলে তবেই খাবার পাবেন।যান গিয়ে শাওয়ার নিয়ে আসুন।” (পেছন থেকে আয়ানা)
অর্থ একবার আয়ানার দিকে তাকালো তবে কিছু না বলেই দ্রুত চলে গেলো।
কিছুক্ষণ পর অর্থ শাওয়ার নিয়ে আসে। অর্থ কে আসতে দেখে আয়ানা বললো,
— “আসুন বসুন এখানে।”
অর্থ কোনো কথা না বলে চেয়ার টেনে বসলো।
— “আচ্ছা আম্মু আজকে কি রান্না হয়েছে?” (অর্থ)
— “তোর পছন্দের চাইনিজ ফ্রাইড রাইস,থাই চিকেন কারি,চিকেন সিজলিং আর চাইনিজ ভেজিটেবল।” (অর্থের আম্মু)
— “ওয়াও গ্রেট।” (খুশি হয়ে অর্থ)
আয়ানা অর্থকে প্লেটে খাবার বেড়ে দিলো। অর্থ আস্তে আস্তে খেতে শুরু করে।
— “সবকিছু ঠিক আছে বেটা?” (অর্থের আম্মু)
— “হুম আম্মু সব ঠিক আছে।আজকের রান্নাটা খুবই ডেলিসিয়াস।” (অর্থ)
— “সেটা তো হবেই ভাই তোর বউ রেঁধেছে বলে কথা।” (ডাইনিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে অর্থি)
— “কিহ,ও এগুলো রান্না করেছে?” (অবাক হয়ে অর্থ)
— “হ্যাঁ রে বেটা আজ সব খাবার আয়ানা রান্না করেছে।আর সবগুলো আইটেম-ই তোর ফেভারিট।” (অর্থের আম্মু)
অর্থ আর কথা বাড়ায় না চুপচাপ খেয়ে দেয়ে ঘরে চলে যায় বিশ্রাম নেওয়ার জন্যে।
সকলকে খাইয়ে দাইয়ে নিজেও খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ঘরে আসে আয়ানা।অর্থ বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফোনে গেমস খেলছিলো, আয়ানাকে দেখে ও ফোনটা সেন্টার টেবিলের ওপর রেখে বললো,
— “তা এতো কিছু করার কারণটা কি জানতে পারি?”
— “এতকিছু মানে?ঠিক বুঝতে পারলাম না।” (আয়ানা)
— “মানে হচ্ছে গিয়ে এই যে আমার পছন্দের খাবার রান্না করা এসব-ই।” (অর্থ)
— “না মানে আসলে সকালে তো নিমপাতার রস খাইয়ে ছিলাম আপনি তো বড্ড রেগে গিয়েছিলেন তাই আপনার পছন্দের খাবার গুলো বানিয়েছি।” (আয়ানা)
অর্থ আয়ানার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকায়।আয়ানা ভয় পেয়ে ঢোক গিলে মিনমিন করে বলে,
— “এভাবে তাকাবেন না।এভাবে তাকালে তো আমার ভয় লাগে?আমি কিন্তু কেঁদে ফেলবো।”
— “অ্যা তুমি ভয় পাও তাও আবার আমাকে? বিশ্বাস হচ্ছে না আমার।” (অর্থ)
— “আগে পেতাম না তবে এখন পাই।আপনি এখন কেমন যেনো কড়া টাইপ হয়ে গেছেন।আমার ভয় করছে প্লিজ এভাবে তাকাবেন না।” (আয়ানা)
— “আচ্ছা বেশ।তো সকালে রাগ করেছিলাম বলে রাগ ভাঙাতে তোমার এতো আয়োজন তাই তো?” (অর্থ)
— “হুম।তা আপনার রাগ ভেঙেছে?আর রাগ করে নেই তো আমার ওপর?” (আয়ানা)
— “উহু আমার রাগ তো ভাঙে নি।এত সহজে কি রাগ ভাঙে বলো।” (অর্থ)
— “তাহলে কি করলে আপনার রাগ ভাঙবে বলুন।” (আয়ানা)
অর্থ গালে হাত দিয়ে ভাবতে থাকে।গভীর চিন্তা ভাবনা করার পর অর্থ বলে,
— “একটা আইডিয়া আছে।তোমাকে আমার একটা ইচ্ছে পূরণ করতে হবে।”
— “কি ইচ্ছে বলুন।” (আয়ানা)
— “এই যে আমার এখন বড্ড ইচ্ছে করছে তোমাকে নীল শাড়িতে দেখতে।সেদিন খুব শখ করে নীল শাড়ি কিনেছি তোমার জন্য,তুমি যদি ওটা এখন পরো তাহলে আমার রাগ একদম কমে যাবে।” (অর্থ)
— “আমি পারবো না।এই দুপুর বেলা কে শাড়ি পরে?” (আয়ানা)
— “দুপুর কোথায়,বিকেল হতে চললো।আর তাছাড়া তুমি নাও পরতে পারো তা তোমার ইচ্ছা।তবে আমার সাথে কথা বলতে এসো না।আমি এখন চললাম পার্টিতে।” (অর্থ)
অর্থ আলমারির কাছে গিয়ে ওর জামাকাপড় বের করতে নেয় কিন্তু আয়ানা গিয়ে ওর হাত ধরলো।
— “এসব রেখে গিয়ে বিশ্রাম করুন।” (আয়ানা)
— “না দেখো তুমি তো আমার কোনো কথাই শুনবে না।তাই আমিও তোমার কথা শুনতে পারবো না।এখন আমাকে পার্টিতে যেতে হবে আমার বন্ধুরা ফোন করেছিলো।” (অর্থ)
— “তা তো করবেই ওসব অকাজেই আপনাকে ডাকে,ভালো কাজে তো আর যান না।যাই হোক যেটা বললাম সেটা করুন,আমাকে বিরক্ত করবেন না।আমি দশ মিনিট পর শাড়ি পরে আসছি।” (আয়ানা)
আয়ানা শাড়ি পরবে কথাটা শুনে অর্থ ভীষণ খুশি হয়।আয়ানা শাড়ি নিয়ে অর্থির কাছে যায়। অর্থি খুব সুন্দর করে ওকে শাড়ি পরিয়ে দেয়।আয়ানা এখন বিছানায় বসে এক হাতে আয়না মুখের সামনে ধরে অপর হাত দিয়ে চোখে কাজল পরছে।তবে এক হাত দিয়ে কাজল পরতে ওর অসুবিধে হচ্ছে দেখে অর্থ ওর হাত থেকে আয়নাটা নেয় এবং সুন্দর করে আয়ানার সামনে ধরে যাতে ও খুব সহজেই নিজের কাজ করতে পারে।অর্থের সহযোগিতা পেয়ে আয়ানা মুচকি হেসে কাজল দিতে থাকলো।
~”তুই আমাকে আগলে রাখ
ঠিক এভাবে সঙ্গে থাক
সারাদিন … সারারাত …
আমি তোর আয়না হবো আজ
তুই শুধু ইচ্ছে মতো সাজ
রোদ্দুরে, যায় উড়ে, মন জাহাজ …
তুই আমাকে আগলে রাখ
ঠিক এভাবে সঙ্গে থাক
সারাদিন … সারারাত …”~
অর্থের এমন পাগলামী মন্দ লাগছে না আয়ানার।ওরও ইচ্ছে ছিলো মাঝেমাঝে অর্থ এমন পাগলামী করুক।আয়ানা অর্থের সহযোগিতা নিয়ে সুন্দর করে কাজল দিয়ে,হাতে চুড়ি পরে,ঠোঁটে হালকা করে লিপস্টিক লাগিয়ে পুরোপুরি তৈরি হয়ে নেয়।
— “এই যে মিস্টার বিচুটি পাতা আমি রেডি।এখন যদি আপনার রাগ কমে থাকে তাহলে দয়া করে আমাকে জানান।” (আয়ানা)
— “পরে বলছি।আগে তোমার ইনকমপ্লিট সাজ পূর্ণ করে দেই তারপর।” (অর্থ)
— “মানে?” (ভ্রু কুঁচকে আয়ানা)
— “একটু অপেক্ষা করো জানতে পারবে।” (অর্থ)
অর্থ প্রথমে আয়ানার কপালে একটা টিপ দিয়ে দেয়।তারপর ফুলের গাজরা টা কালো ক্লিপ দিয়ে আয়ানার খোঁপায় বেঁধে দেয়।আর আয়ানার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আয়ানার পায়ে পায়েল পড়িয়ে দেয়।
— “এতোক্ষণে সবকিছু কমপ্লিট হলো।এন্ড ইউ লুক সো বিউটিফুল।” (অর্থ)
— “থ্যাংক ইউ।” (মুচকি হেসে আয়ানা)
চলবে
#মন_পাজড়ে_শুধু_তুমি_আছো?
#লেখিকা_মাইসারাহ_আরোহি?
#পর্ব_২২
অর্থ প্রথমে আয়ানার কপালে একটা টিপ দিয়ে দেয়।তারপর ফুলের গাজরা টা কালো ক্লিপ দিয়ে আয়ানার খোঁপায় বেঁধে দেয়।আর আয়ানার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আয়ানার পায়ে পায়েল পড়িয়ে দেয়।
— “এতোক্ষণে সবকিছু কমপ্লিট হলো।এন্ড ইউ লুক সো বিউটিফুল।” (অর্থ)
— “থ্যাংক ইউ।” (মুচকি হেসে আয়ানা)
সারা বিকেল আয়ানা শাড়ি পরে অর্থের সামনে বসে ছিলো আর অর্থ শুধু অপলক দৃষ্টিতে ওকে দেখে গেছে আর একটা একটা করে গান গেয়ে আয়ানার প্রতি প্রেম নিবেদন করেছে।আয়ানা ওর এসব পাগলামির কথা মনে ভাবতে ভাবতে মুচকি হাসতে থাকলো।
!!
দেখতে দেখতে আরো একটা মাস কেটে যায়।
রোজকার মতো সকালবেলা অর্থ প্র্যাকটিসে গিয়েছে তবে আয়ানা আজ কোথাও যায় নি।আজ ওদের অফ ডে।সেজন্য ও বাড়িতেই রয়েছে।অর্থ দুপুরের দিকে লাঞ্চ করার জন্য বাসায় আসে তবে কিছুক্ষণ থেকেই চলে যায়।সামনে একটা টুর্ণামেন্ট আছে সেজন্য এখন এক্সট্রা প্র্যাকটিস করতে হচ্ছে।
সন্ধ্যাবেলা অর্থ সারাদিনের প্র্যাকটিস শেষ করে বাসায় আসে।তবে ওকে দেখে কেমন যেনো অসুস্থ মনে হচ্ছে।আয়ানা অর্থকে জিজ্ঞেস করলো,
— “কি হয়েছে আপনার,এমন দেখাচ্ছে কেনো? শোল্ডারে কিংবা পায়ে কি আবার ব্যথা করছে নাকি?”
— “না।কিন্তু কোমড়ে ব্যথা করছে।ওয়ার্ম আপ করার সময় টান লেগেছিল।এখন ভীষণ যন্ত্রণা করছে।দাঁড়িয়ে থাকতেও পারছি না।” (অর্থ)
— “সাবধানে তো থাকবেন নাকি!যাই হোক ফ্রেশ হয়ে এসে বিশ্রাম করুন আমি এক্ষুনি আসছি।” (আয়ানা)
অর্থ হাত মুখ ধুয়ে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ে।একটু পরে আয়ানা একটা বাটি হাতে ঘরে আসে।অর্থ জিজ্ঞেস করে,
— “কি ওতে?”
— “গরম তেল।আপনি উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন তো।আমি তেল মালিশ করে দিচ্ছি দেখবেন ব্যথা সেরে গেছে।” (আয়ানা)
— “তার দরকার পড়বে না তুমি বরং স্প্রে করে দাও তাহলেই হবে।” (অর্থ)
— “দরকার আছে কি নেই আমি বুঝবো সেটা।আর সবসময় স্প্রে স্প্রে করেন কেনো? আপনি জানেন এই তেল স্প্রের চেয়ে কত বেশি উপকারী? অবশ্য জানলে তো বলতেনও না।” (আয়ানা)
— “আবার ঝগড়া করছো।” (অর্থ)
— “বেশ করছি।একে তো প্রতিদিন কিছু না কিছু বাঁধিয়ে নিয়ে আসেন।আবার শুধু তর্ক করা তাই না।বলি ফুটবল কি আমি খেলি না,কই আমার তো আপনার মতো এতো আঘাত লাগে না।” (মুখ ফস্কে আয়ানা)
— “ফুটবল তুমি খেলো মানে?কথাটা ঠিক বুঝতে পারলাম না। একটু ক্লিয়ার করে বলবে প্লিজ।” (অর্থ)
— “না না আসলে বলছি যে ফুটবল তো অন্যরাও খেলে।আসলে ওই অন্য বলতে আমি হয়ে গেছে।আপনিও যে কথায় কথায় এতো তর্ক করেন আমি পাগল হয়ে যাই একেবারে।এখন যেভাবে শুতে বললাম ওভাবে শুয়ে পড়ুন আর আমাকে আমার কাজ করতে দিন।” (আয়ানা)
অর্থ আর কথা না বাড়িয়ে আয়ানার কথা মতো উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো।আয়ানা ওর কোমড়ে তেল মালিশ করে দিচ্ছে আর মনে মনে ভাবছে,
— “ইস আরেকটু হলেই ধরা খেয়ে যেতাম।আমার যে কি হয়েছে,একদম ব্রেক ছাড়া সাইকেলের মতো সব বলে দিচ্ছি কোনো কন্ট্রোল-ই নেই।না না আমাকে সাবধানে থাকতে হবে। উনি সন্দেহ করলে বিপদ আছে।”
আয়ানা সব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে যত্ন সহকারে অর্থকে তেল মালিশ করে দিতে থাকলো।
!!
অর্থ একাডেমীতে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে আর ওর পাশাপাশি আয়ানাও রেডি হচ্ছে। অর্থ ভ্রু কুঁচকে আয়ানাকে বললো,
— “বাইরে তো যাবো আমি,তুমি এতো সাজগোজ করছো যে?”
— “এমনিতে তো কলেজ যাবো।তাছাড়া আজকে ইউটিউব দেখে চুলের একটা ডিজাইন করবো তাই একটু ছবি তুলবো।আর এমনি তো ছবি তোলা যায় না ওইজন্যই হালকা ফিটফাট হচ্ছি।ছবি সুন্দর আসতে হবে তো!” (আয়ানা)
— “ছবি তোলার দরকার নেই।আর তোমার সাজগোজ করারও দরকার নেই।তুমি যেমন তেমনই সুন্দর।আর তাছাড়া তোমার ছবি তো আমার কাছে আছে।” (অর্থ)
— “আপনার কাছে আছে মানে?আপনার ফোনে তো কখনো আমি পিক তুলি নি।” (আয়ানা)
— “ফোনে থাকতে হবে কেনো? তোমার ছবি তো এই মন পাজড়ে আছে।ঠিক বুকের এই বাম পাশে।” (বুকে হাত দিয়ে অর্থ)
— “তাই,আচ্ছা তাহলে দেখি কোথায় আছে আমার ছবি?” (আয়ানা)
— “ওকে ওয়েট।” (অর্থ)
বলেই অর্থ আয়ানাকে হ্যাঁচকা টান দিয়ে নিজের কাছে টেনে নেয়।আয়ানা একদম অর্থের বুকের সাথে লেপ্টে আছে।অর্থ আয়ানার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললো,
— “এই যে আমার হার্টবিট শুনতে পাচ্ছো,এই হার্টবিট যেখান থেকে আসছে ঠিক সেখানেই তোমার অবস্থান।আর এখানেই তোমার ছবি আমি এঁকে রেখেছি।”
অর্থ এমনভাবে ফিসফিসিয়ে কথাগুলো বললো যে আয়ানা ভীষণ লজ্জা পেলো।ও অর্থের কাছ থেকে নিজে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
— “হয়েছে হয়েছে আর ভদ্র হতে হবে না। আপনি যান এখন।এমনিতেই তো লেট করে ফেলেছেন।”
— “যাবো কিন্তু…” (অর্থ)
— “কিন্তু আবার কি,যান তো নাহলে কিন্তু আবার নিমপাতা খাওয়াবো।” (চোখ রাঙিয়ে আয়ানা)
— “বেশ তো তাহলে আমার রাগ ভাঙানোর জন্য আবার শাড়ি পরিও।” (অর্থ)
— “উফ অর্থ যান তো।” (আয়ানা)
— “যাচ্ছি বাবা যাচ্ছি।টাটা।” (অর্থ)
— “হুম সাবধানে।” (আয়ানা)
অর্থ মুচকি হেসে চলে গেলো।
!!
অর্থ প্র্যাকটিস করছে এমন সময় ওর টিমমেট সামিউল এসে বললো,
— “অর্থ সেদিন যে তুই রাজ আর মাহিন ফিমেইল গ্রাউন্ডে গিয়েছিলি না তোদের ওখানে আজকে আবার যেতে হবে।”
— “কেনো?” (অর্থ)
— “আরেহ ওদেরকে মোটিভেট করার জন্য ম্যানেজমেন্ট তোদের পাঠাবে।আর তুই যেহেতু
ক্যাপ্টেন তাই সবাইকে বোঝানোর জন্য তোকেই যেতে হবে।তুই,রাজ আর মাহিন এখনই যা।” (সামিউল)
— “বাট রাজ আর মাহিন তো নেই। মাহিন আসে নি আর রাজ একটু আগে চলে গেলো। আচ্ছা ঠিক আছে প্রবলেম নেই আমি একাই যাচ্ছি।” (অর্থ)
— “ওকে ব্রো যা তাহলে আর ওখানকার কোচ এবং বাকিদের তো জানিস-ই আই থিংক তোর কোনো অসুবিধা হবে না।” (সামিউল)
— “ইয়াহ ব্রো।আমি ফ্রেশ হয়ে এক্ষুনি যাচ্ছি।” (অর্থ)
অর্থ ফ্রেশ হয়ে ব্যাগ-ব্যাক নিয়ে ফিমেইল একাডেমীতে যায়।এর আগেও এখানে ও এসেছিলো বিধায় সবকিছু ওর চেনা। অর্থ কে দেখেই কোচ এগিয়ে আসে।
— “আরেহ সারহান কেমন আছো?” (কোচ)
— “এই তো ভালো কোচ, আপনি কেমন আছেন?” (অর্থ)
— “হুম আলহামদুলিল্লাহ।এতক্ষণ তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।আসলে সেদিন তো তোমাকে আমাদের একাডেমীটা ঘুরে দেখানো হয় নি।আজ সবটা ঘুরে দেখাবো আর আমাদের প্লেয়ারদের সাথে আলাপ করাবো।” (কোচ)
— “ইয়াহ আই নো আপনাদের এখানে এখন অনেক প্লেয়ার জয়েন করেছে নিজেদের স্বপ্ন পূরণের জন্য।আর তাছাড়া আপনাদের ফিমেইল টিম তবুও অনেক স্ট্রং।রিসেন্টলি একটা ম্যাচ দেখেছিলাম বেশ ভালো পারফরমেন্স ছিলো টিমের।” (অর্থ)
— “হ্যাঁ তবে আনফরচুনেটলি আমাদের যে বেস্ট প্লেয়ার ও ম্যাচটা মিস করে গেছে।তবে এখন আবার ব্যাক করেছে।চলো ওর সঙ্গে তোমার আলাপ করিয়ে দিই।” (কোচ)
— “ওকে চলুন।” (অর্থ)
কোচ অর্থকে নিয়ে গ্রাউন্ডে সবাই ওই সময় প্র্যাকটিসে ব্যস্ত।কোচ ১৭ নম্বর জার্সি পরা পেছনে ঘুরে থাকা একটা মেয়েকে দেখিয়ে বলে,
— “সি ইজ আওয়ার বেস্ট প্লেয়ার।হার নেইম ইজ আনানইয়া।আনানইয়া একটু এদিকে এসো তো।”
আয়ানা বল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো।কোচের বাট শুনে ও এগিয়ে এলো আর বললো,
— “জ্বি স্যার আমায় ডাকছি….।”
এটুকু বলেই থেমে যায় আয়ানা।অর্থ কে দেখে ওর মুখ থেকে আর কোনো কথা বের হচ্ছে না।অর্থেরও সেইম এটা যে আয়ানা ওর কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না, অর্থ পুরাই অবাক।হা করে শুধু তাকিয়ে রয়েছে।কোচ ওদের মাঝের নীরবতা ভেঙে দিয়ে বললেন,
— “আনানইয়া তুমি নিশ্চয়ই ওকে চেনো,অবশ্য চেনারই কথা কারণ সারহান আমাদের জাতীয় দলের অধিনায়ক এবং বেস্ট প্লেয়ার।আর সারহান আমি আনানইয়ার কথাই বলছিলাম।সি ইজ মোস্ট ট্যালেন্টেড গার্ল ইন আওয়ার একাডেমী।”
অর্থ কিছু বললো না সম্মানসূচক মাথা নাড়ালো তবে ও আয়ানার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে ছিলো।আয়ানার অর্থের দিকে তাকানোর সাহস নেই ও মাথা নিচু করে রইলো।আয়ানার সাথে পরিচয় শেষে কোচ অর্থকে নিয়ে আন্যদিকে চলে যান।আসলে একাডেমীর সবাই জানে আয়ানা বিবাহিত কিন্তু অর্থ যে ওর হাজব্যান্ড এটা এশা ছাড়া আর কেউ জানে না।আয়ানার এখন ভীষণ ভয় হচ্ছে।অর্থের তাকানো দেখেই ও বুঝে গেছে আজ কিছু একটা হতে চলেছে।ভবিষ্যতের কথা ভেবে আয়ানার এখনই হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে।আয়ানা আর একটুও দেরি করে না কাউকে কিছু না জানিয়ে দ্রুত বাসায় চলে যায়।
অর্থ যেহেতু এক জায়গায় এসেছে তাই হুট করে চলে আসতে পারে নি।ওকে অনেকক্ষণ থাকতে হয়েছে সকলকে মোটিভেট করতে হয়েছে।ওর ভেতরে যাই চলুক না কেনো ও ওখানে কাউকে বুঝতে দেয় নি।তবে এশা ঠিকই বুঝেছে যে অর্থ সবটা জেনে গেছে।এশারও আয়ানার জন্য ভীষণ টেনশন হচ্ছে।
সেই সকালে বাসা থেকে বেরিয়েছে অর্থ দুপুরেও আসে নি।আবার ফোন রিসিভ করছে না।এখন।রাত ১১ টা বাজে।আয়ানা অর্থের অপেক্ষায় ঘরে পায়চারি করছে। পায়চারি করতে করতেই দেখলো অর্থ ঘরে আসলো। কিন্তু অর্থ আয়ানার সাথে একটা কথাও বললো না। আলমারি থেকে টি শার্ট, ট্রাউজার নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলো।আর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে অর্থ বালিশ আর নিজের ফোনটা নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।কিন্তু আয়ানা পেছন থেকে অর্থের হাত ধরে ফেললো।
অর্থ আয়ানার হাতটা সরিয়ে দিয়ে আয়ানার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
— “ইউ হ্যাভ লস্ট ইউর রাইট টু টাচ মি,মিস আনানইয়া।ফার্দার দয়া করে আর এই ভুলটা করতে আসবেন না।”
চলবে