মন_পাজড়ে_শুধু_তুমি_আছো?,পর্ব_২৩,২৪

0
1608

মন_পাজড়ে_শুধু_তুমি_আছো?,পর্ব_২৩,২৪
লেখিকা_মাইসারাহ_আরোহি?
পর্ব_২৩

অর্থ আয়ানার হাতটা সরিয়ে দিয়ে আয়ানার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
— “ইউ হ্যাভ লস্ট ইউর রাইট টু টাচ মি,মিস আনান‌ইয়া।ফার্দার দয়া করে আর এই ভুলটা করতে আসবেন না।”
আয়ানা করুণ দৃষ্টিতে অর্থের দিকে তাকায়। অর্থের মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে ও অভিমানে দুঃখে প্রচন্ড রেগে আছে।আয়ানার‌ও অর্থের এমন কথা ভালো লাগছে না।ও অর্থের দিকে তাকিয়ে করুণ কন্ঠে বললো,
— “অর্থ এসব আপনি কি বলছেন?প্লিজ আপনি অন্তত আমায় ভুল বুঝবেন না।”
— “ভুল?কিসের ভুল।আমি কেনো আপনাকে ভুল বুঝতে যাবো মিস আনান‌ইয়া?ভুল তো আপনি আমাকে বুঝেছেন।আমার সাথে এতদিন ধরে রয়েছেন কিন্তু আমাকে ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারেন নি।” (অর্থ)

বেশ কষ্ট নিয়ে কথাগুলো বলে অর্থ।ওর কথা শুনে আয়ানার চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে যায়। অর্থ কিছু সময় চুপ করে থাকে তবে আয়ানা প্রত্যুত্তর না দেওয়ায় অর্থ আবার‌‌ও বলে,
— “আসলে কি বলো তো তুমি ঠিক আমায় ভালোইবাসো নি।আমাকে জাস্ট দয়া দেখিয়েছো।আর আমি কারো দয়া চাই না।হ্যাঁ তোমাকে ভালোবাসি ঠিক‌ই কিন্তু তার প্রতিদানে আমি দয়া চাই না।আমাকে সিমপ্যাথি দেখানোর কোনো দরকার‌ই ছিলো না তোমার।”
— “এসব কি বলছেন আপনি?কে বলেছে আমি আপনাকে দয়া করেছি,অর্থ আমি সত্যি আপনাকে ভালোবাসি।এগুলো মিথ্যে নয়। আপনি আমার কথাটা শুনুন।” (আয়ানা)
— “কি শুনবো আর?শোনো তুমি যদি আমায় ভালোবাসতে তাহলে আজ এই দিনটা দেখতে হতো না।আমি ভাবতে পারছি না তুমি এত বড় সত্যিটা আমার কাছে গোপন করে গেলে।তুমি ফুটবল খেলো,তুমি বাকিদের কাছে আনান‌ইয়া সব‌ই ঠিক আছে কিন্তু তাই বলে তুমি একটাবার‌ও আমাকে জানালে না? আচ্ছা আমায় বললে কি আমি তোমাকে খেলতে দিতাম না?আরে আমি নিজেও তো একজন ফুটবলার।আমি বরং তোমায় আরো সাহায্য করতাম।কিন্তু তুমি সেটা না করে দিনের পর দিন আমার বিশ্বাস নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছো,মিথ্যে বলেছো। কেনো আয়ানা,কেনো এমনটা করলে আমার সাথে?আমায় সবটা বললে কি হতো?” (অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে অর্থ)

অর্থের কথাগুলো শুনে আয়ানার নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হয়।আসলেই ও অর্থকে আগেই সবটা জানালে পারতো।কিন্তু এই সামান্য একটা বিষয়‌ই আজ কত জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে ভেবেই আয়ানা কান্নায় ভেঙে পড়ে।ও কাঁদতে কাঁদতে বলে,
— “আমি কখনোই অতো গভীরভাবে চিন্তা করি নি।আমার মনে শুধু একটাই ভয় ছিল যে আমার এই স্বপ্ন ফুটবল এটা তো আমার বাবা মা মেনে নেয় নি তারা আমায় নিষেধ করেছে।আর ঠিক এক‌ইভাবে যদি আমার শশুড়বাড়ির লোকজন‌ও আমায় নিষেধ করে তাহলে তো কখনো‌ই আমার স্বপ্ন পূরণ হবে না।স্রেফ এই কথাটা ভেবেই আমি কাউকে কিছু বলি নি।কিন্তু তার জন্য যে এতকিছু হবে তা আমার ভাবনার বাইরে ছিলো।”
— “সব বুঝলাম কিন্তু তুমি আমায় তো বলতে পারতে।তোমার কি মনে হয় আমি একজন ফুটবলার হয়ে তোমাকে এই বিষয়ে বাঁধা দিতাম?” (অর্থ)
— “জানি না।আমি তো কখনো এসব ভাবি নি।বাট প্লিজ আপনি আমাকে ভুল বুঝবেন না।আমার অন্য কোনো ইনটেনশন ছিলো না শুধু স্বপ্ন পূরণ করতে চেয়েছি।সেই ছোট থেকে আমার স্বপ্ন ফুটবল খেলার। কিন্তু আব্বু আম্মু খেলতে দেয় নি।আমি সবসময় তাদের লুকিয়ে খেলতাম।আর আমি ভেবেছিলাম আমার এই কথাটা জানলে আপনার বাবা আম্মু কষ্ট পাবেন তাই কখনো কাউকে কিছু বলি নি।” (আয়ানা)

বলেই আয়ানা কাঁদতে থাকে।ওর চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে।ওকে কাঁদতে দেখে অর্থের‌ও ভালো লাগে না।অর্থ তাই ওর পাশে বসে এক হাত আয়ানার হাতের উপর রাখে আর আরেক হাত দিয়ে ওর চোখের পানি মুছিয়ে দেয়।
— “তোমার ওপর রেগে থাকার সাধ্যি আমার নেই।যত‌ই যাই হয়ে যাক না কেনো আমি সবসময় তোমার পাশে আছি‌।কিন্তু আমায় আগে জানালে আজ তোমাকে বা আমাকে কাউকেই কষ্ট পেতে হতো না।” (অর্থ)
— “আ’ম স্যরি,আ’ম এক্সট্রেমলি স্যরি।আমি কথা দিচ্ছি আর কখনো এমন হবে না।আমি আর ফুটবল খেলবো না।” (আয়ানা)
— “কি,কি বললে তুমি?আমি তোমার মুখ থেকে এই কথা শুনতে চেয়েছি?আর কখনো এমন কথা বলবে না।তুমি ফুটবল খেলবে আর কাউকে লুকিয়ে নয় এখন থেকে প্রকাশ্যে খেলবে।আমি তোমাকে হেল্প করবো।আর কাল সকালে বাবা আর আম্মুকে এ বিষয়ে বলবো।আই হোপ তারাও তোমাকে সাপোর্ট করবে।আর তারা না করলে আমি তো আছি,সব ম্যানেজ করে নেবো।” (অর্থ)
— “কিন্তু……” (আয়ানা)
— “কোনো কিন্তু নয়।এখন চোখ মোছো তোমাকে কাঁদতে দেখলে আমার ভালো লাগে না। বুকের মধ্যে চিনচিনে ব্যথা হয়।অস্বস্তি হয়।তুমি শুধু হাসবে আর আমার সাথে ঝগড়া করবে।কারণ তোমার সাথে ঝগড়া করতে তো আমার ভীষণ ভালো লাগে।” (অর্থ)
— “ও আচ্ছা তাই।” (আয়ানা)
— “হুম তাই।বাট আই হ্যাভ টু গভীর প্রশ্ন।ক্যান আই আস্ক?” (গালে হাত দিয়ে অর্থ)
— “সিওর।” (আয়ানা)
— “ফার্স্ট কোয়েশ্চেন এই আনান‌ইয়া নামটা কোথায় পেলে আর সেকেন্ড কোয়েশ্চেন রোজ তো কলেজের নাম করে গ্রাউন্ডে যেতে আর একদিন‌ও তো তোমাকে পড়তে বসতে দেখলাম না তাহলে এক মাস পর যে তোমার পরীক্ষা সেই পরীক্ষায় কি করবে হ্যাঁ?” (অর্থ)
— “আগে প্রথম টা বলি।আনান‌ইয়া নামটা আমার‌ই।আমার নানু আমাকে এই নামে ডাকতো।আর বাকিরা তো আয়ানা বলেই ডাকে।আর দ্বিতীয়ত অতো পড়ে কি হবে? পরীক্ষায় প্রশ্ন এলে আমি লিখবো যে স্যার আপনি তো সব‌ই জানেন তাই আর কিছু লিখলাম না নম্বরটা দিয়ে দিবেন।ব্যাস কাজ হয়ে যাবে।” (আয়ানা)
— “অতোই সহজ না,এসব হলে সবাই ফার্স্ট ক্লাস পেতো।দেশে আর ফেইলার থাকতো না।শোনো যাই কর তাই করো পড়াশোনা একটু হলেও করবে।আর তাছাড়া ফুটবল তো খেলতেই হবে তাই না।” (অর্থ)
— “হুম তা খেলবো।বাট পড়ার জন্য আমাকে জোর করবেন না কারণ আমি জানি আপনিও পড়াশোনায় ফাঁকিবাজ ছিলেন।” (আয়ানা)
— “একটু আধটু কজ ছোট থেকে আমার ধ্যান জ্ঞান সবেতেই ফুটবল ছিলো।” (অর্থ)
— “সেইম টু মি।” (আয়ানা)
— “হুম এজন্য‌ই তো, ~মনে মনে মিলে গেছে, প্রেম তাই হয়ে গেছে~।” (মুচকি হেসে অর্থ)

!!
সকালে অর্থ আয়ানাকে নিয়ে ওর বাবা-মায়ের ঘরে যায়।ওখানেও অর্থিও উপস্থিত ছিলো, অর্থ সবার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে সবাইকে আয়ানার ফুটবল খেলার বিষয়টা জানায়। অর্থ আর কোনো লুকোচুরি চায় না তাই ও পরিষ্কার ভাবে সবটা বলে দিলো।এই বিষয়ে অবহিত হ‌ওয়ার পর অর্থের বাবা এবং আম্মু পরস্পরের দিকে তাকাচ্ছেন এবং ইশারায় কিছু একটা বলছেন।আয়ানা সেটা দেখতে পেয়ে খুব চিন্তিত,ওর এমনিতেই খুব ভয় হচ্ছে।

কিছু সময় চুপ করে থাকার পর অর্থের বাবা হাসতে হাসতে বললেন,
— “আরেহ এটা তো দারুণ খবর।আগে কেনো বলিস নি আমাদের যে আয়ানা মায়ের এত গুণ।আর আয়ানা আমাদের কেনো বলিস নি মা?”
— “আসলে বাবা ও ভয় পেয়েছিলো,ও ভেবেছিলো তোমরা যদি ওর খেলার বিষয়টা মেনে না নেও।” (অর্থ)
— “ধুর পাগলি মেয়ে!কেনো মেনে নেবো না?এরকম ট্যালেন্ট কত জনের মধ্যে থাকে হুম? তুমি ট্যালেন্টেড গার্ল,আমরা তোমার জন্য প্রাউড ফিল করছি।আসলে জানো কি আয়ানা আমার ছেলে অর্থ ও ওর শৈশব থেকেই ফুটবলের সাথে জড়িত। সারাদিন আম্মু ফুটবল খেলবো বলে বলে বায়না করতো,পড়াশোনাও করতো না ঠিকমতো। এজন্য অনেক মার‌ও খেয়েছে আমার হাতে‌। কিন্তু তোমার বাবা আমায় বুঝিয়েছেন,আসলে এটা একটা ট্যালেন্ট।আর ভেতরকার ট্যালেন্টকে দমিয়ে রাখা উচিত নয়।তাই আমরা অর্থকে কখনো বাঁধা দি‌ই নি সাপোর্ট করে গেছি,আর সেজন্য আজ ও এখানে পৌঁছাতে পেরেছে।আর তুমি কোনো চিন্তা করো না আমরা সবাই তোমার পাশে আছি।” (অর্থের আম্মু)
— “হ্যাঁ রে মা তুই এসব ভাববি না,নিজের স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যা।মনে রাখবি তোর ফ্যামিলি তোর পাশে আছে।” (অর্থের বাবা)

উনাদের কথা শুনে আয়ানা ভীষণ খুশি হয়।এমন সাপোর্টিভ পরিবার পেয়ে আজ ওর নিজেকে খুব‌ই ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে।আয়ানা মুচকি হেসে বললো,
— “হুম বাবা আপনারাই তো আমার বড় শক্তি।আপনাদের সহযোগিতা ব্যতীত কোনো কিছুই সম্ভব নয়।আপনারা শুধু আমার পাশে থাকবেন।”
— “অবশ্য‌ই।” (অর্থের বাবা)

একটা আনন্দঘন পরিবেশ বিরাজ করছে।সকলের মুখেই হাসির রেখা স্পষ্ট।এমন সুন্দর মুহুর্তে অর্থি হাসতে হাসতে বললো,
— “ওহ ওয়াও ফুটবলার বর+ফুটবলার ব‌উ = ও মা গো বেস্ট জুটি।”
অর্থির কথা শুনে অর্থের বাবা-মা,অর্থ,আয়ানা সবাই হেসে দিলো।আয়ানা হাসতে হাসতে বললো,
— “হুম ডান্স কোরিওগ্রাফার বর+ডান্স কোরিওগ্রাফার ব‌উ = ও মাগো বেস্ট জুটি ঠু।”

সবাই অর্থির দিকে তাকিয়ে হাসলো।অর্থি একটু লজ্জা পেলো।কারণ নাফিজ এবং অর্থি দুজনেই ডান্স কোরিওগ্রাফার আর এই কোরিওগ্রাফি করতে গিয়েই ওদের প্রথম পরিচয়।বর্তমানে ওরা দুজনেই একটা ডান্স একাডেমীর ওনার।

!!
ওইদিনের পর থেকে অর্থ আয়ানাকে পুরো সাপোর্ট করে যাচ্ছে।আয়ানাকে ও সবরকম ভাবে সাহায্য করে।প্রতিদিন গ্রাউন্ডে ওকে ড্রপ করে দিয়ে অর্থ তারপর নিজের অনুশীলনে যায় আবার বাড়ি আসার সময় আয়ানাকে সঙ্গে করে নিয়েই ফেরে।ইদানিং অর্থ এবং আয়ানা দুজনেই খুব ব্যস্ত আছে কারণ আয়ানার একটা টূর্ণামেন্ট চলছে।আর এই টূর্ণামেন্টটা আয়ানার ক্যারিয়ারের জন্য খুব‌ই গুরুত্বপূর্ণ।আজ সেমি ফাইনাল ম্যাচ ছিলো,মাঠে আয়ানাকে সাপোর্ট করার জন্য অর্থ উপস্থিত ছিলো।ও আয়ানাকে সাহস যোগায় যার ফলে আয়ানা নিজের মাইন্ডকে সচল রাখতে পারে।আর তার ফলস্বরূপ আয়ানা এবং দলের প্রতিটি খেলোয়াড়ের সম্মিলিত প্রয়াসে ওদের দল জয়লাভ করে এবং ফাইনালে উত্তীর্ণ হয়।সব প্লেয়াররা অনেক খুশি এবং সাথে কোচ‌ও।ওখানে সব ফর্মালিটিজ শেষ করে অর্থ আর আয়ানা হাসতে হাসতে বাড়ি ফেরে।

আয়ানার পায়ে সামান্য ব্যথা লেগেছে ও ফ্রেশ হয়ে এসে চুপ করে বসে আছে।কিন্তু তা অর্থের চোখ এড়ায় নি অর্থ ওকে জিজ্ঞেস করে বসলো,
— “কেমন ব্যথা করছে?ডক্টরকে ফোন করবো?”
— “আরেহ নাহ বেশি না।একটু টান লেগেছে বোধ হয়।” (আয়ানা)
— “এখানে থাকো আমি স্প্রে আনছি।স্প্রে করে দিলে রাতেই ঠিক হয়ে যাবে।” (অর্থ)
— “আরেহ অতো ব্যস্ত হবেন না,আপনি বিশ্রাম করুন এমনিতেই অনেক ধকল গিয়েছে আপনার উপর দিয়ে।” (আয়ানা)
— “সে আমি বুঝবো তুমি চুপ করে বসো তো।” (অর্থ)

আয়ানার নিষেধ সত্ত্বেও অর্থ স্প্রে নিয়ে এসে পায়ে স্প্রে করে দিলো।তারপর আয়ানার পাশে বসে বললো,
— “দেখো পরশু তোমার ফাইনাল ম্যাচ তোমাকে কিন্তু নিজের সেরাটা দিতে হবে।সবাই তোমার দিকে চেয়ে আছে সবার স্বপ্ন তোমাকে পূরণ করতে হবে।”
— “হুম আপনি শুধু আমার পাশে থাকবেন তাহলে আমি সব পারবো।” (আয়ানা)
— “কিন্তু পরশুদিন তোমাকে একাই লড়তে হবে।আমি তোমার পাশে থাকতে পারবো না। ওইদিন আমার‌ও একটা ম্যাচ আছে।যেহেতু অর্থি আপুর বিয়ের জন্য লিভ নিয়েছি তাই ম্যাচটা খেলা আমার জন্য বাধ্যতামূলক।আমি ওইদিন তোমার সাথে যেতে পারবো না। তোমাকে একাই লড়তে হবে।” (অর্থ)

অর্থের কথা শুনে আয়ানার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায়।আয়ানা অর্থকে বললো,
— “এই কথাটা আগে কেনো বলেন নি?”
— “আগে বললে আজকের ম্যাচটা তুমি ভালো খেলতে পারতে না।আসলে আমি অনেক চেষ্টা করেছি ওই দিনটা ছুটি নেওয়ার বাট লাভ হয় নি আমাকে খেলতে হবে।আমি চাইলেও ওইদিন তোমার পাশে থাকতে পারবো না।আমার জাস্ট অসহ্য লাগছে সব।” (অর্থ)

কথাগুলো বেশ মন খারাপ করেই বললো অর্থ।অর্থ যাতে নিজের কাজে মনোযোগ দিতে পারে তাই আয়ানা ওর হাতে হাত রেখে অর্থকে আশ্বস্ত করে বলে,
— “আপনি কোনো চিন্তা করবেননা আমি আমার সেরাটা দেবো।আপনি নিজের ম্যাচে মন দিবেন।আপনাকেও তো জিততে হবে। আপনি আমায় নিয়ে ভাববেন না,আমি ঠিক পারবো‌।”
অর্থ শক্ত করে আয়ানার হাতে হাত রাখে আর মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানায়।

!!
দুইদিন পর,
আয়ানা এখন স্টেডিয়ামে, কিছুক্ষণ পরেই খেলা শুরু হবে।অর্থ‌ও আয়ানা বাসা থেকে বেরোনোর অনেকক্ষণ আগেই নিজের ম্যাচ খেলতে চলে গিয়েছে।তবে মুখে কিছু না বললে আয়ানার ভীষণ টেনশন হচ্ছে বারবার মনে হচ্ছে ও পারবে তো।আয়ানার ভয় লাগার আরেকটা কারণ হচ্ছে আজ ওর অপর্নেন্ট যে টিম খেলবে তার অধিনায়কের সঙ্গে কিছুদিন আগে ওর একটা ঝামেলা হয়েছিল।ওইদিন অর্থ‌ই সবটা ম্যানেজ করে।কিন্তু ওই মেয়েটা আয়ানাকে বলেছিলো ও আয়ানাকে দেখে নেবে।এজন‌্য আয়ানার আরো ভয় করছে।

এসব ভাবতে ভাবতেই ওই মেয়েটা আয়ানার সামনে আসে আর শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,
— “সেদিন সারহান ইন্তেহাব তোকে বাঁচিয়েছিল বাট আজ তো সে নেই।আজ কে বাঁচাবে হ্যাঁ?আজকে হারার জন্য প্রস্তুত হয়ে নে।”

চলবে

#মন_পাজড়ে_শুধু_তুমি_আছো?
#লেখিকা_মাইসারাহ_আরোহি?
#পর্ব_২৪

এসব ভাবতে ভাবতেই ওই মেয়েটা আয়ানার সামনে আসে আর শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,
— “সেদিন সারহান ইন্তেহাব তোকে বাঁচিয়েছিল বাট আজ তো সে নেই।আজ কে বাঁচাবে হ্যাঁ?আজকে হারার জন্য প্রস্তুত হয়ে নে।”

ওর কথা শুনে আয়ানা সামান্য হেসে বললো,
— “আমার ডিকশোনারিতে হেরে যাওয়া শব্দটা নেই সিমরান।আর তাছাড়া খেলার ফলাফল তো ভবিষ্যত কাল।তুই তো এখন‌ই বলতে পারিস না যে আমি হেরে যাবো।তাই আমার মিথ্যে ভয় না দেখিয়ে তৈরি হয়ে নে এখন‌ই এন্থেম শুরু হবে।”
আয়ানার কথায় সিমরান রাগে ফুঁসতে থাকে কিন্তু কিছু বলার আগেই এশা এসে বললো,
— “কি রে আনান‌ইয়া ও তোকে কি বলছে রে?ও কি ঝামেলা বাঁধাতে এসেছে নাকি?”
— “নাহ রে এশা সিমরান আমাদের গুড উ‌ইশেস করতে এসেছিলো।যাই হোক চল আমরা ডিসকাস করে নি‌ই আর বেশি সময় নেই।” (আয়ানা)
— “হুম চল।বাই সিমরান।” (হাত নাড়িয়ে এশা)

এশা আর আয়ানা ওইখান থেকে চলে গেলো। এদিকে অপমানিত হয়ে সিমরান রাগে ফুঁসছে।সিমরান হাতের মুঠো শক্ত করে বললো,
— “এর শোধ তো আমি তুলবোই।আজ তোর এমন অবস্থা করবো না হেরে যাওয়া কি তুই আর জীবনে দাঁড়াতেও পারবি না।লেটস সি ইউ ইন দ্যা গ্রাউন্ড।”

অল্প সময়ের মধ্যেই খেলা শুরু হয়ে যায়।স্টার্টিংটা ভালোই করে আয়ানার দল।কিন্তু অপর্নেন্ট টিমের প্লেয়াররা ভীষণ বাজে।বারবার ইচ্ছাকৃত ভাবে বিরক্ত করছে। বারবার বাঁধা দিচ্ছে।আয়ানা বুঝতে পেরেছে আজকের পথ পাড়ি দেয়া ভীষণ কঠিন।কিন্তু কিছুতো করতেই হবে।বাধ্য হয়ে আয়ানা নিজে বল নিয়ে এগিয়ে চলেছে ও একেবারে গোল পোস্টের কাছে চলে এসেছে জাস্ট একটা শট দিলেই গোল হয়ে যাবে।সবাই খুবই উত্তেজিত সবাই আশা নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে আয়ানার দিকে।কিন্তু আয়ানা পা দিয়ে বলটা স্পর্শ করার আগেই পেছন থেকে কেউ ওকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়।আয়ানা অনেক জোরে মাটিতে পড়ে যায়।ওর পায়ে ভীষণ যন্ত্রনা হচ্ছে।আয়ানার টিমমেটরা সবাই তাড়াতাড়ি ছুটে আসে।
— “আনান‌ইয়া তুই ঠিক আছিস?কোথায় লাগছে তোর?” (এশা)
— “আমি ঠিক আছি কেউ একটু ফিজিওথেরাপিস্ট কে বল স্প্রে টা আনতে পায়ের মধ্যে যন্ত্রনা করছে।” (আয়ানা)
— “ওই তো ফিজিওথেরাপিস্ট চলে এসেছেন।” (সুচি,আয়ানার টিমমেট)

ফিজিওথেরাপিস্ট আয়ানার পায়ে স্প্রে করে দিলেন।হালকা ব্যথা থাকা সত্ত্বেও সবার মুখের দিকে তাকিয়ে আয়ানা উঠে দাঁড়ালো।আবার খেলা শুরু হলো।কিন্তু শত চেষ্টার সত্ত্বেও আয়ানার দল গোল দিতে পারছে না,বারবার প্রতিপক্ষের বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছে।এই নিয়ে আয়ানাকে তিনবার ইচ্ছাকৃতভাবে ফেলে দেওয়া হয়েছে।আয়ানা কি করবে বুঝতে পারছে না।আয়ানা কিছু একটা ভাবতে ভাবতেই অপর দল একটা গোল দিয়ে বসে।গ্যালারি ভর্তি দর্শকের সকলের মাথায় হাত।আয়ানাদের কোচ‌ও হতাশ হলেন।আর সিমরান তো আয়ানার দিকে শয়তানি দৃষ্টিতে তাকালো।খেলা চলছে আরেকটু পর হাফ টাইম হবে।এবার আয়ানা খুব দ্রুত বল পায়ে এগোচ্ছে সবাই আশা করে আছে সুন্দর মুহুর্তের জন্য।কিন্তু সেটা সম্ভব হলো না এবার বেশ খানিকটা জোরেই আয়ানাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হলো।সঙ্গে সঙ্গে ম্যাচ রেফারি হলুদ কার্ড দেখিয়ে দিলেন এবং সেই সাথে হাফ টাইম‌ও হয়ে গেলো।

ফিজিওথেরাপিস্ট ভালোভাবে চেক করে বললেন আঘাতটা গভীর।আয়ানা খেলতে পারবে না।কিন্তু আয়ানা সেটা মানতে নারাজ,ও বললো,
— “না আমাকে ম্যাচটা খেলতেই হবে।এভাবে হেরে যেতে পারি না আমি।”
— “কিন্তু তুমি তো দাঁড়াতেই পারছো না,খেলবে কিভাবে?” (কোচ)

হঠাৎ পেছন থেকে কেউ একজন বললো,
— “তুমি খেলবে আয়ানা।তোমাকে খেলতেই হবে।”
সঙ্গে সঙ্গে সবাই পেছনে ঘুরে তাকায়।সবাই খুশি হলেও আয়ানা অর্থকে দেখে অবাক হয়।কারণ ওর তো এখন নিজের ম্যাচ খেলার কথা ও এখানে কি করছে।আয়ানা অবাক হয়ে বললো,
— “আপনি এখানে কেনো?আপনার না ম্যাচ ছিলো?”
— “সেসব কথা পরে বলবো।আগে তোমাকে ঠিক করি।দেখি তুমি দাঁড়াও আর ফিজিওথেরাপিস্ট আমাকে একটু মেডিসিন দিন।” (অর্থ)
অর্থ একটা মেডিসিনের নাম বলে, ফিজিওথেরাপিস্ট ওকে সেই মেডিসিনটা দিলো।অর্থ সেটা আয়ানার পায়ে লাগিয়ে দেয়।
— “১০ মিনিটের মধ্যে সব পেইন সেরে যাবে ইনশাআল্লাহ।এখন আমি যা যা বলছি সেটা মনোযোগ দিয়ে শোনো।ঠিক যেভাবে বলবো ওইভাবেই স্টেপ বাই স্টেপ কাজ করবে।” (অর্থ)
— “হুম ঠিক আছে।” (আয়ানা)

পুরো হাফ টাইম জুড়ে অর্থ আয়ানাকে অনেক কিছু বোঝায়,আয়ানাও সব বুঝতে পারে।
— “যা যা বললাম মনে রেখো আর হ্যাঁ অল দ্যা বেস্ট।” (অর্থ)
— “হুম,আই উইল ট্রাই মাই বেস্ট।” (আয়ানা)
আবার খেলা শুরু হয়ে যায়।তবে এবার খেলাটা একদম আয়ানার আয়ত্তে।হাজার চেষ্টা সত্ত্বেও প্রতিপক্ষ দল ওকে প্রতিহত করতে পারছে না।আর মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে অর্থ ইশারায় আয়ানাকে ইন্সট্রাকশন দিচ্ছে।ঠিক কিছুক্ষণ পরেই দর্শকবৃন্দ “গোল গোল” বলে চেঁচিয়ে উঠে।সবাই জোরে জোরে চিৎকার করছে আর আয়ানার জন্য চিয়ার্স করছে।এই গোলটা দেওয়ায় দুই দলের সমান সমান অবস্থান হলো।আয়ানাকে এখনো আরেকটা গোল দিতে হবে তবেই জেতা সম্ভব।

কিন্তু যত সময় যাচ্ছে পরিস্থিতি আরো জটিল হচ্ছে।গোল করার জন্য শট দিলেও গোলকিপার তা ধরে ফেলছেন। এদিকে হাতেও বেশি সময় নেই আর মাত্র পাঁচ মিনিট।আসল সময় শেষ এখন এক্সট্রা পাঁচ মিনিট আছে এই পাঁচ মিনিট গোল না করতে পারলে ম্যাচ ট্রাই হয়ে যাবে তখন আবার ট্রাই বেকার খেলতে হবে।আয়ানাদের কোচ তো আশা ছেড়ে দিয়ে বেঞ্চে বসে পড়লেন।সব দর্শক মুখিয়ে আছে।আয়ানার‌ও ভীষণ টেনশন হচ্ছে, অর্থ ওকে ইশারায় শান্ত থাকতে বললো আর কিভাবে সামলাতে হবে সেটা দেখিয়ে দিলো। তবে আয়ানা যাতে মনোবল পায় তাই অর্থ জোরে জোরে বলতে থাকলো, “উই নো আনান‌ইয়া ইউ ক্যান ডু ইট,প্লিজ ট্রাই ইওর বেস্ট।” অর্থের সঙ্গে সঙ্গে দর্শকরাও এক‌ই কথা বলতে থাকলেন।ঠিক শেষ মুহূর্তে এসে সকলের সাপোর্টে আয়ানা সজোরে বলে লাথি দেয় আর বল সোজা গোলপোস্টের মাঝে চলে যায়।সবাই পুরো অবাক হয়ে গেছে কেউ ভাবে নি গোল হয়ে যাবে।সকল দর্শক গ্যালারি থেকে চিৎকার দিয়ে উঠলেন।আয়ানা যখন বুঝতে পারলো এই সবকিছু বাস্তব ও তখন ছুটে মাঠের বাইরে চলে এলো আর অর্থের হাতটা শক্ত করে ধরলো।
— “আমি পেরেছি অর্থ,আমি পেরেছি আমার কথা রাখতে।আমি পেরেছি সবার স্বপ্ন পূরণ করতে।” (অর্থের হাতে হাত রেখে আয়ানা)
— “ইয়েস আয়ানা ইউ ডিড ইট।আ’ম প্রাউড অফ ইউ মাই লাভ।” (অর্থ)

সবাই প্রচন্ড খুশি।আর ওদিকে সিমরানের মুখ দেখার মতো।সবাই যখন সেলিব্রেশনে ব্যস্ত আয়ানা তখন সিমরানের কাছে গিয়ে বললো,
— “কনফিডেন্স ভালো তবে ওভার কনফিডেন্স ভালো না।আশা করি বুঝতে পেরেছিস।”
সিমরানের কিছু বলার মুখ নেই,তাই ও কিছু বললো না তাড়াতাড়ি করে ওই স্হান থেকে চলে গেলো।আয়ানার কাঁধে কেউ হাত রাখতেই আয়ানা পেছনে ঘুরলো।
— “ওহ আপনি!!” (আয়ানা)
— “তুমি এখানে কি করছো? ওদিকে সবাই তোমার সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য ব্যস্ত।চলো ওদিকে চলো।” (অর্থ)
— “আমি ওসব সাক্ষাৎকার দিতে পারবো না কারণ আমি তো কিছু করি নি সব তো আপনার অবদান।আমি শুধু আপনার শিষ্যের মতো কাজ করেছি।কোচ‌ও আমায় এতোটা গাইড করে নি যতটা আপনি করলেন।” (আয়ানা)
— “ওসব ছাড়ো আগে তো ওদেরকে কিছু বলতে হবে।” (অর্থ)
— “কি বলবো?আমি পারবো না।আমি বাড়ি যাবো।ভালো লাগছে না আর।” (আয়ানা)
— “যাবো তো বাট কিছু ফর্মালিটিজ আছে এগুলো শেষ করতে হবে তো।” (অর্থ)

!!
সব ফর্মালিটিজ শেষ করে রাতে বাসায় ফেরে অর্থ এবং আয়ানা।বাড়ির সবাই তো আজ ভীষণ খুশি।এই উপলক্ষে সবাই রাতেই একটা পার্টি করে ফেললে বোধ হয় শান্তি পায়।কিন্তু অর্থ বলেছে আয়ানা টায়ার্ড তাই আর কেউ বিরক্ত করলো না।আয়ানা আগেই ফ্রেশ হয়ে নিয়েছে আর অর্থ মাত্র ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হলো।আয়ানা অর্থের দিকে তাকিয়ে বললো,
— “আচ্ছা একটা প্রশ্ন, আপনার তো ম্যাচ ছিলো আপনি আসলেন কি করে?”
— “কেনো গাড়ি করে।” (অর্থ)
— “ধুর ইয়ার্কি না সিরিয়াসলি।” (আয়ানা)
অর্থ আয়ানার পাশে এসে বসে বললো,
— “আমি তোমার আগে বেরিয়েছিলাম না আর আমার ম্যাচ‌ও আগে ছিলো।তাই শেষ হ‌ওয়ার সাথে সাথে আমি তোমার কাছে ছুটে গিয়েছি।তবে পৌঁছাতে তো হাফ টাইম হয়ে গেছিলো।” (অর্থ)
— “তাতে কি!!আমার পাশে তো ছিলেন।” (আয়ানা)
— “হুম।” (অর্থ)
— “থ্যাংক ইউ এভাবে সাপোর্ট করার জন্য।” (আয়ানা)
— “শুধু থ্যাংক ইউ বলবে আর কিছু দেবে না?” (মুখটা ছোট করে অর্থ)
— “কি দেবো?” (ভ্রু কুঁচকে আয়ানা)

অর্থ দুষ্টু হেসে নিজের গাল ইশারা করে।আয়ানা সেটা দেখে চোখ রাঙিয়ে বললো,
— “আমার রুদ্রমূর্তি রুপ দেখতে না চাইলে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ুন।আর তার অন্যথা চাইলে পিঠে বালিশ বেঁধে তৈরি হন কারণ আমি রুপবদল করলে আপনার পিঠের একটা ছাল‌ও থাকবে না।”
— “তততততুমি আমাকে মারবে?হায় রে গুন্ডি মেয়ে গো তুমি!!” (অর্থ)
— “এই একদম গুন্ডি বলবেন না।নিজে তো একটা ক্যারেক্টারলেস লোক সারাদিন মেয়েদের সাথে আড্ডা দেন আবার আমায় গুন্ডি বলছেন।” (আয়ানা)
— “আড্ডা দেই মানে আরে ওরা আমার ফ্যান।তাই একটু রিপ্লাই করি আর তুমি কিসব ফালতু কথা বলো।” (অর্থ)
— “বেশ করি বাজে অসভ্য লোক একটা।” (আয়ানা)
— “তুমিও থার্ডক্লাস মেয়ে একটা।” (অর্থ)
— “ইতর প্রাণী।” (মুখ ভেংচি দিয়ে আয়ানা)
— “গুন্ডী মেয়ে,জল্লাদ ব‌উ।” (বিড়বিড় করে
অর্থ)

!!
আজকে অর্থির গায়ে হলুদ।বাসার সবাই আজ খুব ব্যস্ত।বাড়ি ভর্তি সব মেহমান এসেছে।ডেকোরেটরের লোকজন‌ও এসেছে ডেকোরেশন করার জন্য।আর সব দিকটা আয়ানাকেই দেখতে হচ্ছে,অর্থ তো অলস কোনো কাজেই ওর মন নেই তাই বাসা,হলুদের স্টেজ সাজানো থেকে শুরু করে সবকিছুর দায়িত্ব আয়ানার ওপরেই।আয়ানা ডেকোরেটরের লোকদের কিভাবে সাজাতে হবে সবটা দেখিয়ে দিয়ে ওড়না দিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে ঘরে গেলো।ঘরে যেতেই অর্থের আজব কান্ডে ওর মেজাজটা গরম হয়ে গেলো।

অর্থ বিছানায় শুয়ে গেমস খেলছিলো আয়ানা গিয়ে ছো মেড়ে ওর হাত থেকে ফোন কেড়ে নিলো।
— “এই ফোন নিয়ে নিলে কেনো? ফোনটা দাও।ইস আরেকটু হলেই হাইস্কোর হবে, তাড়াতাড়ি ফোনটা দাও আমায়।” (অর্থ)
— “না দেবো না। সারাদিন গেমস খেলা তাই না?আমড়া কাঠের ঢেকী কোনো কাজ পারে না শুধু আলসেমি।এখন আবার গেমস খেলছে,ইচ্ছে করছে আপনাকে ঝাড়ু পেটা করি।” (দাঁত কটমট করে আয়ানা)
— “কিহ তোমার এতো সাহস তুমি আমাকে ঝাড়ু পেটা করার কথা বলছো?” (অর্থ)
— “জানেনই তো আমার সাহস বরাবর‌ই বেশি।তাই আমাকে রাগাতে না চাইলে আমি যা বলছি তাই করুন।” (আয়ানা)
— “আমি তোমার আন্ডারে জব করি না সুতরাং আমি এখন কিছু করতে পারবো না।” (অর্থ)
— “করতে তো হবেই।আমি না আপনার বিয়ে করা বউ,অত‌এব আমার কথা শুনতে আপনি বাধ্য।” (আয়ানা)
— “না বাধ্য ন‌ই।আমাকে ফোনটা দাও আমি গেমস খেলবো।” (অর্থ)
— “দেবো না।” (মুখ ভেংচি দিয়ে আয়ানা)
— “এখনো বলছি ফোনটা দাও।আমার কিন্তু ভীষণ রাগ হচ্ছে।” (অর্থ)
— “বললাম তো দেবো না।কোথায় বোনের বিয়ে সবদিকে একটু তদারকি করবে তা না উনি ঘরে বসে গেমস খেলছে।ক্যারেক্টারলেস লোক সারাদিন শুধু ছোট ছোট ড্রেস পরা মেয়েদের গান শোনা আর গেমস খেলা ছাড়া কিচ্ছু পারে না।আমড়া কাঠের ঢেকী,অকর্মার ঢেকী একটা!” (আয়ানা)
— “একদম ইনসাল্ট করবে না আমায়। তোমার চেয়ে আমি অনেক ভালো।” (অর্থ)
— “সে তো আমার জানা আছেই।এখন নিজের প্রশংসা না করে পাঞ্জাবি বের করে দিচ্ছি সেটা পরে নিচে যান আর খেয়াল রাখুন কোথায় কি লাগে।আমিও যাই রেডি হ‌ই, ওদিকে অর্থি আপুকে তো পার্লারের মেয়েরা সাজাচ্ছে।” (আয়ানা)
— “তুমি ওদের কাছে সাজবে না?” (অর্থ)
— “না আমার অতো মেকআপ ভালো লাগে না।আমি এমনি‌ই হালকা মেকআপ করবো। আপনি আর কথা না বাড়িয়ে চেঞ্জ করে নিচে যান।” (আয়ানা)
— “হুম যাচ্ছি।” (বিরক্তি নিয়ে অর্থ)
অর্থ পাঞ্জাবিটা নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।

অর্থ নিচে দাঁড়িয়ে ডেকোরেটরের লোকদের সাথে কথা বলছে।কথা কথা বলতে ওর চোখ যায় সিঁড়ির দিকে।আয়ানাকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখে অর্থের দৃষ্টি ওখানেই আটকে গেছে।ও অপলক দৃষ্টিতে আয়ানার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here