মন_পাথরে_হঠাৎ_ঝড় #পর্ব_২৭

0
228

#মন_পাথরে_হঠাৎ_ঝড়
#পর্ব_২৭
Tahrim Muntahana

কুয়াশাই ঘেরা রাত। ঝিঁঝিপোকা গুলো তাদের নিজস্ব নিয়ম মেনে ডেকে চলছে। রোদ না উঠায় গ্রামের রাস্তাও শুকাতে পারেনি। কাঁদাযুক্ত রাস্তায় সাবধানে পা ফেলে হেটে চলছে ছয়জন মানুষ। কারো মুখেই কোনো কথা নেই। সবার মনেই চলছে একটি ভাবনা। আহনাফ চৌধুরী কে কি পাবে?

অনেকটা পথ চলে এসেছে। আর মাত্র কিছুক্ষণ। এমন সময় পান্চু বলে উঠলো,

বস আই হেভ এ কুশ্চেন!

হৃদান চোখ তুলে তাকালো। এই পান্চুর সময়জ্ঞান নেই কখন কি করতে হয়। নিজের ঠোঁটের উপর এক আঙুল চেপে ইশারা করলো চুপ থাকতে। পান্চুর মুখটা পাংশে মেরে গেলো। একটা কথায় না হয় বলতে চেয়েছিলো, এটা তার অধিকারের মধ‍্যে পড়ে। কিন্তু সে তো ভুলেই গিয়েছিলো তার বস তার অধিকার গুলো কেড়ে নিতে উস্তাদ।

পুরাতন চৌধুরী বাড়ির গেইট দেখা যাচ্ছে। হৃদান দাড়িয়ে পড়লো। হুট করে ঢোকা যাবে না। কোন বিপদ উৎ পেতে আছে কে জানে? পান্চু আর ফালাহ চারপাশটা ভালো করে দেখে এলো। তারপরেই হৃদান গেটের দিকে হাটা ধরলো। ইয়া বড় তালা ঝুলছে। চাবি নেই! আতইয়াবের হাতে লোহার রড। হৃদান প্রথমে অবাক হলেও পরে হাসলো। আতইয়াব যে বুদ্ধি করে এটা নিয়ে আসবে সে ভাবেইনি। হৃদানের হাসি দেখে আতইয়াব বলে উঠলো,

সবই আপনার বোনের আদরের ফল বুঝলেন মি. মডেল!

হৃদান চোখ রাঙিয়ে তাকালো। কেন তার সামনে এত আদর আদর করে। ওরা কি জানে না তার না হওয়া বউয়ের নাম আদর! বউয়ের কথা মনে হলে যে সে দিনদুনিয়া ভুলে যায় তারা কি করে জানবে? দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে! হতাশার শ্বাস ফেলে রড টা হাতে নিলো। আতইয়াব মিটমিটিয়ে হেসেই যাচ্ছে। তালা ভেঙে সবাই ভেতরে ঢুকে পড়লো। গ্রামের মানুষ এখনো চলাচল করে রাস্তা দিয়ে। তাই হয়তো গার্ড রাখতে পারেনি রিনিশা। আর রাখবেই বা কেন? সে তো বুঝতেই পারেনি সে সামনে চলে আসবে। হৃদানদের চৌধুরী মঞ্জিল থেকে এটা অনেকটা ছোট। নিচের করিডরের সব গুলো ঘর দেখা শেষ। না নেই। উপরে চলল সবাই। পান্চুর খুব হিসু পেয়েছে। বাট বসের ভয়ে কিছু বলতেও পারছে। না। পা চেপে চেপে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছে। হৃদানের হঠাৎ চোখ পড়তেই ভ্রু কুচকলো সে। এভাবে হাটছে কেন? পরক্ষণেই কারণ টা ধরতে পেরে হৃদানের ঘর কাঁপিয়ে হাসতে ইচ্ছে হলো। কিন্তু এই রাতের বেলা এমন ঘুটঘুটে অন্ধকারে হাসলে নিশ্চিত তার সুপারহিরো ভুত ভেবে নিজেই হিসু করে দিবে! হাসি চেপে গম্ভীর মুখে বলে উঠলো,

হিসু চেপে বউয়ের ভবিষ্যৎ অন্ধকার করতে চাও নাকি পান্চু?

পান্চু এতক্ষণ চেপে রাখতে পারলেও এখন আর পারলো না। এক দৌড়ে উপরের করিডরের শেষ মাথার জানালা কাছে গিয়ে থামলো। নিচে নামতে নামতে তার প‍্যান্ট নিশ্চিত ভিজে যাবে! জানালা নিয়েই কাজ চালানো যাক!

উপরের প্রত‍্যেকটা ঘর চেইক করেও যখন আহনাফ চৌধুরীকে পেলো না, হৃদানের শরীর কাঁপতে শুরু করলো। নিজের রাগের উপর চরম ভাবে বিরক্ত হলো সে। এই রাগের জন‍্যই মনে হয় আজ তার সুপারহিরো কে পাবে না। রিনিশা কে না মারলে সত‍্য কথা বের করা যেত। এখন কোথায় খুঁজবে! দিশেহারা লাগছে এই মুহূর্তে! পান্চু হেটে হেটে ছাদের সিড়ির কছে এসে দাড়িয়েছে। সিড়ির দরজা খোলা। ছাদ টা কেন যেন দেখতে ইচ্ছে করলো পান্চুর। উপরে উঠতে চেয়েও ভয়ে থেমে গেলো। যদি ভুত থাকে!
একবার ভাবলো দরজা থেকে উঁকি দিয়ে নিচে নেমে যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। দরজার কাছে উঁকি দিতেই পান্চুর কানে কবিতা ভেসে আসলো,

একদিন আমারো হবে মুক্তি
দেখবো পৃথিবীর আলো
নাহয় অন্ধকার!
মুক্তির আশা বুকে চেপে
আছি যে অপেক্ষায়!
আদও মিলবে কি মুক্তি!

গম্ভীর ফিসফিসানি কন্ঠে কবিতা শুনে পান্চুর মনে একটা শব্দই উদয় হলো ‘ভুত’। এক চিৎকার দিয়ে দৌড় দিতে গিয়ে ঠাস করে পড়ে টাক মাথায় লাগলো এক ধাক্কা। ও বস গো বলে দিলো এক চিৎকার। হৃদান ওরা দৌড়ে আসলো। পান্চুকে এই অবস্থায় দেখে কিছু বলবে তার আগেই পান্চুর চোখে ভয় দেখে অবাক হলো। পান্চু আস্তে আস্তে বলে উঠলো,

বস তাড়াতাড়ি চলেন। ভুত! এখানে ভুত! আপনার তো চিন্তা নেই আপনার চুল আছে। ভুত রা টাক মাথা বেশী পছন্দ করে! আমাকেই আগে ধরবে আমি গেলামমম!

এহনো কথায় হৃদান বিরক্তি তে ভ্রু কুচকে নিলো। এই পান্চুটা দিন দিন কেমন হয়ে যাচ্ছে। কি আছে দেখতেই ছাদের দরজার কাছে দাড়াতেই আবারো সেই কবিতা শুনতে পেলো। খুশিতে চকচক করে উঠলো মুখ! কেউ তো আছেই। দরজা খুলে ছাদে উঠে গেলো। ঘুটঘুটে অন্ধকার। কুয়াশার জন‍্য কিছুই দেখা যাচ্ছে না। শব্দ অনুসরণ করে চিলেকোঠার দরজা ঘেসে দাড়াতেই হৃদানের চোখ খুশিতে চিকচিক করে উঠলো। তালা দেওয়া নেই ঘরে। দরজা খুলে ঘরে ঢুকলো সবাই। পান্চু তখনো সিড়িতে শুয়ে আছে।
সাথে আনা লাইট জ্বালাতেই চোখে পড়লো চেয়ারে দোল খেতে খেতে কেউ কবিতা বলছে। হৃদানের চোখ ছলছল করে উঠলো। শান্ত কন্ঠে ডেকে উঠলো,

সুপারহিরো!

কবিতা থেমে গেলো সাথে দোল ও। খট করে উঠে দাড়ালো লোকটি। পেছনে চায়তেও যেন ভয় করছে। অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে পেছন ফিরতেই হৃদানের চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। ঝাপটে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো সে। পেয়ে গেছে! সুপারহিরো কে সে পেয়ে গেছে!
_____________________

ঘড়ির কাটায় রাত দুইটা বেজে পনেরো মিনিট। চৌধুরী মঞ্জিলে ঢুকছে হৃদানরা সাথে আহনাফ চৌধুরী! সদর দরজা খোলা রাখা। আহনাফ চৌধুরীর শরীর কাঁপছে। কতগুলো বছর পর আবার সে চৌধুরী মঞ্জিলের সদর দরজায় দাড়িয়েছে, প্রাণপ্রিয় বন্ধু+ভাইয়ের সামনে দাড়াবে! তার সেই ছোট্ট মেয়েটা অনেক বড় হয়ে গেছে না? সুপার চ‍্যাম্প কেও তো সে ভালো করে দেখতে পারেনি! মনের মধ‍্যে কি একটা অনুভূতি হচ্ছে বলে বোঝানো যাবে না!

ভেতরে ঢুকতেই ওরা দেখতে পেলো নাসির চৌধুরী চোখ বন্ধ করে বসে আছে। তার পাশেই মিসেস রেহানা। হৃদান হাসলো। আহনাফ চৌধুরী কে নিয়ে সামনে দাড় করিয়ে নিজেরা পেছনে চলে গেলো। কতদিন পর দুই ভাই এক হবে! মিসেস রেহানা হাত দিয়ে ডাকলেন নাসির চৌধুরীকে। তার মুখ দিয়ে কথায় বের হচ্ছে না! চোখ খুলে সামনে আহনাফ কে দেখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন নাসির চৌধুরী । একসময় জড়িয়ে ধরে তিনি কেঁদে উঠলেন। মিসেস রেহানাও কাঁদছে। কাঁদার শব্দ কানে আসতেই একে একে ঘর থেকে বের হয়ে ড্রয়িং রুমের দিকে ছুটলো আদর রা। নিজের বাবা কে এতবছর পর সামনে দেখে রিয়ার পা ই চলছে না। সবকিছু স্বপ্ন মনে হচ্ছে তার। চোখ বন্ধ করলেই যেন সবকিছু শেষ হয়ে যাবে। চোখ খুলে আর দেখতে পাবে না। তাই তো চোখের পলক ফেলতেও ভুলে গেছে। আদর বুঝলো ব‍্যাপারটা। হাত ধরে এগিয়ে আসলো আহনাফের দিকে। রিয়ার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। আহনাফ প্রশ্নাত্মক চোখে তাকালো; রিয়া বাবা বলে ডাকার আগেই আহনাফ মেয়েকে বুকে টেনে নিলেন। আহা সুখ! মুক্তির স্বাদ এতটা শান্তি!

টুং করে ঘড়িতে শব্দ হলো। তিনটে বাজে জানান দিচ্ছে । ড্রয়িং রুমে বসে আছে সবাই। এতক্ষণ কাঁদাকাটির পর্ব শেষ হয়েছে। আহনাফ চৌধুরী খেয়েও নিয়েছে। অনেকদিন পর তৃপ্তি নিয়ে খেয়েছে সে। আহনাফ চৌধুরী বলল,

সুপারচ‍্যাম্প দেখছি তার গতিতেই চলছে। আমার জন‍্য বউমাও জোগাড় করে ফেলেছে!

সবই তোমার দয়া সুপারহিরো! তুমি গুরু আমি শিষ‍্য!

চারদিকে হাসির রোল পড়ে গেলো। আহনাফ চৌধুরী গলা ঝেড়ে কাশলেন। আদর মিটমিটিয়ে হাসছে। সব কালো অতিত আজ রাতেই শেষ। কাল সকাল থেকে সব ভালো হবে। সুন্দর, শান্তিতে বাঁচবে সবাই। এমন সময় আহনাফ চৌধুরী বললেন,

হিমেল কে দেখছি না? আমার একমাত্র মেয়ের জামাই বলে কথা!

রিয়া লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নিলো। বাবা জানে! কথা মনের মধ‍্যে উঁকি দিতেই আহনাফ আবার বলল,

তোমাদের সব কথায় আমাকে রিনিশা বলেছে কয়দিন আগে। ছটফট করছিলাম এক নজর দেখার জন‍্য। আজ সম্ভব হলো!

সবাই চাপা একটা শ্বাস ফেললো। নাসির চৌধুরী বউয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলেন মিসেস রেহানা ঝিমাচ্ছে। রাত জাগতে পারে না সে। উঠে দাড়ালেন উনি। হৃদান একনজর তাকিয়ে বলল,

বউ ঝিমাচ্ছে বলে তোমারও কি ঘুম পাচ্ছে বড়বাবা? বাব্বাহ এই বয়সেও কি প্রেম!
বাট আজ ওসব বাদ দাও। বিয়ে করবো! ডেট ফিক্সড করো।

হৃদানের এমন কথায় সবারই মুখ হা হয়ে গেলো। এতো রাতে এই অবস্থায় বিয়ের কথা বলছে? এটা কোনো কথা! সবার চাহনী দেখে হৃদান ভাব নিয়ে বলে উঠলো,

ইটস হৃদান চৌধুরী ম‍্যান! সব কিছুই ইউনিক হওয়া চাই!

হতাশার শ্বাস ফেললো সবাই। প্রেমে পড়ে হৃদান চৌধুরী সত‍্যিই পৃদান চৌধুরী হয়ে গেছে। বিয়ের কথা শুনে মিসেস রেহানা ঘুম ততক্ষণে ভেঙে গেছে। খুশি মনে বলে উঠলো,

বাপ আমার মনের কথা কইছো। নাতি-নাতনির সাথে খেলার সময় ই ই এহন।

একদম ঠিক বলছো বড়মা। আমি তিন দিনের মধ‍্যেই বিয়ে করবো। চিন্তা নেই এক বছরের মধ‍্যেই নাতি-নাতনির মুখ দেখতে পারবা!

আদর তো লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে মনে হচ্ছে। এই মানুষটা একটা যা তা! উঠে যেতে চাইলেও পারছে না। রোহানি শক্ত করে তাকে ধরে আছে। নাসির চৌধুরী বলল,

তিনদিনের মধ‍্যে করবে মানে? বিয়ের একটা সাজসজ্জা আছে না? ধুমধাম করে বিয়ে হবে!

ধুমধাম করেই হবে। সে দায়িত্ব আমার। কিন্তু আমি তিনদিনের মধ‍্যেই বিয়ে করবো। সাথে মি. ডক্টর আর হৃদুর বিয়েটাও আবার হবে। কেউ জানে না ওদের বিয়ের কথা!

নাসির চৌধুরী চোখ রাঙিয়ে হৃদানের দিকে তাকিয়ে আছে। তিনদিনের মধ‍্যে বিয়ে করবে বললেই হলো। মধ‍্যে দুইদিনে কি করবে! হৃদান গা জ্বালানো হাসি দিয়ে উঠে গেলো। যেতে যেতে বলে উঠলো,

কাল বিয়ের শপিং করতে যাবো, পরদিন বিয়ে তারপর দিন রিসেপশন। কোনো হলুদ টলুদ হবে না। পিয়াস, পান্চু সুপারহিরো আমার ঘরে আসো আর্জেন্ট কথা আছে!

এতকিছুর মাঝে আদরের কেন যেন খুব খুশি লাগছে। বিয়ের কথা শুনে, নাকি ভালোবাসার মানুষটাকে বৈধ ভাবে পাবে সেজন‍্য ; বুঝেনি সে। সবাই কিছক্ষণ বিয়ের আলোচনা যে যার ঘরে চলে গেলো। কাল সকাল থেকেই কাজে লেগে পড়তে হবে।

হৃদান রুমে বসে ভাবছে অনেককিছু। কালকে শপিংয়ের পাশাপাশি আরো কিছু কাজ করতে হবে। সেগুলোর জন‍্য ই ডেকেছে ওদের। সবাই আসতেই হৃদান আহনাফ চৌধুরী কে উদ্দেশ্য করে বলল,

সুপারহিরো কালকে আমাদের শহরে যেতে হবে। কনফারেন্স ডেকে তোমাকে খুঁজে পাওয়ার নিউজ পাবলিশড করতে হবে। বাবার হত‍্যা, রাতাফ আংকেলের হত‍্যা, তোমার নিখোঁজের পেছনের সকল প্রমাণ সহ পাবলিশড করতে হবে।

হৃদান তুই পাগল হয়েছিস? এসব পাবলিশড করলে তো হিয়ান রিনিশার হত‍্যার নিউজ টাও সামনে চলে আসবে।

পিয়াস বিচলিত কন্ঠে বলে উঠলো। হৃদান কিছুক্ষণ চিন্তিত মুখে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলো। পরক্ষণেই পান্চুকে উদ্দেশ‍্য করে বলল,

আদর, হৃদু, সুবাহ, মি. ডক্টর, মি. ফালাহ, হিমেল কে ডেকে আনো।

পান্চু ডাকতে চলে গেলো। আহনাফ চৌধুরী চুপ করে বসে আছে। উঠে দাড়িয়ে হৃদানের পাশে দাড়ালো। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

এক্সিডেন্ট কেস বলে চালিয়ে দাও।

হৃদান বাঁকা হাসলো আহনাফের দিকে তাকিয়ে। আহনাফ চৌধুরী ফিক করে হেসে দিলেন। সে ভুলেই গিয়েছিলো আজ সে ওই পিচ্চি হৃদানের সামনে না বরং হৃদান চৌধুরীর সামনে দাড়িয়ে আছে। কাঁধে দুটো চাপট দিয়ে বাহুবা দিলো। হৃদান হাসলো। আদর ওরা আসতেই হৃদান বলল,

আদর, হৃদু, সুবাহ জার্নালিজম নিয়ে পড়ছো! আদর হৃদুর ইচ্ছে সম্পর্কে আমি জানি বাট সুবাহ তুমি কি জার্নালিস্ট পেশাটাকে সিরিয়াসলি নিবে?

সুবাহ ফালাহ’র দিকে তাকালো। বিয়ের পর পড়তে দিচ্ছে এই অনেক কিন্তু চাকরি করতে দিবে? ফালাহ মুচকি হেসে বলল,

অবশ‍্যই! কেন নয়! দেশের জন‍্য কাজ করতে হবে তো!

সুবাহ ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো। হৃদান হেসে বলল,

কাল তোমরা তিনজন হিয়ান রিনিশার সকল কর্মের গোমর ফাঁস করবে। জার্নালিস্ট হয়ে এখন থেকেই তোমাদের পথ শুরু!

তিনজন মাথা নাড়ালো। আদর কাঁদছে, চোখ থেকে আপনাআপনিই পানি পড়ছে। কাল তার বাবার মৃত‍্যবার্ষিকী! আর কালই তার বাবার অসম্পূর্ণ কাজ টা সম্পূর্ণ করবে সে। সে তো ভেবেছিলো এসব গোপনই থাকবে। কিন্তু হৃদান যে তার দায়িত্বটা পালন করতে সাহায‍্য করবে ভাবেইনি। হৃদান আদরের চোখে পানি দেখেই চোখ রাঙালো। আদর মুচকি হাসলো! চোখের পানি মুছে নিতে গিয়েও সবার সামনে হৃদান কে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। কলিজা খুব করে পুড়ছে। বাবাকে খুব করে মনে পড়ছে তার। সেই কবে বাবার আদর পেয়েছিলো ভুলেই গেছে সে। কিছুক্ষণ কেঁদে নিজেই শান্ত হলো। এতক্ষণ হৃদান চোখ মুখ কুচকে সহ‍্য করছিলো। কান্না থামাতেই আদর কে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে চোখ দিয়ে আশ্বস্ত করলো। আদর হাসলো! হৃদান পিয়াস পান্চু কে বলল,

বাবার মেইন গার্ড কে হিমেলের আনা হিয়ানের গাড়িতে তুলে দিবি। গাড়িতে হিয়ান আর রিনিশার বডি থাকবে। তারপর কি করতে হবে বলে দিতে হবে না আশা করি?

পিয়াস পান্চু মাথা নাড়িয়ে বাইরে চলে গেলো। এখন ই সব ব‍্যবস্থা করতে হবে। হৃদান আদর দের কিছুক্ষণ বুঝালো। সবাই চলে গেলে হৃদান আহনাফের সাথে কিছুক্ষণ একান্তে কথা বলে নিলো। কাল দিনের মধ‍্যে সবকিছু শেষ করবে।

ভোর ছয়টা বাজে। সূর্য উঠার নাম নেই। কুয়াশা তে ভরে গেছে প্রকৃতি। গাছের সবুজ পাতা গুলো কুয়াশায় নিস্তেজ হয়ে আছে। রোদের অপেক্ষায় হয়তো প্রহর গুনছে। কিন্ত আজ রোদ উঠবে কিনা কে জানে! এই ভোরে হৃদান রা গায়ে শীত থেকে বাঁচার গরম কাপড় পড়ে গ্রামের সরু রাস্তায় হাটছে। আজকে নাসির চৌধুরী না থাকলেও আহনাফ চৌধুরী আছে। উদ্দেশ‍্য পাশের গ্রাম। হিমেলের মা মিসেস রাহেলা কে খুঁজে বের করা। আবার নয়টাই তারা শহরের উদ্দেশ্যে রওনা হবে। পাশের গ্রামের আসতে আসতে প্রায় সাত টা বেজে গেছে। আহনাফ কে অনুসরণ করে চলছে সবাই। গ্রামের মধ‍্যে সরু রাস্তা দিয়ে হেটে হেটে আহনাফ একটি এক তালা বিল্ডিং ঘরের সামনে দাড়ালো। রং গুলো কেমন ফ‍্যাকাছে হয়ে আছে। গেইটে শব্দ করতেই একজন অর্ধ বয়স্ক মহিলা এসে গেইট খুলে দিলো। আহনাফ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ডেকে উঠলেন,

রাহেলা বুবু!

মিসেস রাহেলা চশমা টা ঠিক ঠাক করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। আহনাফ চৌধুরী বলল,

রাহেলা বুবু আমি আহনাফ। চিনতে পারো নাই? ওই যে স্কুলে তোমার ব‍্যাচের দুই ব‍্যাচ পরে ছিলাম।

মিসেস রাহেলা এবার মনে হয় চিনতে পারলেন। খুশি হয়েছে তার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। ওদের নিয়ে ভেতরে গেলেন। হিমেল এক ধ‍্যানে নিজের মা কে দেখছিলো। কিছু বলার সাহস ই পাচ্ছিলো না। মিসেস রাহেলা সবাই কে বসতে দিলেন। আহনাফ চৌধুরী আর দেরী করতে চাইলেন না। হিমেলের হাত ধরে সামনে এনে বলে উঠলেন,

তোমার ছেলে রাহেলা বুবু। হিমেল!

মিসেস রাহেলা আতকে উঠলেন। ছেলে! আর ছেলে! হিমেল ততক্ষণে মায়ের পায়ের কাছে বসে পড়েছে। মিসেস রাহেলা ছেলেকে বুকে জড়িয়ে অনেকক্ষণ কাঁদলেন। আর কিছুই তাকে জানতে দিলেন না কেউ। বাড়িটা সেভাবে রেখেই উনাকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো সবাই। আসতে চাইছিলেন না। হিমেল জোর করার পর রাজি হয়েছে। চৌধুরী মঞ্জিলে ফিরে এসে সকালের খাবার খেয়ে আবার বেড়িয়ে পড়ে সবাই। আজকের সারাটা দিন দৌড়ঝাঁপের উপর দিয়েই যাবে। গ্রামের কাঁচা রাস্তা পেরিয়ে চলতে থাকে গাড়ি গুলো। আজকের জন‍্য সবাই মনে মনে প্রস্তুত হতে থাকে। একটু ভুল হলে হয়তো ব‍্যাপারটা ঘেটে যেতে পারে! তাহলে সব প্ল‍্যান ই ফ্লপ হবে!

চলবে…?

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। শুকরিয়া!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here