#মন_পাথরে_হঠাৎ_ঝড়
#পর্ব_৬
Tahrim Muntahana
আদর দের বাড়ির ড্রয়িং রুমে বসে আছে আতইয়াব, অর্ণাবি এবং তার মা-বাবা। বিয়ের কথাবার্তা চলছে। অর্ণাবির মুখ থেকে তো হাসি সরছেই না। অর্ণাবির মা বাড়িতে আসার পর থেকেই এদিক ওদিক ঘুরছিলো। এতবড় বাড়ি, দামি ফার্নিচার হাত বুলিয়ে দেখছিলো। তাদের কাছে এসব ছোঁয়া স্বপ্ন ছাড়া কিছু না। সে তো মনে মনে খুব খুশি তার মেয়ের উপর। বড়লোক ছেলে হাত করে নিয়েছি, কপাল তো এখন খুলে যাবে। অর্ণাবির বাবা এক গাল হেসে বলে উঠলো,
‘তাহলে কবে ঠিক করছো বিয়ে?’
‘আপনারা আজকে আসবেন জানিয়ে আসবেন না? বাবা-মা তো বেঁচে নেই। মামা-মামি আছে তারা গ্রামে থাকে। খবর দিয়েছি আসবে কয়েকদিনের মধ্যে তখনই বিয়ের কথা আলোচনা হবে।’
আতইয়াবের কথায় অর্ণাবির কপালে চিন্তার ভাজ পড়লো। আরো কয়েকদিন! সাবধানে থাকতে হবে তাকে। এই তারিম কে আতইয়াবের ধারে কাছেও আসতে দিবে না সে। আদর ঘর থেকে বের হয়নি আজও। আতইয়াবের চিন্তার শেষ নেই। কথা বলতে হবে বোনের সাথে ভেবে উঠে দাড়াবে তার আগেই আদর কে দেখে বসে পড়লো। হাতে ট্রলি ব্যাগ। আতইয়াব বিষ্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে। আদর মুচকি হাসলো। আতইয়াব এগিয়ে গিয়ে বলল,
কোথায় যাচ্ছো তুমি? ব্যাগ কেনো হাতে? কি হয়েছে তোমার? ভাইয়ার উপর এত রাগ?
নাহ, তুমি তো কয়েকদিন পর বিয়ে করছো। তখন তোমার বউ মানে মিস অর্ণাবিও এখানে থাকবে; আমার তো মনে হয়না আমার জায়গা আর এই বাড়িতে হবে। না হয় দোষ দিয়ে বাড়ি থেকে তাড়াবে, না হয় হুট করে বিয়ে দিয়ে বাড়ি থেকে বিদায় করবে ; তার চেয়ে বরং আমি এখনি চলে যাই। সম্মান নিয়ে যেতে পারবো আর তোমাদেরও স্পেচ হবে।
আদরের কথায় আতইয়াব হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আদর কি বলছে এসব। বাড়ি থেকে তাড়াবে মানে? অর্ণাবি নিজেও চমকে গেছে। কালকেই এই নিয়ে তার মায়ের সাথে কথা হয়েছে আর আজ আদর সব বলে দিচ্ছে! কিভাবে? বিয়েটা শেষমেষ হবে তো? চিন্তায় পড়ে গেলো সে! আতইয়াব আদরের আরেকটু কাছে গিয়ে বলল,
কি বলছো এসব আদরপাখি? তুমি নিজেও জানো তুমি আমার কাছে কি? তোমার নিজের বাড়ি থেকে তাড়ানোর সাহস কার আছে?
আদরের মুখে তাচ্ছিল্য হাসি ফুটে উঠলো। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
বিয়ের আগেই প্রেমিকার কথা শুনে বোনকে ডাউট করতে পারলে ; বিয়ের পর বাড়ি থেকেও বের করতে পারবে। আর এমন ই হয়ে আসছে। প্রায় সব পরিবারেই এমন হয়। বিয়ে পর ছেলে, ভাইয়ের রূপ পাল্টে যায়। তখন হয়তো বেশী কষ্ট হবে। তাই এখনি চলে যাচ্ছি।
আদর যাওয়া ধরতেই আতইয়াব আদরের হাত ধরে বসলো। আদর তাকালো না। তার যে কষ্ট হচ্ছে। আতইয়াবের চোখ ছলছল করছে। অর্ণাবি এবার আদরের কাছে গিয়ে বলল,
আদর বেবি এমন করছো কেন? তোমাকে আমি কত ভালোবাসি জানো?
হ্যাঁ এতই ভালোবাসেন যে হসপিটালের ক্যান্টিনে বসে অহেতুক অপবাদ দিয়ে বসলেন তাইনা?
অর্ণাবি চমকে পিছিয়ে গেলো। আতইয়াবের কপালে ভাজ পড়লো এবার। অর্ণাবির মুখ দেখেই আতইয়াব বুঝে নিলো মিথ্যে সে বলেছে তার বোন বা বউ না! ধপ করে রাগ উঠে গেলো। কিছু বলবে তার আগেই আদর বললো,
নাহ তোমার প্রেমিকা সম্পূর্ণ মিথ্যে না। সত্য কথা ও বলেছে। হ্যা তারিমের বিয়ে আমি ভেঙেছি। তারিমের বিয়ে টা হুট করে ঠিক হয়ে যায়। আমি নিজেই অনেক খুশি ছিলাম। কিন্তু যখন জানতে পারলাম ফালাহ ভাইয়া সুবাহ কে ভালোবাসে, আর সুবাহ নিজেও ফালাহ ভাইয়া কে ভালোবাসে তখন ভাবলাম বিয়েটা ভাঙতে হবে। ফালাহ ভাইয়ার আব্বুকে বলে বিয়েটাও ভেঙে দিই। একদিন ভুলে তারিমের ডায়েরী আমার হাতে চলে আসে। আর সেদিন আমি অপ্রকাশিত সত্য জানতে পারি। ৫ টা বছর ধরে মেয়েটা তোমাকে ভালোবেসে আসছে। ওর মায়ের জন্য বিয়েতে রাজি হয়েছিলো। ওর মনের কথা বুঝতে পারিনি আমি। না ও বুঝতে দিয়েছে। ভেবেছিলো সত্যটা জানলে হয়তো আমার সাথে তাকে মিশতে দিবে না। তাই বলার সাহস হয়নি তোমাকে। প্লেন পাল্টাই। আমি জানতাম তোমার সাথে মিস অর্ণাবির রিলেশন থাকলেও মিস অর্ণাবি আরেকটা রিলেশনে আছে। ছেলের হাত ধরে হুডি তোলা রিকশায় উঠে বসে; তোমাকে আর ভেঙে বলতে হবে না আশা করি! আর মিস অর্ণাবি তোমাকে বিয়ে করছে জেদ থেকে। সম্পত্তির জন্যও না। আরেকটা প্রেমিক ও বড়লোক! আমি বলেছিলাম তোমার জীবন থেকে তাকে সরাবোই সেই জেদ থেকেই এমন মিথ্যে বলছে। কারণ সে আমাকেই তোমার জীবন থেকে সরাতে চেয়েছিলো। তারিম এসবের কিছুই জানে না। বিয়ে আমি ভেঙেছি তাও জানে না। ও তো এখনও ফালাহ ভাইয়া আর সুবাহ কে দোষ দিয়ে যায়। ফালাহ ভাইয়া আমার কথা মতোই কাজ করেছে। সব কিছুর পেছনে শুধু ই আমি। তাই তোমার জীবন সুন্দর করতে চলে যাচ্ছি। নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা!
বলেই আর একটুও দাড়ালো না সে। আতইয়াব ধপ করে সোফায় বসে পড়ে। মাথা কাজ করছে না তার। আদর কে যে আটকাবে সেটিও ভুলে গেছে মনে হয়। অর্ণাবি এবার ভয়ে কাঁপছে। সে আতইয়াব কে ভালো করেই চেনে। কিছু একটা করতে হবে। ভেবে এগিয়ে গিয়ে বলল,
আতইয়াব বিশ্বাস করো আমার আর কারো সাথেই রিলেশন নেই। ও আমার বন্ধু ছিলো। অনেক রোদ ছিলো সেদিন তাই হুডি তুলে রেখেছিলাম। আদর সব মিথ্যে বলছে। তারিমের দোষ নিজের কাঁধে নিচ্ছে। আমি ভালোবাসি তোমায়!
আতইয়াবের রাগে চোখ লাল হয়ে গেছে। ঠাস করে চড় বসালো অর্ণাবির গালে। হালকা ফর্সা গালটা লাল হয়ে গেলো। ঠোঁট কামড়ে কান্না করে দিলো সে। বেশ ব্যাথা পেয়েছে। দরজার পেছন থেকে চড় দেওয়াটা দেখে আদর একপ্রকার লাফিয়ে উঠলো খুশিতে। আর থাকলে ধরা পড়ে যাবে বলে হাটা ধরলো। ঠিক হাটছে না একহাতে ট্রলি ধরে নাচতে নাচতে যাচ্ছে। তার যে মহা আনন্দ হচ্ছে। অর্ণাবি নামক আপদ টা বিদায় হবে এখন। বাড়ির গেট পেরিয়ে ট্রলি টা রেখে কিছুক্ষণ নেচে নিলো আদর! আগে চোখ বুলিয়ে দেখে নিয়েছে কেউ আছে কিনা! নিজেকেই বাহুবা দিতে ইচ্ছে করছে। সবাই বলে সে বাচ্চা। অথচ এই বাচ্চা কত বড় বড় কাজ করে কেউ যদি দেখতো হুহ! ভেবেই একগাল হাসলো। কোথায় যাবে সে এখন! পরে মনে হলো পরশের কথা। পরশের কাছেই থাকবে দুদিন। তারপর ভাবলো না থাক আজ সুবাহ’র বাড়ি যাওয়া যাক। অনেকদিন দেখা হয়না। আরেকটু এগিয়ে গিয়ে রিকশার জন্য দাড়ালো। নাহ রিকশা আসছে না! তখনই কানে এলো কারোর চেঁচামেচি! ভালো করেই লক্ষ্য করতেই চোখে পড়লো অর্ণাবিকে অর্ণাবির মা যাতা বলে বকা দিচ্ছে। আদরের খুব হাসি পেলো। সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় হো হো করে হেসে দিলো আদর। প্রথমে ওরা আদর কে না দেখতে পেলেও হাসির শব্দে দেখতে পেল। রাগ উঠে গেলো দুই মা-মেয়ের। তেড়ে আসতে নিলেই আদর বলে উঠলো,
স্টপ! তোরা কি ভাবছিস আদর দুর্বল। এমন মার মারবো না তিনমাস হসপিটাল পড়ে থাকবি। চড় টা কেমন ছিলো? মজা না? আমার তো দারুণ লাগছে! বিয়ে করবি না? যা বিয়ে কর! হিহিহিহি!
এবার আর অর্ণাবি সহ্য হলো না। তেড়ে গিয়ে থাপ্পড় দিতে হাত উঠাতেই উল্টো আদর এক থাপ্পড় বসালো। ছিটকে পড়লো রাস্থায়। রাগ হচ্ছে আদরের। সাহস কত বড় এই মেয়ের তাকে চড় দিতে আসে। তার গায়ে হাত উঠানোর স্পর্ধা হয় কি করে!
এতকিছুর মাঝেও অর্ণাবির বাবা চুপ করে দাড়িয়ে আছে। আদরের চোখ পড়লো তার উপর। মাথা নিচু করে একপাশে দাড়িয়ে সে। আদর এগিয়ে গেলো। সে জানে এসবে এই মানুষটার হাত নেই। মুচকি হেসে বলল,
আংকেল আ’ম সরি। আমি জানি তুমি এসব কিছুই জানো না। তাই ছোট হওয়ার ও কিছু নেই। তুমি মাঝে মাঝে বেড়াতে আসবে কিন্তু।
অর্ণাবির বাবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। এতক্ষণ স্ত্রী-মেয়ের কাজকর্মে সে খুব লজ্জিত ছিলো। এসব কিছু সে জানলে মুটেও আসতো না। আদরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে তিনি হাটতে লাগলেন। ততক্ষণে অর্ণাবির মা অর্ণাবিকে রাস্তা থেকে তুলে দাড় করিয়েছে। এক গালেই দুই চড়! বেচারির মাথা ভনভন করছে। আদর ওদের দিকে থাকিয়ে মুখ ভ্যাঙচি দিয়ে হাটা শুরু করলো। আরেকটু এগিয়ে গিয়ে অটো নিবে। রিকশা আসবে বলে মনে হয় না।
হৃদান তার ল্যাপটপের সামনে ঝিম মেরে বসে আছে। মাথায় অনেক কিছুই ঘুরছে তার। ১৫ দিন ধরে আদর কে দেখতে না পেয়ে কাল রাতে তার একজন গার্ডকে পাঠিয়েছিলো আদরদের বাড়ির ড্রয়িং রুমে এবং বাইরের দেয়ালে সিসি ক্যামেরা লাগানোর জন্য। অনেক ঝুঁকি নিয়ে গার্ড টি তার কাজ শেষ করে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই ল্যাপটপ অন করে বসে আছে হৃদান। না ড্রয়িং কেউ আসে, না কারো কথা শুনা যায়। সে নিজেই নিজেকে যেন চিনতে পারছে না। কখনো ভাবতে পারেনি হৃদান চৌধুরী কারো জন্য একটু সময় অপেক্ষা করবে। সেখানে ঘন্টার পর ঘন্টা সে একটা মেয়ের জন্য অপেক্ষা করছে। এই অপেক্ষার মাঝেও ভালোলাগা কাজ করছে। মনের মধ্যে মিশ্র এক অনুভূতি হচ্ছে। একসময় মনে হচ্ছে আসবে না ; আবার মনে হচ্ছে সে আসবে। অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ড্রয়িং উপস্থিত হলো আতইয়াবরা। তারপরের সব ঘটনার সাক্ষী সে। তার মাথা ঝিম হয়ে আছে এটা ভেবেই যে সে আদর কে কি ভেবেছিলো আর এই মেয়ের রূপের তো শেষ হয়। সবচেয়ে অবাক করেছে নাচতে নাচতে যাওয়াটা। হৃদান চৌধুরীকেও এই মেয়ে নাচিয়ে ছেড়েছে। হটাৎ করেই হৃদান শব্দ করে হেসে দিলো। আদরের পাগলামির কথা যত ভাবছে হাসি যেন তত বাড়ছে তার।
হৃদানের কাছেই আসছিলো পান্চু। আজকে একটা মিটিং আছে সেটি জানাতেই। একটু আগেই পিয়াস তাকে বার বার বলে দিয়েছে হৃদান কে বলার জন্য। খুব ইমপরটেন্ট মিটিং। কিন্তু ঘরের ভেতর থেকে জোরে হাসির শব্দ শুনেই চমকে উঠে পান্চু। ভয়ে তার হাত পা কাঁপছে তার। ভুত কে সে খুব ভয় পায়। কোনো একজন বলেছিলো ভুতেরা নাকি টাকলাদের বেশী পছন্দ করে। এরপর থেকে সে রাতে একা কোথাও যায় না। না জানি তার আধা টাক মাথাটা ফাটিয়ে দেয়। তার কাছে হাসিটা ভুতের ই মনে হচ্ছে কারণ এই ঘরে যে বসবাস করে তার মুখে হাসি অমাবস্যা আর পূর্ণিমা একসাথে হওয়ার মতো। আর সেখানেসেত জোরে হাসি, যেন থামতেই চায়ছে না! পান্চু আর নিতে পারলো না। ভয়ে অজ্ঞান হয়ে ঠাস করে নিচে পড়ে গেলো। টাক মাথাটা ফ্লোরে পড়ার সাথেই যেন ঝন করে উঠলো। পান্চুর টাক মাথা যে গেছে এতে সন্দেহ নেই!
আদর কোথায় যাচ্ছে জানা দরকার। একা একা যদি কোনো বিপদ হয়। যে হৃদান চৌধুরী নিজেই সবার জন্য বিপদ ডেকে নিয়ে আসে সে এখন একটা মেয়ের বিপদের কথা চিন্তা করছে! ভালোবাসা কি না পারে! এসব ভাবতে ভাবতেই তারিমের কাছে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হলো। হাটার সময় কিছু একটার সাথে হোচট খেয়ে পড়ে যেতে নিয়েও ব্যালেন্স ঠিক রেখে দাড়ালো। রাগ হলো তার। পেছনে ঘুরে জিনিস টা দেখতেই চোখ কপালে উঠে গেলো। নিজের ঘরের সামনে পান্চুকে পড়ে থাকতে দেখে তার আর বুঝার বাকি নেই কি হয়েছিলো। তার হাসির শব্দ শুনেই যে এই আধা টাকু পান্চু কাকু অজ্ঞান হয়ে গেছে এটা শিউর। মাথা চুলকে এগিয়ে গেলো সে। একজন গার্ড কে পান্চুর কথা বলে তারিমের ঘরে নক করলো।
ঘরে বসে আতইয়াবের কথায় ভাবছিলো তারিম। ভালো লাগছে না তার। আদর কেও খুব মিস করছে সে। জীবন টা কেমন এলোমেলো হয়ে গেলো। আগেও যে খুব একটা গোছালো ছিলো তেমন না। কিন্তু এখনকার মতো ছিলো না। দরজায় নক পড়তেই ভাবনা থেকে বের হয়ে আসলো। দরজা খুলতেই হৃদান কে দেখে তারিমের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। বিনিময়ে হৃদান ও মুচকি হাসলো। ঘরে ডুকে সোফায় বসে বলে উঠলো,
কলড আদর!
তারিম অবাক হলো না। সে এতক্ষণে ঢের বুঝে গেছে হৃদানের মনের অবস্থা। ফোন নিয়ে কল দিলো আদরের নম্বরে। ইতস্তত হচ্ছে তার। রাস্তার ধারে বসে ছিলো আদর। আজ যেন গাড়িরা সব হরতাল ডেকেছে। একটা গাড়িও নেই, যা যাচ্ছে আসছে সব ভর্তি। হঠাৎ ফোন আসার শব্দে হালকা কেঁপে উঠলো। সে ভেবেছে আতইয়াব কল করেছে যখন দেখলো তারিম তখন একটু মন খারাপ হলো। এতদিন পর খুঁজ নেওয়ার কথা মনে হয়েছে। একবার ভাবলো রিসিব করবে না আবার কি ভেবে যেন রিসিব করে কানে ধরলো। তারিম বলে উঠলো,
আদু কেমন আছিস?
কে আপনি? কাকে ফোন দিয়েছেন? হো ইস আদু?
তারিম হাসলো। সে জানে আদর অভিমান করেছে। হৃদান পাশে বসে বলল,
আ’ম সরি সোনা। তোকে বলে আসিনি বলে ফোন দেওয়ার সাহস হয়নি। প্লিজ ফরগিভ মি!
আদরের এবার খুব কান্না পেলো। তার তো ভালোবাসার মানুষ খুব কম। একটু দূরে গেলেই কষ্ট হয়।ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো সে। চমকে উঠলো আদর। তার কষ্ট হচ্ছে! বুকের ভেতর কেমন চিনচিন ব্যাথা করছে। ভালোবাসা বুঝি এমন। হৃদান তারিম কি ইশারা করতেই তারিম বললো,
আদুপাখি কাঁদিস না প্লিজ। তুই কোথায় আছিস? এত শব্দ কিসের? বল আমায়!
আমি মেইন রোডে বসে আছি গাড়ির জন্য।
তারিম কি বলে না শুনেই হৃদান দৌড়ে বের হয়ে গেলো ঘর থেকে। পড়নে তার কালো টিশার্ট আর ট্রাউজার। ছুট লাগালো গাড়ির দিকে। যেকরেই হোক তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে হবে তাকে। গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিলো। কন্দনরত কথাগুলো তার বুকটাই খুব পীড়া দিচ্ছে। হৃদানের বাড়ি থেকে আদরের বাড়ি খুব বেশী দূরে না। বিশ মিনিটের মাথায় মেইররোডে এসে উপস্থিত হলো হৃদান। চায়ের দোকানের পাশে আদরকে দেখে এগিয়ে গেলো সে। তখনো তারিমের সাথেই কথা বলছিলো আদর। হঠাৎ সামনে ছায়ামূর্তি দেখে ফট করে মাথা তুললেই আদরের মুখ হা হয়ে গেলো। পরক্ষণে ভয় চেপে বসলো মনে। সেদিনের চুল টানার প্রতিশোধ নিতে এসেছে কি। ভেবেই মুখটা কাঁদোকাঁদো হয়ে গেলো। হৃদান গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,
গাড়িতে উঠো!
আদর এবার শিউর তাকে নিয়ে মেরে দিবে। ফ্যাচ ফ্যাচ করে কেঁদে দিলো সে। হৃদান ভড়কে গেলো। আদরের পাশে বসবে তার আগেই আশে পাশে চোখ বুলাতেই বিরক্ত হলো সে। সবাই উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে। হৃদান চৌধুরীকে এভাবে দেখে সবাই অবাক হয়েছে। হৃদান কিছু না বলে একহাত দিয়ে আদরের হাত ধরে আরেক হাতে ট্রলি নিয়ে হাটতে লাগলো গাড়ির দিকে। আদর অবাক হয়ে শুধু হৃদানের দিকেই তাকিয়ে আছে। তার মনে হচ্ছে সে ভিন্ন জগতে বাস করছে।
চলবে…?