#মন_পিঞ্জর,পর্ব_৪৩
#লেখিকা_আরোহী_নুর
অনেকক্ষণ আদৃতের চেকআপ করার পর কেবিন থেকে বেড়িয়ে এলেন আমির চৌধুরী আর নোমান,সবার চেহারায় প্রশ্নের সাথে চিন্তার ছাঁপ।আঁখি এবার অস্থির হয়ে এগিয়ে গিয়ে নোমানকে জিজ্ঞাসা করলো।
নোমান স্যার ড.আদৃতের কি হয়েছে?উনাকে আপনারা কোথায় পেলেন?
নোমান মুখে বিষন্নতার ছাঁপ এনে বললো।
ভাইয়াকে একটা নদীপাড়ে পাওয়া গেছে,শরীর বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে ছিলো,হয়তো কাল রাতের পুরো ঝড় উনার উপর দিয়ে গেছে,তারপরও উনি সেখান থেকে সড়েন নি,সারাদিন হয়তো সেখানেই ছিলেন কিছুই না খেয়ে,হঠাৎ কিছু স্থানীয় লোক উনাকে সেখানে অজ্ঞান অবস্থায় পরে থাকতে দেখেন,উনাদের ভাইয়াকে চিনতে কোনো সমস্যা হয় নি,উনারা আমাদের পরিচিত থাকায় আমাদের ফোন করেন আর ভাইয়াকে আমাদের হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
কি?উনার এখন কি অবস্থা? হয়রান হয়ে বললো আঁখি।
দীর্ঘক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজেছেন,এছাড়াও পুরো এক দিন না খাওয়ার দূর্বলতার কারনেই শুধু ভাইয়া জ্ঞান হারান নি,অতিরিক্ত চিন্তার কারনে ভাইয়ার হার্ট এ্যাটাক হওয়ারও সম্ভাবনা ছিলো,লোকগুলো সঠিক সময়ে ভাইয়াকে না আনলে আজ না জানি কি হয়ে যেতে,তবে ভাইয়া এখন আউট অফ ডেঞ্জার,জ্ঞান ফিরতে সময় লাগবে। উনার রেস্টের প্রয়োজন।উনাকে বর্তমানে কোনো প্রকার চিন্তা করতে দেওয়া ঠিক হবে না।
আমি উনাকে দেখে আসি?
বর্তমানে কারো ভাইয়ার সাথে দেখা করা ঠিক হবে না,তবে হ্যাঁ আমি যতটুকু জানি ভাইয়ার তোমার সাথে কিছু সমস্যা হয়েছে তাই তোমার উনার পাশে থাকাটাই ভালো হবে,তুমি যেতে পারো।
থ্যাংক ইউ স্যার।
আঁখি আদৃতের মাথার পাশে বসে আছে,বার বার ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে আঁখির,ভিতরে অনুশোচনা কাজ করা বন্ধ হয় নি এখনও,ধিমি স্বরে এবার বললো আঁখি।
আমায় ক্ষমা করে দিন,জানেন না আজকে আমি কতোটা ভয় পেয়ে গেছিলাম,আজ আপনার কিছু হয়ে গেলে কখনো নিজেকে ক্ষমা করতে পারতাম না,আমি আর কখনো আপনাকে ছেঁড়ে যাওয়ার কথা বলবো না,নিজের ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখবো আপনাকে জীবনভর,একবার সুস্থ হয়ে উঠুন আমি আপনার সব অভিমান দূর করে দিবো।
তখনি দরজা ঠেলে কেউ ভিতরে আসার চেষ্টা করলে তা স্পষ্ট আন্দাজ করতে পারে আঁখি,চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে আরোহী,আরোহী ভিতরে আসতে চাইলে আঁখি ওর পানে উঠে যায় তারপর ওকে হাত ধরে কেবিনের বাইরে নিয়ে যায়।
কি করছো আঁখি?এমন করছো কেনো আমি ড.আদৃতের সাথে দেখা করবো।
দেখো আরোহী এই মুহুর্তে ড.আদৃতের সামনে তোমার যাওয়া ঠিক হবে না, তুমি শুনেছো নোমান স্যার কি বলেছেন,ড.আদৃত একটুর জন্য হার্ট এ্যাটাক করে বসতেন,আর তার কারন শুধু আমরা দুজনি হতাম আরোহী,কাল তোমার কথা বুঝিয়ে বলতে গিয়ে আজ আমার জন্যই উনার এ হাল হয়ে গেছে,জ্ঞান ফিরে তোমাকে দেখলে না জানি কি প্রতিক্রিয়া করবেন,তাই এবার তোমার উনার সামনে না যাওয়াই ভালো।
তুমি আমাকে ওর থেকে দূর করছো কেনো আঁখি?
তুমি অনেক আগেই উনার থেকে দূর হয়ে গেছো আর এখন যদি উনার পাশে আসতে চাও তবে উনার ঢাল হয়ে আমি সামনে দাঁড়াবো,কারন তোমার উনার পাশে আসা মানে উনার ক্ষতি হওয়া।
আরোহী আরও কিছু বলবে তখনি সেখানে আগমন ঘটে ফায়সাল খানে,আঁখি আরোহীকে একসাথে দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেলেন উনি,অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন আরোহীকে উদ্দেশ্য করে।
তুমি কে?
আমি আরোহী,ড.আদৃতের প্রাক্তন স্ত্রী।
আরোহীকে দেখে ফায়সাল খানের চোখ ছলছল করতে শুরু করলো,মনে খুব বড় কিছু আবারও ফিরে পাওয়ার লোভ ধরা দিলো,তখনি পিছন থেকে তাজবীর বলে উঠলো।
তোমাকে বলেছিলাম না বাবা আরোহীর কথা এই সেই আরোহী,ওর কথা আমি আগেও শুনেছিলাম যে আমাদের ছুটকির মতো হুবহু দেখতে কিন্তু কালকে যখন সামনাসামনি ওকে দেখলাম তখন আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম,এ কি করে হতে পারে যে ও একদম আমাদের ছুটকির মতোই কোনো দিক থেকে অমিল নেই,এমনকি কন্ঠস্বরও একই,আর আশ্চর্যের কথা জানো কি বাবা আঁখির যেদিন জন্ম হয়েছিলো সেদিনই ওকেও পাওয়া গেছিলো।
কথাটা শুনে ফায়সাল খানের মনে সন্দেহের পরিমানটা বেড়ে গেলো শতগুন সাথে অস্থিরতাও,ছুঁটে গেলেন উনি আরোহীর কাছে গিয়েই ওর ডান হাতটা হাতে নিয়ে ওদিকে তাকাতেই উনার চোখ টপকে জল বেড়িয়ে আসতে শুরু করলো,আমার মেয়ে বলে আঁকড়ে ধরলেন আরোহীকে,সেখানে তখন সবাই উপস্থিত ছিলেন উনার বলা কথা সবার অবাকত্বের সীমা ছাড়িয়ে গেলো।আরোহী কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।
আঁখি তো হতভম্ব হয়ে প্রশ্ন করেই বসলো।
তোমার মেয়ে মানে কি বলতে চাইছো বাবা?
ও তোর বোন,এই দেখ ওর হাতের জন্ম দাগ।
ফায়সাল খানের কথাগুলো শুনে সবাই ধাক্কার পর ধাক্কা খাচ্ছেন তবে কেউ কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না,সবার মনের অবস্থা বুঝতে সক্ষম হলে এবার ফায়সাল খান সবাইকে সবকিছু পরিষ্কার করে বলতে শুরু করলেন।
সেদিন আমার দুটি মেয়ে হয়েছিলো,তাজবীর আর বাবা মা তখন বাড়িতে ছিলেন,হাসপাতালে ফাতেমাকে নিয়ে আমি আর আমার বোন রিতা ছিলো, ওদের জন্ম হলে ডাক্তার এসে আমাদের জানান আমার দুটি মেয়ে হয়েছে তবে দুজনের জন্মতে কিছুটা কমপ্লিকেশন হওয়ায় ওদের বর্তমানে আমাদের কাছে দেওয়া যাবে না তবে আমরা একটু কাছ থেকে দুজনকে দেখতে পারবো,ডাক্তার আমাকে স্পষ্ট দেখিয়ে বললেন যে এদের দুজনের ক্ষেত্রে সবকিছুই একই হবে তবে একজনের ডান হাতের অনেকটা অংশে কালো দাঁগ আছে যা অপরজনের হাতে নেই যাতে দুজনকে সহজে সনাক্ত করা যেতে পারে,ওদের একটু কাছ থেকে দেখে মনকে খনিক শান্ত করে এসে আমরা দুজন বাইরে অপেক্ষা করছিলাম,অনেক্ষন পর ফাতেমাকে কেবিনে শিফ্ট করা হয়।ডাক্তার বললের এক ঘন্টার মধ্যে উনারা আমাদের বাচ্চাদের আমাদের কাছে এনে দিবেন,কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে একজন ডাক্তার এসে আমাকে ডেকে নিলেন,তারপর বললেন যে একটি বাচ্চা চুরি হয়ে গেছে,উনারা জানেন না তা কে করেছে তবে উনারা তদন্ত শুরু করিয়ে দিয়েছেন,তখন আমি হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা সবার উপর ক্ষেপে উঠে তোলপাড় শুরু করি কিন্তু আমার মেয়েটাকে আর খোঁজে পাই না,ফাতেমার অবস্থা তখন তেমন ভালো ছিলো না তাই ওকে আর তখন আমি দুঃশ্চিন্তায় ফেলতে চাই নি,তাছাড়া মা-বাবাও জিনিসটা সহজে মেনে নিতে পারতেন না ,আর এজন্যই আমি আর রিতা মিলে সবাইকে মিথ্যে বলি যে আমাদের দুটি বাচ্চা হলেও ডাক্তার একজনকে বাঁচাতে পেরেছেন,তবে আমি খোঁজ নেওয়া বন্ধ করি নি,কিন্তু অনেক খোঁজ নিয়েও ওকে খোঁজে পাওয়া যায় না, পরে জানতে পারি সেখানকার এক নার্স কিছু টাকার লোভে এক দম্পতির কাছে আমার মেয়েটিকে বিক্রি করতে চেয়েছিলো ,দুজন বাচ্চা থাকায় একজনকে নিতে তাই ধিদ্বা করে নি সে, হাসপাতাল থেকে আমার মেয়েকে কোথাও নিয়ে যায় লুকিয়ে কিন্তু সেখানে সেই দম্পতি আসার আগেই কিছু স্থানীয় লোকের নজর নার্সের উপর গেলে তাদের ওকে সন্দেহ হয়, তারপর লোকগুলো ওকে জবাবদিহি করতে এগিয়ে গেলে উনাদের দেখে নার্স ছুঁটতে শুরু করে আর আমার মেয়েটিকে কোথাও ফেলে দেয় যা লোকগুলোর চোখের অগোচরে যায়,নার্সটিকে পরে পুলিশ ধরতে পারলেও ও মুখ খোলে না আমার মেয়েকে ও কোথায় ফেলেছে, আর যখন মুখ খোলে তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিলো সেখানে গিয়ে তখন আর আমার মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যায় নি,সেদিন নিজেকে কতোটা অসহায় মনে হয়েছিলো তা শুধু আমি জানি,আশেপাশে খোঁজ নিয়েও ওকে পাওয়া যায় নি ।কিন্তু কখনো ভাবি নি এতো বছর পর আমি আমার সেই হারানো মেয়েটাকে আবার ফিরে পেয়ে যাবো তাও এভাবে।
কথাগুলো বলে ফায়সাল খান কান্না করতে লাগলেন,এবার দিদু এগিয়ে এসে বললেন।
তাহলে আরোহী তোমার মেয়ে আমরা তো ওকে আমাদের বাড়ির পাশেরই একটা ডাস্টবিনে কুড়িয়ে পেয়েছিলাম,তবে ওকে দেখে আমাদের অনেক মায়া হয় তাই আর খবর বাইরে যেতে দেই নি,ওকে আমরা নিজেদের কাছে রাখতে চেয়েছিলাম।আমাদের ক্ষমা করে দিয়ো বাবা আমাদের জন্য তুমি তোমার মেয়ের কাছ থেকে এতো বছর দূরে থেকেছো।
কথাগুলো শুনে আরোহীর চোখ দিয়ে জল গড়াতে শুরু হলো,এতোবছর পর নিজের রক্তের সম্পর্কে আবদ্ধ মানুষগুলোকে এভাবে খোঁজে পাবে ভাবে নি কখনো,এবার নিজেই ব্যাকুল হয়ে ঝাপটে ধরলো ফায়সাল খানকে বাবা বলে,তাজবীর আঁখি তো কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না,তবে দুজনেরই চোখে জল,বাবা মেয়ে অনেক্ষন কাঁদলেন তারপর আরোহী আসলো আঁখির কাছে,ওর হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো।
বোন আমার ক্ষমা করে দে আমায়,এতোদিন যারা কোনো সম্পর্ক ছাড়াই আমাকে নিজেদের অসীম ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছিলো তাদের সাথে স্বার্থপরতা করলাম,আর আজ না জেনে নিজের রক্তের সম্পর্কের সাথেও স্বার্থপরতা করতে চলেছিলাম,আমায় ক্ষমা করে দিস বোন আমার,এতোদিন অনেক স্বার্থপরতা করেছি আর না,আদৃত যখন তোকে ভালোবাসে তবে তাই ভালো,সুখে থাকিস ওকে নিয়ে।পারলে এই স্বার্থপর বোনটাকে ক্ষমা করিস।
আঁখি আর অপেক্ষা করলো না চট করে জড়িয়ে ধরলো আরোহীকে,দুজনই একে ওপরকে ধরে নিজেদের অশান্ত মনকে শান্ত করলো,এতোবছর পর রক্তের সম্পর্কের ছোঁয়ায় এসে আরোহীর মনে বিশ্ব জয়ের খুশি চলে এসেছে।
এবার সেখানে তাজবীর এলো,অতঃপর কন্ঠে অল্প অভিমান ফু্ঁটিয়ে বললো সে।
হুম আমি তোমাদের জমজ হলাম না বলে কি আমাকে জড়িয়ে ধরা যাবে না।
আঁখি আরোহী দুজনই হাসলো,এতে তাজবীরও হেসে দিলো,আঁখি আরোহী ভাইয়া বলে তাজবীরকে জড়িয়ে ধরলো একত্রে।
___________________
প্রায় ৫ ঘন্টা পর আদৃতের জ্ঞান ফিরেছে, সবাই ওর সাথে দেখা করে গেছেন তবে আঁখি এখনও আসে নি,চোখগুলো ওর আঁখিকেই খুঁজছে তবে অভিমান থেকে ওর কথা কাউকে জিজ্ঞেস করে নি,মনের কোনে এই আশ্বাস আছেই যে আঁখি ওর কাছে আসবেই।ওর ভাবনা মিথ্যে হতে দিলো না আঁখি,হাতে একটা খাবারের প্লেট নিয়ে কেবিনে ঢুকলো ও,তবে আঁখিকে দেখেও না দেখার ভান করলো আদৃত, মনে থাকা অজস্র অভিমানের বশে মুখ ওপর দিকে ফিরিয়ে নিলো,আঁখি এতে ঠোঁট বাকিয়ে মৃদ্যু হাসলো, খাবারের প্লেটটা পাশে কিছু একটার উপর রেখে আদৃতের কাছে বসলো,নরম স্বরে রসিকতার ভাব এনে আদৃতকে বললো।
হুম এতো অভিমান একটা কাকতাড়ুয়াকে শোভা দেয় না।
আমি কাকতাড়ুয়া হই বা অন্য কিছু এতে আপনার কি?আপনি তো আমাকে ছেঁড়ে চলে যেতে চান,তবে এখন এখানে আসলেন কেনো?
কারন আপনার মন আমাকে খুঁজছিলো তাই।
মোটেও আমার মন আপনাকে খুঁজছিলো না।
হয়েছে আর মিথ্যে বলার ব্যার্থ চেষ্টা করতে হবে না আপনাকে,মিথ্যের ম বলার আগেই চোখ ফরফর করতে শুরু হয় আপনার বুঝলেন মি.দেবদাস।
কি আমাকে আপনি দেবদাস বললেন,আমি মোটেও দেবদাস না।
আঁখির দিকে তাকিয়ে চোখ মুখ কুঁচকে কথাটা বললো আদৃত, আঁখি এবার অল্প হেসে বললো।
না না আপনি দেবদাস হবেন কেনো আপনার কাছে তো দেবদাসও হার মানবে,হা হা হা,কি হাল করেছেন নিজের দেখেছেন একবার,আরে আমার কথা ভালো লাগে নি তবে আমার সাথে লড়াই করতেন,আমাকে বুঝাতে পারতেন,নিজের মনের ভাব ব্যক্ত করতে পারতেন তা না করে আপনি অভিমান করে চলে গেলেন,দেবদাসের মতো ঝড় বৃষ্টির মধ্যে বসে থেকে নিজেকে অসুস্থ করলেন,জানেন আপনি হার্ট এ্যাটাক করতে করতে বেঁচে গেছেন,আপনার কিছু হয়ে গেলে কি হতো আমার।আমি কি নিয়ে বেঁচে থাকতাম বলেন।
শেষের কথাগুলো অল্প অভিমানী স্বরে বললো আঁখি যা আদৃতের মনকে একফালি সুখের ছোঁয়ায় নিয়ে গেলো ,চোখে প্রাপ্তির আশ টাঙিয়ে প্রশ্ন করে বসলো আঁখিকে।
কেনো আপনার বেঁচে থাকতে কি আমাকে বড্ড প্রয়োজন?
হুম বড্ড প্রয়োজন আপনাকে,জীবনের প্রতিটা মুহুর্তে আমার আপনাকেই চাই।
হুম,তবে তার কারন জানতে পারি?
কারন একটাই, আমিও যে আপনাকে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি ড.আদৃত, আপনাকে নিয়ে যে নতুন একটা জীবনের সপ্ন দেখতে শুরু করেছি।
কথাটা আদৃতের মনে ভালোলাগার আলাদা এক শিহরন তৈরি করে গেলো নিমিষেই ,না জানি কতোটা দিন ধরে এ কথাটা শুনার অপেক্ষায় ছিলো আদৃতের অস্থির মন পিঞ্জরখানা। প্রশান্তিময় ভঙ্গিতে কন্ঠে খনিক প্রেমময় নেশাক্ত ভাব টেনে বললো আদৃত।
সত্যি বলছেন তো আপনি?
এবার কি মিডিয়াতে গিয়ে এনাউন্স করতে হবে না কি?স্বাদে কি আর কাকতাড়ুয়া বলি,এক কথা বার বার বলতে হবে উনাকে,হুহ।চলেন এবার হা করেন,অনেক কষ্ট করে নিজের হাতে আপনার পছন্দের খাবার বানিয়ে এনেছি আমার শোকে কাতর হয়ে তো আবার নাওয়া খাওয়া ছেঁড়ে দিয়েছিলেন।
আদৃতের কথায় খনিক লজ্জা পেলে আর ওর দিকে না তাকিয়ে পাশ থেকে খাবার প্লেট হাতে নিয়ে কথাগুলো ঝটফট বলে আদৃতের সামনে খাবারের লোকমা তুলে ধরলো,তবে আদৃত ওর দিকে তাকিয়ে ঠিকই ওর চোখে মুখে লজ্জার ছাঁপ অনুভব করতে পারলো,তাকিয়েই রয়েছে অপলকে আঁখির পানে,আঁখি এবার ভ্রুযোগল কুঁচকে বললো।
কি হলো কি দেখছেন এভাবে?
দেখছি যে আমার মিস আঁখি লজ্জা পেলে কেমন করে খনিকে ওনার গাল নাক সব লাল বর্ন ধারন করে,একদম যেনো পাকা টমেটো,অপলকে যে তাকিয়ে থাকতে বড্ড ইচ্ছে হচ্ছে এই প্রেমিক হৃদয়ের।
পেটে একটা গুতো দিলে সব রোমান্টিকতা কেবিনের জানালা দিয়ে পালাবে, দেবদাস থেকে রোমিও হতে চলেছেন উনি,হা করেন আর খেয়ে আমাকে উদ্ধার করেন।
আঁখি লজ্জাভর্তি মুচকি হেসে কথাগুলো বলে আদৃতের মুখে খাবার তুলে দিলো,আদৃতও ঠোঁট বাঁকানো দুষ্টু হাসি দিয়ে তা গ্রহণ করলো।
তার দুদিন পর আদৃতকে বাড়ি আনা হলো,আদৃত ঝটফট চলে আসতে চাইলে আঁখি আসতে দেয় নি,আঁখি জানে আদৃত কাজ প্রিয় লোক কাজ ছেঁড়ে বসে থাকবে না তাই ওকে রেস্টে রাখার সব রকম ব্যাবস্থা আঁখি নিজেই করলো,আদৃতের কোনো জেদই আঁখির জেদের সামনে কাজ করতে পারলো না,আঁখি আরোহীর ব্যাপারে সবকিছু বলেছে আদৃতকে,এদিকে আরোহী আঁখি আদৃতের কাছে মাফ চেয়ে নিয়েছে,অন্য কোথাও চলে যেতে নিলে কেউ ওকে যেতে দিলেন না,ফায়সাল খান হারিয়ে খুঁজে পাওয়া নিজের কলিজার ধনকে কিভাবে আবার হারিয়ে ফেলতে পারেন,আরোহী তাই এবার নিজের আসল পরিচয়ে ফিরে গেলো নিজের স্বজনদের কাছে,ওর পরিবার ওর মা দাদু আর দিদুভাই ওকে পেয়ে খুঁশিতে আত্নহারা,এদিকে আয়ানের মনে সুখ নেই,ভেবে নিয়েছে আর আঁখির পিছু নিবে না,ও যে আঁখিকে সারা জীবন শুধু কষ্ট দিয়ে এসেছে,এখন যখন আঁখি একটু সুখের ছোঁয়া পেতে চলেছে তবে সেই সুখ আর নষ্ট করতে চায় না আয়ান,আঁখির চোখে যে আদৃতের জন্য অসীম ভালোবাসা উপলব্ধি করতে পেরেছে সে,আঁখি যখন আদৃতের সাথেই নিজের সুখটা বেঁছে নিয়েছে তবে তাতে আর নাক গলাতে যাবে না আয়ান,অনেক সময় যে ভালোবাসার মানুষের সুখের জন্য তাকেই ছাড়তে হয়,এতোদিন তো শুধু আঁখি একতরফা আয়ানের জন্য সব করে গেছে এবার না হয় এর একটু প্রতিদান আয়ানও দিবে ,এই ভাবনাতেই আর আঁখি আদৃতের মধ্যে আসছে না সে,তবে আঁখিকে ছাঁড়া বেঁচে থাকার কথা ভেবেই যেনো ওর অন্তর আত্মা কেঁপে উঠছে, দিনের পর দিন কাটাচ্ছে ও আঁখির বিরহে।
____________________
সায়েদা আজকে নিয়েছে অনেক বড় একটা পদক্ষেপ,আজ সেই একই স্থানে নিজের আর তাজবীরের সব বন্ধুদের ডাকিয়েছে আবারও,তাজবীরের বেষ্ট ফ্রেন্ডকে দিয়ে ওকে ডাকিয়ে আনিয়েছে সেখানে,এদিকে তাজবীর সেখানে এসেই যখন সবার মধ্যে সায়েদাকে দেখতে পেলো তখন অনেক বিরক্ত হলো,কাঠ কন্ঠে ইমতিয়াজকে বললো।
ইমতিয়াজ তুই না বললি এখানে তোর আমার সাথে কি ইমপোর্টেন্ট কাজ আছে,তবে এরা সবাই এখানে কি করছে?আর মিস সায়েদার এখানে কি কাজ?
দেখ দোস্ত আসলে তোকে আমি মিথ্যে বলে এখানে এনেছি,আসল কারন বললে তো তুই আসতি না।
তা কি কারন জানতে পারি?
আসলে সায়েদা তোকে কিছু বলতে চায়।ও নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছে।
সায়েদা…….ওহ তবে আজও কোনো ছলচাতুরী প্লেন করে এসেছে তাই না,আর আমি সিওর ওর ছলে এবার তুইও পা দিয়েছিস,হা হা,আমার কাজ আছে আমি চলে,এসব ফালতু লোককে দেওয়ার মতো যথেষ্ট সময় আমার কাছে নেই।
তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে তাজবীর চলে যেতে নিলে সবাইকে অবাক করে দিয়ে সবার সামনেই সায়েদা এসে তাজবীরের পায়ে পরে গেলো এইবার।
তাজবীর দেখো একদিন এরা সবার সামনেই আমি তোমাকে অপমান করেছিলাম আর আজ সেই সবার সামনেই তোমার পায়ে পরে ক্ষমা চাইছি,আমি জানি আমি যা করেছি তার ক্ষমা এতো সহজে পাওয়া যাবে না,তবুও বলবো আমাকে মাফ করে দাও তাজবীর,আমি আর কখনো এমনটা করবো না,আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি তাজবীর,আমাকে ফিরিয়ে দিয়ো না,একটা সুযোগ দাও,আমি বাঁচবো না তুমি ছাঁড়া।
তাজবীর এবার স্বাভাবিকভাবে সায়েদাকে পা থেকে উঠালো,তারপর বললো।
আমি দুঃখীত সায়েদা তোমাকে ক্ষমা করার মতো সামর্থ্য আমার নেই,আর নিজের জীবনেও আমার আর তোমাকে চাই না,তাছাড়া বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে দিয়েছেন,উনারই বন্ধুর মেয়ে,মেয়েটা শুনেছি ভালোই,আর যাই হোক অন্তত তোমার মতো ছলনাময়ী হবে না আশা করি ,খুব শিগ্রই আমি বিয়ে করতে চলেছি, তুমি আমাকে আর ডিসটার্ব না করলেই খুশি হবো।
এমনটা বলো না তাজবীর আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি,একটা ভুলের এতো বড় শাস্তি আমায় দিয়ো না আমি বাঁচবো না তুমি ছাড়া,তাজবীর যেও না দাঁড়াও,তাজবীর।
তাজবীর সায়েদার কোনো কথাই শুনতে নারাজ, ওর বন্ধুরাও ওকে বুঝিয়ে আটকানোর চেষ্টা করে ব্যার্থ হলো,তাজবীর চলেই গেলো,সায়েদা আর সেখানে উপস্থিত থাকতে পারলো না,ব্যাথা ভরা হৃদয় নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ছুঁটে চলে আসলো।
রাতে আঁখি আর আয়েশা মিলে সায়েদার কাছে আসে ওর সাথে কিছু আড্ডা দেবার সুবিধার্তে কিন্তু ওর রুমের দরজা খুলে যা দেখতে পায় তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না দুজন,দুজনই চিৎকার করে উঠে সায়েদার নাম নিয়ে।
চলবে…….