মন_পিঞ্জর,০৩,০৪

0
1112

#মন_পিঞ্জর,০৩,০৪
#লেখিকাঃআরোহী_নুর
#পর্বঃ০৩

খাওয়ার টেবিলে এসে বসলো আয়ান,পাশেই মাহি বসে আছে,একটা চাকরানী খাবার বেঁড়ে দিতে ব্যাস্ত,এদিকে চারিদিকে চোখ আটিয়ে চাকরানীকে উদ্দেশ্য করে বললো আয়ান।

রহিমা খালা মা আর আয়েশা কোথায়,উনাদের দেখছি না কেনো?

স্যার আমি উনাদের ডেকেছি উনারা বললেন উনাদের এখন খিদে নেই খাবেন না,খিদে লাগলে না কি খেয়ে নিবেন।

এটা কেমন কথা,মা খাবার অনিয়ম শুরু করলো না কি?মাকে নিয়ে আর পারি না,উনি জানেন যে সময়মতো খাবার খেয়ে ওষুধ না খেলে উনার শরীর খারাপ করবে তাও এমন কেনো করছেন?তুমি বসো মাহি আমি বরং মাকে আর আয়শাকে ডেকে নিয়ে আসি,কথাটা বলে আয়ান চলে যেতে নিলে মাহি ওর হাত ধরে ওকে যেতে বাঁধা দিয়ে বলতে লাগলো।

দেখো আয়ান মা তো আর ছোটো বাচ্চা না যে নিজের ভালোটা বুঝবেন না,হয়তো ইচ্ছে করছে না তাই খাচ্ছেন না,খিদে পেলে খেয়ে নিবেন,তুমি শুধু শুধু নিজের সময় কেনো নষ্ট করছো,তোমার মনে নেই খাবার শেষ করে আমাদের বাবার বাড়ির উদ্দেশ্য বেরুতে হবে সবাই আমাদের জন্য কখন থেকে যেনো অপেক্ষা করে বসে আছেন।
কথাটার উত্তরে আয়ান কিছু বলবে এর আগেই চাকরানী মানে রহিমা খালা বললেন।

উনি ঠিক বলছেন স্যার আপনার মিরা আপাকে নিয়ে চিন্তা করা ঠিক না,উনার খিদে লাগলে উনিতো নিজেই খেয়ে নিবেন,এখনতো আর আঁখিমা নেই যে না খেয়ে আগে উনাকে টেনেধরে খাইয়ে দিবে, উনার দেখাশুনা করবে,এখন যে উনার নিজেকে নিজেরই সামলাতে হবে,আপনি বরং খেয়ে মাহি ম্যাডামের সাথে চলে যান।

কথাটা কর্নপাত হতেই মাহির মেজাজ বিগড়ে গেলো,ওর সামনে চাকরানী আঁখির প্রশংসা করছে মানে ওকে ঠেস দিয়ে কথা বলছে,এটা রহিমা খালার মনোভাব আদোও না থাকলেও তাই মনে মনে ধরে নিলো মাহি আর উঠেই ঠাস করে রহিমা খালার গালে কড়া একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো, যাতে রহিমা খালা মুখ থুবড়ে ফ্লোরে পড়ে গেলেন,এহেন কান্ডে হতবাক হলো আয়ান,এদিকে মাহি চেঁচিয়ে বলতে লাগলো।

ছুটোলোক কোথাকার তোর সাহস কি করে হলো আমাকে ঠেস দিয়ে কথা বলার,তাও আমাকে নাম ধরে ডাকিস,আমি মাহি ম্যাডাম না অনলি ম্যাডাম,আমার পায়ের ধুুলোর সমানও মুল্য হবে না তোর আর তেজ দেখাস কোটি টাকার।
এতোক্ষণ রহিমা খালার চুল মুঠো করে ধরে কথাগুলো বলে উনাকে আবারও ফ্লোরে ছুঁড়ে মারলো মাহি,আয়ান হতবাক হয়ে ছুঁটে গিয়ে উঠালো খালাকে,মাহি এখনও শান্ত হয় নি,আবারও বললো।

চলে যা ছুটোলোক,আমি যেনো তোর ওই অলুক্ষুনে মুখটা আর না দেখি।

আপনি না বললেও চলে যেতাম ম্যাডাম,আঁখি মা ছাড়া যে এ ঘরটা ঘর না বন্ধ কুটির মনে হয়,থাকবো না কাল রাতেই ভেবে নিয়েছিলাম আর এখনতো চলে যাওয়ার অনুমতিও পেয়ে গেলাম,হোকনা সেটা অপমানের সহিত,চলি সাহেব,ভালো থাকবেন আপনি,আর পারলে মিরা আপা আর আয়েশার খেয়াল রাখবেন।

কথাটা বলে কাঁদতে কাঁদতে বাইরের দিকে ছুঁটে চলে গেলেন রহিমা খালা,আয়ান এবার অনেকটা ক্ষেপে গেলো,চোখদুটো রক্তবর্ণ করে তেজি গলায় বলতে লাগলো।

এটা কি করলে মাহি তুমি,রহিমা খালাকে এভাবে তাড়িয়ে দিতে পারলে?উনি আজ প্রায় ২৫ বছর ধরে আমাদের বাড়িতে কাজ করেন,সেই ছোট থেকেই দেখে আসছি উনাকে,উনি কোলে পিঠে করে মানুষ করেছেন আয়শা আর আমাকে,আর আজ তুমি উনার সাথে এমনটা করতে পারলে।

আয়ান তুমি আমাকে শ্বাশাচ্ছো?তুমি দেখলে না ওই চাকরানীটা আমাকে কেমন ঠেস দিয়ে কথা বলছিলো,ওই বজ্জাতনিটা আমাকে তোমার সামনে অপমান করলো আর তুমি কিছুই বললে না বরং এবার আমাকেই রাগ দেখাচ্ছো।

উনি তোমাকে ঠেস দিলেন কোথায়?উনি তো শুধু সহজ ভাষায় এটাই বললেন যে আঁখি মায়ের খেয়াল রাখতো,এবার আঁখি নেই তাই মাকে নিজের খেয়াল নিজেই রাখতে হবে,আর এটা তো সত্য কথাই বলেছেন উনি।

তুমিও ওই আঁকির পক্ষপাতিত্ব করতে পারলে আয়ান?তুমি পারলে আমাকে এভাবে অপমান করতে?আমি কখনো ভাবি নি তুমি এভাবে আঁখির সাথে আমার তুলনা করবে।তুমিতো আমায় ভালোই বাসো না,যদি ভাসতে তবে বারবার ওই আঁখির প্রশংসা করতে না,আমার তো মনে হয় তুমি আমার বাবার বাড়িতে বেড়াতে যাবে না বলে এমনটা ইচ্ছে করেই করলে,এবার খুশিতো আমায় কাঁদিয়ে, আমার মা বাবা কতো অধির আগ্রহে আমাদের পথ চেয়ে বসে আছেন আর তুমি এমনটা করলে,আমি আর কোথাও যাবো না।

কথাগুলো বলে ন্যাকাকান্না করতে করতে রুমের দিকে ছুঁটলো মাহি,আয়ান কয়েকবার ওকে পিছন থেকে ডাকলেও ওর ডাকে কোনো সাড়া দিলো না মাহি।

‌_________________

ডাক্তারের কেবিনে বসে আছে আঁখি।

কি হয়েছে ডাক্তার আপনি আমাকে হঠাৎ ডাকালেন?

আঁখি তুমি যে সেদিন কিছু টেস্ট করিয়ে গেছিলে সেগুলোর রিপোর্ট চলে এসেছে।

হুম ডাক্তার বলেন কি এসেছে রিপোর্টে?
ডাক্তার এবার গম্ভীর কন্ঠে বললেন।

তোমার সাথে কি তোমার কোনো পরিবারের সদস্য আসেন নি?আসলে এমন বিষয় আমরা রোগীর সাথে সামনাসামনি ডিসকাস করি না।

ডাক্তার আসলে আমার পরিবারের কেউ নেই,এখন আমি একা,আপনার যা বলার আমাকেই বলেন।
কথাটা কর্নপাত হতেই ডাক্তার একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ত্যাগ করে বিষয়টা আঁখিকে বলতে প্রস্তুত হলেন,রিপোর্টগুলো আঁখির দিকে এগিয়ে দিলেন আর তারপর সবকিছু খুলে বললেন,ডাক্তারের কথাগুলো কর্নপাত হতেই এক নিমিষেই থমকে গেলো আঁখির পৃথিবী,তবে কি এটারই কমতি ছিলো আঁখির জীবনে,আঁখির অধরজোড়া যেনো তখন কিছু বলার অবস্থায় ছিলো না,কানগুলোও যেনো কিছুক্ষণের জন্য বধিরতার ছোঁয়া পেলো,কঠোর এই সত্যটাকেও কি আঁখির এবার মেনে নিতে হবে,আঁখির অবস্থা আন্দাজ করতে পেরে এবার ডাক্তার বললেন।

দেখেন মিসেস আনাহিতা তাবাসসুম রাহমান আঁখি এজন্যই আমি আপনাকে ডিরেক্ট কথাটি বলতে চাই নি,কথাটি আপনার মস্তিষ্কে প্রচন্ড প্রভাব ফেলেছে বুঝতে পারছি,এতে যে আপনার অনেক ক্ষতি হতে পারে।

এবার আঁখি ঠোঁটের কোনে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুঁটিয়ে বললো।

ক্ষতি,হা হা।ক্ষতির আর কি বাকি আছে ডাক্তার,হয়তো এটারই জীবনে কমতি ছিলো তা পূর্নতা পেয়ে গেছে আজ,এটা নিয়ে আবার কি প্রেসার পড়বে আমার মস্তিষ্কে।

আপনাকে পুরো চিন্তামুক্ত থাকতে হবে এখন সবসময়,একটু চিন্তা আপনার জন্য অনেক বড় ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়াতে পারে,আপনাকে সময়মতো ওষুধ সেবন করতে হবে আর হ্যাঁ নিয়মিত চেকআপ এর জন্য আসতে হবে,আপনি পারলে নিজের কোনো আপনজনকে কালকে একবার আমার কাছে নিয়ে আসবেন,উনাকেই আমি আপনার খেয়াল রাখার বিষয়টা বুঝিয়ো বললো।

আঁখি আবারও ঠোঁটের কোনে তাচ্ছিল্যের হাসিটা ঝুলিয়ে বললো।

আপনজন,আসলে আপনজন বলতে আর কেউ নেই ডাক্তার আমার,আঁখির জীবন চলার পথে যে ও এখন একদম একা,এই সংগ্রামটাও যে আঁখিকে একাই লড়তে হবে,তবে আপনি চিন্তা করবেন না ডাক্তার আমি নিয়মিত চেকআপ করাতে আসবো,আর হ্যাঁ যাবার আগে আরেকটা কথা বলি ডাক্তার,আমি মিসেস আনাহিতা তাবাসসুম রাহমান আঁখি না শুরু আনাহিতা তাবাসসুম আঁখি,জিনিসটা খেয়াল করবেন সামনে থেকে আশা করছি। তবে চলি ডাক্তার, ধন্যবাদ আপনাকে।

রিপোর্টগুলো হাতে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো আঁখি,একটা অটোর দরজার পাশে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে আঁখি,গাড়িটাও চলছে আপন গতিতে,আশপাশের পরিবেশটা যে ছুঁটছে মন মতো,চারপাশেই কতো হৈ হুল্লোড়, কতো শব্দ কতো আওয়াজ,শুরু নিঃশব্দ আঁখির মন পিঞ্জর খানা,কতো কঠিন হয়ে থাকে মেয়েদের জীবন,আসলেই কি মেয়েদের কোনো নিজস্ব পরিচয় নেই,বিয়ের আগে মেয়েদের নামের সাথে বাবার নামটা জুড়ে দেওয়া হয় আর বিয়ের পড়ে সেই জায়গায় চলে আসে স্বামীর নাম,আর স্বামীর নামটাও যখন চলে যায় তখন আর লোক ওই মেয়েটাকে ভালো নজরে দেখতে নারায হয়,তবে কেনো এমনটা ঘটে?মেয়েরা কি আদোও পারে না নিজের পরিচয়ে বাঁচতে?পারে না নিজেদের একটা আলাদা পৃথিবী গড়ে নিতে?কেনো নির্মম হয় ভাগ্যের এই পরিহাসটা,কেনো যার কিছুই থাকে না তার কাছ থেকেই সবাই সব কেঁড়ে নিতে চায়,তবে কি আঁখির জীবনটাও শুধু সব বিলিয়ে দেওয়াতে ব্যার্থ হতে চললো।কি দোষ ছিলো আঁখির যে ওর সাথেই এমনটা ঘটতে হলো,এমন সীমাহীন ভাবনাধারার অবসান ঘটানোর আগেই আঁখি পৌঁছে যায় নিজের গন্তব্যে।

__________________

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুখ ফুলিয়ে চুল আঁকড়াচ্ছিলো মাহি,তখনি আয়ান এসে ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।

কি আমার বেবিটা রাগ করেছে বুঝি?

আয়ানের আহ্লাদী এই কথাটার কোনো উত্তর দিলো না মাহি,মুখটা বাংলা পাঁচের মতো করে দাঁড়িয়ে নিজের কাজেই ব্যস্ততা দেখালো আয়ানকে,আজ যে উনি নিজের প্রাণের স্বামীর সাথে অভিমান করে আছেন,কথাও বলবেন না মনে মনে এটে রেখেছেন,এদিকে সুন্দরী বউয়ের রাগ না ভাঙিয়ে শান্ত হবে না যে সেই নরের অশান্ত মন খানা,সুন্দরী রমণীর উত্তর না পেয়ে খচ করে উঠলো নরের বুকের মাঝখানটা,এবার পকেটে হাত ঢুকিয়েই কিছু একটা বের করলো,তারপর ওটা নিজের সুন্দরী রমনীর গলায় পড়াতে পড়াতে বললো।

এটা দেখার পর মনে হয় না আমার বেবিটা আমার সাথে আর রাগ করে থাকতে পারবে।
সত্যিই যে এটাই হলো,স্বর্ণের সে হারটা দেখেই চোখগুলো যেনো বেড়িয়ে আসার উপক্রম হলো সেই রমনীর,নিমিষেই ভুলে গেলো সব রাগ,পিছন ফিরে গিয়ে বাহুডরে আবদ্ধ করলো নিজের নরকে।

কি পছন্দ হয়েছে?

হুম খুব সুন্দর।

হুম এবার আর সুন্দর মুখখানাতে মলিনতা টাঙিয়ে না রেখে ঝটফট রেডি হয়ে নাও আমি যে আবার শ্বশুরবাড়িতে যাবার তস সইতে পারছি না।

তুমিও না পারো বটে,হু হু।আমি তো রেডি হয়েই আছি,তুমি জলদি রেডি হয়ে আসো গিয়ে।যাও
__________

রাত প্রায় ২ টা,পারটাইম জবটা করে বাড়ি ফিরছিলো আঁখি,রাস্তাগুলো পুরো ফাঁকা,কোথাও কোনো যানজট নেই,একা রাস্তায় হাঁটছে আঁখি,জবে জয়েন করার আগেই যে অনেকগুলো এডভান্স নিয়ে নিয়েছিলো আঁখি যেগুলো মেডিক্যাল ভার্সিটিতে ভর্তির জন্য খরচ করে দিয়েছে তাই আজ আর চেয়েও কোনো টাকা পেলো না অফিস থেকে,কোথা থেকে বাড়ির মালিকের টাকা দিবে এটাই ভাবনাতে ঘুরাচ্ছে আর গুটিশুটি পায়ে হাঁটছে আঁখি,হঠাৎই খেয়াল করতে সক্ষম হলো তিনটে লোক ওর পথ আগলেছে,আঁখির বুজতে সমস্যা হলো না ওগুলা বাজে লোক,ওদের চোখগুলো যে হায়েনার মতো আঁখিকে ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে দেখতে ব্যাস্ত,আঁখি পালাবে তার আগেই তিনজন সার্কেল করে ওর চারপাশে ঘুরতে লাগলো,আঁখি ভয় পেয়ে গেছে তবুও তার বহিঃপ্রকাশ হতে দিলো না মুখে,স্কুলের এক সময়ের কারাতে চ্যাম্পিয়ান আঁখি,তাছাড়া স্কুলের বাইরেও আঁখি কারাতে ট্রেনিং করেছে তাই মনে সাহস জুটিয়ে নিজের জানা কৌশল দিয়ে কোনোরকমে লোকতিনটার কবল থেকে বেড়িয়ে ছুঁটতে লাগলো,লোকগুলোও ওর পিছু ছাড়ছে না,আজকে যেনো ওকে ছিঁড়ে খাওয়া না অব্দি শান্তি হবে না এদের,আঁখি দৌঁড়াতে গিয়েও এখন আর পেরে উঠছে না,কেনো যেনো চোখের সামনে সবকিছু অন্ধকার হতে শুরু করেছে,পৃথিবীটা যেনো ওর আশেপাশে ঘুড়তে শুরু করলো,শত চেয়েও নিজের ব্যালেন্স ঠিক রাখতে পারলো না,জ্ঞান নেই নেই অবস্থায় বুঝতে পারলো এক জোড়া বলিষ্ঠ হাত ওকে ধরে নিয়েছে,হাতগুলো যেনো ওর চিরচেনা,কিন্তু তাও ঠিক অনুমান করার বা সেই বলিষ্ঠ হাতজোড়ার মালিককে দেখার ক্ষমতা হয়ে উঠলো না আঁখির,নিস্তেজ হয়ে পড়ে গেলো।

পিটপিট করে চোখ খুললো আঁখি,নিজেকে একটা কেবিনে আবিষ্কার করলো,চোখ ঘুড়াতেই দেখতে পেলো পাশের চেয়ারে হেলান দিয়ে আয়ান চোখ বুঝে শুয়ে পড়ে আছে,খনিকে মনে পড়লো আঁখির সে সময়ের ঘটনা,আঁখির আর বুঝতে বাকি রইলো না তখনকার সেই বলিষ্ঠ হাতজোড়া আর কারও নয় আয়ানেরই ছিলো।

চলবে……….

#মন_পিঞ্জর
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্বঃ০৪

আয়ানের উপর চোখ পড়তেই আঁখির খনিকেই মনে পড়ে কিছু তিক্ত স্মৃতি।আর অন্য কিছু না ভেবে,কোনো কিছুই আর না জানতে চেয়ে উঠে চলে যেতে নিলে আয়ানের ঘুম ভেঙে গেলো।

আরে আঁখি কি করছো?উঠো না,শুয়ে থাকো তুমি অসুস্থ।
আঁখি এবার একটু ঘাবড়ে গিয়ে আয়ানকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করলো।

আপনি আমার কোনো টেস্ট করান নি তো?

না না কোনো টেস্ট করাই নি,কিন্তু কেনো?
আঁখি এবার আমতা আমতা করে বললো।

না মানে এমনিতেই।তা আমি এখানে কি করে আসলাম?

কালরাতে কিছু বখাটে তোমাকে তাড়া করেছিলো,তোমার ভাগ্য ভালো যে কালকে হাসপাতালে একটা এমারজেন্সি থাকায় এমারজেন্সিটা শেষ করে সে সময় আমি ওখান দিয়ে আসছিলাম তখন তোমাকে ছুঁটতে দেখে তোমার দিকে এগিয়ে যাই,লোকগুলো আমায় দেখে আর সেদিকে আসে নি পালিয়ে যায় কিন্তু তুমি জ্ঞান হাঁড়িয়ে গেছিলে তখন তাই তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে এলাম,একটু রেস্ট করো ভালো লাগবে।

আমি রেস্ট আমার ঘরে গিয়ে করে নিবো মি.আয়ান রাহমান,আপনাকে চিন্তা করতে হবে না আমাকে নিয়ে আমি একদম ঠিক আছি,আর ধন্যবাদ আমাকে বাঁচানোর জন্য,হয়তো আপনার প্রতিদান দেবার কোনো সামর্থ্য আমার কাছে নেই, তবুও যদি আপনার আমাকে কোনো দরকার পরে বলবেন প্রাণ দিয়ে হলেও প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করবো,এখন চলি।

এভাবে কথা বলছো কেনো তুমি?আর চলি মানে?কোথায় যাবে তুমি?কাল না বলেই চলে গেলে,কোথায় গেলে আমায় বললেও না,তোমার ফোনেও কল করে পেলাম না,সবকিছুতে ব্লক করে রেখেছো আমায়,এতো তেজ আর জেদ দেখালে হয় না আঁখি,বি প্রেকটিক্যাল,আমি যখন বলছি আমি তোমার থাকা খাওয়ার ভালো ব্যাবস্থা করে দিবো তারপরও এমন কেনো করছো?কোনো বোকা লোকই এমন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আঁখি।

আমি কখনোই চালাকি করে খেয়ে পড়ে বাঁচতে চাই নি আর কখনো চাইবোও না মি.আয়ান রাহমান,আমি সত্যিই বোকা,যদি চালাক হতাম তবে হয়তো আজ এই অবস্থায় থাকতে হতো না আমায়।কিন্তু আমি যেমনই আছি তেমনই ভালো আছি মি.রাহমান,আপনার আমাকে সাহায্য করতে হবে না,আমি নিজেই নিজের টা দেখে নিবো, আপনি আমাকে নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে নিজের নতুন বিবাহিত জীবন নিয়ে ভাবলে হয়তো বেশি ভালো হবে।

দেখো আঁখি পাগলামো করো না,এভাবে কোনো সাহারা ছাড়া একা কি করে বেঁচে থাকবে তুমি,রাতের ঘটনা অন্যদিন আবার ঘটবে না এর কি গ্যারান্টি,আর সব দিন তো আমি আসবো না তোমাকে বাঁচাতে,দেখো জেদ ছাড়ো আর এই নাও চেক,এতে আমার সাইন করা আছে ,প্রতিমাসের শেষে তোমার যতো ইচ্ছে আমার একাউন্ট থেকে টাকা উঠিয়ে নিয়ো।

কথাটা বলে আয়ান আঁখির হাতে একটা চেক ধরিয়ে দেয়,আঁখি চেকটা হাতে নিয়ে তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে বলে।

আসলে আপনি যেটাকে জেদ মনে করছেন সেটা আমার আত্মসম্মান মি.রাহমান, আমি আপনার নামে সব উজাড় করে দিয়েছি কিন্তু আমার আত্মসম্মানটা উজাড় করে দিতে পারবো না,আপনার চেক আপনার পাশে রাখেন,আমি কারো দয়া বা সমবেদনার নিচে বাস করতে চাই না,আমি নেতিয়ে পড়েছি ঠিকই তবে ভাঙি নি আর ভাঙবোও না আমার আল্লাহ আমার সাথে আছেন আর উনি থাকতে কারো সাহারার প্রয়োজন হবে না আমার,ইনশাআল্লাহ ,আমার রক্ষা করার জন্য উনিই যথেষ্ট, আপনার টাকা আপনার ভবিষ্যতের জন্য বাঁচিয়ে রাখলে কাজে দিবে,এই নিন আপনার চেক,চলি।

কথাগুলো বলার পর চেকটা আয়ানের হাতে ধরিয়ে স্থান ত্যাগ করলো আঁখি,আয়ান হতবম্ভ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর যাওয়ার পানে,আঁখি যে এমন তিক্ত ভাষায় ওর সাথে কখনো কথা বলে নি তাই আজকে আঁখির এই তিক্ত বানিগুলো শুনে বুকের মাঝখানটা খচ করে উঠে আয়ানের।

‌_________________

আঁখির সাথে সারারাত হাসপাতালেই ছিলো,এবার বাড়ি ফিরলো আয়ান,মেইন ডোর দিয়ে প্রবেশ করতে না করতেই চোখ যায় আয়েশার দিকে,কোমড়ে ওড়না গুটিয়ে ঘর মুছতে ব্যাস্ত আয়েশা,আয়ান এবার ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে ওকে প্রশ্ন ছুঁড়ে বললো।

কিরে,ভার্সিটি যাবি না,আজ শুনলাম তোর একটা ক্লাস এক্সাম আছে আর তুই এখানে বসে কাজ করছিস।

কি করবো ভাইয়া বাড়ির কাজ তো কাউকে করতেই হবে।
আয়েশার কথা শেষ হতে না হতেই কিচেন থেকে রিমা রাহমানের চিৎকার ভেসে আসে ওদের কানে,দুজনই কিচেনের দিকে ছুঁটে যায় তখন,গিয়ে দুজনই দেখতে পেলো গরম তেল মিরা রাহমানের হাতে পড়ার ফলে হাতে সাথে সাথে ফোসকা পড়ে গেছে, আয়েশা আর আয়ান ছুঁটে গিয়ে উনার হাতে বরফ রাগাতে শুরু করলো,এবার আয়ান একটু রেগেমেগে বললো।

এসব কি করছো মা তুমি?তুমি কিচেনে এলে কেনো?তোমাকে কে বলেছে এসব করতে?

মিরা রাহমান এবার নরম স্বরেই বললেন।

এসব যদি আমি না করি তবে কে করবে বাবা,রান্না না করলে খাবি কি?ঘরের কাজ পড়ে থাকলে করবে কে?

হ্যাঁ ভাইয়া তুই আমাদের নিয়ে চিন্তা করিস না,তুই বরং নিজের কাজে মন দে,আমরা যেভাবে আছি আমাদের থাকতে দে,চলো মা রুমে চলো।আমি রান্না করে নেবো।

কথাটা বলে আয়েশা মাকে নিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করলো,আয়ান কিছু আর বললো না,বরং কিছু একটা ভেবে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেলো।রুমের দরজা ঠেলিয়ে ভিতরে ঢুকে দেখলো মাহি কানে হেডফোন গুজে গান শুনছে আর এক হাতে ফোন টিপছে ওপর হাতে আরামছে পায়ের উপর পা তুলে বসে আপেল খাচ্ছে, আয়ান দুবার ডাকলো ওকে,কিন্তু ওর ধ্যান অন্যদিকে থাকলে তো শুনবে,অবশেষে আয়ান এগিয়ে গিয়ে ওর হেডফোনটা খুলে দিলো,যাতে মাহির খেয়াল আয়ানের দিকে গেলো।

আরে বেবি চলে এসেছো তুমি?কি রাতে এমারজেন্সি বলে যে গেলে আর এখন এই সকালে এলে, নতুন বউয়ের সাথে রোমাঞ্চ করতেও মন চায় না বুঝি?
কথাটা বলে মাহি আহ্লাদী করে আয়ানের গলায় ঝুলে পড়লো,আয়ান এবার ওকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বললো।

মাহি তুমিই তো কালকে রহিমা খালাকে তাড়িয়ে দিলে, এবার যে ঘরের সব কাজ পড়ে আছে,তুমি জানো মা নাস্তা বানাতে গিয়ে হাত পুড়িয়ে ফেলছেন।আঁখির আজকে এক্সাম তাও ভার্সিটিতে না গিয়ে ঘরে কাজ করছে।

তা তুমি এসব আমাকে কেনো বলছো আয়ান,নতুন কাজের লোক এনে দাও।

মাহি তুমি ভালো জানো শহরে কাজের লোক পাওয়া কতো দূরুহ,তাও আমি যোগাড় করার চেষ্টা করবো যতো তাড়াতাড়ি পারি কিন্তু এখন আর্জেন্টলি তো পাওয়া যাবে না,কাজের লোক পাওয়া অব্দি তুমিও তো পারো মা আর আয়েশাকে একটু হেল্প করতে।

হোয়াট,এক্সকিউজ মি আয়ান,আমি কেনো কাজ করবো?ঘরের কাজ করলে আমার হাত নষ্ট হয়ে যাবে না?আমার এতো সুন্দর হাতগুলো নষ্ট হয়ে যাক তুমি চাও?তাছাড়া ওসব ঘরের কাজকাম আমি কখনো করি নি আর করবোও না,আমি কোনো ঘরোয়া মেয়ে না আয়ান, আমি স্মার্ট, রুচিশীল মেয়ে আর এসব কাজটাজ আমার স্ট্যাটাসে পড়ে না,তুমি তো আমার এই স্টাইল টা দেখেই আমার প্রেমে পড়েছো এম আই রাইট?তুমিই তো বলতে আমায় যে আঁখি ঘরোয়া তাই তোমার ওকে ভালো লাগে না আমার মতো স্মার্ট মেয়ে তোমার পছন্দ তবে আজকে আমার কাছে এই ঘরোয়া স্বভাব কিভাবে আশা করতে পারো তুমি?আনবিলিভেবাল আয়ান,আজকে বলেছো প্লিজ আর এসব আমায় বলো না।ওকে তুমি বসো আমি বরং ফ্রেস হয়ে আসি বন্ধুদের সাথে আজকে আমার বাইরে যাবার প্লান আছে আবার।

কথাগুলো বলে মাহি ওয়াসরুমে ঢুকে গেলো,আয়ান হাবার মতো তাকিয়ে রইলো ওর পানে,খনিকে মনে ধরা দিলো আঁখির কিছু স্মৃতি।
আঁখি, আঁখি বলতেই সবার সব সুবিধা ছিলো,সাত সকালে ঘুম থেকে উঠে আগে ফজরের নামায পড়ে কুরআন তেলাওয়াত করে তারপর গিয়ে সবার জন্য নাস্তা বানিয়ে সারা ঘরের কাজ গুছাতো,তারপর সবাইকে উঠিয়ে যার যা যা চাই সবাইকে তা ঠিকমতো দিয়ে দিতো,এরপর সবাইকে ডেকে এনে নাস্তা করাতো,আয়শাকে পরাশুনায় হেল্প করতো,মিরা রাহমানের খাওয়া দাওয়া গোসল এমনকি সকল কাজ আঁখিই দেখতো,আঁখি থাকতে কখনো আয়ানকে নিজের জন্য কিছু ভাবতে হয় নি,কাপড়, খাবার জিনিসপত্র, কাগজপত্র সবকিছুই চাওয়ার আগে সামনে পেতো আয়ান,আঁখির এমন সংসারি ভাবটাই আয়ানের ভালো লাগতো না,আর আজকে নাকি আয়ান সে সংসারি ভাব মাহির কাছ থেকে আশা করছে,মাহি তো ঠিকই বলেছে আয়ান মাহিকে এজন্য বিয়ে করেছে কারন ও সংসারি না বরং বিলাসবহুল জীবনযাপনে আগ্রহী রমনি,তবে আজকে আয়ান ওর কাছ থেকে আঁখির স্বভাব কি করে আশা করতে পারে,না আয়ান তো এটা মোটেও ভালো করছে না,আয়ানের মাহিকে এমনটা বলা ঠিক হয় নি,বরং অন্য পথ দেখা দরকার ওর।এসব আবোলতাবোল শান্তনা দিয়ে নিজেকে একটু স্বাভাবিক করলো আয়ান।

নাস্তার টেবিলে বসে আছে আয়ান,তখনি মাহি সিড়ি বেয়ে নেমে আসলো,মিনি স্কার্ট পড়ে অনেক মডার্ন বেশে নিচে নেমে আসলো,ওর পরনের কাপড় দেখে আয়ানের বেশ খারাপ লাগলো,ভ্রুযোগল কুঁচকে বললো।

তুমি এভাবে কোথাও যাচ্ছো?

বা রে কোথায় আবার বন্ধুদের সাথে বেড়াতে।

বন্ধুদের সাথে বেড়াতে যাবে ভালো কথা,ভালো কাপড় পড়ে যেতে পারো এসব কি?

এসব আবার কি,এগুলাই তো ভালো কাপড়,আজকালকার মেয়েরা তো এসবই পড়ে।
ও আই সি তুমি আবার সো কোল্ড হাসবেন্ড দের মতো আমাকে আমার পোশাক আশাক নিয়ে জাজ করতে শুরু করে দিচ্ছো না তো আবার আয়ান,এমন মবোভাব কখনো মনে এনোও না,আমি কি পড়বো কি করবো না করবো তা সমসময় নিজের মতেই করেছি আমাকে কখনো কোনো হুকুম জারি করতে এসো না,বাই দ্যা ওয়ে আমার অনেক দেড়ি হচ্ছে চলি,ভেবেছিলাম নাস্তা করে যাবো কিন্তু তুমি সে কখন থেকে বসে নাস্তা পাও নি আমাকে না জানি কখন পেতে হবে তাই চলি বাইরে গিয়ে খেয়ে নিবো।আর হ্যাঁ আয়ান আমি তোমার সিন্ধুক থেকে দশ হাজার টাকা নিয়ে যাচ্ছি বন্ধুদের পার্টি দিতে হবে তো তাই।ওকে এবার চলি।বাই।
এবার আয়েশা এসে বললো।

আরে আপনি না খেয়ে যাবেন না,আমি নাস্তা বানিয়েছি খেয়ে যান।

মাহি এবার একটু উকি দিয়ে আয়েশার বানানো নাস্তার দিকে তাকালো।তারপর নাক কুঁচকে বললো।

ইয়ে টোস্ট গুলো তো দেখি পুরো পুড়ে আছে,তাছাড়া স্যান্ডউইচ টাও কেমনটা দেখাচ্ছে।ছি,

আসলে তাড়াহুড়োয় একটু এমন হয়ে গেছে।

তবে তোমার নাস্তা তুমিই খাও,এমন নাস্তা মাহি খাবে না।
কথাটা বলে আয়েশাকে ব্যাঙ্গ করে হাসতে হাসতে চলে গেলো মাহি,আয়েশা রাগে হাতের মুঠো শক্ত করে নিলো তারপর অনেক কিছু ভেবে নিজেকে কন্ট্রোল করে নিলো।
এদিকে হায়ান হতভম্ব অবস্থায় বসে রইলো,আবারও খনিকে মনে ধরা দিলো আখির কিছু স্মৃতি, আয়ানের শেষদিকের লেখাপড়া চলাকালীন সময়ে আঁখিই তো ওর লেখাপড়ার খচর জুটাতো,দিনশেষে সব টাকা এনে আয়ানের সিন্দুকেই রাখতো কখনো নিজের প্রয়োজনে এক টাকাও খরচায় নি আঁখি,কখনো যদি পরিবারের প্রয়োজনেও টাকা নিতে হতো তখনও আয়ানকে না জিজ্ঞেস করে টাকাগুলোতে হাত দিতো না,এমনকি কোটিপতির মেয়ে হবার পরও আঁখিকে কখনো এমন অশ্লীল কাপড় পড়তে দেখে নি আয়ান,নম্র ভদ্র ব্যাবহার এমনকি পোশাক আশাকেই পরিপূর্ণ ছিলো আঁখি।

________________

সকালটা অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে এই নদীর পাড়ে,সকালকটাতে মনের সুখে হাটতে ভালোবাসে আঁখি, নদীর পার ওর বরাবরই অনেক পছন্দের, হাসপাতালটার পাশেই ছোট্ট একটা নদীর ঝলক দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসলো আঁখি, নদীর পারের স্নিগ্ধ বাতাস মনটা দুলিয়ে দিচ্ছে আঁখির, নদীর পানিগুলো বেশ খনিক আগে ফোঁটা সূর্য্যরশ্মিতে চিক চিক করছে,যেনো আঁখিকেই হাতছানি দিয়ে ডাকছে ওগুলো,আঁখি এগিয়ে গেলো জলের একদম ধারে,চোখ বন্ধ করে অনুভব করতে লাগলো সকালের সুন্দর হাওয়াটা,হঠাৎই চোখে ধরা দিলো জীবনের তীক্ত স্মৃতিগুলো,সবশেষে কানে সাড়া দিলো ডাক্তারের বলা কথাগুলোও, ঝট করে চোখ খুলে নিলো আঁখি,ব্যাগ থেকে রিপোর্টগুলো আবার বার করলো তারপর একবার সেগুলাতে চোখ বুলিয়ে নিলো,এরপর খানিকক্ষণ নদীর জলের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বুক ছেঁড়া আর্তনাদে সজোরে চিৎকার করে উঠলো,ওটা যেনো চিৎকার না আঁখির মন পিঞ্জরে জমে থাকা সব কষ্ট ছিলো,যা চিৎকারের ধ্বনি হয়ে বাতাসে দুলতে শুরু করলো,আঁখির চোখ বেয়ে এবার কান্নার স্রোত নামতে লাগলো,আঁখি এবার হাটু গেঁড়ে চোরাবালিতে বসে পড়লো আর উপরের দিকে তাকিয়ে বললো।

কেনো খোদা?কেনো,কি দোষ ছিলো আমার?কেনো আমার সাথেই এসব কিছু ঘটলো?কেনো? এমন তিল তিল করে মরার থেকে তো একবারেই মরে যাওয়া ভালো হতো,হয়তো সবকিছু থেকে শান্তিতেই মুক্তি পেতাম।
কথাগুলো বলে অনেক্ষন কান্না করলো আঁখি, বেশকিছুক্ষণপর চোখ মুখ শক্ত করে নিয়ে চোখের জল মুছে নিলো আঁখি আর কঠিন স্বরে বলতে লাগলো।

বাবা বলতেন হাটা শিখতে গেলে চুট খেতে হয়,মানুষ পড়ে গিয়েই তো উঠে দাঁড়াতে শিখে আর আমাকেও যে উঠে দাঁড়াতে হবে,খোদা তো নিজের প্রিয় বান্দাদেরই সব থেকে বেশি পরীক্ষা করেন,হয়তো খোদা আমাকেও তাই করছেন,আর আমিও সেই পরীক্ষায় পরাজিত হবো না,যতোদিন বেঁচে আছি সংগ্রাম করবো,নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবো,অনেক তো পরের জন্য বেঁচে ছিলাম,এবার না হয় নিজের জন্য বাঁচবো,নিজের জন্য কিছু করবো।
কথাগুলো বলে আঁখি আবারও খোলা আকাশের দিকে আবারও তাকিয়ে বললো।

হে খোদা রহম করো আমায়,যেনো আমি নিজের সকল সংগ্রামে জয়ি হতে পারি।
__________________

আজকে প্রথম ক্লাস আঁখির, এই প্রথম ভার্সিটিতে প্রবেশ করলো,মেডিক্যাল ভার্সিটিতে পড়ার সপ্ন যে আদোও পুরন হতে চলেছে ভেবেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে আঁখির,অনেক দিন পর আজকে সত্য একটা হাসি ফুঁটে উঠলো আঁখির অধরের কোনে,সেটা যে এই ভার্সিটির মাটির উপর বুক ফুলিয়ে খাঁড়া হতে পারার খুশিতেই আঁখির অধরের কোনে মান পেয়েছে।খুশি মনে ভার্সিটির দিকে এগুতে নিচ্ছিলো আঁখি তখনি ধাক্কা খায় কারো সাথে,আঁখি পড়ে যেতে নিবে এর আগেই বলিষ্ঠ দুটি হাত পাকরাও করে ওকে,হাত দুটির ছোঁয়া আঁখির কাছে একদমই অচেনা লাগলো,চোখ বুলিয়ে দেখতে গিয়েও মুখখানা চিনতে পারলো না আঁখি,লোকটা আঁখিকে ধরে হাবার মতো তাকিয়ে আছে ওর দিকে,যেনো লোকটা আঁখিকে না কোনো ভুঁতকে দেখে নিয়েছে,এদিকে আঁকি নিজেকে লোকটার কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে কিন্তু লোকটা এখনও স্বাভাবিক হয় নি,অবাক দৃষ্টিতে দেখছে আঁখিকে,আঁখি প্রথমে স্বাভাবিক ভাবে বললো থ্যাংক্স।কিন্তু লোকটার কোনো প্রতিক্রিয়া পেলো না,লোকটা তো হাবার মতো তাকিয়েই আছে যেনো আঁখির কোনো কথাই শুনছে না,এবার আঁখির রাগ হলো,প্রথমতো এসে আঁখির সাথে ধাক্কা লাগলো তাও আঁখিকে বাচালো বলে আঁখি ধন্যবাদ জানালো কিন্তু লোকটা কোনো রেসপন্স না করে হাবার মতো তাকিয়ে আছে,হ্যাঁ আঁখি লোকটার চাহনিতে কোনো খারাপ মনোভাব দেখতে পাচ্ছে না বটে কিন্তু তারপরও রাগ হলো আঁখির, তাই কট কট কন্ঠে বললো।

এই যে কানপুরে কি আপনার হরতাল চলছে?ধন্যবাদ বললাম কানে যায় না?এমন হাবার মতো তাকিয়ে আছেন কেনো এর আগে মেয়ে দেখেন নি না কি?নাকি আমাকে আপনার কোনো চোর মনে হচ্ছে,যে মুখটা ভালো করে দেখে নিয়ে পরে পুলিশের কাছে গিয়ে আমার স্কেচ বানাবেন?হ্যালো এক্সকিউজ মি,এই আপনি কানা না কি?নাকি বধির?হ্যালো?আজব তো!

লোকটার কোনো ভাবভঙ্গি নেই,লোকটা যেনো পুরো জমে গেছে আঁখিকে দেখে,আঁখির কোনো কথাই যে ওর কানে ঢুকছে না,লোকটার শ্রবনশক্তি যেনো খনিকে বিলুপ্ত পেলো,শুধু আঁখিকে দেখতে পাচ্ছে,আঁখির কথাবলার ভাবভঙ্গি শুধু চোখে ফুঁটছে ওর,সেই ডাগরডাগর চোখজোড়া, সেই মুখ,সেই সরুঠোঁটগুলো,সেই চেহারা,চেহারাটা যে লোকটার চিরচেনা,লোকটা এবার কাঁপা কাঁপা কন্ঠে একটা কথাই ফুঁটালো

আরোহী………..

চলবে…….

উহুম উহুম,কেউ কি কিছু বুঝবার পারছেন??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here