মন_পিঞ্জর,০৫,০৬

0
983

#মন_পিঞ্জর,০৫,০৬
#লেখিকাঃআরোহী_নুর
#পর্বঃ০৫

আরোহী?এই যে আপনার মাথায় কোনো সমস্যা আছে না কি?এতোসময় তো মনে করেছিলাম আপনি বোবা আর কানা এখন দেখছি পাগলও,নিজের চিকিৎসা করান বুঝেছেন?যত্তসব, দেখি সরেন,আমার ক্লাস আছে।

আরোহী রেগেমেখে কথাগুলো বলে লোকটাকে সাইড কাটিয়ে ভিতরের দিকে এগ্রসর হলো,এদিকে লোকটা এখনও হতবাক হয়ে তাকিয়ে আঁছে আঁখির দিকে,লোকটার চোখগুলোতে নোনাজল টলমল করতে শুরু করলো মুহুর্তেই,এবার ব্যাথা ভরা কন্ঠে আলতো করে আবারও বলে উঠলো।

আরোহী।

আঁখি হেটে ক্লাসে যাচ্ছিলো তখনি সামনে থেকে একটা মেয়ে আসছিলো,মেয়েটা তখন ফোন টিপতে টিপতে অগ্রসর হচ্ছিলো তাই আঁখিকে খেয়াল করে নি যাতে আঁখির সাথে ধাক্কা খেয়ে মেয়েটার ফোন পড়ে যায় নিচে,মেয়েটা সাথে সাথে নিচে ঝুকে যায় ফোনটা তুলতে,এদিকে আঁখির মেজাজটা আগে থেকেই খারাপ হয়ে ছিলো তাই এবার ধাক্কাটা লাগায় ওর মেজাজ আরও বিগড়ালো,একটু ক্ষিপ্ত কন্ঠেই বললো।

কি আজকে সবার চোখ কি হরতাল করতে গেছে?কেউ চোখে দেখতে পাচ্ছে না না কি?শুধু আমায় এসেই ধাক্কা মারছে।
ফোন তুলতে তুলতে মেয়েটার কান অব্দি কথাটা পৌঁছালো,মেয়েটা উঠে আঁখিকে সরি বলবে তখনি আঁখির চেহারায় চোখ যায় ওর,সাথে সাথে মেয়েটা ভুঁত বলে চিৎকার করে ওর থেকে অনেকটা দূরত্ব বজায় করে নেয়,মেয়েটা খনিকে অনেকটা কাঁপতে শুরু করলো,আঁখি অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে গেলো এতে,এবার ওর মেজাজটাও আরও বিগড়ে গেলো,পৃথিবীর সমস্ত প্যারাই যেনো ওর জন্যে রাখা হয়েছে এমন একটা বিরক্তিকর ভাবভঙ্গি চেহারায় ফুঁটিয়ে বললো।

এই যে আমাকে আপনার ভুঁত মনে হচ্ছে?আমার কি শরীরে মাংস নেই?না চোখ দিয়ে রক্ত ঝরছে?আমার দাঁতগুলো বেড়িয়ে এসেছে না কি আমার হাত পা বাঁকা হয়ে আছে যে আপনি আমায় ভুঁত বললেন?না জানি কোন পাপ করেছিলাম সমস্ত প্যারা আমার জীবনেই চলে আসছে,অবিশ্বাস্য।

কথাগুলো বলে আঁখি বিরক্তিকর ভাব নিয়ে স্থান ত্যাগ করলো,মেয়েটি যেনো নিজের চোখে বিশ্বাস করতে পারছে না,মেয়েটির ভাবনায় হটাৎ কি যেনো ধরা দিলো,তাই তৎক্ষনাৎ ছুঁটে কোথাও যেতে লাগলো।

হটাৎ মেয়েটা ছুঁটে এসে একটা কক্ষে ঢুকলো,কাঁপা কাঁপা কন্ঠে হাঁপাতে হাঁপাতে বলতে লাগলো।

ভাইয়া, ভাইয়া,আরোহী আপু,ওইখানে আরোহী আপু।
মেয়েটা আর কিছু বলবে এর আগেই একটা ল্যাপটপ সামনে নিয়ে বসা লোকটি ল্যাপটপের মনিটরের দিকে তাকানো অবস্থায়ই গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো।

আনাহিতা তাবাসসুম আঁখি, ডটার অফ ফায়সাল খান,সি ইজ নট আওয়ার আরোহী সায়েদা।

লোকটার কথায় হতভম্ব হলো সায়েদা,হতবাক কন্ঠে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো লোকটাকে।

কিন্তু ভাইয়া ও তো হুবহু আরোহী আপুর প্রতিরূপ।

পৃথিবীতে এক চেহারার সাত লোক থাকে শুনেছিলাম,নিজ চোখে দেখি নি বলে কখনো ওটাতে বিশ্বাস করি নি তাই বলে যে এমন কিছু আদোও হবে না এমনটা নাও হতে পারে সায়েদা,হয়তোবা ও আরোহীর কোনো প্রতিরুপ,কিন্তু ও আরোহী না।তোমার ক্লাস টাইম শুরু হতে চলেছে নাও গো।

কিন্তু ভাইয়া,

আই সেইড গো সায়েদা।

সায়েদা লোকটাকে ভালো করেই জানে তাই আর কথা না বাড়িয়ে মাথা নিচু করে গুটিশুটি পায়ে স্থান ত্যাগ করলো।

মনিটরের উপর চিরচেনা সেই মুখখানার পাশে পুরো স্পষ্টভাবে নামটা লেখা আছে আনাহিতা তাবাসসুম আঁখি,লোকটার কাছে অপ্রিয় হলেও এটাই সত্য যে আঁখি ওই লোকটার আরোহী না,ভাবনাটা খনিকে ব্যাথার্থ করলো লোকটার মন পিঞ্জর যা জল হয়ে জমা হলো লোকটার নয়নে,কিন্তু লোকটা নিচে গড়িয়ে পড়তে দিলো না জলগুলোকে,নিজেকে পরক্ষণেই স্বাভাবিক করে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো।

তখন লোকটা আরোহীর পিছন যেতে নিলে হঠাৎই ধাক্কা খায় ভার্সিটির ভর্তির কাজে নিয়োজিত স্যারের সাথে,আঁখিকে দেখিয়ে লোকটা ওই স্যারকে প্রশ্ন করলো?

ওই মেয়েটা আমাদের কলেজে কি করছে খোরশেদ স্যার,ওই মেয়েটা কে?

উনি?উনি হয়তো আমাদের এখানের নতুন ভর্তির তালিকার একজন।কেনো স্যার?

এমনিতেই,আপনি নতুন ভর্তির সব লিস্ট এখনি আমার কেবিনে নিয়ে আসুন,রাইট নাও।

কথাটা বলেই স্থান ত্যাগ করে তখন লোকটা,তারপর নতুন ভর্তির সকল লিস্ট খোরশেদ স্যার ওই ল্যাপটপের মধ্যেমে লোকটাকে এনে দিলে তাতে খোঁজে বার করলো আঁখিকে।

ক্লাসে দ্বিতীয় বেঞ্চে বসে আছে আঁখি,প্রথম ক্লাস শুরু হতে আর মাত্র ৫ মিনিট বাকি,আঁখি লক্ষ্য করলো হঠাৎ করেই ক্লাসের প্রায় সকল মেয়ে নিজেদের ব্যাগ থেকে আয়না লিপস্টিক বের করে সাজগোজ করতে ব্যাস্ত হলো,আঁখি অবাক হলো ওদের এমন কান্ড দেখে,মেয়েগুলো এমন কেনো করছে,হঠাৎ আঁখি শুনতে পেলো কয়েকটা মেয়ে বলছে।

ইশ আদৃত স্যার কখন যে আসবেন,জানিস এমন হ্যান্ডসাম ছেলে আমি আজ পর্যন্ত দেখি নি।কেনো যে স্যার এতো হ্যান্ডসাম,দেখতে পুরো হলিউড হিরো,উনার বিয়ে হয়ে গেছে বিষয়টা শুনে অনেক মন খারাপ হয়েছিলো প্রথমে কিন্তু পরক্ষণেই শুনলাম উনার বউ নাকি দু’বছর আগেই মারা গেছে এক্সিডেন্টে,উনি এখন প্রোপার সিঙ্গাল,আর আমি রেডি টু মিঙ্গাল।

এই সড় তো, আদৃত স্যার শুধু আমারই হবেন।

আরে তোরা যে উনাকে নিয়ে মারামারি করছিস,উনি তো তোদের দিকে তাকাবেনও না,উনি আমাকে দেখেই ফিদা হবেন,দেখিস।

মেয়েগুলোর এমন অবস্থা দেখে হাসি পেলো আঁখির।ড.আদৃত চৌধুরী, নাম অনেক শুনেছে আঁখি,এই মেডিক্যাল ভার্সিটিটা উনার বাবার,এখন উনার বাবা উনি আর উনার ভাই মিলে দেখাশুনা করেন,উনি অনেক বড় সার্জন,উনার মিডিয়ার সামনে আসার কোনো ইন্টারেস্ট নেই উনি নিজেকে আড়ালেই রাখতে পছন্দ করেন,উনার বিষয়ে খবরের কাগজে অনেক পড়েছে আঁখি।উনাকে নিয়ে পড়ার পর উনাকে দেখার একটা কৌতূহল যে আঁখির মধ্যেও জন্মেছে তবে তা একজন গুরু হিসেবে দেখার কৌতূহলই বটে।

ঠিক ১০ টায় রুমে প্রবেশ করলেন আদৃত স্যার,উনি টাইমের খুব পাক্কা,সত্যবাদি আর গম্ভীর একজন পুরুষ,মেয়েরার উনার সৌন্দর্যের সাথে উনার ব্যাক্তিত্বের প্রেমেও পড়ে থাকে,তবে উনার উপর কোনো মেয়ের মোহ কাজ করে না,উনি রুমে প্রবেশ করতেই সব মেয়েরা হা হয়ে তাকিয়ে রইলো উনার দিকে কিন্তু উনি স্বাভাবিক ভাবেই সবাইকে বসতে বলে নিজেও বসলেন,এদিকে আমাদের আঁখিও অবাক, তবে সে অবাকত্ব লোকটার সৌন্দর্যে পাগল হয়ে না লোকটাকে দেখে,এ যে একটু আগে ধাক্কা লাগা সেই লোকটা,আঁখি এবার জিহ্বায় কামড় দিয়ে আমতা আমতা করে চুপিস্বরে নিজেকে বলতে লাগলো।

এই রে এ কি করেছি আমি?আমি না বুঝে না শুনে আদৃত স্যারকে কানা,বোবা পাগল আর না জানি কি কি বলে দিয়েছি,এবার যদি উনি আমাকে ক্লাস থেকে বের করে দেন,আল্লাহ রক্ষা করো আমার,শুনেছি উনার নাকি মেজাজ অনেক গরম থাকে সবসময়।তখনি আঁখির কানে কারো মুখে নিজের নামের ডাকের ধ্বনি আসে,চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে ড.আদৃত চৌধুরী ,আঁখি তো এবার হতভম্ব হয়ে গেছে একদম।

আঁখি কেনো এমনটা করলি বল তো,যেখানে রাগ দেখানোর সেখানে দেখাস না আর যেখানে দেখানো ঠিক না সেখানেই দেখালি,এবার প্রথম ক্লাসেই ক্লাস থেকে বেরুতে হবে তোকে,ভালো করে করে নে এবার ডাক্তারি।
মবে মনে এসব বলছে আঁখি।

এই যে মিস আঁখি আমি আপনার সাথে কথা বলছি আর আপনি নিজের খেয়ালেই ব্যাস্ত?ড.হতে হলে কনসেন্ট্রেশন দরকার,এমন খেয়ালিপনা নিয়ে ডাক্তারি হয় না।বুঝেছেন মিস আঁখি?

আদৃতের গম্ভীর কন্ঠের বলা কথাগুলো শুনে আমতা আমতা করে আঁখি বললো।

আই এম সরি স্যার আর এরকমটা হবে না।

ইট’স ফাইন মিস আঁখি,তা দুদিন কোথায় ছিলেন?নতুন বছরের ক্লাসগুলো দুদিন আগেই শুরু হয়েছে আজকে আপনি থার্ড ক্লাসে ফাস্ট ক্লাস করতে এসেছেন।জানতে পারি কেনো?

কথাগুলো শুনে আঁখির মনে পড়লো এই দুইদিনের দূরাবস্থার কথা,কি করে পারতো আঁখি এ দুদিন ক্লাসগুলো জয়েন করতে।

এই যে মিস আঁখি কথায় কথায় খেয়ালে হারালে চলবে না,আমি কাউকে সেকেন্ড চান্স সহজে দেই না,আপনাকে সেকেন্ড চান্স দিলাম,কাল থেকে রোজ সময়মতো ক্লাসে চলে আসবেন,আর হ্যাঁ গত দুদিনের নোটস কালেক্ট করে নিবেন,নাও সিট।

আঁখি আর কিছু না বলে বসে পড়লো,মন দিয়ে সমস্ত ক্লাস করলো,এদিকে আঁখি খেয়াল করতে পারলো আজকে সারাটাদিন ধরে সকালের ওই ধাক্কা খাওয়া মেয়েটা একটু পর পর ওর দিকে তাকাচ্ছে,যেনো অনেক কিছু বলতে চায় আঁখিকে বা জানতে চায় ওর থেকে অনেক কিছু কিন্তু কিছু একটা ভেবে তা না করতে বাধ্য হচ্ছে মেয়েটা, বিষয়টা আঁখির অনুমানে ধরা দিলো।
__________________

ভার্সিটি থেকে সোজা আঁখি কাজে আসলো,রাত ৯ টা বাজে,আজকে সকাল কাজটা শেষ হয়ে গেছে আঁখির,তবে বাড়ি যাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই ওর,সবাই চলে গেছে নিজেই অফিসের বাইরের বেঞ্চে বসে আছে,বাড়ি গিয়ে কি করবে,গেলেই বাড়ির মালিক টাকার জন্য আকঁড়ে ধরবে,কোথা থেকে আনবে আঁখি ৬ হাজার টাকা,ওর কাছে যে বর্তমানে ৬০০ টা টাকার বেশি এক টাকাও নেই,বেঞ্চে বসে বসে আপন মনে বলছে।

আল্লাহ কি করবো আমি? বাড়ি গেলেই তো বাড়ির মালিক তাড়িয়ে দেবে ঘর থেকে কোথা থেকে আনবো আমি ৬০০০ টাকা,তখনি কাঁধে কারো স্পর্শ অনুভব করে আঁখি,চোখ ফিরিয়ে তাকিয়ে দেখে রহিম চাচা এই অফিসের ক্লিনিং কর্মকর্তা।

আরে চাচা আপনি?

হ্যাঁ রে মা আমি,তোর টাকার দরকার না রে মা,আমি দেখছি তোকে স্যারের কাছে বার বার কিছু টাকা এডভান্স চাইতে, কি করবি রে মা বড়লোকেরা গরিবের অতি চাহিদা কখনো বুইঝা উঠবার পারে না,শুন আইজকা আমি একটা কাজ পাইছি বড় একটা রেস্টুরেন্টে আইজকা রাতের থালাবাসন ধোয়ার কাজ,একসাথেই ৩ হাজার টাকা দিবো তুই বরং আমার জায়গায় ওইখানে চইলা যা।

কিন্তু চাচা টাকাগুলা তো আপনারও দরকার।

তোর থাইকা বেশি না রে মা,এই অফিসে তুই একমাত্র কেউ যে এই বুইড়াটারে একটু সম্মানের চোখে দেখে,আইজকা এই টাকাগুলার দরকার আমার থাইকা তোর বেশি, আগে তুই গিয়া নিজের বাড়িভাড়া টা দিয়া লো।

ধন্যবাদ চাচা,আমি বেতন পেয়ে গেলে তোমার টাকাগুলো আগেই দিয়ে দিবো।

পাগলি মেয়ে আমার,তবে যা জলদি,এই নে ঠিকানাটা।

আঁখি গত দু’ঘন্টা ধরে বাসন কোসন ধোয়ার কাজে মগ্ন,এদিকে আয়ানও এসেছে সেখানে ওর সুন্দরী রমনীকে নিয়ে ডিনার করতে,হঠাৎ আয়ানের শার্টে খাবার পড়ে গেলে তা ক্লিন করতে ভিতরে আসে আয়ান,জামাটা ক্লিন করা হয়ে গেলে আয়ান বাইরের দিকে অগ্রসর হবে তখনি পাশের রুমের দিকে চোখ যায় আয়ানের,প্রায় রুমভর্তি বাসন একাই ক্লিন করছে আঁখি,ফর্সা হাতগুলো অতিরিক্ত বাসন ঘষার ফলে লাল বর্ন ধারন করেছে তাও ক্লান্ত হচ্ছে না আঁখি,আঁখির এমন অবস্থা দেখে কেনো যেনো হৃদয়খানা মোচড় দিয়ে উঠলো আয়ানের,ভিতরে প্রবেশ করেই আঁখির হাত খপ করে ধরে নিলো।তখন সেখানে আয়ানকে মোটেও আশা করে নি আঁখি তাই হতবাক দৃষ্টি আয়ানের উপর অটল রেখে বললো।

আপনি এখানে?

তুমি এখানে এসব কি করছো আঁখি?

দেখতেই তো পারছেন কি করছি,আমাকে আমার কাজ করতে দিন,ছাড়েন আমার হাত।
কথাটা বলে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে আঁখি আবার কাজ করতে নিলে আয়ান আবার ওর হাত ধরে নেয়।

তুমি এসব কাজ একদম করবে না আঁখি,দেখো নিজের হাতের কি হাল করেছো,এসব কাজ যে তোমায় মানায় না আঁখি,কি এমন দরকার পড়ে গেলো তোমার যে অবশেষে তোমায় এসব কাজ করতে হচ্ছে?আমি তো বলেছি তোমার টাকার প্রয়োজন হলে আমাকে বলতে আমি দিয়ে দিবো,কিন্তু না তুমি তা কেনো করবে,আমার থেকে টাকা নিলে তো তোমার আত্মসম্মানে ধরে আর এসব কাজ করলে আত্নসম্মানে ধরে না?

না ধরে না মি.আয়ান চৌধুরী,কারন কোনো কাজই ছোটো হয় না,কারো দয়ার তলে থেকে কোটি টাকা নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে কর্ম করে দু’টাকা রোজগারেই সম্মান আর শান্তি দুটাই পাওয়া যায়। জিনিসটা আপনার কাছে কোনো মেটার না করলেও আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

দেখো আঁখি এসব বড় কথা ফিল্মে স্যুট করে রিয়েল লাইফে না,লোক নিজের প্রোফিট দেখে আর তুমি না কি নিজের জেদ নিয়েই বসে আছো।

আমার যা ইচ্ছা তা নিয়েই বসে থাকবো আপনি এতে নাক না গলালেই খুশি হবো,প্লিজ যান এখান থেকে আপনি।

আয়ান এবারও কিছু বলবে এর আগেই সেখানে আগমন ঘটে মাহির।

আরে বেবি তুমি এখানে আর আমি তোমায় না জানি কোথায় কোথায় খুঁজছি।ইয়াক তুমি এমন জায়গায় কি করছো?আরে এখানে আমাদের আঁখি মনিও দেখছি আছে,আরে আঁখি তুই কিনা শেষমেষ এসব কাজে নিয়োগ হলি,হা হা হা,কি হলো এতো ভালো ভালো রেজাল্ট করে শেষমেষ এই থালাবাসনই মাঝতে হলো তোকে,হা হা হা হা,হয়েছে একদম পার্ফেক্ট, তোকে যে এসব কাজেই ভালো মানায় রে,তাই না আয়ান বেবি।

হোয়াই নট বেবি,এমন জেদি লোকদের উন্নতি যে কখনোই হয় না।

কথাটা বলে আয়ান আঁখিকে দেখিয়ে মাহির কোমর ধরে নিজের সাথে মিলিয়ে নিলো,মাহিও আয়ানকে আবেশে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে আর আয়ান মাহির কোমরে হাত দিয়ে,এদিকে দুজনই অধরের কোনে তাচ্ছিল্যের হাসি ঝুলিয়ে তাকিয়ে আছে আঁখির দিকে,আঁখি পারছে না নিজেকে সামলাতে,অনেক কষ্টে নিজের হাতদ্বয় মুঠো করে নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার সমস্থ চেষ্টা করলো আঁখি,কি করে পারবে নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে এভাবে চোখের সামনে অন্যের সাথে মেনে নিতে,আয়ানের মাহির কোমড় আঁকড়ে ধরার জায়গা থেকে যেনো চোখই সরছে না আঁখির,তাও ওদের সামনে নিজেকে দূর্বল পড়তে দিলো না আঁখি,কাটকাট কন্ঠে বললো।

প্লিজ আপনারা যান আমার অনেক কাজ আছে।

এমন জায়গায় কেই বা থাকবে,চলো আয়ান বেবি।

ইয়েস বেবি চলো।

দুজনই ডলতে ডলতে চলে গেলো,এদের এমন নোংরামি আর সইতে পারছে না আঁখি,চট করে আঁখির মাথা ঘুরে গেলো,সাইডের দেয়ালে ঠাস দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো,তারপর কোনোরকম নিজের ব্যাগ থেকে একটা ওষুধ বের করে খেয়ে নিয়ে কিছুক্ষণ চোখ বুঝে বসে রইলো আঁখি।

____________________

আদৃত আর নোমান ঘরে ঢুকতেই দাদিমার রুম থেকে ভাঙচুর আর চেঁচামেচির শব্দ কানে ভেসে এলো ওদের,দুজনই ছুঁটে গেলো সেদিকে।ইশানা চৌধুরী আর সায়েদা কোনোমতেই রাহেলা চৌধুরীকে সামলাতে সক্ষম হচ্ছেন না,সাথে কাজের লোকগুলোও ব্যার্থ।

না আমি খাবো না,আমার আরোহীকে এনে দাও,আমি আমার আরোহী ছাড়া কিছুই খাবো না,আমার আরোহীকে এনে দাও আমায়,আমি খাবো না।
আদৃত ছুঁটে গিয়ে দাদিজানকে ধরলো আর বললো।

তোমরা সবাই খাবার রেখে বাইরে যাও আমি দেখছি।

সবাই তাই করলো,প্রায় আধ ঘন্টা পর আদৃত রুম থেকে বেরুলো,সবাই রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে,আদৃত বেরুতেই ইশানা চৌধুরী জিজ্ঞেস করলেন।

মায়ের অবস্থা এখন কেমন আদৃত।

উনি এখন ঠিক আছেন,আমি ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি।

এবার ইশানা চৌধুরী কান্না করতে করতে বললেন।

আর কতো বাবা,কতো মায়ের এমন কষ্ট আমাদের দেখতে হবে,আরোহীকে ছাড়া মায়ের অবস্থা যে দিন দিন আরও অবনতির পথে যাচ্ছে।
এবার সায়েদা উৎসুখ হয়ে বলে উঠলো।

আমরা চাইলেই আরোহী আপুকে ফিরিয়ে আনতে পারি।

কথাটা শুনে সবাই সায়েদার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালেও, রক্তচক্ষু নিয়ে তাকায় আদৃত।

চলবে…………

#মন_পিঞ্জর
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_০৬

আয়ান ড্রাইব করছে, এদিকে পাশে বসে ফোন টিপছে মাহি, কানে ওর হেডফোন গুঁজা, আয়ান এবার ওকে ডাক দিলো,এদিকে উনার সুন্দরী রমনি গান শুনতে এতোটাই ব্যাস্ত যে উনার দিকে কোনো খেয়ালই নেই উনার,এবার আয়ান ওর এক কানের হেডফোন খুলে দিয়ে এক হাতে ড্রাইব করতে করতে বললো।

কি? তুমি গান শুনতে মগ্ন হয়ে আছো?আমরা দুজন একসাথে আঁছি,দুজন হাসি খুশি কতো কথাই তো বলতে পারি,সুন্দর একটা সময় পার করতে পারি,তা না করে তুমি ফোন টিপতে ব্যাস্ত।তোমার বন্ধুদের সাথে তো তুমি পরেও কথা বলে নিতে পারো।এছাড়া গান তো যেকোনো সময় শুনতে পারো।

কি কথা বলবো আর,এমনভাবে কতো ঘুড়েছিতো আমরা একসাথে তোমার এই গাড়িতে,এখন এই গাড়িটা আর ভালো লাগে না আমার,পুরাতন হয়ে গেছে এটা,তাই এতে বসে সুন্দর কথা মুখ দিয়েও বের হয় না,তুমি বরং আরও বেশি টাকা দিয়ে আরও একটা নতুন একটা দামী গাড়ি কিনে নিও তখন আমরা দুজন সেই গাড়িতে অনেক ঘুরবো আর অনেক গল্প করবো এখন আর কথা বলার মুড নেই আমার,আমি বরং আমার বন্ধুদের সাথে চেটিং করি,আর গান শুনি কেমন।

কথাগুলো বলে মাহি আবারও গান শুনতে শুনতে বন্ধুদের সাথে চেটিং এ ব্যাস্ত হয়ে পড়লো,মাহির এমন ব্যবহার কেমন জানি নিরাশ করলো আয়ানকে,মাহি হুট করেই বললো গাড়িটা পুরাতন হয়ে গেছে নতুন দামী গাড়ি কিনে দিতে,তবে কি সুন্দর মুহুর্ত অনুভব করার জন্য দামী আর নতুন জিনিসেরই আলাদা প্রয়োজন।গাড়িটা তো তেমন পুরাতনও না এই তো পাঁচ মাস আগেই কিনেছে আয়ান, আয়ানের মনে খনিকে আবারও ধরা দিলো আঁখির স্মৃতি, আঁখি যার বাবার কয়টা গাড়ি আছে তা হয়তো উনি নিজেও জানেন না,সে মেয়েটা নিজের সব আভিজাত্য ছেড়ে চলে এলো,আয়ানের অবস্থা কখনোই ভালো ছিলো না,লোকাল গাড়িতেই ছোটো থেকে চলাচল ওর,লোকাল গাড়িতে চড়ে একঘেয়ে হতে যেতো আয়ান,সবসময় ভাবতো টাকা হলে বড় একটা গাড়িই আগে কিনবে,কিন্তু আঁখি আসার পর লোকাল গাড়িকে নিয়ে ওর একঘেয়ে ভাব চলেই গিয়েছিলো,যখনি আঁখির সাথে বেরুতো তখনি হয়তো অটো নয়তো রিক্সা করে বেরুতো আয়ান,আর সে সফর আঁখি নিজের মন মাতানো সুন্দর কথাবার্তা, আর হাসি ঠাট্টায় ভরে দিতো,সবসময় আয়ানকে হাসাতে পছন্দ করতো আঁখি,ওকে নিয়েই যেনো আলাদা এক পৃথিবী গড়ে তুলেছিলো আঁখির,লোকাল গাড়ির সফরটাকেও যেনো প্রাইবেট গাড়ির সফর থেকেও মনোরঞ্জন মূলক বানিয়ে দিতো সে,মনে হতো যেনো আঁখি লোকাল গাড়িতে চড়েই বড় হয়েছে,কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো আয়ান ওর জীবনে আসার আগে লোকাল গাড়ির আশপাশ অব্দিও হয়তো আঁখি যায় নি কভু,এতো বড় ঘরের মেয়ে হয়েও আঁখি কতো সুন্দর করে আয়ানের ছোট্ট সংসারে নিজের বাসস্থান বানিয়ে নিয়েছিলো,সবাইকে একসাইউ করে আগে নিজের সব সময়টা আয়ানের নামেই লিখে দিতো,আয়ান প্রায় দুবছর আগে ভেবেছিলো যখন গাড়ি কিনবে তখন সবার আগে আঁখিকে নিয়ে বেড়াতে যাবে কিন্তু গাড়ি কিনার পর হয়তো আঁখির নামটাও একবার ভালো করে মনে পড়ে নি আয়ানের,ততোদিনে যে ওর সবকিছুতেই মাহির দখল হয়ে পড়েছিলো।মাহিকে নিয়েই সারাদিন ঘুরতে ব্যাস্ত থাকতো আয়ান।
না চাইতেও আয়ানের মনে এসব ভাবনা খেলা করতে শুরু করে,হঠাৎ ব্রেক কষে আয়ান।এতে বেশ বিরক্ত হয় মাহি,কানের হেডফোনটা খুলে আয়ানকে প্রশ্ন ছুঁড়ে।

কি হয়েছে আয়ান,গাড়ি থামালে কেনো?

দেখো না মাহি ওই সরু রাস্তাটা কতো সুন্দর,আর ফাঁকাও, আজকের আবহাওয়াটাও বেশ মনোমুগ্ধকর, চারিদিকে মন মাতানো হাওয়া বইছে,চলো না ওই রাস্তাটায় দুজন হাত ধরে কিছু সময় হাটবো অনেক ভালো লাগবে,চলো।
মাহি এবার তাচ্ছিল্যময় হাসি দিয়ে বললো।

কি আয়ান,দিন দিন তুমি বাচ্চা হয়ে যাচ্ছো মনে হয়,আমরা এখনও টিন এইজে রয়ে যাই নি যে রাস্তায় হাতে হাত ধরে হেটে দুলে দুলে হাওয়া খাবো,এতো রাতে রাস্তায় হাঁটবো কোন সুখে,তাছাড়া বাতাস বইছে এতে আমার ঠান্ডাও লাগতে পারে,আর বাতাসের সাথে ধুলোও আসাটাও স্বাভাবিক, ওতে আমাট শরীর নোংরা হবে না বুঝি?নো ওয়ে,আমার এগুলাতে কোনো ইন্টারেস্ট নেই।

কথাটা বলে মাহি আবার নিজের ধান্দায় মন দিলো,মাহির এমন ব্যবহার আবারও নিরাশ করলো আয়ানকে,আঁখি হলে মোটেও এমন করতো না,আয়ানেরও এমন কিছু ভালো লাগতো না আগে,কিন্তু আঁখির বড্ড ভালো লাগতো এমন মুহুর্তগুলো, সরু ফাঁকা রাস্তা,মন দোলানো বাতাস,আর সাথে আয়ানের হাত ধরে থাকা,ওর সাথে মন মাধুর্যে মোড়ানো সুন্দর দুটি কথা এগুলোই যেনো আঁখির জীবনের ভালোলাগার আর ভালোথাকার আলাদা উৎস ছিলো,আঁখির সাথে এমন মুহুর্ত কাটাতে কাটাতে এগুলাকে নিজের অনুভবেও ভরে নিয়েছিলো আয়ান।

________________

সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো সায়েদার দিকে,নোমান হতবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,আরোহী আপুকে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে মানে?তুই কি বলতে চাইছিস সায়েদা।

হ্যাঁ ভাইয়া আরোহী আপুকে ফিরিয়ে আনা যাবে,তুমি আজকে ভার্সিটিতে দেখো নি?আচ্ছা তোমাকে আলাদা করে দেখতে হবে না আমিই বলছি,ওই আসলে।

সায়েদা গো টু ইওর রুম।
সায়েদাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে আদৃত গম্ভীর কন্ঠে ওকে কথাটা বলে উঠলো।সায়েদা এবার আমতা আমতা করে বললো।

কিন্তু ভাইয়া,আমার কথাটা।

আমার কথা কানে যায় নি সায়েদা।

সায়েদা আর সেখানে দাঁড়ালো না,খনিক ভিতু অবস্থায় ছুঁটে গেলো সেখান থেকে।আদৃতও সবাইকে নিজের রুমে যাওয়ার কথা বলে নিজেও চলে গেলো। সবাই আরেকদফা হতবাক হলো এহেন কান্ডে,নোমান কিছু একটা আন্দাজ করে নিলো মনে মনে।

কাজ শেষ করে আঁখি ফিরছিলো বাড়িতে,আজ তিনহাজার টাকা উপার্জন করতে পেরে মুখে ফুঁটে আছে ওর এক রাজ্য জয় করা হাসি,হাঁটতে গিয়ে জুতো ছিঁড়ে গেছিলো তাই খালি পায়েই পিট পিট করে হাঁটছে,পাশেই ওর বাড়ি, রাত তখন প্রায় ১ টা বাজে,এদিকে আয়ানের গাড়িটার ডিজেল ফুরিয়ে গেছে তাই গাড়িতে ডিজেল ভরপুর করতে গাড়ি দাঁড় করালো,মাহি এখনও নিজের ফোন নিয়ে গুতাগুতি করতে ব্যাস্ত,আয়ান গাড়ি থেকে নেমে এমনি চারপাশে হাটাহাটি করছিলো,হঠাৎই আবার ওর নজর পরলো আঁখির দিকে,খালি পায়ে হেঁটে হেঁটে আসছে কোথাও থেকে,আয়ানকে দেখেও দেখতে চাইলো না পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে আয়ান ওর হাত খপ করে ধরে নিলো,আঁখিও থমকে দাঁড়ালো ওর এমন কান্ডে,তারপর মুখে বিরক্তি ভাব ফুঁটিয়ে বললো।
হাত ছাড়েন মি.আয়ান রাহমান,রাস্তাঘাটে এভাবে একটা মেয়ের হাত ধরতে লজ্জা করে না আপনার?

আয়ান ওর হাত না ছেঁড়েই বলতে লাগলো।

তুমি এমন আপনি আপনি করে কথা বলো কেনো আমার সাথে আঁখি,মানছি আমাদের স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক নেই তাই বলে কি বন্ধুত্বও শেষ হয়ে গেলো।আমরা তো ভালো বন্ধু হয়েও থাকতে পারি।এর আগে তো কখনো আপনি করে বলো নি তুমি আমায়।

আঁখি এবার তেজি স্বরেই বললো।

সবকিছুই তো আপনি নিজের মতো করে সাজালেন মি.রাহমান,নিজের ইচ্ছাতেই সব সম্পর্ক শুরু করলেন আর শেষও করে দিলেন,কোনো কিছুতেই আমার জোরটা চললো না,তাই বলে কি কোনো কিছুতেই আমি নিজের মতামতটা খাটাতে পারবো না,হ্যাঁ কখনো আপনার মতের সাথে দ্বিমত করতে চাইনি বলে এটা নয় যে আমার নিজস্ব কোনো চাহিদা,মতামত, কোনো আত্মসম্মান নেই,আপনার ইচ্ছে হলো আপনি ভালোবাসার সম্পর্ক, স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক ভেঙে দিলেন,আর এখন ইচ্ছে হচ্ছে বন্ধুত্বের সম্পর্ক রাখতে তাই এখন আমায় তা করতে বাধ্য করছেন,একটা কথা শুনে রাখেন মি.রাহমান,আমি আপনার খেলার পুতুল না,যে আপনি যেভাবে চাইলেন সেভাবেই নাচাতে থাকলেন আর আমিও নাচলামও,আপনি সব বন্ধন যখন ভেঙেই দিয়েছেন তবে এই বন্ধুত্বের সম্পর্কও রেখে কি লাভ,এটা না হয় আমিই ভাঙলাম,আজকের পর থেকে আপনার আর আমার কোনো সম্পর্ক নেই,প্লিজ আপনার এই তিক্ত চেহারা নিয়ে আর সামনে আসবেন না আমার, সত্যিই অনেক ঘৃণা হয় আপনাকে দেখে,ছাড়েন আমার হাত।

কথাটা বলে আঁখি নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলে আয়ান ছাড়লো না।

জেদ করো না আঁখি শুনো আমার কথা,এমন অসহায়ের মতো জীবন যাপন করে কতোদিন কাটাবে,তুমি এসবে বড় হও নি তাই এসব মেনে নেওয়াও তোমার পক্ষে সহজ হবে না,তোমার যা টাকা পয়সা লাগে আমি বলছি তো আমি দিবো,এভাবে রেস্টুরেন্টে কাজ করে,অভার নাইট কাজ করে,জুতা ছাড়া রাস্তায় হেঁটে তুমি তোমার স্ট্যাটাস বিগড়ে দিচ্ছো আঁখি।

যদি স্ট্যাটাসের মর্ম আমার কাছে সত্যিই থাকতো তাহলে হয়তো দুবছর আগে খান বংশ ছেড়ে ওভাবে চলে আসতাম না মি.রাহমান,খান বংশ ত্যাগ করে আসার সময় যে আঁখি স্ট্যাটাসের পড়োয়া করে নি সে আঁখি স্ট্যাটাস নিয়ে পড়ে থাকবে আপনি ভাবতে পারলেন কিভাবে আয়ান রাহমান?হয়তো আঁখি এসবে বড় হয় নি,তবে পরিস্থিতি মানুষকে অনেক কিছুই শিখিয়ে দেয়,আমাকেও পরিস্থিতি অনেক কিছুই শিখিয়েছে আর ভবিষ্যতেও শিখাবে আর তা আমিও শিখতে কখনো পিছপা হবো না,আপনি আমাকে নিয়ে চিন্তা করে নিজের মুল্যবান সময় নষ্ট করবেন না প্লিজ, যেতে দিন আমায়।

যেতে দিবে না তোমায় কি করবে তুমি?

ছাঁড়েন আমার হাত ভালো হবে না এই বলে দিলাম।

কি করবে তুমি ছাড়বো না আমি?

দেখেন আমার হাতে লাগছে ছাড়েন।

আঁখির হাতের অবস্থা এমনিতেই নাজেহাল বাসনগুলো মাজার ফলস্বরূপ, তার উপর শক্ত করে ধরে আছে আয়ান যার ফলে অনেক ব্যাথা লাগছে আঁখির হাতে।আঁখি বার বার বলছে ওকে ছেঁড়ে দিতে ওর হাতে ব্যাথা লাগছে কিন্তু কথাগুলো যেনো কানেই যাচ্ছে না আয়ানের,ওপর হাত দিয়েও আঁখি নিজেকে ছাড়াতে পারছে না যেহেতু ওই হাতেরও একই অবস্থা, অবশেষে আয়ান হুট করে আঁখির হাত ছেড়ে দিলো,যেহেতু আঁখি ওর সাথে জোড়াজুড়ি তে ছিলো তাই হুট করে হাত ছাঁড়ায় একটু দূরে ছিটলাকো আঁখি,আয়ানের হাতের ঘড়ির এককোন লেগে আঁখির হাত অনেকটা কেটে যায়, যাতে আঁখি ব্যাথায় একটু কুঁকড়ে উঠে,আয়ান প্রথমে রক্তচক্ষু নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলেও পরক্ষণেই যখন দেখতে পেলো আঁখি ব্যাথা পেয়েছে তখন কেনো যেনো একটু ব্যাথার্থ ভাব চলে এলো ওর মনে,আঁখির দিকে এগিয়ে যাবে তখনি আঁখি বলে উঠলো।

এগুবেন না আমার দিকে মি.রাহমান।

আঁখি তোমার হাতে লেগেছে।

আপনার আমার জন্য মিথ্যে সহানুভূতি দেখাতে হবে না মি.রাহমান।আমি নিজেকে ঠিকই সামলে নিবো।
কথাটা বলে ছুঁটে চলে গেলো আঁখি।

__________________

দেখ সায়েদা আমায় তুই সব খুলে বল,তখন কি বলছিলি তুই আরোহী আপুকে নিয়ে,বল?

আমি তো বলতে চাই ভাইয়া কিন্তু আদৃত ভাইয়া জানলে যে আমায় আসতো রাখবে না।

সেটা আমি দেখে নিবো,তুই শুধু সত্যটা বল আমায়।

আসলে ভাইয়া ওই।
আমি বলছি সত্যটা।

হঠাৎ সায়েদার রুমের দরজার ওপাশ থেকে গম্ভীর কন্ঠে বলা কথাটা শুনে দুজনেই তাকায় সেদিকে।সয়ং আদৃত দাঁড়িয়ে আছে সেখানে,এবার দৃঢ়তার সাথে আদৃত রুমে প্রবেশ করলো,তারপর আবার গাম্ভীর্যপূর্ণ কন্ঠে বললো।

সায়েদা বাইরে যাও আমার নোমানের সাথে কিছু কথা আছে।
সায়েদা আর কিছু না বলে আদৃতের কথামতো কাজ করলো,এবার আদৃত নোমানকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো।

আনাহিতা তাবাসসুম আঁখি,বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ফয়সাল খানের একমাত্র মেয়ে,ড.আয়ান রাহমানের প্রাক্তন স্ত্রী, আমাদের মেডিক্যাল কলেজের নতুন ছাত্রী,জীবনে বর্তমানে একাই স্ট্রাগল করছে।

বাট ভাইয়া সায়েদা তো আরোহী আপুর কথা বলছিলো আর তুমি এটা কোন আঁখির কথা বলছো।

সায়েদা যার কথা বলছে সে এই মেয়েটি,যার চোহারা দেখতে হুবহু আরোহীর মতো, আর তাই সায়েদা ওকে নিয়ে আজগুবি সব চিন্তা ভাবনা করছে।

বলো কি ভাইয়া,আরোহী আপুর প্রতিরুপ!এটা কি করে সম্ভব ভাইয়া।এরকম যদি সত্যিই হয়ে থাকে,তারমানে তো একটাই জিনিস দাঁড়ায় আরোহী আপুর সাথে ওই মেয়ের কোনো সম্পর্ক আছে নাহলে চেহারা মিলবে কি করে?

আরোহীর সাথে ওর কোনো সম্পর্ক নেই আয়ান,আঁখি নামক মেয়েটি ওর বংশের একমাত্র মেয়ে,তাই ওর সাথে আরোহীর কোনো সম্পর্ক হতেই পারে না,তুমি ওসব নিয়ে মাথা না ঘামালেও পারো নোমান।

কিন্তু ভাইয়া তুমি ওই মেয়েটার বিষয়ে এতোটা জানলে কোথা থেকে?

ওকে দেখার পর আমি লোক লাগিয়ে ওর খোঁজ নিয়েছিলাম।

তবে যদি সত্যিই মেয়েটার চেহারা আরোহী আপুর সাথে মিলে থাকে তবে তো এটা আমাদের জন্য ভালো খবর ভাইয়া, ওই মেয়েটাকে আনতে পারলো দাদিজান একদম আগের মতো হয়ে যাবেন।আমরা দাদিজানকে সুস্থ করে তুলতে পারবো।

নো ওয়ে নোমান,আমরা নিজেদের কাজ উদ্ধার করার জন্য কাউকে এভাবে ইউজ করতে পারি না,ওই মেয়ে এমনিতেই অনেক স্ট্রাগল করছে আর আমি চাই না ওর লাইফে আমাদের কারো জন্য কমপ্লিকেশনটা আরও বেড়ে যাক,আদৃত কখনো কাউকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করে নি আর করবেও না।

আমরা ওকে ব্যবহার কোথায় করছি ভাইয়া?তুমিই তো বললে ও এখন একা স্ট্রাগল করছে,তবে তো ওর সহায়তা প্রয়োজন,এভাবে মাথার উপর কোনো ছায়া ছাড়া কি করে সব কিছু মেনেজ করবে ও,তাই যদি ও আমাদের সাহায্য করে বদৌলতে ও নিজেও তো সহায়তা পাবে আমাদের কাছ থেকে,ওর সবকিছুতে আমরা ওকে হেল্প করবো,এটা করতে আমাদের প্রবলেম কোথায়?

এটা করতে আমাদের কোনো প্রবলেম নেই,কিন্তু কাউকেই আমি কখনো ইউজ করি নি আর করবোও না,আমাদের সাহায্য করার বদলে ওকে সাহায্য দেওয়া এটার একটাই মানে এসে দাঁড়ায়,ওকে অসহায় দেখে আমরা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করতে চলেছি,হয়তো টাকার জোর আছে বলে,কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছো,মেয়েটি এতো বড়লোক বাবার মেয়ে হয়েও কেনো স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ হওয়ার পরও নিজের বাবার কাছে ফিরে যায় নি,ফায়সাল খান ওকে এখনও ত্যাজ্য করেন নি,তাই ও চাইলে ওর বাবার কাছ থেকে সহজেই নিজের ভাগের সম্পত্তিটা চাইতে পারে,এতে আইন ওকে সাহায্য করবে,ওর ভাগের সম্পত্তির মুল্য কম করে হলেও এতোটা হবে যে ওই সম্পত্তির টাকা দিয়ে ও সারাজীবন শান্তিতে কাটিয়ে দিতে পারবে কিন্তু ও এমনটা করে নি,এমনকি ও যখন ভর্তি হয় তখন ওর নামের সাথে নিজের স্বামীর নাম লাগিয়েছিলো,কিন্তু তিনদিন আগে এসে অনেক কাকুতিমিনতি করে নিজের নাম থেকে রাহমান নামের ট্যাগটা সরিয়েছে,ডিবোর্সের প্রমাণপত্র কালকেই জমা দিয়েছে,এসব কথা একটা জিনিসই প্রমান করে নোমান যে মেয়েটা যথেষ্ট আত্মসম্মানি,নিজের আত্মসম্মানের লড়াই নিজেই করছে আর আমি কখনোই কারো আত্মসম্মান ভাঙতে পারি না নোমান,বিশেষ করে একটা মেয়ের,ও হতে পারে একটা মেয়ে তাই বলে এটা নয় যে বেঁচে থাকতে হলে ওকে কারো ছায়াতলে থাকতে হবে,একটা মেয়ে যদি কোনো জিনিস নিজের আত্মসম্মানে নিয়ে নেয় তবে তা পুর্ণ করেই ছাড়ে,তাই একটা মেয়েকে দূর্বল আর অসহায় ভাবা পুরোই অমান্যকর ও অযুক্তিক।
এ বিষয়টা নিয়ে আমি আর কোনো কথা বলতে চাই না নোমান,আমি যেনো এই বাড়িতে আর কখনো কারো মুখেই আঁখিকে নিয়ে কোনো চর্চা না শুনি, কথাটা মনে রেখো।

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here