#মন_পিঞ্জর,০৮,০৯
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_০৮
আয়ান রেডি হচ্ছে হাসপাতাল যাবে বলে,সকাল পুরো ১০ টা বাজে, এদিকে মাহি এখনও চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমুচ্ছে,সারাঘরের জিনিসপত্র বিখড়ানো,কোনো জিনিসই তার ঠিক জায়গায় রাখা নেই,আয়ান এদিকে ওর ওয়ালেট খুঁজে পাচ্ছে না,তাই এবার মাহিকে ডাক দিলো।
এই যে মাহি শুনছো?উঠো আমার ওয়ালেটটা কোথায় রেখেছো বলো?(লেখিকাঃআরোহী নুর)
মাহি ঘুমঘুম মাতালীয় কন্ঠে বললো।
নতুন চাকরানিই তো তোমার ঘর গোছায় ওকেই ডেকে জিজ্ঞেস করো আমাকে কেনো ডিসটার্ব করছো?ঘুমুতে দাও তো।
আয়ান এবার ভ্রযোগল কুঁচকে বললো।
চাকরানি ঘর গোছায় মানে? তুমি গোছাও না?
আয়ানের কথায় এবার মাহি শোয়া থেকে উঠে বসে বলতে লাগলো।
আমি ঘর গোছাবো কেনো?আমি কি ঘরের চাকরানি না কি?আর নিজের জিনিস নিজে ঠিক করে রাখতে পারো না?যত্তসব, শুধু শুধু সকাল সকাল আমার এতো দামী ঘুম নষ্ট করলে।
কথাটা বলে মাহি বিরক্তিকর ভঙ্গিতে ওয়াসরুমে ঢুকে গেলো,আয়ান হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে,আঁখি থাকতে যে এমনটা কখনোই হতো না,ঘরের সবকিছুই নিজেরদের অবস্থানেই বিরাজ করতো সবসময়,কোনো জিনিসই কখনো বিখড়ানো দেখতে পেতো না আয়ান,এমনকি নিজের কোনো জিনিস কখনো আয়ানকে খুঁজতেই হতো না,আঁখি যে আয়ানের সবকিছুরই খেয়াল আলাদা করে রাখতো।(লেখিকাঃআরোহী নুর)
__________________
আঁখি পৌঁছে গেলো ভার্সিটিতে, পিলুপিলু পায়ে হাঁটছে আর ভাবছে একটু আগে ঘটে যাওয়া মুহুর্তের কথা।
আদৃত স্যার হয়তো ক্ষেপে আছেন আমার উপর,আর ক্ষেপবেনই না কেনো আমি যে তখন উনাকে গনধোলাই খাওয়ানোর সব ব্যবস্থা করে নিয়েছিলাম,যদি ছেলেটা তখন সব না বলতো তবে আজকে আমার জন্য আদৃত স্যারের সাথে কি না কি………
ধুর এসব কি ভাবছি আমি,এসব কিছু হয় নি এটাই ভালো,যে করেই হোক আমার আদৃত স্যারের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
কথাটা ভাবতে ভাবতেই আঁখি হোঁচট খেয়ে পড়ে যায় নিচে,হাতের কনুইতে অনেক ব্যাথা পায় এতে ও,তখনি খেয়াল করে একটা বলিষ্ঠ হাত কেউ এগিয়ে দিয়েছে ওর দিকে,হয়তো ওর সাহায্য করার সুবিধার্তে,এদিকে লোকটার চেহারা দর্শন করার সুবিধার্তে চোখ তুলে তাকিয়ে আঁখি দেখতে পেলো লোকটা আর কেউ নয় সয়ং আদৃত।
এভাবে শুকনো মাটিতে হোঁচট খেলে তো চলবে না মিস আঁখি,নিজের পায়ে দাঁড়াতে গেলে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা যে কমাতে হবে আপনাকে,হাত ধরে উঠে আসুন,আর সামনে থেকে হাঁটতে গেলে পড়ার দিক টা খেয়াল রেখে হাঁটবেন আশা করছি।(লেখিকাঃআরোহী নুর)
পড়ে গেলেই তো আবার উঠে দাঁড়ানোর শক্তিটা আসে আদৃত স্যার,হয়তো সে শক্তিটা সবার মধ্যে থাকে না সবাই অন্যের হাত ধরেই উঠে যেতে চায় তবে আঁখি যে সে গোত্রের মেয়ে নয়,পড়ে গেলেও যে আঁখি নিজে থেকে উঠতে জানে আদৃত স্যার।কারে উপরই নির্ভর করার মেয়ে আঁখি নয়।
কথাটা বলে আঁখি নিজে থেকেই উঠে গেলো।এবার আদৃত ঠোঁটের কোনো একটা আলতো হাসি টেনে বললো।
আই লাইক ইওর এটিটিউড মিস আঁখি,ধরে রাখবেন এটাকে জীবনে কাজে দিবে।
কথাটা বলে আদৃত দৃঢ় কদমে স্থান ত্যাগ করলো,এদিকে আঁখি ঢুকতে পারলো না ওর কথার মারপ্যাচে।
স্যার এই কেমন এটিটিউড দেখিয়ে গেলো আমায়?কথার ধরন দ্বারা তো কিছুই বুঝলাম না লোকটা আসলে কি চায়, আমাকে ভালো জ্ঞান দিলো না ধিক্কার করলো,রাস্তায় যে কান্ড আমি ঘটিয়েছি তারপর আমাকে নিয়ে লোকটা ভালো কি করেই বা ভাবতে পারে,আর আমিও এমন, এখনও সরিটা বলি নি,উল্টো উনার সাথে কথার ম্যারপ্যাচে পড়ে গেছিলাম।
আয়ান বেডে বসে জুতো পড়ছিলো তখনি ওয়াসরুম থেকে বেড়িয়ে আসে মাহি।
মাহি তুমি বেড়িয়েছো প্লিজ এক কাপ কফি করে দেবে।
হোয়াট!আয়ান বেবি,এটা কি বলছো তুমি? আমি কেনো কফি খাওয়াবো তোমায়?চাকরানিকে বলো।
রোজ কাজের লোকের হাতে কফি খেতে ভালো লাগে না কি?তুমিও তো পারো দিনে একবার এককাপ কফি করে খাওয়াতে আমায়।
কি যে বলো আয়ান,আমি কফি কেনো বানাতে যাবো?আমি কখনো নিজের জন্যই বানাইনি আর তোমার জন্য বানাবো,হা হা হা,এসব সো কোন্ড পার্সোনালিটি কোথা থেকে বানিয়েছো তুমি? বউয়ের হাতে আলাদা করে কফি খাওয়ার আবদার করো,সত্যিই হাস্যকর,হা হা হা,তুমি বরং ওই নতুন চাকরানির হাতেই কফি খাও আমাকে ভার্সিটিতে যেতে হবে,বিয়ের চক্করে ভার্সিটিতে অনেক ক্লাস মিস করেছি আর করা যাবে না।(লেখিকাঃআরোহী নুর)
তারপর মাহি রেডি হয়ে আয়ানের দিকে এগিয়ে এসে ওর গালে নিজের অধর ছুঁইয়ে দিয়ে বললো।
আই লাভ ইউ বেবি ,বাই।
মাহি চলে গেলো,আয়ান নিরাশাময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মাহির পানে।
ক্লাসে বসে আঁছে আঁখি,আদৃত ক্লাস করাচ্ছে এদিকে আঁখির মনে বার বার ঘুরপাক খাচ্ছে সকালের সেই ঘটনা,আদৃতকে সরি না বলা অব্দি যে শান্তি হবে না এই রমনির মন।এদিকে আঁখির খেয়াল বেধ করে আদৃতের গম্ভীর কন্ঠের বানী এসে আঁখির শ্রবন অঙ্গে নাড়া দিলো।
এই যে মিস আঁখি,প্লিজ কাম এন্ড সল্ভ দিস কুয়েশ্চন।
স্যারতো স্বাভাবিক আচরনই করছেন আমার সাথে,আর আমি উনার আচরনে শুধু খোঁট খুঁজে বার করছি,কিন্তু উনার মতো এতো গম্ভীর আর রাগি মানুষ এমন কিছু হয়ে যাওয়ার পর কি করে কাউকে সহজে ছেড়ে দিতে পারে।
মিস আঁখি আমি আপনাকে প্রথমেই বলেছিলাম খামখেয়ালিপণা ভালো স্টুডেন্টের কাছ থেকে শোভা পায় না,আপনার এই বদঅভ্যেস যতো তাড়াতাড়ি পারেন মায়নাস করবেন,এখন জলদি করে এসে এটা সল্ভ করে দিয়ে যান।
ওকে স্যার।
আঁখি এবার এগিয়ে আসলো,আদৃত আঁখিকে একটা কাজ দিলো যা ওকে সবাইকে সল্ভ করে দেখাতে হবে,আঁখি আদৃতের একদম পাশে দাঁড়িয়ে আছে,এবার আদৃত সামনে তাকানো অবস্থায়ই ধীর আর গম্ভীর কন্ঠে বললো।
হয়তো আপনি এটাই ভাবছেন সকালের কান্ডের পরও আমি আপনার সাথে নরমাল বিহেব কেনো করছি,তবে শুনেন মিস আঁখি,ড.আদৃত চৌধুরী কখনো নিজের প্রফেশনাল আর পার্সোনাল লাইফ একসাথে রাখে না,রাস্তার কান্ড তো সেই রাস্তায়ই শেষ হয়ে গেছে সেটা ক্লাসরুমে টেনে এনে নিজের ছাত্রীকে অপদস্ত করার লোক আদৃত নয়,তাই মনে মনে খামখেয়ালি চক্র বোনা ছেড়ে দিয়ে নিজের স্টাডিতে মন দিন,নাও সল্ভ দিস কুয়েশ্চন।
ধুর লোকটাকে নিয়ে আমি অলটাইম আবোলতাবোল ভাবি,তবে সঠিক ভাববোও কেমনে লোকটার ভাবভঙ্গি দেখে এর সঠিক ব্যাক্তিত্ব যে ধরাই যায় না,একে দেখলেই মনে হয় রহস্যের মায়াজাল,কথাবার্তাও ঠিক তেমন।(লেখিকাঃআরোহী নুর)
__________________
কাজ শেষে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরেছে আয়ান,এসেই বেডে চিৎ হয়ে পড়েছে,আজকে অনেক এমারজেন্সি ছিলো হাসপাতালে, এদিকে আয়ান এসেছে দেখেও মাহির কোনো হেলদোল নেই,ফোন নিয়ে গুতাগুতি করছে,আয়ান এবার কন্ঠে অলসতা ভাব টাঙিয়ে বললো।
এক গ্লাস পানি দিবে মাহি?
হাতের কাছেই তো পানি রাখা আছে উঠে খেয়ে নাও,আমাকে কেনো বলছো?
ফোন টিপতে মগ্ন অবস্থায় জবাবটা দিলো মাহি,আয়ানের দিকে তাকালোই না,আয়ান নিরাশ হয়ে নিজেই পানি খেয়ে নিয়ে ফ্রেস হতে চলে গেলো,প্রায় অনেকক্ষন পর ফ্রেস হয়ে এসে দেখলো মাহি এখনও ফোন টিপছে,এবার অনেকটা রাগ কাজ করতে শুরু করলো আয়ানের মস্তিষ্কে,তাই খনিক তেঁজি কন্ঠে বললো।
এটা কেমন ব্যবহার মাহি,সারাদিনে এসেছি আর তুমি ভালো করে তাকাচ্ছোও না,সারাদিন ফোন নিয়ে পড়ে থাকলে হয় না কি?
তো কি করবো আয়ান,তোমার দিকে এখন আলাদা করে তাকানোর কি আছে,যেমন তোমাকে আর দেখি নি আমি,কাজ থেকে এসেছো আমিওতো দেখছি তাই বলে কি সব কিছু ছেঁড়ে তোমার কোলে গিয়ে বসে থাকবো,পৃথিবীতে আমার জন্য তুমি একা না আরও অনেক লোক আছে আমার জীবনে যারা আমার জন্য ইমপোর্টেন্ট, বুঝেছো।
কথাগুলো বলে আবারও ফোন নিয়েই ব্যাস্ত হয়ে পড়লো মাহি।
আয়ান আর কিছুই বললো না মাহিকে, বিনাবাক্যেই ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো,এদিকে আয়ানের এভাবে চলে যাওয়া কোনো প্রভাব ফেললো না মাহির মনে,নিজের ফোন গুতাগুতিতেই ব্যাস্ত রমনি।
_________________
সরু রাস্তায় পিলুপিলু পায়ে হাঁটছে আঁখি, মাথায় এক রাশ চিন্তা, কালকে যে বাড়ির মালিকের আরও তিন হাজারখানা টাকা দিতে হবে,তবে তার এখনও কোনো ব্যাবস্থা যে করতে সমর্থ্য হয় নি আঁখি,চারিদিকেই দখিনা হাওয়ার মুগ্ধতা ছড়িয়ে আছে,হাওয়াটা যে এই চাঁদনি রাতের শোভা আরও বাড়িয়ে তুলছে,প্রকৃতি যে সত্যিই মায়াজালে আবদ্ধ, প্রকৃতির মায়ায় ভুলে না যাওয়ার মতো কষ্ট যেনো এই পৃথিবীতেই নেই আঁখির জন্য,আঁখি জীবন সংগ্রামের শক্তি যেনো এই প্রকৃতি থেকেই পেয়ে থাকে,জীবনে সবার সঙ্গ ছুঁটে গেলেও প্রকৃতির সাথে সখ্যতা সেই ছোটবেলা থেকেই আঁখির, যা কখনো ছুঁটে নি আর ছুঁটবেও না,প্রকৃতির এই সৌন্দর্যই যে আঁখির হাজার কষ্টের পরেও আলতো ভালোথাকার কারন,ছোটবেলা থেকেই আঁখির দখিনা হাওয়ায় দোলরত সরু রাস্তা পছন্দ, যেখানে হাওয়াতে দুলবে চারপাশের সবকিছু আর আকাশের রহস্যময়ী ওই চাঁদটা নিজের চাঁদনিতে ভরিয়ে দেবে ধরনী,আজকের রাতটাও ঠিক তেমনই,তাই আপন মনে হাঁটছিলো আঁখি,তবে মন পিঞ্জরের এক কোনে একটা খালিলাগা হাত নাড়া দিয়ে উঠছে আর সেটা হলো আয়ানের অনুপস্থিতি,যদি আয়ানের হাত ধরে চাঁদনি রাতে হাঁটার দিনগুলো আবার ফিরে আসতো তবে কি খুব বড় ক্ষতি হয়ে যেতো,আঁখির ভাবনায় বার বার নাড়া দিয়ে উঠছে কথাটা,হঠাৎ আঁখির নজর গেলো একটা ছোট্ট ঝিলের পাশে বসে থাকা এক যুবকের দিকে,চাঁদনি ভরা রাতে যুবকের চেহারার দ্বিধার করতে মোটেও অসুবিধা হলো না আঁখির,যুবকটাকে যে আঁখি চেনে,এ যে আর কেউ নয় সয়ং ড.আদৃত,আঁখি উনাকে দেখে খনিক হতবাক হলো,তারপর কিছু একটা ভেবে উনার ঠিক পাশে গিয়ে বসলো।(লেখিকাঃআরোহী নুর)
ঝিলের জলে খুব সুন্দর একটা পদ্ম ফুঁটেছে,সদ্য ফোঁটা ওই ফুলটাকে যে নিজের প্রিয়তমার মতোই মনে হলো আদৃতের,আর নিজেকে আকাশের মতো,পানিতে তাকালে মনে হচ্ছে যেনো ওই পদ্মফুলটার স্থান ওই আকাশেরই বুকে,কিন্তু সেটা যে শুধুই একটা কল্পনা মাত্র,ওই পদ্ম যে আকাশের থেকে অনেক দূরে, আকাশ চাইলেও হাত বাড়িয়ে তাকে নিজের বুকে টেনে নিতে ব্যার্থ।
আনমনের এসব ব্যাথার্থ ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে আদৃত অনুমান করতে পারলো পাশেই কারো উপস্থিতি, চোখ ঘুড়িয়ে দেখতে পেলো চেনা একটি চেহারা ,তারপর আদৃত আবারও স্বাভাবিকভাবে ঝিলের জলে তাকাতে ব্যাস্ত হয়ে গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো।
তুমি এখানে?
আঁখিও জলের পানে তাকানো অবস্থায় উত্তর দিলো।
আমারও একই প্রশ্ন আপনি এখানে?একাকিত্ব সময় কাটাতে এসেছেন বুঝি?
যার জীবনে একাকিত্বটাই আসল তাকে একা সময় কাটানোর জন্য আলাদা করে কোথায় যেতে হয় না মিস আঁখি।
কথাটা বলার পর আদৃত আর কিছু বললো না,আঁখিও চুপ করে বসে ঝিলের জলের সৌন্দর্য দ্বিধার করছে,দুজনের মধ্যে কিছুক্ষণ পিন পিন নিরবতা কাজ করার পড় নিরবতা কাটিয়ে আঁখি বলে উঠলো।(লেখিকাঃআরোহী নুর)
আজকের সকালের জন্য আমি সত্যিই অনেক দুঃখীত স্যার,আসলে আমি তখন বুঝতে পারি নি যে ওটা শুধুই একটা এক্সিডেন্ট ছিলো,জানেনই তো আজকালকার লোকেরা কেমন, ইচ্ছে করেই গরীবকে আঘাত করতে চায়,তাই আমি ভেবেছিলাম আপনিও।
আপনি ভেবেছিলেন আমিও ওই দলের একজন তাই না?
আঁখির দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো এবার আদৃত,আঁখি অনুশোচনায় চোখ মিলাতে ব্যার্থ হলো আদৃতের সাথে।
আদৃত এবার বলে উঠলো।
ইট’স ফাইন মিস আঁখি,চোখের ধোকাটা হওয়া স্বাভাবিক, চোখ তো অনেক কিছুই দেখে তাই বলে কিছু যাচাই না করে তাতে বিশ্বাস করা আদোও বুদ্ধিমানের কাজ হয় না,আজকে আপনার চোখ আপনাকে যা দেখিয়েছে আপনি সে অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া করেছেন,আপনার প্রতিবাদী ব্যাক্তিত্বটা ভালোই,আজকাল সবার মাঝে তা খোঁজে পাওয়া যায় না,তবে হ্যাঁ নিজের চোখের দেখা কথায় বিশ্বাস করার আগে তা যাচাই করে নিবেন প্লিজ।তা না হলে কোনোদিন কোনো ভালো মানুষ আপনার জন্য পাগলাগারদে ভর্তি থাকবে।
কথাটা শুনে আলতো একটা হাসি দেয় আঁখি,আদৃত নিজের গাম্ভীর্য ভাবে সমাপ্তি ঘটাতে নারায,একই ভঙ্গিতে জলের দিকে তাকাতে ব্যাস্ত হলো আবারও।আঁখিও জলে ধ্যান ব্যাক্ত করলো,হঠাৎ একটা কিছু জানার কৌতুহল ধরা দিলো আঁখি মনে,তাই জলের দিকে নয়ন ব্যাক্ত করে হঠাৎ আঁখি মনের অজান্তেই বলে উঠলো।
আপনাকেও একাকিত্ব কষ্ট দেয় তাই না স্যার?হয়তো জীবন আপনার কাছ থেকেও অনেক কিছু কেঁড়ে নিয়েছে?
কথাটা শুনে আদৃতের মন পিঞ্জর হঠাৎ খচ করে উঠলো সাথে সাথে উঠে দাঁড়ালো,আর বললো।
অনেক রাত হয়েছে মিস আঁখি আমাদের এবার যার যার বাড়ি যাওয়াই ভালো,চলে আসেন।
আঁখিও আর কিছু বললো না,উঠে যেতে নিবে তখনি ব্যালেন্স বিগড়ে যাওয়া থেকে আঁখি পড়ে যেতে নিলে আদৃত নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেয় ওকে।
আয়ানের মনটা যে আজ বড্ড বাঁধনহাড়া হয়ে গেছে,না চাইতেও আঁখির স্মৃতি বার বার তাড়া করে বেড়াচ্ছে আজ ওকে,জীবনে সবকিছুই যে পেয়ে গেছে আয়ান তবে মনের কোনে কিছু হারানোর অনুভুতিটাও উকি দিতে শুরু করেছে,আয়ান বুঝে উঠতে পারছে না জিনিসটা আদোও কি,তবে যে এই আচম্কা অনুভুতি অনেক পিড়া দান করছে আয়ানের মনে,নিজের মন পিঞ্জরখানা খনিক শান্ত করার টানে প্রকৃতির মায়ায় পড়তে চাইলো আয়ান,তখন ঘর থেকে বেড়িয়ে আপন মনে ড্রাইব করতে শুরু করেছিলো আয়ান,হঠাৎই নজর গেলো সরু এই রাস্তাটার দিকে,আঁখির হাত ধরে এমন রাস্তায় যে অনেক হেঁটেছে আয়ান,হয়তো আঁখির স্মৃতিতেই সেই রাস্তায় আজ আবারও হাঁটতে মন চাইলে আয়ানের,কিন্তু মন শান্ত করার টানে মনের ঝড়ের বেগ আরও বেড়ে যেতে নিবে তা যে জানা ছিলো না ওর,চোখের সামনেই আঁখিকে বাহুডোরে আবদ্ধ করে আছে অন্য পুরুষ,দৃশ্যটা যেনো খনিকে আগুন ধরালো আয়ানের মনে,জানে না কেনো কিন্তু মনে যে আয়ানের ঝড় উটলো নিমিষেই,(লেখিকাঃআরোহী নুর)
চাঁদের আলোয় আঁখির মুখখানা দেখে খনিকের জন্য আঁখিতেই নিজের প্রিয়সীর ছবি অনুভব করে নিয়েছিলো আদৃত,তাই অপলকে কিছুসময় তাকিয়ে রইলো ওর পানে,এদিকে আঁখি এতে অনেক অস্বাভাবিক হয়ে পড়লো।নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো আঁখি, তারপর দুজনই স্বাভাবিক হয়ে যেতে নিলে দুজনেরই চোখ পড়লো ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকের উপর।
চলবে……….
#মন_পিঞ্জর
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_০৯
আঁখি আয়ানকে দেখে কিছুই বললো না,ওকে দেখেও যথারীতি না দেখার ভান করে যেতে নিলো আঁখি,আয়ান তৎক্ষনাৎ চট করে আঁখির হাত ধরে নিলো।
কি অসভ্যতা করছেন আপনি হাত ছাড়েন আমার?
আমি হাতে ধরলে সমস্যা,আর আধা রাতে অন্য পুরুষের সাথে জড়াজড়ি করতে সমস্যা হয় না বুঝি তোমার?
কথাটা শুনে আদৃতের বেশ খারাপ লাগলো,শক্ত কন্ঠে বললো এবার।
এটা কোন ধরনের ব্যবহার করছেন আপনি,একটা মেয়ের সাথে এভাবে কথা বলার কোনো অধিকার নেই আপনার।
আপনি কোন অধিকারে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কথা বলেন ড.আদৃত চৌধুরী?
কথাটা শুনে আদৃত কিছু বলবে এর আগেই আঁখি টান দিয়ে আয়ানের কাছ থেকে নিজের হাত ছাঁড়িয়ে নিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলতে শুরু করে।
আর ইউ সিরিয়াস মি.আয়ান রাহমান?স্বামী স্ত্রী? লজ্জা করে না আপনার এমনটা বলতে?ভুলে গেছেন না কি ডিভোর্স পেপার আপনিই নিয়ে এসেছিলেন,আর সেটাতে আমাদের দুজনেরই সাইন করা শেষ, তবে তারপরও এমন কথা বলতে আপনার মুখ কাঁপলো না,ঘরে বউ রেখে অন্য মেয়েকে নিজের স্ত্রী দাবি করতে লজ্জা করলো না।
হ্যাঁ ডিভোর্স হয়েছে তাই বলে তুমি লাইসেন্স পেয়ে যাও নি অন্য ছেলের সাথে নোংরামি করার,আমিও তো বলি একা একা কি করে সব চালিয়ে নেয়,এখন দেখি সব চালিয়ে নেওয়ার জন্য মালদ্বার সঙ্গিও করে নিয়েছো।
আয়ানের কথাটা কর্নপাত হতেই আদৃতের মাথায় আগুন ধরে যায়,হাত তুলেই আয়ানের নাক বরাবর একটা ঘুষি বসিয়ে দেয় এতে আয়ান ছিটকে পড়ে রাস্তায়,আদৃত গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে।
যে পুরুষ মেয়েদের সম্মান করতে জানে না সে পুরুষ নামে কাপুরুষ হয়।
আয়ান আরও চটকে যায় এবার,নাক দিয়ে ওর খনিক রক্ত ঝরতে শুরু হয়,নাক মুঁছে আদৃতের দিকে তেঁড়ে আসে কিছু কথা বলতে বলতে।
তুই আমাকে পুরুষত্ব শিখাবি,আজকে দেখে নেবো কার গায়ে কতো জোর।
কথাটা বলে আয়ান আদৃতের গায়ে হাত তুলবে এর আগেই আদৃতের ঠিক সামনে ঢালরুপে এসে খাঁড়া হয় আঁখি,আয়ান রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে, অতিরিক্ত রাগে ঘন ঘন নিশ্বাস ছাঁড়ছে,আঁখি এবার আবারও ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠলো।
যথেষ্ট হয়েছে মি.আয়ান রাহমান আর না,অনেক দেখিয়ে দিয়েছেন আপনি আপনার পুরুষত্ব আর না,আমার পোঁড়া কপাল ছিলো যে আমি আপনার মতো পুরুষের প্রেমে পড়েছিলাম,আপনার মতো পুরুষকে ভালোবাসার চেয়ে সারাজীবন একা কাটানোই টা ভালো হতো আমার জন্য,সত্যিই আজকে নিজের উপরই আমার অনেক লজ্জা হয় যে আমি আপনার মতো একটা লোককে কখনো ভালোবেসেছিলাম,ছি।আর আপনার থেকে আর বেশি কিছু কি করে আশা করা যেতে পারে, যে যেরকম অন্যকেও সেরকমই ভাববে,আমার ভেবে একটুও আশ্চর্য হচ্ছে না যে আপনার চিন্তা ধারা এতোটা নিচ ,ছি।চলে যান আমার সামনে থেকে,চলে যান বলছি।
আয়ান আর দাঁড়ালো না সেখানে রক্তচক্ষু নিয়ে আদৃতের দিকে তাকাতে তাকাতে স্থান ত্যাগ করলো,তখনি আঁখির হঠাৎ আবার মাথা ঘুড়িয়ে গেলো পড়ে যেতে নিলে আদৃত ওকে ধরে নিলো,আঁখি জ্ঞান হাঁড়িয়েই গেলো সাথে সাথে।
এদিকে আয়ান গাড়ি ছুঁটাচ্ছে হাওয়ার বেগে, আঁখি আর আদৃতের সেই ক্ষণের সেই মুহুর্তের ছবি সরছে না ওর চোখের সামনে থেকে,এদিকে আঁখির বলা প্রতিটা কথা বার বার শ্রবন ইন্দ্রিয়তে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত,কথাগুলো যেনো আয়ানের বুকে গিয়ে ছুঁড়ির মতো ঢুকে পড়েছে,কোনোমতেই কথাগুলো ভুলতে সক্ষম হতে পারছে না আয়ান,মেজাজটা বিগড়ে আছে পুরো,চোখদুটোর লাল বর্ন ভাব যেনো যেতেই চাচ্ছে না ওর,হঠাৎই গাড়িতে ব্রেক কষলো আয়ান,নেমে গেলো গাড়ি থেকে,তারপর অতি রাগে গাড়ির গ্লাসে সজোরে একটা ঘুষি মারলো যাতে গ্লাস ফেটে অনেকগুলো কাচ ওর হাতে ঢুকে গেলো,হাত বেয়ে রক্ত ঝরছে,কিন্তু সেদিকে যেনো কোনো খেয়ালই নেই আয়ানের,মাথায় এখনও চড়ে বসে আছে আঁখি।
_________________
আলতো করে চোখ খুললো আঁখি,নিজেকে একটা আলিশান রুমে আবিষ্কার করলো,আশেপাশে কাউকেই দেখতে পেলো না,আঁখি বুঝে উঠতে পারছে না আঁখি এ কোথায় এসেছে ও?বেড থেকে নেমে গিয়ে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে হাঁটতে লাগলো,হঠাৎই নজর গেলো রুমের সাথে সংযুক্ত করা বিশাল এক বারান্দার দিকে,আঁখি উকি দিলো সেদিকে, দেখলো বারান্দার এক কোনে দাঁড়িয়ে আছে আদৃত,এদিকে নিজের রুমে কারো নড়াচড়া অনুভব করতে পেলো আদৃত তাই পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো আঁখি দাঁড়িয়ে আছে,মুখে ওর অনেক প্রশ্নের ছাঁপ স্পষ্ট বুঝতে পারলো আদৃত,এগিয়ে এলো আঁখির পানে,এসে প্রায় দৃঢ় কন্ঠেই বললো।
আপনি কখন উঠলেন মিস আঁখি।
আমি কখন উঠেছি এটা জেনে লাভ কি আপনার?আপনি এটা বলেন আমি এখানে কি করে আসলাম?
আস্তে করে কথা বলেন,আসলে আপনি তখন অজ্ঞান হয়ে গেছিলেন তাই আমি আপনাকে এখানে নিয়ে এসেছি।
আপনি নিয়ে এসেছেন মানে,আপনি কি করে আনলেন আমায়?
আপনার তো পাখা নেই আর থাকলেও অজ্ঞান অবস্থায় তো আর উড়তে পারতেন না তাই আপনাকে প্রথমে গাড়িতে তারপর কোলে করে এনেছি।
হোয়াট আপনি আমাকে কোলে নিয়েছিলেন,একটা মেয়ের অনুমতি ছাঁড়া আপনি তাকে কোলে কি করে নিতে পারেন?
তবে কি তখন আপনাকে জাগিয়ে জিজ্ঞেস করতাম যে,এই যে মিস আঁখি আমি আপনাকে কোলে নিবো কি না?
হ্যাঁ তাই করতেন?আপনি আমাকে জাগাতে পারতেন,জাগলে তো আমি নিজে থেকে বাড়ি চলে যেতাম,এখানে কেনো আনলেন আপনি আমাকে?পাশেই তো ঝিল ছিলো ওখান থেকে পানি এনে আমাকে জাগিয়ে তুলতেন।
দেখেন এটা কোনো সিনেমা না যে একজন অজ্ঞান হলো আর অপরজন পানি ছিটা দিয়ে তার জ্ঞান ফিরালো, আমি একজন ডাক্তার তাই চেক আপ না করে রোগীর জ্ঞান পানি দিয়ে বা অন্য কিছু করে ফিরাবো না,কারন অনেকসময় সাথে সাথে জ্ঞান ফিরানো ঠিক হয় না।
ও আমার আল্লাহ, এ কোন গুনি ডাক্তারের পাল্লায় ফেললেন আপনি আমায়?ওকে ঠিক আছে ফাইন,যা হবার হয়ে গেছে আর কখনো কোনো মেয়েকে না বলে কোলে নিবেন না,ওকে এবার আমি চলি।
আরে আরে চলি মানে,দাঁড়ান ওখানে।
আঁখি চট করে দরজা খুলে যেতে গেলে আদৃত ওকে আটকায়,আঁখি হতবাক হয় ওর এহেন কান্ডে। ভ্রুযোগল কুঁচকে এবার জিজ্ঞেস করে।
কি হয়েছে আমাকে যেতে দিচ্ছেন না কেনো?
আমি আপনাকে যেতে দেবো না কেনো?অবশ্যই আপনি চলে যাবেন তবে লুকিয়ে,এভাবে যাওয়া শুরু করলে যে কেউ আপনাকে দেখে ফেলবে।
তো দেখে ফেললে কি?আপনি কি এ ঘরে চুরি করতে এসেছেন যে ভয় পাচ্ছেন?
আমি নিজের ঘরে চুরি করতে আসবো কেনো?
এটাই তো বলতে চাইছি আমি আপনি নিজের ঘরে ভয় কেনো পাচ্ছেন?আপনি আমাকে এখানে কেনো এনেছেন সবাইকে বললে সবাই বিশ্বাস করবে না বুঝি?
করবে,কিন্তু আপনাকে দেখলে ক্যাল্যাঙ্কারিও হবে।
আমাকে দেখলে ক্যাল্যাঙ্কারি হবে কেনো?
ইশ আপনি এতো কথা বলেন কেনো বলেন তো?চুপ থাকেন আর কথা বললে আসতে বলেন।আপনার তো বাড়ি গেলেই হবে তাই না।এতো কিছু জিজ্ঞেস করার কি আছে এখানে।
এতো ক্ষেপছেন কেনো?আপনার কথার কোনো আগাগুঁড়া বুঝতে পারি না আমি তাই বার বার প্রশ্ন করি,ওকে আর করবো না এবার চলেন।
ধন্যবাদ আপনাকে,এবার চলেন,আর হ্যাঁ আমার সাথে আসেন আর শব্দ করবেন না।
তারপর দুজন ধিমি পায়ে বাইরে চলে গেলো,এদিকে সবার চোখ ফাঁকি দিতে পারলেও একজনের চোখ ফাঁকি দিতে পারলো না আদৃত আঁখি,আর সে আর কেউ নয় সায়েদা।
ওর বড় বড় চশমার আড়াল থেকে সব স্পষ্ট দেখতে পেলো।
আরে এই তো সেই আঁখি আরোহী আপুর প্রতিরুপ,ভাইয়াতো এর কথাও ঘরে বলতে চান না,আর এদিকে মাঝ রাতে ওকে ঘর ঘুরে দেখাচ্ছেন,না এটা তো মোটেও ভালো ঠেকছে না আমার কাছে,ব্যাপারটা কি?আমি ওর কথাও বললে সমস্যা আর নিজে ওকে ঘরে আনলে সমস্যা না,ভাইয়ার সাথে কথা বলতেই হবে দেখছি।
আজ এই প্রথম নিজের ঘরে চোরের মতো অনুভব করতে হলো আমায় শুধু আপনার জন্য।
আপনার পায়ে ধরে আসি নি আমি এখানে আপনি নিজে এনেছেন।
ওকে ভুল হয়েছে আর আপনাকে কোথাও নিয়ে যাওয়ার আগে ১০০ বার ভেবে নিবো এবার চলেন।
আচ্ছা আপনি আমাকে এভাবে চোরের মতো বাইরে নিয়ে এলেন,তবে তখন ভিতরে কিভাবে নিয়ে গেলেন?
তখন তো আপনি প্যাকপ্যাক করার জন্য জ্ঞানে ছিলেন না তাই কাজের লোককে বলে সহজে দ্বার খুলিয়ে আপনাকে নিয়ে গেছিলাম,এবার অন্ততো এসব কথা বাদ দিয়ে চলেন।
আমি যাবো না আপনার সাথে।
এবার কি হলো।
আমি কারোই হেল্প নিতে চাই না,আপনি আমাকে এতোটা হেল্প করেছেন এটার জন্য ধন্যবাদ, আপনি তা না করলেও পারতেন,করেছেন তার জন্য ধন্যবাদ, এবার আমি নিজে যেতে পারবো।
দেখেন জেদ ছাড়েন আর চলেন,অনেক রাত হয়েছে।
আপনিও মেয়ে ভেবে দূর্বল ভাবছেন আমায়?
ইশ,এই আপনি এতো জেদি কেনো,আমার তো মনে হয় নারী জাগরনের দ্বিতীয় অগ্রদূত আপনিই হবেন,আমি আপনাকে মেয়ে ভেবে দূর্বল ভাবছি না,আপনি বর্তমানে আমার বাড়িতে আছেন আর আপনাকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া আমার দায়িত্ব, আপনার জায়গায় কোনো ছেলে হলেও আমি তাই করতাম,এবার দয়া করে আর কথা না বাড়িয়ে আপনি গাড়িতে উঠে পড়বেন আশা করছি।
আপনি নিজের দায়িত্বের দোহাই দিলেন বলে উঠলাম,নইলে উঠতাম না।কথাটা বলে আঁখি গাড়িতে ঢুকে পড়লো।
আনবিলিভেবল।
অসহ্যকর ভঙ্গিতে বিড়বিড়িয়ে কথাটা বলে গাড়িতে চড়ে বসলো আদৃতও।
কিছুসময় পর আঁখির নির্দেশনা অনুযায়ী ওর বাড়ির ঠিক সামনে এনে আদৃত আঁখিকে নামায়,আঁখি নেমে যায়,দুকদম ঘরের দিকে এগিয়ে গেলে আবারও থমকে দাঁড়িয়ে ফিরে আসে আদৃতের পানে।
কি হলো, কিছু বলবেন?
আসলে আপনাকে ধন্যবাদ বলতে চাই,তখন আমার হয়ে আপনি ওভাবে প্রতিবাদ করলেন তো তাই।
আপনার জায়গায় অন্য মেয়ে হলেও আমি তাই করতাম মিস আঁখি,মেয়েদের সম্মান যে করতে জানে না সে কখনো একজন মানুষ হওয়ার যোগ্য না।ওকে চলি।
তারপর চলে যায় আদৃত, আঁখিও নিজের ঘরে চলে যায়,ঘরে যাবার পর আঁখির মনে পড়ে আয়ানের করা তখনকার কান্ড,চোখ বেয়ে আবারও অশ্রু গড়াতে শুরু হয়,আয়ান কখনোই আঁখিকে বুঝতে চায় নি,আর আজকে যে আয়ান নিজের সব লিমিট ক্রস করে গেলো,আদৃত তখন আয়ানের উপর প্রহার করলে তা আঁখির মনে ব্যাথা সৃষ্টি করে কিন্তু নিজের আত্মসম্মানের কাছে যে নিজের অনুভুতিকে মেরে ফেলতেই হবে আঁখিকে,এটাই যে এখন ওর ভালো থাকার একমাত্র সম্বল।
____________________
সারারাত বাড়ি ফিরলো না আয়ান,সকাল প্রায় ১০ টা বাজে,আয়ান বাড়িতে প্রবেশ করলো,ঘরে ঢুকার আগেই চেঁচামেচির শব্দ শুনতে পেলো আয়ান,ছুঁটে গেলো ঘরের ভিতর।গিয়েই দেখতে পেলো আয়েশা মাহির হাত পিছন দিকে করে মুড়ে ধরেছে,আর মাহি হেল্প হেল্প বলে চিৎকার করছে,মিরা রাহমান ওদের ছাড়াতে ব্যার্থ,আয়ান ছুঁটে গিয়ে নিজের ব্যান্ডেজ করা হাতেই মাহিকে আয়েশার কাছ থেকে ছাঁড়ালো।
কি হয়েছে? তুই মাহিকে এভাবে ধরে রেখেছিলি কেনো আয়েশা?
বেবি দেখো তোমার বোন আমাকে মারছে,তুমি না এলে তো আমায় মেরেই ফেলতো।
ন্যাকা কান্না করতে শুরু করলো মাহি,আয়েশা এবার ঝাঁঝাঁলো কন্ঠে বলে উঠলো।
হুহ,বেবি,তোর বেবিগিরি ছাড়াচ্ছি আমি,তোর সাহস কি করে হয় আমার গায়ে হাত তোলার চেষ্টা করার?
কি?মাহি তুমি আয়েশার গায়ে হাত তোলার চেষ্টা করেছিলে?
ইয়ে মানে,আসলে বেবি,ও নাস্তা বানিয়েছিলো যা একদম ভালো হয় নি,আমি সত্যটা বলেছিলাম তাই আমায় বলে কি জানো?বলে না খেলে রেখে দিতে আর নিজে পারলে রান্না করে খেতে,বলোতো এমন কথা কি করে মেনে নিবো আমি,তাই আমার রাগ উঠে গিয়েছিলো।
ন্যাকা মুখ বানিয়ে কথাগুলো বললো মাহি।
হোয়াট এতো ছোটো কথার জন্য তুমি আমার বোনের গায়ে হাত তুলতে গিয়েছিলে।
এটা তোমার কাছে ছোটো কথা মনে হয় বেবি,ও আমায় অপমান করলো নিজে রান্না করে খাওয়ার কথা বলে আর তুমিও আমাকেই শ্বাশাচ্ছো।
অপমান?অপমান কোথায় হলো মাহি এটা?রান্না করা কি অপমানের কাজ,রান্না ভালো লাগে নি ভালো কথা নিজে করে খেয়ে নিবে এতে দোষের কি।
আর ঘরের নতুন কাজের লোক কই?ও থাকতে এমন অবস্থা কেনো সৃষ্ট হবে?
ওটা তোমার স্ত্রীকেই জিজ্ঞেস করো ভাইয়া।
বলো মাহি কি হয়েছে?শালিকা কোথায়?
ওকে আমি বার করে দিয়েছি,রাতে আমাকে একটা ফেসপ্যাক বানিয়ে দিতে বেশি সময় লাগিয়েছিলো তাই।
হোয়াট,আর ইউ সিরিয়াস,এর জন্য তুমি ওকে কাজ থেকে বের করে দিয়েছো।
হ্যাঁ।
মাহি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো কথাটা।এবার আয়ানের অনেক রাগ হলো,নিজের রাগ দমন করে দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
সরি বলো মাহি আয়েশাকে।
আমি কেনো ওকে সরি বলবো?আমি কেনো আমার জুতোও ওকে সরি বলবে না।
তুমি বলবে,তোমাকে সরি বলতেই হবে মাহি।
ধমক দিয়ে কথাটা বললো আয়ান।
তুমি আমায় ধমক দিলে বেবি,আমার সাথে এমন ব্যবহার করলে,তুমি আমায় একদম ভালোবাসো না একদম না।
কথাটা বলে মাহি ন্যাকা কান্না করে চলে গেলো রুমে,মিরা রাহমান এবার নরম স্বরে বললেন।
তুই শুধু শুধু মেয়েটাকে বকতে গেলি কেনো আয়ান,যা গিয়ে ওর রাগ ভাঙা।
আয়ান মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে রুমের পানে পদার্পণ করলো।
তোকে বলেছিলাম আয়েশা শুধু শুধু ঝগড়া না ঝরাতে,ঘরে অশান্তি এনে কি লাভ।
ঘরে আমি অশান্তি আনছি না মা,অশান্তি ঘরে অনেক আগেই এসেছে আর সেটা নিয়ে এসেছে তোমার ছেলের,একদিন এই অশান্তিই আমাদেরও এ ঘর থেকে ভাইয়া থেকেও দূর দেবে তুমি দেখে নিও।
কথাটা বলে আয়েশা স্থান ত্যাগ করলো,মিরা রাহমান নিরাশায় ভরা দীর্ঘ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন।
__________________
আজকে কলেজে আসতে না আসতেই আঁখি সায়েদাকে জব্দ করলো,সায়েদাকে দুদিন থেকেই আঁখি ফলো করছিলো,কারন সায়েদা আঁখির একই ক্লাসে পড়ে আর সারাদিন আঁখির দিকে তাকায় একটু পর পর,এবার আঁখি সামনাসামনি গিয়ে ওকে এটার কারন জিজ্ঞেস করেই নিলো।তারপর সায়েদা বরবর করে সবকিছু পরিষ্কার করে বলে দিলো।
আসলে আপনি আমাকে ভুল বুঝবেন না,আপনি দেখতে ঠিক হুবহু আমার ভাইয়ার মরহুম স্ত্রী আরোহী আপুর মতো,তাই সেদিন আপনাকে দেখে ভুঁত বলে চিৎকার করেছিলাম আমি,ড.আদৃত আর ড.নোমান আমার দুই ভাই,আর আরোহী আপু আদৃত ভাইয়ার স্ত্রী ছিলেন,দুবছর আগে একটা এক্সিডেন্টে উনি মারা যান।
আপনি কি সত্যিই বলছেন?আমার মতো হুবহু দেখতে এটা কি করে সম্ভব।
আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না তো আমি এখনই উনার ছবি দেখাচ্ছি আপনাকে।
তারপর সায়েদা আরোহীর ছবি দেখালে ওটা দেখে হতভম্ব হয়ে যায় আঁখি,এ যে সত্যিই আঁখির হুবহু কপি,আঁখির তো মনে হলো ওটা যেনো ওর নিজেরই ছবি,কিন্তু এটা ওর ছবি না এটা অন্য কারো ছবি যে দেখতে ঠিক আঁখিরই প্রতিরূপ,তারমানে সায়েদা সত্যিই বলছে বুঝতে পারলো আঁখি,তারপরও নিজের চোখে যেনো বিশ্বাসই করতে পারছে না, আঁখি এবার অন্য অনেককিছুও বুঝতে সক্ষম হলো।
এজন্যই কি আদৃত স্যার সেদিন আমার দিকে হতবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলেন, কালকে ক্লাস করানোর সময় নোমান স্যারও আমার দিকে কেমন দৃষ্টিতে যেনো তাকাচ্ছিলেন,আর কাল রাতে এজন্যই মনে হয় স্যার আমাকে উনার ঘরের সবার সামনে আসতে দিচ্ছিলেন না,কিন্তু আমার মতো হুবহু দেখতে অন্য কেউ কি করে হতে পারে,সায়েদার ফোনে ছবি দেখে তো অবিশ্বাসও করা যাচ্ছে না।
চলবে……….