মন_পিঞ্জর,৩৬,৩৭

0
718

#মন_পিঞ্জর,৩৬,৩৭
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_৩৬

কেটে গেছে কয়েকটা দিন,আয়ান এখন আর আঁখি আদৃতের সামনে পরে না,সত্য জ্ঞান এসেছে নিজের করা সব পাপ নিয়ে,আন্দাজ করতে পারছে এ সব কিছুই ওর পাপের শাস্তি,তবে কাউকে কিছু বলে নি না বুঝতে দিয়েছে,আড়াল থেকে আঁখিকে দেখে যায়,কারন ওর সামনে যাওয়ার সাহস ঝুটিয়ে পারে না,আঁখির সাথে করা অপরাধগুলো যে চোখে স্পষ্ট ধরা দিয়েছে ওর, মিথ্যের সঙ্গ নিয়ে হয়তে সবকিছুই সহজে করা যায়,তবে মিথ্যে নিয়ে বেঁচে থাকা লোকগুলো যে সত্যতার সম্মুখীন সহজে হতে পারে না,মনে সে সাহস জুটিয়ে উঠতে অক্ষম হয়,তাই আয়ানও আঁখিকে নিয়ে মনের সত্য অনুভুতি বুঝতে সক্ষম হলেও তা আঁখির সামনে তুলে ধরার সাহস ওর নেই,শুধু আড়ালে চোখের জল ফেলে যায়,এদিকে মাহির বিরুদ্ধে আয়ান পদক্ষেপ নিয়েছে। মাহির বাড়িতে হঠাৎ পুলিশের আগমনে মাহি অনেকটা ঘাবড়ালো।
পুলিশ সহজ ভাষায় বললো মাহি আয়ানের যে সম্পত্তি নিয়েছে সেটা নিয়ে আয়ান ওর বিরুদ্ধে মামলা করেছে যে মাহি সে সম্পত্তি আয়ানকে ধোঁকা দিয়ে নিয়ে গেছে,যেহেতু কোনো ম্যাজিস্ট্রেট কে সাক্ষী রেখে আয়ান সম্পত্তি মাহিকে লিখে দেয় নি তাই সে সম্পত্তি মাহির হওয়ার প্রশ্নই আসে না, সেজন্যই কালকে আয়ান মাহি দুজনকেই আদালতে হাজির থাকতে হতে বললেন ইন্সপেক্টর,জজ সাহেব নিশ্চিত করবেন সম্পত্তি কাকে দেওয়া হবে।

পুলিশ চলে গেলে মাহি দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গেলো।

যেটার ভয় ছিলো আয়ান তাই করলো,আদালতে গেলেই সম্পত্তি ওর হয়ে যাবে কারন আমার কাছে কোনো সাক্ষী নেই যে ও স্বজ্ঞানে আমাকে সম্পত্তি দিয়েছে।না এ হতে পারে না,কালকের আগেই আমাকে এমন কিছু করতে হবে যাতে এই সম্পত্তি আমার হাতছাড়া না হয়।

আঁখিকে আজ চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হলো কারনটা ও জানে না,গত তিন মাস আগেই ওর প্রোমোশন হয়েছিলো,কোম্পানির ব্যবসায়েও অনেক উন্নতি হওয়ায় আঁখির বেতন বেড়ে ২৫ হাজার টাকা হয়ে গেছিলো যাতে আঁখির নিজের খরচ ভালোই চলছিলো কিন্তু হঠাৎ করে ওর জব চলে যাওয়ার কারন খুঁজে পাচ্ছে না আঁখি,ওর কাজে কোনো ঘাটতি ছিলো না,তাছাড়া বস আর ওর কলিগেরা সবাই ওর উপর অনেক সন্তুষ্ট ছিলেন,আঁখির জব চলে গেছে শুনে ওর কলিগেরাও বিষম খেলেন,আঁখি চলে যাবে তখনি বসের সেক্রেটারি ঈশিতা আঁখির দিকে এগিয়ে এলো ওকে কিছু বলার সুবিধার্থে, মেয়েটির সাথে আঁখির অনেক ভালো সম্পর্ক।

আঁখি তুমি কি মাহি নামের কাউকে চেনো?উনার সাথে কি তোমার কোনো শত্রুতা আছে?

কেনো মেম?

আসলে আজ হঠাৎ মাহি নামের কেউ একজন বসের সাথে দেখা করতে এলেন,আমি উনাকে বসের কেবিন দেখিয়ে দিলাম, উনি না জানি বসের সাথে কি সব কথা বললেন,হঠাৎ আমার বসের সাথে কিছু দরকার থাকলে আমি উনার কেবিনের দিকে যাই কেবিনের দরজা খনিক ফাঁক করা ছিলো আর তাই কেবিনে ঢোকার আগে আমি মিস মাহির কিছু কথা শুনতে পাই,কথাগুলো কানে আসলে আমি আর ভিতরে যাই না বরং বাইরে দাঁড়িয়ে কথাগুলো শ্রবণ করি,মিস মাহি বলছিলেন তোমাকে জব থেকে বের করে দিতে,নইলে উনার এতো পাওয়ার আছে যে স্যারের বিজনেস মাটিতে মিশিয়ে দিতে পারবে আর যদি স্যার তোমাকে জব থেকে বের করে দেয় তবে উনি স্যারকে বিপুল পরিমাণ টাকা দিবেন,তারপর স্যার আর কোনো রাস্তা না পেয়ে তোমাকে জব থেকে বের করে দেন।প্লিজ কথাটা কাউকে বলো না আমার জব চলে যাবো তোমার সাথে আমার অনেক ভালো সম্পর্ক তাই বলাটা জরুরি মনে করলাম।

ঈশিতা চলে গেলো কথাগুলো বলে।

মাহিকে আমি ছাড়বো না,তবে বর্তমানে আমার নিজের টা ভাবা উচিৎ, জব নেই,তাছাড়া বড় বাড়িতে থাকার ভাড়াটাও অনেক,ড.আদৃতের ফি,পড়ালেখা খরচ, নিজের ভরনপোষণ, না এসবের জন্য আমি ড.আদৃত বা অন্য কারো উপর বোঝা হতে পারি না,আমাকে নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী রাস্তা নাপতে হবে,আমি আর ড.আদৃতের বাড়িতে থাকতে পারবো না,জানিনা ড.আদৃত কেনো দিদুকে কিছু বলছেন না,তবে আমারও যে আর কিছু করার নেই,দিদুকেও আর অন্ধকারে রাখতে মন সায় দিচ্ছে না আমার,ড.আদৃত ভালো মানুষ হলেন বলে আমি তার ভালোমানুষির লাভাংশ তো আর উঠাতে পারি না।দিদুকে এবার আসল সত্যটা আমায়ই বলতে হবে।

আদৃত বাড়িতে নেই,এদিকে আঁখি এসেই দিদুর রুমের পানে এগুলো,সবাইকে সেখানে উপস্থিত রেখে সব সত্য বললো আঁখি উনাকে খুব শান্ত স্বরে,উনি প্রথমে তা মেনে নিতে নারাজ হলেন,ভাবলেন আঁখি মানে উনার আরোহী উনার সাথে মজা করছে,তবে আঁখি উনাকে সত্যটা মেনে নিতে বাধ্য করলো,সত্যটা এমনভাবে উনার সামনে তুলে ধরলো যে উনি মেনে না নিয়ে পারলেনই না, এবার উনি আঁখিকে জড়িয়ে ধরেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন,অস্বাভাবিক কোনো আচরন করলেন না তবে সত্যটা এতো সহজে মেনে নেওয়া উনার জন্য মোটেও সহজ ছিলো না,অনেক কাঁদলেন উনি উনার কষ্টে সবার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়াতে শুরু হলো,আঁখি উনাকে বুকের সাথে মিশিয়ে রাখলো বেশ খানিকক্ষণ, উনাকে যথেষ্ট সমর্থন করলো সত্যটা মেনে নিতে,দিদু কাঁদতে কাঁদতে একসময় স্বাভাবিক ভাবে শুয়ে পড়লেন।

সবাই যার যার রুমে চলে গেলেন,সবাই আজ চিন্তামুক্ত এবার যে আর দিদুকে মিথ্যে বুকে আগলে ধরে বেঁচে থাকতে হবে না,আঁখি আজ থেকে গেলো দিদুর পাশে।
দিদুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে থাকলো,আমাকে ক্ষমা করে দিও দিদু,কিন্তু এই সত্যটা যে একদিন তোমাকে জানতেই হতো,আর যে পারছি না আমি তোমাকে ধোকা দিতে,মিথ্যের ছলে নিজের সত্য পরিচয় লুকিয়ে যেতে।

আদৃত বাড়ি এসেই জানতে পারলো আঁখি সব সত্য দিদুকে বলে দিয়েছে,তারপর আর নিজের মন শান্ত করে রাখতে পারলো না সে,রাগ চড়ে বসলো মাথায়,মন অশান্ত হলো ওর বড্ড, আঁখিকে হারানোর মতো তিক্ত ভয় মনে ভর করে বসেছে এবার,নাকের ডগায় রাগ টাঙিয়ে দিদুর রুমে ঢুকলো অল্প ধীর ভঙ্গিতে, আঁখির পানে এগিয়ে গিয়ে ওর হাত ধরে টেনে বাইরের দিকে নিয়ে আসতে থাকলো,অবশেষে আঁখিকে বাগানে নিয়ে এসে থামলো।
আঁখি কোনোমতেই অনুমান করতে পারছে না আদৃতের এমন ব্যবহারের মানে।প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকাচ্ছে ওই গম্ভীর পুরুষের দিকে যার চোখে মুখে রাগের ছাপ স্পষ্ট আন্দাজ করতে পারছে আঁখি।

কি হয়েছে ড.আদৃত?

কি হয়নি এটা বলুন,কি সমস্যা আপনার?দিদুকে সব সত্য বলতে কে বলেছিলো আপনাকে?

কে বলবে, আমি নিজে থেকেই বলেছি,আর কদিন এভাবে মিথ্যের আশ্রয়ে থাকতাম,সত্যটা তো বাইরে আসারই ছিলো,আর আমি জানতাম দিদু তা মেনে নিবেন,আর তাই তো হলো,একটু কষ্ট পেলেও দিদু আজ সত্যটা মেনে নিতে সক্ষম হতে পেরেছেন,এর থেকে বড় পাওয়া আপনার আর আমাদের সবার জন্য আর কি হতে পারে বলুন?
এবার তো সব জেনে গেছেন দিদু,এবার আর আমার যেতেও কোনো সমস্যা নেই।

কথাগুলো শুনে আদৃত অনেক কষ্টে নিজের রাগ দমন
করলো,নিজেকে অসহায় মনে হলো ওর। আঁখিকে আটকানোর আর কোনো রাস্তা নেই বুঝতে পেরে অনুনয়ের স্বরে বললো।

দেখেন মিস আঁখি,যাওয়াটা কি খুব জরুরি?এখানে থাকতে কি সমস্যা আপনার?থেকে যান না প্লিজ।

আদৃতের কথাগুলোতে অনেকটা আকুতি ভাব অনুভব করতে পারলো আঁখি,আদৃতকে যে কখনোই কারো কাছে অনুনয় করতে দেখে নি,গম্ভীর ব্যক্তিত্বের অধিকারী এই পুরুষকে অসহায় রুপে কখনোই আশা করতে পারে না আঁখি, আঁখির এখানে থেকে যাওয়া যেনো আদৃতের জন্য অনেক বড় পাওয়া হয়ে উঠবে।তবে কেনো আদৃত ওকে এখানে ধরে রাখতে চায়,ওকে কি শুধু ওর ঘরে রাখতে চায় না কি ওর নিজের জীবনে,ঘোলাটে এই কথাটা মস্তিষ্কে ধরা দিলো ,কথাটা কি আদৌও সত্য না মিথ্যে তা যাচাই করতে ব্যার্থ হলো আঁখি।আদৃত অসহায় চাহনিতে এখনও আঁখির পানে দৃষ্টি অটল রেখে আছে,আঁখি মুখ ফুঁটিয়ে কিছু বলবে তখনি আদৃতের ফোন বেজে উঠলো, আদৃত বেশ বিরক্ত হলো এতে,না চাইতেও ফোন উঠিয়ে ললাটের কোনে বিরক্তির ছাঁপ তুলে বললো।

হুম মিথিলা বলো।

তারপর মিথিলা যা বললো তা শুনে আদৃতের চেহারায় অবাকত্ব বিরাজমান হলো অল্পতে।

কি?এটা কেমন করে হতে পারে?ড.আয়ান এমনটা নিজে থেকে কখনোই করবেন না,তুমি পুলিশকে আটকে রাখো আমি আসছি এক্ষুনি।

কি হয়েছে ড.আদৃত?

কিছু না আপনি বাড়িতে থাকুন আমি আসছি।

আপনি বলেন কি হয়েছে?ড.আয়ান কি করেছেন?পুলিশ কেনো এসেছে ওখানে?

মিস আঁখি আপনাকে আয়ানকে নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না,আপনি জানেন না আপনার জন্য টেনশন নেওয়া কতোটা বিপদজনক? আপনি থাকেন আমি আসছি।আমি সব ঠিক করে দিবো।

একদম না,আমিও যাবো আপনার সাথে।

অতঃপর আদৃত না চাইলেও আঁখি জেদ ধরে ওর সাথে গেলো।

নোমান কয়েকদিন থেকে খেয়াল করছে যেদিন থেকে আয়েশা পুষ্পর বিষয়ে শুনেছে সেদিন থেকেই ওকে এড়িয়ে চলছে,ওর সামনে ভুলেও আসে না,ভুলবশত সামনে এলেও যেনো শুধু লুকিয়ে যাবার পথ খুঁজে, নোমান কথা বলতে চাইলেও বলে না,অপ্রিয় সত্যটা বড্ড জ্বালাতন করছে নোমানকে,বসার ঘরের সে বড় জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে আয়েশা বাইরের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে,চোখ দিয়ে গড়াচ্ছে নোনাজল,নিজের পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে তা মুছে নিলো অগোচরে,মাথা ঘুরিয়ে পাশে দেখতে পেলো নোমানকে,ওকে দেখে যটফট সে স্থান ত্যাগ করার চিন্তা মস্তিষ্কে এনে সে অনুযায়ী কাজ করতে গেলে নোমানের পিছু ডাকে থমকে দাঁড়ায়।

আমি কি কোনো ভুল করেছি যে তুমি আমার থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছো আয়েশা?আমি কোনো ভুল করে থাকলে সরি।

আয়েশা পিছু ফিরে নরম স্বরে মুখে মিথ্যে হাসির ঝলক ফু্ঁটিয়ে বললো।

আরে আপনি সরি কেনো বলছেন?ওই আসলে অনেক কাজ থাকে তো তাই আপনার সাথে কথা বলার সময় পাই না,তাছাড়া আপনাকে সময় দেওয়ার জন্য আপনার জীবনে এখন স্পেশাল কেউ চলে এসেছে,তাই হয়তো আমার আলাদা করে আপনাকে সময় দেওয়া উনার ভালো নাও লাগতে পারে।

কথাটা কিঞ্চিৎ আঘাত করলো নোমানের বুকে,নোমান কিছু বলার আগেই কোথা থেকে পুষ্পিতা এসে জড়িয়ে ধরলো ওকে তারপর খনিক ন্যাকা কন্ঠে বললো।

কোথায় ছিলি তুই এতোক্ষন? সেই কভে থেকেই খুঁজছি তোকে।

মুহুর্তটা আয়েশা নোমান দুজনের জন্যই কেমন অস্বাভাবিক হয়ে উঠে,নোমান ঠায় দাঁড়িয়ে আছে আয়েশার দিকে তাকিয়ে, মনে কেনো যেনো অল্প অপরাধ বোধ কাজ করতে লাগলো ওর,আয়েশা আর ওখানে দাঁড়ালো না নিজেকে কোনো মতে নিয়ন্ত্রণ করে স্থান ত্যাগ করলো।

নোমানের মনে এতে খারাপ লাগা কাজ করলো অনেক,টান দিয়ে পুষ্পকে নিজে থেকে ছাড়ালো।

এসব কি করছিস তুই পুষ্প?এটা তোর লন্ডন না এটা বাংলাদেশ,এভাবে যে কারো সামনে যে কাউকে জড়িয়ে ধরা মানায় না বুঝলি?

তুই তো আর যে কেউ না,আমার হবু বর,৫ দিনের মাথায় বিয়ে হচ্ছে আমাদের, জড়িয়ে ধরতে সমস্যা কোথায়?

দেখ,আমি তোকে আগেও বলেছি,তুই আমার কাছে ফ্রেন্ড থেকে বেশি কিছু না,আমি তোকে কখনো অন্য চোখে দেখিনি,ওই আসলে বাবা জোর করলেন বিয়ের জন্য,উনার এতো বছরের বন্ধুত্বের দোহাই দিলেন,তাছাড়া তুইও আমার ছোটবেলার বন্ধু আমার জীবনেও অলাদা কেউ ছিলো না তাই আমি বিয়েতে রাজি হয়ে গেছি,এই বলে এটা নয় যে বিয়ের আগেই তুই আমাকে নিজের বয় ফ্রেন্ডের মতো ট্রিট করবি।

তুই কেনো বুঝছিস না, বিয়ে হলে তো আমরা আর ফ্রেন্ড থাকবো না,তখন আমাদের সম্পর্ক পাল্টাবে,তবে এখন থেকে পাল্টে ফেললে দোষ কি?

বিয়ে হলে দেখা যাবে,এখনও হয় নি তাই ফ্রেন্ড আছিস ফ্রেন্ডের মতো থাক।

চলবে……..

#মন_পিঞ্জর
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_৩৭

আয়ানকে ঘিরে পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে,একজন রোগীর পরিবার পুলিশকে আনিয়েছেন।
পেটের ব্যাথায় ছটফট করতে থাকা এক বৃদ্ধ লোককে ভুল ইনজেকশন প্রয়োগ করায় প্যারালাইজ্ড হয়ে গেছেন তিনি,আর তার দায় ভার আয়ানেরই ঘাড়ে কারন ইনজেকশনটা সেই সাজেস্ট করেছে নার্সকে,তবে আয়ান তা মানতে নারায।

আঁখি তুমি অন্ততো বিশ্বাস করো আমি অন্য ওষুধ সাজেস্ট করেছিলাম নার্সকে, কিন্তু নার্স ওটা বদলে ভুলটা দিয়েছে হয়তো আর এখন বলছে ওটা না কি আমি বলেছি ওকে দিতে,আমি এর কিছুই জানি না।

না ইন্সপেক্টর সাহেব আমি সত্য বলছি, ইনজেকশনটা স্যারই আমাকে দিতে বললেন।

মিথ্যুক মেয়ে তোমাকে তো আমি।

নার্স চোখ নিচু করে চোর গলায় কথাটা বললে রাগে আয়ান তেঁড়ে যেতে চায় ওর পানে,কিন্তু পুলিশ ওকে আটকে নেন।

দেখেন মি.আয়ান যা তেজ দেখানোর কোর্টে দেখাবেন,চলেন এবার।

আঁখি আদৃত অনেক করেও পুলিশকে বুঝাতে সক্ষম হলো না,পুলিশ আয়ানকে নিয়ে যেতে ব্যস্ত,এদিকে ততক্ষণে হাসপাতালে ভির জমে গেছে,মানুষ ক্ষিপ্ত স্বর তুলেছে আয়ানের বিরুদ্ধে, লোকগুলো আয়ানের উদ্দেশ্যে ইট পাটকেল ছুঁড়ছে, এমনকি জুতোও, পুলিশ ওকে কোনোরকম বাঁচিয়ে নিয়ে যাচ্ছে,আঁখি ওকে বাঁচাতে ছুটে যেতে চাইলে আদৃত শক্ত হাতে আটকে নেয় ওকে।

কি করছেন ড.আদৃত?পুলিশ আয়ানকে নিয়ে যাচ্ছে,লোকগুলো ওকে ইট পাটকেল,এমনকি জুতোও ছুঁড়ছে।

তবে এতে আপনার কি মিস আঁখি?আপনি এগিয়ে গিয়ে তো আর তা আটকাতে পারবেন না,বরং নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন,তাই আপনার না যাওয়াটাই ভালো।

কিন্তু আয়ান নির্দোষ, আমি জানি ও স্বার্থপর হতে পারে কিন্তু নিজের কাজে খামখেয়ালীপনা ও কখনো দেখাতে পারে না।

হুম মিস আঁখি,আমিও জানি এখানে ড.আয়ানের কোনো দোষ নেই,আমি দেখছি,পুলিশও এ বিষয়ে তদন্ত করবে,আমি একজন লয়্যারের সাথে কথা বলছি দেখি কি করা যায়,আমাদের কাছে কোনো প্রমাণ নেই যে আয়ান নির্দোষ, তাই ওকে বাঁচাতে হতে উপযুক্ত প্রমাণ লাগবে। আমাদের যাই করতে হবে সব ঠান্ডা মাথায় করতে হবে।

এখন মাথা ঠান্ডা রাখার সময় না,ও অনেক কষ্ট করে ডাক্তারি কমপ্লিট করেছে,আমরা এভাবে হাতে হাত রেখে বসে থাকলে ওর ডাক্তারি লাইসেন্স চলে যেতে বেশি সময় লাগবে না,মা-বাবার সপ্ন ছিলো ওকে ডাক্তার বানানোর,আর আমি তাদের সপ্ন মাটিতে মিশতে দেবো না,প্রামাণ তো আমার এক্ষুনি চাই।

ক্ষিপ্ত কন্ঠে কথাগুলো বলে সেই নার্সের দিকে এগিয়ে গেলো আঁখি,হাত ধরে টেনে ওকে নিয়ে একটা ওষুধ ভর্তি কেবিনে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো,আদৃত ভাবলেশহীন হয়ে গেলো আঁখির এহেন কান্ডে,হাত পা ঠুকিয়ে দরজা ঢেলে যাচ্ছে।মুখ দিয়ে আঁখি নামক ধ্বনি বের করছে খনিক ক্ষিপ্ত গলায়।এদিকে ভিতর থেকে বেড়িয়ে আসছে আঁখির তেজি গলার প্রহার।

নার্সকে দুগাল বরাবর বসিয়ে দিয়েছে আঁখি কয়েকটা,নার্স নিজেকে বাঁচাতে ছুটাছুটি করলেও পারছে না,এবার আঁখি নার্সের চুল মুঠো করে ধরে বললো।

বল কে বলেছে এসব করতে?বল?

আমায় কেউ বলে নি,স্যার ওই ইনজেকশনটাই দিয়েছিলেন,কথাটা শুনতেই আবারও নার্সের এক গাল বরাবর আরেকটা বসিয়ে দেয় আঁখি।

তবে তাই,আচ্ছা তবে চল সেই ইনজেকশন দিয়েই না হয় তোকেও প্যারালাইজ্ড করি,অন্যের জীবন আর কেরিয়ার নষ্ট করে তোর শান্তিতে বেঁচে থাকাটাও শোভা দিবে না,আঁখি নিজের গায়ের ওড়না দিয়ে নার্সের দুই হাত বেঁধে দেয় টেবিলের সাথে তারপর উঠে গিয়ে ড্রয়ার খুলে ওষুধ বের করে যে ওষুধ ওই রোগীকে দেওয়া হয়েছিলো,তা ইনজেকশনে নিয়ে আঁখি এবার এগিয়ে আসে নার্সের দিকে,চোখে ভয়াবয়তা,একপ্রকার পাগলের ন্যায় অঙ্গভঙ্গিতে এগুচ্ছে আঁখি, নার্স এতে অনেক ভয় পেয়ে যায়,আঁখি এমনটা নার্সকে ভয় পাওয়ানোর জন্যই করে।আঁখি নার্সের গালে ইনজেকশনটা দিয়ে স্লাইড করে ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসি টাঁঙিয়ে বললো এবার।

বলবি না তো সত্যটা,তবে সারাজীবনের জন্য অচল হয়েই থাক।

আঁখি ইনজেকশনটা পুশ করার সুবিদার্থে নার্সের পানে এগিয়ে আনলেই নার্স চিৎকার করে বলে উঠে।

আমি বলছি,আমার এতো বড় সর্বনাশ করবেন না,আমি বলছি।আঁখি নিজের হাত আটকে নেয়,তারপর নার্সকে সোজা করে উঠিয়ে বসায়।ওকে পানি পান করতে দেয়, নার্স একটু স্বাভাবিক হলে আঁখি ওকে সত্যটা বলতে বলে।এদিকে ফোনের রেকর্ডার অন করে দেয়।

বল।

নার্স কাঁপা গলায় সত্যটা বলতে লাগে।

আসলে আজকে মাহি নামের কেউ একজন এসেছিলেন,এসে আমাকে আড়ালে ডাকলেন,তারপর আমার হাতে অনেকগুলো টাকা দিলেন দিয়ে বললেন উনার একটা কাজ করে দিতে।আজকে যে কয়েকজন রোগী আছেন আয়ান স্যারের কাছে ওদের যেকোনো একজনকে ভুল ওষুধ দিয়ে ওদের সাথে বড় কিছু করে দিতে যার ফলস্বরূপ দোষ আয়ান স্যারের ঘাড়ে আসবে।

কাজটার কথা শুনে আমি তা করতে মানা করে দেই,তারপর উনি আমায় হুমকি দেন আমি উনার হয়ে কাজটা না করলে উনি আমার চাকরি খেয়ে যাবেন, এই চাকরিটা আমার জন্য অনেক জরুরি, আমার মা আর ছোটো তিন বোনের খরচ আমি একাই বহন করি এমতাবস্থায় চাকরিটা গেলে যে আমার কিছুই করার ছিলো না?তাছাড়া কাজটার পরিনামে উনি আমাকে বিপুল পরিমান টাকাও দিচ্ছিলেন,তাই আমি লোভে পড়ে যাই।

আর তাই বলে একজন সুস্থ মানুষকে সারা জীবনের জন্য অচল করে দিবে,অন্য জনের কেরিয়ার নষ্ট করে দিবে,,তুমি ভালো করেই জানো মাহি চাইলেই তোমাকে এখানকার জব থেকে বের করতে পারবে না কারন এখানে বাইরের কেউ নিজের জোর খাটাতে পারে না,ড.আমির চৌধুরী আর ড.নোমান, ড.আদৃত কখনো এসব হতে দিবেন না,তুমি তো শুধু টাকার লোভেই এমন করেছো,আর এখন অসহায়ত্বের দোহাই দিচ্ছো,তোমার মতো স্বার্থপর লোকগুলো তো নিজের অসহায়ত্ব দেখিয়ে অন্যের কাছ থেকে সব কিছু আদায় করে নিতে চায় শুধু, তুমি কি ভেবেছিলো আমি তোমাকে সত্যিই ইনজেকশন পুশ করবো?আগ্যে তা না,আঁখির চিন্তাভাবনা কখনোই এতোটা নিচ হতে পারে না,তবে তোমার মতো লোক যে নিজের স্বার্থে অন্যের এতো বড় ক্ষতি করে দিতে পারে সে নিজের প্রাণের উপর বিপদ আসলে কখনোই অন্যকে বাঁচাতে চাইবে না,আর তোমার মতো লোকের মুখ থেকে কথা বের করার কৌশল আমি ভালোই জানি, তোমার ভাগের টা আমি পরে দেখছি আগে আয়ানকে বাঁচাতে হবে,আর ওই মাহিকেও তো দেখতে হবে,তবে যাওয়ার আগে কনফার্ম হই,দেখো এই মেয়েটাই ছিলো তাই না।ফোনে মাহির ছবি দেখিয়ে বললো আঁখি।

হ্যাঁ এই মেয়েটাই ছিলো।

দরজা খুলে বেড়িয়ে এলো আঁখি, আদৃত আন্দাজ করতে ব্যার্থ হলো ভিতরে কি হয়েছে এতোক্ষণ, আঁখি তারপর সব খুলে বলে আদৃতকে, নার্সের রেকর্ড করা কথাগুলোও শুনায় আদৃত হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে এবার আঁখির পানে।

কি হয়েছে কি দেখছেন?

আপনাকে।আমার তো মনে হয় আপনাকে হার মানিয়ে যাওয়ার মতো কোনো কিছু এখনও পৃথিবীতে আসে নি।

আর আসবেও না,কারন আমার রব আমার সাথে আছেন সবসময়,এবার চলেন,আয়ানকে জেল থেকে আনতে হবে,এই প্রমাণ যথেষ্ট ওকে ছাড়াতে।

হ্যাঁ এই প্রমাণের জোরে হয়তো আজকে আয়ানকে ছাড়ানো যাবে তবে কারো সাক্ষ্যের জোরে ওর উপর থেকে এই কেস উঠানো যাবে না,উপযুক্ত প্রমাণ লাগবে মাহির বিরুদ্ধে।

ও পরে দেখা যাবে আগে আয়ানকে ছাড়িয়ে আনি।

হুম।
____________

আঁখি আদৃত একজন উকিল আর সাথে আয়ানের জামিননামা নিয়ে আয়ানের জামিন করাতে আসে,জামিন করিয়ে নেয়ও,তবে আঁখি আয়ানের সাথে একা কিছু কথা বলতে চায়,আয়ানও যেনো তাই চাইছিলো,কিন্তু আদৃতের কথাটা একদম হজম হলো না,গা জ্বলে উঠলো ওর,কিন্তু আঁখির কথা ফেলতেও পারলো না,আয়ান আঁখি পুলিশ স্টেশন এর বাইরে অনেকটা দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলছে আর আদৃত ওদের থেকে খনিক দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে আছে,তবে চোখ ওদের উপরই ওটল,বার বার মুঠো শক্ত করে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে,ওদের দুজনকে একসাথে যে মেনে নিতে ব্যার্থ হচ্ছে আদৃতের সে উতলা মন।

আঁখি আয়ানকে জিজ্ঞেস করলো,যে মাহির সাথে ওর কি এমন সমস্যা হয়েছে যে মাহি ওর সাথে এমন কিছু করলো,অতঃপর আয়ান সমস্ত সত্য আঁখিকে খুলে বললো,কথাগুলো শুনে তো আঁখি অবাকত্বের চরম সীমায় পৌঁছে গেছে।

হোয়াট মাহি বাবা মায়ের সম্পত্তি নিয়ে গেছে আর তুমি কিছুই করতে পারো নি?তোমার সাথে যা হয়েছে ভালোই হয়েছে,তা তো হওয়ারই ছিলো আমি ভালো করে জানতাম তাই হবে,মাহিকে যে ভালোই চেনা আছে আমার,তবে ও মা-বাবার সম্পত্তি নিতে পারবে না।

আয়ান অনুনয়ের স্বরে বললো এবার।
হুম সব আমার পাপের শাস্তি,আমি তোমার সাথে যা করেছি তা তো পেতে হতোই আমার।

হয়েছে এখন ইমোশনাল হওয়ার টাইম না,যে করেই হোক মাহির বিরুদ্ধে আমাদের প্রমাণ আনতেই হবে।

কিন্তু আমরা কি করে কিছু করবো,আমার উপর এতো বড় কেস, যেটা মাথা থেকে না নামা পর্যন্ত অন্য কেসেও আমাকে দোষী মানা হবে,মাহি ক্লিয়ারলি বলবে যে আমি সম্পত্তি ওর নামে দিয়ে এখন মানা করছি,হয়তো সেটা গ্রাজ্য হতো না যদি এ কেসটা আমার উপর থাকতো না,কারন ম্যাজেস্ট্রেট এর সামনে আমি ওকে সাইন করে সম্পত্তি দেই নি,কিন্তু এই কেস আমার উপর থাকার ফলে ওর জিতার সম্ভাবনাই বেশি।ও বুক ফুলিয়ে বলবে আমি এমনিতেই অপরাধী।

হুম,তাই ওকে হারাতে আমাদের ওর বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রামাণ চাই,তুমি চিন্তা করো না আয়ান,আমি দেখছি কি করা যায়।

কি করবে তুমি?

যাই করি না কেনো সম্পত্তি আমি মাহির হাতে যেতে দেবো না,কথাটা শুনেই আয়ান আঁখিকে ঝাপটে ধরলো অতিরিক্ত খুশিতে আর বলতে লাগলো।

তুমি থাকতে আমার কোনো টেনশন নেই আঁখি।তুমিতো আছো আমার জন্য।

আঁখি আয়ানকে ছাড়াবে এর আগেই আদৃত তেঁড়ে এসে একপ্রকার ধাক্কা দিয়ে আয়ানকে ওর কাছ থেকে ছাড়িয়ে দেয়।তারপর কটমট কন্ঠে বলে উঠে।

দেখেন ড.আয়ান মিস আঁখি এখন আর আপনার স্ত্রী নয় তাই ওর থেকে দূরে থাকাটাই আপনার জন্য ভালো হবে,চলেন মিস আঁখি।

আদৃত আয়ানকে দেখিয়েই আঁখির হাত ধরে ওকে ওখান থেকে নিয়ে আসে,আয়ান অসহায় হয়ে তাকায় আদৃতের ধরে থাকা আঁখির হাতের দিকে, এদিকে আঁখি অজানা এক অনুভুতি নিয়ে তাকিয়ে আছে আদৃতের পানে,আদৃত আঁখির উপর নিজের অধিকারত্ব খাটিয়ে নিতে চাইছে বিষয়টা যে মোটেও মন্দ লাগছে না আঁখির কাছে,বরং আদৃতের এমন কান্ডের ফলস্বরূপ আঁখির ঠোঁটের কোনো যেনো অল্প প্রাপ্তির কিঞ্চিৎ হাসি ফুঁটে উঠে।

বাড়িতে এসে গেছে ওরা,আদৃত আঁখিকে কড়া ভাবে নিষেধ করেছে যে এখন আর আয়ানের বিষয় নিয়ে চিন্তা না করতে,বাকিটা আদৃত দেখে নিবে ওকে রেস্ট করার কথা বলে লয়্যার কে ফোন করে আসতে বলে আয়ানের সাথে দেখা করতে গেছে।

আদৃত চলে যাওয়ায় আঁখি মনে শান্তি পায়,কারন আদৃত থাকলে আঁখিকে কখনোই তা করতে দিতো না যা এখন আঁখি করতে চাইছে,আঁখি এবার অনেক কিছুই ভেবে নিয়ে আয়েশার কাছে গেলো,ওকে সবকিছু খুলে বললো।

আমি জানতাম ভাইয়া ওর কর্মের সাজা একদিন পাবেই।

হুম,কিন্তু এখন তা ভাবার বিষয় না,আমাদের বাবার রেখে যাওয়া আমানত রক্ষা করতে হবে,না হলে ওই মাহি আমাদের বাড়ি ভেঁঙে না জানি কতো বড় বাংলা উঠাবে,কাল সকালে কোর্টে সম্পত্তি নিয়ে ফায়সালা হবে আর তার আগেই আমাদের মাহির বিরুদ্ধে প্রামাণ আনতে হবে আমাদের।

হ্যাঁ তবে কিভাবে আনবো?

একদম সহজ,তুই তো জানিস ওই মাহি যতোটা চালাক ততোটাই মুখ পাতলা মেয়ে।একটু টুনকো দিলে পেট থেকে সব কথা বর বর করে বলে দেয়,তোর মনে নেই স্কুল টাইমে কিভাবে আমরা ওর পেটে পুরা কুবুদ্ধি জানতে পারতাম যা ও আমাদের বিরুদ্ধে এটে রাখতো,আজ সেটাই কাজে লাগাতে হবে।

আঁখি আয়েশা মাহির উদ্দেশ্য বের হলো।

______________

হল ভর্তি লোকের সামনে ডায়মন্ড রিং হাতে হাটু গেঁড়ে বসেছে তাজবীর,সামনেই সায়েদা দাঁড়িয়ে, একটু আগেই তাজবীর নিজের মনের অব্যক্ত ভাব সায়েদাকে প্রকাশ করেছে সবাইকে সাক্ষী রেখে।এবার সায়েদা ইউল ইউ মেরি মি বলে ওর উত্তরের অপেক্ষায় মুখে একরাশ হাসি টাঙিয়ে সায়েদার দিকে দৃষ্টি অটল রেখে তাকিয়ে আছে,তবে সায়েদা কিছু বলছে না,সবাই জোরে জোরে বলছে।

সায়েদা সে ইয়েস,সায়েদা।সে ইয়েস।

কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে সায়েদা অট্টাহাসিতে ফেঁটে পড়লো,হাসতেই থাকলো,কেউ বুঝতে পারলো না ওর হাসির মানে,তাজবীরের অবাকত্ব টা একটু বেশিই হলো,সায়েদা এবার হাসতে হাসতে বললো।

আমাকে কি যেনো বলতে তুমি তাজবীর,ও হ্যাঁ মনে পরেছে,বোকা টিউবলাইট,তবে তুমি কি?আরে এতোদিন ধরে তোমার সাথে কথা বলে তোমাকে নিজের প্রেমে ফেললাম,তোমার সাথে প্রেমের অভিনয় করলাম,তোমাকে দিয়েই তোমার আর আমার সব ফ্রেন্ডকে একত্রে করালাম আর সবার সামনেই প্রমাণ করে দিলাম যে টিউবলাইট আর বোকা গাঁদা আমি না বরং তুমি,হা হা হা হা,অনেক মজা লাগে না তোমার অন্যকে নিজে মজা করতে এখন কেমন লাগলো যখন নিজের সাথে হলো এমনটা?এখন অবশ্য হয়তো এসব ভালো লাগছে না,এতো বড় বিজনেসম্যান হয়েও আমার ছল বুঝতে পারলে না,বোকা হলেই এমন,কেমন লাগলো এবার সবার সামনে অপমানিত হয়ে? হা হা হা।

সায়েদার কথাগুলো শুনে তাজবীরের চোখ বেয়ে টপটপ করে জল বইতে শুরু হয়,বসা থেকে উঠে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে,কথাগুলো সব যেনো ওর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।

সেখানের সবাই হতবাক সায়েদার এমন কান্ডে, কেউ আশা করে নি সায়েদা এমনটা করবে,তাজবীর এবার কান্নায় ধরে আসা কন্ঠে বললো।

ভালোই করেছো,আজ হয়তো তুমি অনেক খুশি হয়েছে নিজের প্রতিশোধটা যে নিতে পেরে গেছো তুমি।সত্যিই তুমি বোকা একদম নও,বোকা তো আমার এই মন যে তোমার চাতুরী ধরতে পারে নি,আমি তোমার সাথে যা যা করেছি তার জন্য ক্ষমা চাইছি পারলে ক্ষমা করে দিয়ো কারন আবারও তার শোধ দেওয়ার মতো অবস্থা আমার নেই।

চোখ মুছতে ব্যস্ত হয়ে তাজবীর স্থান ত্যাগ করলো, তাজবীরের এক ফ্রেন্ড অনেকটা ক্ষিপ্ত ভঙ্গিতে বললো এবার সায়েদাকে।

আজ নিজেকে নিয়ে অনেক প্রাউড ফিল হচ্ছে তাই না,হবারই কথা,তাজবীর সুদর্শন সাকসেসফুল বিজনেসম্যান যার আগ পিছন মেয়েরা ঘুরে বেড়ায় তবে কখনো কাউকে পাত্তা দেয় নি। তাকে যে প্রেমের জালে ফেলে যথারীতি নাচিয়ে দিয়েছো তুমি,যে ছেলে কাজ ছাড়া কিছুই বুঝতো না সে ছেলে কাজ ধান্দা ফেলে তোমার পিছন পড়ে গিয়েছিলো,জানো তোমাকে সময় দিতে গিয়ে এ মাসে বিজনেসে ও কতো বড় লস খেয়েছে ও তবে তা গায়ে মাখে নি এটা ভেবে যে পরিবর্তে তোমাকে পেয়েছিলো,ও কখনোই কোনো মেয়ের সাথে তেমন ফ্লার্ট বা ফাজলামো করে না,তোমার সাথে করেছিলো কারন প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলেছিলো তোমাকে, যখনি কথা হতো আমার সাথে শুধু তোমাকে নিয়েই কথা বলতো,আজ আমার কি মনে হয় জানো যে তুমি সত্যিই টিউবলাইট তা না হলে হাতের মুঠোয় হিরে পেয়ে তা ছুঁড়ে ফেলতে না।

ছেলেটা কথাগুলো বলে চলে যায়,সায়েদার প্রায় সব ফ্রেন্ডও ওকে কথা শুনিয়ে যায় এ নিয়ে,সায়েদারও মন পিঞ্জরের কোনে কেনো যেনো একটা খারাপ লাগা কাজ করতে শুরু করেছে।

সায়েদা প্রায় দিন রাত সারাক্ষণই তাজবীরের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত থাকতো,একদিন চ্যাট করারত অবস্থায় তাজবীর সায়েদাকে প্রপোজ করে,সায়েদাও মানা করে না,তবে ও চায় তাজবীর যেনো সায়েদা আর তাজবীরের সকল ফ্রেন্ডসদের সামনে ওকে প্রপোজ করে,তাজবীরও এতে দ্বিমত করলো না,আর তারপর এসব ব্যবস্থা তাজবীরই করলো শুধু সায়েদার জন্য।

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here