#মন_মহুয়ার_নেশা,পর্ব_৩৪(অন্তিম পর্ব)
#তানজিলা_খাতুন_তানু
– মহুয়া তুমি হয়তো সেই দিনের কথা ভুলে যেতে পারো কিন্তু আমি ভুলিনি। ভাবতে পারছো তুমি আমি যদি আর একটু দেরি করতাম তাহলে হয়তো ওনার জায়গায় তুমি শুয়ে থাকে ওই বিছানায় কিংবা চিরনি’দ্রায় শায়িত হতে।
মহুয়ার চোখের সামনে সেই দিকের ঘটনাটা ফুটে উঠলো।
সেইদিন নিশানের বাবা মহুয়াকে ধাক্কা দেবার পূর্বেই নিশানের মা মহুয়ার হাত ধরে টেনে নেন আর ধাক্কা দিতে গিয়ে সামনে কেউ না থাকাতে উনি নিজেই ছাদ থেকে পড়ে যান। সকলকে বিষয়টা নিছক এ’ক্সি’ডেন্ট হিসাবে জানলেও নিশানের মা সবটাই জানতেন, এবং সবকিছুর জন্য উপর ওয়ালার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
– মা আপনার উসিলায় আমি ওইদিন রক্ষা হয়েছিলাম। আপনি ঠিকমতো না আসলে আমার সন্তান কখনোই এই পৃথীবীর মুখ দেখতে পেতো না। তবুও জানেন আমি কেন ওনার সত্যিটা কাউকে বলিনি, কারণ আমি চাই নি এই আহমেদ পরিবারের উপরে আর কেউ কোনো কাঁদা ছোড়াছুড়ি করুক, আমার সন্তান জানুক তার দাদু একজন অপরাধী আমি জানাতে চাই নি।
– আমি সবটাই জানি আর বুঝিও। যাও নিজের ঘরে গিয়ে রেস্ট নাও।
মহুয়া চলে যেতেই। নিশানের মা মহুয়ার বাবার ছবিটা বের করে বললেন…
– আমি চাইলেই তোমার খু”নীকে শাস্তি দিতে পারতাম, কিন্তু আমি চাইনি আমার সন্তানের মাথার উপর থেকে বাবা নামক ছায়াটা কেড়ে নিতে, তবে উনি যতটা অন্যায় করেছেন তার থেকে দ্বিগুণ বেশি কষ্ট পাচ্ছেন এই কয়েকটা বছরে। আমার স্বামী হলেও ওনার এখন সবথেকে বড়ো পরিচয় উনি একজন অ’পরাধী আর অ’পরাধীর কোনো ক্ষমা নেয়।
মানুষের ক্ষতগুলো গভীর ভাবে দাগ কাটে তার মনের ভেতরে। চাইলেও সবকিছু ভুলে নতুন করে কিছুই শুরু করা যায়নি। নিশানের বাবার ওই এ’ক্সি’ডে’ন্ট টা না হলে হয়তো মহুয়া কিংবা নিশানের মা নিজেই শা”স্তি দিতে অথবা গোটা সমাজের কাছে সত্যিটা প্রকাশিত হতো আইন শা’স্তি দিতো। কিন্তু ওনাকে ওনার ভাগ্য নিজেই শা’স্তি দিয়ে চলেছে। বিছানায় শুয়ে জীবন যাপন করা কতটা যে কষ্টকর সেটা যে করে সেই ভালো জানে।। তার উপরে ওনার সবথেকে আপন নিজের স্ত্রী ওনার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে,সবদিক থেকে প্রতিনিয়ত একটু একটু করে শে’ষ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু কিছুই করতে পারছে না এটাই ওনার শা’স্তি।
মহুয়া নিজের ঘরে গিয়ে সোফাতে বসে পড়ে সবকিছু ভাবতে লাগলো।
অন্যদিকে….
অর্ক নিশির সাথে ফোনালাপে ব্যস্ত। দুজনেই দুজনের মতোই একসাথে নতুন ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখছে।
– আর যাই বলো মহুয়ার কারনেই আমি কিন্তু তোমাকে পেলাম।
– হ্যাঁ আমার জীবনে দিদিভাইয়ের অবদান অনেক। দিদিভাইয়ের জন্যই আমি এই জায়গায় আসতে পেরেছি এবং সবথেকে বড়ো কথা আমি বেঁ”চে আছি দিদিভাইয়ের কারনেই।
– যাইহোক শেষ ভালো যার তার সব ভালো,আর আমাদের শেষ ভালো মানেই সব ভালো বুঝলে নিশু পাখি।
– হুমম।
___________
মিতালী আকাশের দিকে তাকিয়ে দুই ফোঁটা চোখের পানি ফেললো।
– তুমি তো চেয়েছিলে তাই না তোমার মিতা একদিন স্বনির্ভর হবে,দ্যাখো আজকে আমি হয়েছি কিন্তু তুমিই নেয় আমার কাছে। তুমি পাশে থাকলে না কেন,এইভাবে মাঝপথে হাত ছেড়ে দিলে কেন। অ’পরাধ করেছিলে তাই বলে নিজেকে এইভাবে শে’ষ করে দেবে। তুমি সত্যের পথে থাকলে আমাদের গল্পটা হয়তো অন্যরকম হতো। তোমার সাথে সাথে আমার ওহ আর ভালো থাকা হলো না, দূরে থেকেও আমাদের ছেলেটার জন্য দোয়া করো, যেন ছেলেটাকে মানুষের মতো মানুষ করতে পারি ।।
__________
মহুয়াকে চিন্তিত হয়ে বসে থাকতে দেখে নিশান বলে উঠলো….
– কি হয়েছে তোমাকে এত চিন্তিত লাগছে কেন?
নিশানের প্রশ্ন শুনে মহুয়া মাথা তুলে তাকালো। মানুষটার থেকে এতটা গভীর ভাবে কেউ বোঝেনি হয়তো কেউ বুঝবে ও না নিশানের পাঁজরের অংশ বলেই হয়তো মহুয়াকে এতটা বোঝে।
– বলো কি হয়েছে।
– আমাদের বিয়ের কতগুলো দিন হয়ে গেল বলো।
– হুমম, দিনগুলো কিভাবে যেন পানির স্রোতের মতো চলে যাচ্ছে।
– হুমম।
– তবে একটা কথা কি জানো।
– কি।
– এখনো আগের মতোই ভালোবাসি। ঠিক আগের মতোই আমার #মন_মহুয়ার_নেশা’য় আসক্ত ভালোবাসি বউটা।
– আমিও ভালোবাসি।
______________
– ভালোবাসি মহুয়া। ভালোবাসি তোকে। হয়তো তুই আজকে তোর স্বামীর বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে থাকবি আর আমার বুকটা যে ফাঁকাই থাকবে। তুই স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে শান্তিতে সংসার করবি কিন্তু আমি এই অন্ধকার কুঠিরে বসবাস করছি। পুরুষদের পতনের মূল নারীই হয় আর আমার পতনের জন্য দায়ী তুই। তোর মায়াতে আসক্ত হয়ে আমি নিজের কেরিয়ার,নিজের লাইফ সবটাই শেষ করে দিলাম কিন্তু তোকে পেলাম না কি ক্ষতি হতো উপর ওয়ালা আমার সাথে তোর ভাগ্যটা জুড়ে দিতো। যদি তুই আমার জিবনে নাই বা থাকবি আমার নাই বা হবি তাহলে কেন আমার জীবনে আসলি কেন নিজের মায়াতে আসক্ত করলি। আমি যে গভীর ভাবে তোর নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছি। আমার #মন_মহুয়ার_নেশা’য় আসক্ত। ভালোবাসি মহুয়া। এইভাবেই হয়তো শত শত প্রেমিক তার ভালোবাসার মানুষটিকে না পেয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে আমিও না হয় তোকে ভালোবেসে দেবদাস হলাম। শত বছর পরেও আমি তোকেই ভালোবাসবো। হয়তো আমার মতোই কোনো এক ব্যর্থ প্রেমিক আমার এই হৃদয় ভাঙা গল্পটা পড়বে, আর আকাশের দিকে তাকিয়ে গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলবে। কিন্তু আমি যে আকাশটাও পাচ্ছি না।
ক্রিশ গভীরভাবে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ক্রিশের অপরাধ ধরা পড়ার পর ৫ বছরের জেল হয়েছে ওর। প্রতিরাতেই ক্রিশ গভীর নিঃশ্বাসের সাথে মহুয়াকে নিয়ে নিজের অনুভূতির কথাগুলো প্রকাশ করে।
প্রতিরাতেই শত শত প্রেমিক পুরুষ এইভাবেই আকাশের দিকে তাকিয়ে গভীর দীর্ঘশ্বাসের সাথে নিজের মনের অব্যক্ত কথাগুলো প্রকাশ করে। তবুও ভালোবাসা সুন্দর।
#সমাপ্ত