মন_মহুয়ার_নেশা,১০,১১

0
527

#মন_মহুয়ার_নেশা,১০,১১
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(পর্ব_১০)

নিশি ভেতরে ঢুকেই মহুয়াকে জড়িয়ে ধরলো।

– কি ব্যাপার ম্যাডাম আজকে এতটা খুশি কেন।
– দিভাই জানো আমি এইচএসসি পরীক্ষার এ+ পেয়েছি।
– ওয়াও গুড নিউজ। এটাতো খুব আনন্দের খবর আমি জানতাম তুই পারবি।
– সবটাই তো তোমার জন্য হয়েছে।

মহুয়া নিশিকে ছেড়ে দিয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে বললো।

– পড়াশোনাটা কি আমি করেছি নাকি।
– না আমি করেছি তবে পড়িয়েছো তো তুমিই।
– এইরকম বলিস না তোর নিজের চেষ্টাতেই আজকে তুই এই জায়গায় দোয়া করি আমার ছোট বোনটা অনেক বড়ো হোক।
– হুম। দিভাই আজকে তোমাকে মা যেতে বলেছে আমাদের বাড়িতে ।
– কেন রে।
– আমি ভালো নম্বর পেয়েছি, স্কুলের মধ্যে ফার্স্ট হয়েছি শুনে মা বললো আমাকে আর তোমাকে রেঁধে খাওয়াবে।
– তাই
– হুম তুমি যাবে তো।
– হ্যা রে যাবো কিন্তু এখন একটু আমাকে হাসপাতালে যেতে হবে তারপরে না হয় যাবো।
– আচ্ছা সে তুমি তোমার সুবিধা মতো যেয়ো। তবে আমি আর মা কিন্তু তোমার অপেক্ষায় থাকবো।

কথাটা বলেই নিশি ছুট লাগায় বাড়ির দিকে,মাকে বলতে হবে দিভাই আসবে অনেক কাজ বাকি আছে দিভাইকে সারপ্রাইজ দিতে হবে না।

নিশির বলা কথার একটা শব্দ মহুয়ার কানে বাজতে লাগলো,, অপেক্ষায় থাকবো। সেও তো একজনের অপেক্ষায় আছে কিন্তু সে তো ফিরলো না একবারের জন্যও।

সেইদিন নিশি মা”*রা যায়নি,,আর না ওর লা***শ পাওয়া গিয়েছিলো,,সবকিছুই মহুয়ার প্ল্যান ছিলো। মহুয়া তার ড্যাডকে সবকিছু বলাতে তিনি লোক পাঠিয়ে নিশিকে উদ্ধার করেন। এবং প্ল্যান মতোই সকালে একটা মেয়ের লা**শ পাওয়া যায়। লা***শটা ছিলো একজন অন্য মেয়ের, যে আগেই মা**রা গিয়েছিলো এবং বেও**য়ারি*শ লা**শ ছিলো। আর মহুয়া যখন পোস্ট ম**র্টে**ম এর দায়িত্ব পেলো তখন মহুয়ার উপরে পাচার কারীদের নজর পড়ে। সেটাই ওদের প্ল্যান ছিলো।

সবকিছু মিটে যাবার পর মহুয়া নিশিকে সবার সামনে নিয়ে আসে,, পড়াশোনা শেখায় নিজের দায়িত্ব আর সেই নিশিই গ্রামের স্কুলে রের্কড মার্কস পেয়ে ফার্স্ট হয়েছে।

ওইদিকে…

নিশি তাড়াতাড়ি করে দৌড়ে বাড়ির উঠানে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরলো।

– মা দিভাই আসবে বলেছে।
– সত্যি বলছিস তুই।
– হ্যা মা সত্যি।
– তাহলে তো রান্না করতে হবে,,সর দেখি তাড়াতাড়ি অনেক রান্না বাকি আছে।

নিশির মা হতদন্ত হয়ে ভেতরে চলে গেলেন। নিশিকে নতুন জীবন দান করেছে মহুয়া। মহুয়ার জন্যই নিশি আজকে জীবিত আছে, শুধু তাই নয় মহুয়া নিশিকে নিজের বোনের স্থান দিয়েছে যেটা নিশির অনেক বড়ো পাওয়া।

নিশি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

দুপুরে..

মহুয়া হাসপাতালের কাজ সেরে নিশিদের বাড়িতে উপস্থিত হয়। চাইলেও নিশির কোনো কথা ফেলতে পারে না। কাজের চাপ থাকলেও ছুটি নিয়ে এসেছে,বাকিটা রাতে পুষিয়ে দেবে।

মহুয়াকে দেখা মাত্রই নিশি আর ওর মা দৌড়ে আসলো। নিশি দৌড়ে জড়িয়ে ধরতে গেলেও মহুয়া বারন করলো…
– একদম কাছে আসবি না।
– কেন দিভাই ( অবাক হয়ে)
– আরে পাগলি আমি হাসপাতাল থেকে এসেছি,শরীরে অনেক নোংরা আছে, কোয়াটার হয়েই আসতাম কিন্তু বেলা হয়ে যাবে বলে চলে আসলাম। কাকিমা তোমার একটা শাড়ি হবে।

কথাটা শুনে নিশির মায়ের চোখ ছলছল করে উঠলো। মেয়েটা যে বড্ড মায়াতে ফেলে দিয়েছে তাদের। সুন্দর সহজ কথাতে মহুয়া সকলকেই আপন করে নিয়েছে সাবলীল ভাবে। উনি মাথা নাড়িয়ে ঘরের ভেতরে চলে গেলেন শাড়ির খোঁজে।

নিশি দের বাড়িটা খুব একটা বড়ো না হলেও খুব ছোট না। তিনকামরা একতলার ঘরে,পাশেই রান্নাঘর, বাথরুম। উঠানের একদিকে মূরগীর ঘর, তার পাশে গোয়াল ঘর। নিশিদের ২ টো গোরু এবং ৪ টে ছাগল আছে। সাথে কয়েকটা খরগোশ,মহুয়া নিশির সাথে গল্প করার সময়ে জেনেছিলো খরগোশ নিশি পছন্দ করে বলে নিশান ওকে এনে দিয়েছিলো খরগোশ ছানা গুলো।

নিশির মা হাতে একটা লাল শাড়ি নিয়ে ফিরে এলেন। মহুয়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন…
– বেশি পুরানো নয়,দু একবার পড়েছি তারপরে তো কপাল পুড়লো যত্ন করে রেখে দিয়েছিলাম আজকে তোমাকে দিলাম শাড়িটা। যাও হাত মুখ ধুয়ে কাপড়টা পড়ে নাও আমি ভাত বাড়ছি।

উনি আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেলেন। মহুয়া শাড়িটা হাতে নিয়ে দেখল লাল শাড়ি তার উপরে গোল্ডেন কালারের সুতোর কাজ করা একটা অসম্ভব সুন্দর একটা শাড়ি,,আর শাড়িটা দেখেও মনে হচ্ছে না কেউ পড়েছে। কিন্তু উনি তো বললেন দু একবার পড়েছেন?

শাড়িটা গায়ে জড়িয়ে নিশির ঘরে লাগানো আয়নার দিকে তাকালো মহুয়া। নিজেই নিজেকে দেখে অবাক হয়ে গেলো, সত্যি তাকে সুন্দর লাগছে এতদিন তো অনেক শাড়ি পড়েছে কই এত সুন্দর তো লাগেনি তাহলে আজকে কেন এতটা সুন্দর লাগছে নাকি শাড়িটাই সুন্দর তাই এইরকম লাগছে।

নিশি মহুয়াকে ডাকতে এসে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো। নিজে থেকেই মুখটা হাঁ হয়ে গেছে।

– ওহ দিভাই তোমাকে কি সুন্দর লাগছে গো।
– পাম দিচ্ছিস।
– আরে না সত্যি গো,তোমাকে একদম নতুন বউ লাগছে আমার তো মনে হচ্ছে আমি ছেলে হলে তোমাকে তু_লে নিয়ে যেতাম। ইশ্ আমার যদি একটা দাদা থাকতো তাহলে…

কথাটা শেষ করার আগেই নিশি চুপ করে গেলো। ভুল জায়গায় ভুল কথাটা বলে ফেলেছে এই পরিস্থিতি থেকে বের হবার জন্য নিশি মহুয়া কে বললো..
– দিভাই চলো মা ডাকছে।
– তুই যা আমি আসছি।

নিশি আর কিছু বললো না চুপ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘরের বাইরে চলে গেলো কিন্তু পুরোপুরি গেলো না দরজাটার আড়ালে দাঁড়িয়ে মহুয়াকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো,নিশি জানে মহুয়া কাঁদবে। কিন্তু নিশিই বা কি করবে ওর ওহ যে কিছুই করার নেই,সবকিছুই মে বিধাতার লিখন।

মহুয়ার চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। বড্ড কান্না পাচ্ছে ওর কিন্তু নিজেকে শক্ত রাখতে হবে তাই চোখের পানিটা মুছে নিয়ে ঠোঁটের কোনে একটা মেকি হাসি ফুটিয়ে খাবার ঘরে চলে গেলো।

গ্রামের মানুষরা মেঝেতে বসেই খাওয়া দাওয়া করে। বিষয়টা মহুয়ার বেশ ভালো লাগে। সবাই মিলে একসাথে মাটিতে বসে খাবার খাওয়ার আনন্দটাই আলাদা। মহুয়া পরিবার ছেড়ে গ্রামে আছে ঠিকই কিন্তু মাঝে মাঝেই নিশির মায়ের মধ্যে নিজের মায়ের রূপটা দেখতে পাই। কতদিন মায়ের হাত রান্না খাইনি। ভাবতেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসলো মহুয়ার।

নিশির মা আজকে মহুয়ার পছন্দমতো সব রান্না করেছে। নিশির কাছ থেকে সবটা জেনে নিয়ে মনের মতো করে রান্না করেছেন।

– কেমন হয়েছে মা।
– বড়ো মা কি বলবো বলো তো তোমাকে ,,এতসুন্দর রান্না করেছো মায়ের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে আমার।

কথাটা বলার সময়ে মহুয়ার চোখের কোনো পানি জমলো। নিশির মা মাথাতে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন…
– বাড়ির জন্য মন খারাপ করছে মা।
– হুম।
– একদিন দেখা করে আসো না, আর নাহলে একদিন আস্তে বলো আমাদের এইখানে।
– আচ্ছা ।

মহুয়া নিজেকে সামলে নিয়ে বললো…
– বড়ো মা আমি চাই নিশি শহরে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হোক।
– কিন্তু মা ওতে তো অনেক খরচ।
– বড়ো মা আমি থাকতে এইসব চিন্তা তোমাকে করতে হবে না।
– কিন্তু মা তুমি আর আমাদের জন্য কত করবে আর।
– আমি কী তোমাদের এতটাই পর। (মন খারাপ করে)
– আরে না তুমি তো আমার আর একটা মেয়ে।
– তাই যদি হয় তাহলে আর না করো না আমি জানি নিশিও চাই ডাক্তার হতে।
– আচ্ছা।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে মহুয়া নিশি আর ওর মা গল্প করতে লাগলো। তখনি মহুয়ার কাছে অর্কের ফোন আসলো।

– হ্যালো।
– মহু তাড়াতাড়ি তুই শহরে আয়।
– কিন্তু কেন কি হয়েছে?

#চলবে…

বিঃ দ্রঃ… গল্পের মোড় অন্যদিকে নিয়েছে। আশাকরি ৩বছর আগের সকল ঘটনাটা সকলের কাছেই ক্লিয়ার হয়ে গেছে। বাকি কিছুটা রহস্য আছে যেগুলো আসতে আসতে খুলবে,পাঠকদের রেসপন্স আশা করছি।

ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।
হ্যাপি রিডিং ?

#মন_মহুয়ার_নেশা
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(পর্ব_১১)

-আন্টি অসু_স্থ হয়ে পড়েছে। তুই তাড়াতাড়ি আয়।

মহুয়ার হাত থেকে ফোনটা পরে গেলো। চোখের কোনো পানি জমা হলো।

– দিভাই কি হয়েছে।
– মা অসু_স্থ হয়ে পড়েছে।

কথাটা বলেই মহুয়া নিশিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। এতদিন মায়ের দিকে দূর থাকলেও প্রতিটা মুহূর্তে অনুভব করেছে আর সেই মা অসু_স্থ শুনে মহুয়া নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে না। মহুয়া নিজের পানিটা মুছে দিয়ে বললো..
-আমাকে এখুনি বাড়ি যাবো,,আসছি।
– দিভাই আমিও যাবো। আমি এই অবস্থাতে তোমাকে কিছুতেই একা ছাড়বো না।
– কিন্তু নিশি।
– কোন কিন্তু নয় মহুয়া,, তুমি নিশিকে নিয়েই যাবে।
– আচ্ছা। নিশি তুই রেডি হ। আমি কোয়াটার থেকে আসছি।
– আচ্ছা।

মহুয়া নিশিকে সাথে করে নিয়ে শহরের উদ্দেশ্য রওনা দিলো। মহুয়ার পরনে নিশির মায়ের দেওয়া লাল শাড়িটা। নিশি একটা সবুজ রঙের থ্রিপিস পড়ে আছে।

মহুয়া বাড়ি না গিয়ে সোজা হাসপাতালে গেলো। হাসপাতালে পৌঁছে গিয়ে দৌড়ে বাবার কাছে গেলো…
– ড্যাড মম কেমন আছে।
– ভালো না রে।
– কী হয়েছে মমের।
– ডাক্তার বলছেন স্টো__ক করেছেন।
– আমি দেখছি।

মহুয়া এগিয়ে গেলো কেবিনের দিকে।

– আরে কে আপনি এইভাবে কেবিনের ভেতরে চলে আসলেন কীভাবে?
– আমি ডক্টর মহুয়া হাসান। আমি কী পেশেন্টকে দেখতে পারি প্লিজ।
– ওকে।

মহুয়া ওর মাকে চেক করলো। হ্যা সত্যি ওর মা একটা মিনি স্টো**ক করেছে। মহুয়া বড়ো ডাক্তারের সাথে কথা বলে ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করেছে। ডাক্তার মানুষের ধর্মই হলো মানুষের সেবা করা সেটা যেই হোক না কেন।

মহুয়া কেবিনের বাইরে দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে। ড্যাড আর নিশিকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে মহুয়া জোর করেই।দূর থেকে কেউ একজন তাকিয়ে চোখের তৃপ্তি মেটাচ্ছে। কতদিন পর চোখ ভরে দেখতে পাচ্ছে তাও আবার মহুয়ার জন্য নিজের পছন্দ করা শাড়িটাই। মানুষটা আর কেউ নয় নিশান।

তখনি নিশানের কাঁধে কেউ হাত দিলো। নিশান পেছনে ফিরে তাকাতেই ব্যক্তিটি বললো…
– কি দেখছেন ওইদিকে।
– কিছু না চলো।

নিশান ওনাকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। ব্যক্তিটি দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে বসা থাকা নারীটির দিকে তাকালো অদ্ভুত দৃষ্টিতে। চোখে মুখে কৌতুহলের রেখা রেখে বিরবির করে বললো….
– এই মেয়েটা কে?

২ দিন পর…

মহুয়ার মা অনেকটাই সুস্থ আছে। নিশি আজকে গ্রামে ফিরে যাবে মহুয়া এখন ফিরবে না মায়ের কাছে কয়েকদিন থেকে যাবে বলে ঠিক করেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে কয়েকদিনের ছুটি নিয়েছে।

নিশি সকলকে বিদায় জানিয়ে অর্কের সাথে বেড়িয়ে পড়লো। নিশিকে মহুয়া কিছুতেই একা ছাড়বে না তাই অর্কের সাথেই পাঠিয়ে দিলো। ট্রেনের ধারে বসে বাইরের দৃশ্য দেখতে ব্যস্ত নিশি। অর্ক নিজের ফোনটা সাইডে রেখে নিশির দিকে তাকিয়ে বললো…
– নিশি নিশান কোথায়?

হঠাৎ এইরকম প্রশ্ন শুনে নিশি চমকে উঠলো। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে শান্ত কন্ঠে বললো..
– জানি না।
– দ্যাখো নিশি প্লিজ আমার থেকে আর কিছু লুকিয়ে রেখো না। আমি কিছুতেই মহুয়াকে এইভাবে শেষ হয়ে যেতে দেখতে পারছি না।

নিশি হতভম্ব চোখে বললো…
– মানে?
– মানেটা তুমিও জানো ভালো করেই তাই নাটক করো না।
– কি জানি আমি‌
– সত্যি কি জানো না না বোঝো না বলো তো ।
– ক্লিয়ার করে বলুন এত প্যাচালো কথা আমার ভালো লাগছে না।
– তুমি সত্যি বোঝো না মহুয়া কেন ওই গ্রামে এতদিন পরে আছে?

নিশি মাথা নীচু করে নিলো। হ্যা সে কারনটা জানো ভুল ভালো‌করেই জানে।

– কি হলো নিশি চুপ করে গেলেন কেন বলো।
– আপনি কি সত্যি কিছু জানেন না।(নরম স্বরে)
– না মহু আমাকে কিছুই জানায় নি। এইদিকে ওর চিন্তাতে আন্টি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। আঙ্কেল ওহ চাইছেন একজন যোগ্য ছেলের সাথে মহুকে তুলে দিতে কিন্তু মহুর জেদের কাছে সবাই পরাজিত। তুমি সত্যি বলো‌ নিশান কোথায়। তোমার দাদা কোথায় বলো নিশি।
– আমার কোনো দাদা নেয়।

কথাটা শুনে চমকে উঠলো অর্ক,,ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো…
– দাদা নেয় মানে কি তাহলে নিশান কে?বলো নিশি চুপ করে থেকো না।

নিশি কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল…
– ওনার নাম মৃন্ময় আহমেদ নিশান। বাবার বন্ধুর ছেলে যদিও সঠিক জানি না আগে কখনোই ওনাকে দেখিনি।
– মানে কি এসবের কিছুই তো বুঝতে পারছি না। তাহলে কেন তোমরা তোমাদের বাড়িতে তোমাদের ছেলে হিসাবে পরিচয় দিয়েছো।
– সে অনেক বড়ো কাহিনী।
– আমাকে জানতে হবে নিশি সবটা বলো প্লিজ।
– আমার বাবা একজন চাকুরীজীবী ছিলেন। আমি ছোট বেলা থেকেই শহরেই মানুষ হয়েছি কিন্তু আমার যখন বয়স ১২ তখন বাবা হুট করেই আমাদের নিয়ে এই গ্রামে চলে আসেন। তার ২ বছর পরেই বাবা মা”””রা যান। বাবার জমানো টাকাতেই আমাদের সংসার চলে যাচ্ছিল, পাশাপাশি মা সেলাই মেশিনের কাজ করতো টুকটাক,আমার পড়াশোনা সংসার সবটাই ভালো যাচ্ছিল হুট করেই গ্রামে দেখা দিলো বেআইনি কাজ কর্ম।আর আমার পড়াশোনা সবটাই শূষ হয়ে গেলো। একদিন হুট করেই কোথা থেকে দাদা মানে নিশান আসলো। মা আর আমি তো প্রথমে চিনতে পারিনি,উনি বাবার বন্ধু হিসাবে পরিচয় দিলেন আর বললেন এই গ্রামে আমাদের বাড়িতে আমার নিজের দাদার পরিচয়ে থাকবেন। আমি রাজি না হলেও মা রাজী হয়ে যান কারনটা আমি জানি না তবে আসতে আসতে দাদা আমার মন জয় করে নেয় ,,একটা সময়ে মনে হতে থাকে উনি সত্যি ই আমার দাদা।

সবটা শুনে অর্কের মনে কতকগুলো প্রশ্নের উদয় হলো…
– নিশি মহুয়া এইগুলো জানে।
– না।
– আচ্ছা তোমার বাবা কিভাবে মারা গিয়েছিলো?
– এ**ক্সি**ডে**ন্ট করে।

অর্ক আর কিছুই বললো না। হিসাব গুলো মেলাতে লাগলো এবার। কিন্তু হিসাব গুলো‌ মেলার বদলে আরো ঘেঁটে যাচ্ছে বারবার। মনের কোনো একটা প্রশ্ন বারে বার উঁকি দিয়ে যাচ্ছে তাহলে কী নিশানই ছিলো ওই দলের লিডার!

ওইদিকে….

আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখের পানিটা নিরবে মুছে নিয়ে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে মহুয়া বিরবির করে বললো…

– আজকে আমি আবারো তোমাকে অনুভব করেছি নিশান। আমি অনুভব করেছি তোমাকে। তুমি আমার আশেপাশেই ছিলে কেন একবার সামনে এসে দাঁড়ালে না কেন একবারো বললে না মহুয়া আমি এসেছি। কেন চলে গেলে আমাকে একা করে কেন।

সবকিছু মিটে যাবার পর নিশি ফিরে আসার পরেই নিশান উধাও হয়ে যায়। মহুয়া নিশির কাছ থেকে শুধুমাত্র এইটুকুই জানতে পারে নিশান ওর দাদা নয় ওর বাবার বন্ধুর ছেলে।

মহুয়া আজও গ্রামে আছে শুধুমাত্র নিশানের অপেক্ষায়। ওর বিশ্বাস নিশান ফিরবেই ওর কাছে।

বাবার গলার আওয়াজ শুনে মহুয়া নিজের চোখের পানিটা মুছে নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে ,, বাবার কাছে গিয়ে বললো…
– বলো ড্যাড।
– মামনি আজকে আমি তোর কাছে একটা জিনিস চাইবো দিবি?

মহুয়া অনেকটাই অবাক হলো বাবার কথা শুনে। মাথা খাটিয়েও ভেবে বের করতে পারলো না সঠিক কথাটা।।
– কি বলো।
– মারে এইবার বিয়েটা করে নে মা।
– ড্যাড।
– তোর মা অসুস্থ হয়ে পড়েছে তোর চিন্তায় আমার শরীর ওহ ভালো যাচ্ছে না। তুই আমাদের একমাত্র সন্তান তোকে একজন যোগ্য কারোর হাতে তুলে দিয়ে যেতে না পারলে আমরা যে মরেও শা””ন্তি পাবো না।(করুন কন্ঠে)

ড্যাডের মুখের দিকে তাকিয়ে মহুয়া কিছু বলার মতো খুঁজে পেলো না। সত্যিই তো নিজের কথা ভাবতে গিয়ে মা বাবার সাথে অন্যায় করছে সে। মহুয়া মাথা নাড়িয়ে সায় জানাতেই মহুয়ার বাবা নিজের বুকে মেয়েকে জড়িয়ে নিয়ে কপালে চুমু দিয়ে চলে গেলেন। হয়তো পেছনে ফিরে তাকালে দেখতে পেতেন অশ্রুসিক্ত নয়নের মহুয়াকে। বাবা চলে যেতেই মহুয়া কান্নায় ভেংগে পড়লো। নিশান কে একটু নয় অনেকটাই ভালোবেসে ফেলেছে মহুয়া। নিশানের জায়গায় অন্য কাউকে নিজের মনের স্থানে জায়গা দেবার কথা ভাবতেই বুক কেঁপে উঠছে ওর কিন্তু কীই বা করবে ওহ যে নিরুপায় হয়ে উঠেছে। মা বাবার প্রতি দায়িত্ব বোধে তো অবহেলা করতে পারে না।

#চলবে….

নিশান যদি ভিলেন হয় পাঠকদের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে জানতে চাই?

ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।
হ্যাপি রিডিং ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here