মন_মহুয়ার_নেশা,১২,১৩

0
474

#মন_মহুয়ার_নেশা,১২,১৩
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(পর্ব_১২)

মহুয়ার মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। চাইলেও সবকিছু মেনে নিতে পারছে না আবার এড়িয়ে যেতেও পারছে না।

পরেরদিন মহুয়ার বাড়িতে হই হই কান্ড মহুয়ার মামা মামী,পিসি মাসি সকলেই উপস্থিত হয়েছেন। মহুয়ার মনের মাঝে একটাই কথা বাজছে
-আমার দেখাশোনা না বিয়ে এত মানুষের ভীড় কেন?

মহুয়ার মামাতো বোন নূর এসে মহুয়াকে একটা শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছে। মহুয়ার কাছে নতুন কিছুই লাগছে না প্রতিদিনই শাড়ি পড়ে তাই শাড়ি পড়লে ওকে অসাধারণ বা অন্যরকম লাগবে এটা আশা করা নিছকই বোকামী ছাড়া কিছুই না। আর সবথেকে বড়ো বিষয় হলো মহুয়া এমন একটা বয়সে আছে সেখানে কখনোই টিনেজারদের মতো ফিলিংস আসবে না ?

নূর মহুয়াকে সাজিয়ে দিয়ে বললো…
– দিয়াই তোকে কি সুন্দর লাগছে রে।

মহুয়া কিছুই না বলে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো। সত্যি বলতে অসুবিধা নেয় সঠিক বয়সে বিয়ে করলে একটা বেবি থাকতো এতদিনে আর সেই বয়সেই ঘোমটা টেনে পাত্রপক্ষের সামনে গিয়ে বসবে ভাবতেই মহুয়ার হাসি পাচ্ছে।

সময় ঘনিয়ে এলো। নিচে চেঁচামেচি র শব্দ পেতেই মহুয়া বুঝলো পাত্রপক্ষ হাজির হয়েছে ইতিমধ্যেই।

কিছুক্ষণ পর,

মহুয়াকে নীচে নিয়ে যাওয়া হলো। এতক্ষণ স্বাভাবিক ভাবে থাকলেও এখন একটু হলেও লজ্জা,জড়তা কাজ করছে মহুয়ার মাঝে। সালাম দিয়ে চুপ করে বসে থাকলে। পাশ থেকে একটা মহিলা কন্ঠস্বর ভেসে আসলো…
– কিরে মৃন্ময় পছন্দ হয়েছে?
– আমি ওনার সাথে কিছু কথা বলতে চাই।

চেনা একটা কন্ঠস্বর শুনে মহুয়া চমকে উঠে সামনে তাকিয়ে শক খেলো,, নিশান সত্যি নিশান মহুয়ার সামনে। মহুয়া কি রিয়াকশন দেবে ভুলে গেছে, ওর কি করা উচিত সেটা ভেবে উঠে পাচ্ছে না এইদিকে ওর বাবা নিশান কে নিয়ে ভেতরে যাবার জন্য বলেছেন মহুয়ার সেইদিকে খেয়াল নেয়।নূর এসে মহুয়াকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো…
– দিভাই ভেতরে চল।

নূরের কথাতে মহুয়া বাস্তবের জগতে পা রাখলো, সামনে তাকিয়ে দেখলো সকলেই মিটমিট করে হাসছে মহুয়ার কান্ড দেখে। মহুয়া এতক্ষণ নিশানের দিকে তাকিয়ে ছিলো সবার সামনে ভাবতেই মহুয়ার কান লাল হয়ে উঠেছে।

নূর মহুয়াকে নিশানের কাছে রেখে চলে যায়। মহুয়ার সবথেকে পছন্দের জায়গা ওর ছাদ। তাই তো ওর ড্যাড মেয়ের পছন্দমতো করে ছাদটাকে সাজিয়ে তুলেছেন। যে কারোরই পছন্দ হবে ছাদটি,মন খারাপ এক নিমিষেই দূর হয়ে যাবে।

মহুয়া চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে,মনের মাঝে অনেককিছুই করতে বা বলতে মন করছে কিন্তু সাহস, অভিমানের জোরে কোনটাই করে উঠতে পারছে না।

– কেমন আছেন ডাক্তার ম্যাডাম।

মহুয়ার বুকটা কেঁপে উঠলো এতদিন পর ডাক্তার ম্যাডাম ডাকটা শুনে। ৩ টে বছর পর ডাকটা শুনলো মহুয়া। চোখের কোনো পানি জমা হতে থাকলো যেকোন সময়ে পানিটা গড়িয়ে পড়বে। মহুয়া নিজেকে সামলে নিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো, নিশান দ্বিতীয়বারের মতো আবারো কথা বললো..
– কি হলো কথা বলবেন না।
– বলার মতো কিছুই নেয়, আর আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাকে খুব ভালো‌ রেখেছেন। আপনি কেমন আছেন।

মহুয়া নিজের মনকে শক্ত করে কথাগুলো বললেও ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাচ্ছিল। মহুয়ার কথা শুনে নিশানের মুখের কোনো একটা হাসি ফুটে উঠলো। হাসিটা যেন মহুয়াকে তাক করে বলছে…
– আমি জানি তুমি ভালো নেয়,ভালো নেয়।

নিশান নিজেকে আবারো গম্ভীর করে বললো…
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো‌ কথা, তা এতদিন বিয়ে করেন নি কেন?
– প্রয়োজন বোধ করিনি তাই। আপনি।(কাঠ কাঠ গলায়)
– আমিও। আমার আপনাকে কিছু কথা বলার আছে।

নিশানের কথাশুনে মহুয়ার বুকটা আবারো কেঁপে উঠলো।

– কি কথা (কৌতুহল কন্ঠে)

কিছুক্ষণ সবকিছুই চুপচাপ। মহুয়া অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে নিশানের কথার জন্য। নিশান একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো…
– আমার পক্ষে এই বিয়েটা করা সম্ভব নয় ডাক্তার ম্যাডাম। আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না,মাফ করে দেবেন আমাকে।

নিশান কথাটা বলে আর দাঁড়ালো না সিঁড়ি বেয়ে ছাদ থেকে নেমে চলে গেলো। রেখো গেল এক হৃদয়ভগ্ন নারীকে। মহুয়ার পৃথিবীটাই এলোমেলো হয়ে গেলো পুনরায়, নিশানকে দেখে যে আশা মনের ভেতরে বুনে ছিলো‌ সবটাই এক নিমিষেই ধূলিসাৎ হয়ে গেলো। চোখের কোনা থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। মহুয়া নিজেকে শান্ত করে বললো…
– আমি আবেগে আপ্লুত হয়ে আপনার জন্য কষ্ট পাবো না নিশান,, আপনার প্রত্যাখান আমি সহ্য করবো না আমিও আপনাকে প্রত্যাখান করবো। আমার প্রয়োজন নেয় আপনার মতো নিষ্ঠুর প্রেমিক পুরুষ। মহুয়া নিজের জন্য একাই যথেষ্ট।

বসার ঘরের সকলের মুখ থমথমে হয়ে গেলো মহুয়ার কথাতে। নিশান ছাদ থেকে নেমে এসে চুপ করে থাকলেও মহুয়া থাকেনি নীচে এসে ভরা বৈঠকে উপস্থিত সকলের সামনেই নির্ভয়ে বলে উঠেছে…
– আমি এই বিয়েতে রাজি নয়। আপনারা কেউই আর এই বিয়ের কথা আগাবেন না।

মহুয়া কথাগুলো বলে আর দাঁড়ায় নি। মহুয়ার বাবার মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে আছে। মেয়ের এইরকম খামখেয়ালীপনা টা মেনে নিতে পারছে না উনি। নিশান মহুয়ার যাবার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে কিছু বললো। যেটা মহুয়া কখনোই জানতে পারবে না।

ব্যস্ত পৃথিবীর ভীড়ে সবকিছুই যন্ত্রে পরিণত হয়েছে‌ সময় কেটে যাচ্ছে নিজ গতিতে। মহুয়া তার পরিবারকে আসল কারন জানায়নি নিশান কে প্রত্যাখান করার। নিশানের পরিবার সেইদিন খালি হাতেই ফিরে গিয়েছিলো। মহুয়া ওর বাবাকে বলে দিয়েছে অন্য কোনো ছেলে দেখতে খুব শীঘ্রই বিয়ে করবে। সবকিছুই নিশানের কানে গেছে কিন্তু কিছুই বলেনি। মহুয়া ওর্ বাবার কাছে জানতেও চাইনি নিশান কে? মানুষটির প্রতি অতিরিক্ত অভিমানের পাহাড় জমে উঠেছে। চাইলেও আর অনুভুতি আস্তে পারবে না।

মহুয়ার একা একা বাড়িতে ভালো লাগছিলো না, মা বাবার সাথে হাসপাতালে গেছে,মহুয়াকে ইচ্ছাকৃত ভাবেই নিয়ে যাওয়া হয়নি সেদিনের ঘটনা পর কারোর সাথেই ভালো করে কথা হয়নি মহুয়ার বাবা মা বড্ড অভিমান করে আছে ওর উপরে। মহুয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শপিং মলের দিকে রওনা দিলো।

কেনাকাটা শেষ করে গাড়ির কাছে আসার সময়ে কেউ একজন ওর মুখে রুমাল চেপে ধরলো। আর মহুয়া জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

১২ ঘন্টা পর…..

মহুয়া নিখোঁজ হয়েছে ১২ ঘন্টা হলো‌, মহুয়ার বাবা চারিদিকে খোঁজ খবর নিয়ে নিয়েছে কিন্তু কোথাও খুঁজে পাইনি মহুয়াকে। অর্ক নিজের ফোর্স দিয়ে খোঁজ চালিয়েও অনুসন্ধান করতে পারেনি, শপিং মলের সামনে মহুয়ার গাড়ি থাকলেও মহুয়াকে পাওয়া যায়নি।‌

অন্যদিকে…

মহুয়ার জ্ঞান ফিরে এসেছে কিন্তু কোথায় আছে সেটা বুঝে উঠতে‌ পারছে না। রুমটা অসম্ভব সুন্দর করে সাজানো।

– আমি কোথায়?
– আমার রাজ্যে।

একটা পুরুষ কন্ঠস্বর শুনে মহুয়া সামনে‌ তাকিয়ে চমকে উঠলো।

– নিশান আপনি?

#চলবে…

#মন_মহুয়ার_নেশা
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(পর্ব_১৩)

-নিশান তুমি এখানে। আর আমাকে এইভাবে তুলে নিয়ে আসার মানে কী?
– কিছুই না তুমি আজ থেকে আমার কাছেই থাকবে।
– কেন?
– সব কেন ওর মানে হয় না। তাই যেটা বলছি সেটা চুপচাপ শুনবে( অধিকার ভরা কন্ঠে)

মহুয়ার মেজাজ গরম হয়ে গেলো নিশানের কথা শুনে। নিজেই রিজেক্ট করে এখন আবার অধিকার দেখানো হচ্ছে।

– আমি তোমার কথা শুনতে বাধ্য নয় নিশান আহমেদ। (দাঁতে দাঁত চেপে)
– এতদিন নিজের মতো অনেককিছু করেছো এবার থেকে সবকিছুই আমার কথামতো করবে।
– তুমি বলবে আর আমি শুনবো ভাবলে কীভাবে,, আমি এখুনি বাড়ি যাবো সকলেই আমার জন্য চিন্তা করছে।

মহুয়া দরজার দিকে আগাতে লাগলো। কিছু একটা ভাঙার আওয়াজ পেয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখলো নিশানের হাত থেকে র**ক্ত পড়ছে,আর নিচে কাঁচের গ্লাস টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে যায় আছে। মহুয়া দৌড়ে গিয়ে নিশানের হাতটা ধরলো…
– কিরে হাতটা কাটলো ইশ্ এখুনি ড্রেসিং করতে হবে নাহলে ইনফেকশন হতে পারে।
– কিছুই হবে না হাতটা ছাড়ো।
– বলছি তো চুপচাপ বসে থাকতে।
– ঠিকাছে থাকবো তবে আমার একটা শর্ত আছে।

মহুয়া চোখ ছোট ছোট করে তাকালো নিশানের দিকে। মহুয়ার তাকানো দেখে নিশান ফিক করে হেসে ফেললো, তারপরে মহুয়ার নাকটা টিপে দিয়ে বললো…
– পাগলি একটা।

নিশানের কাজে মহুয়া হতভম্ব হয়ে চোখ গুলো বড়ো‌বড়ো করে নিয়েছে। এই নিশানকে ওতো চেনে না। এইরকম ব্যবহার করছে তার উপরে তুমি বলে ডাকছে ব্যাপারটা কী?

– এই তুমি সত্যি করে বলো তো তুমি কে?
– তোমার কি মনে হচ্ছে আমি নিশান সেজে অন্য কেউ এসেছি(বিরক্তে নাক মুখ কুঁচকে বললো)
– তাই তো মনে হচ্ছে।
– যতসব ফালতু কথা।ছাড়ো আমি বাইরে যাবো।
– চুপচাপ বসো।

মহুয়া আর বেশি কথা না বলে নিশানের হাতে ড্রেসিং করে দিলো।‌ পুরোটা সময় নিশান মহুয়াকে দেখতে ব্যস্ত ছিলো।

– হয়ে গেছে।
– থ্যাঙ্কস।
– শুধু থ্যাঙ্কসে কাজ হবে না।
– তাহলে(ভ্রু কুঁচকে)
– আমাকে বাড়ি যেতে দাও।
– তুমি এখানেই থাকবে এটাই ফাইনাল। আর আমার কথা অমান্য করার জন্য তুমি এই ঘরেই বন্ধি থাকবে আজকে সারাদিন থাকো তুমি।

নিশান ঘরের বাইরে গিয়ে দরজা আটকে দিলো। মহুয়া রাগে ফুঁসছে নিজের ফোনটাও খুঁজে পেলো না। রাগে ঘরের সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে।

১ দিন পর…

মহুয়া এখনো ঘর বন্ধি এর মাঝে একজন মেয়ে এসে খাবার দিয়ে গেলেও মহুয়া কিছুই মুখ তোলে নি। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে নিজেও জানে না।‌ঘুম ভেঙে গেলো দরজা খোলার শব্দ শুনে।

মহুয়া সামনে তাকিয়ে দেখলো নিশান এসেছে,, নিশানকে অগোছালো লাগছে,চুল,গায়ের শার্ট সবকিছুই এলোমেলো হয়ে আছে,মনে হচ্ছে নিশানের উপর দিয়ে কিছু ঝড় বয়ে গেছে। কি হয়েছে এই ১ দিনের ভেতরে।

নিশান শান্ত কন্ঠে প্রশ্ন করলো…
– কিছু খাওনি কেন?
– আমি বাড়ি যাবো,দ্যাখো নিশান ঝামেলা না করে আমাকে যেতে দাও প্লিজ।

নিশান কিছুই না বলে মহুয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো। হুট করেই মহুয়াকে জড়িয়ে ধরে অস্পষ্ট স্বরে কিছু বললো,মহুয়ার কানে পৌঁছালেও কিছুই বুঝতে পারলো না।

– এই নিশান তোমার কি হয়েছে?

নিশান মহুয়ার থেকে সরে দাঁড়িয়ে বললো..
– কিছুই হয়নি। চুপ করে খেয়ে নাও ।
– খাবো না আমি।
– প্লিজ মহু খেয়ে নাও রাগারাগি করার মতো আমার একটুও ইচ্ছা নেয় প্লিজ খেয়ে নেবে।

নিশান ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। মহুয়া গাল ফুলিয়ে বসে থাকলো, এর্ মাঝেই সেই মেয়েটায় আবারো খাবার দিয়ে গেছে। মহুয়া না খেয়ে চুপ করে বসে থাকলো।

নিশান ওয়াশরুম থেকে বের হলো। গায়ে একটা কালো রঙের টিশার্ট আর ট্রাউজার। মহুয়ার কাছে নিশানকে অপরূপ সুন্দর লাগলো কে বলেছে গোসল করার পর শুধু মেয়েদের সুন্দর লাগে ছেলেদের ওহ সুন্দর লাগে ভীষনভাবে সুন্দর লাগে। মহুয়া প্রতিদিনই নিশানকে নতুন রুপে দেখতে‌ পাচ্ছে। অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনো জানা বাকি আছে সেটা কবে জানবে সেটাও মহুয়ার জানা নেয়।

– কি হলো এখনো‌ খাওনি কেন?
– খাবো না।

নিশান নিজের হাতের তোয়ালেটা বিছানায় রেখে দিয়ে মহুয়ার সামনে বসে খাবারটা মুখের সামনে ধরলো।

– হা করো।
– খাবো …

কথাটা শেষ করার আগেই মহুয়ার গালে নিশান খাবার ঢুকিয়ে দিলো। একপ্রকার জোর করেই মহুয়াকে খাইয়ে দিলো। তারপরে ড়াত ধুয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।

– আমি বাড়ি যাবো নিশান এইবন্ধি জীবন আমার ভালো‌লাগছে না।
– যেতে পারবে তবে একটা শর্তে।
– কি শর্ত।

নিশান কিছু না বলে উঠে একটা কাগজ নিয়ে এসে মহুয়ার সামনে ধরে বলল…
– এই পেপারে একটা সাইন করে দাও তাহলেই তুমি এই ঘর থেকে মুক্তি পাবে।
– কিসের পেপার এটা।
– সেটা তোমার না জানলেও চলবে। সাইন করলে করো আর না করলে না করো।
– দূর দাও দেখি।

মহুয়া কিছুই না দেখে সাইন করে দিলো। নিশানের ঠোটের কোনে হাসি খেলে গেলো।

– এই নাও।এবার তো আমি মুক্তি।
– হুম।
– ওকে বাই।

মহুয়া রুম থেকে বের হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নীচে আসলো। বাড়িটা বিশাল বড়ো আর খুবই সুন্দর করে সাজানো গোছানো।

– এই এত বাড়িটা কি খালি থাকে কাউকে দেখতে পাচ্ছি না কেন?

মহুয়া এদিক ওদিক করতে করতে মেন দরজার দিকে এগিয়ে আসলো। অনেক চেষ্টা করেও মহুয়া দরজা খুলতে পারলো না। রাগে ইচ্ছা করছে নিশানের মা***থা ফা*টি*য়ে দিতে।

রাগে গজগজ করতে করতে নিশানের ঘরে পুনরায় ফিরে গেলো। মহুয়াকে আসতে দেখে নিশান বাঁকা হেসে বলল…

– এত ভালোবাসো আমাকে আমাকে ছেড়ে যেতেও চাইছো না। বাহ্ চমৎকার।
– দরজা বন্ধ কেন?( চিবিয়ে চিবিয়ে)

মহুয়ার কথা শুনে নিশান হা হা করে হেসে উঠলো। এতে করে মহুয়ার রাগটা আরো বেড়ে যাচ্ছে পারলে তো নিশানকে খু””””ন করে।

– তুমি এসেছো আমার ইচ্ছাতে আর যাবেও আমার ইচ্ছাতে।
– এটা কিন্তু কথা ছিলো না।
– ভালো করে মনে করে দেখো আমি বলেছিলাম এই ঘর থেকে মুক্তি পাবে। আমি আমার কথা রাখবো তুমি এখন থেকে বাড়ির সবজায়গায় যেতে পারবে কিন্তু এই বাড়ির বাইরে পা ফেলবে আমি বলার পর।
– তোমাকে তো আমি…
– আদর করবে(মহুয়া কে বলতে না দিয়ে নিশান বলল)

মহুয়ার রাগটা আরো বেড়ে যায় তেড়ে গিয়ে নিশানকে মারতে যায় নিশান‌ যত্ন করে মহুয়াকে জড়িয়ে ধরলো।

– লাফালাফি করতে নেয় ডাক্তার ম্যাডাম।
– ছাড়ো আমাকে।
– এই তোমাকে কে ডাক্তার বানালো‌ বলো তো।
– কি ?
– নিজে ডাক্তার হয়ে এতটা অপরিষ্কার তুমি ছিঃ একটা ড্রেস পরশু দিন থেকে পরে আছো। সরো আমার থেকে।

মহুয়ার মাথাতে দুষ্টুমি খেলে গেলো। আরো‌ শক্ত করে নিশানকে জড়িয়ে ধরলো।

– এই মহু আমাকে ছাড়ো বলছি আমি এখনি গোসল করেছি আবার করতে হবে দূর। আর ঘরের অবস্থা কি করেছো তুমি।

মহুয়া নিশানকে ছেড়ে দিয়ে বলল..

– আমি কি জানতাম আমি কিডন্যাপ হবো তাহলে নিশ্চয় ড্রেস আনতাম সাথে করে।
– ওই আলমারিতে শাড়ি আছে পছন্দমতো একটা পরে নাও।

মহুয়া আর কথা বাড়ালো না নিজের ওহ অস্বস্তি হচ্ছে এই এক কাপড় পরে থাকাতে একটু শাওয়ার নিলে ভালো লাগবে। মহুয়া আলমারি খুলে হা হয়ে গেলো। গোটা আলমারি ভর্তি শাড়ি,সমস্ত রকমের কালেকশান আছে।

– এত শাড়ি কার।
– আমার মায়াবতীর জন্য কিনে রেখেছি। আজকে বাধ্য হয়েই তোমাকে একটা দিচ্ছি।বেশি কথা না বলে তাড়াতাড়ি শাওয়ার নাও ঘামের গন্ধে টিকতে পারছি না।

নিশানের কথা শুনে মহুয়ার মনটা গম্ভীর হয়ে যায়। নিশান ইচ্ছাকরেই ঘামের কথাটা বললো মহুয়াকে তাড়া দেবার জন্য মোটেই ঘামের গন্ধ আসছে না এসিতে বসে থাকলে কারোর আর ঘাম হয় নাকি।

মহুয়া শাড়ির মাঝ থেকে একটা সাধারণ, সিম্পল লাল রঙের তাঁতের শাড়ি বেছে নিলো। আর মনে মনে নিশানের চোদ্দ গোষ্ঠীর বারোটা বাজাতে লাগলো
– আমার মায়াবতীর জন্য কেনা,, মায়াবতীর জন্য এত শাড়ি আর আমার বেলায়।শয়তান একটা বজ্জাত ল*ম্প**ট ছেলে।

মহুয়া শাওয়ার নিয়ে‌ বের হয়ে আসলো। লাল রঙের তাঁতের শাড়িতে মহুয়াকে পুরোই নতুন বউ লাগছে,চুলগুলো দিয়ে টুপটুপ করে পানি পড়ছে,মহুয়ার চুলগুলো এখন কোমড় পর্যন্ত হয়ে গেছে। নিশান একধ্যানে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

– ওই হ্যালো কি দেখছো হা করে।
– তোমাকে।

মহুয়া ভ্রু কুঁচকে বললো…
-তাহলে তোমার মায়াবতীর কি হবে।

নিশান মহুয়ার প্রশ্ন শুনে কিছু বললো‌না শুধু হাসলো। মহুয়া নিশানকে কিছু একটা বলতে যায় তখনি নিশান বললো…
– আমি জানি তোমার মনে অনেক প্রশ্ন জমা হয়েছে। হওয়াটা স্বাভাবিক, অপেক্ষা করো সময় হলে আমি নিজেই তোমাকে সবকিছু বলবো।

নিশান কথাটা বলেই ঘর থেকে চলে যায়। মহুয়া নিশানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

#চলবে…

কেমন লাগছে নিশানকে।
ভুল ত্রুটি মার্জনীয়। সকলেই রেসপন্স করুন।
হ্যাপি রিডিং ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here