#মন_মহুয়ার_নেশা-০২,০৩
#তানজিলা_খাতুন_তানু
(পর্ব_২)
মহুয়া নিজের কোয়াটারে ফিরে আসলো। নিজের মোবাইলটা তুলে নিয়ে কল লাগালো মায়ের নম্বরে, কলটা রিসিভ করা মাত্রই আদুরে গলায় মহুয়ার মা বলে উঠলো…
– কেমন আছিস মা।
– ভালোই আছি তুমি আর ড্যাড কেমন আছো।
– ভালো আছি আমি।
মহুয়ার মা কিছুক্ষন কথা বলার পর ওর মা ওর বাবাকে ফোনটা দিলো, কুশল বিনিময় করার পরে,ওর বাবা জিজ্ঞেস করলো…
– গ্রামটা কেমন লাগছে।
বাবার প্রশ্ন শুনে মহুয়ার আজকের কথা গুলো মনে পড়ে যায়। মনটা কিছুটা বিষন্ন করে বললো…
– ড্যাড জানো এই জায়গাটা কিরকম একটা অদ্ভুত। আর আজকেই একটা মেয়ের লা****শ পাওয়া গেছে।
কথাটা শোনার পর ওইপাশ থেকে আর কোনো শব্দ আসলো না।
-ড্যাড।
-হ্যা মামনি বলো।
-আমি কি বললাম শুনেছো।
-হুম শুনেছি। তোমাকে একটা কথা বলে রাখছি একজন ডাক্তারের ধর্ম শুধুমাত্র রোগীকে সুস্থতা দান করা তাই নয় সমাজকেও সুস্থতা দান করা কিন্তু একজন ডক্টরের কর্তব্য।
– বুঝলাম না ঠিক।
– সময় মতো সবকিছুই বুঝতে পারবে এখন আপাতত নিজের খেয়াল রেখো রাখছি।
মহুয়ার বাবা ফোনটা কেটে দিলেন। মহুয়া বাবার কথাগুলো বারবার রিপিট করতে লাগলো,মনের মাঝে একটা প্রশ্ন জাগলো…
– ড্যাড এই কথাগুলো কেন বললো?
মহুয়া পরেরদিন সকালেই গ্রামের থানাতে উপস্থিত হলো। ওকে দেখা মাত্রই তন্ময় বসতে বললো,আর হেসে জিজ্ঞেস করলো…
– কী ডাক্তার ম্যাডাম হঠাৎ করে থানাতে সবকিছু ঠিক আছে তো।
– হুম ঠিকই আছে। ওই মেয়েটার কথা জানতে আসলাম।
– কোন মেয়েটা।
– কাল যার লা**শ পাওয়া গেলো সেই মেয়েটা।
তন্ময় কিছু না বলে হাত খুঁটতে লাগলো। মহুয়া আবারো প্রশ্নটা করার পর তন্ময় মিনমিনে গলায় বললো…
– মেয়েটা সু*ই*সাই*ড করেছে। তাই আমরা কালকেই ওর দা**ফনের ব্যবস্থা করেছি।
– হোয়াট!
– জ্বি ম্যাডাম। আপনাকে একটা বিষয় জানানোর ছিলো এই গ্রামের কোনো বিষয়ে মাথা গলাবেন না তাহলে হয়তো আপনার এখানে থাকাটা বি*প*দ*জনক হয়ে উঠবে।
– আমি না এই গ্রামের রহস্য কিছুই বুঝি না। তবে একজন ডক্টর হিসাবে আমাকে কি করতে হবে সেটা আমি জানি তাই এই গ্রামের উন্নতি আমি ঘটাবোই। এটাই আমার চ্যালেঞ্জ।
রাগে সিংহীর মতো গজগজ করতে করতে বেড়ি এ গেলো। পেছন থেকে কেউ একজন ডাকলো…
– ডাক্তার ম্যাডাম।
মহুয়া পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো কালকের ছেলেটা মানে নিশান দাঁড়িয়ে আছে। মহুয়া ভ্রু কুঁচকে বললো…
– ডাকছিলে আমাকে?
– জ্বি।
মহুয়ার সামনে এসে দাঁড়ালো নিশান।
– এখানে কি করছিলেন?
– এই একবার এসেছিলাম থানাতে।
– কেন?
– কালকের মেয়েটার কথা জানার জন্য।
নিশনা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো।
– না জানি আর কত মেয়ে এইভাবে ন্যায় পাবে না।
– মানে?
– মানে অনেককিছুই ম্যাডাম। আপনি তো নতুন তাই জানেন না আসতে আসতে সব জানতে পারবেন বুঝতে পারবেন।
মহুয়া নিশানের কোনো কথায় বুঝতে পারলো না।নিশান আবারো বললো..
– একা এই গ্রামে একটা মেয়ে থাকা নিরাপদ নয়।
মহুয়া এবার একটু মজা করেই বললো…
– আমি তো আর দোকলা নয়। আমি তো সিঙ্গেল মানুষ তাই একাকেই থাকতে হবে।
কথাটা বলতে বলতে মহুয়া হেসে দিলো। নিশান চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে রইল ওর দিকে।
– ডাক্তার_ম্যাডাম আপনি কেন এই অজ পাড়া গাঁয়ে এসেছেন। শহরেই তো থাকলে পারতেন।
– কি করবো বলো আমাদের কাজটাই তো সেবা করা। তবে এই গ্রামটা ঘুরে দেখার ইচ্ছা ছিলো কিন্তু হবে না মনে হয়।
– কেন?
– একা তো কিভাবে ঘুরবো।
– আমি যাবো আপনার সাথে চলুন।
– তুমি যাবে।
– হুম।
নিশান আর মহুয়া হাঁটতে লাগলো। মহুয়া নিশানের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো…
– তুমি কী করো।
– চাষবাস করেই খাই।
– কেন পড়াশোনা করো নি।
– আর পড়াশোনা ১০ ক্লাস পরার পর বাপ ম*র*লো আর সংসারের ভার পড়লো আমার ঘাড়ে।
– বাড়িতে কে কে আছে তোমার।
– মা, ছোট বোন আর আমি ।
– নাম কী বোনের।
– নিশি।
– বা খুব সুন্দর নাম তো। আমার কোয়াটারে পাঠিয়ো না আমি গল্প করবো আর আমার সাথেই থাকবে ক্ষন আমি তো একাই থাকি।
– আচ্ছা ওকে বলে দেখি কি বলে।
– ঠিকাছে।
মহুয়াকে নিশান গ্রামটা ঘুরিয়ে দেখাতে লাগলো। রাস্তার দুই ধারে ধানের জমি, কিছুটা গেলেই বড়ো বড়ো পুকুর, গাছপালা এককথায় সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষের পেশা হচ্ছে কৃষিকাজ বা পশুপালন। কথায় বলে গ্রামের মানুষরা একটু সরল হয় সেটা কতটা সত্য মহুয়া জানে না।আরো কিছুটা যেতেই মহুয়া বলে উঠলো…
– ওইখানে কি হচ্ছে।
– কারখানা হচ্ছে। আগে ওখানে বিশাল জঙ্গল ছিলো
– বা তাহলে তো উন্নতি হচ্ছে গ্রামের।
– উন্নতি না অবনতি।( তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে)
– মানে?
– কারখানা হবার ফলে অনেক মানুষের কৃষিকাজের উৎপাদন কমে গেছে। জমি হারিয়েছে অনেকেই।কম টাকাতে কাজ করতে হচ্ছে।
– ওহ,তা এই কাজগুলো করছে কে?
– গ্রামের চেয়ারম্যান সাহেবের শ্যালক।
– তা চেয়ারম্যান সাহেব কিছুই বলেনি।
– কি বলবে,তাতে তো ওনার ওহ ভালোই চলছে।
– ওহ। আমাকে একটা কথা বলো তো, এই গ্রামে কোনো মেয়েকে খুব একটা দেখলাম না মেয়ে নেয় নাকি
– না মেয়ে কেন থাকবে না মেয়ে তো আছেই তবে…
– তবে কী?
– তবে গ্রামের মেয়েদের তাদের বাড়ির লোকেরা বের হতে দেয় না।
– কেন?
– ওই যে কাল দেখলেন না মেয়েটার কি হলো। এইরকম তো আরো অনেক মেয়ের সাথেই হয়েছে।
– মানে?
– কিছু না,, আপনার কোয়াটার এসে গেছে।
নিশান মহুয়াকে পৌঁছে দিয়ে চলে যায়। মহুয়া নিজের রুমে গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়, একা একা থাকতে ওর ভালো লাগছে না ওহ চাইছে একজন সঙ্গী যার সাথে একটু মন খুলে কথা বলবে, কিন্তু সেইরকম মানুষ পাবে কোথায়?
নিশান বাড়ি ফিরে দেখলো,ওর মা উনুনে আগুন দিচ্ছে রান্না বসাবে দুপুরের। নিশান নিজের এই ছোট বোনকে ডাকতে লাগলো…
– নিশি এই নিশি বোন একবার এইদিকে আয় তো।
দাদার ডাক শুনে ১৬ বছরের যুবতী মেয়ে নিশি বের হয়ে আসলো। পরনে সুতির শাড়ি,চুলগুলোকে বিনুনি করা দেখতে খুব ফর্সা না হলেও খারাপ মিষ্টি একটা মেয়ে।
– কি হয়েছে দাদা ডাকস কেন?
– গাঁয়ে নতুন ডাক্তার-ম্যাডাম এসেছে জানাস তো নিশ্চয়।
– হুম শুনলাম তো।
– ওই ডাক্তার -ম্যাডাম তোকে যেতে বলেছে।
– আমাকে কেন?
– আমি কি জানি একবার দেখা করে আসিস।
কথাটা নিশানের মায়ের কানে পৌঁছাতেই উনি রান্না ছেড়ে ছেলে মেয়ের সামনে এসে বললো..
-নিশি কোথাও যাবে না। আমি আমার মেয়েটাকে কোথাও যেতে দেবো না।
-মা এইসব বলো না, ডাক্তার-ম্যাডামের কাছে আমিই দিয়ে আসবো আর আমিই নিয়ে আসবো খন।
-তাহলে কি আছে। একটু বস আমি রান্না শেষকরেই তোকে খেতে দিচ্ছি।
বিকালে…
পরশুদিন থেকে মহুয়ার ডিউটি। আগেই চলে এসেছিলো গ্রামটা ঘুরে দেখার জন্য, কিন্তু এই গ্রামে এসে একা হয়ে যাবে ভাবেনি। গ্রামের মানুষগুলো নাকি মিশুকে হয় কই এইখানের মানুষগুলো তো একবারো ওর সাথেতে কথা বলতে আসলো না।
#চলবে…
বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।
সকলের রেসপন্স চাই।হ্যাপি রিডিং
#মন_মহুয়ার_নেশা
#তানজিলা_খাতুন_তানু
(পর্ব_৩)
মহুয়া নিজের মনের মাঝেই এই গ্রামটাকে নিয়ে নানা অভিযোগে জমা করেছে। গ্রামটা খুবই সুন্দর, তবে মহুয়ার কাছে গ্রামের মানুষদের একদম ভালো লাগেনি, লোকে বলে গ্রামের মানুষরা নাকি খুব মিশুকে হয় কই এই গ্রামের মানুষগুলো তো একবারো তার সাথে কথা বললো না। মহুয়ার নিজের মনেই এই গ্রামটার প্রতি অভিমান জমা হতে থাকে। নিজের ভাবনায় ছেদ পড়লো দরজায় টোকা মারার শব্দে,মহুয়ার মনে একটা প্রশ্ন জাগলো কে এসেছে এই সময়ে..
নিজের ভাবনা, কৌতুহল সবকিছুকে একপাশে সরিয়ে রেখে দিয়ে মহুয়া দরজা খুলে দিলো, দরজার সামনে একটা যুবতী মেয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে খুবই অবাক হয়েছে ওহ।
– কে তুমি?
– আমি নিশি তুমি তো ডাক্তার দিদি তাই না।
মহুয়া মাথা নেড়ে বোঝালো হ্যা কিন্তু নিশি বলে কাউকেই চেনে বলে মনে পড়ছে না ওর। নিজের মন-মস্তিত্বকে প্রশ্ন করতে করতেই দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা এক পুরুষকে দেখে মুখের কোনো হাসি ফুটে উঠলো..
নিশান এগিয়ে এসে বললো..
– এটা আমার ছোট বোন নিশি। আপনি দেখতে চাইলেন তাই নিয়ে আসলাম।
– ভালো করেছো। নিশি তুমি ভেতরে এসো তো।
নিশি ভেতরে আসলেও নিশান ভেতরে আসতে আপত্তি জানালো।
– আমার কিছু কাজ আছে আমি এখন আসছি।
নিশান চলে যেতেই মহুয়া ভেতরে গেলো। গিয়ে দেখলো নিশি এক ভাবে দাঁড়িয়ে আছে।
– কি গো পিচ্চি তোমার কি আমার ঘরটা ভালো লাগেনি।
– না গো ডাক্তার দিদি ভালো লাগবে না কেন।
– তুমি কিসে পড়ো?
– পড়ি।
– হুম।
নিশির মুখটা কালো অন্ধকারে ঢেকে গেলো। মহুয়া ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো..
– কি হলো বলো।
– আমি পড়াশোনা করিনা ডাক্তার দিদি।
– কেন?
– এই গ্রামে মেয়েদের ঘর থেকেই বের হতে দেওয়া হয় না আবার পড়াশোনা।
– মানে? আমাকে এই গ্রামের রহস্য টা একটু বলবে নিশি।
– জানতে চাও।
– হুম।
– একবছর আগেও এই গ্রামটা নিরাপদ ছিলো। গ্রামের মানুষগুলো সাধারন ভাবে জীবন-যাপন করতো। গ্রামের মেয়েরা- ছেলেরা পড়াশোনা করতো, সেইজন্যই খেয়াল করো গ্রামের মানুষদের কথাগুলো কিন্তু শুদ্ধ বাংলা। সকলেই কমবেশি শিক্ষিত। কিন্তু এখন ছেলেরা পড়াশোনা করলেও মেয়েরা করে না।
– কেন?
– বিগত একবছর ধরে গ্রামে অনৈ***তিক কাজকর্ম চলছে। নারী-পা**চা**র, খু*ন, ধ***ষ***ণ গ্রামের অনেক পরিবার তাদের মেয়েকে হারিয়েছে। কেউ নিখোঁজ আবার কেউ মৃ**ত। সেই ভয়েতেই মেয়েদের বাইরে বের করতে ভয় করে সকলেই।
কথাগুলো শুনে মহুয়া গম্ভীর হয়ে গেলো। এই গ্রামের একটা রহস্য ছিলো সেটা আন্দাজ করেছিলো কিন্তু এতটা যে ছিলো সেটা আন্দাজ ছিলো না।
– এইগুলো কে করছে?
– সঠিক জানি না তবে গ্রামের মানুষরা কেউ এর সাথে যুক্ত আছে হয়তো।
– চেয়ারম্যান সাহেব আছেন কী?
– হয়তো।
– পুলিশরা কিছু করেনি।
– না,,
– এইরকম চলতে থাকলে তো এই গ্রামে আর কোনো মেয়ে থাকবে না। এই সবকিছু যে আটকাতেই হবে।
– কিন্তু কে আটকাবে কারোরই যে এই সাহস নেয়।
– আমি করবো।
– সত্যি তুমি করবে ডাক্তারদিদি।
– হুম করবো।
নিশি উত্তেজিত হয়ে মহুয়াকে জড়িয়ে ধরলো।মহুয়া পরম আবেশে জড়িয়ে ধরলো নিশিকে।
২ দিন পর…..
আজকে মহুয়ার হাসপাতালে প্রথম ডিউটি। নিশি সকাল বেলাতেই চলে এসেছে যদিও মহুয়ায় বলে ছিলো আসার জন্য। এই দুইদিনে মহুয়ার সাথে নিশির একটা মিষ্টি সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
– ডাক্তারদিদি তোমাকে কি সুন্দর লাগছে গো।
– সত্যি।
– হুম।
– তুমিও খুব মিষ্টি চেহারার দেখতে নিশি।
– কি যে বলো না তুমি(লজ্জা পেয়ে)
– হুম সত্যি গো,একটা সুন্দর দেখে রাজকুমারের সাথে তোমার বিয়ে দেবো আমি দেখো।
– গ্রামের অশিক্ষিত মেয়েকে কোন রাজকুমার বিয়ে করবে ডাক্তারদিদি।
– ঠিক করবে আমি দেবো,এখন চলো নাহলে আবার দেরি হয়ে যাবে।
– চলো।
মহুয়া আর নিশি হাসপাতালের উদ্দেশ্য চলে যায়, এই দুইদিনে নিশানের সাথে মহুয়ার দেখা হয়নি একবারো, নিশি মহুয়ার সাথে দেখা করে যায় প্রতিদিন, একাকিত্ব সময়েও নিশি মহুয়াকে সঙ্গী দিয়েছে।
– তোমাদের গ্রামটা কিন্তু খুব সুন্দর।
– হুম। আমাদের স্বপ্নের গ্রাম আজ কল**ঙ্কিত।
– বাদ দাও মন খারাপ করো না।
কথার মাঝেই ওরা হাসপাতালে যায়।
– তোমার হাসপাতাল।
-হুম।
তারপরে নিশি বললো…
– ডাক্তার দিদি আমি বাড়ি যায় নাহলে আবার মা চিন্তা করবে।
– আচ্ছা সাবধানে যাবে।
নিশি মহুয়াকে বিদায় জানিয়ে চলে যায়, আর মহুয়া নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
– তুমি কে মা?
একজন বৃদ্ধা লোক মহুয়ার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন।
– আমি এই হাসপাতালের নতুন ডাক্তার।
– কিন্তু মা এই গ্রামটা ভালো না তুমি এখান থেকে চলে যাও। ওই শয়তান গুলোর নজর তোমার উপরে পড়লে ওরা তোমাকে কখনোই বাঁ**চ**তে দেবে না।
– চিন্তা করবেন না কাকাবাবু। উপরওয়ালা চাইলে এই অন্যায় আর বেশিদিন হবে না।
– তাই যেন হয়।
– তা আপনার কি সমস্যা।
– আমার তো অনেকিছুই মা, হার্টের দোষ।
– আগে ডাক্তার দেখান নি
– হ্যা দেখাতাম কিন্তু একবছর হলো ভালো করে ঔষধ খাওয়া হয়নি যার জন্য আবারো বেড়ে গেছে।
-সরকারি হাসপাতাল যাবতীয় কার্যকলাপের খরচ সরকার করে।
-আর সরকার। যেখানে মানুষের নিরা***পত্তা নেয় সেখানে আবার ঔষধ।
মহুয়া ওনাকে কিছু ঔষধ লিখে দিয়ে অন্য রোগী দেখাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। সবার মুখেই আ**তং**ক মহুয়া এখানে সু**র***ক্ষি**ত নয়। কেউই চাইনা মহুয়ার কোনো ক্ষ**তি হোক তাই সকলেই মহুয়াকে এই গ্রাম ছাড়তে বলছে।
অন্যদিকে…
ক্রিশ মহুয়াকে ফোনে না পেয়ে উত্তেজিত হয়ে উঠেছে,একের পর এক ফোন করে যাচ্ছে কিন্তু মহুয়া ফোন তুলছে না। মহুয়া রোগী দেখতে ব্যস্ত ফোনটাও সাইলেন্ট করা তাই খেয়াল করেনি।
কি মনে করে মহুয়া ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো ক্রিশের অনেকগুলো ফোন কল,মহুয়া ক্রিশকে ফোন লাগলো।
– হ্যালো।
মহুয়ার গলার আওয়াজ পেয়ে ক্রিশ প্রচন্ড পরিমানে উত্তেজিত হয়ে পড়ে।
– মহু কোথায় তুই ঠিক আছিস তো।
– আস্তে আস্তে।আমি ঠিক আছি রোগী দেখছিলাম তাই খেয়াল করিনি বল।
– কেমন আছিস।
– ভালোই রে।
– তুই তো গ্রামে গিয়ে আমাকে ভুলেই গেছিস তো।
– ভুলে যাবো কিভাবে তা বাকিদের খবর কী।
– ভালোই। সকলেই তোকে খুব মিস করছি।
– আমিও রে।
– আমরা ভাবছি একদিন ওই গ্রামে গিয়ে ঘুরে আসবো তোর সাথেও দেখা হবে আর ঘোরাও হবে।
কথাটা শুনেই মহুয়ার মুখটা গম্ভীর হয়ে গেলো। এই গ্রামটা যে ভালো নয় তাই এখানে ওদের কেউ সুর**ক্ষিত না কিভাবে জেনেবুঝে সবাইকে বি*প*দে ফেলবে।
ক্রিশের সাথে মহুয়া টুকটাক কথা বলে ফোনটা কেটে দিলো। মহুয়ার রোগী দেখে নিজের কোয়াটারে ফিরে এসে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলো।
কিছুক্ষন পর…
দরজায় ঠকঠক আওয়াজ পেয়ে,মহুয়া উঠে দরজা খুলে দিয়ে দেখলো নিশান দাঁড়িয়ে আছে কিরকম একটা বি**ধ্বং****স লাগছে।চোখে মুখে একরাশ চিন্তা। কপালে ঘাম মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে আছে।
– ডাক্তার ম্যাডাম নিশি আছে এখানে।
– নিশি কই না তো। নিশি তো আমাকে সকালে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েই চলে গিয়েছিল।
– কী। তাহলে মেয়েটা কোথায় গেলো। বাড়ি তো যায় নি।
নিশানের মুখে আঁধার ঘনিয়ে এলো। নিশি তার বড্ড আদরের বোন, নিশিকে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসে ওর কিছু হয়ে গেলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না।
– তাহলে আমার বোনটা কোথায় গেলো।
– তুমি চিন্তা করো না নিশির কিছুই হবে না,তুমি বরং আরো একবার সবজায়গায় খুঁজে দ্যাখো তার পরে পুলিশে ইনফর্ম করো।
– আপনার কি মনে হয় ডাক্তার ম্যাডাম যদি ওই শয়**তান গুলোর কাছে আমার বোনটা থাকে তাহলে কী ওরা আমার বোনটাকে বাঁ*চ*তে দেবে।
– কি হবে সেটা ভেবে কথা বাড়িয়ে তো কোনো লাভ নেয় তুমি যাও।
নিশান মহুয়ার কথা শুনে অপেক্ষা না করে বেড়িয়ে পড়লো। নিশান চলে যেতেই মহুয়া কাউকে একজনকে কল করলো…
– সবকিছু ঠিকঠাক তো।
– ….
– আর হ্যা মেয়েটা ঠিক আছে তো।
– ……
মহুয়া ফোনটা কেটে দিয়ে মুখের কোনো একটা বাঁকা হাসি ফুটিয়ে তুললো।
নিশান পাগলের মতো চারিদিকে নিশিকে খুঁজে বেড়াচ্ছে, কিন্তু কোথাও পাচ্ছে না নিশানের মা কান্নাকাটি করছেন প্রচন্ড গ্রামের মানুষদের চোখে মুখে আ**ত**ঙ্ক আবারো একটা নিস্পাপ প্রা**ন ঝরে যাবে। নিশান নিজের সবটা দিয়ে চেষ্টা করছে খুঁজে পাবার কিন্তু কিছুই করতে পারছে না সারা গ্রাম খুঁজেও নিশির দেখা মেলেনি। পুলিশের কাছে গেলেও ২৪ ঘন্টার আগে নি**খোঁজ এফেয়ার নেবে না তারা জানিয়ে দিয়েছে।
– এই নিশান আমার মেয়েটাকে এনে দে না বাপ।
– মা শান্ত হ আমার বোনের কিছু হবে না।
– আমার মনটা যে বড্ড কু ডাকছে আমার মেয়েটার কিছু হবে না তো বাবা।
– মা বোনের কিছু হবে না চিন্তা করো না।
নিশান নিজের মাকে শান্তনা দিলেও নিজে শান্ত হতে পারছে না।
পরেরদিন সকালে….
মহুয়া হাসপাতালে যাবে বলে রেডি হচ্ছিল তখনি কেয়ারটেকার এসে বললো…
– ডাক্তার দিদি নদীর ধারে আবারো একটা লা*শ পাওয়া গেছে। এটা মনে ওই নিশির।
#চলবে…