মন_হারানোর_বিজ্ঞাপন,পর্ব ২

0
1543

মন_হারানোর_বিজ্ঞাপন,পর্ব ২
নুজহাত_আদিবা

সকাল থেকে শরীরটা প্রচন্ড খারাপ। খুব কষ্টে রান্নাবান্না শেষ করেছি। আম্মুও গ্রামের বাড়িতে। একা একা আরও ভালো লাগে না আমার। অন্বয়কে যদি বলি আপনি একটু ছুটি নিন আজকে অফিস থেকে। তবুও লাভ নেই কারণ, অন্বয় থাকা যা না থাকাও তা। অন্বয় প্রচন্ড চুপচাপ। দশটা কথা বললে একটা কথার জবাব দেন। কথা বলতে মনে হয় আলসেমি লাগে ওনার। তাই এত কম কথা বলেন। কিন্তু, আমি মনে করি ওনার আমাকে পছন্দ না। তাই, আমার সাথে তেমন কথা বলেন না। যদি ওনার ওই ভালোবাসার মানুষটার মতো হতাম তাহলে নিশ্চয়ই কথা বলতেন।
~~~~~~~~~~~~
একা একা ভালো লাগছিল না। পাশের বাসার ভাবীও ওনার বাপের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছেন। একা একা থাকতে থাকতে একসময় বিরক্ত হয়ে ছাঁদে উঠলাম। ছাঁদে গিয়ে দেখি আরও অনেকেই ছাঁদে উঠেছে। উপরের তলার একটা ভাবীর সাথে কথা বলছিলাম। কথার মাঝখানেই ভাবী হঠাৎ করে বললেন ওনাকে না কি এখন যেতে হবে। ভাইয়া না কি কল দিয়েছেন। এরপর ভাবী নেমে গেলেন। আমিও আবার বাসায় চলে আসলাম। অন্বয় কী পারে না আমাকে একটু ফোন দিতে? কোনো কিছুর দরকার হলে আমি ফোন দেই। নাহলে, অন্বয় নিজে থেকে কখনো একটা ফোন ও দেন না আমাকে। অন্বয় কেন এমন করেন?আমার যে এতে কষ্ট হয় বোঝেন না উনি?
~~~~~~~~~~~~
সন্ধ্যা বেলা আবারও শরীরটা খুব খারাপ লাগা শুরু করলো৷ আমি সব কিছু ভুলে গিয়ে বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিলাম। ঘুমিয়ে গেলাম নিমিষেই। যখন ঘুম ভাঙলো তখন উঠে দেখি রাত দশটা বাজে। আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সবচেয়ে অবাক হলাম। কারণ, আজকে অন্বয়ের অফিস থেকে আটটা বাজে ফেরার কথা। কিন্তু, অন্বয় এখনও আসলো না যে? আমার সন্দেহের প্রবনতা বেড়ে গেল। আমি বাইরের গেটটা খুলে দেখি অন্বয় সিঁড়িতে বসে আছে। আমি আরও বেশি অবাক হলাম। অবাক দৃষ্টিতে অন্বয়কে বললাম, আপনি কখন এসেছেন? সিঁড়িতে কেন বসে আছেন? অন্বয় সিঁড়ি থেকে উঠতে উঠতে আমাকে জবাব দিলেন ” দুই ঘন্টা আগে।” আমি প্রচন্ড রকমের শক খেলাম। আবারও অন্বয়কে জিজ্ঞেস করলাম আমাকে ডাকেননি কেন? বাসার কলিংবেল কয়েকবার বাজালেই হতো। অন্বয় বিষন্ন স্বরে জবাব দিলেন ” বাজিয়ে ছিলাম কয়েকবার কিন্তু তুমি দরজা খুলোনি” আমি এবার আফসোসের সাগরে নিমজ্জিত হলাম। লজ্জা পেয়ে অন্বয়কে বললাম, আসলে আমার শরীরটা ভালো লাগছিল না। তাই ঘুমিয়ে পরেছিলাম আপনি যে এসেছেন বুঝতে পারিনি। অন্বয় শুধু ছোট্ট করে হুম বললেন।
~~~~~~~~~~~~
অন্বয়কে খাবার বেড়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে রান্নাঘরে গিয়ে আমার চক্ষু চড়কগাছ। সেই সন্ধ্যা বেলা যে ঘুমিয়েছি উঠেছি একটু আগে। রান্নাবান্না কিছুই করা হয়নি। অন্বয় অফিস থেকে এসেছে। বেচারা ক্লান্ত আর ক্ষুদার্থ। কী করা যায় এখন? একটু ভেবে আমি চাল ধুয়ে ভাত বসালাম। দুইটা ডিম কাঁচা মরিচ আর পেঁয়াজ দিয়ে ভাজি করলাম। যেই হাঁড়িতে ভাত বসিয়েছি ওই হাঁড়িতেই দুটো আলু ধুয়ে সিদ্ধ হতে দিলাম।
~~~~~~~~~~~~
ভাত হয়ে গেলে মাড় গালতে দিলাম। আলু দুটো সুন্দর করে খোসা ছাড়িয়ে আলু ভর্তা বানালাম। ঝাল দিলাম একটু বেশি করে। আম্মুর কাছে শুনেছিলাম অন্বয়ের আলু ভর্তা দিয়ে ভাত খুব পছন্দ।
সবকিছু শেষ করে টেবিলে খাবার বাড়তে বাড়তে অন্বয়কে ডাক দিলাম। অন্বয় টেবিলে বসে শার্টের হাতা ফোল্ট করতে শুরু করলেন। আমি অন্বয়কে খাবার বেড়ে দিয়ে বললাম, আজকে আমার শরীরটা বেশি ভালো লাগছিল না। তাই বেশি রান্নাবান্না করতে পারিনি। আপনি আজকে একটু কষ্ট করে এগুলো দিয়ে খেয়ে নিন। অন্বয় শুধু হুম বলে হাত ধুয়ে খাওয়া শুরু করে দিলেন। এরপর আমিও খেতে বসে গেলাম।
~~~~~~~~~~~~
রাতে ঘুমাতে গিয়ে দেখি অন্বয় বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুমাচ্ছে। আমার অন্বয়কে দেখে মনে হলো একটা বিড়ালের বাচ্চা। ছোট একটা বিড়াল সে। আমি লাইট অফ করে অন্বয়কে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লাম। ঘুমের ঘোরে অন্বয়ও আমাকে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে নিলেন।
~~~~~~~~~~~~
পরিচিত এক ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলার সময় ফ্রেন্ড আমাকে বললো,তাঁর হাসবেন্ড না কি তাকে খুব ভালোবাসে। মানিব্যাগে, ফোনের ওয়ালপেপারেও বা কি তাঁর ছবি দেওয়া। আমি আজ চিন্তা করলাম অন্বয় আসলে অন্বয়ের ফোনটা চেক করবো। দেখবো অন্বয় ফোনের ওয়ালপেপারে আমার ছবি দিয়েছে কি না।
~~~~~~~~~~~~
অন্বয় অফিস থেকে আসার সময় আমি যখন গেট খুলে দিলাম। তখন দেখি, অন্বয়ের হাতে গোলাপ ফুলের তোড়া। অন্বয় রুমে ঢুকেই ফুলের তোড়াটা ড্রেসিং টেবিলের ওপরে রাখলো। এরপর অন্বয় ওয়াশরুমে চলে গেল ফ্রেস হতে। আমি অন্বয়ের আনা ফুলের তোড়াটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষন খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলাম। আমার জন্য অন্বয় যে এই ফুলের তোড়াটা আনেনি এটা আমি জানি। কিন্তু, অন্বয়কে এই ফুলের তোড়াটা কে দিয়েছে? ওই মেয়েটা? যাকে অন্বয় ভালোবাসে ওই মেয়েটা এই ফুলের তোড়াটা দিয়েছে?

ফুলের তোড়ার উপরে গবেষণা বাদ দিয়ে আমি এবার অন্বয়ের ফোনে হাত দিলাম। ফোনটা অন করে দেখি ফোনের ওয়ালপেপারে আমার ছবি নেই। উল্টো একটা ফুলের ছবি দেওয়া। রাগে আমার চোখে পানি এসে গেল।

অন্বয়কে খাবার দিতে হবে। আমি অন্বয়ের জন্য লেবু কাটতে গেলাম। লেবুগুলো খুব ছোট ছোট। কিন্তু, লেবুগুলো কাটলে ঘ্রানে চারপাশ ভরে যায়। লেবু আমি হাতের তালুতে রেখে ছুড়ি দিয়ে যে-ই না চাপ দিলাম। তখনই ব্যাথায় চিৎকার করে উঠলাম। অন্বয়ও রুম থেকে ছুটে এলেন। এসে দেখেন আমি লেবু কাটতে গিয়ে হাত কেটে ফেলেছি।

অন্বয় এন্টি সেপটিক আর তুলা দিয়ে জায়গাটা পরিস্কার করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু, লাভ হলো না। রক্তপাত বন্ধ হলো না কোনোভাবেই। অন্বয় এরপর তাড়াতাড়ি করে আমাকে বাসার নিচের ডিসপেনসারিতে নিয়ে গেলেন। ওখানে আমার হাত দেখেই বলা হলো হাতের কাটা-টা খুব গভীর। তাই রক্তপাত বন্ধ হচ্ছিল না। এরপর আমার হাতে তুলোতে করে লাল রঙের প্রবিসেভ দিয়ে দেওয়া হলো। ব্যাথায় আর যন্ত্রণায় আমার হাত কাঁপতে শুধু করলো। অন্বয় আমার হাত শক্ত করে ধরে রাখলেন। এরপর সাদা রঙের একটা জ্বেল টাইপ কী যেন একটা; হাতের উপরে লাগিয়ে দিয়ে বেন্ডেজ করে দিলেন। জ্বেলটা খুব ঠান্ডা ছিল তাই কাটা জায়গা-টাতে দেওয়া পর একটু আরাম পেলাম।
~~~~~~~~~~~~
অন্বয় বাসার মেইন গেইটে ঢুকতে ঢুকতে আমাকে বললেন, “তোমাকে যেন আর কখনো লেবু কাটতে না দেখি ” আমি চুপচাপ শুধু হুম বললাম। বেশি কথা বললে অন্বয় আমার উপরে রেগে যেতে পারেন।

বাসায় আসার পর সবকিছু অন্বয় পরিস্কার করলেন। নিজেই খাবার গরম করলেন। আমাদের দুজনের জন্য খাবার বাড়লেন। উনি নিজের হাতেই খেলেন। শুধু আমার প্লেটের খাবারটা মাখিয়ে দিয়ে আমার হাতে চামচ ধরিয়ে দিলেন। আমি চামচ দিয়ে খাবার খেতে খেতে ভাবলাম, আমাকে একটু নিজের হাতে খাইয়ে দিলে কী এমন ক্ষতি হতো অন্বয়ের? অবশ্য বেচারা অফিস থেকে এসেছে। খেয়েদেয়ে একটু ঘুমাবে। তাই বেচারাকে বিরক্ত না করাই শ্রেয়।
~~~~~~~~~~~~
সকালে আমাকে ঘুম থেকে অন্বয় ডেকে তুললেন। উনি অফিসে যাবেন তাই আমাকে বাসার গেটটা লাগিয়ে দিতে বললেন। আমি গেট লাগিয়ে দিয়ে খাবার টেবিলের সামনে যেতেই আমার টাসকি খেলাম। আমি তো আজকে ঘুম থেকে দেরি করে উঠেছি। নাস্তাও বানানো হয়নি কিছু। তাহলে অন্বয় কী খেয়ে বের হলো? না খেয়েই মানুষটা বের হয়ে গেল না কি?

তাড়াতাড়ি রান্নাঘরে গিয়ে দেখি অন্বয় নাস্তা খেয়েই বের হয়েছে। কাঁচা আটার রুটি আর ডিম পোঁচ। শুধু ওনার জন্য একা না। আমার জন্য ও নাস্তা বানিয়ে রেখে গেছে। আমি নাস্তা খেয়ে রুমে এসে কাপড়চোপড় ভাঁজ করতে শুরু করলাম। অন্বয়ের জামাকাপড় ভাঁজ করে আলমারিতে রাখতে গিয়ে দেখি ওখানে নতুন শাড়ির প্যাকেট।

শাড়ির প্যাকেট গুলো খুলে দেখি একেবারে নতুন তিনটা শাড়ি। অন্বয় আমার জন্য এগুলে আনলে আমাকেই দিতো৷ এভাবে আলমারিতে লুকিয়ে রাখতো না। শাড়িগুলো ওই মেয়েটার জন্য এনেছে। ওই মেয়েটার কথা চিন্তা করতেই আমার রাগ আরও বেড়ে গেল। ওই মেয়েটাকে কত ভালোবাসে অন্বয়। কিন্তু, আমাকে একটুও ভালোবাসে না।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here