মহব্বত❤️,Part-১,২
Writer-❤️Israt_Jahan_Isu❤️
Part-১
কথায় আছে দারিদ্রতা মানুষকে বুজিয়ে দেয় জীবনটা আসলে কত কষ্টের,,জীবনে সুন্দর করে বাঁচতে হলে অনেক কিছুরই মুখোমুখি হতে হয়,জীবন কি অদ্ভুত তাই না?সুন্দর করে কে না বাঁচতে চায় কিন্তু দরিদ্রতা যেন মানুষকে এই বুজিয়ে দেয় জীবনে চলতে হলে অনেক কিছুর মুখোমুখি যেমন হতে হবে ঠিক তেমনই বুকে সাহস ও আস্তা নিয়ে বাঁচতে হবে,,
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে হাতে অনেক গুলো সার্টিফিকেট নিয়ে হাঁটতে আছে মাইশা,,বাবা আদর করে নাম রেখেছে মাহবুবা তাবাসসুম মাইশা,,সংসারের বড় মেয়ে দায়িত্ব এর বোজা যেন তার ঘাড়েই আজ উঠে এসে পড়েছে,,,যে বয়সে বিয়ে করে সংসার করার কথা সে বয়সে আজ তাকে চাকরি খুঁজতে হচ্ছে শুধু মাত্র সংসার টাকে টিকিয়ে রাখার জন্য অসুস্থ বাবা ও বয়স্ক মা ছোট দুই ভাই বোনের মুখে দুই বেলা ঠিক করে খাওয়ার তুলে দেওয়ার জন্য এই তীব্র রোদে হাঁটছে,,,চাকরিটা যেন আজও হলো না একটাই কথা যোগ্যতা নয় বড় কারো সুপারিশ প্রয়োজন আজকাল।চাকরি যেন আজকাল একটা রেটে পাওয়া যায় এমন হাল,
মাইশাঃ কি করবো বাসায় গিয়ে কি বলবো মাকে যে আজও হলো না চাকরিটা,,আল্লাহ দোয়া করে সাহায্য করুন আমাকে পথ দেখান আমি যে সত্যি আর পারছি না,,,
চোখের কোণায় পানি এসে জমে যায় তবুও যেন পড়তে দেয় না মাইশা,,হালকা গোলাপি কালারের একটা কামিজ পড়ানো,চোখ দুটো বেশ মায়াবী টানা টানা চোখ,,মায়াবী তার মুখখানি,,
হঠাৎ তার ব্যাগ থেকে আওয়াজ আসে ফোনের,,ব্যাগ থেকে ছোট নোকেয়া সেট বের করে রিসিভ করে,,
মাইশাঃ জ্বি আম্মু বলো,
মাইশার মাঃ চাকরি কি হয়েছে মা?
মাইশাঃ না আম্মু(এক দীর্ঘ শ্বাস ফেলে)কিন্তু চিন্তা করিও না কাল আরেকটা ইন্টারভিউ আছে ইনশাআল্লাহ কাল হবেই দেখিও আম্মু,,,
মাইশার মাঃ মাইশা আজ ঘরে চাল নেই বাকি দোকানে গিয়েছি কিন্তু দেয় নাই বলেছে আগের টাকা গুলো আগে দিতে বলছে তারপর নাকি নতুন করে বাকি দিবে,,
মাইশাঃ আম্মু চিন্তা করিও আমি বাসায় এসে একটা কিছু ঠিক করবো,,
মাইশা কল কেটে দেয়,,নিজের ব্যাগে দেখে মাত্র চল্লিশ টাকা আছে এই চল্লিশ টাকায় হবে টা কি,,হাতের আঙ্গুলের দিকে তাকায় মুখে একটু হাসি নিয়ে তাকিয়ে দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে তাকায় একটা সিম্পল রিং যার দাম অনেক অল্প তবুও বুকে আশা নিয়ে যায় পাশের একটা ছোট জুয়েলারি শপে,
মাইশাঃএই ছাড়া আজ যে আমার কাছে কোনো উপায় নেই,,,
জুয়েলারি শপ থেকে তাকে মাত্র দুই হাজার টাকা দেয় কিন্তু এই দুই হাজার যেন এই মুহূর্তে মাইশার কাছে লাক্ষ টাকার সমান,,,
মাইশা জুয়েলারি শপ থেকে বের হওয়ার সময় একজন লোকের সাথে ধাক্কা খায়,,
মাইশাঃ মাফ করবেন সত্যি আমি খেয়াল করি নাই,,
লোকটু চশমা খুলে ড্যাবড্যাব করে শুধু তাকিয়ে আছে মাইশার দিকে,,,
মাইশা চলে যায় লোক যেন থমকে দাঁড়িয়ে আছে এখনো তার জায়গায়,,,
পিছন থেকে একজন স্টাফ এসে বলে
স্টাফঃ কেমন আছেন মিরাজ স্যার,,
মিরাজ চৌদুরী নাম করা ব্যবসায়ী,যার নামই যথেষ্ট যেকোনো কিছুর জন্য,
মিরাজঃ মেয়েটি কে?
স্টাফঃ চিনি না স্যার কিন্তু একটা রিং বিক্রি করতে এসেছে টাকা নাকি তার অনেক বেশি প্রয়োজন আমরা প্রথমে নিতে চাই নাই কিন্তু অনেক অনুরোধ করায় নিয়েছি স্যার,,,,
মিরাজঃ এই মেয়ে কে আমাকে জানতেই হবে,,তার সম্পর্কে আমার সব কিছু জানতে হবে,,,,
মিরাজ তার ফোন বের একজনকে কল দেয়
মিরাজঃ একটা ছবি দিয়েছি তার সম্পর্কে এখনই আমার সব ডিটেইলস চাই,,,এই মাত্র সে জুয়েলারি শপ থেকে বের হয়েছে জলদি তার পিছু নাও,,,
জুয়েলারির শপের স্টাফ গুলো অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে মিরাজ চৌদুরী একটা সামান্য মেয়ের জন্য কেন এতো অস্তির হচ্ছে কেন বা তার খুঁজ লাগবে তার,,,
মিরাজ সাহেব চলে যায়,,,গাড়িতে বসে বসে ভাবছে সত্যি কি সে যা দেখেছে তা বাস্তব ছিলো নাকি কল্পনা কি ছিলো যেন তার মাথায় কিছুতেই ঢুকছে না,,,,গাড়িটি একটা বড় বাড়ির ভিতরে যায় যেন বাড়িটা একটা পুরো প্রাসাদ এতো বড় বাড়ি,বাড়ির চারপাশটা এতোটাই সুন্দর যে যেকেউ মুগ্ধ হয়ে শুধু তাকিয়ে থাকবে বাড়িটির দিকে,,বাড়িতে ডুকতেই একজন সুন্দরী মহিলা এসে মিরাজের হাত থেকে কোর্টটা নিয়ে বলে
শাহেদাঃ কি ব্যপার অন্য রকম লাগছে যে?
মিরাজঃ আজ তাকে দেখেছি,,
শাহেদাঃ কাকে?
মিরাজঃ যার কারনে আমাদের ছেলের আজ এই অবস্থা,,,
শাহেদাঃ মানে?সত্যি কি তাই?
মিরাজঃ বাস্তব নাকি কল্পনা কিছু যেন বুজতে পারছি না, কিন্তু এই বুজেছি সে
শাহেদাঃ তাহলে কি আমাদের ছেলে এখন ঠিক হবে?
মিরাজঃ জানি না তবে কিছু একটা হবে এইবার হয়তো আমাদের সবার জীবন পরিবর্তন হয়ে যাবে,,,,শুধু সময়ের অপেক্ষা আর কিছুই না৷
মিরাজ আর শাহেদা একটা রুমে যায়,,রুমটা পুরো অন্ধকার লাইট দিতেই তাদের গায়ে ছুড়ে মারা হয় ফুলের দানি,,,
যাও এইখান থেকে যেতে বলেছি আমি,,,
এক ভয়ানক আওয়াজ যেন আজ,,,চোখ দুটো লাল হয়ে আছে চুল গুলো অনেক লম্বা পুরো শরীরে যেন মার্কার কলম দিয়ে লেখা একটি নাম,,,রুমের দেওয়াল গুলোতে শুধু একটি নামই লেখা রুম টা পুরো আগোছালো
শাহেদাঃ বাবা আমার আমাদের দিকে তাকাও আমরা তোমার মা-বাবা,প্লিজ আমাদের সাথে একটু কথা বলো
আকাশঃ যেতে বলেছি তোমাদের প্লিজ যাও
শাহেদা আর মিরাজের এক মাত্র ছেলে আকাশ চৌদুরী,,এক সময় যে ছেলেটা ছিলো ভার্সিটির সব চেয়ে হ্যান্ডসাম ছেলে,যার পিছনে ছিলো হাজার ও সুন্দরী মেয়ে,যার একটা কথায় সব কিছু হতো সে ছেলে আজ একটা রুমে নিজেকে বন্দী করে রেখেছে,,,,
শাহেদা কাঁদতে কাঁদতে রুম থেকে বের হয়ে যায়,মিরাজ ও পিছনে পিছনে গিয়ে তাকে শান্তনা দেয়,,
মিরাজঃ সব কিছু খুব জলদি ঠিক হয়ে যাবে,,,
শাহেদাঃ মহব্বত কি একটা মানুষের এমন হাল করতে পারে মিরাজ?মহব্বত কি সত্যি এমন?
মিরাজঃ হয়তো হ্যাঁ শাহেদা যার কারনে আজ আমাদের ছেলের এমন হাল,,,
আকাশ তার বিছানার পাশে বসে একটা নাম লেখতে থাকে আর বলতে থাকে
আকাশঃ তুমি আমার মহব্বত আমার শুধু মাত্র আমার,,,তুমি আমার সব কিছু মাহি সব,,,,,আমার মাহি জানো সবাই না অনেক খারাপ শুধু তোমার থেকে আমাকে আলাদা করতে চায় অনেক খারাপ সবাই সত্যি অনেক খারাপ,,,,
এইদিকে
আজ মাইশ অনেক গুলো বাজার নিয়ে যায় বাড়িতে,,,একটা বড় মাছ ও নিয়ে যায় যা দেখে মাইশার ছোট ভাই মাহির ও ছোট বোন রাইশা অনেক খুশি হয়ে যায়,,
রাইশাঃ আপু সত্যি এতো গুলো বাজার আমাদের?
মাইশা মুচকি হাসি দিয়ে বলে
মাইশাঃ আম্মুকে ডাক
রাইশাঃ আম্মুউউ আপু অনেক বাজার এনেছে দেখো
মাইশার মা রুম থেকে বের হয়ে এসে দেখে মাইশা অনেক কিছু নিয়ে এসেছে
মাইশার মাঃ এতো কিছু?টাকা কত থেকে পেলি?
মাইশাঃ আম্মু আসলে আজ আসার সময় অনেক পুরানো এক বান্ধবীর সাথে দেখা অনেক আগে সে আমার থেকে কিছু টাকা ধার নিয়েছে আজ তা ফিরিয়ে দিলো আর আমিও মানা করি নাই যেহেতু টাকা টা আসলেই প্রয়োজন ছিলো
মাইশার মা ঠিক বুজতে পেরেছে মাইশা মিথ্যা বলছে,,কারণ মাইশা চোখের দিকে না তাকিয়ে সব বলে,,,
মাইশা নিজের রুমে যায়,,,টেবিলে বসে চুপচাপ ভাবতে থাকে এইভাবে আর কত দিন যাবে জীবনটা কিভাবে এই দরিদ্রতা শেষ করবে কিভাবে পরিবারের মুখে একটু হাসি ফুটাবে দেখতে দেখতে অনেক মাস তো গেলো কিন্তু তার পরিবারের এমন অবস্থা এখনো যে ঠিক হচ্ছে না৷
মাইশা তার অনেক স্বপ্ন ত্যাগ করে শুধু পরিবারের জন্য,,,,
এইদিকে
আকাশ মাহির ছবি বুকে আগলে রেখে ফ্লোরে শুয়ে শুয়ে অনেক কথা বলছে,,,
আকাশঃ মাহি আমাদের তো কত স্বপ্ন তাই না?তুমি আমি কত জায়গায় যে ঘুরতে যাবো সত্যি মাহি আমি আর কখনও তোমায় কিছুতে বাঁধা দিবো না,সব কথা যে রাখবো তোমার তুমি তো জানো মাহি আমি তোমায় কত খানি ভালোবাসি,,,
আকাশ আর মাইশার জীবন পুরো ভিন্ন,,,দুইজনের ভাগ্যে কি লেখা আছে তা কেউ জানে না আর না জানে তারা,,কি আছে তাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে তাদের জন্য দুইজনে আজ অজানা৷,,,,
চলবে,,,,
❤️ #মহব্বত❤️
Writer-❤️ #Israt_Jahan_Isu❤️
Part-2
আকাশ আর মাইশার জীবন পুরো ভিন্ন,,,দুইজনের ভাগ্যে কি লেখা আছে তা কেউ জানে না আর না জানে তারা,,কি আছে তাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে তাদের জন্য দুইজনে আজ অজানা৷,,,,
পরের দিন,,
আজও মাইশা অনেক জায়গায় ইন্টারভিউ দেয় কিন্তু তার ভাগ্য যেন আজ তার সাথে ছিলোই না,,
মাইশাঃ কি করবো আজও পেলাম না কিভাবে সংসার টা চালাবো,,কিভাবে বাবার ওষুধ ভাই বোনের পড়াশোনার খরচ সবার খাবার কিভাবে আমি যোগার করবো আল্লাহ একটা পথ দেখান সত্যি যে আমি এখন ক্লান্ত,,,
মাইশা এইসব ভাবছে আর হাঁটছে রাস্তায় তার মাথায় যেন হাজার ও চিন্তা আজ, দুপুর হয়ে আসলো এখনো কিছু খাওয়া ও হয় নাই,সকালে বাসা থেকে যে চা আর একটা রুটি খেয়ে বের হয়েছে এখনো সে অবস্থায় আছে,,ব্যাগে মাত্র ত্রিশ টাকার মতো আছে এইগুলো খরচ করলে যদি আবার বাসায় কিছু লাগে তখন কত থেকে এনে দিবে,,পাশের একটা চায়ের দোকানে যায়
মাইশাঃ চাচা এক গ্লাস পানি হবে?
চা দোকানদার মাইশাকে এক গ্লাস পানি দেয় তা খেয়েই যেন ক্ষুধা কিছু টা আটকিয়ে রাখে,,,
এইদিকে,
মিরাজ সাহেব অফিসে বসে কাজ করছে ওমন সময় তার ম্যানেজার আসে
ম্যানেজারঃ স্যার আপনি যে মেয়ের খোঁজ নিতে বলেছেন নিয়েছি,,
মিরাজঃ কে সে?
ম্যানেজারঃ নাম মাইশা,সামান্য একজন প্রাইমারি স্কুল মাস্টারের মেয়ে কিন্তু অই মাস্টারের হঠাৎ একদিন এক্সিডেন হওয়ায় তাদের সব সমস্যা শুরু হয়,,,এইখানে ভাড়া বাসায় থাকে গ্রামের বাড়ি যে বাড়ি জায়গা ছিলো সব তার আপন চাচা নিজের করে নিয়েছে,,ছোট দুই ভাই বোন আর মা ও অসুস্থ বাবা নিয়ে এইখানে ভাড়া বাসায় থাকে,,,
মিরাজঃ মাইশা?আর কি জানতে পারলে?
ম্যানেজারঃ স্যার সে খুব কষ্টে আছে প্রতি দিন চাকরির জন্য ইন্টারভিউ তো দেয় কিন্তু হয় না,,আর বাড়িওয়ালা ও নাকি অনেক মাসের ভাড়া পাবে মোট কথা অই মেয়ে অনেক কষ্টে আছে তার চাকরির অনেক প্রয়োজন এই টুকু,,,
মিরাজঃ তার চাকরির প্রয়োজন আর আমার তাকে,,,তুমি তাকে কল দাও বলো এখন আমার সাথে দেখা করতে নাম্বার তো নিয়েছিলে তাই না?
ম্যানেজারঃ জ্বি স্যার তা আমি ম্যানেজ করে নিয়েছি এখনই তাকে কল দিচ্ছি,,,
ম্যানেজার মাইশাকে কল দেয়,,হঠাৎ অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসায় মাইশা অবাক আবার ভাবে বাসায় সমস্যা না তো,,,
মাইশাঃ আসসালামু আলাইকুম কে বলছেন?
ম্যানেজারঃ আপনার চাকরির প্রয়োজন তাই না?
মাইশা এই শুনেই অবাক তো হয় আবার তাড়াতাড়ি জিজ্ঞেস করে
মাইশাঃ জ্বি কিন্তু কে আপনি?
ম্যানেজারঃ একটা ঠিকানা দিচ্ছি সে ঠিকানায় এখন আসুন আপনার জন্য ভালো হবে যদি আসেন,,
এই মুহূর্তে মাইশার জন্য চাকরি এতো প্রয়োজন যে সে একটুও মাথায় আনলো না যে কে তাকে এইভাবে একটা চাকরির অপার দিয়েছে আর সেও কিনা এতো সহজে হ্যাঁ বলে যাচ্ছে,,
কথায় আছে অভাবে পড়লে মানুষ কি করে নিজেও জানে না,,,,
ত্রিশ মিনিটের মধ্যে মাইশা একটা বড় অফিসের সামনে আসে,অফিস টা বিশাল বড়
মাইশাঃ আমার সাথে কেউ মজা করে নাই তো?এতো বড় অফিস থেকে আমাকে কেন বা কল দিবে আর আমি তো এই অফিসে ইন্টারভিউ দেইও নাই তাহলে,,
মাইশা অনেক ভাবতে থাকে আবার কল আসে
ম্যানেজারঃ আপনি কি এসেছেন?
মাইশাঃ জ্বি নিচে দাঁড়িয়ে আছি,,
ম্যানেজারঃ অফিসের ভিতরে আসুন একজন মেয়ে আপনাকে নিয়ে আসবে
মাইশা ভিতরে যায় একটা মেয়ে এসে তাকে হ্যালো জানিয়ে মিরাজ সাহেবের কেবিনে নিয়ে যায়,,,
মাইশাঃ আসসালামু আলাইকুম আমাকে কল করা হয়েছে চাকরির জন্য
মিরাজ মাইশার সামনে এসে দাঁড়ায় মাইশা দেখে চিনতে পারে এই তো সেই লোক যার সাথে জুয়েলারি শপে দেখা হয়েছে তার,,
মাইশাঃ আপনি?
মিরাজঃ কথা ঘুরিয়ে বলার অভ্যাস আমার নেই সোজা কথায় আসি,,
মাইশাঃ জ্বি বলুন
মিরাজঃ তোমার এই মুহূর্তে চাকরির প্রয়োজন নিজের পরিবারকে ভালো একটা জীবন দিতে তাদের মুখে ঠিক মতো দুইবেলা খাবার তুলে দিতে বাড়ি ভাড়া দিতে আরো নানান কিছু
মাইশাঃ আপনি এতো কিছু কিভাবে জানলেন?
মিরাজঃ যেভাবেই জানি না কেন আমি কি সঠিক?
মাইশাঃ জ্বি কিন্তু আমার সার্টিফিকেট দেখুন আমার রেজাল্ট অনেক ভালো,,আমি সততার সাথে কাজ করবো বিশ্বাস করুন সামান্য টুকুও অভিযোগের কারণ দিবো না,,,
মিরাজঃ তুমি তোমার পরিবারকে সব কিছু দিতে পারবে ভালো জীবন ভাই বোনদের ভালো পড়াশোনা মানে তোমার স্বপ্ন টুকু পুরো পূরণ করতে পারবে শুধু তোমাকে তোমার খুশি ত্যাগ করতে হবে,,,
মাইশা এই শুনে অনেক টা অবাক হয়,,,
মিরাজঃ যদি নিজের পরিবারের সুখ চাও ভালো জীবন চাও তাহলে তোমাকে তোমার নিজের জীবনের সব স্বপ্ন নিজের সব সুখ বির্সজন দিতে হবে পারবে কি?
মাইশাঃ আপনি কি বলতে চাচ্ছেন ক্লিয়ার করে বলুন,,,
মিরাজঃ লুক মাইশা বড় বড় ড্রিগী বা অনেক গুলো সার্টিফিকেট দিয়ে যে ভালো জব পাওয়া যায় না তা তুমি বুজতেই পারছো কিছু পেতে হলে অবশ্যই কিছু দিতে হবে,,,তুমি অনেক টাকা পাবে বিনিময়ে তোমাকে আমার ছেলেকে বিয়ে করতে হবে
মাইশা যেন থমকে যায় এই শুনেই,,,,
মাইশাঃ বিয়ে?
মিরাজঃ হ্যাঁ বিয়ে কিন্তু শুধু এক বছরের জন্য আর এই এক বছরে তোমাকে আমার ছেলেকে সুস্থ করে তুলতে হবে,,,এক বছর শেষ হবে তোমাকে তোমার খুশি মত অর্থ আমি দিয়ে দিবো,,,,
মাইশা কি বলবে সে যেন ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না এক বছরের জন্য বিয়ে আর অসুস্থ মানে?মানে সে কি এমন অসুস্থ যে মাইশার মত একজন দরিদ্র পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করাতে চায় এতো কোটিপতি বাপ তার ছেলের সাথে?
মাইশাঃআপনি কি আমার সাথে মজা করছেন?মানে আমার দরিদ্রতা আপনি বের করে আমার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আপনি আমাকে বলছেন এক বছরের জন্য বিয়ে করতে আপনার ছেলেকে?বিয়ে কি ছেলেখেলা নাকি?যখন মন চাইবে করতে হবে আবার মন চাইলে ভেঙ্গে ফেলবে?
মিরাজঃ শান্ত হও মাইশা,,,এই মুহূর্তে তোমার টাকার প্রয়োজন আর আমার প্রয়োজন তোমাকে,,,
মাইশাঃ আপনি কেন বা আমাকে অ্যাপটি ছেলের বউ করাতে চান?
মিরাজঃ তা তুমি জেনে যাবে কেন?কিন্তু তুমি ডিল সম্পর্কে কাউকে কিছু বলতে পারবে না৷,,, তুমি কি রাজি?
মাইশাঃ কখনো না আমি কোনো জিনিস নয় যে এক বছরের জন্য আপনি কিনে নিলেন এক বছর পর ছুড়ে ফেলে দিলেন,সরি স্যার আপনার এই প্রস্তাবে আমি রাজি নয়,,,আসি
মাইশা যেতে লাগে মিরাজ সাহেব আবার বলে উঠে
মিরাজঃ আজ রাতে ভেবে দেখিও সকালে আমাকে বলিও তোমার মতামত আর তোমার মতামতের জন্য আমি অপেক্ষা করবো আশা করি যে সিদ্ধান্ত নাও কেন ভেবে নিবে,,
মাইশা বের হয়ে যায় অফিস থেকে,,,চোখের পানি কিছতেই ধরে রাখতে পারছে না,ভেবেছে সে সত্যি জব পাবে কিন্তু এইখানে এসে উল্টো এতো কিছু,,,
মাইশাঃ মানুষ এতো খারাপ হয় কি করে?কি করে এমন প্রস্তাব দেয় তাও আবার নিজের ছেলের জন্য,,
চোখের পানি মুছতে মুছতে হাঁটছে রাস্তায় পাশ দিয়ে,,,
এইদিকে
পুরো ঘর যেন আজ তুলে ধরেছে পিচ্চি আইভিটা,,,
রিমাঃ আইভি আস্তে দৌড়াও মাম্মা পড়ে যাবে,,,
আইভিঃ নো আমি এখন চাচ্চুর কাছে যাবো মানে যাবো
শাহেদাঃ কি ব্যাপার রিমা৷ আইভি এইভাবে দৌড়াচ্ছে কেন?
রিমাঃ ছোট মা আইভি জিদ ধরে বসে আছে তার নতুন ড্রেস আকাশকে দেখাবে,সে আকাশের সাথে আজ দেখা করবেই কিন্তু ছোট মা আকাশের যে অবস্থা যদি সে আইভিকে?
শাহেদা চুপ করে থাক,বুকে হাজার ও কষ্ট নিয়ে একটু মুচকি হেসে বলে
শাহেদাঃ আকাশ কারো সাথে ভালো ব্যবহার না করলেও জানো আইভির সাথে করে,,,তার মাসুম চেহারা দেখে আকাশ কখনো রাগ করে না উল্টো আইভি এক মাত্র আকাশের কাছের যে আকাশকে কন্ট্রোল করতে পারে তাকে যেতে দাও
রিমাঃ কিন্তু ছোট মা?
শাহেদাঃ চিন্তা করিও মা রিমা আকাশ কখনো আইভির ক্ষতি করবে না কারণ আকাশ অনেক ভালোবাসে তার ভাইয়ের মেয়েকে,,,
রিমা আর কিছু বলে না,,,চুপচাপ তারা দুইজন দাঁড়িয়ে আছে,
আইভি আস্তে করে রুমে ডুকে এক রাশ হাসি নিয়ে বলে
আইভিঃ চাচ্চু আমি আসছি,,,দেখো আজ স্কুল থেকে আসার সময় কত গুলো চকলেট এনেছি তোমার জন্য
আকাশ আইভিকে দেখে হেসে দেয়,,চুল গুলো চুলকাতে চুলকাতে অন্য হাত দিয়ে আইভি কাছে ডাকে,,
আকাশঃ আয় তাড়াতাড়ি
আইভির হাত থেকে চকলেট গুলো কেড়ে নেয় আর মাহির ছবির দিকে ধরে বলে
আকাশঃ মাহি দেখো আইভি এনেছে চকলেট তোমার তো অনেক প্রিয় খাও
আইভিঃ চাচ্চু আমি শুনেছি তুমি নাকি আজ কিছু খাও নাই?এই কেমন কথা হুম?এইভাবে কি হবে?
আকাশঃ মাহি দেখো কত গুলো চকলেট অনেক ইয়ামি হবে
আকাশ চকলেট গুলো নিয়ে মাহির ছবির সাথে কথা বলছে,,আইভির বেশ রাগ লাগে তবুও সে বলে
আইভিঃ তুমি পঁচা চাচ্চু আমার দিকে তাকাও না মাহি আন্টি তুমি দেখো চাচ্চু আমাকে একটুও ভালোবাসে না
আকাশ এইবার তাকায় দেখে আইভি মুখটা মলিন করে আছে আইভির গাল ধরে বলে
আকাশঃ এই নাও এইটা তোমার,কিন্তু মাহিকে বিচার দিও না কেমন পরে অনেক বকবে আমাকে হিহিহি
আইভিঃ দিবো না যদি তুমি এখন আমার হাতে খাবার খাও জানো আজ অনেক কিছু রান্না করেছে,,,
আকাশ শুধু মাথা নাড়ায়,,
এইদিকে শাহেদা তাড়াতাড়ি কাজের লোককে বলে খাবার আনায়,,আইভি খুব যত্নে আকাশেক খাইয়ে দেয়,,ছোট আইভিটা আজ যেন অনেক বড় হয়ে যায় আকাশ যবে থেকে অসুস্থ হয়েছে তবে থেকে আইভি তেমন দুষ্টুমি করে না অনেক লক্ষি মেয়ে হয়ে যায়,,,
এদিকে
মাইশা চুপচাপ বসে আছে নিজের রুমে লাইট অফ করে,,চিন্তা যেন তাকে ঘিরে ধরেছে,,কি করবে কি করা উচিত কিছু যেন বুজছে না,,,এমন এক প্রস্তাব পেয়েছে যা তার মনে একটুও ঠিক না,,,
মাইশাঃ জীবন মানে কষ্ট দিয়ে ঘিরে রয়েছে এই তো জানি কিন্তু কষ্ট গুলো যে এইভাবে দিনের পর দিন বেড়েই যাবে তা কখনও বুজি নাই,,ভেবেছি স কিছু ঠিক হবে কিন্তু কষ্ট গুলো ঠিক হচ্ছে কই উল্টো আমাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে,,,,,
মাইশা এইসব ভাবতে থাকে,তার মা রুমে এসে দেখে অন্ধকার রুম লাইট অন করতে দেখে মাইশা বসে কি যেন ভাবছে আর পাশে রাইশা ঘুম,,,
মাইশার মাঃ কিরে ঘুমাস নাই যে?
মাইশাঃ ঘুম পাচ্ছে না আম্মু তাই,,,কিছু কি বলবে?
মাইশার মাঃ আসলে কিভাবে যে বলি?
মাইশাঃ কিছু না ভেবে বলবে
মাইশার মাঃ বাড়িওয়ালা এসেছে বলেছে দুই দিনের মধ্যে পুরো ভাড়া না দিলে বের করে দিবে সব জিনিস পত্র রেখেই,,, অনেক বকাবকি করে গেছে কিছু বলতে পারি নাই,,
মাইশা চুপ করে আছে কি বলবে সে জানেও না অনেক মাসের ভাড়া জমা,,,
মাইশার মাঃ আমি জানি মা তোর উপরে বড্ড বেশি চাপ,তোর বাবার চিকিৎসা ঘর ভাড়া সবার জন্য খাবার সব কিছু মিলিয়ে তোর উপরে এতো চাপ যে আমি সত্যি আর সহ্য করতে পারছি না,,
মাইশার মা কেঁদে দেয়,,মাইশা তার মায়ের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে
মাইশাঃ আচ্ছা আম্মু আমরা না চাইতে ও আমাদের জীবনের এমন সিদ্ধান্ত নেই যা সবার জন্য ভালো কিন্তু নিজের জন্য খারাপ তাও জেনেও সিদ্ধান্ত টুকু নেওয়া বেটার তাই না আম্মু?
মাইশার মাঃ মাইশা যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক না কেন তা মন থেকে নেওয়া উচিত,,,সবার ভালো এমন কাজ করা উচিত হ্যাঁ কষ্ট দিয়ে জীবন ঘেরা তবুও কষ্ট সহ্য করে জীবনে এগিয়ে যাওয়ার নামই হচ্ছে জীবন,,,
মাইশা আর কিছু বলে না
মাইশার মাঃ কেন এমন কথা জিজ্ঞেস করলি?
মাইশাঃ এমনি আম্মু,,আচ্ছা আম্মু আমি ঘুমাই কাল এক জায়গায় যেতে হবে যেখানে গেলে হয়তো আমাদের সব সমস্যা দূর হবে,,,,
মাইশার মা চলে যায়,,কিন্তু মাইশা কিছুতেই তার দুই চোখের পাতা এক করতে পারছে না,,, চোখের পানিতে আজ বালিশ ভেজাচ্ছে কিন্তু কাউকে বুজতে ও দিচ্ছে না সে কষ্টে আছে,,,
চলবে,,,,