মায়াডোর-০৪,০৫

0
304

মায়াডোর-০৪,০৫

(৪র্থ পর্ব)
.
ইতি করিডর দিয়ে আসার সময় ছাদের সিঁড়ির কাছে পেল লতিফাকে। ইতি চারদিকে তাকিয়ে লতিফার হাত ধরে টেনে আবার ছাদে নিয়ে গেল।

– ‘কি হইছে ইতি।’

– ‘একটা কাজ করতে হবে আপু।’

– ‘কাজকামেই তো সারাদিন যায়, আর নতুন কাজ কি।’

– ‘তুমি তো পে*ত্নীর মতো হাসতে পারো, আগে হেঁসে আমাদের ভয় দেখাতে না।’

– ‘কি কও ইতি, পারিনি মানে। আমি তো খালি পে*ত্নীর মতো হাসতে পারি। আমার ছুডো ভাই লতিফ আছে না, সে শেয়াল, কু*ত্তা, মুরগি এমন কোনো জীব-জন্তু নাই যার মতো ডাকতে পারে না। মনে করো তোমার দাদা মইরা গেছে। হে রাইতে দাদার মতো তোমাদের দরজায় ডাইকা ভয় দেখাইয়া বাড়ির সবাইরে বিছানায় মুতাইয়া ফেলতে পারবো।’

– ‘তাই না-কি আপু। তোমার ভাইকে কি আমাদের বাড়ি আনতে পারবে?’

– ‘কেন কও তো।’

ইতি ফিক করে হেঁসে বললো,

– ‘কাউকে বলবে না কিন্তু। অতিথিরে ভয় দেখানো লাগবে। বাইরের জানালার কাছে ধরো তোমার ভাই অবিকল অতিথির গলায় তার নাম ধরে ডাকলো।’

– ‘ অতিথিরে ভয় দেখানো ওয়ান টুর ব্যাপার ইতি৷ আমি লতিফাই একা একশো। তুমি শুধু লগে থাকবা।’

– ‘আচ্ছা আপু, আজ রাতেই ভয় দেখাবো।’

– ‘কিন্তু ব্যাটার নাম কি?’

– ‘তা তো জিজ্ঞেস করিনি।’

– ‘আচ্ছা নাম দিয়া এখন কাম নাই। একটা হাসি দিয়াই বিছানায় মুতাইয়া দিমু।’

ইতি খিলখিল করে হাসছে। দু’জন পুনরায় ছাদ থেকে নেমে এলো। ভেতরে ভেতরে প্রচণ্ড উত্তেজিত ইতি। অতিথি এবার আজ মজা টের পাবে। ভালো মানুষের মতো স্যরি বলেছিল। তাতে হয়নি, সুযোগ পেয়েই শুরু করেছে মাস্টারি। তাকে রান্নাঘরে দেখে নীলা বললো,

– ‘ট্রে আনলে না যে ইতি।’

– ‘যাও তো লতিফা আপু তুমি নিয়ে আসো।’

লতিফা চলে গেল ট্রে আনতে। নীলা ইতির দিকে তাকিয়ে বললো,

– ‘কোনো সমস্যা হইছে?’

– ‘না, কি সমস্যা হবে আবার।’

– ‘মেহমানের লগে পরিচয় হইছে? নাম কি ওর?’

– ‘জিজ্ঞেস করিনি।’

মিলন ছিল দরজার সামনে। সে তার দুইহাত সামনে নিল। তারপর কাল্পনিক বাইকে পা দিয়ে স্টার্ট দিয়ে মুখে ‘বুম-বুম’ করে দৌড় দিয়ে গেল কল্পের রুমের দিকে। পর্দা ফাঁক করে বললো,

– ‘ছোট চাচি কইছে মেহমানের নাম কি?’

কল্প মুচকি হেঁসে এগিয়ে এসে তার হাত ধরলো।

– ‘তোমার নাম কি মিলন?’

মাথা নাড়লো সে।

– ‘ভেতরে আসো।’

– ‘না বাইক রেখে ভেতরে যাব না। নাম বলেন আমি চাচিকে গিয়ে বলবো।’

কল্প মুচকি হেঁসে বললো,

– ‘কল্প ইসলাম।’

মিলন তার কাল্পনিক বাইক ঘুরিয়ে পুনরায় রান্নাঘরের দরজার কাছে এসে বললো,

– ‘চাচি গল্প ভাইয়ার নাম হইল গল্প ইসলাম।’

ইতি আর নীলা অবাক হয়ে বললো,

– ‘কি গল্প ইসলাম? এটা আবার কেমন নাম।’

মিলন তাদেরকে আর সময় না দিয়ে বাইক ঘুরিয়ে ‘বুম-বুম’ করে দৌড় দিল উঠানের দিকে।
নাম নিয়ে হাসাহাসির পর ইতি ছোট চাচির মোবাইল নিয়ে আবার ছাদে চলে এলো। এখন কল দিবে সে ফুপাতো বোন মালিহাকে। ইতির দু’বছর বড়ো সে। তবুও তাদের বান্ধবীর মতো সম্পর্ক। চিলেকোঠার দেয়ালে হেলান দিয়ে কল দিল মালিহাকে। দুইবার কল হতেই রিসিভ হলো।

– ‘হ্যালো মালিহা আপু।’

– ‘হ্যাঁ, কিরে আর সময় পেলি না কল দিতে।’

– ‘কেন, কি করছিলে?’

– ‘মায়ের জন্য তো ওর সঙ্গে কথাই বলতে পারি না। চ্যাট করি শুধু। এখন মা বাইরে গেছে। কল দিতে নিছিলাম ওরে।’

ইতি হেঁসে বললো,

– ‘আচ্ছা থাক, ওর সঙ্গে কথা বলার আজ দরকার নেই। তুমি জানো আমি কি পরে আছি?’

– ‘কিভাবে জানবো? আমাকে কি দরবেশ মা মনে হয় তোর?’

– ‘আরে তা না আপু, শোনো না, আমি এখন শাড়ি, চুড়ি পরে আছি। সাজগোজ করেছি।’

– ‘কার জন্য?’

– ‘আমাদের বাড়িতে আজ একটা নতুন ছেলে এসেছে ওর জন্য।’

– ‘কি? নতুন একটা ছেলে আজই এসেছে। আর আজই ওর জন্য তুই সেজেগুজে শাড়ি পরে আছিস। মানে এত দ্রুত কিভাবে কি? তাহলে কালই তো ছেলেটা তোর গায়ে হাত দিয়ে বলবে ইশ এত নরম, তুইও গরম হয়ে গলে যাবি। এরপর কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই ওর সঙ্গে শুয়ে গিয়ে পেট ফুলিয়ে নিবি…।’

– ‘আপু স্টপ, প্লিজ থামো, আগে তো সব শুনবে।’

– ‘আচ্ছা বল তাহলে।’

– ‘শাড়ি পরেছি কারণ বুইড়াটা আমাকে পিচ্চি মনে করে। ইভেন পিচ্চি বলেছেও। আমি এইটে ফেইল করেছি শুনে মাস্টারিও ফলাতে শুরু করেছে..।’

– ‘আর বলতে হবে না শোন আমার কথা। আমি তোর দুই বছরের বড়ো এটা মনে রাখিস। তোর থেকে একটু হলেও বেশি বুঝি। ওই বুড়োর ধারেকাছেও তুই যাবি না৷ ভুলেও যাবি না। মাস্টার না-কি বললি, পড়তে গেলে যাবে নিয়ন আর মিলন, তুই না। বয়স্ক লোকদের ছোঁকছোঁকনি বেশি থাকে বুঝেছিস। তুই কয়েকদিন পড়তে গেলেই দেখবি উরুতে এত জোরে চেপে ধরবে, তোর জান বের করে ফেলবে। আর বুক গলিয়ে ফেলবে…।’

‘স্টপ প্লিজ, তোমাকে কল দেওয়াটাই আমার ভুল হইছে৷ ফোন রাখছি আমি।’

ইতি কল কেটে দিল। সঙ্গে সঙ্গে আবার কল ব্যাক করলো মালিহা। ইতি এবার মোবাইল অফ করে নিচে চলে গেল।

রাতে খাবার টেবিলে কল্পের সবার সঙ্গে পরিচয় হলো। ইতির বাবাও ছিলেন। নাম মুজিব উদ্দিন। উনার মুদ্রাদোষ হচ্ছে ঘন ঘন শব্দ করে নাক টানেন। সর্দি নেই কিছু নেই অকারণ নাক টানা চলছে। তিনি গ্লাসে পানি ঢেলে বললেন,

– ‘কল্প তোমাকে আমি দেখেছি। তুমি খুব ছোট ছিলে তখন। এরপর আমাদের দুই পরিবারে মিল নেই। ঝামেলাটা আমার বড়ো বোনকে নিয়েই ছিল..।’

ফরিদ সাহেব ধমক দিয়ে উঠলেন,

– ‘নির্বোধের বাচ্চা এগুলো বাচ্চাদের সঙ্গে আলাপের কি আছে।’

মুজিব উদ্দিন নাক টেনে বললেন,

– ‘কিন্তু বাবা তুমি তো আমাকে বাচ্চাদের সামনে তোমার ঐতিহাসিক গালিটা দিয়ে দিলে।’

ফরিদ সাহেব দাঁত কটমট করে তাকিয়ে আবার খাবারে মনযোগ দিলেন। মুজিব উদ্দিন আবার নক টেনে বললেন,

– ‘তা যা বলছিলাম কল্প। দুই পরিবারের অকারণ মনমালিন্য ছিল। এগুলো মনে রাখার কিছু না। তুমি মুস্তাক ভাইয়ের ভাগনা, আমারও ভাগনা। একেবারে নিজের বাড়ির মতো চলাফেরা করবে বুঝেছো?’

– ‘আচ্ছা মামা।’

– ‘আসলে আমি ভোরে উঠে চলে যাই ফার্মেসিতে। আসি রাতে। বাচ্চা-কাচ্চারা একেবারে গোল্লায় যাচ্ছে। ওদের একটা টাইমে একটু পড়াশোনা দেখিয়ে দিয়ো।’

– ‘আচ্ছা মামা।’

– ‘আরেকটা কাজ কি করতে পারবে?’

– ‘কি?’

– ‘আমি আসলে বাড়িতে এসে দুপুরে খেতে হয়। এই আলসামির কারণে প্রায়ই বাইরে খাই। তুমি কি কোচিং এ যাওয়ার সময় আমার জন্য খাবার নিয়ে যেতে পারবে না?’

ফরিদ সাহেব আহত নয়নে তাকিয়ে বললেন,

– ‘দেখেছি তো বউমা অবস্থা? আমি কি স্বাদে এদেরকে নির্বোধ বলি। একটা ছেলে পড়ালেখা করতে এসেছে। সে বানিয়ে দিচ্ছে তার ফরমায়েশির চাকর।’

কল্প আমতা-আমতা করে বললো,

– ‘সমস্যা নেই নানা। আমি তো কোচিং-এ যাবোই। হাতে করে টিফিন নিতে সমস্যার তো কিছু নেই।’

মুজিব উদ্দিন নাক টান দিয়ে বললেন,

– ‘বাবা এবার ছেলেটাকেও তোমার ঐতিহাসিক গালিটা দিয়ে দাও।’

– ‘আরে নির্বোধ এই ছোকরা তো কথাটা ভদ্রতা করে বলেছে। তোদের থেকে ভদ্রতা উঠে গেলেও দুনিয়া থেকে তো যায়নি।’

মুজিব উদ্দিন পিতার দিকে তাকিয়ে নাক টান দিয়ে আবার খাবারে মনযোগ দিলেন। ইতি টেবিল থেকে খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে আঙুলে ওড়না পেঁচাচ্ছে। সবাই যখন তর্ক-বিতর্কে ব্যস্ত তখন হুট করে তার চোখ গেল টেবিলের নিচে। আধো আলো-ছায়ায় চটিজুতোর ওপর কল্পের নগ্ন পায়ের পাতা দেখা যাচ্ছে। কিছুটা বিস্মিত হলো ইতি। ছেলেদের পা সচরাচর এত সুন্দর দেখে না সে। আঙুলগুলোর ওপর অল্প অল্প লোমও দেখা যাচ্ছে। হুস্না বেগম তাকে দেখে বললেন,

– ‘তুই এখানে বসে বাপ-দাদার ঝগড়া দেখছিস না-কি, পড়তে যা।’

ইতি মুখ বাঁকিয়ে চলে এলো চাচির রুমে। বিছানায় শুয়ে একটা বালিশ জড়িয়ে ধরে চোখবুঁজে অস্ফুটে উচ্চারণ করলো ‘উনার নাম তাহলে গল্প নয়, কল্প।
উদ্ভট নাম। অবশ্য একটু উদ্ভট হবে বটেই৷ না হলে প্রথম দেখাতেই ইতিকে ঘায়েল করা তো সহজ ছিল না।’

খানিক পরই এসে ঢুকলো নীলা। ইতিকে চোখবুঁজে আছে দেখে পেটে কাতুকুতু দিল। খিলখিল করে হেঁসে ইতি উঠে বসলো বিছানায়।

– ‘কি হয়েছে, কাতুকুতু দিলে কেন?’

– ‘বিকেলে দেখে তো কিছুই বলোনি। ছেলেটা তো দেখতে বেশ সুন্দর।’

– ‘বলিনি কারণ ওর সঙ্গে দুইবার দেখা হইছে আর দুইবারই ঝগড়া হয়ে গেছে।’

– ‘তাই না-কি।’

– ‘হ্যাঁ, আর ছেলের যা ভাব আন্টি। আমি এইটে ফেইল করেছি শুনে যেন আসমান থেকে পড়লো।’

নীলা খিলখিল করে হেঁসে বললো,

– ‘তাই না-কি।’

– ‘হ্যাঁ, আচ্ছা আন্টি। ওইযে তোমার একটা খেলা আছে না ফেইক আইডি দিয়ে। ওটা কল্পের সঙ্গে করলে কেমন হয়?’

– ‘কল্প বলছো কেন? ওর কাছে পড়তে বলছেন তোমার আব্বা। স্যার বা ভাই ডাকো।’

– ‘বসে আছি ঘোড়ার ডিম ডাকতে। এখন বলো ফেইক আইডির ওই খেলা খেলবে?’

– ‘খেলে কি হবে। ইয়াং ছেলে হারবে তো জানিই। বিবাহিত ব্যাটারাই জিতে না। এমনকি তোমার চাচাও।’

– ‘আচ্ছা এসব জানি। তবুও ওকে পরীক্ষা করে দেখি।’

– ‘আচ্ছা, নাও।’

নীলা মোবাইল দিল ওর হাতে৷ অনেক পুরোনো ফেইক আইডি। একটা অসম্ভব রূপবতী মেয়ের অসংখ্য ছবি আইডিতে। ইতি বাংলায় ‘কল্প ইসলাম’ লিখে সার্চ দিয়ে খুঁজতে খুঁজতে পেল না।

– ‘আন্টি ওর আইডি খুঁজে পাই না তো।’

– ‘বাংলা, ইংলিশ দু’ভাবেই সার্চ দাও।’

কথামতো সে ইংলিশে সার্চ দিতেই প্রথমে চলে এলো কল্পের আইডি। একটা সেল্ফি দেওয়া ওর প্রফাইলে।

– ‘হ্যাঁ পেয়েছি।’

– ‘ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট দাও। তারপর যখন গ্রহণ করবে তুমি নিয়মিত দুয়েকদিন তার ছবি, স্টোরিতে লাইক কমেন্ট করবে।’

– ‘তারপর?’

– ‘তারপরই বেশিরভাগ লুচ্চা ব্যাটাই ইনবক্সে নক দিয়ে দেয়।’

– ‘আর যদি না দেয়?’

– ‘অপেক্ষা করবে। লাইক কমেন্ট করবে। তারপর ধীরে ধীরে কোনো একটা টপিকে ইনবক্সে নক দিবে। তখন ছেলেটা আন্দাজ করতে চাইবে আইডি ফেইক কি-না। যদি কল দিতে চায় গলা চেঞ্জ করে কলে কথা বলবে। এভাবে আরকি।’

ইতি মাথা নেড়ে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠিয়ে মোবাইল বিছানায় রেখে লতিফার খুঁজে গেল। লতিফা ফরিদ সাহেবকে পান দিয়ে করিডরে এসেছে। ইতি এগিয়ে গিয়ে বললো,

– ‘চলো ভাবের দোকানদারকে ভয় দেখিয়ে আসি।’

– ‘এখন? আরেকটু রাত হোক।’

– ‘আরে না এখনই চলো।’

লতিফা মাথা নেড়ে সম্মতি দিল। দু’জন আস্তে-আস্তে পেছনের দরজা দিয়ে বাইরে এলো। ঝিঁঝি পোকা ডাকছে। মৃদু শীতল বাতাস। তারা পা টিপে টিপে উত্তরের জানালার কাছে এলো। ইতি ফিসফিস করে বললো,

– ‘হাসো।’

লতিফা হাত-মুখ-চোখ নাচিয়ে নানান সুরে ভয়ংকরভাবে হাসতে শুরু করলো। ওর চেহারা যেন পালটে গেছে। চোখে ভূতুড়ে চাহনি।
ইতি ঢোক গিলে চারদিকে তাকায়। তার নিজেরই লতিফাকে দেখে ভয় লাগছে। প্রচণ্ড ভয়ে ‘ঠাস’ করে লাতিফার গালে চ*ড় দিয়ে বললো,

– ‘তুমি আমাকে ভয় দেখাচ্ছ না-কি ওই ছেলেকে। সে কি তোমার চোখ-মুখ আর হাত দেখতে পাচ্ছে। এগুলো না করে শুধু হাসতে পারো না।’

লতিফা বিরক্ত হয়ে বললো,

– ‘একটা ভাব তো আওন লাগবো না-কি।’

তখনই স্টিলের জানালার দু’টা পাল্লা প্রচণ্ড জোরে এসে ইতির কপালে আর লতিফার ঠোঁটে লাগলো। কল্প অস্থির গলায় বললো,

– ‘কে হাসছে ওখানে?’

_____চলবে…
লেখা: জবরুল ইসলাম

মায়াডোর (৫ম পর্ব)
.
দু’জন আহতস্থান চেপে ধরে, আর্তনাদ গিলে নিয়ে মাথা নুইয়ে দৌড় দিল।
হুড়মুড় করে এসে ঢুকলো পেছনের দরজা দিয়ে। ইতি ফিসফিস করে বললো,

– ‘লতিফা আপু চিলেকোঠায় চলো।’

দু’জন চুপিচুপি সিঁড়ি দিয়ে উঠে চিলেকোঠার বাতি জ্বেলে দিল।

– ‘ইতি আমার ঠোঁট ফাইটা গেল কি-না দেখো তো বইন।’

ইতি কপাল ঘষতে ঘষতে বললো,

– ‘রাখো তো তোমার ঠোঁট। আমার নিজেরই কপাল সুপারির মতো ফুলে গেছে মনে হচ্ছে।’

– ‘হ তাইতো দেখা যাইতেছে। এখন যে চাচা-চাচি জিগাইবো দুইজনের এগুলো কিভাবে হইল, তখন কি বলমু?’

ইতি দাঁত কটমট করে তাকিয়ে বললো,

– ‘ব্যথায় জান যাচ্ছে আর তুমি আছো ওদের কি বলবো তা নিয়ে।’

– ‘একটা কিছু তো বলা লাগবো।’

– ‘বলবো আমার কপাল দেখো কত ভালো। সুপারি গজাইছে, তোমরা কেটে নিয়ে খাও।’

লতিফা স্মিত হেসে বললো,

– ‘হাসাইয়ো না তো ইতি, হাসলে ঠোঁটে ব্যথা লাগে।’

– ‘আচ্ছা এই ব্যাটারে কি আল্লাহ তায়ালা ডর-ভয় কিচ্ছু দেয় নাই লতিফা আপু? পে*ত্নী হাসছে তুই খাটের তলায় গিয়ে ভয়ে কাঁপবি, না হয় বিছানা মুতে ভিজাইয়া ফেলবি, তা না করে খাটাশের মতো ঠাস করে জানালা খুলে দিবি কেন।’

সিঁড়ির কাছে হুস্না বেগমের গলা শোনা গেল,

– ‘এই চিলেকোঠায় কারা ফিসফিস করে? কে ওখানে?’

লতিফা ভয়ে অস্থির হয়ে ফিসফিস করে বললো,

– ‘হায় আল্লাহ এখন চাচিরে কি কইবা।’

ইতি ভয়ে ভয়ে বললো,

– ‘আম্মা আমি আর লতিফা।’

– ‘এখানে কি করো তোমরা?’

– ‘আর বলো না আম্মা। লতিফা কত বড়ো কাঙাল দেখো।’

– ‘কি হয়েছে? নেমে আয় নিচে।’

ইতি সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললো,

– ‘একটা ফড়িং ঘরে ঢুকেছে আম্মা। সেটা ধরার জন্য আমি পিছু নিয়েছি। লতিফাও পিছু নিছে। তারপর চিলেকোঠার দেয়ালে ফড়িং উড়ে গিয়ে বসেছে। সেখানে আমি ধরতে যেতেই আবার উড়াল দিল। তখন আমিও লাফ দিছি, ওমনি লতিফা কাঙালের মতো লাফ দিতেই ওর ঠোঁটে লাগছে আমার কপাল। দেখো কি হইছে ফুলে।’

লতিফা অবাক হয়ে গেল ইতির বুদ্ধি দেখে। হুস্না বেগম এগিয়ে এসে লতিফার ঠোঁট দেখে বললেন,

– ‘তোরও তো ঠোঁট ফুলে গেছে। দুইটা কি বাচ্চা হইছো? এখন ফড়িং এর পেছনে ছোটার বয়স বুঝি তোমাদের? যাও ঘরে যাও।’

ধমক খেয়ে দু’জন চুপিচুপি নিজেদের রুমে চলে গেল।

কল্পের ভয় ভয় লাগছে। নতুন একটা বাড়িতে এসেছে। তার রুম একেবারে উত্তরে। লাগোয়া আছে সিটিং রুম। সেখানে তো কেউ থাকার কথা নয়। খানিক আগে সে স্পষ্ট কুৎসিত কিছু হাসির শব্দ শুনেছে। রুমে বৈদ্যুতিক ফ্যানের শব্দ ছিল। প্রথমে সে বুঝতে পারছিল না হাসিটার উৎপত্তিস্থল কোথায়। ভেতর ঘরে না-কি বাইরে কেউ হাসছে? সে ভয়ে ভয়ে গিয়ে জানালায় কান লাগিয়ে নিশ্চিত হয়েছে শব্দটা বাইরে থেকে আসছে। কিন্তু জানালা খুলতেই হাসি বন্ধ, কোনো কিছুর চিহ্ন পর্যন্ত নেই। ভূ*ত-প্রে*তে তার এমনিতেই প্রচণ্ড ভয়। গত শীতে স্টিফেন কিং এর ‘দ্য শাইনিং’ পড়েছিল। এই বই পড়ে মানুষ খুব একটা যে ভয় পায় তাও না৷ কিন্তু সে প্রচণ্ড ভয় পেয়েছিল। রাতে প্রস্রাব করতেও যায়নি। রুমের সামান্য পর্দা কাঁপলেও ভয়ে অস্থির হয়ে যাচ্ছিল। সারারাত মনে হয়েছিল কেউ রুমের ভেতর হাঁটছে, তারদিকে বিভৎস মুখে তাকিয়ে আছে৷ চুপচাপ কাঁথা মুড়ি দিয়ে সেদিন ঘুমিয়ে পড়েছিল। এই বাড়িতে কি ভূ*ত-প্রে*ত কিছু আছে? থাকতেও পারে। বাড়ির লোকগুলোও কেমন অদ্ভুত। সবারই মাথায় কিঞ্চিৎ সমস্যা আছে বলে তার ধারণা। ঘটনাটা বাড়ির লোকদের গিয়ে ডেকে বলবে কি-না ভাবছে। বললে আবার সবাই ভীতু ভাববে না তো তাকে? খানিক্ষণ গুটি-শুটি মেরে শুয়ে থাকলো বিছানায়। কোথাও থেকে একটা সুরেলা গুন-গুন শব্দ ভেসে আসছে। ছাদের উপর থেকে না-কি? এত রাতে কে গুন-গুন করবে? ভয়ে ঘেমে গেছে শরীর। তাকিয়ে দেখে ফ্যান বন্ধ। নিজের উপরই প্রচণ্ড বিরক্ত হলো। জানালার কাছ থেকে এসে নিজেই বন্ধ করেছে। এরপর আর সুইচ দিতে মনে নেই। নানাকে গিয়ে ঘটনাটা বললে কেমন হয়?
দরজা খুলে বারান্দায় গেল সে। গুন-গুন না তো। স্পষ্ট গান শোনা যাচ্ছে। অসম্ভব সুন্দর কণ্ঠ। মনটা শীতল করে দেওয়ার মতো মধুর সুর। মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকে টেনে নিল সুরের রশ্মি। কে গায় এমন করুণ গলায়। সুরের মূর্ছনায় হৃদয়হীন পাথর মানবেরও জলে চোখ ঝাপসা হয়ে আসবে। সে করিডরের সামনে এসে থেমকে গেল। ঠোঁটে আঙুল দিয়ে তাকে চুপ থাকতে বললেন ফরিদ সাহেব। মাথায় পাকা চুল। পরনে হাফহাতা সাদা গেঞ্জি। তিনি মাথা নুইয়ে কান খানিক এগিয়ে রেখেছেন সামনের দরজার দিকে। ভেতর থেকে ভেসে আসছে,

“আমি কেন তিথিডোরে বাঁধারে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে
ঋতুর দু’ধারে থাকে দু’জনে, মেলে না যে কাকলি ও কূজনে,
আকাশের প্রাণ করে হূহু হায়..
এ পারে মুখর হল কেকা ওই, ও পারে নীরব কেন কুহু হায়।”

গান শেষ হতেই কল্প ফিসফিস করে বললো,

– ‘কে গায় নানা।’

তিনি তার হাত ধরে টেনে নিয়ে এলেন নিজের রুমে। তারপর বাতি জ্বালিয়ে দিয়ে বসতে বললেন।

– ‘আমার বউমা মাঝে মাঝে রাতে রবীন্দ্র সংগীত গায়। কি মায়া গলায় দেখেছো?’

কথাটা বলে তিনি পানদানি থেকে পানের ওপর সুপারি জর্দা নিয়ে মুখে দিলেন। আঙুলের ডগায় নিলে খানিক চুন। তারপর আঙুল চুষে নিয়ে বললেন,

– ‘আগে তেমন পান খেতাম না। এখন অবসর পেয়ে খেতে খেতে নেশা ধরে গেছে। তুমি খাবে না-কি?’

– ‘না না, আমি খাই না।’

– ‘ভালো, এসব না খাওয়া ভালো।’

– ‘কিন্তু আপনি গান লুকিয়ে শুনছিলেন কেন?’

– ‘আর বলো না। মাইয়াটা লাজুক। প্রথমদিন গান শুনে তো আমি অবাক। দরজায় গিয়ে নক দিলাম। বললাম এত সুন্দর গান কে গায়। বউমা তো লজ্জায় মিলিয়ে যাচ্ছে। ইতি বললো আন্টি গায়৷ আমি বললাম গাইতে, কিন্তু গাইবে না। এটা কিছু হইল বলো? এরপর থেকে যখন গায়, আমি দূর থেকে শুনি। বড়োই মধুর সুর।’

– ‘হ্যাঁ নানা।’

– ‘গান অবশ্য আমিও গাই। তবে রবীন্দ্র সংগীত না, রবীন্দ্র সংগীত সবার গলায় মানায় না।’

– ‘আপনি কার গান গান?’

– ‘আব্দুল করীম, লালন শাহ, হাসন রাজা।’

রুমে তার এমনিতেই ভয় করছিল। এখন ফিরে যাওয়ার চাইতে বুড়োলোকের গলায় হলেও গান শুনলে মন্দ কি? সে পা তুলে আরাম করে বসে বললো,

– ‘নানা তাহলে আপনার একটা গান শুনি।’

– ‘কিন্তু পান যে মুখে দিয়ে দিলাম ছোকরা।’

– ‘ও তাহলে থাক আজ।’

– ‘না না, বসো, ফেলে আসি।’

ফরিদ সাহেব গ্লাসে করে পানি নিয়ে বাইরে গিয়ে কুলি করে এলেন। তারপর উঠে বসলেন বিছানায়,

– ‘আব্দুল করীমের একটা গান আছে বুঝলে, এই বৃদ্ধ বয়সে এসে বড়ো মনে পরে গানটা৷ গাইব না-কি?’

– ‘হ্যাঁ গান নানা।’

তারপর চোখবন্ধ করে গলায় ভীষণ দরদ এনে গাইতে শুরু করলেন ফরিদ সাহেব।

“আগের বাহাদুরি এখন গেল কই
চলিতে চরণ চলেনা দিনে দিনে অবশ হই
আগের বাহাদুরি এখন গেল কই ।।
মাথায় চুল পাকিতেছে মুখের দাঁত নড়ে গেছে
চোখের জ্যোতি কমেছে মনে ভাবি চশমা লই।।
মন চলেনা রঙ তামাশায় আলস্য এসেছে দেহায়
কথা বলতে ভুল পড়ে যায় মধ্যে মধ্যে আটক হই
আগের বাহাদুরি এখন গেল কই ।।
কমিতেছি তিলে তিলে ছেলেরা মুরুব্বী বলে
ভবের জনম গেল বিফলে এখন সেই ভাবনায় রই
আগের মত খাওয়া যায়না বেশি খাইলে হজম হয়না
আগের মত কথা কয়না নাচেনা রঙের বারুই
আগের বাহাদুরি এখন গেল কই ।।
ছেলেবেলা ভাল ছিলাম বড় হয়ে দায় ঠেকিলাম
সময়ের মূল্য না দিলাম তাইতো জবাবদিহি হই
যা হবার তা হয়ে গেছে আব্দুল করিম ভাবিতেছে
এমন একদিন সামনে আছে একেবারে দরবেশ হই।।
আগের বাহাদুরি এখন গেল কই…

গান শুনে ইতিও চলে এলো দাদার রুমে৷ পর্দার ফাঁক দিয়ে কল্পকে দেখে অবাক হলো বটে। আশা করেনি এখন এই ঘরে থাকবে সে। গান শেষ হতেই বললো,

– ‘আমি কি আসতে পারি দাদাভাই।’

– ‘হ্যাঁ আয় আয়, বিছানায় উঠে বস।’

ইতি চোরা চাহনিতে কল্পকে দেখে সোজা গিয়ে দাদার পাশে বসলো। তাদের মুখোমুখি সামনে বসা কল্প। ইতি আগ্রহ নিয়ে বললো,

– ‘দাদাভাই তোমার আব্দুল করীমের গান হচ্ছে না-কি? তাহলে ‘কেনো পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু’ গাও।’

– ‘না ভদ্রলোকেরই অন্য একটা গান গাই।’

– ‘আচ্ছা।’

তিনি আবার শুরু করলেন,

“কোন মেস্তরি নাও বানাইলো এমন দেখা যায়
ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে ময়ূরপঙ্খী নায়।
চন্দ্র-সূর্য বান্ধা আছে নাওয়েরই আগায়
দূরবীনে দেখিয়া পথ মাঝি-মাল্লায় বায়
ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে ময়ূরপঙ্খী নায়।।
রঙ-বেরঙের যতো নৌকা ভবের তলায় আয়
রঙ-বেরঙের সারি গাইয়া ভাটি বাইয়া যায়
ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে ময়ূরপঙ্খী নায়।।
জারি গায়ে ভাটি বায়ে করতাল বাজায়
মদন মাঝি বড়ই পাজি কতো নাও ডুবায়
ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে ময়ূরপঙ্খী নায় ।।
হারা-জিতা-ছুবের বেলা কার পানে কে চায়
পাছের মাঝি হাল ধরিয়ো ঈমানের বৈঠায়
ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে ময়ূরপঙ্খী নায় ।।
বাউল আব্দুল করিম বলে বুঝে উঠা দায়
কোথা হইতে আসে নৌকা কোথায় চলে যায়
ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে ময়ূরপঙ্খী নায়।।”

ইতি হেলান দিয়ে বসে বারবার তাকিয়ে দেখছিল কল্পকে। কি যে ভালো লাগছে দেখতে। একবার কি পা লম্বা করে ওকে ছুঁয়ে ভান করবে বেখেয়ালে লেগে গেছে? ইতি ইচ্ছাটাকে দমিয়ে নিল। বাড়াবাড়িটা একটু বেশিই হয়ে যাবে। ফরিদ সাহেব খানিক পর বললেন,

– ‘যাও রাত অনেক হয়েছে। ঘুমাও গিয়ে।’

ইতি গাল ফুলিয়ে বললো,

– ‘আরেকটা গাও দাদাভাই, অনেক সুন্দর হইছিল।’

– ‘না অনেক হইছে এবার যাও।’

কল্প বিদায় নিয়ে চলে এলো বাইরে। ইতিও এলো পিছু পিছু। হঠাৎ কল্প ভাবলো মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করে দেখুক। নানাভাইকে জিজ্ঞেস কর‍তে মনে ছিল না।
সে পিছু ফিরে বললো,

– ‘আচ্ছা ইতি। আপনাদের বাড়িতে দোষী কিছু কি আছে?’

কল্পের মুখে নিজের নাম শুনে ইতির বুক শিরশির করে উঠলো। খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,

– ‘দোষী মানে কি?’

– ‘কিছু বাড়িতে থাকে না একটা গাছ দোষী। কিংবা কোনো একটা রুম। সেসবে জ্বী*ন-ভূ*ত থাকে বলে মানুষ ধারেকাছেও যায় না।’

ইতির হাসি পাচ্ছিল। আঁটকে নিল সে। ঘটনাটা বুঝতে পারছে এখন। তারমানে ভাবের দোকানদার ভয় পাইছে৷ সে নির্লিপ্ত চেহারায় বললো,

– ‘হ্যাঁ, আপনার রুমের জানালার কাছে একটা গাছ। ওইটা দোষী গাছ।’

কল্প বিস্মিত হয়ে বললো,

– ‘কি?’

– ‘হ্যাঁ দোষী, কিন্তু ভয়ের কিছু নেই। দোয়া-দরুদ পড়ে ঘুমিয়ে যাবেন। আমিও তো ওই রুমে একা ঘুমাইতাম। আমার ভয় করেনি।’

– ‘কি? আপনি দোষী জেনেও ঘুমাতেন, ভয় করতো না?’

– ‘না, এতবড় মেয়ে আমি। ভয় পাব কেন?’

– ‘আচ্ছা ওই গাছ কেটে ফেলেন না কেন? জানালার কাছে দোষী গাছ রাখা কি ঠিক?’

– ‘একবার দাদাভাই কেটে ফেলতে চাইছিলেন। ওইদিন রাতেই ভয়ংকর একটা স্বপ্ন দেখে আর কাটার সাহস হয়নি।’

– ‘বলেন কি! কি স্বপ্ন?’

ইতির হাসি আঁটকে রাখতে কষ্ট হচ্ছে৷ তাই আর কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি নীলার রুমের দিকে চলে গেল। কল্প ভয়ে ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে হাঁটতে শুরু করলো। রুমে এসে দরজা বন্ধ না করেই গুটি-শুটি মেরে বিছানায় শুয়ে গেল। দরজা খোলা রেখেই ঘুমাবে। ভয়ের কিছু নেই। একটা চিৎকার দিলেই সবাই দৌড়ে চলে আসবে। তাছাড়া ইতির মতো পিচ্চি একটা মেয়ে একা একা ঘুমাতে পারলে সে পারবে না কেন? আয়াতুল কুরসিটা এখন মনে পড়ছে না কেন কে জানে। বারবার স্বরণ করার চেষ্টা করেও পারলো না। হঠাৎ মনে হলো মোবাইল দিয়ে গুগল থেকে পড়ে নেয়া যায়। কিন্তু মোবাইলের স্ক্রিনের বাতি জ্বালাতেই যদি দেখা যায় কেউ বিভৎস মুখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। এরচেয়ে সূরা ইখলাস তিনবার বিড়বিড় করে পড়ে নিয়ে চোখবন্ধ করে পুরো শরীরে ফুঁ দিয়ে নিল সে। একদম চোখ খোলা যাবে না। ভুলেও না৷ খুললে ভয়ংকর কিছু দেখে ফেলতে পারে।

ইতি বিছানায় গিয়ে নীলাকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে। তারপর হাসতে হাসতে বললো,

– ‘ঘুমিয়ে গেলে না-কি আন্টি?’

নীলা ঘুমকাতুরে গলায় বললো,

– ‘হ্যাঁ।’

– ‘আচ্ছা আগে শুনে নাও, শুনেই ঘুমিয়ে যাবে।’

– ‘জরুরি কিছু হলে বলো।’

– ‘জানো, কল্প ভয় পাইছে?’

– ‘কল্প শুনতে বিশ্রী লাগে ইতি৷ ভাইয়া অথবা স্যার লাগিয়ে বলো।’

– ‘স্যার? জীবনেও না। আচ্ছা যাও কল্প ভাইয়া ভয় পাইছে।’

– ‘তোমাকে দেখে?’

– ‘আমি কি পে*ত্নী যে আমারে দেখে ভয় পাবে৷ দাদাভাইয়ের রুমে গেলাম। গিয়ে দেখি কল্প ভাইয়া। তো গান শুনে আসার পথে আমাকে সে জিজ্ঞেস করলো বাড়িতে দোষী কিছু আছে কি-না।’

– ‘তারপর?’

– ‘তারপর বললাম আছে। ওর জানালার কাছের গাছটা দোষী।’

– ‘ও আচ্ছা।’

– ‘তুমি ঘুমিয়ে যাচ্ছা না-কি? জেগে থাকো না প্লিক, গল্প করি দু’জন৷ অন্যদিন তো গল্প করার জন্য জাগিয়ে রাখতে আমাকে।’

– ‘আচ্ছা বলো আমি শুনছি।’

– ‘এভাবে গল্প করে তো মজা পাচ্ছি না। আমার দিকে পাশ ফিরে অন্যদিনের মতো গলা জড়িয়ে ধরো।’

– ‘আরে ধুরো ভালো লাগছে না ঘুম পাচ্ছে।’

ইতি মুখ বাঁকিয়ে বালিশের পাশ থেকে মোবাইল নিয়ে ফেইসবুকে ঢুকলো। সার্চ লিস্ট থেকে গেল কল্পের আইডিতে। ভেবেছিল ছবি দেখবে ওর। কিন্তু প্রফাইল লক করা। ফ্রেন্ড রিকুয়েস্টও এখনো গ্রহণ করেনি। অস্ফুটে বিরক্তিকর সুরে বললো ‘ব্যাটা ভাবের দোকানদার’ প্রফাইল লক করে রাখার কি আছে৷

__চলবে…
লেখা: জবরুল ইসলাম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here