মায়াডোর-২৫,২৬
(২৫ পর্ব)
.
মুজিব উদ্দিন এগিয়ে যান। ইতি থুতনি বুকের সঙ্গে লাগিয়ে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।
– ‘এখান থেকে বের হয়ে যা।’
ইতি মাথা তুলে তাকায়। বাবার গলা খুবই শান্ত অথচ কি ভয়ংকর শোনাচ্ছে৷
– ‘জি বাবা?’
– ‘বলেছি চলে যেতে।’
ইতি ইতস্তত করে বের হয়ে যায়। কল্প বাবা-মেয়ের কথোপকথন শুনে বিছানায় ধড়ফড়িয়ে উঠে বসেছে। মুজিব উদ্দিন কোমরে হাত দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। কল্পের জ্বর এবং নিন্দ্রা জনিত ঘোর কেটে শরীর এখন ক্রমশই ঘামতে শুরু করেছে। লজ্জায় মাথা তুলে মুজিব উদ্দিনের চোখের দিকে তাকাতে পারছে না৷ খানিক্ষণ নীরবতায় চলে যায়। নীরবতা মুজিব উদ্দিনই ভাঙেন,
– ‘গ*রুর বা*চ্চা, তোদের বংশটাই আসলে খারাপ। তোর মামা আমার বড়ো বোনের পিছু নিয়েছিল। তোর মা তোরে ফেলে পয়সাওয়ালা ব্যাটা দেখে বিয়ে বসে গেছে। ভেবেছিলাম তুই পড়ালেখা করে ভালো মানুষ হয়েছিস। এখন দেখি তুই একটা কা*লসা*প। আমার বাড়িতে থেকে, ফ্যামিলির মতো মিশে, আমার মেয়ের দিকে কু*নজর দিয়েছিস। কু*ত্তার বাচ্চা কাল ভোরে তুই আমার বাড়ি ছেড়ে বিদায় হবি। সবাইকে বলবি ভার্সিটি হলেই সিট পেয়েছিস তাই চলে যাবি।’
কল্প মাথা নীচু করে বসে রইল। মুজিব উদ্দিন নাক টান দিয়ে বললেন, ‘কি বলেছি কানে ঢুকেছে তো? আমার বাড়ির ত্রিসীমানায় তোরে আর দেখতে চাই না। কাল ভোরেই বিদায় হবি।’
কল্প কিছু বলতে যাচ্ছিল। মুজিব উদ্দিন হাত তুলে থামিয়ে বললেন, ‘মেজাজটা খারাপ করবি না কথা বলে। তোরে এখন টুকরো টুকরো করে কে*টে ফেললেও মাথা ঠাণ্ডা হবে না। আমার চোখের সামনেই দেখতে চাই না আর৷ যা বলেছি তাই করবি। সবাইকে বলবি হলে সিট পেয়েছিস।’
মুজিব উদ্দিন বের হয়ে গেলেন।লজ্জায়-অপমানে কল্পের কান দিয়ে যেন গরম ভাঁপ বেরুচ্ছে৷ দুইহাতে মুখ ঢেকে বসে থাকে সে। বিদায় নিয়ে আজই চলে যাবে কল্প। ক্লাসমেন্ট কয়েকটা মিলে একটা মেসে থাকে। সেখানে গিয়ে উঠতে পারবে চাইলেই। বাড়তি বেশকিছু টাকা লাগবে মাস শেষে। এটাই সমস্যা। মামার কাছে চাইতে পারবে না আর। চাচার মুখোমুখিই হতে পারবে না। মাথার ভেতর নানা ধরনের চিন্তার ঝড় বইছে। ভাবতে ভাবতে বসা অবস্থায় ঘুমিয়ে গেল সে। আবার ঘণ্টা খানেক পর যেন ঘুমের ভেতরেই দুশ্চিন্তা করে উঠে গেল৷ তখনই মাথায় এলো নিপার কথা। ওকে সবকিছু জানাবে। আপাতত মাস দুয়েক মেসে থাকার ব্যবস্থা হয়ে গেলেই চলবে। এর ভেতরে একটা চাকরি খুঁজে নিতে হবে। নিপাকে মেসেজ দিয়ে রাখা যায়। কাউকে দিয়ে বিকাশে টাকা পাঠাতে পারবে সে। মোবাইল হাতে নিতে যেতেই মনে পড়ে গেল নষ্ট। বিছানা থেকে নেমে খানিকক্ষণ পায়চারি করে রুমে। মাথা দপদপ করছে। গলা কেমন শুকিয়ে যাচ্ছে বারবার। টেবিল থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে এক চুমুক খেল। বিস্বাদে চোখমুখ কুঁচকে যায় তার। জ্বরে মুখ তিতা হয়ে আছে। ধীরে ধীরে ব্যাগে সকল কাপড়-চোপড় ভরে নেয় সে। বই-পত্র বাঁধে একটা দড়ি দিয়ে। অস্থিরতার মাঝে রাত কেটে ভোর হয়ে যায়। সকালে ফরিদ সাহেব দরূদ পড়ে পড়ে তাকে ডাকতে আসেন৷ কল্প বের হয়।
– ‘কিরে ছোকরা জ্বর কি কমেছে?’
– ‘না, নানাভাই। জ্বর এখনও আছে।’
– ‘ও তাহলে বাইরে যাওয়ার দরকার নাই। রেস্ট নাও।’
– ‘নানাভাই একটা কথা।’
– ‘কি?’
– ‘আমি আজ চলে যাব।’
ফরিদ সাহেব অবাক হয়ে বললেন, ‘চলে যাব মানে? কোথায় চলে যাবে?’
– ‘হলে সিট পেয়েছি নানা৷ তাই চলে যাব।’
– ‘তাই না-কি?’
– ‘হ্যাঁ।’
– ‘তো হলে সিট পেলেই গিয়ে কি করবে। আমাদের বাড়িতে কি অসুবিধা?’
– ‘হলে থাকলে আমার জন্য অনেক সুবিধা হয় নানাভাই।’
– ‘তাই না-কি।’
– ‘হ্যাঁ।’
– ‘কবে যাচ্ছ?’
– ‘আজই।’
– ‘আশ্চর্য! কি হয়েছে বলো তো। কোনো সমস্যা?’
– ‘না কোনো সমস্যা নেই।’
ফরিদ সাহেব অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। তারপর গেলেন ভেতর ঘরে। কোনো সমস্যা হয়েছে কি-না জানতে চাইলেন। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলেন না। হুস্না বেগম কল্পের যাওয়ার খবর শুনেও তার সঙ্গে দেখা করতে এলেন না। কল্প সাতটার দিকে কাঁধে ব্যাগ আর হাতে বইয়ের বান্ডিল নিয়ে বের হয়ে যায় উঠানে৷ গেইটের কাছে এসে একবার পিছু ফিরে তাকায়। বুকের ভেতর ‘চিনচিনে’ এক ব্যথা হয় তার। চোখ ঝাপসা হয়ে আসে জলে। বাইরে এসে রিকশার জন্য অপেক্ষা করে। খানিক পর একটা রিকশা এলে উঠে যায়। ঠিকানা বলে বন্ধুদের মেসের। মিনিট বিশেক পর চলে আসে গন্তব্যে। ভাড়া চুকিয়ে বাসার দোতলায় গিয়ে কলিং বেল চাপে। রুদ্র দরজা খুলে দেয়। অবাক হয় কল্পকে দেখে।
– ‘কিরে তুই ব্যাগ-প্যাক নিয়ে এলি যে?’
কল্প রূঢ় গলায় বললো, ‘আগে তো ভেতরে যেতে দিবি।’
রুদ্র পথ ছেড়ে দাঁড়ায়। কল্প ভেতরে আসে।
– ‘তোদের এখানে কি সিট খালি নাই?’
– ‘না গতকাল একজন উঠেছে নতুন।’
– ‘তাহলে তোর রুমে আমার ব্যাগ-প্যাক একটু রাখ দোস্ত। আমি নতুন মেস খুঁজে চলে যাব।’
রুদ্র তাকে নিয়ে নিজের রুমে গেল। একই রুমে দুইটা খাট। ভেতরে বোটকা গন্ধ। মশারি এখনও টাঙানো। দড়িতে কাপড়ের স্তুপ। রুদ্র তার ব্যাগ হাতে নিয়ে বললো,
– ‘হঠাৎ গৃহহীন হওয়ার কারণ কি?’
– ‘পরে বলবো। এখন যাই, আগে আমার মোবাইল ঠিক করিয়ে আনতে হবে। মোবাইল ছাড়া সবকিছু জটিল লাগছে।’
– ‘কিন্তু তোকে দেখে তো অসুস্থ বিধ্বস্ত মনে হচ্ছে।’
– ‘ওই সিজনাল জ্বর আরকি৷ এগুলো পাত্তা দিলে কি চলে। যাই আমি। মোবাইল ভিজে ডিসপ্লেতে মনে হয় সমস্যা এসেছে৷ কোথায় ঠিক হবে বলতো?’
– ‘করিম উল্লায়ই চলে যা। সেখানে অনেক দোকান পেয়ে যাবি।’
কল্প মাথা নেড়ে বাইরে চলে এলো। রিকশা একটা নিয়ে চলে গেল করিম উল্লাহ মার্কেটে৷ মোবাইল ঠিক করিয়ে বের হলো প্রায় দেড়টায়। আকাশে ঝকঝকে রোদ উঠেছে। রিকশা থেকে চোখ তুলে তাকানো যায় না। প্রচণ্ড ক্ষুধা লেগেছে। একটা কিছু খেয়ে নেয়া দরকার। অথচ ইচ্ছা করছে না। তবুও তো সুস্থ থাকার জন্য খেতে হয়। জিন্দা বাজার এসে রিকশা ছেড়ে দিল সে। একটা রেস্তোরাঁয় ঢুকে বিস্বাদ মুখে কোনোভাবে ভাত চালান করে দিল। খাবার খেয়ে হেঁটে-হেঁটে এলো চৌহাট্টা। ছাউনি খালি দেখে গিয়ে বসে। মোবাইল বের করে ডাটা অন করতেই প্রথমেই মেসেঞ্জারে টুংটাং করে ইতির মেসেজ এলো। সিন করে সে। টাইম দেখে বুঝতে পারে রাতেই দিয়েছিল এই মেসেজগুলো।
প্রথম মেসেজ, ‘হায় আল্লাহ এখন কি হবে? বাবা কি তোমাকে কিছু বলেছেন? আমার কারণে এটা হলো। স্যরি। প্লিজ রাগ করো না।’
দ্বিতীয় মেসেজ, ‘ও তোমার তো ফোনই নষ্ট।’
কল্প রিপ্লাই দিল, ‘আমি মোবাইল ঠিক করেছি। কিন্তু আপাতত তোমার মেসেঞ্জারে আমার সঙ্গে সকল চ্যাট ডিলিট দিয়ো।’
ইতি সিন করলো না। কল্প খানিক ভেবে আবার মেসেজ দেয়, ‘এখন তুমি বেশি মোবাইল ইউজ করতেও যেও না। তোমার ফোন ওরা কেড়ে নিতে পারে। কিছুদিন পড়ালেখায় মনযোগ দাও। ফোন হাতে কম নিয়ো। আর আমাকে মেসেজ দিবে না বেশি। দিলে প্রতিদিন চ্যাটগুলো ডিলিট দিবে। শেষে আর যোগাযোগ রাখারও কিছু থাকবে না৷ আর যা হয়েছে, তা হওয়ার ছিল। এগুলো নিয়ে ভেবে লাভ নেই। ভাবতে হয় আগে। ঘটনা ঘটে গেলে চিন্তা না করে সেটা সামাল দেয়ার ধান্ধায় থাকাই ভালো৷ আমি চলে এসেছি বলে পাগল হয়ে যেও না৷ খাওয়া-দাওয়া, পড়ালেখা, ঘুম সবকিছু ঠিকঠাক মতো যেন চলে। আমি খুব শিগগিরই সবকিছু গুছিয়ে নেব। তারপর দেখা যাক কি করা যায়। আপাতত কোনো বাড়াবাড়ি করবে না। আর তোমার মোবাইল ইতোমধ্যে কেড়ে নিয়েছে কি-না বুঝতে পারছি না। না নিলে মনে করবে ভাগ্য ভালো। মোবাইল একটা জায়গায় ফেলে রাখবে। হাতেই নিবে না বেশি। রাতে হঠাৎ মেসেজ দিলে দিয়ো।’
আর কিছু বলতে গেল না সে। এত কথা বলে এখন লাভ নেই। নিপার সঙ্গে যোগাযোগ করা দরকার। হোয়াটসঅ্যাপ কল দিল ওকে। দু’বার রিং হতেই রিসিভ করে।
– ‘হ্যালো।’
– ‘আমি কল্প।’
– ‘নাম্বার ছিল না। বাট ছবি দেখেই চিনতে পারছি। কি অবস্থা তোমার?
– ‘তুমি বুঝতে পারছো না?’
– ‘না, আমাকে কেউ কিছু বুঝতেও দিচ্ছে না৷’
কল্প বিস্তারিত সবকিছু খুলে বলে নিপাকে। মামার আর মায়ের রাগারাগি। এখানে এসে অপ্রীতিকর ঘটনা। সবকিছুই বিস্তারিত বলে। নিপার ভীষণ মন খারাপ হয়ে যায়। সে শান্ত গলায় বলে, ‘এসব নিয়ে ভেবো না। তোমাকে আমি আগেই বলেছিলাম বিয়ে না হলেও আমাকে পাশে পাবে। কিন্তু যোগাযোগ করোনি কেন? আমার কাছে নাম্বারও ছিল না। আর তোমার ভয়েজ শুনে তো অসুস্থ মনে হচ্ছে।’
– ‘হ্যাঁ বললাম না জ্বর ছিল। ইতি জ্বরের কারণেই রাত্রে দেখতে এসেছিল।’
নিপা খিলখিল করে হেঁসে বললো, ‘স্যরি এই অবস্থায় হেঁসে ফেলেছি। শোনো আমাকে বুঝাতে হবে না যে তোমরা আলাদা রুমে অন্যকিছু করোনি। একে অন্যকে ভালোবাসো। সুতরাং যাইই করো আমার কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার। যাইহোক এখন তুমি বলো আমি কি করতে পারি।’
– ‘তুমি আমাকে দুই মাস মেসে থাকা-খাওয়ার টাকা দিতে পারবে? এক সঙ্গে না দিলেও হবে।’
– ‘কিন্তু কিভাবে পাঠাবো।’
– ‘কাজের ছেলেটাকে কাগজে আমার নাম্বার দিয়ে বলবে বিকাশ করতে বাজারে গিয়ে।’
– ‘একসঙ্গেই পাঠাই৷ কত পাঠাতে হবে?’
– ‘আট-দশ হাজার ছাড়লেই হবে। আমি চাকরি পেয়ে গেলে আর সমস্যা হবে না।’
– ‘চাকরি পেয়ে গেলেই ওই কিউট মেয়েটাকে বিয়ে করে নাও।’
– ‘না দেখেই কিউট বলছো।’
– ‘কেন যেন মনে হচ্ছে কিউট। শোনো, যখনই টাকার প্রব্লেম হয় বলবে। আর এখানে তোমার অনেক জায়গা-জমি আছে। এগুলো ছোট চাচা করেন শুনেছি। আমি ইংল্যান্ড ফিরে বাবাকে বলবো তোমার সবকিছু বুঝিয়ে দিতে।’
কল্প হেঁসে বললো, ‘তুমি জায়গা-জমির হিসাবও বুঝো?’
– ‘বললাম না আমরা বাংলাদেশিদের মতোই।’
– ‘ভালো।’
– ‘রাখি এখন। দেখি ওই ছেলেটা কোথায়৷’
কল্প কল কে*টে দিয়ে মেসে ফিরে আসে। বিকেলেই তার ফোনে টাকা এসে ঢুকে। সন্ধ্যায় ইতি উপুর্যুপরি মেসেজ দিতে থাকে।
– ‘আপনি ফোন ঠিক করে ভালো করেছেন। আমি কলেজে ছিলাম। সারাদিন কিযে চিন্তায় ছিলাম। এখন কি করছেন? কোথায় আছেন আপনি?’
কল্প রিপ্লাই দেয়, ‘আমি ভালো আছি। একটা মেসে এসে উঠেছি।’
– ‘আপনি চলে গেলেন কেন? বাবা চলে যেতে বলেছেন তাই না?’
– ‘হ্যাঁ।’
– ‘ইস স্যরি। আমার জন্য এতকিছু হয়েছে। আপনি ঝামেলায় পড়েছেন।’
– ‘এগুলো নিয়ে ভাবতে নিষেধ করেছি না। যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন মোবাইলটা নিয়ে নেওয়ার আগে সতর্ক হও।’
– ‘আমাদের কি আর দেখা হবে না?’
– ‘হবে না কেন? হবে। আমি আপাতত চাকরি খুঁজি।’
– ‘তারপর? বিয়ের আলাপ দিবে না-কি?’
– ‘সময় আসুক। আগে চাকরি ম্যানেজ করে দেখি। চাকরি একটা হলেই হবে।’
– ‘বিয়ের আলাপ দিলে যদি না দেয়।’
– ‘না দিলে যা করার করবো। আর দিবে না কেন? আমার বাড়িঘর জায়গা-সম্পত্তি সবকিছুই আছে। পড়ালেখা করছি। চাকরিও করবো। বিয়ে না দেওয়ার কি আছে? না দিলে পরের চিন্তা। বললাম না স্বাভাবিক থাকতে।’
– ‘আপনার অসুখ আজ বেড়েছিল। আর আজই এমনটা হলো। এখন কেমন আছেন?’
– ‘দিনে কমই ছিল এখন বাড়ছে একটু।’
– ‘ইস এখন আমি কি করবো? আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে।’
– ‘ইতি মোবাইলটা হাতছাড়া করবে।’
– ‘আচ্ছা এখনই রেখে দেবো মোবাইল। আপনাকে দেখতে ভীষণ ইচ্ছা করছে। কাল একবার দেখা করবেন?’
– ‘কালই? যদি কেউ দেখে তাহলে তোমার কলেজ যাওয়া বন্ধ হবে। ধরে কারও কাছে বিয়ে দিয়ে দেবে।’
– ‘আপনি এত আগে আগে ভাবেন কেন সবকিছু?’
– ‘শোনো ইতি, আমিও দেখা না করে থাকতে পারবো না। কয়েকদিন যাক। আমি দেখা করবো। এখন রাখো মোবাইল। পড়তে বসো।’
__চলবে…
লেখা: জবরুল ইসলাম
মায়াডোর (২৬ পর্ব)
.
ইতি অনলাইন থেকে চলে যায়। রুদ্রের সঙ্গে একই বিছানায় রাতে থাকে কল্প।
পরের পুরোটা দিন মেস খুঁজতে খুঁজতে কাটে তার৷ সন্ধ্যার দিকে একটা মেস পায়। আলাদা রুম। খাবে অন্যদের সঙ্গে। সবকিছু মিলিয়ে ভালো। তবে এখানে উঠবে কি-না দ্বিধায় পড়ে যায়। এই মেসটা পড়েছে ইতির কলেজের রাস্তায়। অনেক ভেবে-চিন্তে ঠিক করে উঠবে। এখান থেকে তার ভার্সিটিও কাছে৷ এত ব্যস্ত শহরে কে কোথায় থাকে তা দেখার সময় কার আছে? কনফার্ম করে চলে যায় সে৷ পরেরদিন রুদ্রদের মেসে থেকে এসে উঠে এই মেসে। নিচতলায় বাসার মালিক থাকে। মাঝখানে ফ্যামিলি ভাড়া দেয়। উপরে মেস। কয়েকটা ফ্ল্যাট। একেকটা ফ্ল্যাট একেকজন নিয়ে মেসে লোক তুলছে তার দায়িত্বে। কল্পের রুমটা তার ভালোই লেগেছে। মেসের ম্যানেজার বলেছে সে চাইলে অন্য কাউকে তার রুমে আনতে পারবে, তাতে টাকা কম পড়বে। কল্পের রুম শেয়ার করতে ইচ্ছা করছে না। একপাশে ছোট্ট বেলকনি আছে। তবে এটাচ বাথরুম নেই। ভাড়া মোটামুটি। ওয়াইফাই আছে। রাতের খাবার খেয়েও মনে হলো চলার মতো। বিছানায় শুয়ে মোবাইল হাতে নেয়। আনমনে চলে যায় ইতির ইনবক্সে৷ আবার বের হয়ে যায়। ফেইসবুকে নিউজফিডে ঘুরাঘুরি করে। একটা গল্প সামনে আসে। রোমান্টিক গল্প। পড়তে পড়তে ইতিকে মিস করতে শুরু করে। অর্ধেক পড়েই ওর ইনবক্সে যায়। মেসেজ দেয়, ‘হ্যালো।’
সঙ্গে সঙ্গে ইতি মেসেজ সিন করে ফেলে। কল্প রাগ করবে না-কি খুশি হবে বুঝতে পারে না।
– ‘তোমাকে না বলেছিলাম মোবাইল হাতে না নিতে। এখন মেসেজ দিতেই সিন করে ফেলেছো, কি করছিলে অনলাইনে?’
– ‘বিশ্বাস করেন, আমি অনলাইনে ছিলাম না। মিস করছিলাম আপনাকে। হঠাৎ মনে হয় দেখি ডাটা অন করে মেসেজ দিয়েছেন কি-না। তখনই আপনার মেসেজ।’
– ‘মিথ্যে কথা বলবে না।’
– ‘মোটেও মিথ্যে না। বিশ্বাস করেন না আমাকে?’
কল্প আনমনে ভাবে তাহলে কি টেলিপ্যাথি ব্যাপারটা সত্য? ইতির সঙ্গে কি তার সেরকম কিছু হচ্ছে৷ কে জানে হতেও পারে৷ রিপ্লাই দেয়, ‘আচ্ছা বিশ্বাস করলাম।’
– ‘কি করছেন আপনি? সারাদিন আমার কিভাবে গেছে আপনি জানেন? একবারও মেসেজ দিতে পারেন না?’
– ‘সারাদিন মেস খুঁজে খুঁজেই চলে গেছে ম্যাডাম। এখন নতুন মেসে উঠেছি।’
– ‘মেসটা কোথায়?’
– ‘মদিনা মার্কেটের কিছুটা আগে। তোমার কলেজের কাছে অনেকটা।’
– ‘তাই না-কি। তাহলে তো দেখা করতে পারবো।’
– ‘দেখা করার চিন্তা না একদম।’
– ‘যান করবো না দেখা আপনার সঙ্গে।’
– ‘ইস আমার অভিমানী পাখিটা। কিন্তু দেখা করবো কিভাবে? এটা মেস তো।’
– ‘নিচে আসবেন তাতেই হয়।’
– ‘একটা কাজ অবশ্য করা যায়৷ সারাজীবন ছেলেরা মেয়েদের ছাদে তাকিয়ে থেকেছে, জানালায় তাকিয়ে থেকেছে৷ তুমি উল্টো করতে হবে আরকি।’
– ‘কি করতে হব?’
– ‘তুমি কলেজে একটু আগে এলে রাস্তায় এসে কল দিলে আমি বেলকনিতে যাব। এভাবে দেখা করা যাবে।’
– ‘আপনি নিচে এলে কি হবে?’
– ‘কেউ দু’জনকে দেখে ফেলবে তো ম্যাডাম।’
– ‘আচ্ছা তাই করবো। বাসাটা কোথায়?’
– ‘পুরো এড্রেস পরে দেবো। বাসা নাম্বার সহ। এখন শুধু বাসার নাম মনে আছে৷ ‘মুনা মঞ্জিল’ নাম।’
– ‘কি! মুনা মঞ্জিল?’
– ‘হ্যাঁ।’
– ‘আমাদের রাস্তার একেবারে পয়েন্টে না? অপর পাশে ফার্নিচারের দোকান।’
– ‘বাবা, চিনেই ফেলেছো।’
– ‘আরে ওইটা তো মুনাদের বাসা৷ ও আমার ক্লাসমেট৷’
– ‘কি বলো, তোমার ক্লাসমেট! তাহলে কি কোনো সমস্যা হবে?’
– ‘তা হবে না। ও তো আপনার সম্পর্কে সবকিছু জানে। দেখেছেও।’
– ‘তাই না-কি? কিন্তু এখানে আমি উঠেছি মেস ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলে।’
– ‘ভালোই হয়েছে। মুনার সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানবেন?’
– ‘কি?’
– ‘ও হচ্ছে আমাদের সেই বান্ধবী৷ যার কাছ থেকে দুনিয়ার সকল গোপন বিষয়ে আমরা শিখেছি৷’
– ‘মানে কি?’
– ‘মানে আমাদের ক্লাসের কারও যখন মোবাইল ছিল না। ওর ছিল। ক্লাসে কোনো স্যার না থাকলে গোল হয়ে সবাই ওর কাছে বসতাম। গল্প শুনতাম। ডেইলি ওর কাছে নতুন নতুন কিছু তথ্য থাকবেই।’
– ‘আর সেই নতুন সবকিছুই ছিল খারাপ বিষয়।’
ইতি হাসির রিয়েক্ট দেয়। কল্প যেন এপাশ থেকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে ইতির খিলখিল করে হাসি৷ কল্প পুনরায় বললো,
– ‘কি সত্য বলেছি না।’
– ‘আংশিক সত্য। সে আমাদেরকে অবাক করার মতো বিষয় বলতো এসে। যেমন লেসবিয়ান সম্পর্কে ওর কাছ থেকে প্রথম শুনেছি। তাছাড়া পৃথিবীতে চিকিৎসাররা পুরুষ মানুষকে নারী বানিয়ে ফেলে। নারীকে পুরুষ। এইসবও ওর কাছ থেকে। এরকম আরকি। আমরা চমকে উঠতাম এসব শুনে।’
– ‘এগুলো ছাড়াও খারাপ যা শিখেছো ওর কাছ থেকেই৷ ছি, ক্লাসে গিয়ে!’
– ‘বাজে কথা বলবেন না।’
– ‘আচ্ছা তুমি কবে আমাকে ‘তুমি’ করে বলবে, সেটা বলো।’
– ‘কখনও না।’
– ‘কেন?’
– ‘আপনি বলতেই ভালো লাগে।’
– ‘এভাবে সম্পর্কে গাম্ভীর্যতা চলে আসে ইতি। তুমি বলাই ভালো।’
– ‘আমার তো সমস্যা হয় না। আপনি বললেও আপনার সঙ্গে আমি মনখুলে কথা বলতে পারি।’
– ‘অনেক কিছুই আছে অস্বস্তি লাগবে।’
– ‘লাগবে না। আপনাকে জড়িয়ে ধরেছি তাতে কি অস্বস্তি লেগেছিল?’
– ‘এগুলো তো স্বাভাবিক বিষয়। কিস খেতে ঠিকই লজ্জা লাগবে।’
ইতি দুইহাতে মুখ ঢেকে নেয়ার ইমুজি দিয়ে বললো,
– ‘না তো। আমি আজ সন্ধ্যায়ও আপনার ছবি দেখে ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে থেকেছি। জানেন? আপনার ঠোঁট অনেক মায়াবি? সিগারেট খান না বলে এখনও লাল আছে। ছেলেরা তো সিগারেট খেয়ে ঠোঁটের বারোটা বাজিয়ে ফেলে। আপনি একদম এসব ধরবেন না।’
– ‘টপিক চেঞ্জ করো তো ইতি। এমনিতেই ভীষণ মিস করছিলাম। এসব বলে ঘুম নষ্ট করবে।’
– ‘মিস করছিলেন কেন?’
– ‘ফেইসবুকে একটা গল্প পড়তে গিয়ে নায়িকাকে একদম তোমার মতো মনে হলো।’
– ‘তাই না-কি? লিঙ্ক দেন পড়ে দেখি।’
– ‘ওই লেখকেরই। জবরুল ইসলামের। যে উপন্যাসের কথা বলছি। সেটা ঘাসফড়িং। শ্রেয়াকে তোমার মতো মনে হয়েছে।’
– ‘ও আচ্ছা, উনার আমিও একটা উপন্যাস পড়েছি “বাঁক” নাম। অন্য উপন্যাসগুলোর লিঙ্ক সেভ করে রেখেছি। কিন্তু পড়িনি আর।’
– ‘উনার বই ছাড়া আমি সবগুলোই পড়েছি। আগন্তুক, সেই মেয়েটি আমি নই, আরাধনায় বিহঙ্গ জীবন, দেশলাই, তবু মনে রেখো। সব উপন্যাসের নাম মুখস্থ।’
– ‘উনার কি বইও আছে?’
– ‘হ্যাঁ ‘বিষাদিনীর বসুন্ধরা’ নাম। পড়বে না-কি? রকমারি থেকে অর্ডার দিলে হোম ডেলিভারি দেবে।’
– ‘না এখন এমনিতেই বাসায় ভয়ে ভয়ে থাকি।’
– ‘ও হ্যাঁ, তাও ঠিক৷ আচ্ছা “বাঁক” উপন্যাস কেমন লেগেছিল?’
– ‘ভালোই কিন্তু ফিনিশিং ভালো লাগেনি। মানহার জন্য কষ্ট লেগেছে। ওদের মিল দিলে ভালো হতো।’
– ‘মিলই তো হবে৷ মৃদুল মানহার জন্য বেরিয়ে পড়েছে। এখন মানহা গ্রহণ করলেই তো মিল।’
– ‘তো গ্রহণ করার পর শেষ করতো।’
– ‘লেখক পিঠ বাঁচিয়েছে মনে হয়। মানহা গ্রহণ করলে কেউ কেউ বলতো মৃদুলের মতো স্বার্থপরকে মেনে নিল? না নিলে আবার কেউ কেউ বলতো মৃদুল তো পরিস্থিতির শিকার৷ তাছাড়া ভুল বুঝে যেহেতু মানহার কাছে এসেছে। তাহলে মিল দিলে কি এমন হতো? এই কারণে লেখক এভাবে সমাপ্ত দিয়েছে হয়তো।’
– ‘হুম হতে পারে।’
– ‘আচ্ছা আপনার কি আজ মন খুব ভালো?’
– ‘হ্যাঁ, কিন্তু তুমি বুঝলে কিভাবে?’
– ‘এভাবে কি মনখুলে কথা বলেন কখনও? সব সময়ই তো শাসান আমাকে।’
– ‘তাই? শুধু শাসাই, ভালোবাসি না?’
– ‘উহু।’
– ‘আচ্ছা এখন থেকে বাসবো, গল্পটা গিয়ে পড়ি। তুমি মোবাইল রেখে ঘুমাও।’
– ‘আচ্ছা, কিন্তু ঘুম আসবে কি-না জানি না। চোখবন্ধ করলেই আপনি সামনে চলে আসেন। আর শ্বাস নিলে আপনার ঘ্রাণ পাই।’
– ‘তুমি এত ভালোবাসো কেন বলো তো ইতি।’
– ‘জানি না।’
– ‘আচ্ছা জানতে হবে না। শুভ রাত্রি।’
ইতি অফলাইনে চলে গেল। কল্প গল্প পড়তে চলে যায়। আগে প্রচুর বই পড়তো। এখন ফেইসবুকেও পড়ার নেশা এসে গেছে। সারারাতই গল্প-উপন্যাস পড়তে পারবে সে৷ অথচ গেইম খেলতে ভালো লাগে না৷ ছেলেরা কত পছন্দ করে খেলা দেখে। তার খেলা দেখতেও খুব একটা ভালো লাগে না৷ খেলা দেখতে গেলে টিভির দিকে তাকিয়ে থাকলেও মন অন্য কোথাও যেন চলে যায়। বিশ্বকাপ এলে ফুটবল খেলা দেখতো। কিন্তু গেলবার খেয়াল করেছে বিশেষ কয়েকটা টিমের ছাড়া আর খেলা দেখতে আগ্রহও পায়নি সে। বই পড়ার নেশাটা শুরু হয়েছিল জাফর ইকবালের ‘আমি তপু’ পড়ে। ক্লাস এইটে পড়ে তখন। ক্লাসে বাংলা স্যার মাসে একটা ব্যক্তিগত প্রতিযোগিতা দিতেন৷ সেখানে সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন করা হতো। যে বিজয়ী হয় তাকে একটা বই উপহার দিতেন। সব সময় সেইই পুরুষ্কার পেয়েছে। প্রথমবারই “আমি তপু” বইটা পায়। তপু ছেলেটার কষ্টের সঙ্গে তার ভীষণ মিল ছিল। কেমন চেনা-জানা কষ্ট। ছোট্ট তপু তার মতোই নিঃসঙ্গ ছিল। মা তাকে বিশেষ একটা কারণে পছন্দ করতো না৷ ভাই-বোন সবার থেকে সে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সেই উপন্যাস পড়ে লুকিয়ে লুকিয়ে অনেক কেঁদেছিল কল্প। তপুর কষ্টগুলো যেন তারই কষ্ট। এরপর থেকে ক্রমশই বইয়ের প্রতি নেশা বড়তে থাকে। এখন “ঘাসফড়িং” পড়তে পড়তে বারবার শ্রেয়ার জায়গায় ইতিকে ভাবছে সে। বারবার প্রণয় দৃশ্য পড়তে গিয়ে চোখবুজে আসছে। ইতিকে কিভাবে কাছে পাবে? একান্তে, নিভৃতে ভীষণ কাছে পেতে চাইছে মন৷ গল্পটা পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে যায় কল্প। ঘুম থেকে উঠে সকাল আটটায় গোসল করে নেয়। নয়টার দিকে সিরিয়াল লেগে যেতে পারে। ইতির মেসেজ পেল তখনই।
– ‘আমি সাড়ে নয়টার দিকে ফার্নিচারের দোকানের সামনে আসবো। এসে কল দিব।’
কল্প মুচকি হাসে। এত পাগল মেয়েটা।
– ‘আচ্ছা ঠিক আছে।’
– ‘আর শুনুন। আজ কলেজে আমি মুনাকে সবকিছু বলবো। সে হয়তো দেখেনি আপনাকে। আমি বলবো ওকে। তাহলে দেখা করতে পারবো হয়তো।’
– ‘পারবে না। আমি মেসে থাকি। আরও ছেলে আছে এখানে।’
– ‘ওর বাসা যেহেতু আমরা অনেক বুদ্ধি বের করবো, আপনার চিন্তা করতে হবে না।’
– ‘আচ্ছা ঠিক আছে।’
– ‘এখন রেডি হই। আপনারও তো ভার্সিটি আছে।’
– ‘হ্যাঁ আমি রেডি হয়ে খাব একটু পর। খালা সবেমাত্র রাঁধতে এসেছে।’
– ‘আচ্ছা বাই।’
কল্প রেডি হয়ে খেয়ে নিল। ইতি আসতে দেরি করছে৷ তার অস্থিরতায় সময় কাটে। ঠিক নয়টা পঞ্চাশে কল দেয় ইতি। সে মোবাইল কানে নিয়ে বেলকনিতে যায়।
– ‘হ্যালো ইতি, তুমি কোথায়?’
– ‘এইতো রিকশা থেকে নামতেছি।’
– ‘হ্যাঁ দেখতে পাচ্ছি। কলেজ ড্রেসে আমার বউটাকে পিচ্চি লাগছে।’
ইতি যেন শুনতে পেল না৷ সে চারদিকে তাকিয়ে বললো,
– ‘স্যরি লেট হয়ে গেল তাই না?’
– ‘সমস্যা নেই, অস্থির হইয়ো না।’
ইতি ফার্নিচারের দোকানের সামনে থেকে সতর্কভাবে মাথা তুলে তাকায়। কল্পকে খুবই রোগা লাগে ইতির কাছে। বুকটায় ‘চিনচিনে’ ব্যথা হয়। পরম মমতা নিয়ে তাকিয়ে থাকে। ধরে আসা গলায় বলে,
– ‘আপনি অনেক শুকিয়ে গেছেন। প্লিজ নিজের খেয়াল রাখবেন। জ্বর কমেছে তো?’
– ‘হ্যাঁ ইতি কমেছে। তোমাকে দেখতে ভীষণ মায়া লাগছে। কাছে চলে যেতে ইচ্ছা করছে।’
– ‘এসে কি করতেন?’
– ‘শক্ত করে জড়িয়ে ধরতাম।’
ইতি চারদিকে তাকিয়ে বললো, ‘আর?’
– ‘চুমু খেতাম?’
– ‘কোথায়?’
– ‘কপালে।’
– ‘ইস।’
– ‘ইতি, এখন রোদ অনেক। চলে যাও। মানুষও যাচ্ছে-আসছে।’
– ‘আচ্ছা খেয়েছেন আপনি?’
– ‘হ্যাঁ।’
– ‘মেসের খাবার শুনেছি ভালো না। আমার কারণে এতকিছু হলো।’
– ‘এই বলেছিলাম না এসব না ভাবতে। পেছনের চিন্তা বাদ দাও। আর এখন মাঝ রাস্তায় এত ইমোশনাল হলে চলে বলো? যাও এখন।’
– ‘আপনাকে দেখেই ইমোশনাল হয়েছি।’
– ‘ইতি, একটু কষ্ট করো জান। দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। আর এত অস্থির হলে পড়ালেখায় মনযোগ দিতে পারবো না আমরা। এখন তুমি গিয়ে ক্লাসে আনমনে বসে থাকবে। এসব হতে দেয়া যায় না।’
– ‘আচ্ছা আপনি আমাকে ‘জান’ বললেন না?’
– ‘হ্যাঁ।’
– ‘জানের জায়গায় ‘বউ’ বলবেন।’
কল্প হাসতে হাসতে বলে,
– ‘আচ্ছা ঠিক আছে। আমার মিষ্টি বউটা এবার যাও। হঠাৎ কেউ বুঝে ফেলবে। রিকশা ডেকে চলে যাও।’
– ‘হ্যাঁ যাচ্ছি৷’
কল রেখে দেয় ইতি। চলে যেতে ভীষণ কষ্ট হয়। দমবন্ধ লাগে৷ এতদিন নিজের বাড়িতেই ছিল মানুষটা। তবুও কাছাকাছি যেতে কত প্রতিবন্ধকতা ছিল। আর এখন সামান্য চোখে দেখতেও কত সমস্যা।
ইতি রিকশা একটা নিয়ে কলেজে চলে আসে। রুমকি আগেই এসেছে। ওকে গিয়ে সবকিছু বলে। রুমকি অবাক হয়ে বললো, ‘মুনাদের বাসায়?’
– ‘হ্যাঁ।’
– ‘পুরো শহর থাকতে মুনাদের বাসায়। যা ভাগ্য ভালো। মুনাকে বললে তোকে বাসায় দেখা করিয়ে দিতে পারবে।’
– ‘কিন্তু কিভাবে?’
– ‘তা জানি না। কিন্তু পারবে। ওদের ফ্যামিলি কিছুটা ভিন্নরকম। মা-মেয়ে ফ্রি।’
– ‘আচ্ছা মুনা এলে শুধু ওকে কল্পের কথা বলবো। দেখা করানোর কথা বলবো না।’
মুনা এলো মিনিট দশেক পর। ইতি দেখেই উচ্ছ্বসিত হয়ে গেল। যেন মুনাই কল্প। হঠাৎ করে যেন মুনাকে আরও বেশি আপন লাগছে ইতির।
– ‘মুনা এখানে আয়।’
মুনা একটা বেঞ্চে ব্যাগ রেখেছিল। বিভ্রান্ত হয়ে বললো, ‘কি?’
রুমকি দাঁড়িয়ে বলে ‘আমাদের কাছে বসবি।’
মুনা এগিয়ে গিয়ে বললো, ‘তোদের কাছে বসবো? তোরা আমাকে পছন্দ করিস না তো জানি।’
ইতি মুনার হাত ধরে টেনে বসায়। ইতির বুকভরা প্রেম-প্রীতি। চোখে-মুখেও এর ছাপ স্পষ্ট। মন ভীষণ কোমল। এরকম মন নিয়ে পৃথিবীর সবাইকে ভালোবাসতে ইচ্ছা করে। ইতি কোমল গলায় বলে,
– ‘এ কথা কেন বললি মুনা? আমরা সেই সিক্স থেকে এক সঙ্গে পড়ি।’
– ‘হ্যাঁ তা ঠিক। কিন্তু তোরা কয়েকজন তো কয়েকদিন থেকে আমাদের সঙ্গে মিশতে চাস না। তোরা কেমন আলাদা।’
– ‘কি যে বলিস মুনা। তুই সেই নাইনে থাকতে যখন গল্প করতি। কি মনযোগ দিয়ে শুনতাম। এখনও মনে আছে আমার।’
– ‘তোর কি হয়েছে ইতি? এত ইমোশনাল লাগছে কেন?’
– ‘কিছু না, তুই আজ থেকে আমার সঙ্গে বসবি।’
– ‘আচ্ছা বসবো। কিন্তু কি হয়েছে বল।’
– ‘না এখন বলতে ইচ্ছা করছে না।’
মুনা বেঞ্চে কনুই ঠেকিয়ে হাতের তালুতে গাল রেখে ইতির দিকে তাকায়। মুনা খানিকটা মোটা, এবং খাটো। কিন্তু চোখ দু’টা ভীষণ সুন্দর। সে ভ্রু নাচিয়ে বললো, ‘তোর সেই কল্প ভাইয়ার খবর কি?’
ইতি আবাক হয়৷ কল্পকে মুনা তাদের বাসায় দেখে ফেলেছে না-কি? আগেই সবকিছু বলে দেওয়াই ভালো। ইতি ম্লানমুখে বললো,
– ‘আমাদের ব্যাপারটা বাড়িতে জানাজানি হওয়ায় চলে গেছে।’
– ‘ও, এই কারণে তোর মন খারাপ?’
ইতি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, ‘হ্যাঁ অনেক বেশি মন খারাপ ছিল। কিন্তু আজ ভোরে ভালো হয়ে গেছে।’
– ‘কেন?’
ইতি মুনার এক হাত ধরে বললো, ‘কারণ ও তোদের বাসায় উঠেছে মেসে।’
মুনা অবাক হয়ে বলে, ‘কি বলিস তাই না-কি? আমি তো দেখিনি।’
– ‘খেয়াল করিসনি হয়তো।’
– ‘ভালোই তো। দুলাভাইকে কাছে পাইলাম।’
রুমকি মুচকি হেঁসে বলে, ‘কিন্তু আমাদের বোন তো পাচ্ছে না।’
মুনা হেঁসে বললো, ‘আমাদের বাসায় আছে যেহেতু মাঝে মাঝে গিয়ে দেখা করতে পারবি, সমস্যা কি?’
– ‘কিভাবে? ওর মেসে ছেলে আছে না আরও?’
– ‘ছাদে যাবি দু’জন। না হয় আমার রুমে। এগুলো কোনো সমস্যা না। আমি ব্যবস্থা করে দিব।’
ইতি প্রচণ্ড খুশি হয়ে বললো,
– ‘সত্যিই?
‘সত্যি, কিন্তু আমার বাসায় গিয়ে ইয়ে টিয়ে করে পাপী বানাবি না আমাকে।’
রুমকি খিলখিল করে হেঁসে উঠে। ইতি মুনাকে চিমটি দিয়ে বললো, ‘কল্পকে চিনিস না, ও এসব করবেও না।’
– ‘তোর কল্প ভাইয়াকে নিয়ে বাজে কথা বলতে চাইছি না। তুই বলাবি না। ছেলে মানুষ করবে না তোকে বলছে। তোরা না প্রেমে পড়লে একেবারে গলে গিয়ে প্রেমিককে ফেরেশতা ভাবতে শুরু করিস। এই কারণে বিয়ের পর টিকে না…।’
ইতি মুনার মুখ চেপে ধরে বলে, ‘প্লিজ, ওকে নিয়ে বাজে কিছু বলিস না।’
মুনা হাত সরিয়ে বললো, ‘বললে কি হবে?’
– ‘ওর প্রতি আমার আলাদা রেস্পেক্টও আছে। এখনও আপনি করে বলি।’
– ‘এহ আজ বিয়ে করলে রাতেই…।’
ইতি আবার ওর মুখ চেপে ধরে বলে, ‘প্লিজ মুনা।’
‘বাবা এত প্রেম’ বলে মুনা খিলখিল করে হেঁসে উঠে। ক্লাসে স্যার চলে আসেন খানিক পর। আর কথা হয় না তাদের।
এরপর কল্পের সঙ্গে ইতির কেবল মেসেঞ্জারে কথা হয়। ফার্নিচারের দোকানের সামনে থেকে দু’চোখ ভরে খানিক্ষণ দেখা হয়। সপ্তাহখানেক পর মুনা নিজ থেকেই ইতিকে কলেজ ছুটির পর বাসায় নিতে চায়। ইতি আমতা-আমতা করে বলে, ‘কিন্তু ও তো মনে হয় ভার্সিটি থেকে ফিরেনি মুনা।’
মুনা রহস্য করে হাসে।
– ‘এই চিন্তা তোর করতে হবে না৷ উনার সঙ্গে আমার কথা হইছে।’
– ‘কি কথা হইছে?’
– ‘তোর ক্লাসমেট এটা বলেছি। এসব কথা আরকি। আর আজ ছুটির পর তোকে নিয়ে যাব বলেছি।’
– ‘আমাকে তো কিছু বলেনি।’
– ‘কলেজে আসার সময় গেইটে পেয়ে বললাম মাত্র। উনিও তখন ভার্সিটি যাচ্ছিল।’
– ‘ও আচ্ছে।’
ইতি ভয়ে ভয়ে ওর সঙ্গে গিয়ে রিকশায় উঠে। তারপর মেসেজ দেয় কল্পকে, ‘মুনাদের বাসায় যাচ্ছি। তুমি কোথায়?’
– ‘আমি ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে, আসো তুমি।’
– ‘ওকে।’
বাসায় এসে মুনার রুমে গিয়ে বসে ইতি। ওর আলাদা রুম। চোখের সামনে দেয়ালে ক্রিশ্চিয়ান রোনালদোর ছবি। মুনার মা এলেন খানিক পর, ‘আসসালামু আলাইকুম আন্টি।’
– ‘তোমার নাম ইতি?’
– ‘হ্যাঁ আন্টি।’
– ‘তোমরা আসো না কেন কখনও বলো তো মা? মাঝে মাঝে আসতে পারো না। কলেজের কাছেই তো।’
ইতি কিছুই বলে না, শুধু হাসে। খানিক পর তিনি চলে যান। মুনা এসে বললো, ‘কল্প ভাইয়া উপরে গেছে।’
– ‘আমরা কোথায় দেখা করবো?’
– ‘ছাদেই ভালো হবে।’
ইতি কল্পকে মেসেজ দিল, ‘ছাদে যান আপনি।’
কল্প সঙ্গে সঙ্গে মেসেজ দিল, ‘ছাদে?’
– ‘হ্যাঁ।’
– ‘আচ্ছা একটু পর আসো। আমি মেসেজ দিচ্ছি।’
– ‘ওকে।’
ইতি মুনার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘একটু পর যেতে বলেছে।’
– ‘আচ্ছা ঠিক আছে। আর শোন, আমাদের বাসার ছাদ কিন্তু অন্য উঁচু বাসা থেকে দেখা যায়। তবে চিলেকোঠার দেয়াল আছে না? এর একটু সামনে পানির ট্যাংক আছে। ট্যাংকের উত্তর দিকে থাকলে কেউ দেখবে না৷ ওইদিকে বাসা নেই। আমি চিলেকোঠা থেকে দেখবো নিচ থেকে কেউ সিঁড়ি দিয়ে আসে কি-না।’
ইতি মাথা কাত করে। কল্প ফ্রেশ হয়ে হাত-মুখ মুছে খানিক পর মেসেজ দেয়, ‘আসো।’
মেসেজ দেখেই ইতির বুকটা কেঁপে উঠে। কেমন ভয় লাগছে।
– ‘মুনা মেসেজ দিয়েছে।’
– ‘যেতে বলেছে?’
– ‘হ্যাঁ।’
– ‘চল।’
ইতি দাঁড়িয়ে মুনার হাতটা ধরে, ‘ধন্যবাদ মুনা। তুই এতকিছু করবে ভাবিনি।’
– ‘ভাববি কিভাবে? আমাকে তো মন থেকে পছন্দ করিস না জানি।’
– ‘কি যে বলিস তুই।’
– ‘হয়েছে আমাকে প্রেম না দেখিয়ে ছাদে গিয়ে দেখা। আমি লে*সবিয়ান না।’
– ‘তুই হইছিস আমার মালিহা আপুর মতো। সারাক্ষণ মুখে এসব থাকে।’
– ‘এজন্যই তো আমারে পছন্দ করিস না।’
– ‘এরকম বলবি না মুনা।’
– ‘তাড়াতাড়ি চল তো।’
দু’জন সিঁড়ি দিয়ে আসে। মুনা চিলেকোঠার সিঁড়িতে মোবাইল হাতে নিয়ে বসে বললো, ‘দরজা ভেজিয়ে যা। আমি আছি এখানে।’
ইতি পা টিপে টিপে ছাদে যায়। কল্প ছাদের কার্ণিশ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। একটা কালো ট্রাউজার আর টি-শার্ট ওর পরনে। ইতি আসতেই এগিয়ে গিয়ে বললো, ‘ছাদে তো অনেক রোদ।’
– ‘পানির ট্যাংক কই?’
– ‘কেন? ওইদিকে মনে হয়।’
– ‘চলুন।’
কল্প ইতির হাতটা ধরে পশ্চিম দিকে চলে গেল। এদিকে চিলেকোঠার দেয়ালের ছায়া। গিয়ে দাঁড়াতেই সামনের ট্যাংক তাদেরকে সবকিছু থেকে আড়াল করে দেয়। কল্প ইতির মুখটা দুইহাতে আঁজলা করে ধরে বলে,
– ‘বাহ তুমি সবকিছু জেনেই এসেছো তাহলে।’
চোখে চোখে তাকাতে গিয়ে হুট করে ইতির কেমন যেন লজ্জা লাগে। ওর বুকের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ হ্যাঁ।
কল্প ওর কপালে চুমু খায়। চোখবুজে আসে ইতির।
কল্প পুনরায় বলে, ‘আমরা কিন্তু শুধু দেখা করতে চাইলে বাইরে কোনো রেস্তোরাঁয় গিয়েও পারবো। এখানে যেহেতু এসেছি। একবার জড়িয়ে ধরি?’
ইতি ওর বুকের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘আমি কি না করবো আপনাকে?’
কল্প আলগোছে জড়িয়ে ধরে ইতিকে। বুক শিরশির করে তার। শরীরের লোমগুলো নাড়া দিয়ে উঠে। শরীরে গরম স্রোত বয়ে যায়। ইচ্ছা করে ইতিকে বুকের ভেতর ঢুকিয়ে নিতে। ইতির গালে তার গাল চেপে ধরে থাকে খানিকক্ষণ। তারপর আবার আঁজলা করে মুখটা ধরে চোখের দিকে তাকায়। ইতির লজ্জা লাগে। চোখ নামিয়ে নেয়। কল্প ওর ফুলের পাপড়ির মতো গোলাপি ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে থাকে। ইতির লজ্জায় মুখ লাল হয়ে যায়। কল্প তাকে ছেড়ে দিয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে আসন পেতে বসে পড়ে বলে,
– ‘তুমি নিচে বসলে ড্রেসে ময়লা লাগবে। আমার কোলেই বসো।’
ইতি ওর কোলে বসে। কল্প বাহুডোর বেঁধে বসে ওর চুলে নাক ডোবায়। তারপর ঘোর লাগা গলায় বলে, ‘ইতি।’
– ‘বলুন।’
– ‘বিয়ে করে ফেলতে ইচ্ছা করে।’
– ‘ইস। ভাবলেই আমার গা কাটা দিয়ে উঠে। আপনাকে সব সময় কাছে পাবো। আপনি একান্ত আমার হয়ে যাবেন। এগুলো ভাবলেই আমার চোখে পানি চলে আসে৷’
কল্প চুল সরিয়ে ওর নগ্ন ঘাড়ে আলতো করে চুমু খায়। ইতি হেঁসে উঠে বলে,
– ‘ইস সুড়সুড়ি লাগে তো।’
– ‘তাই?’
– ‘হুম।’
– ‘আমার কিন্তু অনেক প্রশ্ন আছে। এখন এসব আলাপ করে সময় নষ্ট করতে চাইছি না।’
– ‘কি প্রশ্ন?’
– ‘এইযে এখানে অবাধ সুযোগ পেলাম এগুলো নিয়ে।’
– ‘মুনাই করে দিয়েছে।’
– ‘তা বুঝেছি, তবুও এখন চলে যাও। এরকম এসো না। এগুলো রিস্ক তো। আমারও ইচ্ছা করে। এইযে এখন ছাড়তে ইচ্ছা করছে না।’
ইতি উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
– ‘আচ্ছা আরেকবার জড়িয়ে ধরুন। আপনার বুকে কি যেন আছে। এত শান্তি পাই মাথা রাখলে।’
কল্প আবার জড়িয়ে ধরে৷ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। ইতি মিশে থাকে বুকে৷ কল্প ফিসফিস করে বলে, ‘ইতি তুমি এত কোমল কেন? শিমুল তুলোর মতো নরম।’
ইতি চোখবুজে থাকে। জবাব দিতে ভালো লাগে না। কল্প ওর গলায় একটা চুমু দেয়, তারপর গালে। ইতি চোখ খুলে না। খুলতে ইচ্ছা করে না। চোখবুজে সে পরম শান্তির একটা জগতে হারিয়ে গেছে। এই জটিল পৃথিবী দেখতে আর ইচ্ছা করে না। কল্প মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে, ‘ইতি এখন যাও।’
আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে ইতি। কল্প আঁজলা করে ওর মুখ তুলে চোখ মুছিয়ে দিয়ে বললো, ‘কাঁদার কি আছে বলো তো?’
– ‘আপনাকে পাব তো?’
– ‘পাবে, চিন্তা করো না।’
– ‘বিশ্বাস করেন আমি মরে যাব কিছু হলে। আপনি প্লিজ সব সময় এরকম থাকবেন।’
– ‘হ্যাঁ থাকবো সোনা বউটা আমার। আমি সবকিছু গুছিয়ে নিয়েই বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো। বেশি হলে এক বছর সময় লাগবে।’
– ‘এক বছর!’
– ‘এক বছর চোখের পলকে চলে যাবে ইতি। আর আমাদের বয়সই বা কত।’
– ‘শুনুন, আমি যে কোনোভাবেই আপনাকে পেতে চাই। বিয়ের প্রস্তাব দিয়েও যদি না দেয় আপনি ঘাবড়ে যাবেন না প্লিজ। আমি পালিয়ে আসবো দরকার হয়। বিশ্বাস করুন, আমার ভালোবাসাটা অন্যরকম। আমি থাকতে পারবো না আপনাকে ছাড়া।’
– ‘বুঝেছি আমি। আমাকে নিয়ে ভেবো না ইতি। আগে এড়িয়ে চলেছি সেটা ভিন্ন বিষয়। এখন তো কথা দিয়েছি। আমরা একে অন্যকে ভালোবাসি তাই না? আমি তোমাকে পাওয়ার জন্য সবকিছু করতে পারি। আমার লক্ষী বউটা, এখন যাও। বেশি রিস্ক নিয়ে নিচ্ছি।’
– ‘আচ্ছা যাচ্ছি।’
কল্প আবার ওর কপালে চুমু দিয়ে বলে, ‘তুমি আগে চলে যাও।’
ইতি চোখ-মুখ মুছে চিলেকোঠায় আসে। মুনা বসে মোবাইল টিপছে। ইতিকে দেখেই উঠে দাঁড়ায়, ‘বাবা এত সময়।’
ইতি গিয়ে মুনাকে জড়িয়ে ধরে, ‘তুই এত ভালো কেন রে?’
– ‘হইছে পাম্প মারতে হবে না।’
– ‘সত্যি বলছি মুনা। তুই আজ যে হেল্প করেছিস আমি সারাজীবন মনে রাখবো।’
– ‘কিন্তু আমি একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছি। তুই এত ভালোবাসিস উনাকে। আমি জীবনে কাউকে দেখিনি এরকম।’
– ‘তুই কিভাবে বুঝলি?’
– ‘ক্লাসে ওইদিন বুঝেছি। কিন্তু কল্প ভাইয়া কি সেরকম ভালোবাসে?’
– ‘ওর তো চাচাতো বোনের সঙ্গে বিয়ে ঠিক ছিল। ইংল্যান্ড থেকে ওরা চলেও এসেছিল। সে বিয়ে করেনি আমার জন্য।’
– ‘বাবা, এরকম ভালোবাসা দেখতেও ভালো লাগে রে। এখন ভয় হচ্ছে। তোর পরিবার যেভাবে উনাকে বের করে দিছে। যদি বিয়ে না দেয় তাহলে তো সমস্যা।’
দু’জন এসব নিয়ে কথা বলতে বলতে নিচে নেমে যায়।
__চলবে…
লেখা: জবরুল ইসলাম