#মায়ারণ্যে
#লেখিকা- মেহরুমা নূর
#পর্ব-২১
★ দুপুর ১ টা,
ল্যাপটপে কাজ করতে করতে অরণ্যের চোখ লেগে এসেছিল। বেডের মাথার সাথে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল অরণ্য। হঠাৎ মুখের ওপর কিছু পানির ছিটা লাগায় ঘুমে ব্যাঘাত ঘটলো। কপাল কুঁচকে চোখ খুলে তাকালো অরণ্য। চোখ খুলেই যেন অরণ্য নিজের সর্বনাশ ডেকে আনলো।
মায়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তার ভেজা চুল ঝাড়ছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে মাত্রই শাওয়ার নিয়ে এসেছে। মায়ার দীঘল কালো চুলগুলো থেকে পানি পড়ছে। যেগুলো মায়ার সারা অঙ্গে মুক্ত দানার মতো লেগে আছে। হালকা গোলাপি রঙের একটা সুতি তাতের শাড়ী পড়েছে মায়া। হয়তো মা দিয়েছে। এই সামান্য রুপেও ওর সন্ধ্যামালতীকে অপূর্ব লাগছে। উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে থাকায় শাড়ির ফাঁকে মায়ার মসৃণ কোমড় দৃশ্যমান হয়ে আছে। সেখানেও পানির কনা লেগে আছে। গলা শুঁকিয়ে আসছে অরণ্যের। ওর এখন মায়ার শরীরে থাকা পানিগুলোর ওপরও হিংসে হচ্ছে। ওর বউয়ের শরীরে কেমন বেশরমের মতো লেপ্টে আছে। অরণ্যের চোখের নেশাক্ত নজর ঘুরে বেড়াচ্ছে, মায়ার সদ্য শাওয়ার নেওয়া স্নিগ্ধ শরীরে। অরণ্যের খুব ইচ্ছে করছে মায়ার ওই ভেজা চুলে নাক ডুবিয়ে মায়ার মিষ্টি ঘ্রাণে হারাতে। মায়ার শরীরের পানির কনাগুলো অরণ্যের তৃষ্ণা বাড়িয়ে দিচ্ছে। খুব ইচ্ছে করছে ঠোঁট দিয়ে মায়ার অঙ্গে জমে থাকা সব পানি গুলো চুষে নিতে। মায়াকে নিয়ে ভালোবাসার রাজ্যে হারাতে ইচ্ছে করছে।
অরণ্য আর পারছে না। এরচেয়ে তো ঘুমেই ভালো ছিলাম। এখন তো নিঃশ্বাস নেওয়াও কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।এ কোন জ্বালায় পড়লো? অরণ্য বুঝতে পারছে না ও মায়াকে শাস্তি দিচ্ছে নাকি নিজেই শাস্তি পাচ্ছে? চোখের সামনে এমন মহীয়সী বউ থাকতেও তাকে কাছে টানতে পারছে না। পারছে না তাকে মন ভরে আদর করতে। এরচেয়ে বড় অসহায়ত্ব আর কি হতে পারে? এসব ভেবে মায়ার ওপর আবারও হঠাৎ করে রাগ হতে লাগলো। মায়া যদি ওকে ধোঁকা না দিতো তাহলে আজকের মুহূর্ত টা হয়তো অন্যরকম হতো।আমাদের মাঝে কোন দেয়াল থাকতোনা। আর না কোন দূরত্ব থাকতো।না আমাকে এতো অসহায় হতে হতো। অরণ্য তাই রাগ দেখিয়ে বলে উঠলো।
–কি হচ্ছে এসেছেন এখানে?
অরণ্যের কথায় মায়া চমকে উঠে অরণ্যের দিকে ঘুরে তাকিয়ে ভয়ে ভয়ে বললো।
–কি কি হয়েছে?
–এটা কোন চুল ঝাড়ার জায়গা? এতটুকু কমনসেন্স নেই তোমার? এখন কি নিজের ঘরে একটু শান্তিতে ঘুমাতেও পারবোনা? নাকি আমার ঘুমটাও এখন তোমার চোখের কাটা হয়ে গেছে? তোমার তো আবার আমার শান্তি একটুও পছন্দ না। তাইতো আমাকে জ্বালানোর নতুন নতুন ফন্দি খুঁজে বেড়াও। এতটুকু শান্তিতেও তুমি আমাকে থাকতে দিতে চাওনা? কি চাও বলোতো? আমার জান নিয়ে মানবে তুমি?
অরণ্যের বাকি সব কথায় অতটা না লাগলেও, ওর শেষের কথাটা তীর হয়ে বিঁধল মায়ার বুকে। মায়া চমকে উঠে ছলছল চোখে তাকালো অরণ্যের দিকে। তবে পরমুহূর্তেই চোখ নামিয়ে নিয়ে কোনরকমে বললো।
–স সরি,,
কথাটা বলেই মায়া দ্রুত রুম থেকে বেড়িয়ে গেল। বাইরে এসে এককোনায় বসে মুখে হাত চেপে নিজের কান্না আটকানোর যথাযথ চেষ্টা করতে লাগলো। অরণ্য কিভাবে পারলো এতবড় একটা কথা বলতে? ও সত্যিই ওর সম্পর্কে এই ভাবে? ওর মনে আমার জন্যে এতো ঘৃণা জন্মে গেছে? হ্যাঁ কিন্তু এতে ওরই বা কি দোষ? আমি কাজই এমন করেছি। অরণ্যের জায়গায় অন্য কেউ থাকলে হয়তো এরথেকেও বেশি করতো। কাঁদছিস কেন তুই? এটা তো আমার প্রাপ্য। অন্যায়ের শাস্তি তো তোকে ভোগ করতেই হবে। এতো ন্যাকামো করলে হবে নাকি? এটা তো কেবল শুরু।তোর যে এখনো অনেক কিছু সইতে হবে। কর্মের ফল যে তোকে ভোগ করতেই হবে। তাই কান্না ভুলে উঠে দাঁড়া। তোর স্বামীর দেওয়া আরও শাস্তি তোকে ভোগ করতে হবে।
এসব ভেবে মায়া কোনরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়িয়ে ছাদের দিকে গেল।
মায়া বেড়িয়ে যেতেই অরণ্য অপরাধবোধে চোখ বন্ধ করে খাটের পাশে হাত দিয়ে একটা সজোরে ঘুষি মারলো। ওর সন্ধ্যামালতীকে আঘাত করতে দিতে গিয়ে যে, তার চেয়ে শতগুণ বেশি আঘাত সে নিজেই পায়। মায়ার ওই অশ্রুসজল চোখের করুন চাহুনি যে অরণ্যের হৃদয়ে সহস্র বার রক্তক্ষরণ করে। কেন এমনটা করলে তুমি সন্ধ্যামালতী? কেন? কেন?
___
সারা আস্তে করে সাহিলের রুমের দরজা খুলে সামনে তাকাতেই চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। এতটুকু সময়ের মাঝেই রুমের একি হাল হয়েছে। মনে হচ্ছে রুমের মধ্যে দিয়ে টর্নেডো, সিডোর,বুলবুলির চৌদ্দ গুষ্টি বয়ে গেছে। সারা রুম তছনছ করে ফেলেছে সাহিল। সাহিলের দিকে তাকাতেই আরও চমকে সারা। সাহিলকে কেমন বিধ্বস্ত লাগছে। যেন তার মহামূল্যবান কিছু হারিয়ে গেছে। সাহিল যে এই ডাইরিটার জন্যেই এতো পাগল হয়ে গেছে তা বুঝতে বাকি রইলো না সারার। সারা ভয়ে ভয়ে সাহিলের পেছনে গিয়ে ডাইরিটা এগিয়ে দিয়ে বলে উঠলো।
–এইটা খুঁজছেন?
সাহিল পেছনে ফিরে তাকালো। সারার হাতে ডাইরিটা দেখে চমকে গেল সে। এক টানে ডাইরিটা নিয়ে চোয়াল শক্ত করে বললো।
–তুই এটা কোথায় পেলি? তুই আবার আমার রুমে এসেছিলি? তোকে না বলেছি আমার রুমে বা আমার সামনেও আসবিনা? তাহলে কোন সাহসে এলি? আর আমার জিনিসে হাত দেওয়ার সাহস কি করে হলো তোর?
সারা সাহিলের দিকে তাকিয়ে অতি কনফিডেন্সের সাথে বললো।
–কেন কি করবেন? আমার যখন খুশী তখন আসবো? আপনি কি করবেন? সত্যি সত্যিই খুন করবেন আমাকে? তো করুন। আমি রেডি আছি।
সারার এমন হঠাৎ পরিবর্তন দেখে অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো সাহিল। সারা সত্যি সত্যিই আবার ডাইরিটা পড়ে ফেলেনিতো? ওকি সব বুঝে গেছে? বুঝলেই বা কি? তাতে কিই বা পরিবর্তন হবে? সাহিল রাগী কন্ঠে বললো।
–ফালতু কথা বন্ধ কর।আর আমার রুম থেকে বের হ এক্ষুনি।
সারা ভাবলেশহীন ভাবে বলে উঠলো।
–কেন যাবো? আমার এখন যাওয়ার কোন মুড নেই।
কথাটা বলে সারা বেডের ওপর আরামে বসে পড়লো।
সাহিল দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
–দেখ আমার মেজাজ একদম খারাপ করবি না। যা এখান থেকে আমার অনেক কাজ আছে।
–হ্যাঁ তো করুণ কাজ।আমি কি আপনাকে বেঁধে রেখেছি নাকি।
সাহিল দাঁতে দাঁত চেপে আবারও কিছু বলতে যাবে তখনই ওর ফোনটা বেজে উঠলো। সাহিল ফোন রিসিভ করে অন্য দিকে ঘুরে কথা বলতে লাগলো। ওপাশের ব্যাক্তি কিছু একটা বললে,তার পরিপেক্ষিতে সাহিল বলে উঠলো।
–হ্যাঁ হ্যাঁ টিকেট হাতে পেয়ে গেছি আমি।গত পরশুর ফ্লাইট। ওকে থ্যাংকস।
সারা চমকে গেল। টিকেটও হয়ে গেছে? সারা বেডের পাশে থাকা ছোট টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখলো ওখানে একটা খাম রাখা আছে। ওটাতেই নিশ্চয় টিকিট আছে ।সারা হাত বাড়িয়ে খাম টা হাতে নিল। সাহিল কথা শেষ করে পেছনে ফিরে সারার হাতে খামটা দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো।
–তুই এখনো যাসনি? আর ওটা নিয়েছিস কেন? দে আমাকে দে।
সাহিল হাত বাড়িয়ে খামটা নিতে গেলেই সারা হাত পেছনে নিয়ে বলে উঠলো।
–এটাতে আপনার টিকেট তাইনা?
–সারা ওটা আমাকে দিয়ে দে।
–না আমি দিবো না।
–দেখ ভালো হবে না কিন্তু বলে দিচ্ছি। ভালোই ভালোই ওটা দিয়ে দে আমাকে।
সাহিল সারার হাত থেকে খামটা নেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো। আর সারা সেটা না দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। দুজনের জোরাজুরিতে একসময় ব্যালেন্স রাখতে না পেরে দুজনেই বেডের ওপর পড়ে গেল। সাহিল সারার উপরে পড়লো। সাহিল আর সারার মুখ ছুঁই ছুঁই। সারার নাকের সাথে সাহিলের নাক ঠেকে আছে। সারার চোখের অতল গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে সাহিল। নজর গিয়ে থামলো সারার কোমল অধর জোড়ায়। গলা শুঁকিয়ে আসছে ওর। শুঁকনো ঢোক গিলছে। তবে সারার সেই তিক্ত কথাগুলো মনে আসতেই সব ঘোর কেটে গেল সাহিলের। সে এক ঝটকায় উঠে বসে অপ্রস্তুত কন্ঠে বললো।
–আমাকে জ্বালাস না সারা। খামটা দিয়ে চলে যা।
সারাও উঠে বসে অপরাধী সুরে বললো।
–আপনি যাবেন না প্লিজ?
সাহিল অবাক দৃষ্টিতে তাকালো সারার দিকে। সারা আবারও বলে উঠলো।
–আমি জানি আপনি আমার ওপর রেগে আছেন। সেইজন্যই চলে যেতে চাইছেন তাইনা?
সারা দুই কান ধরে বললো।
–আমি অনেকগুলো সরি। এই দেখুন কানে ধরছি। আপনি তো জানেনই আমি আগে থেকেই টিউবলাইট। একটা বললে আরেকটা বুঝি। তাইতো ভুল বুঝে আপনাকে উল্টাপাল্টা বলে ফেলেছি। প্লিজ মাফ করে দিন না?
সারার মাফ চাওয়ার ভঙ্গি দেখে সাহিল অন্য দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসলো। তারপর সিরিয়াস ভঙ্গিতে সারার দিকে তাকিয়ে বললো।
–নিজেকে এতো ইম্পর্ট্যান্ট ভাবার দরকার নেই। দুনিয়াতে সবকিছু শুধু তোর কারনেই হয় না। আমি বাচ্চা না যে কারোর ওপরে রাগ করে কোথাও চলে যাবো।আর তোর মতো ইডিয়টের কথায় তো কখনই না।আমি আমার দরকারে যাচ্ছি।তাই ফালতু প্যাঁচাল বন্ধ করে যা এখান থেকে।
সারা আবারও বলে উঠলো।
–আপনি যাই বলুন আমি জানি আমার কথায় রাগ করেছেন আপনি।সরি তো, প্লিজ মাফ করে দিন না?
–ওকো ফাইন, মাফ করেছি। হয়েছে? যা এখন। আর আমার টিকেট দে আমাকে।
সারা খুশী হয়ে বললো।
–সত্যিই? তারমানে আপনি যাচ্ছেন না?
সাহিল ভ্রু কুঁচকে বললো।
–এর সাথে না যাওয়ার প্রশ্ন কোথাথেকে আসলো? তুই যাতো এখন। মেজাজ খারাপ করিস না আমার। আমার টিকেট টা দে।
সারা উঠে দাঁড়িয়ে একটু দূরে গিয়ে বললো।
–না দেবনা। আপনার টিকেট ছাড়া তো আপনি যেতে পারবেন না তাইনা?
কথাটা বলে সারা টিকেটের খামটা সামনে এনে ফট করে মাঝখান দিয়ে ছিড়ে দুই ভাগ করে ফেললো। তারপর আরও কয়েক টুকরো করে বললো।
–এই নিন আপনার টিকেট। এখন দেখি আপনি কিভাবে যান?
সাহিলের রাগ এবার সীমা ছাড়িয়ে গেল। সাহিল উঠে গিয়ে সারাকে দেয়ালের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে চোয়াল শক্ত করে বললো।
–এটা কি করলি তুই ইডিয়ট? তুই চাস কি বলতো? কাছে থাকলেও তোর সমস্যা। দূরেও যেতে দিবি না। তাহলে তো চাস তুই? কোন জনমের শাস্তি দিচ্ছিস আমাকে? তোরতো খুশী হওয়ার কথা। এখন আর তোকে আমার মতো অসভ্য লোককে সহ্য করতে হবে না। তুই মনের খুশিতে থাকতে পারবি। তাহলে আটকাচ্ছিস কেন আমাকে?
সারা হঠাৎ নাক টেনে কাঁদা শুরু করে দিলো। কাঁদো কাঁদো গলায় বললো।
–সরি বলছিতো? আর কতোবাড় বলবো? বলছিতো আমার ভুল হয়ে গেছে? সেদিন ওই মেয়েগুলোর কথা শুনে আমি ভুল বুঝেছিলাম। প্লিজ মাফ করে দিন না?
সাহিল এবার বলে উঠলো।
–আচ্ছা তো এখন তোর আমার ওপর হঠাৎ করে ভরসা এসে গেল তাইনা?
সারা দ্রুত বেগে মাথা ঝাকালো। মানে হ্যাঁ। সাহিল বাঁকা হেসে বললো।
–আর ইউ শিওর?
সারা আবারও মাথা ঝাকালো। মানে সে শিওর। সাহিল আবারও বাঁকা হেসে বললো।
–দেন কিস মি।
সারা চোখ বড়বড় করে তাকালো সাহিলের দিকে। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো।
–মা মানে?
–মানে সিম্পল। কিস মি বাংলায় বললে চুমু দে আমাকে। তাহলে বুঝবো তুই আমার ওপর সত্যিই ভরসা করিস। কই দে।
সারা বেচারি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। এখন কি করবে ও? যাইহোক একটা চুমুই তো, এ আর এমন কি? কথাটা ভেবে সারা ফট করে সাহিলের গালে একটা চুমু দিয়ে দিল।তারপর বলে উঠলো।
–এইযে দিয়েছি।
সাহিল দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
–আমি কি কোন ছোট বাচ্চা যে এভাবে গালে চুমু দিচ্ছিস?
–তাহলে?
–তুই ফিল্ম দেখিস না? সেখানে নায়ক নায়িকা কিভাবে চুমু খায় ওইভাবে লিপ কিস করবি।
সারার চোখ দুটো এবার বেড়িয়ে আসার উপক্রম। ও এটা কি করে করবে? সারাকে চুপ থাকতে দেখে সাহিল তাচ্ছিল্যের সুরে বললো।
–কি পারবি না তো? জানতাম পারবি না। তোর ভরসা খুবই ঠুনকো। এখন যা এখান থেকে। আর কখনো তোর এই ঠুনকো ভরসা দেখাতে আসবি না।
কথাটা বলে যেই সাহিল সরে যেতে নেয় তখনই আচমকা সারা দুই হাতে সাহিলের শার্টের কলার টেনে ধরে সাহিলের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরলো। সাহিল বেচারা যেন আচমকা হাজার ভোল্টের জোরদার শক খেল। সারা এমনটা করবে ও স্বপ্নেও ভাবেনি। ওতো শুধু সারাকে চেতানোর জন্য ওসব বলোছিল। কিন্তু পিচ্চি পরিটা যে সত্যি সত্যিই ওর ওপর এভাবে অ্যাটাক করবে তা কল্পনাও করেনি ও। সারা শরীরে কারেন্ট বয়ে গেল ওর। কিছুক্ষণ পর সারা সরে আসতে নিলে বাঁধা পেল সে।সাহিলের হাত ওকে আটকে ফেলেছে। এতক্ষণে সাহিল বিস্ময় কেটে উঠেছে। সারার নেশা চেপে বসেছে ওকে।এযে মরণ নেশা। সাহিল এক হাতে সারার কোমড় পেঁচিয়ে, আরেক হাত সারার চুলের মাঝে ডুবিয়ে সারার রসালো অধরযুগল নিজের আয়ত্ত্বে করে নিল। পান করতে লাগলো সারার মধুসুধা।
পাঁচ মিনিট পর সারার দম বন্ধ আসতে লাগলে সাহিল তখন সরে এলো। দুজনেই হাঁপাতে লাগলো। সারা হাঁপাতে হাঁপাতে বললো।
–আমার ভরসা মোটেও ঠুনকো না। এখন নিশ্চয় আমার ভরসার ওপর আপনার ভরসা হয়েছে?
কথাটা বলেই সারা দৌড়ে ওখান থেকে পালালো।
আর সাহিল ঠোঁট কামড়ে হেঁসে উঠলো। হাসতে হাসতে বেডের ওপর ঠাস করে হাত ছড়িয়ে শুয়ে পড়লো। ওপর দিকে তাকিয়ে থেকে আবারও হাসতে লাগলো। খুশিতে বোধহয় আজ ও পাগলই হয়ে যাবে।
_____
রাতে সবাই ডাইনিং টেবিলে খেতে বসেছে। শুধু অরণ্য আর মায়া ছাড়া। অরণ্য বাইরে গেছে কোন কাজে। বাসায় বলে গেছে সে রাতে বাইরে থেকেই খেয়ে আসবে। আর মায়াকে খেতে বললে,মায়া বলেছে তার নাকি খেতে ইচ্ছে করছে না। মাথাটা কেমন ব্যাথা করছে। তনিমা বেগম অনেক বার বললেও সে বলেছে খিদে লাগলে পড়ে খেয়ে নিবে। তাই অগত্যা তনিমা বেগম মায়াকে রুমে গিয়ে আরাম করতে বলেছে। অথচ বাড়ির কেউ বুঝতেও পারলোনা যে মায়া আজ সারাদিনই কিছু খাইনি। কিভাবে খাবে? অরণ্যের নারাজি যে ওর গলা দিয়ে খাবার নামতে দিচ্ছে না। তাইতো সবাই খাওয়ার কথা বললেও মায়া কোন বাহানায় কাটিয়ে যায়।
খাবার টেবিলে সারা আজ একদম চুপচাপ। মাথা নিচু করে শুধু মুখে খাবার ঢুকিয়ে যাচ্ছে। যেন ওর মাথায় কেউ বন্দুক ধরে রেখে বলেছে যে,মাথা উঁচু করলেই গুলি করে দিবো। সারার কান্ড দেখে সাহিল শুধু মুচকি মুচকি হাসছে। সারা যে লজ্জার কারণে এমন করছে তা ভালোই বুঝতে পারছে ও। তখন তো খুব সাহস দেখিয়েছিল। আর এখন সব ফুস হয়ে গেছে।
হঠাৎ রাবেয়া বেগম সাহিলের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।
–কিরে বাবা তুই সত্যি সত্যিই যাওয়ার প্ল্যান করে নিয়েছিস? আরেকবার ভেবে দেখনা বাবা? না গেলে কি হয়না?
সাহিল ভাবলেশহীন ভাবে বললো।
–কে যাচ্ছে মা? আমিতো কোথাও যাচ্ছি না?
সাহিলের কথা শুনে সারা মনে মনে লুঙ্গি ডান্স দিচ্ছে। খেয়ে দেয়ে ঘরে গিয়ে সত্যি সত্যিই ডান্স করবে। সাহিল ভাইয়া যাচ্ছে না ইয়েএএএ।
রাবেয়া বেগম ভ্রু কুঁচকে বললেন।
–কেন তুই না বললি তুই নিউইয়র্ক যাবি?
–হুম যেতে তো চেয়েছিলাম। কিন্তু যাবো কিভাবে? তোমার পাগল ভাতিজী আমার টিকেট ছিড়ে ফেলেছে।
সাহিলের কথায় সারার বিষম উঠে গেল। কি খারাপ লোক। আমার কথা না বললে হতো না? রাবেয়া বেগম বলে উঠলেন।
–ভাতিজী মানে তুই কার কথা বলছিস? সারা?
–হ্যাঁ তাছাড়া আর এই বাসায় পাগল কে আছে?
রাবেয়া বেগম সারার উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন।
–কিরে সারা তুই সত্যিই এমন করেছিস?
সারা বেচারি কি বলবে? জোরপূর্বক হেসে বললো।
–হ্যাঁ ফুপি। আমিতো তোমার কথা ভেবেই এটা করেছি। আসলে তোমার কষ্ট আমার একটুও সহ্য হচ্ছিল না। তাইতো আমি আমার জানের বাজি রেখে এমন দুর্ধর্ষ কাজটা করেছি।
রাবেয়া বেগম আবেগে আপ্লূত হয়ে গেল। খুশিতে তার চোখে পানি নাকে সর্দি। রাবেয়া বেগম আবেগে আপ্লূত হয়ে বললো।
–তুই সত্যিই আমার জন্য এমনটা করেছিস? সত্যিই মা তুই আমার সবচেয়ে প্রিয় ভাতিজী। যেটা কেউ পারলোনা সেটা তুই করে দেখালি। বেচে থাক মা বেঁচে থাক।
এদের কান্ড দেখে সাহিলের প্রচুর হাসি পাচ্ছে। পিচ্চিটা কেমন করে কথা পাল্টে নিলো।
___
রাত ১২ টা।
অরণ্য এখনো বাসায় ফেরেনি। মায়ার খুব চিন্তা হচ্ছে। বিছানায় শুয়ে আছে তবে ঘুম আসছে না। অরণ্য না আসা পর্যন্ত ও শান্তি পাবে না। এমনিতে শরীর টাও ঠিক মনে হচ্ছে না। সারাদিন না খেয়ে থাকায় শরীর অনেক দূর্বল লাগছে। আর মাথাও ব্যাথা করছে। জ্বর আসবে মনে হচ্ছে।
হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে অরণ্য এসেছে ভেবে হাসিমুখে দরজার দিকে তাকালো মায়া। কিন্তু অরণ্যের পাশে অন্য একটা মেয়েকে দেখে মুখের হাসি বিলীন হয়ে গেল মায়ার। মেয়েটার ড্রেসিং সেন্সও খুব একটা সুবিধার মনে হচ্ছে না মায়ার। দূর্বল শরীরে আস্তে করে উঠে এসে অরণ্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
–উনি কে?
অরণ্য কঠোর গলায় বললো।
–সেটা তোমার জানার দরকার নেই। তুমি বাইরে যাও এখন।
মায়া চমকে উঠে বললো।
–মা মানে??
–মানে তোমাকে বাইরে যেতে বলেছি। বাইরে যাও এক্ষুনি।
কথাটা বলে অরণ্য মায়ার হাত ধরে মায়াকে দরজার বাইরে বার করে দিয়ে বললো।
–আমি বলেছিলাম না আমি তোমাকে শারিরীক শাস্তি না, তোমাকে মানসিক শাস্তি দিবো। তুমি আমাকে অন্য মেয়ের কাছে দিয়েছিলে না? তো এখন থেকে তুমি আমাকে রোজ নতুন নতুন মেয়ের সাথে দেখবে। আর এটাই হবে তোমার শাস্তি।
কথাটা বলে অরণ্য মায়ার মুখের ওপর দরজা লাগিয়ে দেয়।
মায়া যেন অনূভুতি শূণ্য পাথর হয়ে গেল। নীরব মূর্তির মতো কতক্ষণ ওভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো। শরীরের সব শক্তি হ্রাস পাচ্ছে মায়ার। শূন্য চোখে দরজার দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে রইলো। প্রায় পাঁচ মিনিট ওভাবেই তাকিয়ে রইলো। তারপর ঘুরে দাঁড়িয়ে শূন্য চোখে তাকিয়ে এলোমেলো পায়ে সামনের দিকে হাঁটতে লাগলো। শাড়ীর আঁচল টা ফ্লোরে গড়িয়ে যাচ্ছে।
অরণ্য এখনো দরজায় হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। তার মন চাচ্ছে মায়া আসুক। আমাদের মাঝের এই দেয়াল ভেঙে দিক। চিল্লিয়ে বলুক, অরণ্য তুমি শুধু আমার। তুমি অন্য কারোর কাছে যাবে না। আমি যেতে দিবো না তোমাকে।
কিন্তু না মায়া আসছে না। আর এটাই অরণ্যকে আরও রাগিয়ে দিচ্ছে। তোমার কি একটুও যায় আসে না? তুমি এতো জিদ্দি কেন মায়া? ঠিক আছে আমিও দেখবো তুমি কতক্ষণ না এসে থাকতে পারো। অরণ্য পেছনে ঘুরে দেখলো ওর সাথে আসা মেয়েটা বেডের ওপর বসতে যাচ্ছে। তখনই অরণ্য বলে উঠলো।
–স্টপ রাইট দেয়ার। ওখানে একদম বসবেন না। ওটা আমার সন্ধ্যামালতীর বিছানা।
–তাহলে কোথায় বসবো? সারারাত কি দাঁড়িয়ে থাকবো নাকি?
–আ আপনি সোফায় বসুন। না না সোফায় না।
অরণ্য একটা চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বললো।
–এটাতে বসুন।
অরণ্যের কাজকর্ম দেখে মেয়েটা চরম অবাক হচ্ছে। যাগ্গে যা খুশী তাই করুগ্গে। আমাকে টাকার বদলে এনেছে। টাকা দিলেই মিটে গেল।
ছাঁদের রেলিঙের সাথে শরীর এলিয়ে বসে আছে মায়া। শরীরে যেন একফোঁটা বলও নেই ওর। শূন্য চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। তাকিয়ে থেকে আনমনেই গাইতে লাগলো।
♬ তুমি যদি সুখী হও দাও আরও ব্যাথা দাও
♬ বেদনার আগুনে পোড়াও
♬ তুমি যদি সুখী হও দাও আরও ব্যাথা দাও
♬ বেদনার আগুনে পোড়াও
অরণ্য রুমের ভেতর শুধু ছটফট করছে। মায়াকে কষ্ট দিয়ে ওর মনেও আগুন জ্বলছে। একটুও শান্তি পাচ্ছে না। মায়ার জন্য চিন্তাও হচ্ছে ওর। কি করছে মেয়েটা? এতক্ষণ হয়ে গেল তবুও আসছে না কেন? প্লিজ জলদি এসো মায়া। শুধু একবার নিজের অধিকার দেখাও। আই প্রমিজ আমি তোমাকে আর দূরে ঠেলে দিবো না। আমিও যে আর পারছিনা। প্লিজ একবার এসে আমাদের মাঝের সব দুরত্ব মিটিয়ে দাও।
মায়া আসছে না। অরণ্যের অশান্তি যেন আরও বেড়েই যাচ্ছে। বুকের ভেতর প্রচুর যন্ত্রণা হচ্ছে।
আধাঘন্টা হয়ে গেল মায়া পাথরের মতো ওভাবেই বসে আছে। হঠাৎ আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নেমে পড়লো। বৃষ্টির মাঝেও মায়া ওভাবেই বসে রইলো। যেন কোন অনুভূতিই কাজ করছে না ওর ভেতর। শীতের মৌসুমে এভাবে বৃষ্টিতে ভিজে মায়ার শরীরে প্রচন্ড কাঁপুনি উঠে গেল। তবুও মায়া ওভাবেই বসে রইলো। সারাদিন না খেয়ে থাকায় মায়ার শরীর এমনিতেই অসুস্থ। তারওপর এভাবে বৃষ্টিতে ভেজায় মায়া ধীরে ধীরে কেমন নিস্তেজ হয়ে যেতে লাগলো। অতঃপর এক সময় শরীরের সব ভর ছেড়ে দিয়ে নিচে লুটিয়ে পড়ে। নিস্তেজ শরীরের ওপর বৃষ্টি পানি তার লিলা দেখিয়ে যাচ্ছে। তবে কি এখানেই থেমে যাবে মায়ার জীবন রেখা? তবে কি হবে না মায়ারণ্যের মিলন?
চলবে……..