মায়ার_জীবনী #Nadia_Afrin পর্ব:১০

0
566

#মায়ার_জীবনী
#Nadia_Afrin

পর্ব:১০

সারহান চলে গেছে মাত্র দুদিন পার হয়েছে।
সব কিছু মোটামুটি স্বাভাবিকই ছিল।
সেদিনটা ছিল শুক্রবার।কিচেনে খাবার রান্না করছিলাম আমি।
শাশুড়িমা দুজন মহিলা সহ একজন পুরুষ ওপরে নিয়ে গেলো।
আমি তাদের দিকে একনজর তাকালাম।বোরখা পড়া মহিলাগুলো।
তিনি সোজা আমার ঘরে নিয়ে গেলেন তাদের।
ভাবলাম,আত্মীয়-টাত্মীয় হবে হয়ত।নতুন বউয়ের ঘর দেখাতে নিয়ে এসেছে মেইবি।
ওদিকে আর পাত্তা দিলাম না আমি।নিজের কাজে মনোনিবেশ করলাম।

কিছুক্ষণ পর তিনি আবারো অপরিচিত সেই মহিলা ও পুরুষগুলোকে নিয়ে নিচে এলো।
চারজনেই বেশ হাসাহাসি করতে করতে নামলো।
একজন মহিলা বললো,”ঘরটা কিন্তু বেশ বড়ো।পছন্দ হয়েছে আমাদের”।

শাশুড়ি মা হাসতে হাসতে বললেন,”তা বেশ।সন্ধ‍্যার আগেই তাহলে চলে আসবেন।আমরা সব ব‍্যবস্থা করে রাখবো”।

তাদের কথার যথার্থ মানে বুঝলাম না আমি।

_____

দুপুর দুটোর দিকে লাঞ্চ করে নিজের ঘরে শুয়ে ছিলাম আমি।
আমার আবার খাবার খাওয়ার পর বিছানায় শুলেই ঘুম পেয়ে যায়।কম-বেশি সবারই এই অভ‍্যাসটি আছে।
চোখটা লেগে এসেছে এমন সময় শাশুড়িমা চারজন ছেলে সহ আমার ঘরে এলো।
বললো,”তারাতারি ঘর থেকে বাহির হও মায়া”।

আমি কিছু বুঝে উঠলাম না।তবে বের হলাম।
ছেলে চারজনকে নিয়ে আমার ঘরের ফার্নিচার গুলো ঘর থেকে বের করতে লাগলেন।

:,,,,,,,”এসব আপনি কী করছেন মা?ঘরের ফার্নিচার বের করছেন কেন”?

তিনি আমার দিকে কিছুটা কড়া চোখে তাকিয়ে বললেন,”চুপচাপ দেখো কী করি”।

বলে রাখা ভালো,আমি মধ‍্যবিত্ত ঘরের মেয়ে হলেও আমার বিয়েতে পণ হিসেবে প্রায় ৮ লাখ টাকার মতো জিনিস দেওয়া হয়েছিলো।পাঁচ ভরি সর্নের গহনা সহ চারলাখ টাকার ফার্নিচার দেওয়া হয়েছিল।
আমি ছিলাম আমার মা-বাবার বড়ো মেয়ে এবং অনেক আদরের।তাই তো জন্মের পর থেকেই আমাকে ঘিরে ছিল তাদের বহু সঞ্চয়।
এছাড়াও নানুবাড়ির একমাত্র নাতনি সহ দাদা বাড়ির বড়ো নাতনি আমি।এবং দেখতে সুন্দর ও মার্জিত স্বভাবের হওয়ার জন্য আমার বিয়েতে দু-হাত ভরে খরচ করেন সকলে।

আমি বাইরে চুপচাপ দাড়িয়ে আছি।তারা একে একে আমার পুরো ঘরের জিনিসপত্র বের করে চলে গেলো।
ভাবলাম,হয়ত নতুন কোনো জিনিস ঘরে এ‍্যাড করবে।

দাড়িয়ে থাকতে থাকতে হাপিয়ে গেলাম।
সাইরার ঘরে গেলাম।
সে সময় সাইরা কলেজে।
ওর বিছানায় বালিশে মাথা ঠেকিয়ে শুলাম।ঘুমের ভাব আমার যায়নি তখনও।
কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম সেই খেয়াল নেই।

প্রায় ঘন্টা চারেক পর ঘুম ভাঙলো।
উঠে দেখি সাইরা খাটের এককোণে বসে ফোন টিপছে।আমায় উঠতে দেখে একটু হাসলো তাকিয়ে।

আমি দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি বেলা গড়িয়েছে অনেকটা।
বিছানা থেকে উঠে সাইরার বাথরুম ইউজ করলাম।

তারপর নিজের ঘরের দিকে অগ্রসর হলাম।
চুল চিরুনী করে বেধে রাতের রান্না বসাতে হবে।

বারান্দায় আমার ফার্নিচার গুলো বড়ো মোটা পলি দিয়ে ঢেকে রাখা।আর কিছু ফার্নিচার দেখলাম সায়লা আপুর ঘরে।
বুঝলাম না,এতো সময় চলে গেলো অথচ ঘর গোছানো হলো না তাদের।
বিরক্তিতে কপাল কুচকে গেলো আমার।
তড়িঘড়ি পায়ে ঘরের দিকে গেলাম আমি।

ঘরে গিয়ে আমিতো অবাক।
সকালের দেখা সেই মহিলাগুলো আমার ঘরে নিজেদের জিনিসপত্র গোছাচ্ছে।

আমাকে দরজার সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে একজন মহিলা বললো,”তুমি তো বউ তাই না?
তোমায় তো সকালে দেখলাম।
এখন তো প্রতিদিনই দেখা হবে আমাদের।এই ঘরে ভাড়ায় উঠেছি আমরা”।

তাদের কথা শুনে অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছালাম।

শাশুড়িমার ঘরে গিয়ে তাকে জোড়ে জোড়ে ডাকতে লাগলাম।
রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে আমার।

শাশুড়িমা হাত মুছতে মুছতে ঘরে এসে বললো,”কী হলো মায়া?এটা কোন ধরনের অসভ্যতা।নতুন বউ তুমি,এভাবে গলা ছেড়ে চেচাচ্ছো কেন”?

:,,,,,,,”নতুন বউ চেচাতে পারবে না এটা মানতে পারছেন আর নতুন বউয়ের ঘরে ভাড়াটিয়া ওঠাতে পারেন।
এসব কী করছেন আপনারা।আমার ঘর কেনো ভাড়া দিয়েছেন আপনারা”?

:,,,,,,,,”আমার সঙ্গে এভাবে কথা বলছো কেন মায়া?
সব তো তোমাদেরই।আমার এক মেয়ের তো বিয়ে হয়েই গেছে।আর দুটোর বিয়ে হয়ে গেলে সবই তোমাদের।
ঘর ভাড়া দিয়ে যদি দুটো টাকা সঞ্চয় করতে পারি,তোমাদেরই তো থাকবে তাই না”?

আমি চেচিয়ে উঠে বললাম,”এমন সঞ্চয় আমার দরকার নেই মা।
এতোদিন চুপ থেকেছি বলে এই ভাববেন না যে সারাজীবন থাকবো।
নতুন আমি,অচেনা পরিবেশে সঠিক প্রতিবাদ করতে পারিনি ।
কিন্তু আমারই ভুল।আমার উচিৎ ছিলো প্রথম থেকেই প্রতিবাদ করা।তাহলে অন্তত এ পর্যায়ে যেতো না বিষয়টি।
আপনাদের এতোই যখন সঞ্চয় করার ইচ্ছা তখন নিজেদের ঘর ভাড়া দিতে পারতেন”।

শাশুড়ি মা তেতিয়ে উঠে বললেন,”সামান‍্য ঘর নিয়ে এ কী অসভ্যতা শুরু করছো তুমি মায়া।
ভারী বেয়াদব তো তুমি”।

:,,,,,,,”আপনাদের জন্যই এমন হয়েছি আমি মা।কই বিয়ের আগে তো এমন ছিলাম।
কথায় বলে না,কর্ম মানুষকে মর্ম শিখিয়ে দিয়ে যায়।আমারও হয়েছে তাই।আপনাদের নিম্নমানের কাজগুলো আমায় নিম্নমানের কথা ও মনমানসিকতা তৈরী করেছে”।

শাশুড়িমা কিছুটা ক্ষ‍্যান্ত হলেন।

:,,,,,,”আচ্ছা,ঘর নিয়েই যেহেতু এতো সমস্যা তোমার।তাহলে সামনের মাসে ওদের ঘর থেকে খালি করে দেবো।তোমার ঘর তোমায় ফিরিয়ে দেবো।
এখন তো আর ওনাদের ঘর থেকে বের করা সম্ভব না।এক মাসের ভাড়া নিয়ে নিয়েছি আমি”।

চলবে,,,,,

(কেমন লাগলো প্রতিবাদী পর্ব?
আমার জন‍্য দোয়া করবেন।অসুস্থ আমি।শুধুমাত্র পাঠকদের মন রক্ষার্থে কষ্ট করে লিখলাম।
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here