মায়ার_জীবনী #Nadia_Afrin পর্ব:১৩

0
476

#মায়ার_জীবনী
#Nadia_Afrin

পর্ব:১৩

সারহান বাড়িতে পা রেখেই চেচিয়ে চেচিয়ে ডাকতে লাগলো আমায়।
ঘর থেকে আমি জবাব দিলাম,”যা বলবে ঘরে এসে বলো।বাইরে চেচামেচি করা কোন ধরনের ভদ্রতা”?

মায়ের ঘরে ব‍্যাগ রেখে ঘরে এলো সে।

:,,,,,,,,”আমি যা শুনছি,ঠিক শুনছি কী”?

আমি মাথা উচু করে জবাব দিলাম,”জ্বী হ‍্যা”।

সারহান কপালে হাত দিয়ে পেছন ঘুরলো।হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে,বিরাট অন‍্যায় কিছু হয়ে গেছে।

:,,,,,,,,”এতো বড়ো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অন্তত মার সঙ্গে কথা বলে নেবে তো।
এখন বাচ্চা হবে,বাড়তি খাবারের খরচ,এতো এতো পোশাক কিনতে হবে,কদিন পরপর অসুস্থ হবে।ডাক্তার খরচ।
ও মাই গড।এতো খরচ কীভাবে সামাল দেবো আমি।তোমার জন্যই ফকির হবো মায়া”।

আমি অপকটে জবাব দিলাম,”হলে হবে।রাস্তায় ভিক্কার থালা নিয়ে ঘুরবে একটা বাচ্চা পালতেই।লাখ লাখ টাকা ইনকাম যার,একটা বাচ্চা পালার সামর্থ নেই তার”।

:,,,,,,,,”তুমি আর কী বুঝবে মায়া।ইনকাম তো আর করতে হয় না তোমার”।

:,,,,,,,,”দেখো সারহান,তোমার সঙ্গে এইসব প্রসঙ্গে কথা বলতে চাইনা আমি।আমার শরীর টা এমনিতেই ভালো না।তর্কে জড়াতে চাইনা আমি”।

ঘর থেকে রেগেমেগে বেড়িয়ে গেলো সারহান।
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।এ বাড়িতে আসার পর থেকে দীর্ঘশ্বাস আমার নিত‍্যদিনের সঙ্গী।

সন্ধ‍্যায় ঘরে এলো সারহান।
ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাড়িয়ে ঘড়ি পরছে সে।বাইরে যাবে হয়ত।
আমি বিছানায় শুয়ে শুয়ে বই পরছিলাম।
সারহানকে বাইরে যেতে দেখে পিছু ডাকলাম।

:,,,,,,,,”আমার খুব চিকেন গ্রিল খেতে মন চাইছে।তুমি তো বাজারের দিকেই যাবে আড্ডা দিতে।
আসার সময় নিয়ে এসো আমার জন্য”।

সারহান আমার দিকে তাকিয়ে বললো,”এ সময় ওসব খেতে হবে না।সামনে অনেক টাকার প্রয়োজন।
এখন থেকেই সেভিংস করতে হবে”।

আমি ভ্রু কুচকালাম।
:,,,,,,,,”এতোদিন পর এলে তুমি সারহান।বউয়ের জন্য এই সামান্য খরচ টুকু করতে পারবে না।এ কেমন পুরুষ তুমি”?

:,,,,,,,,,”সব সময় এতো খাই খাই ভালো লাগে না কিন্তু মায়া”।

মন খারাপ করে বসে রইলাম।শুনেছি এ সময় মেয়েদের কতো কিছু খেতে মন চায়।আমারো হয়েছে তাই।
ফোনের টোন বেজে উঠলো।
ফোনটা হাতে নিয়ে ফেসবুকে গেলাম।
আমার ফ্রেন্ড নিশিতা মেনশন দিয়েছে আমায়।চেক করলাম।আমাদের বাড়ি থেকে কিছুদূর একটা নতুন রেস্টুরেন্ট খুলেছে।সেখানেই খাবারের ওপর অফার দেওয়া হয়েছে।
বান্ধবী নিশিতা আমায় একটি খাবারের মেনুতে মেনশন দিয়ে বলেছে,চল দোস্ত একদিন খেতে যাই।নিশিতার বাড়ি আবার আমার শশুর বাড়ি থেকে একটি দূরেই।
খাবারের আইটেম গুলো দেখলাম আমি।খুব ইয়াম্মি একটা গ্রিল আছে মেনুতে।
আনমনেই বলে দিলাম,হ‍্যা যাবো একদিন।এমনিতেও আমার খুব গ্রিল খেতে ইচ্ছে করছে।

তারপর ফোনটা রেখে বিছানায় ডান কাত হয়ে শুলাম।
কিছুক্ষণ পর ঘরের দরজায় নক করলো এক ভারাটিয়া চাচি।
দরজা খুলতেই চাচিটি আমার হাতে একটি প‍‍্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বললো,”একটা ছেলে এসে গেটের বাইরে দাড়িয়ে ছিল।তা দেখে আমি এগিয়ে গেলে এই খাবারের প‍্যাকেটটি দিয়ে বললো,মায়াকে জানি দেই এইটা।
তাই নিয়ে এলাম”।

আমি প‍্যাকেটটি হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ থম মেরে দাড়িয়ে রইলাম।
চাচি চলে যেতে নিয়ে আবার ফিরে এসে বললো,”তোমার শাশুড়ি মা ডাক্তারের কাছে গেছে।তুমিতো ঘুমে ছিলে তাই বলেনি তোমায়”।

আমি প্রশ্ন করলাম,
“কেন?তার কী শরীর খারাপ”?

:,,,,,,,”দেখে তো সুস্থই মনে হলো।হয়ত কোনো দরকারে গেছে।আচ্ছা আমি যাই মা,তুমি থাকো”।

আমি দরজা লাগিয়ে বিছানায় বসলাম।
সাইরা,সায়না কচিং এ গেছে।ফিরতে দেরী হবে।

প‍্যাকেটটি খুলে দেখি গ্রিল সহ নানরুটি।
অনেক লোভনীয় দেখাচ্ছে খাবার গুলো।সারহান হয়ত পাঠিয়ে দিয়েছে।

আর কিছুর অপেক্ষা না করে প্লেট এনে খাওয়া শুরু করলাম।
খাওয়ার তালে পুরোটা একাই খেয়ে নিয়েছি।এতো টেস্টি গ্রিল আমি এই প্রথম খেলাম।

খাওয়া শেষে পুরো দু-গ্লাস পানি খেলাম।
খুব শান্তি লাগছে এবার।খেয়ে তৃপ্তি পেয়েছি।।

এবার আমার মনে একটা প্রশ্ন জাগলো।
চাচিমা তো বললো,ছেলেটি প‍্যাকেট নিয়ে বাইরে দাড়িয়ে ছিল।সারহান যদি খাবার গুলো কাউকে দিয়ে পাঠাতো,তাহলে অবশ্যই সোজা বাড়ি এসে আমার হাতে খাবারগুলো দিতো।দাড়িয়ে তো আর থাকতো না।

খাবার গুলো খেয়ে কী আমি ভুল করলাম?
আমার কী কোনো ক্ষতি হবে?
অজানা সঙ্কায় কেপে উঠলো আমার বুক।
পেটে হাত দিয়ে ভয়ে ভয়ে প‍্যাকেটটি নেড়েচেড়ে দেখলাম।
সব তো ঠিকই মনে হচ্ছে।

সারহানকে কী বিষয়টি জানানো উচিৎ আমার?
‘না না থাক।এমনিতেই প্রচন্ড নেগেটিভ মাইন্ড ওর।আবার না অশান্তি শুরু করে।
এর থেকে ভালো বিষয়টি গোপন রাখি।দেখিই না কী হয়।
এই জামানায় শুধু শুধু টাকা খরচ করে কী কেউ বাড়ি বয়ে এসে খাবার দেবে?
হয়ত আমার কোনো সুভাকাঙ্খি।

কেন যেন রায়ানের কথা মনে হলো আজ।
তার কথা আমার মাঝে মধ্যেই মনে হয়।আসলে মানুষ চাইলেও কিছু মানুষকে ভুলতে পারে না।মনের একটি কোণে কোথাও না কোথাও থেকে যায়।

রায়ান ও ঠিক এমনই ছিল।
আমার কোনো কিছু খেতে মন চাইলে যদি মুখ ফুটে ভুল ক্রমেও বলতাম তাও ও এনে আমার বান্ধবীকে দিয়ে পাঠিয়ে দিতো।
নিজের হাত খরচ বাচিয়ে হলেও খাওয়াতো আমায়।

অথচ সারহান!
এতো টাকা ইনকামের পরও মন ছোট তার।
আসলে ধনী হলেই মন বড়ো হয় না।

চলবে,,,,,,,

(বাস্তব জীবনী নিয়ে আমার প্রথম ই-বুক
পড়ুন ই-বই “বিষাক্তময় জীবনী”
https://link.boitoi.com.bd/ndUL)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here