মায়ার_জীবনী #Nadia_Afrin পর্ব:১৫

0
486

#মায়ার_জীবনী
#Nadia_Afrin

পর্ব:১৫

আমার বাচ্চাটা মারা গেছে আজকে চারদিন।
আমি বেচেছি হয়ত আরো দুঃখ ভোগ করতে।
অবস্থা বেগতিক আমার।
বর্তমানে বাবার বাড়িতেই আছি।
সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর ফিরবো না ঐ নরক পুরিতে।
আমার সন্তানের মৃত্যুর জন‍্য সারহানকেই দায়ী করি আমি,যেদিও জান দেওয়ার ও নেওয়ার মালিক আল্লাহ্।

আসলে এই বিষয়গুলো একটু বেশিই সেনসিটিভ হয়।
এগুলো নিয়ে নেগেটিভ কথা বলা উচিৎ না।
সারহান যদি সেদিন এতোটা নেগেটিভ মনোভাব না প্রকাশ করতো তাহলে হয়ত বেচে থাকতো আমার ছোট্ট সোনা।

আমার বাবা নিজে সারহানের সঙ্গে কথা বলেছে।
শুনলাম সারহান নাকি অনুতপ্ত।এবার থেকে সে নাকি আমার সকল সুবিধা-অসুবিধা মেনে চলবে।
তাই বাবাও বোঝাতে লাগলেন আমায়।
আর একবার সুযোগ দিতে বললেন।তার কথা মেনেও নিলাম আমি,যদিও মন থেকে নয়।
আমি এসেছি থেকে দেখছি গুঞ্জন লোটছে।তাই একান্ত মান-সম্মানের ভয়ে বাবা-মা চাচ্ছিলো আমি যেন শেষ বার সুযোগ দেই সারহানকে।

মাসখানিক থাকলাম বাবার বাড়ি।
এরপর ফিরে এলাম আবারো।
এ বাড়ির একটি মানুষের সঙ্গেও আর প্রয়োজন ব‍্যাতিত কথা বলিনা আমি।বলতে ইচ্ছেও করে না।
সারহান নিজে থেকে আসে আমার সঙ্গে ভাব করতে।তবে আমি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি।
বনিবনা তেমন নেই।

সেদিনটি ছিলো রবিবার,
সায়লা আপুর ননদ এলো আমাদের বাড়ি।
শাশুড়িমা ও তার মেয়েরা তখন দাওয়াত খেতে গিয়েছে এক আত্মীয়ের বাড়ি।আমি কিছুটা অসুস্থ থাকায় যাইনি।

মেয়েটার বয়স খুব বেশি না।
আমার ঘরে এনে বসালাম তাকে।যেহেতু বাড়িতে কেউ নেই।

মেয়েটা স্বাভাবিক ভাবে বললো,”আমি এসেছি আরোবি,আরিয়ান আর ভাবী কে নিয়ে যেতে।
ভাই নাকি ভাবী কে আসতে বলেছে,নিতেও এসেছিলো কাল।কিন্তু ভাবী যায়নি।
তাই আমায় পাঠালো মা।

আসলে মায়া ভাবী,আমার মা খুব অসুস্থ।ক‍্যান্সারে আক্রান্ত।ডাক্তার বলেছে,বেশিদিন আর বাচবে না।
মা একদমই হাটাচলা করতে পারে না।বাথরুমে গেলেও নিয়ে যেতে হয় তাকে।
আমার কয়েকমাস আগে সিজারে ছেলে হয়েছে।
তাই আমারও ছোট ছেলে নিয়ে অসুবিধা।
এছাড়াও মাকে গোসল করিয়ে দেওয়া থেকে সব করে দিতে হয়।
সারা শরীরের ভার আমার ওপর ছেড়ে দিয়ে চলাচল করতে পারেন তিনি।
যেহেতু সিজার আমার,তাই চাপ পরলে পেটে খুব যন্ত্রণা করে।
একা হাতে আমি আর পেড়ে উঠছি না।নিজেরও তো সংসার আছে।
ভাবী সারাক্ষণ এ বাড়িতেই থাকে,আমার মাকে দেখাশোনা করার ভয়ে।
বাড়িতে মেয়ে বলতে আমি আর মা ই শুধু।ভাইরা ছেলে মানুষ,মহিলাদের ব‍্যক্তিগত কাজে তো আর আসতে পারেনা তারা।
মার শেষ ইচ্ছা,ভাবী যেন বাচ্চাদুটোকে নিয়ে বাড়ি গিয়ে কিছুদিন থেকে আসে।
ছেলের বংশধর কীনা,তাই টান একটুও বেশি।
সে চাচ্ছিলো,মৃত‍্যুর আগে নাতী-নাতনিদের সঙ্গে সময় কাটাতে।
আসলে ছোট থেকেই বাচ্চাদুটৌকে আমাদের থেকে আলাদা রাখেন ভাবী।
তার মতো তো উচ্চ ফ‍্যামিলির নই আমরা।
ভাই প্রতিবাদ করলে অশান্তি করে।তাই চুপচাপ থাকে সবসময়”।

মেয়েটা থামলো।চোখের পানি মুছে কিঞ্চিত হেসে বললো,”অনেক কথা বলে ফেললাম মায়া ভাবী।কিছু মনে করবেন না প্লিজ”।

আমি মাথা নাড়লাম।মেয়েটাকে বোরখা খুলতে বলে নাস্তা নিয়ে এলাম।

মেয়েটা সবে মাত্র খাবার মুখে তুলবে এমন সময় সায়লা আপুর গলা শুনলাম।
ওকে ঘরে বসিয়ে আমি বাইরে গেলাম।
শাশুড়ি মা রা ফিরেছে।
সায়লা আপুর কাছে গিয়ে বললাম,”আপনার ননদ এসেছে আপু”।

কিছুটা মেকি স্বরে তিনি বললেন,”হুম জানি।এসেছে মায়ের চামচামি করতে”।

এমন সময় মেয়েটি আমার শাশুড়ির ঘরে।সায়লা আপুর কথা হয়ত শুনতে পেয়েছে।মুখ ছোট করে আরিয়ান অর্থাৎ আপুর ছেলেকে কোলে নিয়ে ব‍্যাগ থেকে একটি জুসের বোতল বের করে দিলো।

ফুফুদের ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়।
মনে করে ঠিকই ভাইয়ের ছেলের পছন্দের জুস নিয়ে এসেছে।

:,,,,,,,,”ভাবী আপনায় আমি নিতে এসেছি।
আমার তো আর বাবা নেই যে আসবে।তাই বাধ্য হয়ে আমিই এলাম।মা বাবুদের খুব দেখতে চাইছে”।

:,,,,,,,,”দেখতে চাইছে নাকি গাধার খাটুনি খাটাতে চাচ্ছে?
তোমার অসুস্থ মা,কী কারণে আমায় যেতে বলছে বুঝিনা নাকি আমি?খাটিয়ে মারবে আমায়”।

:,,,,,,,”এসব কী বলছেন আপনি ভাবী?
আপনি যে কদিন আমাদের বাড়িতে ছিলেন,আমার মা কী আপনাকে দিয়ে কোনো কাজ করাতো?
রেধে খাওয়াতো আপনাকে।আমরা কিছু বললে বলতো,বড়োলোক বাড়ির মেয়ে ও।এতো কাজ করার অভ‍্যাস নেই।
মা এখন অসুস্থ তো কী হয়েছে?আমিই আপনাকে রান্না করে খাওয়াবো।তবুও আপনি দুটো দিনের জন্য হলেও চলুন।
আমরা চাই না,মৃত‍্যুর আগে আমার মায়ের কোনো ইচ্ছা অপূর্ণতা পাক”।

এবার আমার শাশুড়ি মা তেতিয়ে উঠে বললেন,”না না।আমার মেয়েকে পাঠাবো না।
ছোট ছেলে আমার মেয়ের।তোমার বুড়ো মা আমার মেয়েকে দিয়ে সেবা যত্ন করাবে।
ওখানে একদম আটকেও দিতে পারে।এমনিতেই আমার জামাইকে তো তোমরা আটকেই রেখেছো।
রেজাউল কে কতো বার বললাম,ঐ বারো মেসে বেড়ামি মা কে ছেড়ে চলে এসো এখানে।
সারহানের সঙ্গে ব‍্যবসায় লাগিয়ে দেই তোমায়।কিন্তু কে শোনে কার কথা!

:,,,,,,,,,,”এসব আপনি কী বলছেন মাঅইমা?
প্রতিটি ছেলেরই দায়িত্ব তার মা-বাবাকে বৃদ্ধ বয়সে ভরণ পোষণ করা।আপনাকেউ তো আপনার ছেলে পালন করছে”।

:,,,,,,,,,”আমি তো আর তোমার মায়ের মতো ঘাটের মরা নই।আর শোনো মেয়ে,বিয়ের পর ছেলের ওপর মায়েদের কোনো অধিকার থাকে না।
ছেলের তখন উচিত,মা-বাবার পিছে এতো খরচ না করে বউকে দেওয়া।
বিয়ের পর বউই সব।ছেলের টাকা কোন সাহসেই বা হাতে নেয় তোমার মা”?

আমি সব শুনলাম।উপস্থিত সকলের সামনে হাত তালি দিতে লাগলাম।সত‍্যি কথা বলতে বিষয়টি খুবই ফানি লাগছিল আমার কাছে।
সারহান ঘরের বাইরেই হয়ত দাড়িয়ে ছিল।
আমায় টেনে নিয়ে ঘরে গেলো সে।

চলবে,,,,,,,,,

2K লাইক চাই।তাহলেই নেক্সট দেবো।রিচ অনেক,কিন্তু বেশি কেউ রিয়েক্ট করে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here