#মায়ার_জীবনী
#Nadia_Afrin
পর্ব:১৬
রাতে সারহান ঘরে এলো।
আমি দাড়িয়ে বিছানা ঝাড়ছিলাম।
আমায় পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“জানো মায়া,বাচ্চাটি হয়ত অনেক লাকি ছিল।
ও চলে যাওয়ার দিনই আমার ব্যবসায় একটি বড়ো সড়ো ক্ষতি হয়েছে।প্রায় হাজার ত্রিশেক টাকা লস খেয়েছি।
খুবই খারাপ লাগছে আমার।এই প্রথম এতোগুলো টাকা লস গেলো”।
আমি পেছন ঘুরে বললাম,”সত্যিই খুব দুঃখজনক”।
এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে চাইনা।বাচ্চার কথা উঠলে আমার মনটা খারাপ হয়ে যায়।সিদ্ধান্ত নিয়েছি,সারহান যেদিন বুঝবে সন্তানের মর্ম বুঝবে,সমাজের কাছে,আপন মানুষদের কাছে যখন তাচ্ছিল্যের স্বীকার হবে সেদিনই ভেবে দেখবো বাচ্চার কথা।মোট কথা সারহানকে আমি ভালো রকমের একটা শিক্ষা দিতে চাই।বুঝুক সে।
আমার ভাবনার মাঝখানে সারহান বলে উঠলো,”তুমি কিন্তু চাইলে আমাকে সাহায্য করতেই পারো”।
আমি হেসে বললাম,”কীভাবে?”
:,,,,,,,,”তুমি তোমার বাবার থেকে লাখ খানিক টাকা এনে দাও আমি ব্যবসায় লাগাই।
শশুরের থেকে তো আর বিশ-ত্রিশ হাজার টাকা নেওয়া যায়না।একটা ছোটলকি ব্যাপার।তাই লাখ খানিক টাকাই নিয়ে দাও”।
আমি কপাল কুচকালাম।একটু বাজিয়ে দেখতে চাইলাম।বললাম,”ঠিক আছে।এনে দেবো।কিন্তু স্ট্যাম্পে সই করে টাকা নেবে,ছয়মাস পর ফিরিয়ে দেবে”।
সারহান অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে বললো,”ধুর পাগল মেয়ে।শশুরের থেকে টাকা নিয়ে কেউ ফিরিয়ে দেয় নাকি?
তোমার বাবা মানে তো আমারও বাবা।”
:,,,,,,,,,”তাই বুঝি?
তা আমার বাবার ছেলে হিসেবে তুমি কোন দায়িত্বটা পালন করেছো?
কিছুদিন আগে যখন আমার বাবা অসুস্থ ছিলো,একবারো দেখতে গিয়েছিলে?
জামাই হিসেবে তোমার তো উচিত ছিলো একবার যাওয়া।
তোমায় তো আমি জানিয়েও ছিলাম।উত্তরে তুমি কী বলেছিলে?
‘হাতে টাকা-পয়সা নেই।এখন যেতে পারবো না।
বড়ো মেয়ের জামাই হিসেবে তোমার দায়িত্ব ছিলো আমার অসুস্থ বাবাকে একবার চোখের দেখা দেখতে যাওয়া।
কিন্তু তুমি যাওনি।
অথচ তোমার সামান্য জ্বর এসেছিলো দেখে আমার বাবা কতো ফল সহ মুখরোচক কতো খাবার নিয়ে দেখতে এসেছিলো তোমায়।
:,,,,,,,,”তুমি কী আমায় খাবারের খোটা দিচ্ছো মায়া?”
:,,,,,,,,”অবশ্যই না।তোমার কথার শুধু সঠিক জবাব দিলাম আমি।
আচ্ছা যাই হোক বাদ দাও।
আমি তো তোমার বউ।তোমার আর্থিক ব্যাপারে কথা বলার রাইট আমার আছে।
আচ্ছা সারহান,তুমি মাস শেষে সব টাকা কী করো?
আমায় তো কখনো ৫০০/১০০০ এর বেশি দাও না।”
সারহান আড় চোখে তাকিয়ে বললো,”হটাৎ এই প্রশ্ন যে?আগে তো কখনো এমন কথা বলোনি।”
:,,,,,,,,,,”এমনি জানতে ইচ্ছে করলো।আগে জানতে চাইনি বলেকি এখনো জানতে পারবো না?”
:,,,,,,,,,”সে জানতেই পারো বউ হিসেবে।মায়ের একাউন্টে সব টাকা দিয়ে দেই।আমার নিজস্ব কোনো ব্যাংক-ব্যালেন্স নেই।সব মায়ের হাতেই থাকে।”
আমি হাসলাম।তারপর বললাম,
“দেখলে সারহান,দুনিয়াতে কতো রকমের মানুষ আছে।এক মানুষের কতো ভিন্ন ভিন্ন রুপ।কতো দ্রুতই মানুষ রং বদলাতে পারে নিজের স্বার্থে।
কিছু কিছু মানুষ স্বার্থের জন্য খুন ও করতে পারে।”
:,,,,,,,,,”ঠিক কী বলতে চাইছো তুমি?কথার মানে বুঝলাম না।”
আমি আবারো উপহাস সূচক হেসে বললাম,”থাক বুঝতে হবেনা।এখন বলো সায়লা আপু গেলো না কেন শশুরবাড়ি?উনার শাশুড়ি তো অসুস্থ।”
:,,,,,,,,,,”সব তো শুনলেই মায়া।তারপরও এ ধরনের কথা বলো কীকরে তুমি?
বুঝেছি,আপুর ননদ মেয়েটা তোমার ব্রেন ওয়াশ করেছে।
শোনো মায়া,মেয়েটা একদমই ভালো না।
আপু তো রিলেশন করে বিয়ে করেছে।যখন বিয়ে হয় তখন রেজাউল ভাইয়ের কোনো চাকরি ছিলো না।আরোবি হওয়ার পর একটা ছোট-খাটো চাকরি হয়।ইভেন ভাইয়ার বেতন এখনো খুব কম।
যখন নতুন নতুন আপুর বিয়ে হয়,ভাইয়া একটা দোকানে কাজ করতো।অল্প টাকা দিয়ে কোনো মতে সংসার চালাতো।
আপুকে কিছু কসমেটিকস কিনে দিয়েছিলো ভাইয়া।
তার এই বোন রিমা মেয়েটা তখন স্কুলে পরতো।মেয়েটা করতো কী,আমার আপুর জিনিস মেখে স্কুলে যেতো।
তুমিই বলো,ভাবীর জিনিস কখনো এভাবে ইউজ করতে হয়?
সায়লা আপু আবার রাগী স্বভাবের।ভাইয়াকে সাফ-সাফ জানিয়ে দিলো,তোমার বোনকে এক সপ্তাহের মধ্যে বিয়ে দিয়ে বাড়ি থেকে বের করবে।নাহলে আমি সংসার করবো না।সে চলে এলো আমাদের বাড়ি।পড়ে নাকি বিয়ে দিয়ে দেয় তারা।
রাগী হলেও আপুর মন বড়ো ছিলো।যেসব জিনিস গুলো আপুর স্কিনে সুট করতো না বা ডেট চলে যেত ঐ সব জিনিস ফেলে না দিয়ে ওর ননদকে দিয়ে দিতো।
তোমার মতো ছোট মনের নয় আমার বোন।
তুমিতো নাকি,আমার বোনরা তোমার কসমেটিকস নেওয়ায় ঘর ভর্তি মানুষের সামনে কইফিয়ত চাইছিলে।”
মাথায় যেন আগুন চাপলো আমার।
তবুও নিজেকে সংযত রাখার চেষ্টা করলাম।
:,,,,,,,,,”প্রথমত রিমা আমার ব্রেন ওয়াশ করেনি।মেয়েটা খুবই ভালো স্বভাবের।
আর তুমি শেষে কী বললে?
আমার মন-মানসিকতা ছোট?
তাহলে শোনো,আজ যে তোমার বোনরা দাওয়াত খেতে গিয়েছিল।জামা,কসমেটিকস থেকে শুরু করে সর্নের আংটি চেইন সবই আমার ছিলো।
তুমি হয়ত জানো আমার দুই চাচা বিদেশ থাকে।
বড়ো মেয়ে হওয়ায় এবং সেসময় তারা আনমেরিড হওয়ায় প্রতি বছর বিদেশ থেকে আমার জন্য উন্নত মানের অনেক জিনিস পাঠাতো।দামী কসমেটিকস সহ কতো কী।বিয়ের পর বেশিরভাগ কসমেটিকস সহ ড্রেস নিয়ে এসেছি এ বাড়িতে।যা প্রতিদিন তোমার বোনরা কলেজ যাওয়ার সময় ইউজ করে।কই,আমি তো কখনো তাদের কিছু বলিনি।
এবং প্রায় প্রতিদিন কলেজ যাওয়ার সময় আমার থেকে বিশ-ত্রিশ-পঞ্চাশ টাকা করে চেয়ে নেয় দুজনে।
খুশি মনেই তো দেই আমি।বড়ো ভাবী হিসেবে দেই অবশ্যই।
টাকা গুলো কিন্তু বেশিরভাগই আমার বাবার দেওয়া।
যখনই বেড়াতে যাই আমি,বাবা তিন-চার হাজার করে টাকা হাতে দিয়ে দেয়।
ঈদে যখন তুমি অল্প টাকা দিলে শপিং এর জন্য তখন সাত হাজার টাকা কে ভরেছিলো তোমাদের শপিং এ?
আমি দিয়েছিলাম।”
সারহান আমার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললো,”সব কথায় এতো নেগেটিভ মানে বের করো কেন মায়া?
ভাবী হয়ে তোমার তো দায়িত্ব ননদদের বোনের নজরে দেখা।”
:,,,,,,,,,”তুমি আমায় ছোটমনের,ছোটলোক বলবে!আর আমি প্রতিবাদ করবো না?
শুরু থেকেই তোমার বোনদের আমি ভালো নজরেই দেখি।আপন মনে করি।
কিন্তু তুমি কী করো?তুমি কখনো নিজের দায়িত্ব পালন করেছো?
যেখানে ঈদে আমার বাবা তোমায় শপিং করার জন্য ১০ হাজার টাকা দিলো,সেখানে তুমি কী দিলে আমায়।
৬০০ টাকা দামের একটি থ্রিপিছ।
নিজের সংসার ভেবে উজাড় করে দেই আমি সব।আর বিনিময়ে পাই শূন্য থালা।
আমার বোন ঈদের দুদিন পর বেড়াতে এসেছিলো এই বাড়ি।এতো টুকু কমনসেন্স তো তোমাদের থাকার কথা ছিল,যে নতুন আত্মীয় প্রথম বার বাড়ি এনে সম্মানি দিতে হয়।
সেটাও তো মাথাতে ছিলো না তোমাদের।দেখেও তো শিখতে পারো।তোমার ফ্যামিলি থেকে যখন আমায় নিতে গিয়েছিল তখন তো আমার বাবা জামা,জুতা হিজাব সব দিয়েছিল।
কিন্তু তোমরা কী করলে?
শেষ পর্যন্ত আমার একমাত্র বোনকে আমি নিজের টাকা দিয়ে জামা কিনে দিলাম।
এই তোমরা উচ্চবিত্ত পরিবার,কোটি টাকার মালিক।”
সারহান তেতিয়ে উঠে বললো,”এই জন্যেই তোমার সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করেনা আমার।
সব কথায় নেগেটিভ মানে বের করে উল্টাপাল্টা কথা বলো।
জীবনে কোনো দিনও সঞ্চয়ী হবে না তুমি।নিজের ভবিষ্যৎ তো ডোবাবেই,সঙ্গে আমার টাও।
মা ঠিকই বলে,বউয়ের হাতে টাকা দিলে এতোদিনে আমি পথের ফকির হতাম।অবশ্য তোমায় দেবোই বা কেন?
ছেলের টাকার ওপর শুধুমাত্র মায়ের অধিকার।
আর শোনো মায়া,এভাবে চললে তোমার ভবিষ্যৎ অন্ধকার।”
আমি সামান্য হেসে বললাম,”আমার ভবিষ্যৎ সত্যিই অন্ধকার।”
চলবে,,,,,,?