মায়ার_জীবনী #Nadia_Afrin পর্ব:১৭

0
608

#মায়ার_জীবনী
#Nadia_Afrin

পর্ব:১৭

সারহান চলে গেছে কাল।
আমি বাড়ি ফিরে নিজের ঘরে ফ‍্যান ছেড়ে বসলাম।বাইরে ভ‍্যাপসা গরম।
শরীর যেন জ্বলে ওঠে।
ফ‍্যানের ঠান্ডা বাতাসে শরীর আমার শিতল হলো।
শাশুড়িমার সঙ্গে ব‍্যাংকে গিয়েছিলাম।সারহান টাকা পাঠিয়েছে।কিন্তূ কী জানি সমস্যা হওয়ায় এবং সায়মারা বাড়িতে না থাকায় আমায় নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
পড়াশোনা জানা আমি,সাহায‍্য করলাম তাকে।
এ‍্যাকাউন্ট লক হয়ে গেছিলো।

মাথায় থাকা হিজাবটি খুলে পিন গুলো গুছিয়ে রাখলাম।
চুলটা বেধে নিয়ে আয়নায় সুক্ষ দৃষ্টি ফেললাম।আজকাল কেমন যেন লাগে আমায়।উস্কো-খুস্কো,এলোমেলো।

নিচ থেকে কারো আহাজারির শব্দ পেলাম।
ঘর থেকে বের হতেই দেখলাম,চাচাতো সেই জা অর্থাৎ
রাহিমা ভাবীর শাশুড়ি কাদতে কাদতে সিড়ি বেয়ে উঠছে।
আমার সামনে এসে থামলো তিনি।

সুধালাম,”কী হয়েছে চাচিমা?কাদছেন কেন?”

:,,,,,,,,,”আর বইলো না গো মা,আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে।
আমার ছেলেটার এ‍্যাক্সিডেন্ট হয়েছে।আমার একটাই ছেলে মা।বাচার একমাত্র অবলম্বন।
অবস্থা বেশি ভালো না ছেলের।রাহিমা তাড়াহুড়ো করে বাচ্চা নিয়ে হাসপাতালে গেছে।
মাত্র কল দিয়ে বললো,হাজার দশেক টাকা নিয়ে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে যেতে।
আট হাজার টাকা জোগাড় করছি।আর বাকি দুইহাজার টাকা পেলাম না কারো কাছে।
তোমার শাশুড়ি কোথায় মা?”

আমি জবাব দিলাম,”পাশের ঘরেই আছে।আপনি যান।”

তিনি শাশুড়িমার ঘরে গেলেন।পিছু পিছু আমিও গেলাম।

:,,,,,,,”সারহানের মা,আমায় দুইটা হাজার টাকা ধার দাও দয়া করে বোন।ছেলে আমার হাসপাতালে।
বউমা ফিরলেই টাকা শোধ দিয়ে যাবো।
একটু দয়া করো।”

শাশুড়িমা সোজাসাপ্টা জবাব দিলেন,”আমি পারবো না।টাকা নেই আমার কাছে।”

অথচ আজকেই সংসার খরচের টাকা উঠিয়ে এনেছেন তিনি।

আমি বললাম,”দিন না মা।চাচিমা তো বলছেই,ভাবী আসলেই ফেরত দেবে।তারা তো খুব বিপদে পড়েছে মা।”

:,,,,,,,,”তোমার এতো টান লাগে তো তুমি দাও না মায়া।
যত্তোসব ঝামেলা এসে চাপে আমার ঘাড়ে।”

চাচিমা কাদতে কাদতে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো।আমি তড়িঘড়ি নিজের ঘরে গিয়ে আমার জমানো টাকা থেকে দুইহাজার টাকা বের করে চাচিমার হাতে দিয়ে বললাম,”নিন এই টাকাটা।চিন্তা করবেন না,এটা আমার জমানো টাকা।আপনি হাসপাতালে যান দ্রুত।
আর খবরাখবর জানিয়েন।”

তিনি চোখে জল মুখে হাসি নিয়ে বললো,”আল্লাহ তোমার ভালো করবে মা।এই উপকার আমি কোনো দিনও ভুলবো না।”

চলে গেলেন তিনি।আমি মনে মনে বললাম,নিজেদের আত্মীয়দের ও সাহায্য করে না।এ কেমন মানুষ।
কেমন যেন এক ঘর টাইপের।
ভেতরে কোনো দয়া-ভালোবাসা নেই।মানুষ তো বিপদে পরেই আসে।শুধু শুধু তো আর কেউ সাহায্য চাইতে আসে না।

চুলোয় রান্না বসালাম।সায়লা আপুর মেয়ে আরোবি এলো কিচেনে।
এসে আমায় বললো,ওর জন্য নুডলস রান্না করে দিতে।
আমি রান্না করে দিলাম।মেয়েটা খুবই চঞ্চল।

মেয়ের কথাই উঠলো যখন তখন একটি ঘটনা শেয়ার করি।
আমার বিয়ের তখন ছয়মাস পার হয়েছে।একদিন দুপুরে বাচ্চাগুলো আমার ঘরে এলো।আরোবি কোলে নিয়ে এসেছে আরিয়ানকে।
আমি আবার বেশ শৌখিন।ঘরে অনেক সুন্দর সুন্দর শৌপিছ এনে সাজিয়েছি।
বাচ্চা দুটো বিছানায় বসে সেগুলো নিয়ে মাঝে মধ্যেই খেলে আমার ঘরে।

আমি বাথরুমে ছিলাম।
হটাৎ বাচ্চাগুলোর কান্নার শব্দ শুনে বাথরুম থেকে বেড়িয়ে এলাম।
আরোবি কোনো কারণে আরিয়ানকে মেরেছে।ছেলেটা কাদছে দেখে কোলে নিলাম।

সায়লা আপু এসে বললো,”কী হয়েছে?আরিয়ান কাদছে কেন?তুমি কিছু বলেছো আরোবি?”

আরোবি ততলিয়ে বললো,”না মাম্মা।আমি না,মামি মেরেছে আরিয়ানকে।মামির শৌপিছ নিয়েছে তাই মেরেছে।আমায় ও তো মেরেছে।”

আমি চমকালাম।চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালাম আরোবির কথা শুনে।
সায়লা আপু চেচামেচি লাগি দিলো।
এতোটুকু বাচ্চাযে এমন মিথ্যে কথা বলতে পারে জানা ছিলো না আমার।
সবই পরিবারের দেওয়া শিক্ষার ফল।ছোট বাচ্চা হয় এক দলা কাদার মতো।কাদা যেমন আপনি যা ইচ্ছে শেইপে গড়তে পারেন,তেমনি বাচ্চাকে যেই শিক্ষা দেবে তাই শিখবে।
চোখের সামনে মা,নানীকে মিথ্যা বলতে শুনে বাচ্চাটাও এমন হয়েছে।

আমি সায়লা আপুকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলাম।কিন্তু বুঝলেন না তিনি।তার একটাই কথা,আমার মেয়ে কখনো মিথ্যা বলতে পারে না।

ভাবনার মাঝখানে ছেদ পরলো ফোনের রিংটোন কানে আসায়।
পাশ থেকে ফোনটি হাতে নিতেই দেখলাম, রিমা অর্থাৎ সায়লা আপুর ননদ কল দিয়েছে।
ফোনটা রিসিভ করতেই ওপর প্রান্ত থেকে কান্নার আওয়াজ পেলাম।

:,,,,,,,”আমার মা মাত্র মারা গেছে মায়া ভাবী।শুনলাম ভাবী নাকি আমার ভাইকে কল দিয়ে বলেছে,আমার মায়ের গহনার ভাগ নিতে আসছে সে।
শোনের মায়া ভাবী,আমি বলে দেই’
ভাবী যদি আমাদের বাড়িতে আসে গহনা নিতে তাহলে,ঘার ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবো।
আমার মাকে একটা বারো দেখতে এলো না পাষাণটা।এমনকি বাচ্চাগুলোকেও পাঠালো না।
জানেন,আমার মা মৃত্যুর আগে বার বার বাচ্চা দুটোর নাম নিয়েছে।কিন্তু পায়নি।মা আমার আক্ষেপ নিয়েই মারা গেলো।
ভাই চেয়েছে ভাবীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি করবে,কিন্তু বাচ্চাদুটোর কথা ভেবে বুঝিয়েছি আমরা।
আচ্ছা ভাবী রাখি।আপনাকে কথা বলার কারণ গুলো হলো,আপনার যে শাশুড়ি!আমার সঙ্গে লাগতে আসবে আবার।মায়ের জন্যই মেয়ের এমন দশা।দেখবেন,একদিন এদের উপযুক্ত শাস্তি হবে। ”

কল রেখে আমি পানি পান করলাম।
মহিলাটির জন্যে অনেক দোয়া করে দিলাম।সায়লা আপুর শশুর বাড়ি বেশ দূরে।
বাসে জার্নি করতে হয়।
আমার শরীর এখনো পুরোপুরি সুস্থ নয়,তাই যেতে পারলাম না বাসে করে।
প্রাইভেট কার সারহান নিয়ে গেছে।

সায়লা আপু ও তার ছেলে মেয়ে সত্যি সত্যি যাচ্ছে।শাশুড়ি তাকে শিখিয়ে দিচ্ছে,সব গহনা নিয়ে আসবি হিসেব করে।শাশুড়ির গহনা সবসময় বউমাদের হয়।

আমি ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললাম,”ওনার তো আরেকটি ছেলে আছে,মেয়ে আছে।যদি বড়ো ছেলের বউকেই সব দিয়ে দেয় তাহলে তো অন‍্যায় হবে।”

:,,,,,,,”সব কথায় এতো নাক গলাও কেন মায়া।নিজের কাজে মন দাওনা।
ঠিক-ভুল বিচার করতে হবে না তোমার।
আর অন‍্যের ব‍্যাপারে মাথা ঘামানো বন্ধ করো।”

আমি আর জবাব দিলাম না।
এ বাড়ির মানুষগুলোর সঙ্গে এই কারণেই কথা বলতে ইচ্ছে হয়না আমার।
আর সারহান,তার সঙ্গে তো কথা বলতে মাঝে মধ্যে রূচিতে বাধে।
প্রতিবাদ করার জন‍্য প্রতিপক্ষের মানুষের একটু সামান্য জ্ঞান থাকা দরকার।এ বাড়ির কোনো মানুষের মধ্যে তা দেখিনা আমি।
তাই আর প্রতিবাদ কী,ঠিক মতো কথাও বলিনা।নিজের মতোই থাকি।
জানিনা আমি মুক্তি পাবো কীনা।
দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো আমার।

চলবে,,,,,,,,,

(আগামীকাল শেষ পর্ব পোস্ট করা হবে।শেষটা ইনশাআল্লাহ সবার মনের মতো হবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here