মায়ার_জীবনী #Nadia_Afrin পর্ব:৮

0
587

#মায়ার_জীবনী
#Nadia_Afrin

পর্ব:৮

আকাশে আজ হালকা মেঘ করেছে।পাহাড় সমান মন খারাপ নিয়ে ছাদের এক কোণে দাড়িয়ে আছি আমি।
দৃষ্টি আকাশ পানে স্থায়ি।
হারানো সেই দুলজোড়া আলমারিতেই ছিল।
কাপড়ের নিচে শাড়ির মাঝখানে ছিল সেটি।ঠিক মতো না খোঁজার ফলে পাইনি।
সারহানের সঙ্গে আর কথা হয়নি আমার।কথা বলার ইচ্ছেও হয় না।
সকাল থেকে মাথাটা কেমন ভার ভার লাগছে।
ঘরে গিয়ে বিছানায় শুলাম।কিছুক্ষণের মধ্যে জ্বর চলে এলো আমার।

সারহান বাড়ি ফিরে এই দিন দুপুরে কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে এলো।কপালে হাত দিয়ে জ্বর চেক করলো।

:,,,,,,,”একি মায়া!তোমার তো খুবই জ্বর”।

আমি কোনো জবাব দিলাম না।চুপচাপ চোখ বুজে রইলাম।

সারহান তার মাকে ডেকে আনলো ঘরে।
শাশুড়িমা আমাকে কিছু সাধারণ ঔষধ খাইয়ে দিয়ে ঘুমাতে বললো।

তার কথা মতো তাই ই করলাম।
ঘুমে চোখ লেগে এলো।সারহান বাইরে চলে গেছে।
হটাৎ আমার ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো।
ঘুম ঘুম চোখে ফোন তুললাম।কল রিসিভ করে হ‍্যালো বলতেই কল কেটে দিলো।
আমি বিষয়টি না বুঝেই ফোন রেখে দিলাম যথাস্থানে।
জ্বরের ঘোরে আর এসব নিয়ে ভাবতে ভালো লাগছে না।

এরপর দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো।জ্বর আমার কমলো না।
সারহান তার মাকে বললো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে।
শাশুড়ি মা বললেন,ছোট খাটো বিষয় নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।শুধু শুধু টাকা খরচ হবে।

এদিকে আমার অবস্থা নাজেহাল।জ্বর ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো।
বমি করে টায়ার্ড হয়ে গেলাম।তাও কেউ ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছে না।
শাশুড়িমা দুপুরে দেওয়া ঔষধ গুলো আবার আমায় খেতে বললো।

আমি বিরক্ত হয়ে আমার মাকে কল দিলাম।
মা আমার এক দূর সম্পর্কের চাচাতো ভাইকে নিয়ে শশুর বাড়িতে এলো।

শাশুড়িমা আমার মাকে দেখা মাত্র বললো,”মায়াকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে চাইলাম কিন্তু সে গেলো না”।

মা আমার মাথার কাছে বসলো।

:,,,,,,,”মায়া মা,এতো অসুস্থ তুমি।ডাক্তারের কাছে যাওনি কেন “?

আমি মাকে জড়িয়ে ধরলাম।শাশুড়িমা সামনেই দাড়িয়ে।
মা আমায় নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলো।
চেকআপ করে ঔষধ সঙ্গে করে নিয়ে এলো।
ঔষধ খাইয়ে দিয়ে বিছানায় শুয়ে দিল।

প্রায় ঘন্টাখানিক পর কিছুটা বেটার ফিল করলাম।
উঠে নিচে গেলাম খাবারের ব‍্যবস্থা করতে।আমার মা এসেছে থেকে সামান্য নাস্তা টুকু ও দেয়নি তারা।

নাস্তা রেডি করে ঘরের দিকে আসতে যাবো এমন সময় দেখলাম আমার সেই চাচাতো ভাই সায়মার সঙ্গে ইশারায় কী যেন বলছে।
চাচাতো সেই ভাইয়ের নাম রাজন।
রাজনকে ডেকে ঘরে নিয়ে এলাম।
আমার বয়সে কিছু মাসের বড়ো সে।তবে একে অপরকে নাম ধরেই ডাকি।

তাদের খেতে দিলাম।খাবার শেষে কিছুক্ষণ বসে,বিদায় নিল তারা।

পরদিন সকাল হতেই দেখি নিচতলার ফার্নিচার সব চারতলায় আনা হচ্ছে।
এর কারণ জিজ্ঞেস করলে সায়মা বললো,বাড়িতে মানুষ আসবে।

দুপুর হতেই বাড়িতে লোক আসা শুরু হলো।
জানতে পারলাম এরা সব ভাড়াটিয়া।
তিন তলা পযর্ন্ত নাকি ডাড়াটিয়ারা থাকবে।
চার তলায় আমরা থাকবো।

মনে মনে ভাবলাম,বাড়ি যেহেতু খালি পড়েই থাকে সুতরাং ভাড়া দেওয়াটা খুব একটা খারাপ হবেনা।
যদিও একই বাড়িতে ভাড়াটিয়া সহ আমরা থাকা কিছুটা সমস্যা হলেও হতে পারে।

রাতে আবারো কল এলো আমার ফোনে।
নাম্বার চেনা নয় দেখে কিছুটা ভাবলাম।
তারপর কল রিসিভ করে হ‍্যালো বলতেই আবারো কেটে দিলো কল।
আমার সাথে কী কেউ মজা নিচ্ছে?
নাম্বারের লাষ্ট ডিজিট আর সায়মার নাম্বারের লাষ্ট ডিজিট এক।সায়মার নাম্বার সেভ নেই আমার ফোনে।তবে লাষ্ট ডিজিট মনে ছিল।

তাহলে কী সায়মাই মজা করছে আমার সঙ্গে?

সরাসরি জিজ্ঞাসা করতে হবে।
তখনই সায়মার ঘরের দিকে গেলাম আমি।
দরজার সামনে দাড়িয়ে পর্দা সরাতেই দেখলাম,রাজনের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলছে সে।দরজার দিকে মুখ করে বসে ছিল বিধায় খুব ভালো করেই দেখতে পেলাম রাজনকে।

আমায় হয়ত পেছনে দেখতে পেলো রাজন।তড়িঘড়ি কল কাটলো সে।

সায়মা পেছন ঘুরে আমাকে দেখতেই ঘাবড়ে গেলো।

:,,,,,,”এ কেমন বেয়াদবি ভাবী।আমার ঘরে নক না করে ঢুকেছো কেন তুমি?ম‍্যানারস নেই কোনো”?

আমি শান্ত ভঙ্গিতে দাড়িয়ে বললাম,”আমার না হয় ম‍্যানারস নেই।তোমার তো খুব ম‍্যানারস,তাহলে তোমার ভাই আর আমি ঘরে একা থাকার সময়ও নক না করে ঢুকে পড়ো কেন তুমি”?
তুমিতো প্রতিবারই এমন করো।আমি না হয় প্রথমবার এমন করলাম।

সায়মা প্রতিউত্তর দিলো না আমার কথার।
বিছানা ছেড়ে নেমে বললো,”কীসের জন্য এসেছিলে বলো”।

নিজের কল লিষ্ট থেকে নাম্বারটি বের করে সায়মার সামনে ধরে বললাম,”এইটা তোমার নাম্বার “?

সায়মা নাম্বারটি পরক্ষ করে বললো,”না তো।এটা আমার নাম্বার না।কেন কী হয়েছে “?

আমি কোনো জবাব দিলাম না।
নিজের ঘরের দিকে চলে আসতে নিলাম।
হটাৎ থেমেও গেলাম।পেছন ঘুরে সায়মাকে বললাম,রাতের খাবার খেয়ে আমার ঘরে আসবে তুমি।
কথা আছে তোমার সঙ্গে।

ঘরে গিয়ে মাকে কল দিলাম।
মা কল রিসিভ করলো সঙ্গে সঙ্গে।
বললাম,”তুমি এ বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য আর কাউকে পেলে না?
শেষ পর্যন্ত কীনা রাজনকে নিয়ে এলে”।

:,,,,,,”আর বলিস না মা,তুই ফোন দিয়ে তোর অসুস্থতার কথা বলতেই চিন্তা শুরু হয় আমার।
মিরা তো সেই সময় কচিং এ ছিল।তোর বাবা কাজে।
রাজনকে দেখলাম রাস্তা দিয়ে যেতে।তাই তড়িঘড়ি ওকে নিয়েই চলে এসেছি।হাতের কাছে ওকেই পেয়েছিলাম সেই সময়।
কেন মা,কিছু কী হয়েছে”?

:,,,,,,”না মা,তেমন কিছু হয়নি।আচ্ছা আমি রাখছি”।

কল রেখে সোফায় বসলাম আমি।
বিষয়টি খুবই চিন্তার।
রাজন ছেলেটি খুব বেশি ভালো নয়।এই বয়সে এর আগে একটি বিয়েও করেছিল লুকিয়ে।
তবে সংসার হয়নি।কর্মহীন, বেকার,চরিত্রহীন ছেলের সঙ্গে কেই বা মেয়ে রাখবে।
এলাকার অনেক মেয়ের সঙ্গেই তার সম্পর্ক শুনেছি।

সায়মা যদি রাজনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে, ব‍্যাপারটি খুব ভালো হবে না সায়মার জন্য।
আমার কী সারহানকে জানানো উচিৎ?

না থাক।আজকে সায়মার সঙ্গে আমি নিজেই কথা বলে দেখি।এরপরও যদি এমন করে তারপর নাহয় জানাবো সারহানকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here