মাস্টারমশাই পর্ব ১৩

0
290

মাস্টারমশাই
পর্ব ১৩
শুভজিৎ জানা
______________
রোদের মধ্যে ঘন সন্নিবিষ্ট ভাবে খেতে বসেছে তারা। রঘু খাবার পরিবেশন করে তাদের সঙ্গে খেতে বসলো। আজ অনেকগুলো বছর পর মাস্টারমশাই সবার সঙ্গে খেতে বসেছেন। তাঁর ভরা সংসার কবে থেকে হারিয়ে গেছে। সেদিন থেকে একসঙ্গে বসে খাবারের আশা ত্যাগ করেছিলেন। এই মরুভূমির মধ্যে তিনি যে জল পাবেন তা ভাবতে পারেননি। খুশিতে আত্মহারা। দুপুরের রোদ প্রখরভাবে কিরণ দিচ্ছে। মাস্টারমশাই বললেন তাড়াতাড়ি খেতে, ভাত শুকনো হয়ে যাচ্ছে। শুকনো ভাত খাওয়া উচিত নয়। দুজনের জন্য রান্না করা হয়েছিল, তাই সবাইকে অল্প অল্প করে খাবার নিতে হলো। যদিও এতে কেউ অনীহা প্রকাশ করল না। একা অনেকগুলো ভাত খাওয়া থেকে অল্প অল্প করে মিলেমিশে সবাই খাওয়া অনেক ভালো। এত বছরের পর মাস্টারমশাইয়ের সঙ্গে পরিচয় হলেও, কাবেরীর মধ্যে একটা চাপা ভয় রয়েছে। মাস্টারমশাইয়ের সে-ই উজ্জ্বল মুখমন্ডল নেই। গায়ের চামড়াগুলো শুকনো হয়ে ঝুলে পড়েছে। বার্ধক্যের করুন অবস্থা পুরোপুরি স্পষ্ট। কাবেরী যদি কোনো ভুল করে, তিনি এখন নিশ্চয়ই তাকে মারবেন না। তাকে শাস্তিও দেবেন না। তবুও ভয় পাচ্ছে। এই ভয়ের কারণ কি সে জানে না। হয়তো, ছোটবেলার শাসন এখনো মনে পড়ে। এখনো সে মিস করে মাস্টারমশাইয়ের গাম্ভীর্য মুখমন্ডলকে। মাস্টারমশাইয়ের সঙ্গে নাড়ির সম্পর্ক নেই ঠিকই কিন্তু ছোটবেলায় এক অদৃশ্য সম্পর্কের মেলবন্ধনে জড়িয়ে রয়েছে। সেই সম্পর্ক ছিঁড়ে বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়। তাই সে ভয় পাচ্ছে। মাস্টারমশাইকে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু পারছে না। আবার প্রশ্ন না করে নিজেকে শান্ত রাখতে পারছে না। এক সময় সে এক বুক সাহস নিয়ে বলল,’মাস্টারমশাই, রোদে বসে খাওয়ার মুগ্ধতা সত্যি আলাদা,তাই না!’
তিনি কাবেরীর চোখের দিকে তাকালেন। তার চোখ দুটো ছল ছল করছে। জলভর্তি দুটো চোখ কিছু একটা বলতে চাইছে। যেন অনেকদিন ধরে তার বুকের মধ্যে ওই কথাগুলো লুকিয়ে আছে। মাস্টারমশাই তাকে আশ্বস্ত করলেন। শান্ত হতে বললেন। কাবেরী একটা জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে বলল,’জানেন মাস্টারমশাই, আমি শেষবার রোদে বসে পান্তা খেয়ে ছিলাম শুভজিৎ এর সঙ্গে। কখনো ভাবিনি যে ওই খাবার ছিল আমার শেষবারের মতো রোদে বসে খাওয়া। সারাটা দিন কত আনন্দ করে কাটিয়ে দিয়েছিলাম আর সকালটা….. বাবা আমাকে ভুলিয়ে শহরে নিয়ে গেছিল। কিন্তু বাবা তাঁর কথা রাখেননি। বাবার উপর খুব রাগ অভিমান হয়েছিল। কিন্তু কি অদ্ভুত!সেই রাগ অভিমান আমার কাছে বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। কিছুদিনের মধ্যে আমি শুভজিৎ কে ভুলে যাই। গ্রামের মতো কিন্তু শহরের জীবন যাপন নয়। শহরের জীবন যাপন সম্পূর্ণ আলাদা। সেখানে একে অন্যের খবর কেউ রাখে না।শহরের ব্যস্ততা আর ফ্যাশনে আমিও এক সময় হারিয়ে যাই। আমার জীবনে শুভজিৎ বলে কেউ ছিল, তাও ভুলে যাই। মাঝেমধ্যে তার কথা মনে পড়তো, কিন্তু ক্ষণিকের জন্য। আজ এত বছর পর যখন গ্রামে ফিরলাম, তখন তার স্মৃতি মনের মধ্যে নাড়া দিয়ে উঠলো।’
কাবেরী চোখ থেকে জল বেয়ে পড়ছে। রঘু একবার মাস্টারমশাই একবার কাবেরীর দিকে তাকাচ্ছে। সে কিছু বলছে না। এত জটিল সম্পর্কে জড়াতে চায় না। মাস্টারমশাই মুখ উঁচু করলেন। তিনি কাবেরীর মাথায় হাত বোলিয়ে বললেন,’ পুরনো স্মৃতি মনে করিস না। মানুষের জীবনে অতীত থাকা ভালো। অতীতকে মনে করাও ভালো। কিন্তু অতীতকে নিয়ে পড়ে থাকা ভালো নয়।’
একটু থেমে আবার বললেন,’অনেকে বলে দূরত্ব ভালো জিনিস। দূরত্ব ভালোবাসা বাড়ায়। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি না। দূরত্ব খারাপ জিনিস। মায়া কমিয়ে দেয়, ভালোবাসা কমিয়ে দেয়।যা বাকি থাকে তা হলো ফর্মালিটি।শুভজিৎ তোর জীবন থেকে দূরে চলে গেছে,তাই সে আজ অতীত হয়ে গেছে।যদি কাছে থাকতো তাহলে তাকে ঘিরেই তোর বাস্তব জীবনটা গড়ে উঠতো।’
থামলেন। ইতিমধ্যে তাদের খাওয়া শেষ হয়ে গেছে। হাতমুখ ধুয়ে তিনি রোদে চেয়ার নিয়ে গিয়ে বসলেন। কাবেরী রঘুকে থালা-বাসন পরিষ্কার করতে সাহায্য করল। তারপর সে মাস্টারমশায়ের কাছে গিয়ে বসলো।আর রঘু নিজের কাজে মগ্ন হল। তিনি খুব ভালোভাবে কথা বলছেন।যেকোনো ভাবে হোক মাস্টারমশাইয়ের অতীত জানতেই হবে। কিন্তু মাস্টারমশাইয়ের অতীত জেনে, কাবেরীর লাভ কি? অবশ্যই লাভ আছে। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, কেঁচো খুলতে গেলে সাপ বের হয়।এমনটাও হতে পারে মাস্টারমশাইয়ের অতীত জানতে গেয়ে, শুভজিৎ এর মৃত্যুর রহস্যর উন্মোচন হতে পারে। সে এখনো মনে করে শুভজিৎ আত্মহত্যা করেনি, তাকে খুন করা হয়েছিল। হয়তো, এতদিনের পর শুভজিৎ এর খুনিকে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া যাবে না, কিন্তু জানতে তো পারা যাবে কে খুন করেছে? মাস্টারমশায়ের পাশে বসতেই, মাস্টারমশাই তার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বললেন,’তারপর বল, তুই কেমন আছিস? এতগুলো বছরের পর গ্রামে আসার কারন কি?’
‘তেমন কোনো কারণ নেই। গ্রামের পুরনো বাড়িটা পড়ে রয়েছে। ওটা বিক্রি করতে গ্রামে এসেছি।’
কাবেরীর কথা শুনে মাস্টারমশাই তাচ্ছিল্য করে হাসলো। কাবেরী যেন কোনো হাসির কথা বলেছে। কাবেরী ভীষণ রকমের অবাক হল। সে কিছু বলতে চাইছিল। তার আগেই মাস্টারমশাই বললেন,’আজকাল ছেলে মেয়েরা যদি বেশি দাম পায় তাহলে তার বাবা-মাকেও বিক্রি করে দেবে।’
‘মাস্টারমশাই!’ কাবেরী খুব তাড়াতাড়ি রেগে বলল। মাস্টারমশাই দ্বিতীয়বার তাচ্ছিল্য করে হাসলেন। তারপর গলা খাঁকরে বললেন,’জানি,শুনতে বিচ্ছিরি লাগছে। কিন্তু বর্তমানে বাস্তবটা এমন। টাকার কাছে মানুষ বড় অসহায়। টাকার জন্য মানুষ ঘরবাড়ি সব কিছু বিক্রি করে দেয়। কেউ টাকার জন্য নিজের দেহ বিক্রি করে দেয়। আবার কেউ দু’মুঠো অন্নের জন্য নিজের দেহ বিক্রি করে দেয়।’
কাবেরী মাথা নীচু করল। মাস্টারমশাই বৃদ্ধ হয়েছে। যৌবন হারিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু নিজের চিন্তা ধারার বিসর্জন দেননি। উনার চিন্তাধারার এখনো সম্পূর্ণ আলাদা। তিনি অন্য রকমের এক মানুষ। কঠোর আঘাত তাঁকে বদলে দিতে পারেনি। তিনি শান্ত গলায় বললেন,’ জানিস,অনেক আগে গ্রামে এক বার যাত্রা হয়েছিল। ওই যাত্রায় একটা কবিতা ছিল…..’
মাস্টারমশাই কিছু বলার আগেই কাবেরী মাস্টারমশাইয়ের কথা আটকে বলল,’ওই কবিতাটি আমার খুব মনে আছে। শুভজিৎ আমার কানের কাছে বারবার সেই কবিতাটি বলেতো। কি করে ভুলতে পারি ওই কবিতা! উড়ছে টাকা ছুটছে মানুষ……..’
মাস্টারমশাই মৃদু হেসে বললেন,’সেই কবিতার সাথে আমাদের বাস্তব জীবন অনেকটা জড়িয়ে আছে। সুখ খুঁজতে গিয়ে কখন যে আমরা নিজেদের শান্তিতে কাটানো জীবন হারিয়ে ফেলি,তা আমরা কখনো ফিরেও দেখি না। তুই আমার ছেলে মেয়ের কথা ভাব, আমাদের দেশে কি কাজের অভাব আছে? কাজ আছে কিন্তু অর্থ কম। অর্থের পিছনে ছুটতে গিয়ে নিজের বৃদ্ধ বাবাকে দেশে ফেলে বিদেশে টাকা রোজগার করছে। তাদের কাছে বৃদ্ধ বাবার চাইতে টাকার দাম বেশি। মানুষ সব সময় তাকে বেশি গুরুত্ব দেয় যার দাম বেশি। তাইতো তারা বাবার চাইতে টাকাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। তাদের কাছে টাকাই সব কিছু। রাতে ছেলে না ঘুমানো পর্যন্ত বাবা ঘুমাতে পারে না। ছেলে বড় হয়েও যখন রাতে বাথরুমে যায়, তখন অজান্তেই বাবার ঘুম ভেঙ্গে যায়।সে লুকিয়ে অপেক্ষা করে তার ছেলে ফিরে আসার পর্যন্ত। রাতে মেলায় গেলে মা অপেক্ষা করে ছেলে ফিরে না আসা পর্যন্ত। আর ছেলে মেয়ে বড় হয়ে বাবা-মাকে একটা ফোন করে নিজেদের দায়িত্ব শেষ করে ফেলে।শুধু মাঝেমধ্যে খোঁজ নিলে কি দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়? আবার তারা এই নিয়ে গর্ববোধ করে। তারা নাকি বাবা-মার দেখভাল করছে। অন্যদের মতো বাবা মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে তো আসেনি।’
মাস্টারমশাই কথার ছন্দে ছন্দে কেঁদে ফেললেন। কিন্তু তিনি থামলেন না। তিলে তিলে জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছেন, তিনি তা প্রকাশ করলেন না। হাসির ছলে আবার বলতে শুরু করলেন।
‘জানিস, আজকাল বেশিরভাগ মানুষের স্বপ্ন কি? বেশিরভাগ মানুষের স্বপ্ন বেশি টাকা রোজগার করা। তারা ডাইরেক্টলি না বললেও ইনডাইরেক্টলি বলবে। তুই বাইরে গিয়ে একটা ছেলেকে জিজ্ঞেস কর, তার স্বপ্ন কি? সে বলবে শিক্ষকতা। তাকে দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস করবি, তার শিক্ষাকতা হওয়ার কারণ কি? সে প্রথমে বলবে শিক্ষকের মতো দ্বিতীয় সুখের চাকরি আর নেই। ছাত্র-ছাত্রীদের যা খুশি পড়িয়ে দাও। কেউ কিছু ধরতে নেই,ধরলেও বই দেখে বলে দাও আর মাসের শেষে মোটা অংকের টাকা রোজগার করো। তার পাশাপাশি টিউশনি তো রয়েছে। কিন্তু শিক্ষকতার আসল মানে কি? ওরা শিক্ষকের মানেটাই জানে না। শুধু শিক্ষক নয় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারিং, উকিল সব ক্ষেত্রে একই।এর ব্যতিক্রম আমার ছেলে মেয়েও না। তারাও একই ধাঁচের মধ্যে পড়ে। পারিনি কাউকে মানুষ করতে।’
মাস্টারমশাইয়ের দীর্ঘ সময় ধরে কথা বলার ক্ষমতা লোপ পেয়েছে। তিনি আগের মতো দাঁড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ লেকচার দিতে পারেন না। বাড়িতে আস্তে আস্তে কথা বলছেন তাও হাঁপিয়ে উঠেছেন। মাস্টারমশাইয়ের দিকে খেয়াল করলো কাবেরী। তার এ সব কথা শুনতে ভালো লাগছে না। এখন মানুষ কতটা এগিয়ে গেছে। আর মাস্টারমশাই সেই পুরনো যুগে পড়ে আছে। আগের মতো একটা অভ্যাসও ত্যাগ করতে পারেননি। সব সময় ছেলে মেয়েদের দোষ ধরতে থাকেন। কাবেরী ভেবেছিল, মাস্টারমশাই নিশ্চয়ই আগের মতো নেই। তিনি বদলে গেছেন। ছেলেমেয়েদেরকে স্বাধীনতা দিয়েছেন। কিন্তু না….. তিনি এখনও ওই জায়গায় আছেন। এখনো নিজের সিদ্ধান্তকে সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন। এখনো তিনি নিজের ঘরবাড়ি নিয়ে পড়ে আছেন। এত বছরের পর কাবেরী মাস্টারমশায়ের কাছে এল, তিনি কোথায় কাবেরীর ভালো দিকগুলো তুলে ধরবে। সে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছে। কোথায় তার প্রশংসা করবে, তা না করে তার সমালোচনা করছে। ভুল বের করছে। কাবেরী যেকোনো মূল্যে মাস্টারমশায়ের কাছে ভালো হতে চাইল। মাস্টারমশাই যেমন বলেছেন কিশলয় তার প্রিয় ছাত্র। কাবেরীও শুনতে চায়,মাস্টারমশাইয়ের প্রিয় ছাত্রী যেন সে নিজে হয়। কাবেরী একই প্রসঙ্গ টেনে এনে বলল,’গ্রামের বাড়িটা আমাদের পুরনো হয়ে গেছে। ইট,কাঠ,পাথর সবগুলোই পুরনো। পুরনো বাড়ি রেখে আমাদের লাভ কী? বরং এই বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে আমরা নতুন ফ্ল্যাট কিনতে পারব।’
মাস্টারমশাই চেয়ার দোলাতে লাগলেন। দুটো হাতে চেয়ারের পায়ে খটখট করে শব্দ করলেন। মুখে হাসি বজায় রেখে বললেন,’এই বয়সে তোদের মনে হচ্ছে একটা বাড়ি কেবল ইট-পাথর,কাঠ দিয়ে তৈরি। কিন্তু তোরা প্রাপ্তবয়স্ক পেরিয়ে বৃদ্ধা হয়ে যাস। আমাদের বয়সে চলে আয়। তখন কিন্তু মনে হবে, একটা বাড়ি কখনো ইট-পাথর, কাঠ দিয়ে তৈরী নয়। সেখানে অজস্র স্মৃতি রয়েছে।দেওয়ালের কোনায় কোনায় লেখা রয়েছে তোদের বড় হয়ে ওঠার কাহিনী। শেষ বয়সে সেই স্মৃতিগুলো নিয়ে বাঁচতে চাইবি।’
মাস্টারমশাই একটু থেমে আবার বললেন,’জানিস, আমি একজন বড়ো অভিনেতা। ছেলে মেয়েদের সামনে সব সময় আমাকে ভালো থাকার অভিনয় করতে হয়। তারা সব সময় জিজ্ঞেস করে আমি কেমন আছি? আমি তাদেরকে বলবো,আমি ভালো নেই। তা তো সম্ভব নয়। আমার ছেলে বারবার বলে তার কাছে চলে যেতে।কিন্তু আমি এই বাড়ি ছেড়ে কোথাও যেতে পারি না। এই বাড়িতে এক সময় আমার ভরা সংসার ছিল। মাহাবুব যখন ছোট ছিল তার মাথায় অনেক বড় বড় চুল ছিল। সে কখনো মায়ের কাছে চুল বাঁধতো না, আমার কাছে ছুটে আসতো। শত কাজের ব্যস্ততায় আমি তার চুল বেঁধে দিতাম। আমি যেখানে যাবো তাকেও নিয়ে যেতে হতো,না হলে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে যেতে হতো। সারাদিন দুই ভাইবোন বাড়িতে ছুটে বেড়াতো।এই দেওয়াল ওই দেওয়াল কত দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে রক্ত ঝরিয়েছে। ছেলে মেয়ে শরীর থেকে এক ফোঁটা রক্ত বেরোলে আমিনা পাগলের মতো হয়ে যেত। সব দোষ আমার হতো। আমিও দোষ মাথা পেতে নিতাম। নিজের সংসার নিজেকে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। সব সময় ছেলেমেয়েদের আগলে রাখতাম। নিজেদের ভালোলাগা, একে অপরকে সময় দেওয়া কমে গেল। শুধু দু-হাত ভরে সংসার সামলে গেলাম। আর ইয়াসমিন তার কথা বলিস না! যখন ছোট ছিল,স্কুলে টিফিনে কিছু খেলে আমার জন্য একটু হলেও ঠিক নিয়ে আসতো। আমাকে খেতেই হবে। না খেলে তার কত রাগ,বাবা! সে ছোটোবেলায় টক জিনিস খেতে ভালোবাসতো। তাও আমার জন্য আনতো। আমার শরীর খারাপ থাকলেও টক খেতাম। কখনো না বলিনি। আর হঠাৎ করে বড় হয়ে উঠলো। সবকিছু বদলে গেল। যতদিন আমার নিয়ন্ত্রণে ছিল খুব ভালো ছিল। একদিন স্বাধীনতা দিয়ে দিলাম তারপর…… টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেল। টাকা তাদের কাছে সবকিছু হয়ে গেল। এখন তারা পরিস্থিতির অজুহাত দেখায়। পরিস্থিতির কাছে তারা অসহায়। আমিনা বারবার বলতো, ছেলে মেয়েদের এত শাসন করো না। তাদেরকে তাদের মতো থাকতে দাও। আমি আমিনার কথা শুনিনি। নিজের সিদ্ধান্ত সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল বলে মনে করতাম। এখন মনে হয় ওই সিদ্ধান্ত আমার ভুল ছিল। সবকিছুই আমার ভুল ছিল। আসলে, মানুষের জীবনে সঠিক সিদ্ধান্ত বলে কিছু নেই।আজ আমরা যা সঠিক সিদ্ধান্ত বলে ভাবছি, তা পাঁচ মাস কিংবা পাঁচ বছর পর ভুল সিদ্ধান্ত মনে হবে।কারন, মানুষের চাহিদা বহুরুপী। মানুষ কখন‌ কি চায়, সে নিজেও জানে না।’

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here