মায়াপ্রপঞ্চ,পর্ব সংখ্যা ৪৫ – শেষ

0
1302

#মায়াপ্রপঞ্চ,পর্ব সংখ্যা ৪৫ – শেষ
#পলি_আনান
_________________
এলোমেলো চুল কাঁদায় মাখা শাড়িটা গায়ে জড়িয়ে সিয়ামের মুখোমুখি বসে আছে আরমিন।ঘুটঘুটে রক্তিম দু’চোখের চাহনী বর্তমানে আবদ্ধ সিয়ামের দিকে।কাঁদতে কাঁদতে গলার অবস্থাটাও করুন।কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছে সিয়ামের।

– ভাবি তুমি কি স্বাভাবিক হবে না?ভাইয়ের মৃত্যুর আজ তৃতীয় দিন।

– তোমার কথাগুলো তোমার ভাইয়ের মতো গোছালো।

সিয়াম চোখ সরিয়ে নেয়।কাকে রেখে কাকে সামলাবে সে বুঝেনা।কিছুক্ষণ আগে ফারজানা এসে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছে তাকে সামলানোর পর আরমিনের আহাজারিতে দ্রুত রুমে আসে। অথচ সে নিজেই বারংবার ভেঙ্গে গুড়িয়ে যাচ্ছে।একজনের মৃত্যুতে সবার জীবনটাই এলোমেলো হয়ে গেলো।

– আমার কাছে আমার ভাইয়ের আমানত তুমি।তুমি যদি আমার চোখের সামনে তিলে তিলে শেষ হয়ে যাও তবে কী করে হবে?

– তোমার ভাইয়ার যখন রুহ চলে যায় তার খুব কষ্ট হচ্ছিলো তাই না আমরা কেউ ছিলাম না তার পাশে।মানুষটার কি দোষ ছিলো কেন নিয়ে গেলো আল্লাহ তাকে!

– ভাবি তোমার মুখোমুখি হলে আমি নিজেকে সামলাতে পারি না আমার কান্না পায়।প্লিজ তুমি চুপ করো এবার।

আরমিন চুপ হলো।হাটুতে মাথা ঠেকিয়ে হুহু শব্দে কেঁদে উঠে।কিয়ৎক্ষণ পর আবার চোখ তুলে তাকায় সিয়ামের দিকে।

– আমার ছোট্ট সংসারটা যে ফেলে এসেছি সেখানে নেবে আমায়?

– কোথায়?

– ঢাকার বাড়িটায়।আমাদের রুমটায় আমাদের কত স্মৃতি জমা আছে জানো।বিয়ের দিন রাতে জানলার পাশে দাঁড়িয়ে দুজনে বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম।অবশ্য খুব একটা বৃষ্টি গায়ে এসে লাগেনি।তোমার ভাই আদেশ দিলো সরে এসো আমিও জানলা বন্ধ করে দিলাম।বিয়ের আগে তোমার ভাইকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিতাম অসহ্য লাগতো তাকে দেখলে আর দেখো বিয়ের পর কি করে যে মায়ায় বেঁধে ফেললো।এখন আর তাকে ছাড়া কিচ্ছু বুঝিনা।আমি তার মায়া কাটাতে পারি না কেন বলতো?

সিয়াম দু’হাতের সাহায্য মুখটা ঢেকে নিলো।বার বার চোখের কোনে অশ্রু জমা হয়।সব তুচ্ছ লাগছে ইচ্ছে করছে এই কেশবপুর ছেড়ে এখনি চলে যেতে।কিন্তু চাইলেই যাওয়া যাবে না।অন্তরে যে ঘা লেগেছে তা শুকাতে অনেকটা সময় যাবে।তবুও নিজেকে রাখতে হবে স্থির।সামনে এই মানুষগুলোর দায়িত্ব তার নিজের হাতে।

– ঢাকায় ভাইয়া একটা ফ্লট কিনেছিলো।সেটা তোমার নামেই দেওয়ার কথা ছিলো ভবিষ্যতে।

– সিয়াম এসব টাকা পয়সা সম্পত্তি না দিয়ে তোমার ভাইয়ের পাশে আমায় কবর খুড়ে দাও আমি সেচ্ছায় সেখানে বসত গড়বো।জানো আমাকে বন্দি করে রাখে সবাই কারন সুযোগ পেলেই আমি কবরের কাছে ছুটে যাই।

সিয়াম দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।আরমিন যে থামবে না সে সেটা ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে।ঘরের ভেতর থেকে জানলা দিয়ে রক্তিম আকাশটা দেখা যাচ্ছে।আরেকটি দিনের সমাপ্তি হবে কিছুক্ষণ পরেই।আরমিন আবারো কেঁদে উঠে,হাতের ভাজে জাপটে ধরে শাড়িটা।

– অনেক দিন হলো কেউ আমাকে আর মরিয়ম বলে ডাকে না সিয়াম।কেউ আমাকে আর স্বপ্ন দেখায় না।

সিয়াম ঝাপসা চোখে তাকালো আরমিনের দিকে।আঁকড়ে ধরলো আরমিনের গাল।

– তোমার কষ্ট আমার আর সহ্য হয় না ভাবি।তুমি আমার ভাইয়ের আমানত।তোমার কিছু হলে আমি আজীবন নিজের কাছে অপরাধী হয়ে থাকবো।খাওয়া দাওয়া ছেড়ে এভাবে আর কতদিন চলবে?আমার ভাইয়ের কথা ভেবে অন্তত নিজেকে গুছিয়ে নাও।কাল ভাইয়ার জন্য মিলাদ পড়ানো হবে।মিসকিন সহ এতিমখানার বাচ্চাদের খাওয়ানো হবে।এই দোয়ার আয়োজনে নিজেকে একটু সামলে নাও।ওই তো আযান দিয়ে দিলো আমি নামায শেষ করে বাজারে যাবো কালকের আয়োজনের জন্য কেনাকাটা আছে।ফিরে এসে যেন দেখি তুমি নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছো।
.
সিয়াম বেরিয়ে যাবার কিছুক্ষণ পরেই রুমে ফিরলো রিহানা।আরমিনের পাশে বসে মাথার কাপড় সরিয়ে নিলো তার।

– আপু শাড়ি পাল্টাবি?তোকে সাদা শাড়ি পড়তে হবে না সুহাইল ভাইয়ার পছন্দের একটা শাড়ি পড়িস।

– আচ্ছা পড়বো।মাথাটা চেপে দে ভীষণ যন্ত্রণা করছে।

রিহানা আলতো হাতে মাথা মাসাজ করছে আরমিনের।আরমিন দু’চোখের পাতা এক করে রেখেছে কিন্তু তাতে কী!চোখ থেকে টপটপ পড়ছে অশ্রুকণা।

– বাড়িতে কেউ নেই?সব কেমন নিস্তব্ধ।

– আম্মা আর ফুফু নামায পড়ছে।ফুফা আর সিয়াম ভাইয়া জাবির আংকেলে সাথে বেরিয়েছে।

-ওহ।
আরমিন কিছুক্ষণ নিরব রইলো কিন্তু চোখ থেকে পানি পড়া থামলো না।ভেতরটা পুড়ে যে ছাই জমে গেছে কি করে সামলাবে নিজেকে।

– রিহানা তোর জীবনটা আমার আর আম্মার মতো না হোক।আল্লার কাছে প্রার্থনা রাখি তোর জীবনে যেন কোন দুঃখ না আসে।

– সেসব পরের কথা এসব কথা বাদ দাও।

– আমার উপরে তোর কোনো জমে থাকা ক্ষোভ,অভিমান আছে?কত বকেছি,মেরেছি তোকে।আমায় মাফ করে দিস বোন।

রিহানার চোখে পানি এসে গেছে।দম বন্ধ লাগছে এই মুহূর্তে।এই পরিস্থিতিটা কেমন যেন হাহাকারে ঘেরা।

– তুমি ছাড়া আমার কোন বন্ধু নাই আপু।যে বোন সে বন্ধু তার উপর কোন রাগ অভিমান কি করে জমা রাখবো আমি?তোমার কি মাথা ব্যথা বেশি করছে?চা করে দি?

– আচ্ছা আদা দিয়ে রং চা করিস।

আরমিন খুব সাবলীল ভঙ্গিমায় কথা বলেছে।রিহানার বুকের ভেতর জমে থাকা পাথরটা যেন এবার হালকা হলো।বোনটা তবে ধীরে ধীরে নিজেকে সামলে নেবে।রিহানা চুলোর উপর চায়ের পানি বসিয়ে তাতে কয়েক টুকরো দারুচিনি,এলাচ,আদা ছেড়ে দিলো।দিয়াশলাই নিয়ে আগুন জালাতে আগুনটা কেমন যেন চুলা থেকে ছড়িয়ে গেলো তৎক্ষণাৎ।রিহানা কিছু বুঝে উঠার আগেই গ্যাস সিলেন্ডারে আগুন লেগে যায়।আগে থেকে সিলেন্ডার লিক থাকায় এমন আগুনের সূত্রপাত।সে আগুন থামার নয় বরং ক্রমাগত বাড়তে থাকে।পাশে থাকা কেরোসিনের বোতলটি তাপে গলে যায়।কেরোসিনের সংস্পর্শে চোখের পলকে আগুন আরো ভয়ংকর রূপ ধারন করে।রিহানা কাছে থাকায় সুতোর ওড়নায় আগুন ধরে যায়।মেয়েটার চিৎকারে ছুটে আসে উপস্থিত থাকা ঘরের সবাই।
.
– আম্মা আরমিন যদি আমার কাছে থাকতো তবে এমন পরিস্থিতি হইতো না তাই না?

পবনের কথায় আড় চোখে তাকালেন নাহার বেগম।নামায শেষে তসবি হাতে বসেছেন তিনি।ইদানীং নিরিবিলি চুপচাপ গুমুট স্বভাবের হয়ে গেছেন।সুহাইলের মৃত্যুর পর থেকে সবারি জীবনের ছাপ পালটে গেছে।কেমন যেন সব দিকেই হাহাকার।আনন্দরা ধরা দেয় না এই গলিতে।আমীনা চায়ের কাপ এনে সামনে রাখলেন নাহার বেগমের।আরেকটি কাপ এগিয়ে দিলো পবনের হাতে।

– সরাও ইচ্ছে করছে না কিছু খেতে।

– এভাবে আর কদিন?খাওয়া দাওয়া তো ছেড়েই দিয়েছিস।আবার আগের মতো পাগলামি জুড়ে দিয়েছিস তুই।

পবন অসহায় চোখে তাকালো আমীনার দিকে।চোখের পলকে আঁকড়ে ধরলো তা হাত।

– আমার আরমিন ভালো নাই চাচি।বিশ্বাস করো সে ভালো নাই।

– আমি জানি পবন কিন্তু কি করার আছে আমাদের?আল্লাহ যা চেয়েছেন তাই হয়েছে।সবাই পরিস্থিতির স্বীকার।

পবন থেমে গেলো ছেড়ে দিলো আমীনার হাত।মেঝে থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তাকালো নাহার বেগমের দিকে,

– আমরা কেমন যেন সবাই নিজ স্বার্থের কথা চিন্তা করি।

পবনের কন্ঠে হতাশার আভাস।সেই হতাশা দ্বিগুণ করতে ছুটে এলো প্লাবণ।ছেলেটা হাঁপাচ্ছে আতঙ্ক ছড়িয়ে আছে তার চোখে মুখে।
– আরমিন আপুদের বাড়ি আগুন লাগছে ভাইয়া তাড়াতাড়ি আসো।

প্লাবনের মুখের দিকে থমথমে চেহারায় পবন তাকিয়ে ছিলো কিছুক্ষণ।ধীরে ধীরে বাইরের শোরগোল কানে এলো আমীনা সহ সকলের।নাহার বেগম যেন দিশেহারা হয়ে গেছেন।হাতে থাকা চায়ের কাপটা ছুড়ে ফেলে ‘আল্লাহগো’ বলে ছুটে যান উঠনের দিকে।আমীনার শরীর কাঁপছে কি হচ্ছে এসব,সালেহার বাড়িতে কার নজর লাগলো একের পর এক বিপদ ছাড়ছে না তাদের।
.
আগুনের গোলা দাউ দাউ ছড়িয়ে যাচ্ছে চারিদিক।ইতোমধ্যে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উপস্থিত হয়েছে।এলাকার মানুষের গিজগিজে অবস্থা।এমন ভয়ংকর পরিস্থিতির শিকার এর আগে এই এলাকার কেউ হয়নি।জাবির মাতবর খবর পেয়ে বাজার থেকে সবাইকে নিয়ে দ্রুত সালেহার বাড়ি ফিরে।আগুনের প্রকপ ধীরে ধীরে বাড়ছে মাথায় হাত ঠেকিয়ে দূর্বল শরীরে বসে পড়েছে বারেক খন্দকার।সিয়াম ভয়াকুল চোখে তাকিয়ে আছে।পরিস্থিতির সাথে তার মস্তিষ্ক যেন থমকে গেছে।চোখের সামনে শুধু দেখা যাচ্ছে দাউ দাউ জলন্ত লাল আগুন।পবন হুড়োহুড়ি ভিড়ের মাঝে ঘরের ভেতর ঢোকার চেষ্টা চালায়।তার কান্ডে এলাকার মানুষ যেন অতি বিরক্ত।

– আরমিন, আরমিন জ্বলে যাচ্ছে পুড়ে যাচ্ছে মেয়েটা।আগুন থামে না কেন আমার আরমিন ঘরের ভেতরে ছিলো।এই ভাইয়েরা আগুন থামান না।

কেউ তার কথা কানে নিলো সবাই নিজ নিজ কর্মকান্ডে ব্যস্ত।রিজু টেনে হিচড়ে তাকে ভিড়ের মাঝ থেকে নিয়ে আসে।আমীনা ঝাপসা চোখে তাকিয়ে আছে বাড়ির দিকে।কি অসহায় পরিস্থিতি।নাহ আগুনে শুধু ঘর পুড়ছে না এই আগুনে কারো জমানো রঙিন স্বপ্ন পুড়ছে,কারো আদরের সন্তান জ্বলে পুড়ে মরছে,কারো স্বামীর স্মতি চারণে যত্নে জমিয়ে রাখা কিছু জিনিসপত্র দানব আগুন অবহেলিত ভাবে পুড়িয়ে দিচ্ছে ,ভবিষ্যতে চলাচলের জন্য তিল তিল জমানো টাকা ছাই হয়ে মিলিয়ে গেলো এই আগুনে।সুহাইলের বিশেষ যত্নে রাখা ‘সালেহার সুবসতি’ নামটি পুড়ে কালসিটে হয়ে গেলো এক নিমিষে।এই বাড়ি ঘিরে কত স্বপ্ন ছিলো কিন্তু দানব আগুনের মুখে তা ছাই হয়ে গেলো।
সিয়ামের কম্পিত পায়ে এগিয়ে এলো কয়েক কদম।অবুঝ ছেলের মতো মাফীর কাঁধ ঝাকরে বলে,

– আমার আম্মু নাই!আমি মা হারা হয়ে গেলাম কয়েক মিনিটে!ঘর থেকে বের হওয়ার আগেও আমার আম্মু আমার কপালে চুমু দিয়ে বলেছিলো সাবধানে ফিরিস বাবা।আমার সেই আম্মু এখন নাই।আমার ভাইয়ের আমানত নাই।আমার ভাইয়ের শেষ মূল্যবান স্মৃতি আমার ভাবি নাই।ভাই,ভাবি,মা কারো খেয়াল রাখতে পারলাম না সবারেই হারালাম!

সিয়ামকে ধরে রাখতে পারলো না মাফী।মানসিক ভাবে ছেলেটা দূর্বল হয়ে পড়েছে।ঝাপসা দু’চোখে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কালো ধোঁয়ার দিকে।সবাই পবনের আহাজারি দেখতে ব্যস্ত একবার গাছের সাথে আরেকবার দেয়ালের সাথে মাথা ঠুকছে সে।পরিস্থিতি তাকে উন্মাদ বানিয়ে দিলো।কালো ধোঁয়ায় ঘিরে গেছে পুরো এলাকা ক্রমাগত মানুষের ভিড় বেড়েছে।পুলিশ সহ এম্বুল্যান্স এসে হাজির হয়েছে গলির মুখে।আগুন নিয়ন্ত্রণে এলো কয়েক ঘন্টা পর।ততক্ষণে ঘরের ভেতরটা পুড়ে ছাই জমে গেছে।
.
এম্বুল্যান্সের তীক্ষ্ণ সাইরেনে থমথমে হয়ে গেলো কেশপুরের এই এলাকাটা।সবার মাঝেই তৈরি হয়েছে আতঙ্কের।আগুনের সমাপ্তি শেষে শুধু কালো ধোঁয়ার বিস্তার অন্ধকার আকাশটায়।একে একে ঝলসে যাওয়া চারটে মরদেহ বের করা হলো ঘর থেকে।ফায়ার সার্ভিস কর্মিরা স্টেচার নিয়ে ছুটে গেলো ঘরের দিকে।পর পর চারটে লা/শ নিয়ে হন্য হয়ে ছুটলো তারা।সবাই সন্ত্রস্ত চোখে দেখছে কর্মীদের কাজ।পবনকে বন্ধুরা তাকে আটকে রাখলেও ছেলেটা সবাইকে ঠ্যালে একজন দমকল কর্মীর পা জড়িয়ে বসে যায়।
– একটা মেয়ে স্যার,একটা মেয়ে ছিলো ঘরের ভেতর।তাকে শেষ বারের মতো আমায় একটু খানি দেখতে দেন।

– আরে কি করছেন ছাড়েন।

– আমি একবার দেখবো একবার দেখার সুযোগ করে দেন।মেয়েটার গায়ে হলুদ শাড়ি ছিলো।

– লা/শ ঝলসে গেছে স্বাভাবিক ভাবে যে কেউ দেখলে ভয় পাবে।তাছাড়া অনুমতি নেই এভাবে দেখানোর আপনি পা ছাড়ুন।

সবাই পবনকে টেনে হিচড়ে নিয়ে আসে।পুলিশ এলাকাবাসীকে ভিড় ছাড়তে নির্দেশ দেয়।একে একে সবাই সরে যাচ্ছে।বারেকের জ্ঞান নেই তিনি এখনো লুটিয়ে আছে মাটিতে।কয়েকজন পুরুষ তার মাথায় পানি ঢালছে।সিয়াম শূন্য চোখে তাকিয়ে আছে বাড়িটার দিকে।প্লাবণের শরীরটা কেমন নিস্তেজ হয়ে আসছে।ক্রমশ স্মৃতি চারণে দূর্বল করে তুলছে দেহ।এই তো কয়েকদিন আগে সালেহার চ-ড় খেয়ে রিহানা যখন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় তখন প্লাবন জিজ্ঞেস করে,
– কাঁদছিস কেন?আন্টি চ-ড় লাগিয়েছে?

রিহানা মাথা দুলালো।পাংশুটে মুখটায় এবার হাসির আভাস দেখা গেলো প্লাবনের।

– রিহানা আমার মনে হয় তোর জন্ম হয়েছে চ-ড় খাওয়ার জন্য।তোর গালটা কি সরকারি?উনিশ থেকে বিশ হলেই তোর গালে চ-ড় পড়ে।আন্টি কোন গালে মেরেছে?

– ডান গালে।

প্লাবন এক গাল হাসলো।চট করে রিহানার বাম গালে বসিয়ে দিলো আরেক চ-ড়।

– দু গালে চ-ড় না পড়লে বিয়ে হয় না।আমি দিয়ে পূর্ণ করে দিলাম।এবার যেদিকে মন চায় যা হুসসস!

বাস্তবতায় ফিরে ক্রমশ ঝাপসা হয়ে এলো প্লাবণের চোখ।সেই রিহানা এখন নেই আর কোনদিন দেখা হবে না তার সাথে।আরমিন আপুর সাথে শেষ দেখাগুলো সুখকর ছিলো না।কেননা মনে জমে ছিলো অসীম রাগ, কেন তার ভাইয়ের বউ হলো না।তাহলে তো ভাই আর কষ্ট পেতো না।সেই আরমিন আপুও আর নেই চোখের সামনেই ঝলসে গেলো।সালেহা তো মায়ের মতো আদর যত্নে রাখতেন সব সময়।মাতবর পরিবারে সালেহার চালচলন ছিলো পারিবারিক সদস্যদের মতোই আজ সেই সালেহাও নেই।বাড়ির ছোট সদস্য প্রমা,প্লাবণ,মনিরা কি নিষ্ঠুর পরিস্থিতির সাথে পরিচিত হলো।মণিরা এক তুড়িতেই বুঝে নিয়েছে এখানে তার আপনজনেরা হারিয়েছে।আগুন কেড়ে নিয়েছে তার প্রিয় মানুষদের।আমীনার কোলে ফ্যালফ্যালে চোখে মুষড়ে কেঁদে বলে,

– আরমিন আপুর কাছে যাবো।আরমিন আপু কোথায় আম্মু?এই বাড়িতে তো আরমিন আপুও ছিলো।

– তোর আপু আর ফিরবে না মা।সে আমাদের কাছে শুধু স্মৃতি হিসেবে বেঁচে রইবে।
.
সবার ছুটোছুটি হট্টোগোল আহাজারি কানে ডুকছে না পবনের।সব কেমন যেন ছন্নছাড়া লাগছে তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে সব কিছুর।মাটিতে বসে গড়িয়ে কাঁদার মতো শক্তি তার নেই।তবুও ভেতর থেকে দম বন্ধ হওয়া চিৎকার,হাহাকার বেরিয়ে আসে বারংবার।বুকের ভেতর হৃদযন্ত্রণটা কেমন যেন শব্দ করছে।যেন সময়ের অপেক্ষা এক পলকে ছিটকে বেরিয়ে আসবে চামড়া ভেদ করে।আচ্ছা মানুষের জীবনটা এমন কেন?আজ আছে কাল নেই,মায়া লাগিয়ে মানুষ কেন চলে যায়?থেকে গেলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যায়!জীবন তো একটাই।এই এক জীবনে এত আফসোস কেন?এত আফসোস নিয়ে তো বেঁচে থাকা কষ্টের,বড্ড কষ্টের।যারা চলে যায় তারা তো বুঝেনা জমিনে থাকা মানুষগুলোর হাহাকার,আর্তনাদ।
শরীরে একটুও শক্তির রসদ নেই তবুও জোর খাটিয়ে এলোমেলো পায়ে এগিয়ে গেলো পবন।বাড়ির বাইরে থেকে ছুঁয়ে দিলো,কালসিটে সেই নেমপ্লেট যেখানে লেখা ছিলো,”সালেহার সুবসতি”। মানুষের জীবনটা কেমন যেন।কেউ সুখের উপরে সুখ পায়,ভুড়ি ভুড়ি অর্থ সম্পদ থেকেও আরো অর্থ সম্পদ জোগান দেয়।আর যার সুখ নেই তার ছিটেফোটাও সুখও থাকে না।বরং একটু সুখের দেখা পেলে হাজার খানেক দুঃখ তাদের ছুঁয়ে যায়।
পবনের পিছুপিছু এগিয়ে যায় রিজু সায়মন।পবন দেয়াল ধরে দাঁড়িয়ে আছে।রক্তিম চোখে ঝরছে জল।

– আমার আরমিন!সেই ছোট আরমিন।কত আগলে আগলে রেখেছি।কখনো দুঃখ পেতে দিলাম না।সারাক্ষণ মিষ্টি ঝগড়ায় মেতে থাকতাম দুজনে।তাকে নিয়ে আমার ছিলো কত স্বপ্ন পড়বে চাকরি করবে পরিবারের টানাপোড়ন কাটিয়ে তুলবে।সবার দুঃখ ভুলিয়ে দিবে।অথচ দেখ সে আমদের সকলকে দুঃখ দিয়ে চলে গেলো।যে আরমিনকে আমি আঘাত পেতে দিতাম না।সেই আরমিন আজ আমার সামনেই জ্বলে পুড়ে ম/রলো বাহ!

পবন কিয়ৎক্ষণ চুপ রইলো তাকিয়ে রইলো পুড়ে ছাই হওয়া বাড়িটার দিকে।

– আমি আর কোন দিন আরমিনকে দেখতে পাবো না তাই না?আরমিন আমাকে শেষ বার বলেছিলো তাকে যেন আমি যত্ন করে ভুলে যাই।মুখস্ত সত্তাটাকে আমি ভুলে যাবো?কী করে?

পবন কেমন করে যেন হাসলো।সেই হাসিতে গায়ে কাটা দিলো দু’বন্ধুর।ক্রমশ পবনের হাসার শব্দ বাড়তে থাকে একটা পর্যায়ের নিস্তেজ হয়ে গেলো ছেলেটা।ধীরে ধীরে লুটিয়ে পড়লো সায়মনের কাঁধে।
_

কারো জীবনে দুঃখ,হতাশা,কারো জীবনে সুখ মিশিয়ে কেটে গেলো দেড় বছর।সময় তো বহমান তার থেমে থাকার সুযোগ নেই।মানুষের জীবন যাপন চলছে সময়ের গতিতে। কিন্তু কিছু মানুষের জীবন থমকে যায় অতীতের রেশে।অতীতটা তাদের স্বাভাবিক ভাবে বাঁচতে দেয় না।জীবনটা করে তুলে বিস্বাদময়।কেশবপুরের মানুষের জন জীবন সেভাবেই চলছে।প্রত্যকেই নিজ নিজ কর্মে ব্যস্ত।সালেহার পরিবারের সেই করুন ঘটনার কেটে গেলো দেড় বছর।এই দেড় বছরে পালটে গেলো মাতবর বাড়ির মানুষগুলোর জীবনযাত্রা।সবার আদরের পবনের মৃত্যু হলো সেদিন রাতে অবশ্য দৈহিক মৃত্যু নয় স্বাভাবিক ভাবে বেঁচে থাকার মৃত্যু ঘটেছে।ছেলেটা ক্রমাগত মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে।জাবির মাতবরের আদরের ছেলেটির নাম খ্যাতি পালটে এলাকায় তার নাম উঠেছে পাগলা পবন।একটা সময় ছিলো যখন কেশবপুরের অনেক মা বাবা তাদের সন্তানদের অনুপ্রাণিত করতো ‘পবন ভাইয়ার মতো হতে হবে।ভদ্র,সভ্য বেশি বেশি পড়াশোনা করতে হবে’।আজ সেই ছেলেটি পাগলের খেতাব জয় করেছে।আরমিনের কবরের পাশে রাত দিন কাটে তার।কিছুতেই আরমিনকে একা ছাড়া যাবে না।তার আরমিনকে কেউ যেন নিয়ে যাবে।আছীম,জাবির তাকে অনেকবার কবরস্থান থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করলেও কাজ হয়নি।ছেলেটার যেন স্থান একটাই আর সেটা হলো আরমিনের কবরের পাশে।ধীরে ধীরে তারাও নিজেদের পাথর বানিয়ে নিয়েছে।এখন আর পবনকে নিয়ে কারো জোরাজোরি নেই।নাহার বেগম,আমীনা,জাবির কেঁদে-কেটে দিন রাত পার করলেও লাভ নেই।কেননা পবন মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে।যখনি তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাকে ঘরে আনা হয় তখনি নিজের ক্ষতি করে বসে।অনেকদিন শেকল পায়ে বেঁধে রাখা হয়েছে তাকে।কিন্তু ফলাফল শূন্য।ক্রমশ ছেলেটা আরো হিংস্র হয়ে উঠে।তাই সব মায়া ত্যাগ করে জাবির তাকে ছেড়ে দেয়।ছেলেটার রাত দিন কাটে আরমিনের কবরের পাশে।মাঝে মাঝে পবন বাড়ির উঠনে এসে চুপচাপ বসে থাকে।দু’মুঠো খাবারের আশায়।আমীনা যখনি মুখে খাবার তুলে দেয় পেট পুরে খেয়ে ফিরে যায় আরমিনের কবরের পাশে।মায়ের প্রতি পবনের এতটাই গাঢ় রাগ জমেছে যতদিন নাহার বেগম ভাত মেখে খাওয়াতে গেছেন পবন তা ছুড়ে ফেলেছে।বিতৃষ্ণার চোখে তাকাতো নাহার বেগমের দিকে।তার চোখের ভাষায় যেন বোঝাতে চায় তোমার কারনেই আরমিন আমার হলো না।যদি আরমিন আমার হতো তবে পরিস্থিতি ভিন্ন থাকতো

মতিন মিয়া প্রতিটা চায়ের কাপে চিনি মিশিয়ে খটখট শব্দে নাড়তে থাকে।তার চা নাড়ানোর আওয়াজে ধ্যান ভাঙ্গে কুয়াকাটায় ঘুরতে যাওয়া ভার্সিটির সেই বন্ধুদলের।সুহাইলের মৃত্যুর খবরটা তারা জেনেছে প্রায় তিন মাস আগে।সুহাইলের নাম্বারটাই ছিলো বন্ধু দলের একজনের কাছে।কিন্তু সুহাইলের নাম্বার বন্ধ থাকায় আর যোগাযোগ করা হলো না।সোস্যাল কোন একাউন্টে সুহাইলের সাথে যুক্ত ছিলো না কেউ।
তিন মাস আগে দলের একজন ভাগ্যক্রমে মাফীর সাথে ফে’সবুকে একটি গ্রু-পের মাধ্যমে পরিচিত হয়।ছেলেটি উচ্ছ্বসিত হয়ে সুহাইল আর আরমিনের কথা জানতে চাইলে তিক্ত সত্য কথাটি জানায় মাফী।মাফী দেশে আসবে বলে জানায় তাদের।অবশেষে মাফী কানাডা থেকে কেশবপুরে ফিরলে সুযোগ বুঝে সেই বন্ধুদের দল কেশবপুরে আসে।আর শুনতে থাকে আরমিন,সুহাইল,পবনের জীবন কাহিনী।মতিন মিয়ার চায়ের কাপ নাড়ানোর শব্দে বিরক্তিকর ভঙ্গিমায় ঘুরে তাকায় সবাই।দলের বন্ধুগুলো একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে ইশারা করছে।এর অর্থ প্রত্যকের চোখে পানি।মাফীর বর্ননার মাঝে কখন যে আপনা-আপনি চোখে জল এসে পড়েছে বুঝতেই পারেনি তারা।

– পবন নামের ছেলেটির চিকিৎসা করায় না কেন?চিকিৎসা করালে যদি ভালো ফল পাওয়া যায়?

দলের একজনের কথায় মিহি হাসলো মাফী।হাতে চায়ের কাপ তুলে নিয়ে বলে,

– সব চেষ্টা চলেছে ফলাফল শূন্য।

– ইসস ছেলেটাকে দেখতে ইচ্ছে করছে।কি যে হালচালে আছে!

– দেখতে চাও,তবে দেখো!

মাফী আঙুল ইশারা করলো দোকানের মুখোমুখি কবরস্থানটায়।তার ইশারা মতে তাকালো বন্ধুর দল।একটি ছেলের মাথা দেখা যাচ্ছে দ্রুত সব বন্ধুরা এগিয়ে গেলো রাস্তার কিনারায়।চারিদিকে দেয়াল করা বেশ সজ্জিত কবরস্থান।সেখানে দেয়ালের সাথে হাটু মুড়িয়ে বসে আছে পবন।তার মুখোমুখি আরমিনের কবর।ছেলেটার গালের দাড়ি গজিয়ে মুখ ঢেকে আছে।মাথার চুল ঘাড় ছুয়ে আছে।পবনের দৃষ্টি আরমিনের কবরের দিকেই আবব্ধ।তার পাশে যে এতগুলো মানুষ আছে সেদিকে তার পাত্তা নেই।

– ভালোবাসা কাউকে সুন্দর জীবন দান করে আর কারো সুন্দর জীবন কেড়ে নেয়।মানুষের প্রতি মানুষের এত মায়া কেন বলতে পারিস।এই যে দেখ ছেলেটা মায়া ছাড়তে পারিনি বলেই ছুটে আসে কবরে।অন্যর প্রতি যত মায়াপ্রপঞ্চ বাড়ে তার জীবন ততটাই সে মানুষটার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ে।

– মনে রাখিস কোন কিছু অতিরিক্ত ভালো না।হোক সেটা মায়া কিংবা উপেক্ষা!

বন্ধু দলের মাঝে ছড়িয়ে যায় আবার নিরবতা।মাফী তাদের পেছনে চুপচাপ এসে দাঁড়ায়।এসব আর সহ্য করার মতো না, মস্তিষ্ক আর কত সহ্য করবে?

– সালেহা আন্টির বাড়িটি কোথায়?সেটা এখন কার দখলে?

দলের একজনের প্রশ্ন করলো মাফীর দিকে তাকিয়ে।

– বাড়িটি পরিত্যক্ত স্থান হিসেবে পড়ে আছে।সেই বাড়িতে থাকার মতো কেউ বেঁচে নেই।সিয়াম, বারেক আঙ্কেল ফিরে গেছে কানাডা।মাতবর বাড়ির সকলে তাদের মতো করেই বসবাস করছে আর পবনের পরিস্থিতি তো দেখতেই পাচ্ছো।

সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়লো আবার নিরবতা।কেউ কোন কথা বললো না।হঠাৎ মাফী দ্রুত তাড়া দিলো তাদের।

– চলো চলো দুপুর গড়িয়ে বিকেল হচ্ছে লাঞ্চ হয়নি এখনো তোমাদের।রাতের আবার ফিরবে সময় কম চলো।
.
ছয় মাসের বাচ্চা কোলে নিয়ে কবরস্থানের সামনে দাড়ালো একটি মেয়ে।কোলে থাকা ফুটফুটে বাচ্চাটি চোখ উলটে দেখছে চারিপাশ।মেয়েটা নিশ্চুপ কয়েক পল তাকিয়ে থাকলো পবনের দিকে।পবনের করুন পরিস্থিতি পুড়িয়ে দিচ্ছে তার হৃদজমিন

– পবন তোমার অপ্রিয় টুম্পা এসেছে তোমার সাথে দেখা করতে কথা বলবে না?

পবনের দিক থেকে কোন প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো না।বাচ্চা কোলে নিঃশব্দে কেঁদে ফেললো টুম্পা।এ কান্না থামার নয় বরং ক্রমাগত বাড়ছে।তার আহাজারিতে দোকানদার মতিন মিয়া আড় চোখে তাকালেন কিন্তু তাতে খুব একটা গায়ে মাখলেন না কারন এখানে অনেকেই আহাজারি করে যায়।কেউ মৃত মানুষগুলোর জন্য কেউ বা জীবিত পবনের জন্য।

– পবন আমার তোমার উপর জেদ ছিলো,রাগ ছিলো,কিন্তু ঘৃণা ছিলো না কারণ তুমি আমাকে ভালো না বাসলেও আমি বাসতাম।এই যে আমার বাচ্চা হয়েছে দেখো দেখতে একদম তার বাবার মতো হয়েছে।আমার মতো গোছানো সংসারটা তো তোমারো হতে পারতো পবন কিন্তু কেন তোমার একটা সংসার হলো না।জানো আমি এখনো মিস করি সে দিনগুলি।আমারা দেখা করার মাঝে তুমি যখন আরমিনের দেখা পেতে মেয়েটার সাথে কারণে অকারণে ঝগড়া লেগে যেতে।তখন আমি বিরক্ত হলেও এখন সেসব মিস করি বড্ড বেশি মিস করি।

টুম্পা কেঁদে ফেললো তার চোখের জল বাচ্চাটার গালে পড়লো কয়েক ফোঁটা।বাচ্চাটার মুখের দিকে তাকিয়ে টুম্পা যেন ভুলে গেলো অতীত।পবনের দিকে কয়েক পলক তাকিয়ে যে রাস্তায় এসেছে সে রাস্তায় আবার ফিরে গেলো।
_
রাতের জার্নিটা বেশ আনন্দদায়ক বন্ধুদের মাঝে।একটা বড় মাইক্রোবাসে সবাই মিলে কেশবপুর থেকে ফিরে যাচ্ছে ঢাকায়।আজ কোন আনন্দ নেই তাদের মাঝে সবার মাঝেই বিস্বাদ ভর করেছে।দলের মাঝে সবচেয়ে চঞ্চল ছেলেটি বলে,
– এই গিটারিস্ট গান ধর ভাল্লাগছে না।

– আমার গলা দিয়ে একটি গান আসছে বার বার ধরবো?

– কোন গান?

ছেলেটা প্রত্যুত্তর করলো না।গিটারটা হাতে তুলে নিস্তেজ গলায় গান ধরে।

“এখন অনেক রাত,
তোমার কাঁধে আমার নিঃশ্বাস
আমি বেঁচে আছি তোমার ভালোবাসায়।
ছুঁয়ে দিলে হাত,
আমার বৃদ্ধ বুকে তোমার মাথা
চেপে ধরে টলছি কেমন নেশায় (2)
কেন যে অসংকোচে অন্ধ গানের কলি…”

গানের মাঝ পথে থেমে যায় ছেলেটি আজ যেন তার গলায় সুর নেই।কেউ যেন চেপে ধরেছে গলাটা।

– কিরে থামলি কেন গা।

– আমি আর এই গান গাইবো না রে।আমার কেমন যেন কষ্ট হচ্ছে ভীষণ কষ্ট।মাত্র দু’দিনের পরিচয়ে সুহাইল আরমিনের প্রতি এতটা মায়া কি করে জন্ম হলো বলতো?

বন্ধুদের মাঝে কারো কোন কথা নেই সবাই চুপ সবারি আজ কষ্ট হচ্ছে।বাস্তবতা মেনে নিতে কেন কষ্ট হয়?সবারি মনে পড়ে যায় কুয়াকাটা সেদিন রাতের কথা আতশবাজি,ফানুসের আলোয় গুঞ্জিত রাতটা ছিলো বড্ড বেশি সুন্দর।এই কুয়াকাটার তীরে কত জনেই তো ভবিষ্যত ভেবেছে,কত শত আলাপ-আলোচনা করেছে,টুকরো টুকরো স্বপ্ন বুনেছে আচ্ছা সবার কী স্বপ্ন পূরণ হয়েছে?নাকি অকালে ঝরে গেছে সুহাইল আরমিনের স্বপ্ন গুলোর মতো।বাঁচি আর না বাঁচি তবুও এই অনিশ্চিত জীবনে আমরা স্বপ্ন সাজাতে ভালোবাসি!স্বপ্নজালটাই আমাদের বাঁচার আশা দেয়!

~ সমাপ্ত?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here