মায়াপ্রপঞ্চ,০২,০৩

0
1327

#মায়াপ্রপঞ্চ,০২,০৩
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ২]
_______________
– রুটি তুই বেলছিস?এই রুটি কেউ খেতে পারবে?

পবনের কথায় ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায় আরমিন।হাতে থাকা বেলুনটা শব্দ করে পিরিতে রেখে ঠোঁট বাকায়।

– পবন ভাই রুটি কিন্তু আমি এই প্রথম করছি না আগেও বেশ কয়েক বার করেছি।আর সেই রুটি তুমি গিলেছিলে আমার বেশ মনে আছে।

আরমিনের কথার মাঝেই রান্না ঘরে প্রবেশ করেন নাহার বেগম।বেশ চটজলদি পবনের হাতে একটি ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে নির্দেশ দেন দোকান থেকে ডিম আনতে।পবনো দ্রুত বেরিয় পড়ে বাসা থেকে।গলির রাস্তা পেরিয়ে ঘাড় ঘুরাইতেই লক্ষ করে আরমিনের মা সালেহা তাদের বাড়ির গেটে প্রবেশ করছে।মূহুর্তেই অজানা ভয়ে বুকটা ধক করে উঠে পবনের।আজ সালেহা নির্ঘাত ঝামেলা পাকাবেন।
.
বেশ মন দিয়ে রুটি সেঁকছে আরমিন।হঠাৎ মাথা শক্ত কাঠের বারি পড়তেই আর্তনাদ করে ওঠে সে।তার আর্তনাদে ছুটে আসেন নাহার বেগম।র°ক্তা°ক্ত মাথাটা আরমিনকে চেপে থাকতে দেখে ‘আল্লাহ গো’ বলে কেঁদে উঠেন।সহসা রুম থেকে বেরিয়ে আসেন জাবির সহ বাড়ির বাদ বাকি সদস্যরা।রাগের দাপটে মেয়ের মাথায় বেলুন দিয়ে আঘাত করে নিজেও আহাম্মক বনে যান সালেহা।এতটা বাজে ভাবে মাথা ফা°টবে কখনো ভাবেননি তিনি।সৎবিৎ ফিরতেই আরমিনকে জড়িয়ে ধরে।কিন্তু তাকে ঠেলে সরিয়ে দেয় নাহার বেগম।রাগান্বিত অগ্নিশর্মা মুখে বলেন,

– ভাবী পা°গ°ল হয়ে গেছেন?মেয়েটাকে মেরে ফেলবেন নাকি?পবনের আব্বা কই দ্রুত কিছু একটা করো।

আরমিনকে রান্না ঘর থেকে বসার ঘরে আনতে বাড়িতে ফিরে আসে পবন।আরমিনের অবস্থা দেখে হাতে থাকা ডিমের ব্যাগটা ধরিয়ে দেয় তার বোন ‘প্রমা’র হাতে।

– আম্মা আরমিনের মাথা ফাটলো কি করে?

– সালেহা পা°গল হয়ে গেছে।কোথা থেকে এসে মেয়েটার মাথায় আঘাত করেছে।কি করবো আমার মাথা কাজ করছে না।

– আরে আরমিনের মাথাটা বেঁধে দাও, আমি দ্রুত রিক্সা নিয়ে আসছি এখনি হাসপাতাল যেতে হবে।

পবন তোরজোর করে ছুটে চলে যায় বাড়ির বাইরে।সাহেলা তাকিয়ে আছেন নির্বাক চিত্তে কী হয়ে গেলো মূহুর্তে আন্দাজ কর‍তে পারছেন না তিনি।
__

হাসপাতাল থেকে ব্যান্ডেজ করে আরমিনকে নিয়ে রিক্সায় চড়ে বাড়ি ফিরছে পবন।দুজনে পাশাপাশি কাছাকাছি তবুও কারো মাঝেই কোন অনুভূতির ছিটে ফোটা নেই।একজন বসে আছে চিন্তিত মুখ করে আর আরেকজন রাগে ক্রোধে নিজেকে দমন করতে ব্যস্ত।

– তোর মা আজ কাজটা একদম ভালো করে নিরে আরমিন।ইদানীং বেশি লাফাচ্ছেন তিনি আমাদেরও মূল্য দিচ্ছেন না।

– রাগ করো না পবন ভাই।মায়ের রেগে যাওয়াটা স্বাভাবিক।

– তাই বলে মাথা ফা°টিয়ে দেবে?

– এইভাবে বার বার বিয়ে ভেঙ্গে গেলে যে কারো রাগ হবে।মায়েরো হয়েছে।

আরমিনের কথায় বিরক্ত মুখ থেকে চ’র মতো শব্দ করে পবন।এক গাল থুথু ছুড়ে মারে রাস্তার ধারে।আরমিনের দিকে কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,

– আমিও তোর বিয়ে আটকাবো।দেখি তিনি কি করতে পারেন।ভেবেছিলাম এইচএসসির পরেই তোর বিয়ে দেবো।কিন্তু না তিনি আজ যা করলেন আমি তোর পড়া কমপ্লিট করে তবেই বিয়ের পিরিতে বসাবো।

– আমি কী বসে থাকবো? নিজের বিয়ে নিজেই করে নেবো।

হঠাৎ ভাঙ্গা রাস্তায় রিক্সা খাদে পড়তে,বেশ জোরেই ঝাঁকুনি দিয়ে উঠে রিক্সা।পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনায় পবনের হাতটা আকঁড়ে ধরে আরমিন।লেখনীতে পলি আনান।
মূহুর্তেই চনমনিয়ে উঠে ছেলেটি।রীতিমতো বেশ কয়েকটি ঢোক গিলে তাকায় মেয়েটির মুখের দিক।ফ্যাকাশে বির্বন মুখখানা রিক্সার চাকার দিকে তাকিয়ে আছে নির্বাক চিত্তে।

– এই যে আমার হাত ধরলি এইভাবে যদি ধরে থাকতে পারিস তবে ভবিষ্যতে সুন্দর একটি জীবন দিবো তোকে।

– তবে হাতে আঠা লাগিয়ে দাও পবন ভাই যেন জোড়া না খুলে।

কথাটি বলে গা দুলিয়ে হাঁসে আরমিন।তার হাঁসির তালে স্মিত হাঁসে পবন।
__
বেশ কয়েক বছর আগে একটি এক্সিডেন্টে আরমিনের বাবা প্যারালাইজড হয়ে যান।তারপর থেকেই সংসারে দেখা দেয় এবং অভাব অনটন।আরমিন এবং রিহানা তখন বেশ ছোট।সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে সালেহার উপর।জমানো সব টাকা আরমিনের বাবা কায়েমের চিকিৎসার খরচেই ফুরিয়ে যায়।অবশেষে আশার আলো দেখিয়ে সাহায্যর হাত বাড়িয়ে দেন জাবির মাতবর।তার অধিনে চাকরি কর‍তেন কায়িম।সময়ের পরিপেক্ষিতে আরমিন, রিহানা,সালেহা যেন মাতবর বাড়ির সদস্য হয়ে উঠে।
সালেহা বেশির ভাগ সময় মাতবর বাড়ির কাজে সাহায্য করে তার সাথে আরমিনো হাতে হাত লাগায় এতেই বেশ সন্তুষ্ট মাতবর বাড়ির সকলেই।

গ্রাম না বলে মফস্‌সল বললে চলে কেশবপুরকে(কাল্পনিক)।আর এই স্থানকে ঘিরেই বেড়ে উঠেছে “আরমিন মরিয়ম” এবং “আফসার মাতবর পবনের” পরিবার।
.
কলেজ শেষে বাড়ি ফিরছিলো আরমিন।আজ সাথের কেউ না থাকায় একাই বাড়ি ফিরছে সে।হঠাৎ পেছন থেকে ডাক পরায় ঘুরে তাকায় সে,

– এই আরমিন?

শাওনকে দেখে আনন্দে বিমোহিত আরমিন।খুশিতে গদগদ হয়ে এগিয়ে যায় শাওনের দিকে।

– শাওন কেমন আছেন আপনি?

– আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।তুমি কেমন আছো?

-আলহামদুলিল্লাহ।

অব্যক্ত প্রেমের সম্পর্ক শাওন এবং আরমিনের মাঝে।কেউ কাউকে সহজে অনুভূতি প্রকাশে প্রস্তুত নয়।তবে ভালোবেসে যায় নিরন্তর।

– তোমার মাথার ঘা শুকিয়েছে?

– হ্যাঁ।পবন ভাইয়া আমার বেশ যত্ন নিয়েছে।সব সময় ওষুধের তাগিদ দিয়েছেন।আল্লাহর রহমতে এখন আমি সুস্থ।

পবনের নামটা তুলতেই মুখখানা ফ্যাকাশে হয়ে যায় শাওনের।অজানা বিরক্ত ঘিরে ধরেছে তার মনে।অসহ্য একটা অনুভূতি আকঁড়ে ধরেছে তাকে।

– একটা কথা বলি আরমিন কিছু মনে করো না।

– বলুন।

– বলছিলাম কি এই যে পবনের সাথে যে সারাদিক চিপকে থাকো, এবার তো বড় হয়েছো ওর সঙ্গ ছেড়ে দাও।

শাওনের কথার ভঙ্গিতে কপাল কুচকে নেয় আরমিন।

– চিপকে থাকি মানে?কি বুঝাতে চাইছেন আপনি?

শাওন মুখ ফুটে কিছু বলার আগে সেখানে বাইক নিয়ে উপস্থিত হয় পবন।

– এই আরমিন রোদের মাঝে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?বাড়ি ফিরলে আয় বাইকে বস।

– আমি একা যেতে পারবো পবন ভাই তুমি চলে যাও।

– তুই আসবি?নাকি আমি চুল টেনে তুলবো?

পবনের ধমকে চুপসে যায় আরমিন।শাওনকে ইশারায় বিদায় জানিয়ে চড়ে বসে পবনের বাইকে।দীর্ঘক্ষণ চুপ থাকার পর প্রথম মুখ খুললো পবন,

– শাওনের সাথে কী তোর?খোঁজ নিয়ে জেনেছি ছেলেটা মেসে থাকে।

– সত্যি বলবো পবন ভাই?

– বল।

– আমি শাওনকে ভালোবাসি।

মূহুর্তেই জোরে ব্রেক কষালো পবন।আশ্চর্য হয়ে ঘুরে তাকায় আরমিনের দিকে।সারা শরীরে মূহুর্তেই রাগের আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে।’প্রেম’ প্রেমে জুড়ে গেছে এই মেয়ে।পড়াশোনা নির্ঘাত গোল্লায় যাচ্ছে।তাই তো ভাবি অর্ধ বার্ষিকিতে কি করে তিন সাবজেক্ট ফেল আসে।

– আমার বাইক থেকে নাম তুই।

– কিন্তু কেন?

– নামতে বলেছি নাম!

শেষ কথাটি বেশ জোরেই বলে পবন।মূহুর্তে বাইক থেকে নেমে পড়ে আরমিন।

– একা একা বাড়ি চলে যাবি সময় দশ মিনিট।এর বেশি দেরি করলে সালেহা আন্টির কাছে নালিশ যাবে রাস্তা ঘাটে প্রেম করে বেড়াস আশা করি বুঝতে পারছিস কি হবে তখন?

– দশমিনিটে কি করে বাড়ি যাবো আমি?এই দুপুরে কোন রিক্সাও পাওয়া যাবে না।পবন ভাই আমাকে নিয়ে যাও।

আরমিনের কথায় কোন উত্তর দিলো না সে।বাইক স্টাট দিয়ে ছুটে চলে তার গন্তব্যে।

_
বেশ তোরজোর করে বাড়ি ফিরেছে আরমিন।সময় লেগে যায় প্রায় বিশ মিনিট তাতেই ক্ষুব্ধ পবন।আরমিনের দিকে কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বেশ শক্ত কিছু কথা বলেছে তাতেই চোখের জলে টইটুম্বুর মেয়েটার আঁখি যুগল।বাড়ি ফিরে ড্রেসটা পালটে দ্রুত মাতবর বাড়িতে ফিরে এসেছে মেয়েটি।কিন্তু পবনের এমন আচরণ কখনো আশা করেনি আরমিন।

– আমার রুমে আয় আরমিন।

পবনের পিছু পিছু নির্বাক হয়ে তার রুমে যায় সে।কিছু সময়ের মধ্যেই দুই বালতি জামাকাপড় ধরিয়ে দেয় আরমিনের হাতে।

– যা এগুলো পরিষ্কার কর।একটুও যেন ময়লা না থাকে।

– এত জামা কাপড় এখন কাচবো আমি?কাল করে দিলে হয় না?

– না হয় না এখনি করবি তুই।

আরমিন জামাকাপড় গুলো নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।কিছু একটা ভেবে আবারো ছুটে আসে সে,

– আমার উপর ঠিক কোন কারনে রাগ দেখাচ্ছো আমার জানা নেই পবন ভাই।তবে এটা জেনে রাখো আমার সাথে বেশি বেশি করলে ‘টুম্পা’ নামের একটা মেয়ের সাথে যে তোমার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক তা কিন্তু আমি জানি।আন্টির কানে খুব শীঘ্রই কথাটা তুলবো।

আরমিনের কথা শুনে তাজ্জব বনে যায় পবন।মেয়েটি ঘর থেকে বের হতে নিলেই বিনুনি টেনে ধরে সে।

– আহ ছাড়ো লাগছে আমার।

– লাগুক।কি বলেছিস আমায়?কি করবি?

– যা সত্যি তাই তো বলেছি।

পবন পেছন থেকে হাতটা মুছড়ে ধরে আরমিনের,গালটা চেপে ধরে ডান হাতে।গলাকা°টা মুরগীর মতো মূহুর্তেই ছটফট শুরু করে আরমিন।

– নিজে অন্যয় করিস আবার কে কি করেছে তাই নিয়ে গোয়েন্দাগিরি করিস?আদর যত্নে রাখছি বলে এই না যে সবটা মানবো।গত কয়েক মাসে যে তুই বদলে গেছিস আমি ভালোভাবেই খেয়াল করছি সময় থাকতে ভালো হয়ে যা।বেখাপ্পা হয়ে গেলে কিন্তু তোর নিজের জীবনেই বিপদ ঘনিয়ে আসবে।বি কেয়ার ফুল।

পবন হাতটি ছেড়ে দেয় সহসা।ছলছল চোখ নিয়ে আরমিন পবনের দিকে তাকায়।এমন ব্যবহার আর কখনো করেনি ছেলেটি।তবে আজ হঠাৎ রেগে গেলো কেন?

– এই কাদবি না আমার সামনে।যা কাঁদতে হলে এই জামাকাপড় গুলো কাঁচবি আর কাদঁবি।বে হ আমার রুম থেকে।

#চলবে..….

#মায়াপ্রপঞ্চ
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৩]
______________
– তুই এটা কি করলি পবন!বাইরে ঝড় শুরু হয়ে গেছে আরমিনকে এখন পাঠিয়েছিস পুকুর পাড়ে।মেয়েটা ভিজে ভিজে তোর জামা কাপড় পরিষ্কার করছে।

নাহার বেগমের কথায় বইটা বন্ধ করে চোখ তুলে তাকায় সে।জানলার কাঁচটা সরিয়ে দেখে নেয় বাইরের অবস্থা।প্রচন্ড রোদের মাঝে কীনা মাত্র কয়েক মিনিটেই আবার প্রবল তুফান আর বৃষ্টিপাত।সবটাই আল্লাহর ইচ্ছা।
– তাকে আমি বলিনি ভিজে ভিজে জামা কাপড় কাচঁতে।যখন পাঠিয়েছিলাম তখন বেশ রোদ ছিল।

– হ্যা কিন্তু এখন তো বৃষ্টি হচ্ছে।আমি আরমিনকে বার বার ডেকেছি ঘরে ফিরতে কিন্তু সে আসেনি।ভিজে ভিজে তোর জামার কাপড় পরিষ্কার করছে।

– সালেহা আন্টি কোথায়?

– সে তো রান্না শেষে বাড়ি ফিরে গেছে।

পবন কিছু একটা ভাবলো।চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে সোজা রুমের বাইরে হাঁটা শুরু করলো।উদ্দেশ্য আরমিনের কান্ড দেখা।
.

প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কাজ করছে আরমিন।বেশ কিছুক্ষণ যাবৎ কেঁদেছিল নিশব্দে।বৃষ্টির গতিক বৃদ্ধি পাচ্ছে ধীরে ধীরে।সবদিকেই ধোয়াশার মতো ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে।
পুকুরের প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা নারিকেল গাছগুলো হেলেদুলে যেন নৃত্য করছে।তবে যতবার গাছ গুলোর দিকে তাকিয়েছে ততবার ভয়ে কুঁকড়ে উঠে আরমিন।যেন এখনি তার গায়ে ভেঙ্গে পড়বে।তবুও জেদকে পশ্রয় দিয়ে বসে রইলো আরমিন।সাহেব বাবুর জামাকাপড় পরিষ্কার শেষ হওয়া ছাড়া সে উঠবে না।

– আরমিন উঠে আয়।গাছের ঢাল পালা ভেঙ্গে পড়বে তোর উপর।

পবনের কন্ঠে চকিতে তাকায় সে।তাকে দেখেও না দেখার ভান করে আবারো কাজে মনোযোগী হয়

– আরমিন আমি উঠে আসতে বলেছি।

– কাজ শেষ হলে আমি আসবো পবন ভাই তুমি যাও।

– আসতে বলেছি আমি।

– যাবো না আমি।

– উঠে আয়।

– না।

– আমার কথা কি তোর কানে যাচ্ছে না?

আরমিন প্রত্যুত্তর করলো না।সে তার কাজে ব্যস্ত।তার কান্ডে বেশ রাগ হলো পবনের, বালতিতে থাকা সব জামা কাপড় ছুড়ে মারলো পুকুরে।তার এমন কাজে হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে আছে আরমিন।

– এ আপনি কি করলেন?

– আমার কথা শুনলে এমনটা হতো না নিশ্চই।পাঁচ মিনিট সময় দিলাম উঠে আয়।

পবন মাথার চুল গুলো আঙুল দিয়ে পিছনে ঠেলে চলে যায়।অপর দিকে আরমিন ঝাপিয়ে পড়ে পুকুরে।খুব শীঘ্রই বালতিটা নিয়ে উঠে আসে সিড়ির কাছে।
__

ভার্সিটির গেটের সামনে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে পবন।তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে তার বন্ধু রিজু,সায়মন।

– টুম্পা কী সত্যি আজ এসেছে নাকি মজা করছে তোর সাথে?

সায়মনের কথায় বাইকের উপর স্থির হয়ে বসে পবন।

– মজা করবে কেন?সে সত্যি এসেছে।তোরা কী মেলায় যাবি?

– চল ঘুরেই আসি

তাদের কথার মাঝেই টুম্পা এগিয়ে আসে পবনের কাছে।

– কেমন আছো তুমি?

টুম্পার কথায় সৎবিৎ ফিরে সবার।মাক্সের আড়ালে উচ্ছ্বসিত চোখ যুগল দেখে পবনের যেন আজ সব ক্লান্তি হাওয়া হয়ে গেছে।বাকি বন্ধু দুজন তাদের বাইকে উঠে রওনা দেয় মেলার উদ্দেশ্য।এদিকে পবন আগাগোড়া একবার দেখে নিলো তার প্রেয়সীকে।মানান সই সেলোয়ার কামিজের সাথে হিজাব বেঁধেছে।

– যাবে টুম্পা?

– কোথায়?

– কেশবপুরের শেষ প্রান্তে মেলা বসেছে।সায়মন রিজু সেদিকেই গেলো।চলো আমরাও যাই।

.
দুপুরের সময় হওয়ায় মেলায় খুব একটা ভিড় দেখা গেলো না।শাওনের হাতে হাত রেখে নিশ্চিন্ত মনে আইস্ক্রিমে কামড় বসাচ্ছে আরমিন।তার বাড়ি থেকে মেলায় আসতে প্রায় এক ঘন্টার মতো সময় লাগে তাই এখানে তার পরিচিত কারো সাথে দেখা হবে না ভবে শাওনের হাতটা আঁকড়ে ধরলো সে।লেখনীতে পলি আনান।এই ছেলেটাকে তার বড্ড ভালো লাগে।উড়াধূড়াহীন ভদ্র অমায়িক ছেলে।অবশ্য বেশ যত্নও নেয় আরমিনের।

– আরেকটা আইস্ক্রিম কিনে দাও না শাওন।

– আর একটাও না অলরেডি তিনটে তোমার পেটে চলে গেছে।গলা ব্যাথা করবে।এবার বলো কি কিনবে?কাচের চুড়ি নিবে?চলো ওইদিকে চুড়ির দোকান।

চুড়ির নাম শুনতেই আইস্ক্রিমের রেশটা গায়েব হয়ে গেলো আরমিনের মাঝে শাওনের হাত ধরে ছুটে চললো চুড়ির দোকানের দিকে।

– তোমার হাতে লাল চুড়ি একটু বেশি মানাবে পরিয়ে দিবো আমি?

– দাও!

শাওন এক মুঠ চুড়ি নিয়ে হাসি মুখে আরমিনের হাতটা জড়িয়ে নেয়।চুড়ি গুলো আরমিনের হাতে ঢুকাতেই কেউ তার ডান হাতটা বেশ শক্ত করে চেপে ধরে।হঠাৎ আক্রমনে চমকে যায় শাওন।মাথা তুলে তাকাতে পবনকে দেখে কিঞ্চিৎ ঘাবড়ে যায়।

– পবন ভাই আপনি মেলায়?

শাওনের কথা উপেক্ষা করে পবন ছোট চোখ করে তাকিয়ে রইলো আরমিনের দিকে।এদিকে আরমিন দ্বিধাহীন চোখে তাকিয়ে আছে পবনের দিকে।সে তার বয়ফ্রেন্ড নিয়ে এসেছে মেলায় আর পবনো গার্লফ্রেন্ড নিয়ে তাহলে সমান সমান।পবনের তো এখানে নাক না গলালেও চলে।

– তুই আজ কলেজ যাসনি? তোর কলেজ ছুটি তিনটায় আর এখন মাত্র দুপুর হলো।

– গেছিলাম দুটো ক্লাস করেই চলে এসেছি।

– সালেহা আন্টিকে কি বলে দিবো তার মেয়ে বাইরে কি করছে?

– বলোনা বলো তাতে আমার কিচ্ছু হবে না।যা ঝড় যাবে তোমার উপর যাবে।কারন মা চেয়েছিল আমাকে বিয়ে দিয়ে বন্দি কর‍তে কিন্তু তুমি সব বিয়ে ভেস্তে দিলে।

– আমি তো চেয়েছিলা তোর পড়াশোনা যেন ঠিক মতো হয় তাই।

– কিন্তু আমি তো চাই না পড়াশোনা করতে।

পবন কথার পিঠে আর কোন কথা খুঁজে পেলো না।ইচ্ছে করছে মেয়েটার গালে দুটো চ’ড় মারতে কিন্তু পরিস্থিতির দায়ে সে আজ চুপ।

টুম্পা এতক্ষণ ওদের কথা কাটাকাটি দেখছিল।পবনকে রাগতে দেখে তার হাত টেনে নিয়ে আসে কিছুটা দূর।

– বাদ দাও পবন।ওই মেয়েটাকে নিয়ে তোমার এত চিন্তা কিসের?

– তুমি বুঝবে না।

– আমার ধারনা কি ঠিক!তুমি মেয়েটাকে পছন্দ করো?

মিহিয়ে যাওয়া কন্ঠে কথাটা বলে একটা ঢোক গিললো টুম্পা।পবন তার দিকে আগুনের চুল্লির মত মুখ করে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ।রাগ ক্ষোভ সবটা যেন ফেটে বেরিয়ে আসতে চাইছে।পকেট থেকে ফোন বের করে দ্রুত ফোন করে রিজুকে,

– হ্যালো রিজু কোথায় তোরা?

– এইতো আচারের স্টলে আছি।তোরাও আয়।

– শুন, আইস্ক্রিমের স্টলের সামনে যে চুড়ির দোকানটা আছে সেখানে আরমিন আর শাওন আছে।আড়াল থেকে দুজনকে চোখে চোখে রাখবি।বলা তো যায় না শাওন ছেলেটার উদ্দেশ্য কি।

– আমরা এখনি আসছি তুই ফোন রাখ।

.
আরমিনের বাড়ি ফিরতে ফিরতে লেগে যায় প্রায় শেষ বিকেল।পবন বাড়িতে কিছু নালিশ করেছি কী না সেই ভয়ে তটস্থ সে।বাড়ি ফিরতে তার বাবার শিয়রে বসে থাকতে দেখা যায় রিহানাকে।

– রিহানা মা কোথায় রে?

– মাতবর বাড়িতে গেছে।

– এই অবেলায় মাতবর বাড়িতে কি?

– ঘরের চাল ফুরিয়ে গেছে বুবু।তাই আম্মা চাল আনতে গেছেন।আর টুকটাক নাকি কিছু কাজ আছে আসতে দেরি হবে বললো।

আরমিন নিশ্চিন্ত মনে শ্বাস ছাড়লো।ব্যাগ থেকে কালো আর লাল রঙের চুড়ি ধরিয়ে দিলো রিহানার হাতে।

– এগুলো কার বুবু?

– তোর জন্য এনেছি।পছন্দ হয়েছে?

– খুব পছন্দ হয়েছে।টাকা পেলে কোথায় তুমি?

রিহানার কথা সম্পূর্ণ ঘুরিয়ে দিলো সে।কথার প্রত্যুত্তর না করে পালটা প্রশ্ন ছুড়লো রিহানার দিকে,

– আব্বার ওষুধ দিয়েছিস ঠিক মতো?

– হ্যা।তুমি যাও গোসল করে আসো। মা বলেছে সন্ধ্যার পর যেন পড়তে যাও মাতবর বাড়িতে।
_

পবনের একমাত্র বোন প্রমা।এবার ক্লাস এইটে উঠেছে।প্রতিদিন সন্ধ্যায় নিয়ম করে দুই ঘন্টা পবনের কাছে পড়তে বসে সে।তার সাথে সামিল হয় আরমিন এবং রিহানা।পবন পড়া শুরু করছে প্রায় বিশ মিনিট হতে চললো এখনো আরমিন আসার নাম গন্ধ নেই।এমনিতেই দুপুরের কান্ডে তার মেজাজ বেজায় চটে আছে।

– রুমে আসবো পবন ভাই?

অবশেষে কাঙ্ক্ষিত কন্ঠ শুনে প্রমা পবন দুজনেই ঘুরে তাকায়।পবন মাথা নাড়িয়ে আরমিনকে আসতে ইশারা করে।

– এত দেরি কেন করলে আরমিন আপু?

– এই পড়ার সময় কথা বলতে নিষেধ করেছিনা আমি?

প্রমার প্রশ্নে হঠাৎ ধমকে উঠে পবন।তার ধমকে প্রমা সহ আরমিন দুজনেই খানিকটা কেঁপে ওঠে।

চুপচাপ ভয়ে প্রমার কাছটায় বসে আরমিন।কিছুক্ষণ পড়ানোর পর রুমে ঢুকে ক্লাস টেনে পড়ুয়া পবনের ভাই প্লাবন।প্লাবন বেশ তাড়া দিয়ে ডাকতে শুরু করে আরমিনকে,

– আরমিন আপু শাওন ভাইয়া এসেছে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে, তোমার সাথে নাকি জরুরি কিছু কথা ছিল।

‘শাওন’ নামটা শুনে কিঞ্চিৎ চমকে যায় আরমিন।ভয়ে ভয়ে চোখ সরিয়ে তাকায় পবনের দিকে।

– যাই পবন ভাই?

– রাত দশটার আগে উঠতে পারবি না।সবে আটটা ষোলো বাজে।

– প্লিজ পবন ভাই!

– বললাম তো না।প্লাবন তুই রুম থেকে বের হ আর বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে দে।

পবনের ধমকে প্লাবন তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে যায় রুম থেকে।প্রমা চুপচাপ বইয়ের দিকে তাকিয়ে আল্লাহ আল্লাহ জিকির করছে।কেন যে তার ভাই আজ রেগে আছে আল্লাহ মালুম!

– কাজটা ভালো করলেন না পবন ভাই।

– আজ পর্যন্ত কোন কাজ আমি ভালো করিনি।আমি বেঁচে থাকতে তোকে এখন কিছুতেই এই রুম থেকে বের হতে দিবো না।

– তো ম’রে যান!আপনি ম’রে গেলে আমি বের হতে পারবো।

#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here