মায়াপ্রপঞ্চ,০৪,০৫

0
883

#মায়াপ্রপঞ্চ,০৪,০৫
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৪]
______________
পুরোনো বাড়িটাকে আবার নতুনের মতো করতে কাজে লেগে পড়েছে বেশ কয়েকজন লোক।জাবির মাতবর সবাইকে কাজের নির্দেশ দিয়ে আরাম কেদারায় গা এলিয়ে দিয়েছেন।’মাতবর নিবাস’ বাড়িটি বেশ পুরোনো।জাবির মাতবরের দাদার আমলের এই বাড়িটি।যৌথ পরিবার হওয়ায় দোতলা এই ভবনটিতে প্রতিটি কক্ষে আপনজনদের অবস্থান ছিল।ধীরে ধীরে পালটে যায় সবকিছু। কেউ বেঁচে আছে, কেউ পাড়ি জমিয়েছে না ফেরার দেশে।বর্তমানে মাতবর বাড়িতে আছেন জাবির মাতবর এবং তার ভাই “আছিম মাতবরের” পরিবারের সদস্যরা।বেশ আগে থেকেই কেশবপুরে মাতবর পরিবারের নাম-ডাক,সুখ্যাতি, দাপট ছিল।যার ধারাবাহিকতা এখনো ধরে রেখেছেন জাবির মাতবর।তার সাথে হাতে হাত রেখে সবটা সামলে রাখছেন আছিম।আছিমের বিয়ের সম্বোন্ধ হয়েছিল তার দূর সম্পর্কের আত্নীয়র সাথে।মেয়েটির নাম “আমীনা”।রূপে গুনে মাশাল্লাহ।সেই ঘরে জন্ম নিয়েছে ফুটফুটে এক কন্য সন্তান।বাচ্চাটার নাম “মনিরা”।

মাঝ উঠনে চোখ বন্ধ করে ধ্যানে ছিলেন জাবির।কারো পায়ের শব্দে ধীরে ধীরে চোখ তুলে তাকায়।হাতে চায়ের কাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আরমিন।মেয়েটাকে তার বড্ড মায়া লাগে।এই মেয়েটিকে যতদিন না ভালো ঘরে বিয়ে দিতে পারবেন ততদিন তার মাথা থেকে এই বাড়তি চিন্তা যাবে না।

– কিরে নাস্তা করেছিস সকালের?

– হ্যা আংকেল করেছি।চা টা এবার শেষ করুন।একটা প্রশ্ন করবো আঙ্কেল?

– বল কী বলবি?

– হঠাৎ বাড়ির কাজ করাচ্ছো কেন?শুনলাম নতুন করে রঙ করা হবে?

– হ্যা তোমার ছোট আংকেল চাইছে এবার অন্তত বাড়িটার রঙ করানোর ব্যবস্থা করা হোক।পুরানো আমলে আর কত থাকবো।এবার একটু নতুন বেশভূষা ধরা যাক।

আরমিন স্মিথ হেসে তাকায় জাবিরের দিকে।বাড়ির ভেতর থেকে পবনের চিৎকার শুনে দ্রুত এগিয়ে যায়।

– পবন ভাই আমাকে ডাকছিলে?

– রুমে আয়।

পবনের পিছুপিছু ছুটে চলে আরমিন।ওয়ারড্রবে থাকা সব জামাকাপড় এলোমেলো ভাবে পড়ে আছে।পুরো রুমটাই তছনছ অবস্থায় দেখে ভ্রু কুচকায় আরমিন।

– এমন হাল করেছো কেন রুমটার?

– আমার ব্লাক টি-শার্ট টা কোথায়?খুঁজে পাচ্ছি না কেন?কাল তোকে ধুতে দিয়েছিলাম।

– আ…আমাকে!হয়তো তুমি যে পুকুরে বালতি ছুড়ে মেরেছিলে পুকুরে পড়ে ডুবে গেছে।কিন্তু আমি তো সব জামাকাপড় নিয়েছিলাম।

– হোয়াট?

পবনের ধমকে শিউরে উঠে আরমিন।ঢোক গিয়ে পিটপিট চোখে তাকায় ছেলেটার দিকে।যেন তার মূল্যবান কোন রত্ন হারিয়ে গেছে।অথচ হারালো কী না মাত্র একটা টি-শার্ট।

– আমাকে বকবে না একদম।সবটা দোষ তোমার।কেন রাগ দেখাতে গেলে?

পবন উত্তর দিলো না।অবাক পানে তাকিয়ে রয় মেঝের দিকে।তবে শরীর জুড়ে যে রাগের বিস্তার হয়েছে তা ঢের বোঝা যাচ্ছে।অবস্থা বেগতিক দেখে আরমিন কথার সুর পালটে নেয়।

– পবন ভাই মাত্র একটা টি-শার্ট।ব্যাপার না আবার কিনে নিয়েন।আচ্ছা থাক যেহেতু আমার দোষ মাস শেষে টিউশনির টাকা দিয়ে আমি আপনায় কিনে দিবো।

– টি-শার্টটা আমায় টুম্পা দিয়েছিল।প্রিয় মানুষের দেওয়া উপহার যে কতটা দামি হয় তা তুই বুঝিস?

পবনের শান্ত কন্ঠে আক্ষেপ সুর তুলে আরমিন।বুকের ভেতটায় মোচড় দিয়ে উঠে।আসলেই পবন দুঃখ পেয়েছে।এই মূহুর্তে ঠিক কি বলা প্রয়োজন জানা নেই তার,তাই চুপচাপ ধীর পায়ে সরে পড়তে চাইলো রুম থেকে।তখনি পেছন থেকে হাতের টান পড়ায় থমকে যায় সে,

– পবন ভাই হাতটা ছাড়ুন।

পবন হাতটা ছাড়লো না।বরং কাছে টেনে নিলো জোর করে।পবনের নখ গুলো দেবে যাচ্ছে আরমিনের হাতে।বলিষ্ঠ দেহের মানুষটার দিকে তাকিয়ে থমকে যায় তার মূহুর্ত।

– কাজটা একদম ভালো করলি না আরমিন।আমার টি-শার্টটা ফেভারিট ছিল।সারাদিন তো শাওন শাওন করিস।শাওনের দেওয়া এই কাঁচের চুড়ি পড়ে ঘুরিস।প্রিয় মানুষের দেওয়া উপহার হারালে কেমন লাগে আজ তোকে বোঝাবো।

কথাটা বলেই আরমিনের হাতের কাঁচের চুড়িগুলো মুঠোয় নিয়ে নিলো পবন।একটু চাপ প্রয়োগেই দুমড়েমুচড়ে গেলো সব চুড়ি।ভেঙ্গে পড়লো মেঝেতে।স্তব্দ রুমটা রিনঝিন ঝংকার তুললো মূহুর্তে।মেয়েটার ভয়াকুল চোখ দুটোতে অশ্রুর দেখা পাওয়া গেলো লাহমায়।সেই চোখের দিকে তাকিয়ে আছে পবন অপলক ভাবে।আজ যেন আক্ষেপ নেই এই চোখে জল গড়িয়ে পড়ায়।আরমিন নত হয়ে তাকিয়ে আছে মেঝের দিকে।দৃষ্টি তার ভাঙ্গা চুড়ি গুলোর দিকে।আকস্মিক পবন তাকে ছিটকে দূরে সরিয়ে দেয়।

– রুম থেকে বেরিয়ে যা।আমার চোখের ত্রিসীমানায় যেন তোকে না দেখি।

আরমিন দাড়ালো না ছুটে চলে যায় বাইরে।এদিকে দরজার বাইরে থেকে সবটা দেখছিলো পবনের ছোট চাচার চার বছরের মেয়ে মনিরা।তার প্রিয় আরমিন আপুকে দুঃখ দিয়েছে পবন ভাই এর নালিশ তো আজ করতেই হবে।
_

টুম্পার সাথে একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে পবন।মুখটা তার বেশ গম্ভীর।টুম্পা আসার পর থেকে এক প্রশ্ন বার বার করেই যাচ্ছে।

– পবন আমি তোমায় কিছু জিঙ্গেস করছি!উত্তর দিচ্ছো না কেন?টি-শার্টটা পড়লে না কেন?তোমার কি পছন্দ হয় নি?

– তেমন কিছু না আসলে খুঁজে পাচ্ছিলাম না।

– এটা আবার কেমন কথা।সত্যি করে বলো কি হয়েছিল।

পবন সত্যটা লুকালো না সবটা জানিয়ে দিলো টুম্পাকে।সবটা শুনে কিছুক্ষণ চুপ ছিল সে।

– পবন আমার মনে হচ্ছে আরমিন ইচ্ছা করেই এইসব করেছে।ও হয়তো তোমার সাথে আমাকে সহ্যই করতে পারে না।

– আরমিন কি করে জানতো তখন যে ওই শার্টটা তুমি আমায় দিয়েছিলে?বাদ দাও।সবটা দোষ আমারি ছিল।

পবনের কথার মাঝে তার ফোন বেজে উঠে।স্কিনে ভেসে উঠে ‘BABA’ নাম।

– হ্যালো আব্বা বলো।

– তুই কোথায়?দ্রুত বাড়ি আয়।

– এখন?

– হ্যা এখনি আসবি।

– ঠিক আছে।

পবন দেরি করলো না টুম্পার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চললো বাড়ির পথে।

.

চেয়ারে মুখ গোমড়া করে জাবিরের পাশে বসে আছে আরমিন।তার সাথে প্রমা,প্লাবন এবং মনিরা।
সবার দিকে একপলক তাকিয়ে মুখ খুললো পবন।

– কি হয়েছে আব্বা?এত জরুরি তলব?

– আরমিনের হাতে চোট দিয়েছিস কেন?

পবন আগাগোড়া একবার দেখে নিলো আরমিনকে।বাম হাতটায় ব্যান্ডেজ দেখা যাচ্ছে।তবে কি হাত কেটেছে?

– আমি কেন এমনটা করেছি তা তুমি আরমিনকেই জিজ্ঞেস করো।শুধু শুধু তো আর এমন করি নি।

– একটা শার্টের জন্য তুই এমন করবি?পা°গল নাকিরে তুই?

পবন উত্তর দিলো না,বরং জাবিরের সামনেই আরমিনের বিনুনিটা ধরে একটা টান দিয়ে ঘরের ভেতরে চলে গেলো তার কান্ডে সবাই ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কোন প্রতিবাদ করলো না।
_

দিন আসে দিন যায়।এভাবেই পেরিয়ে যাচ্ছে সময় আরমিন আর পবনের মাঝে তৈরি হয়েছে দারুন দূরত্ব আরমিনো আর পড়তে আসেনা পবনের কাছে।সেদিন কলেজের অনুষ্ঠানে আরমিন আর শাওন দুজকে একসঙ্গে বসে থাকতে দেখে বেশ রাগ হয় পবনের কিন্তু কিছু বলার মতো ভাষা খুঁজে পেলো না।আরমিন আর শাওনের প্রেমটা যেন ক্রমশ গাঢ় হচ্ছে।সবটা দেখেও কিচ্ছু বলতে পারছে না পবন।
.
গত দুই বছর থেকে চাচাচাচির বাড়ি থেকে পড়াশোনা করছে টুম্পা।তার মা বাবা থাকেন প্রত্যন্ত এক অঞ্চলে।আজ টুম্পার চাচাতো বোনের বেশ বড় করেই বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে।সেই আয়োজনে পুরো এলাকার সবাইকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে।আমন্ত্রণ রক্ষার্থে মাতবর বাড়ির সকলেই সেখানে উপস্থিত হবে তাদের সঙ্গে যাবে রিহানা এবং আরমিন।সালেহা থেকে যাবেন বাড়িতে।

বাড়ির মহিলাদের তৈরি হতে সময় লাগছে বিধায় বসার ঘরে বাড়ির পুরুষ সদস্যরা বসে আছেন।সকলের মুখেই বিরক্তির আভাস।ভারী গাউনটা ধরে সিড়ি দিয়ে নেমে আসে আরমিন তার সাজপোশাক দেখে বেশ চমকে যান জাবির।

– কিরে মা এই জামাটা কোথায় পেলি?বেশ দারুন মানিয়েছে তোকে।

– ছোট আন্টি দিয়েছে।আমায় কেমন লাগছে বলো?

আরমিনের কথায় পবনো ঘুরে তাকায় মূহুর্তেই দুচোখ আবব্ধ হয়ে যায় আরমিনের মাঝে।সাধারণ মেয়েটার মাঝে রঙচটা কৃত্রিম সাজ।তবুও মন্দ নয় বরং আকর্ষনীয় লাগছে তাকে।পবনের ছোট চাচা আছিম মুখটাকে পাংশুটে করে বলে,

– এক রঙিলার জ্বালায় ঘরে থাকা দায় এখন আবার আরেকজনকেও রঙিলা সাজিয়ে ঘুরাচ্ছে।আরমিন মা তোকে এমনিতেই বেশ সুন্দর লাগে।খবরদার তোর ছোট আন্টির পাল্লায় পড়বি না।

আছিমের কথা শুনে ঠোঁট টিপে হাসে পবন।সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে সবটা শুনে নেয় আমীরা।দুচোখ বড় করে দাঁতে দাঁত চেপে কিছু একটা বলেন আছিমকে।যার উত্তর আছিম খুব সহজেই বুঝে নেয়।

– রাতে রুম আসো খবর আছে তোমার!

#চলবে….

#মায়াপ্রপঞ্চ
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৫]
_____________
বেশ বড় করে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে টুম্পার চাচাতো বোনের। বড় বাড়িটায় মানুষের কলরবে মুখোরিত।কেশবপুরের বড় ব্যবসায়ীর মেয়ের বিয়ে কীনা তাই এত রমরমা আয়োজন।রিহানা,প্রমা,মনীরা,প্লাবন সবাই পুরো বিয়ে বাড়িটা ঘুরে দেখছিলো এর মাঝে তাদের সাথে দেখা হয়ে যায় পুরোনো বন্ধুদের।শুরু হয়ে যায় সকলের আনন্দ উল্লাস।ভারী গাউনটা পড়ে গুটিয়ে হাঁটছে আরমিন।তার পাশে পাশে আসছে আমীনা।পবন আড় চোখে মেয়েটাকে দেখছে।এমন ভারী সাজে আরমিনকে আগে দেখেনি পবন।বাড়ির মুরব্বিদের সাথে দেখা করতে নাহার বেগম এবং আমীনা এগিয়ে যায়,মূহুর্তে একা হয়ে যায় আরমিন।পবন দুচোখ ঘুরিয়ে খুঁজছে টুম্পাকে কিন্তু মেয়েটার আজ কোন হদিস নেই।

– এই আরমিন!

পরিচিত কন্ঠে থমকে যায় আরমিন।ঝটপট ঘুরে তাকাতে দেখতে পায় শাওনকে।খয়েরি রঙের পাঞ্জাবিতে ছেলেটাকে দেখতে আজ একটু বেশি সুন্দর লাগছে।শাওন আরমিনকে ইশারা দেয় আড়ালে আসতে।লেখিকা পলি আনান।আরমিনো আশে পাশে তাকিয়ে পা বাড়ায় প্যান্ডেলের পেছনের দিকটায়।কিন্তু মূহুর্তে কেউ একজন তার হাতটা ধরে নেয় খপ করে।কিঞ্চিৎ বিস্ময় নিয়ে তাকাতে পবনকে দেখে চোখ ছোট করে তাকায় সে।

– কিছু বলবে পবন ভাই?এইভাবে ধরেছো কেন হাত?

– কোথায় যাচ্ছিস?

– না কোথাও না।এমনি দেখছিলাম।

– প্যান্ডেলের পিছনে কী দেখার আছে তোর?আমার জানা মতে বিশেষ কিছুতো প্যান্ডেলের পেছনে থাকার কথা না।

ধরা খাওয়া মুখটা নিয়ে ছোট চোখ করে পবনের দিকে তাকিয়ে রইলো আরমিন।এই ছেলেটা কী আসার আর সময় পায় না।গুরুত্বপূর্ণ সময়েই কী তার আসতে হবে।

– পবন ভাই তুমি যাও টুম্পা আপুর সাথে দেখা করে এসো আমাকে ছাড়।

– কেন আমি টুম্পার কাছে গেলে তুই শাওনের কাছে যাবি?চিপায় চাপায় গিয়ে কিসের প্রেম করিস তোরা?নি’র্ল’জ্জ বে’হায়া।এই যে তোর হাত ধরেছি এই বাড়ি ছাড়ার আগে তোর হাত আমি ছাড়বো না মনে রাখিস।

আরমিন কিছু বলতে যাবে তার আগেই বাড়ি প্রত্যেক সদস্য “বর এসেছে” “বর এসেছে” ধ্বনি তুলতে তুলতে ছুটলো গেটের দিকে তার সাথে এস্তব্যস্ত ছুটে চলে আরমিনো।হাতের টানে তার পিছু পিছু পা বাড়ায় পবন।
.
বিয়ে গেট বেশ বড় করে সাজানো হয়েছে।দূর থেকে দেখে যে কারো মনে তাক লাগে যাবে।ছোট ছোট বাতির সাহায্য সাজানো হয়েছে রাস্তার শুরু থেকে বাড়ির শেষ সীমানা পর্যন্ত।আরমিনের হাতের কব্জিটা পবন ধরে আছে বেশ শক্ত করে।যেন এক ছুটে পালিয়ে যেতে না পারে।ইতোমধ্যে গেটের সামনে বর পক্ষের কাছে মোটা অংকের টাকার দাবি করে বসেছে একদল মেয়ে পক্ষের লোকজন।সে দিকেই বেশ শোরগোল শোনা যাচ্ছে।সবার মাঝে আনন্দ করতে না পেরে বিরক্ত হয় আরমিন।

– পবন ভাই আমার হাতটা ছাড়ুন।সবার সঙ্গে মজা করে টাকা তুলবো কিন্তু আপনি কি করছেন হাতটাই ছাড়ছেন না।

– এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা কর।ওদিকটায় যাওয়ার প্রয়োজন নেই।

আরমিন হাতটা এবার ক্লান্ত ভঙ্গিতে ছেড়ে দিলো।সে ভালোভাবেই জানে আজ পবন তাকে ছাড়বে না।

– পবন ভাই আপনার যখন বিয়ে হবে ফুলশয্যার রাতে আমি এইভাবে দরজার সামনে বাঁধা দিয়ে টা’কা দাবি করবো।যদি আপনি টাকা না দেন তবে ভাবীর কাছে কিছুতেই আপনাকে যেতে দেব না।না মানে না।

আরমিন হাসতে হাসতে কথাটা বলে মুখ তুলে তাকায় পবনের দিকে।মূহুর্তেই হাসি হাসি মুখটা চুপসে যায়।ঠোঁট কামড়ে চোখটা বন্ধ করে রাখে কয়েক সেকেন্ড।এক চোখ খুলে আবার আড় চোখে তাকায় পবনের দিকে।নাহ ছেলেটা এখন বেজায় চোটে আছে।

– নি’র্লজ্জ মেয়ে।কোথায় কোন কথা বলতে হবে সেটাও জানিস না।তোর বয়সে আমি পড়াশোনায় ডুবে ছিলাম আর তুই আমাদের ফুলশয্যার গীতি শুনাচ্ছিস।

– তোমার মতো তো আর আমি ঢেরশ নই!

হাতের বাধঁন আলগা পেয়ে কথাটি বলেই ছুটে পালায় আরমিন।এদিকে কপট রাগ দেখিয়েও পাঞ্জাবির হাতা ঠিক করতে করতে হেঁসে দেয় পবন।মনের অজান্তেই কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,

– ওরে আমার পা/গ/ল রে!
_
বিয়ে বাড়ির আয়োজনে ব্যস্ত সবাই।কিছুক্ষণ আগেই পবনকে আড়ালে আসতে ইশারা করে টুম্পা।পবন এসে অপেক্ষা করলেও টুম্পার আসার নাম-গন্ধ নেই।ফিরে যাবে বলে উদ্যত হলেই হঠাৎ কেউ এসে জড়িয়ে ধরে তাকে।মূহুর্তেই অসাড় হয়ে যায় পবনের মস্তিষ্ক।প্রিয়তমার জড়িয়ে ধরায় যে তাকেও আদরে জড়িয়ে নিতে হবে বুঝতে পারছে না সে।অপরপক্ষের সাড়া না পেয়ে হাতের বাঁধন ধীরে ধীরে ছুটে যায় মেয়েটার।

– পবন কী হয়েছে?আমাকে জড়িয়ে ধরবে না?

– হু!তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে টুম্পা।

পবনের কথায় লজ্জা মিশিয়ে হাসে মেয়েটা।অথচ সে বুঝতেই পারলো না অপর পক্ষের ব্যক্তিটি শূন্য অনুভূতি নিয়ে তাকে ভালোবাসে।তবে কী একে ভালোবাসা বলা চলে?

পবন দুচারটা কথা বলে এস্তব্যস্ত পায়ে ছুটে চলে আসে।টুম্পার প্রতি তার এত শূন্য অনুভূতি কেন?কেন মেয়েটার ডাকে সে সাড়া দিতে পারে না, মন মত ভালোবাসতেও পারে না।অবশ্য এই প্রেমের সম্পর্ক পবন তার দিক থেকে করেনি।বরং টুম্পা সু-ই-সাইডের দোহাই দিয়ে প্রেমের সম্পর্কে রাজি করিয়েছে তাকে।এইভাবে আর কত দিন চলবে?
__

মাতবর বাড়িতে আজ হইহই রইরই শুরু হয়ে গেছে।ভোর চারটায় প্লাবন সালেহাকে দ্রুত ডেকে নিয়ে এসেছে মাতবর বাড়িতে।অসুস্থ স্বামীকে রেখে গেছেন ছোট মেয়ে রিহানার কাছে।দীর্ঘবছর পর বাড়িতে পা রাখবেন জাবির মাতবরের শৈশব কালের বন্ধু বারেক খন্দকার।গ্রাম থেকে জীবিকার তাগিতে তারা সপরিবারে শহরে পাড়ি জমান।ধীরে ধীরে নিজেদের ব্যবসা বানিজ্য প্রতিষ্ঠা করে পাড়ি জমান দেশের বাইরে।দীর্ঘ বছর দেশের বাইরে থেকে এক সাপ্তাহ আগেই বাংলাদেশে ফিরেছেন বারেক।গ্রামের উদ্দেশ্য আসবে বলে মধ্যে রাতে জানান জাবিরকে।ভোরের আলো ফোটার আগেই আয়োজনে মুখোরিত হয়ে মাতবর বাড়ি।

.

সকলের রুম পরিষ্কার শেষে পবনের রুমের সামনে এসে উপস্থিত হয় আরমিন।

– পবন ভাই আসবো?

– আয়।

– রুমটা পরিষ্কার করার ছিল।চাদর পাল্টাবো।

পবন প্রত্যুত্তর করলো না।দু’হাত ঝকরা দিয়ে বারান্দার দিকে পা বাড়ায়।ভোরের মিষ্টি আলো উঠতে শুরু করেছে।মৃদুমন্দ বাতাসে শিউরে উঠছে শরীর।আরমিনকে বারান্দায় আসতে থেকে ভ্রু কুচকায় সে,

– কি চাই?

– প্যাকেটটা নাও।তোমার জন্য!

পবন হাত বাড়িয়ে প্যাকেটটা নিলো।কালো।একটি টি-শার্ট দেখে ভ্রু কুচকে যায় পবনের।

– এই টি-শার্ট কার জন্য?

– তোমার জন্য পবন ভাই।

– কেন এনেছিস?

– সেদিন তোমার টি-শার্ট হারিয়ে ফেলেছিলাম তাই……

– দয়া দেখাতে এসেছিস?নাকি আদিখ্যেতা?

কথাটা বলেই পবন হাতে থাকা টি-শার্ট ছুড়ে মারে মেঝেতে।

– বেরিয়ে যা রুম থেকে সকাল সকাল এসব তোষামোদ ভালো লাগছে না।বাড়িতে ডেকেছে কাজ করার জন্য যা গিয়ে কাজ কর।

অপমানে থমথমে হয়ে রইলো আরমিনের মুখ।পবনের দিকে তাকিয়ে রইলো অভিযোগের মুখ নিয়ে।তবে কোন কথা না বলে সহসা বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।পবন তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুখ বাঁকায়।মেঝে থেকে প্যাকেটটা উঠিয়ে তৃপ্তির হাসি হাসে।অজান্তেই নিজের বুকে আগলে নেয় টি-শার্টটি।
___
অবশেষে বিকাল নাগাদ কেশবপুরের মাতবর বাড়িতে এসে পৌছে গেছে জাবির মাতবরের বন্ধু এবং তার ছেলে।দামি পোশাক,শহুরে চালচলনে যে কেউ একবার দেখলেই বুঝে যাবে এরা নিশ্চই ধনী ঘরের সদস্য।

জাবির মাতবর বসার ঘরে অতিথি নিয়ে উপস্থিত।হাসি-হাসি মুখে প্রশ্ন ছুড়ে তার বন্ধুর দিকে,

– আসতে কোন সমস্যা হয়নি তো তোর?

– একদমি না।ভাবীকে ডাক,পরিবারের সবাইকে ডাক আমরা পরিচিত হতে চাই।

জাবির মাতবরের ডাকে একে একে সবাই উপস্থিত হলেন।এবং সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন তাদের।

– পবন বাবা দেখ ইনি হলেন তোর বারেক আংকেল।’বারেক খন্দকার’ আর তার ছেলে সুহাইল খন্দকার।

পরিচয় পর্বের মাঝেই মিষ্টির থালি সাজিয়ে বসার ঘরে আসেন সালেহা।কিন্তু উপস্থিত দুই অতিথিকে দেখে সহসা হাত থেকে মিষ্টির থালি বেশ শব্দ করে পড়ে যায় মেঝেতে।শান্ত বুকের ভেতর শুরু হয়ে যায় হৃদ যন্ত্রের আন্দোলন।ভয়ে ঢোক গিলে তাকিয়ে থাকে বারেক এবং সুহাইলের দিকে।
সালেহার এমন আচরণে বাড়ির সকলেই বিমূঢ় হয়ে তাকিয়ে রয়।আশ্চর্যের চরম পর্যায়ে পৌছে যায় সুহাইল এবং বারেক!

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here