মায়াপ্রপঞ্চ,০৮,০৯

0
782

#মায়াপ্রপঞ্চ,০৮,০৯
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৮]
_____________
গোলগাল ফর্সা মুখখানা বেশ ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।সরু কোমড়টায় ছোট দু’হাত ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মনিরা।মেয়েটা একবার তাকালো আরমিনের দিকে আরেকবার সুহাইলের দিকে।আরমিন ভয়ে তটস্থ হয়ে সুহাইলকে ইশারায় ডাকলো।

– এই যে এই?

– একি তোমার এই অবস্থা কেন?এত অল্প সময়ে ঘামিয়ে গেলে।বাচ্চা মেয়েটাকে দেখে ভয় পাওয়ার কি আছে?

– আরে ও বাচ্চা হলে কি হবে?পুরাই ধানিলংকা।আমার ব্যাপারে খুব সিরিয়াস।আমায় কেউ কিছু ঝারি দিয়ে বললেই জাবির আংকেলের কাছে বিচার চলে যায়।সেদিন পবন ভাইয়ের নামেও নালিশ দিয়েছে।

সুহাইল তার কথা শুনে আবার ঠোঁট কামড়ে নেয়।মনিরা এখনো কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কিঞ্চিৎ এগিয়ে এসে সুহাইলের দিকে রুক্ষ স্বরে বলে,

– এই বিদেশি ভাইয়া আরমিন আপুকে ব্যাথা দিয়েছেন কেন?

– কে বললো তোমায়,আমি আরমিনকে ব্যাথা দিয়েছি?

– আমি দেখেছি আপনি ব্যাথা দিয়েছেন।

সুহাইল ঘাড় বাকিয়ে তাকায় আরমিনের দিকে।আরমিন গলায় হাত দিতে ইশারা করে বলে,
– আজকে যদি ও নালিশ করে আমার আম্মা আমায় শে’ষ করে দিবে।

সুহাইল আরমিনের ইশারা বুঝতে পেরে মনিরাকে উদ্দেশ্য করে আরমিনকে প্রশ্ন করে,

– এই যে ম্যাডাম আমি কি আপনাকে ব্যাথা দিয়েছি?

– ক..কই না।

– মিথ্যা বলছো কেন আরমিন আপু আমি দেখেছি।

মনিরার কথায় এবার কপালে হাত থাপ’ড়ে নেয় আরমিন তার কান্ডে সুহাইল বলে,

– মরিয়ম চিন্তা করবে না।মনুর ব্যবস্থা আমি করছি।

সুহাইল কৌশলে মনিরাকে কোলে তুলে নেয় এবং মেয়েটার মুখ চেপে ধরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।

– আমার সাথে চলো মনু তোমায় পি-স্ত-ল কিনে দেবো।যে তোমার আরমিন আপুকে আঘাত দিবে তাকেই গুলি করে মে-রে দিবে।

__
কলেজ থেকে ফেরার পথে শাওনের সাথে কথা বলতে বলতে আসছিলো আরমিন।মাতবর বাড়ির গলিটা পেরিয়ে বড় পিচ ঢালা রাস্তায় উঠতেই সুহাইলের মুখোমুখি হয় সে।আরমিনের সঙ্গে শাওনকে দেখে দু ভ্রুয়ের মাঝখানে চামড়ায় খানিকটা ভাজ পড়ে সুহাইলের।
সুহাইলকে দেখে আরমিন শাওনকে চলে যাওয়ার জন্য ইশারা করে।শাওন কথা না বাড়িয়ে সোজা রাস্তায় হাঁটা শুরু করে। আরমিন দাঁড়িয়ে থাকে সুহাইলের সামনে।

– ছেলেটা কে মরিয়ম?

– আপনি জেনে কি করবেন?

– দেখো মরিয়ম আমি প্যাচানো কথা একদম পছন্দ করি না যা বলবে সরাসরি বলবে।

আরমিন মুখ বাঁকিয়ে সুহাইলকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইলে সুহাইল বাদ সাধে।এগিয়ে যায় আরমিনের আরো কাছে।

– তুমি বলবে?নাকি আমি আমার বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে কথা বের করবো?

– ছেলেটা আমার বয়ফ্রেন্ড।

– বয়ফ্রেন্ড!

– হ্যাঁ আপনার কোন সমস্যা?

– সব সমস্যা তো আমারি।সেই বেটার সাইজ আমি করছি যাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।

শেষ কথাটা বিরবির করে বলে সুহাইল।তার কথার আগা মাথা না বুঝে আরমিন পুনরায় প্রশ্ন করে।কিন্তু তার কথার উত্তর দিলো না সুহাইল।বরং একটা আবদার করে বসলো আরমিনের কাছে।

– আমার সাথে পশ্চিম বাজারে চলো।অনলাইনে কিছু কেনাকাটা করেছি।এখন আমার পার্সেল আসবে।

– আমি যাবো না।আপনি যান।

– যেতে তো তোমাকে হবেই।কারন আমি এখানকার রাস্তাঘাট কিছু চিনি না।

– বড় রাস্তায় সোজা যেতে থাকুন বামে একটা মোড় পাবেন সেখান থেকে খানিকটা গেলেই দেখবেন বেশ বড় বাজার সব কিছুর দোকানপাট।

– কিন্তু আমি তোমার সাথেই যাবো।

– একদম ঢং করবেন না।আম্মা আমাকে বলেই দিয়েছে আপনার সাথে যেন কথা না বলি আর এখন যদি আপনার সাথে সেখানে যাই তবে আমায় বাড়ি থেকেই বের করে দিবে।

– মামি তোমায় বের করে দিলে আমার কাছে চলে আসবে।

– ম-রলেও না।আমি আমার আম্মাকে ভয় পাই।

– সালেহা মামির বিষয়টা আমি দেখছি।তুমি যাবে নাকি আমি কাধে তুলে নিবো?

– ছিহহ!কিসব বলছেন!

– বিশ্বাস হয় না।ওয়েট..

সুহাইল আরমিনের হাতটা চেপে ধরতেই বেশ জোরেই চিৎকার দিয়ে উঠে সে।

– আমি যাবো আমি যাবো।ছাড়েন আমায়।

তার কথায় ঠোঁট কামড়ায় সুহাইল।আরমিন বাধ্য মেয়ের মতো তার সাথে চললো বাজারের দিকে।

বাজারের দিকটায় বেশ মানুষজন।সবাই সবার কাজে ব্যস্ত।আরমিনরা দাঁড়িয়েছে একটি ওষুধ দোকানের সামনে।সুহাইল বাজারের সবটা দেখছে করুন চোখে, আশেপাশে চিপ্স,বিস্কিটের প্যাকেট,পলেথিন,বোতল পড়ে আছে কেউ যেন স্থানটা পরিস্কার করেনি কয়েক সাপ্তাহ।পানি জমে আছে একটি সাইডে সেখান থেকে হালকা পঁ;চা গন্ধ ছড়িয়ে যাচ্ছে চারিদিকে।সেই স্থানে মাছি মশা উড়ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ডেলিভারি বয় এগিয়ে আসলো তার দিকে।ছেলেটা লাল রঙের একটি টিশার্ট পড়েছে।মাথায় ক্যাপ।সুহাইলের সাথে বেশ হেসেই কথা বলছে।আরমিন একা দাঁড়িয়ে থাকতে বিরক্ত হওয়ায় পাশের দোকানে চলে যায়।সেখান থেকে ঠান্ডা পেপসি ক্রয় করে দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিপি খুলে মুখে পুরে নেয় বোতলের মুখ।

ওষুধ দোকানের ভেতর এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আরমিনকে দেখছিলো দুইটা ছেলে।তাদের মাঝে দোকানের মালিকের ছেলে আরমিনকে পছন্দ করে।সুহাইলের মুখে রোদ পড়ায় সে খানিকটা সরে দাঁড়ায়।ততক্ষণে ওষুধ দোকানের ছেলেগুলো ভেবেছে সুহাইল হয়তো চলে গেছে।মালিকের ছেলেটা আগেই প্রশ্ন ছুড়ে তার বন্ধুদের দিকে।

– একটু আগে যে কলেজ ড্রেসে মাইয়া একটা ছিল সেটা কে রে?তোরা চিনস?

– হ চিনি।লুজা কায়িমের মাইয়া।মাতবর বাড়িতে যে থাহে।

– ওরে আল্লাহ সেই ছুডো মাইয়াডা।পবনের হাত ধইরা যে আসতো বাজারে।মাঝে মাঝে মাতবর চাচাও নিয়া আসতো।

– হ এইডাই হেই আরমিন।আমি তো চিনি প্রায় সময় তাগো বাড়ির গলির দিকে আমার যওয়া হয়।

– সেই ছোড বেলার কচি মাইয়া এখনো কি টসটসে কচি রইয়া গেছে।আমার তয় মেলা পছন্দ হইছে তারে।এই মাসেই আব্বারে বলে বিয়ার সম্বোধন পাঠামু।

– উহ বিয়া দিবো না সেই আশা ছাড়ো মিয়া।তোমার মতো ছেলের সাথে পবন ভাই বিয়ার বাদ সাধবো।এমনেও পবন ভাইয়ের সাথে তোমার গেঞ্জাম চলে।

– পবন টবনের দিকে তাকাইবার সময় নাই।আমার যেহেতু চোখ পড়ছেই তহন ওই মাইয়াডারেই লাগবো।দরকার হইলে একরাতের জন্য….

বাক্যটি শেষ করতে পারলো না আর সেই দোকান মালিকের ছেলেটি।তৎক্ষণাৎ হাত দিয়ে কেউ খুবলে ধরে তার গাল।পাশের ছেলেটি কিছু বুঝে উঠার আগেই সুহাইল আক্রমণ করতে থাকে মালিকের ছেলের উপর।কাঁচের তাকের সাথে ছেলেটির মাথা সজোরে আছাড় মা;রে।কাঁচ ভেঙ্গে ছেলেটির গালে ভেদ করে ডুকে যায়।পাশের ছেলেটির সৎবিৎ ফিরতেই আটকাতে নেয় সুহাইলকে কিন্তু ছেলেটি থামবার পাত্র নয়।একাধারে মেরেই চলেছে অপরাধীকে।
ইতোমধ্যে অনন্য লোক এসে জড়ো করে নেয় স্থানটি আরমিন ভীতিকর চাহনীতে দেখছে সবটা।সুহাইলের এমন রোষের সাথে সে ছোট বেলায় একবার পরিচিত হয়েছে।
ছোট বেলায় খেলতে গিয়ে আরমিন টি-টেবিলের কোনার সাথে মাথা কেঁটে যায় এতে ক্ষু/ব্ধ হয়ে সুহাইল সেই টি-টেবিলটি আছাড় মে/রে ভেঙ্গে দেয়।তারপর থেকেই আরমিন ভয়ে মিশতো না সুহাইলের সাথে।কিন্তু সুহাইল আরমিনকে ছাড়ার পাত্র নয়।
এখন আবার এত বছর পর সুহাইলের সেই রাগ দেখে মাথা ঘুরে উঠে তার।

অপরাধী ছেলেটি র/ক্তা/ক্ত অবস্থায় সুহাইলের দিকে রাগান্বিত হয়ে তাকায়।তার চাহনী দেখে সুহাইল আরো বেশি ক্ষেপে যায়।

– ওই কু** বাচ্চা চোখ নামা।চোখ নামা বলছি।তোর সাহস কত,কার দিকে তাকিয়ে এত বাজে সম্বোধন করেছিস!কার দিকে লালসার দৃষ্টিতে তাকিয়েছিস!কাকে দেখে তোর পুরুষত্ব জেগে উঠেছে।তুই যাকে নিয়ে এইসব বলেছিস সে আমার।তাকে বলা মানে আমার সম্মানে আঘাত লাগা।তুই তাকে নিয়ে বাজে ইঙ্গিত দিয়েছিস আমি তোকে স্বাভাবিক ভাবেই বাঁ-চতে দেবো না।

সুহাইল বড় একটি কাঁচের টুকরো নিয়ে ছেলেটির পুরুষাঙ্গে বিঁধে দিতে গেলে আশেপাশের লোকজন তাকে দ্রুত ধরে নেয়।আরমিন ভয়ে ছুটে পালিয়ে যায় সুহাইলকে রেখেই।অপরদিকে সুহাইল ভীড় থেকে বেরিয়ে যায় সবাই তার দিকে ভীতিকর চাহনীতি তাকিয়ে আছে।এই মানুষটিকে এর আগে কখনো দেখে নি কেশবপুর মফস্বলের লোকজন।কে সে?কার এত সাহস,ভরা মজলিশে স্থানীয় নাম ডাক করা ব্যবসায়ীর ছেলেকে মারবে।

সুহাইল দ্রুত বাজার থেকে বেরিয়ে বড় রাস্তার মোড়ে হাঁটা দেয়।ছেলেটাকে মা/রতে মা/রতে সুহাইল যখন আরমিনের দিকে তাকায় ঠিক তখনি মেয়েটা ছুটে পালিয়ে যায় বিষয়টি অগোচর হয়েছে তার।সুহাইল জামাকাপড় ঝেরে ঠিক করে দ্রুত ফোন দেয় বারেক খন্দকারকে।

– হ্যালো বাবা কেশবপুর থানায় মোটা অংকের টাকা পাঠিয়ে দাও।টাকাটা আধা ঘন্টার ভেতরেই পাঠাবে।আর যদি না পাঠাও তোমার সম্মানে টান পড়বে।

– তুই আবার কি করেছিস?

– একজনকে মে-রেছি।এতটাই মে-রেছি ছয় মাসেও সুস্থ হবে কী না সন্দেহ আছে।

– আশ্চর্য কেন মে-রেছিস?

– কোন কথা কিংবা কাজ আমার গায়ে খুব বেশি না লাগলে আমি রুড রিয়েক্ট করি না তা তুমি জানো।আর হ্যা এইসব বিষয়ে মাকে কোন কথা বলবে না।আশা করি মাথায় রাখবে।

সুহাইল ফোন পকেটে পুরে একটি সিএনজি ডেকে নেয়।
অপরদিকে বারেকের কপালে বক্রকৃত দুটি ভাজ পড়ে।তিনি ভালো করেই জানেন সুহাইল ঠান্ডা মেজাজের অধিকারী তবে বেশ তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পূর্ণ।তবে মেজাজ বিগড়ে গেলে সম্পূর্ন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

#চলবে

#মায়াপ্রপঞ্চ
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৮]
_____________
গোলগাল ফর্সা মুখখানা বেশ ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।সরু কোমড়টায় ছোট দু’হাত ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মনিরা।মেয়েটা একবার তাকালো আরমিনের দিকে আরেকবার সুহাইলের দিকে।আরমিন ভয়ে তটস্থ হয়ে সুহাইলকে ইশারায় ডাকলো।

– এই যে এই?

– একি তোমার এই অবস্থা কেন?এত অল্প সময়ে ঘামিয়ে গেলে।বাচ্চা মেয়েটাকে দেখে ভয় পাওয়ার কি আছে?

– আরে ও বাচ্চা হলে কি হবে?পুরাই ধানিলংকা।আমার ব্যাপারে খুব সিরিয়াস।আমায় কেউ কিছু ঝারি দিয়ে বললেই জাবির আংকেলের কাছে বিচার চলে যায়।সেদিন পবন ভাইয়ের নামেও নালিশ দিয়েছে।

সুহাইল তার কথা শুনে আবার ঠোঁট কামড়ে নেয়।মনিরা এখনো কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কিঞ্চিৎ এগিয়ে এসে সুহাইলের দিকে রুক্ষ স্বরে বলে,

– এই বিদেশি ভাইয়া আরমিন আপুকে ব্যাথা দিয়েছেন কেন?

– কে বললো তোমায়,আমি আরমিনকে ব্যাথা দিয়েছি?

– আমি দেখেছি আপনি ব্যাথা দিয়েছেন।

সুহাইল ঘাড় বাকিয়ে তাকায় আরমিনের দিকে।আরমিন গলায় হাত দিতে ইশারা করে বলে,
– আজকে যদি ও নালিশ করে আমার আম্মা আমায় শে’ষ করে দিবে।

সুহাইল আরমিনের ইশারা বুঝতে পেরে মনিরাকে উদ্দেশ্য করে আরমিনকে প্রশ্ন করে,

– এই যে ম্যাডাম আমি কি আপনাকে ব্যাথা দিয়েছি?

– ক..কই না।

– মিথ্যা বলছো কেন আরমিন আপু আমি দেখেছি।

মনিরার কথায় এবার কপালে হাত থাপ’ড়ে নেয় আরমিন তার কান্ডে সুহাইল বলে,

– মরিয়ম চিন্তা করবে না।মনুর ব্যবস্থা আমি করছি।

সুহাইল কৌশলে মনিরাকে কোলে তুলে নেয় এবং মেয়েটার মুখ চেপে ধরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।

– আমার সাথে চলো মনু তোমায় পি-স্ত-ল কিনে দেবো।যে তোমার আরমিন আপুকে আঘাত দিবে তাকেই গুলি করে মে-রে দিবে।

__
কলেজ থেকে ফেরার পথে শাওনের সাথে কথা বলতে বলতে আসছিলো আরমিন।মাতবর বাড়ির গলিটা পেরিয়ে বড় পিচ ঢালা রাস্তায় উঠতেই সুহাইলের মুখোমুখি হয় সে।আরমিনের সঙ্গে শাওনকে দেখে দু ভ্রুয়ের মাঝখানে চামড়ায় খানিকটা ভাজ পড়ে সুহাইলের।
সুহাইলকে দেখে আরমিন শাওনকে চলে যাওয়ার জন্য ইশারা করে।শাওন কথা না বাড়িয়ে সোজা রাস্তায় হাঁটা শুরু করে। আরমিন দাঁড়িয়ে থাকে সুহাইলের সামনে।

– ছেলেটা কে মরিয়ম?

– আপনি জেনে কি করবেন?

– দেখো মরিয়ম আমি প্যাচানো কথা একদম পছন্দ করি না যা বলবে সরাসরি বলবে।

আরমিন মুখ বাঁকিয়ে সুহাইলকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইলে সুহাইল বাদ সাধে।এগিয়ে যায় আরমিনের আরো কাছে।

– তুমি বলবে?নাকি আমি আমার বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে কথা বের করবো?

– ছেলেটা আমার বয়ফ্রেন্ড।

– বয়ফ্রেন্ড!

– হ্যাঁ আপনার কোন সমস্যা?

– সব সমস্যা তো আমারি।সেই বেটার সাইজ আমি করছি যাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।

শেষ কথাটা বিরবির করে বলে সুহাইল।তার কথার আগা মাথা না বুঝে আরমিন পুনরায় প্রশ্ন করে।কিন্তু তার কথার উত্তর দিলো না সুহাইল।বরং একটা আবদার করে বসলো আরমিনের কাছে।

– আমার সাথে পশ্চিম বাজারে চলো।অনলাইনে কিছু কেনাকাটা করেছি।এখন আমার পার্সেল আসবে।

– আমি যাবো না।আপনি যান।

– যেতে তো তোমাকে হবেই।কারন আমি এখানকার রাস্তাঘাট কিছু চিনি না।

– বড় রাস্তায় সোজা যেতে থাকুন বামে একটা মোড় পাবেন সেখান থেকে খানিকটা গেলেই দেখবেন বেশ বড় বাজার সব কিছুর দোকানপাট।

– কিন্তু আমি তোমার সাথেই যাবো।

– একদম ঢং করবেন না।আম্মা আমাকে বলেই দিয়েছে আপনার সাথে যেন কথা না বলি আর এখন যদি আপনার সাথে সেখানে যাই তবে আমায় বাড়ি থেকেই বের করে দিবে।

– মামি তোমায় বের করে দিলে আমার কাছে চলে আসবে।

– ম-রলেও না।আমি আমার আম্মাকে ভয় পাই।

– সালেহা মামির বিষয়টা আমি দেখছি।তুমি যাবে নাকি আমি কাধে তুলে নিবো?

– ছিহহ!কিসব বলছেন!

– বিশ্বাস হয় না।ওয়েট..

সুহাইল আরমিনের হাতটা চেপে ধরতেই বেশ জোরেই চিৎকার দিয়ে উঠে সে।

– আমি যাবো আমি যাবো।ছাড়েন আমায়।

তার কথায় ঠোঁট কামড়ায় সুহাইল।আরমিন বাধ্য মেয়ের মতো তার সাথে চললো বাজারের দিকে।

বাজারের দিকটায় বেশ মানুষজন।সবাই সবার কাজে ব্যস্ত।আরমিনরা দাঁড়িয়েছে একটি ওষুধ দোকানের সামনে।সুহাইল বাজারের সবটা দেখছে করুন চোখে, আশেপাশে চিপ্স,বিস্কিটের প্যাকেট,পলেথিন,বোতল পড়ে আছে কেউ যেন স্থানটা পরিস্কার করেনি কয়েক সাপ্তাহ।পানি জমে আছে একটি সাইডে সেখান থেকে হালকা পঁ;চা গন্ধ ছড়িয়ে যাচ্ছে চারিদিকে।সেই স্থানে মাছি মশা উড়ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ডেলিভারি বয় এগিয়ে আসলো তার দিকে।ছেলেটা লাল রঙের একটি টিশার্ট পড়েছে।মাথায় ক্যাপ।সুহাইলের সাথে বেশ হেসেই কথা বলছে।আরমিন একা দাঁড়িয়ে থাকতে বিরক্ত হওয়ায় পাশের দোকানে চলে যায়।সেখান থেকে ঠান্ডা পেপসি ক্রয় করে দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিপি খুলে মুখে পুরে নেয় বোতলের মুখ।

ওষুধ দোকানের ভেতর এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আরমিনকে দেখছিলো দুইটা ছেলে।তাদের মাঝে দোকানের মালিকের ছেলে আরমিনকে পছন্দ করে।সুহাইলের মুখে রোদ পড়ায় সে খানিকটা সরে দাঁড়ায়।ততক্ষণে ওষুধ দোকানের ছেলেগুলো ভেবেছে সুহাইল হয়তো চলে গেছে।মালিকের ছেলেটা আগেই প্রশ্ন ছুড়ে তার বন্ধুদের দিকে।

– একটু আগে যে কলেজ ড্রেসে মাইয়া একটা ছিল সেটা কে রে?তোরা চিনস?

– হ চিনি।লুজা কায়িমের মাইয়া।মাতবর বাড়িতে যে থাহে।

– ওরে আল্লাহ সেই ছুডো মাইয়াডা।পবনের হাত ধইরা যে আসতো বাজারে।মাঝে মাঝে মাতবর চাচাও নিয়া আসতো।

– হ এইডাই হেই আরমিন।আমি তো চিনি প্রায় সময় তাগো বাড়ির গলির দিকে আমার যওয়া হয়।

– সেই ছোড বেলার কচি মাইয়া এখনো কি টসটসে কচি রইয়া গেছে।আমার তয় মেলা পছন্দ হইছে তারে।এই মাসেই আব্বারে বলে বিয়ার সম্বোধন পাঠামু।

– উহ বিয়া দিবো না সেই আশা ছাড়ো মিয়া।তোমার মতো ছেলের সাথে পবন ভাই বিয়ার বাদ সাধবো।এমনেও পবন ভাইয়ের সাথে তোমার গেঞ্জাম চলে।

– পবন টবনের দিকে তাকাইবার সময় নাই।আমার যেহেতু চোখ পড়ছেই তহন ওই মাইয়াডারেই লাগবো।দরকার হইলে একরাতের জন্য….

বাক্যটি শেষ করতে পারলো না আর সেই দোকান মালিকের ছেলেটি।তৎক্ষণাৎ হাত দিয়ে কেউ খুবলে ধরে তার গাল।পাশের ছেলেটি কিছু বুঝে উঠার আগেই সুহাইল আক্রমণ করতে থাকে মালিকের ছেলের উপর।কাঁচের তাকের সাথে ছেলেটির মাথা সজোরে আছাড় মা;রে।কাঁচ ভেঙ্গে ছেলেটির গালে ভেদ করে ডুকে যায়।পাশের ছেলেটির সৎবিৎ ফিরতেই আটকাতে নেয় সুহাইলকে কিন্তু ছেলেটি থামবার পাত্র নয়।একাধারে মেরেই চলেছে অপরাধীকে।
ইতোমধ্যে অনন্য লোক এসে জড়ো করে নেয় স্থানটি আরমিন ভীতিকর চাহনীতে দেখছে সবটা।সুহাইলের এমন রোষের সাথে সে ছোট বেলায় একবার পরিচিত হয়েছে।
ছোট বেলায় খেলতে গিয়ে আরমিন টি-টেবিলের কোনার সাথে মাথা কেঁটে যায় এতে ক্ষু/ব্ধ হয়ে সুহাইল সেই টি-টেবিলটি আছাড় মে/রে ভেঙ্গে দেয়।তারপর থেকেই আরমিন ভয়ে মিশতো না সুহাইলের সাথে।কিন্তু সুহাইল আরমিনকে ছাড়ার পাত্র নয়।
এখন আবার এত বছর পর সুহাইলের সেই রাগ দেখে মাথা ঘুরে উঠে তার।

অপরাধী ছেলেটি র/ক্তা/ক্ত অবস্থায় সুহাইলের দিকে রাগান্বিত হয়ে তাকায়।তার চাহনী দেখে সুহাইল আরো বেশি ক্ষেপে যায়।

– ওই কু** বাচ্চা চোখ নামা।চোখ নামা বলছি।তোর সাহস কত,কার দিকে তাকিয়ে এত বাজে সম্বোধন করেছিস!কার দিকে লালসার দৃষ্টিতে তাকিয়েছিস!কাকে দেখে তোর পুরুষত্ব জেগে উঠেছে।তুই যাকে নিয়ে এইসব বলেছিস সে আমার।তাকে বলা মানে আমার সম্মানে আঘাত লাগা।তুই তাকে নিয়ে বাজে ইঙ্গিত দিয়েছিস আমি তোকে স্বাভাবিক ভাবেই বাঁ-চতে দেবো না।

সুহাইল বড় একটি কাঁচের টুকরো নিয়ে ছেলেটির পুরুষাঙ্গে বিঁধে দিতে গেলে আশেপাশের লোকজন তাকে দ্রুত ধরে নেয়।আরমিন ভয়ে ছুটে পালিয়ে যায় সুহাইলকে রেখেই।অপরদিকে সুহাইল ভীড় থেকে বেরিয়ে যায় সবাই তার দিকে ভীতিকর চাহনীতি তাকিয়ে আছে।এই মানুষটিকে এর আগে কখনো দেখে নি কেশবপুর মফস্বলের লোকজন।কে সে?কার এত সাহস,ভরা মজলিশে স্থানীয় নাম ডাক করা ব্যবসায়ীর ছেলেকে মারবে।

সুহাইল দ্রুত বাজার থেকে বেরিয়ে বড় রাস্তার মোড়ে হাঁটা দেয়।ছেলেটাকে মা/রতে মা/রতে সুহাইল যখন আরমিনের দিকে তাকায় ঠিক তখনি মেয়েটা ছুটে পালিয়ে যায় বিষয়টি অগোচর হয়েছে তার।সুহাইল জামাকাপড় ঝেরে ঠিক করে দ্রুত ফোন দেয় বারেক খন্দকারকে।

– হ্যালো বাবা কেশবপুর থানায় মোটা অংকের টাকা পাঠিয়ে দাও।টাকাটা আধা ঘন্টার ভেতরেই পাঠাবে।আর যদি না পাঠাও তোমার সম্মানে টান পড়বে।

– তুই আবার কি করেছিস?

– একজনকে মে-রেছি।এতটাই মে-রেছি ছয় মাসেও সুস্থ হবে কী না সন্দেহ আছে।

– আশ্চর্য কেন মে-রেছিস?

– কোন কথা কিংবা কাজ আমার গায়ে খুব বেশি না লাগলে আমি রুড রিয়েক্ট করি না তা তুমি জানো।আর হ্যা এইসব বিষয়ে মাকে কোন কথা বলবে না।আশা করি মাথায় রাখবে।

সুহাইল ফোন পকেটে পুরে একটি সিএনজি ডেকে নেয়।
অপরদিকে বারেকের কপালে বক্রকৃত দুটি ভাজ পড়ে।তিনি ভালো করেই জানেন সুহাইল ঠান্ডা মেজাজের অধিকারী তবে বেশ তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পূর্ণ।তবে মেজাজ বিগড়ে গেলে সম্পূর্ন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here