মায়াপ্রপঞ্চ,১৪,১৫

0
871

#মায়াপ্রপঞ্চ,১৪,১৫
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ১৪]
__________________
সরু আইলের রাস্তা পেরিয়ে সড়কে উঠলো আরমিন এবং মনি।তাদের পিছু পিছু আসছে তাসনিম।রোদের দাপটে অল্প সময়ে ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা তাদের।ওড়নার কোনা তর্জমা আঙুলে পুরে কপালের ঘাম মুছে নেয় আরমিন।খোলা চুলের মুঠি দ্রুত বেঁধে নেয় মুখ কুচকে।অবাকপানে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে।সড়কের এক পাশে ধান ক্ষেত পাশে সরু আইলের রাস্তা অপর পাশে বিভিন্ন শাকসবজির ক্ষেত।মনি একবার তাকালো আরমিনের দিকে।মেয়েটা গভীর চিন্তায় কিছু একটা ভাবছে।

– এই আরমিন তোর পছন্দ হয়েছে গ্রামটা?

– মাকে ছেড়ে আমি এর আগে আর কোথাও যায়নি নিজেকে কেমন যেন শূন্য শূন্য লাগছে।তবে ভীষণ সুন্দর তোদের গ্রাম।

কেশবপুর থেকে আরতীগঞ্জে(কাল্পনিক)আসতে প্রায় চার থেকে পাঁচ ঘন্টার জার্নি করতে হয়েছে তাদের।চির শ্যামল সবুজ এই গ্রামের যে কেউ মায়া জড়িয়ে যাবে অল্পতেই।মনির পরিবারে আছে মনির মা,বাবা, ভাই এবং মনি।মনির বাবার চাকরির সূত্রে তাদের কেশবপুরেই থাকতে হয়।মনির বড় ভাই থাকে দেশের বাইরে।গত সাপ্তাহ দেশে ফিরেছে মনির বড় ভাই মাফি।বিয়ে বেশ কয়েক বছর আগে থেকে ঠিক হওয়ায় বিয়ের কাজে দেরি করতে চাননা মেয়ে পক্ষের পরিবার।
মনিদের গ্রামের বাড়িতে তিনটি বড় আকৃতির টিনের ঘর।একটি মনিদের বাকি দুটি তার চাচাদের।মাঝে খানে বিশাল উঠান।উঠানের এক কোনায় কলপাড়।অপর পাড়ে পুকুর পাড়।বাড়ির ভেররের পরিবেশটা পর্যবেক্ষণ করে আরমিন বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসে।আজ সে গ্রাম ঘুরে দেখবে।নিজেকে মুক্তপাখি মনে হচ্ছে।আনন্দে আত্মোহারা হারা হয়ে পড়েছে সে।

রাস্তার কিনারায় দাঁড়িয়ে কথায় মশগুল তিন বান্ধবী।একের পর এক বাড়ির রাস্তা দিয়ে ভেন গাড়ি ডুকছে।ভেনে বিয়ের ডেকোরেশনের সব মালামাল।

পিচ ঢালা রাস্তা মাড়িয়ে মাটির রাস্তা দিয়ে ডুকে পড়লো একটা সিএনজি।মাটির রাস্তা মাড়িয়ে সিএনজিটির গন্তব্য মনিদের বাড়ির দিকে।সিএনজির ভেতর থেকে মনির ভাই মাফী মাথা বের করে ডেকে উঠলো তাদের,

– এই মনি রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকিস না বাড়িতে আয়।বিশেষ মেহমান এসেছে।

মাফীর কথায় ঠোঁট উল্টালো মনি।দ্রুত তিন বন্ধু মিলে বাড়ির দিকে হাটা ধরে।ততক্ষণে সিএনজি থেকে মাফী সহ তার মেহমান নেমে গেছে।গাড়ির পেছন থেকে একে একে মিষ্টি,দই,ফলমূল বের করছে মাফী।আর এক গাদা কথা শুনিয়ে যাচ্ছে সিএনজিতে বসে থাকা ছেলেটাকে।

– এত কিছু আনতে তোকে কে বলেছে?তুই এসেছিস তাতেই আমি খুশি।

– সে কী কথা।বিশেষ মেহমানের খেতাব দিলি আমাকে আর আমি কিছু আনবো না।খালি হাতে এসে দাঁড়িয়ে থাকবো।আংকেল আন্টি কই?

ছেলেটার কথার মাঝে মনির বাবা মঈনুল এবং মা ফিরোজা এসে হাজির।

– আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল আন্টি ভালো আছেন আপনারা?

মেহমান যখন কদমবুসিতে ব্যস্ত তখন মাঝ উঠানে প্রবেশ করলো আরমিন,মনি এবং তাসনিম।বলিষ্ঠ দেহ পড়নে ছোপ ছোপ ডিজাইনের নীল শার্ট।দু হাতে নাড়িয়ে কথার ভাজ সাজাতে ব্যস্ত ছেলেটি।আরমিন ছেলেটাকে ভালোভাবে দেখতে খানিকটা আড়ালে এগিয়ে গেলো কিন্তু চোখের সামনে যাকে দেখেছে তাকে দেখার জন্য প্রস্তুত ছিল না সে।প্রস্ফুটিত দেহটা স্থির হয়ে গেছে,হৃদ যন্ত্রের ক্রিয়া এখনি বন্ধ হবে যেন।মাথার ভেতরটা সব আউলা ঝাউলা লাগছে।কানের ভেতরে আশেপাশে থাকা মানব গুলোর কোন বাক্য সে শুনছে না।বিপ বিপ শব্দ তুলছে কানে।এ কোন মসিবত আসলো।এই মসিবত কী করে হয় বিশেষ অতিথি?একে বিশেষ অতিথি না বলে বিশেষ মসিবত বলা চলে।
আরমিনের মানসিক উদ্‌বেগ কাটিয়ে তুললো সুহাইলে তীর্যক চাহনীতে।ছেলেটা তার দিকে তাকিয়ে মিহি হাসলো।

– কিরে মনি এটা সেই মাতবর বাড়ির ছেলেটা না।এখানে কী করছে?

তাসনিমের কথায় মনি হাত কচলায়।তাসনিমের কানে ফিসফিসিয়ে বলে,

– আরে ভাইয়া বলেছে তার বিদেশের ফ্রেন্ড আসবে।কিন্তু এই ছেলে যে সেই ছেলেটা আমি জানতাম না।আরমিন তো চিনেছে কিন্তু সে চুপ কেন?এইই আরমিন মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন?

– সুহাইল ভাই এখানে কী করছে?

– বিশেষ অতিথি।মাফি ভাইয়ার বন্ধু।

উঠান থেকে ধীরে ধীরে সবাই ঘরের দিকে চলে যায় মাঝ উঠনে দাঁড়িয়ে রয় আরমিন।সে পড়েছে বিশাল বড় ক্যাচালে।সুহাইল তাকে একা পেয়ে কী কী যে করবে তা ভাবতেই ছুটে পালিয়ে যেতে মন চাইছে তার।নিয়তি এত বেগতিক কেন!
_
চারবন্ধু মিলে একটি হোটেলের রুম ভাড়া করে নিয়েছে।বাইক নিয়ে উদ্দেশ্যহীন ছুটে চলে রাতে ফিরে আসে হোটেলে।ব্যস্ততা ,ঝামেলা,চিন্তামগ্ন ছাড়া এই জীবনটা যেন বেশি সুখকর ইচ্ছে মতো চলছে তাদের জীবন।সেদিন বৃষ্টিতে জুবুথুবু হয়ে বাইক নিয়ে ফিরে আসে পবন।বন্ধুদের সামনে উল্লাসের সুরে বলে দেয় সে আরমিনকে সত্যি ভালোবাসে।আর এই নির্বিঘ্ন ভালোবাসায় সে বুঝতে পারেনি অনুভূতি গুলো।সেদিন বন্ধুদের তোষামোদে সবটা পরিষ্কার হয়ে যায় নিজের কাছে।রিজু,সায়মন,সোহাগ সবার শুধু এখন একটাই কথা টুম্পাকে ফোন করে ব্রেকাপ কর।কিন্তু এই বেলায় আশাহত হয় পবন মেয়েটার ফোন বন্ধ।হুট করে মেয়েটা নিরুদ্দেশ হয়ে গেলো বিষয়টা ভাবিয়ে তুলছে তাকে।
_
ঘেমে নেয়ে একাকার হওয়া শার্টটা ধীরে সুস্থে শরীর থেকে ছাড়িয়ে নিলো সুহাইল।পাশে বিছানায় পিঠ জড়িয়ে শুয়েছে মাফী।এখানে আসার পর থেকে সুহাইলের মুখটা একটু বেশি হাসি – হাসি,খুশি-খুশি।হয়তো গ্রামে এসে খুশিয়ে হয়েছে সে এমনটা ভেবে পুলকিত হলো মাফী।একটি পোলো শার্ট বের করে দ্রুত পড়ে নিলো সুহাইল মাফীর দিকে একপলক তাকিয়ে আচম্বিতে হাসলো।

– কী হয়েছে সুহাইল তুই হঠাৎ খুশি!গ্রামটা কি পছন্দ হয়েছে?

– তুই যে আমার কত উপকার করলি যদি আমার টোপ কাজে লাগে তবে আমি তোর কাছে সারাজীবন ঋণি হয়ে থাকবো।

– কী বলছিস?বুঝলাম না।

– একটা মেয়ে মনের আঙিনাতে
ধীর পায়েতে এক্কা দোক্কা খেলে
বন পাহাড়ি ঝর্না খুঁজে
বৃষ্টি জলে একলা ভিজে

সেই মেয়েটা আমায় ছুঁয়ে ফেলে
সেই মেয়েটা আমায় ছুঁয়ে ফেল।

– ওহ সুহাইল এই গান এবার থামাবি?তোর এই গান শুনতে শুনতে আমার কান পঁচে গেছে।কে সে যে তোর মনে এক্কা দোক্কা খেলে?

– তোদের বাড়িতেই আছে বর্তমানে।

সুহাইল সরস কন্ঠে কথাটি বলে থামে।মাফী লাফিয়ে উঠে বসে।বন্ধুর মুখে প্রলিপ্ত সেই মেয়েটি কী না তার বাড়িতে কী বলছে এই ছেলে।

– সুহাইল মজা করিস না আমি সিরিয়াস।

– মানে আমার মনের মানুষটা এখন তোদের বাড়িতেই আছে।আমার মরিয়ম।

– মরিয়ম!এই বাড়িতে কারো নাম তো মরিয়ম নয়।ওহ হ্যা মনে পড়েছে আমার চাচির আম্মার নাম মরিয়ম।কিন্তু তিনি তো এখন পাঁকা বুড়ি।

মাফীর কথায় চোখ পাকিয়ে তাকায় সুহাইল।মনের সুপ্ত অনুভূতি নিয়ে মজা করছে সে।

– আমি আরমিন মরিয়মের কথা বলছি।তোর বোনের ফ্রেন্ড আরমিন সে আমার সেই কাজিন।

মাফী এবার দাঁড়িয়ে পড়লো।কোমড়ে এক হাত গুজে অন্য হাত দিয়ে মাথার চুল টানতে ব্যস্ত।অস্থির ভঙ্গিতে পাইচারি করছে সে।

– কাউকে বলিস না এই কথা মাফি।বাকি ইতিহাস তোকে আমি পরে বলবো।আরেকটা কথা এমন ব্যবস্থা করবি যেন আরমিন সারাক্ষণ আমার পাশে পাশে থাকতে হয়।প্লিজ দোস্ত তুই তো বিয়ে করে নিবি আমি তো এখনো সিঙ্গেল।অন্তত তোর বিয়েতে আমার প্রেমটা প্রসন্ন হোক।

– হাইরে কপাল কোথাকার জল কোথায় গড়ায়।চিন্তা করিস না।তোর মরিয়মের বর্ননা দিতে দিতে আমার কান পঁচিয়ে দিয়েছিস এবার তোর বিয়ের দায়িত্ব আমার চিন্তা নিস না।

– দেখা যাক কী কী করেন আপনি আমি দেখবো।

– আমি কী করি তা তোর দেখতে হবে না আগে নিজের চক্ষুর তেষ্টা মিটা!

মাফী হাসতে হাসতে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।সুহাইল তখন ঠোঁট কামড়ে হাসতে বস্ত।আশে পাশে সব কিছু তার নতুন লাগছে।বিছানার থেকে মোবাইল তুলে গ্যালারি থেকে আরমিনের ছোট বেলার ছবি বের করে।গুলুমুলু আরমিনের ছবিটা দেখে শব্দ করেই হেসে উঠে।ডান হাতে মাথাটার ভর রেখে বদ্ধ চোখে বলে,

– মায়াটা এখনো কমেনি তার প্রতি।অতীতের মতো এখনো প্রখর আছে।

#চলবে……

#মায়াপ্রপঞ্চ
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ১৫]
________________
বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে এলো।বিয়ে বাড়ির ব্যস্ততা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে।মাঝ উঠনে সোডিয়ামের আলোয় জ্বলজ্বল করছে পুরো বাড়ি।এক পাশেই ডেকোরেশনের কাজ চলছে।আজ রাত অতিবাহিত হলেই পর দিন গায়ে হলুদের আয়োজন করা হবে।গ্রাম্য আয়োজনে সারবে পুরো বিয়েটা।সবাই সবার নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত।তাসনিম,মনি দুজনে মিলে ফলমূল কাটছে আর তা একে একে পিরিচে সাজাতে ব্যস্ত।আরমিন কয়েকটি মিষ্টি পিরিচে রেখে এক পাশে চুপচাপ বসে পড়ে।মনির মা ফিরোজা তখন চায়ের কাপ এনে রাখলেন ট্রেতে।হুড়মুড় করে রান্না ঘরে প্রবেশ করে মাফী।

– কিরে তোদের হলো?ছেলেটা আসার পর থেকে নাস্তা দেওয়া হয়নি।

– হয়েছে বাবা তুই নিয়ে যা।দুটো ট্রেই পিঠে,ফল,চা,মিষ্টি, তুই নিতে পারবি একসাথে?

ফিরোজার কথা শুনে বাধ সাধলো মাফী।

– না না আমি একটা নিয়ে যাই।আরেকটা মনি নে।

মাফীর কথায় কপাল কুচকায় মনি।বিরক্তের রেষ নিয়ে বলে,

– ভাইয়া দেখছো না আমি কাজ করছি তুমি নিয়ে যাও।তাছাড়া উনার সামনে আমার যেতে লজ্জা লাগে অপরিচিত ব্যাক্তি।

– তোর মতো চাপা স্বভাবের মেয়ে আমি আর দুটো দেখিনি।এই আরমিন তুমি চলো তোমার তো লজ্জা লাগার কথা নয় তোমার পরিচিত মানুষ।

পিলে চমকে তাকায় আরমিন।এতক্ষণ যে ভয়টা পাচ্ছে সেটাই হলো।সুহাইলের সামনে সে কিছুতেই পড়তে চায় না এখন কী না তাকে খাবার ট্রে নিয়ে যেতে হবে অসম্ভব।

– ভাইয়া……

– ভ্যা ভ্যা করবে না আসো।চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে আমার অনেক কাজ বাজারে যেতে হবে বাকি ট্রে টা নিয়ে তুমি দ্রুত আসো।

মাফীর কড়া নির্দেশে কথার উলটো পিঠে আর কোন কথা বলতে পারলো না আরমিন।হাতে ট্রে নিয়ে ছুটলো মাফীর পেছন পেছন।

সুহাইল বিছানায় হাত পা ছেড়ে লম্বা হয়ে শুয়ে আছে।দীর্ঘ ঘন্টার জার্নি করে সে বড্ড ক্লান্ত।মাথার উপরে ঠকঠক শব্দে চলছে ফ্যান।জানালা খোলা থাকায় বাইরে কে কি করছে সবটাই কানে আসছে তার।কেউ কাউকে হুট হাট ডাকছে,ধমক দিচ্ছে।আবার কখনো শব্দ করে হেঁসে উঠছে।এটাই তো বিয়ে বাড়ির আমেজ।চৌদ্দ,পনেরো বয়সী একদল ছেলে ছোট সাউন্ডবক্স দিয়ে গান বাজিয়ে তালে তালে নাচতে ব্যস্ত।তাদের গানের চয়েজ দেখে বেশ হাসি পেলো সুহাইলের।কিছুক্ষণ আগেই ফুল সাউন্ডে বাজতে থাকে “ও টুনির মা তোমার টুনি কথা শুনে না”, কিন্তু মাঝ পথেই মাফীর বাবা এসে ধ-ম-ক দিয়ে গান বন্ধ করায়।এরপর শুরু হয় অপরাধী গান।বিয়ে বাড়িতে এমন বেমানান গান দেখে মাফীর সমবয়সী একটি ছেলে এগিয়ে এলো এবং ধমক দিয়ে গান বন্ধ করায়।

রুমে কারো প্রবেশ বুঝতে পেরে তড়িৎ গতিতে চোখ খুলে তাকায় সুহাইল।মাফী এসেছে হাতে খাবারের ট্রে।পেছন পেছন প্রবেশ করলো আরমিন।মেয়েটা লম্বা ঘোমটায় ঢেকে রেখেছে মুখখানি।

– এই সুহাইল উঠে বস নাস্তা করে নে।বেশি কিছু আয়োজন করতে পারিনি।

– আমার খিদে নেই।এই মূহুর্তে এককাপ চা বেশি প্রয়োজন ছিল।

সুহাইল উঠে বসলো তার সামনে বিছানায় রাখা ট্রে গুলো।মাফী চোখ ইশারায় দেখিয়ে দিলো আরমিনকে।

– তোরা তো একে অপরকে চিনিস।আরমিন সুহাইলের সাথে কথা বলো।আমি বাজারে যাবো বেচারা একা একা বসে বোর হয়ে যাবে।

– ভা…ভাইয়া উনাকেও নিয়ে যান।আমি…..

– এত ঢোক গিলো কেন?তোমাকে তো জমের মুখে রেখে যাচ্ছিনা।সুহাইল তোমাদের অতিথি হিসেবে আগেও ছিল এখন আমার অতিথি।আমার থেকেও তুমি ওর ভালো মন্দ বেশি বুঝবে।বেচারা আজ জার্নি করে এসছে বাজারে গিয়ে তার কাজ নেই।তুমি কথা বলো ওর সাথে।আমি তোমার জন্য চা এনে দিচ্ছি বসো চেয়ারে।

মাফী যাওয়ার আগে সুহাইলকে ইশারা করে যায়।সুহাইল চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে ঠোঁট কামড়ে হাসে।অপর দিকে আরমিন পড়েছে মহা বিপদে।সুহাইল নিশ্চই তাকে এখন পাকড়াও করবে।নিরবতা ক্ষুন্ন করে প্রশ্ন ছুড়লো সুহাইল।

– তুমি মামিকে বলেছো আমি এই বাড়িতে এসেছি?

– না বলিনি তবে বলবো।

– একদম ভুলেও না।মামি অহেতুক চিন্তায় ডুবে যাবেন।তুমি কী চাও মামি সেখানে বসে বসে চিন্তা করুক?মামাকে নিয়ে তার চিন্তার কমতি নেই তার উপর তুমি এসব আজাইরা প্যাচালের খবর মামিকে বলবে না।

আরমিন মাথা দুলালো এর মানে সে বলবে না।আসলেই মা অহেতুক চিন্তায় মগ্ন হবেন বিষয়টা ভেবে মত পালটে নিলো আরমিন।

– আমি জানতাম না তুমি এখানে আসবে।আর হঠাৎ করেই মাফী দেশে ফিরেছে সবচেয়ে অবাক করা কান্ড হুট করেই বিয়ে করবে বলে সিদ্ধান্ত নিলো।অথচ দেশে এসেছে মাত্র একসাপ্তাহ।আমিও না চাইতে চলে এসেছি,তোমার ফুফা আমাকে ভীষণ বকেছে গ্রামে যেন আমি না আসি।বন্ধুর বিয়ে মিস করা যায় না তাই চলে এলাম।

সুহাইলের কথার উত্তর দিলো না আরমিন।তার দৃষ্টি মেঝের দিকে।চোখে মুখে বিরক্তির আভাস।সুহাইল তার দিকে তাকিয়ে আছে বিক্ষিপ্ত হয়ে।

– মাফী বিয়েটা করে ফেলছে!

– তো আপনার বিয়ে করার সাধ জেগেছে নাকি?

– তুমি রাজী হয়ে যাও আমি এখনো তৈরি আছি।

আরমিন চোখ পাকিয়ে তাকালো সুহাইলের দিকে ছেলেটা ঠোঁট কামড়ে হাসছে।এই হাসি বড্ড অসহ্যকর লাগে আরমিনের কাছে।সুহাইলের ভাব গতি ভালো ঠেকছে না তার কাছে।সে কোন ভনিতা ছাড়া প্রশ্ন করে,

– আপনাকে আমি আগেও বলেছি আপনাদের বংশের কথা আমরা ভুলে গেছি।যারা আত্মীয়দের সাথে বেইমানি করে তাদের আমাদের জীবনে দরকার নাই।তারপরেও কেন পিছু ছাড়েন না।আপনার কী চাই বলবেন?

– তোমাকে বিয়ে করতে চাই।দেখো আরমিন মজা করছিনা আমি সিরিয়াসলি বলছি বিয়ে করবে আমাকে?

আরমিন উঠে দাঁড়াও।তাজ্জব বনে গেছে সে।রোমন্থে জ্বলে উঠছে সে।দাঁতে দাঁত চেপে তর্জনির আঙ্গুল তুলে শাসানো ভঙ্গিতে এগিয়ে আসে সুহাইলের দিকে,

– একদম জানে মে-রে দেবো।খু-ন করে দেবো আপনাকে।কিসব বলছেন?মাথা ঠিক আছে?

আরমিনের শাসানো দেখে গা দুলিয়ে হাসে সুহাইল।এক লাফে বিছানা থেকে নেমে পিরিচ থেকে মিষ্টি নিয়ে ঠেসে দেয় আরমিনের মুখে,

– শুভ বিবাহের কথা বলেছি মিষ্টি মুখতো করতেই হয় মরিয়ম।এখন রুম থেকে যাও।তোমার আমার সম্পর্কের কথা কাউকে বলবে না।আমিও কারো সামনেই তোমার সাথে প্রেমকের ন্যায় আচরন করবো না।আমাদের সম্পর্কটা ব্যাক্তিগত থাকবে তবে আড়ালে নয়।

– সম্পর্ক?কীসের সম্পর্ক?কিসব হাবিজাবি বকছেন আপনি?

– সিদ্ধান্ত আমি নিয়েছি।ভবিষ্যতে বুঝতে পারবে।দুই পরিবারের সম্মোতিতেই বন্দোবস্ত হবে চিন্তা করো না।

সুহাইলের মুখে কোন হাসি নেই বেশ সিরিয়াস ভঙ্গিতেই কথা বলছে।আরমিন এবার ঘাবড়ে গেছে।তিরিক্ষ মেজাজে শুধালো,

– এই কিসব বলছেন?মাথা ঠিক আছে?

– আহ!আর কোন কথা নয় রুম থেকে বের হও।নাস্তা গুলো নিয়ে যাও আমি এখন ঘুমাবো।
_
বেশ রাতেই পবন ফোন করলো আরমিনকে।অবসর হয়ে হোটেলে নিজের রুমে ফিরে ফোন করে সে।এত রাতে ফোন করায় আরমিন বেশ অবাক হয়।তবে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় আজ পবন তাকে বকেনি,ছুতো খুঁজে রাগিয়ে দেয়নি বরং নরম স্বরে যত্নে করে কথা বলেছিলো।পবনের এমন ব্যবহারে আরমিন ভড়কালো,চমকালো।কথা বলার মাঝেই মূঢ়তা ঘিরে ধরে তাকে।মনে মনে আওড়াতে থাকে একটাই বাক্য,

– পবন ভাইয়ের আবার কী হলো?

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here