মায়াপ্রপঞ্চ,২৪,২৫

0
709

#মায়াপ্রপঞ্চ,২৪,২৫
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ২৪]
________________
নিজেকে আরো একবার পুরো উদ্যমে ব্যস্ত করতে তৈরি হয়ে নিচ্ছে সুহাইল।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে।দীর্ঘক্ষণ জার্নি করে বড্ড ক্লান্ত সে।কিন্তু এই ক্লান্তির আভাস দেওয়া যাবে না মা’কে।নতুবা তিনি বুঝেই যাবেন সুহাইল বাড়িতে ছিলো না।এয়ারপোর্টে থেকে ফারজানা এবং সিয়ামকে রিসিভ করতে আরো আগেই বেরিয়ে পড়েন বারেক।সুহাইক গায়ে শার্ট এবং টাউজার জড়িয়ে নিজেকে তৈরি করে নেয়।কিছুক্ষণ আগেই কুসুম গরম পানিতে গোসল সেরেছে সে তাই শরীরটা বেশ চাঙ্গা মনে হলো তার।বিছানায় বসে ল্যাপটবের ওয়ালপেপারে থাকা আরমিনের ছবিটা পালটে নিজের একটা ছবি দিয়ে দিলো।না হয় ফারজানার চোখে পড়লে বেকায়দায় পড়তে হবে তাকে আজ থেকে জীবনের প্রতিটা ধাঁপ তাকে পেরুতে হবে অতী সাবধানে।

বাড়ির বাইরে গাড়ির শব্দে ছুটে নিচে যায়।বাগানের সরু রাস্তা পেরিয়ে গেটের সামনে আসলেই দৃশ্যমান হয় ফারজানার মুখ।

– আম্মু!

ছুটে গিয়ে ফারজানাকে জড়িয়ে ধরে সুহাইল।ফারজানাও ছেলেকে এতদিন পর পেয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারলেন না।শত হলেও ফারজানার এই বড় পুত্রের উপর তার আদরের অভাব নেই।সর্বাক্ষণ চোখে চোখে আগলে রাখে তাকে।সুহাইলের প্রতিটা আবদার তিনি যারপরনাই পূরণ করতে ব্যস্ত হয়ে যান।

– আমার আব্বুটা যে শুকিয়ে গেছে।তুই কিছু খাস না আব্বু?

ফারজানার কথায় মিহি হাসলো সুহাইল।

– আম্মু আমি বাংলাদেশে এসে সব তাজা খাবারি খাচ্ছি।তুমি চিন্তা নিও না তো।

– তবে শুকিয়ে গেলি কেন?তুই তো বেশি তেল মশলার খাবারে অভ্যস্ত না নিশ্চই কষ্ট হচ্ছে?আম্মু এসে গেছি এবার তোর সব কষ্ট দূর হয়ে যাবে।

ফারজানার কথায় তাকে বুকে আগলে নিলো সুহাইল।সিয়াম তখন পাশ দিয়ে ব্যাগ ক্যারি করছিলো।মায়ের কথা শুনে কালো চশমাটা কপালে তুলে আদেশ সুরে বলে,

– ওর কোন কষ্ট তুমি বুঝবে না আম্মু।বিয়ে করিয়ে দাও সব ঠিক হয়ে যাবে।

সিয়াম চশমাটা আবার চোখে লাগিয়ে হাটা শুরু করে।সুহাইল ঠোঁট কামড়ে হেসে নিজেকে ব্যস্ততার বাহানা দেখিয়ে সিয়ামের সাথে ব্যাগ নামাতে লেগে যায়।ফারজানা মুখটা পাংশুটে করে বিড়বিড়িয়ে বলে,

– ছেলের বউ আনলে আমার ছেলেটা বউয়ের আচঁল ধরবে।মায়ের আচঁলের মূল্য থাকবে না।

সুহাইলের কথাটা কানে গেলো।তাতে কোন প্রতিক্রিয়া দেখালো না সে।কারন তার জানা আছে তার মা যেমন তাকে অকৃত্রিম ভালোবাসে ঠিক তেমনি নিজের স্বার্থ সর্বদা আগে গুরুত্ব দেয়।
.
ভেতরে ভেতরে পবন ভেঙ্গে পড়লেও বাইরে থেকে কোন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না।মায়ের কথায়ও যুক্তি আছে।তবে সব যুক্তি বিফলে টানছে তার এই মন।ধরেই নিলো আরমিন তার হবে না।কিন্তু আরমিনের পাশে সে অন্য কাউকেও সহ্য করতে পারবেনা।নিদারুন যতনায় বুকের বা পাশটায় আঘাত হানছে বার বার।শান বাঁধানো পুকুর পাড়ে বসে আছে চুপচাপ।চারিদিকে শুনশান খা খা করছে।আকাশে এখনো মেঘের দেখা মিলছে।পুকুরে বিভিন্ন পোনা মাছ মুখ তুলে উপুড় করে আছে।মাছেদের খলবলানি চুপচাপ দেখছে সে।নিরিবিলি পরিবেশটার ছেদ ঘটায় আননোন নাম্বারের ফোনে।মোবাইলের স্কিনের দিকে গাঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো খানিক্ষন।নাহ সে চেনে না নাম্বারটা কার।ফোনটা রিসিভ করে কানে তুলতে ভেসে আসে কোন পুরুষের উচ্ছ্বসিত কন্ঠ,

– আপনি কি আফসার মাতবর পবন বলছেন?

– হ্যাঁ আপনি কে?

– আমি টুম্পার হাজবেন্ড।

উত্তরটা পেতেই থম মেরে বসে রইলো পবন।এই লোক এখানে ফোন করেছে কেন?কী উদ্দেশ্য তার!টুম্পা আবার রাগের চোটে ভুল কিছু করে বসে নি তো!

– আপনি হঠাৎ ফোন করেছেন কেন? টুম্পা ঠিক আছে?

– জ্বি সে ঠিক আছে।আসলে আমার কিছু জানার ছিল।

– দেখুন টুম্পার সাথে আমার সম্পর্ক যাই ছিল ততটাও গভীর ছিল না।আপনি কি উল্টা পাল্টা ভেবে বসে আছেন?

ফোনের অপরপাশ থেকে লোকটা হাসলো।সেই হাসির শব্দ পবনের কানেও এলো।মানুষটার এতটা দৈর্য্য কী করে?স্ত্রীর আগের প্রেমিকের সঙ্গে এত দৈর্য্য ভাবে বাক্যলাপ করছে।অন্য কোন পুরুষ হলে তো এতক্ষণে বিশ্রি কয়েকটা শব্দ ছুড়ে দিতো তার দিকে।

– আজ্ঞে না পবন।বয়সে আমি আপনার বড় তাই নাম ধরে তুমি বলেই সম্বোধন করলাম।

– সমস্যা নেই আপনি আপনার কথা বলুন।

– আমি কিছু জানতে চাই।আসলে টুম্পা আমার সাথে এখনো সহজ হতে পারছেনা।আমি চাই সে আমার সাথে সহজ হোক।আমরা বাকি আট-দশটা স্বামী স্ত্রীর মতো সংসার সাজাই।

– তো আমি কি করতে পারি?

– টুম্পার পছন্দের খাওয়ার কি জানেন?আসলে আমি চাই নিজের হাতে করে চমকে দিবো।

– আমি তো শিওর জানি না।মনে হয় ফুসকা।

ফোনের অপর পাশের ছেলেটি আবারো হাসলো।সেই হাসির শব্দে পবন বেশ বিরক্ত হয়েছে বলা চলে।

– ফুসকা মানেই মেয়েদের ভালোলাগা।এটা কমন সবারি পছন্দের।আমি জানতে চাইছি এমন একটা খাবার যেটা সব সময় টুম্পার প্রিয়’র তালিকায় থাকবে ধরুন আমার,বিরিয়ানি,ইলিশ ভাজা এমন কিছু।তো টুম্পার প্রিয় খাবার টা কি?

পবন ভাবলো তার এত দিনের প্রেমিকার প্রিয় খাবারের নামি সে জানেনা।নিজেই নিজেকে ধিক্কার দিলো।

– দুঃখিত আমি জানি না।আসলে সেভাবে কোনদিন জিজ্ঞেস করা হয়নি।

– জিজ্ঞেস করলেই কি জানা যায়?আপনার অপর পাশের ব্যাক্তিটি যেহেতু আপনাকে ভালোবাসে সেহেতু সে নিশ্চই কোননা কোন দিন আপনাকে বলেছে।ভালোবাসার মানুষের কাছে আমরা আমাদের ভালোলাগা গুলো খুব সহজেই প্রকাশ করে দি।

পবন খানিকটা চুপ থাকলো তার এই মুহূর্তে বলার মতো কোন উত্তর নেই।তার নিরবতা বুঝতে পেরে লোকটা আবার বলে,

– তার প্রিয় ফুল?

– আমার জানা নেই।

লোকটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।দুপক্ষের মাঝেই কয়েক সেকেন্ড ছিল পিনপিনে নিরবতা।কেউ কারো সঙ্গে আগ বাড়িয়ে কথা বাড়ালো না।পবনের অন্তঃকরণে কোন বেদনার সৃষ্টি হলো না।টুম্পাকে নিয়ে যেন তার কিছু যায় আসে না।ফোনের অপর পাশে থাকা ব্যাক্তিটি এবার ভিষণ ভাবে বিরক্ত হলো।ডাঁয়িয়াল স্বরে পবনকে বলে,

– আপনি কিসের প্রেমিক?যে প্রমিক প্রেমিকার ভালো থাকা মন্দ থাকার মাধ্যম জানে না।
.

পবন থম মেরে বসে রইলো পুকুর পাড়ে লোকটার কথাগুলো তার মাথার ভেতরটায় ঘুরেছে আসলেই তো সে কিসের প্রেমিক ছিল?আরমিন হেলেদুলে পুকুর পাড়ের দিকেই আসছিলো নাহার বেগম পবনকে ডেকে পাঠিয়েছে।

– পবন ভাই আন্টি তোমায় ডাকে।

– আরমিন তোর প্রিয় খাবার মায়ের হাতের ছানার মিষ্টি।আমি কি ঠিক বলেছি?

পবনের প্রশ্নে কিঞ্চিৎ অবাক হয় আরমিন।হঠাৎ এই প্রশ্ন করার কোন মানে খুঁজে পেলো না সে।
– হ্যা ঠিক তবে এখন এই প্রশ্ন কেন?

– তোর প্রিয় ফুল বকুল?

– হুম।তুমি জানলে কি করে?

পবন উত্তর দিলো না বরং এক গাল হেসে আরমিনের পাশ দিয়ে মাথা নেড়ে চলে যায়।
.
ফারজানা আসার পর থেকেই সুহাইলকে নিয়ে তোষামোদ করে যাচ্ছে।সুহাইল অবশ্য বিষয়টা বেশ ইঞ্জয় করছে কেননা ছোট থেকেই তার মায়ের কলিজার অর্ধেক সে।ছেলেকে নিয়ে তার অবদারের শেষ নেই।বারেক সন্ধ্যায় বের হয়েছে টুকটাক কেনাকাটার উদ্দেশ্য।সুহাইল এবং সিয়াম সেই সুযোগে ফারজানাকে রুমে এনে হাজির করে।ল্যাপটপ অন করে তার সামনে একটি মেয়ের ছবি দেখায়।গায়ে হলুদ শাড়ি জড়ানো মেয়েটি বিয়ের স্টেজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে হাস্যজ্বল মুখ নিয়ে।

– আম্মু দেখতো মেয়েটাকে পছন্দ হয় কী না?

ছবিটার দিকে ঘোরে তাকিয়ে রইলেন ফারজানা।কেমন যেন চেনা চেনা আভাস পাওয়া যাচ্ছে।কিন্তু ঠিক মতো ঠাহর করতে পারলেন না।সুহাইল সিয়ামের দিকে তাকিয়ে ইশারায় হাসে।ল্যাপটপের স্কিনে থাকা মেয়েটি আরমিন।সিয়াম ল্যাপটপটা ছিনিয়ে নিয়ে অবাক পানে তাকায় মেয়েটার দিকে।

– মাশাল্লাহ ভাইয়া মেয়েটা কে?অবিবাহিত নাকি?তাহলে আমার বউ করে নিয়ে আসি।

সিয়ামের কথা শুনে তার মাথায় গাট্টা দেয় ফারজানা।ল্যাপটপটা নিয়ে মেয়েটার দিকে চেয়ে রয় নির্বিঘ্নে।

– মেয়েটা আসলেই সুন্দর।তবে সুহাইল মেয়েটা কে?

– আম্মু মেয়েটাকে তোমার পছন্দ হয়েছে?

– খুব পছন্দ হয়েছে।

ফারজানা এখনো তাকিয়ে আছে আরমিনের ছবির দিকে।সিয়াম কথা ঘুরিয়ে বলে,

– আম্মু ভাইয়ার বউ করে আনো এত পছন্দ হলে।

ফারজানা তাকালো সুহাইলের দিকে।সেই চাহনিতে মিশে আছে সন্দেহর আভাস।

– মেয়েটা কে সুহাইল?

– তুমি তো সারাদিন বিয়ে বিয়ে করো।দেশে আসার পর মেয়েটাকে আমার পছন্দ হয়েছে।তোমার যেহেতু পছন্দ হয়েছে তাহলে বিয়ে ও’কেই করছি এটাই ফাইনাল।

– কিন্তু আমি যে চাই তোর কোনো বিদেশিনীর সাথে তোর বিয়ে হবে।আমরা কানাডায় থাকি বাবা এসব বাঙালি মেয়ে দিয়ে পোষাবে না।

ফারজানার কথায় আড়চোখে তাকালো সুহাইল।তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে বেশ রেগে গেছে।

– বিদেশি মেয়েরা খাতির যত্নের দিক দিয়ে শূন্য মা।হ্যা তোমায় বেশ আদর যত্ন করবে তবে বউ শাশুড়ীর সম্পর্কে যে বাঙালিয়ানা আছে সেটা পাবে না।তুমি কি আমার পছন্দকে অগ্রাহ্য করছো মা?

সুহাইলের কন্ঠ তীক্ষ্ণ ধারালোর মতো লাগলো ফারজানার কাছে।আজ পর্যন্ত সুহাইলের কোন চাওয়া পাওয়া অপূর্ণ রাখেন’নি তিনি অতি বেশি ভালোবাসেন কী না!তাই ছেলে রেগে যাওয়ার আগেই সম্মোতি পোষণ করলো।

– আমার মেয়ে পছন্দ হয়েছে।মেয়ের বাবা কি করে?কোন বংশের,গাড়ি-বাড়ি আছে তো?

– বাবার মতো কথা কেন বলছো?আমি মেয়ের টাকা পয়সা দিয়ে কি করবো?আমি কি মেয়ের বাড়িতে ঘর জামাই হিসেবে থাকতে যাবো যে টাকা পয়সার হিসেব নিকেশে বসতে হবে মেয়ের বাবা মা আমাকে খাওয়ার খরচ দিতে পারবে কি না।কাম’অন মম যুক্তিতে লাইনে আসো।

ফারজানা মিহি হাসলেন।ছেলের পিঠে হাত বুলিয়ে আগলে নিলেন।

– তোর বাবা যে টাকা ছাড়া কিচ্ছু বুঝেনা সেটা তুই জানিস।আমার মতামত আছে কিন্তু তোর বাবা..

– আমার তোমার মতামত লাগবে।তুমি প্রমিস করো এই মেয়েকে বউ হিসেবে মানবে?

ফারজানা ঘাবড়ে গেলেন।তবুও ছেলের হাতে হাত রেখে কথা দিয়ে বসলেন এই মেয়েকেই পুত্র বধূ করবে।এত কথার মাঝেও মেয়েটার নাম জানা হলো না তার।সুহাইল,সিয়াম ল্যাপটপ নিয়ে রুম থেকে বের হতে নিলে ডেকে উঠে তাদের,

– বাবারা শোন!

– কিছু বলবে মা?

ফারাজানা মাথা দুলালো।তিনি কিছু বলবেন না।কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বেলকোনির কোনায় গিয়ে মুখে হাত চেপে কেঁদে উঠেন।দেশে আসার পর থেকে ভাইয়ের কথা খুব মনে পড়ছে।তাদের দুটো মেয়ে কেমন আছে কে জানে।বর্তমানে ফারজানার আপন বলতে স্বামী সন্তান ছাড়া কেউ নেই।মা,বাবা মারা গেছেন আগেই।অর্থ লোভে পড়ে ভাইকেও ফেলে চলে গেলেন।এখন শুধু আফসোসে দিন গুনছেন তিনি।
#চলবে…

#মায়াপ্রপঞ্চ
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ২৫]
________________
ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে পরিবেশটায় শীতল আবহাওয়া বিরাজ করছে।পবনের ঘুম ভেঙ্গে গেলো কাক ডাকা ভোরে।চোখ মুখ কুচকে পাশে তাকাতেই সাদৃশ্য হলো প্লাবনের ঘুমন্তো মুখ।সময়টা জানার জন্য হাতড়ে হাতড়ে ফোন খুঁজে অবশেষে বালিশের পাশে পায়।সময়টা দেখে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায়।হাতে ব্রাশ নিয়ে পিলপিল পায়ে এগিয়ে যায় বারান্দায়।আজকের দিনটা একটু বেশি সুন্দর।বাড়ির বড় সদস্য কারোই এখনো ঘুম ভাঙ্গেনি।বারান্দার গ্রিলে হাত রেখে নানান কথা ভাবছে পবন।হঠাৎ মাথায় আসলো আজ আরমিনকে নিয়ে ঘুরতে যাবে।তবে যাবে কোথায় দীর্ঘক্ষণ ভাবেও উত্তর পেলো না।সাতসকালে সায়মনকে ফোন দিতেই ছেলেটা দারুন একটা বুদ্ধি দেয়।তবে এই বুদ্ধি আদৌ কাজে আসবে কি না জানা নেই তার।

পরিপূর্ণ সকাল হওয়ার সাথে সাথে বৃষ্টির গতিক থেমে গেছে।আমীনার কাছ থেকে বিভিন্ন রঙের মিশ্রণের ডিজাইনের একটি শাড়ি নিয়ে চললো সে আরমিনের বাড়ি।পবন আশেপাশের রাস্তার ঘাট নির্বিঘ্নে দেখে চলছে।

পাক ঘরে সালেহা তখন রুটি হালুয়া তৈরির কাজে ব্যস্ত।আরমিন তার পাশে বসেই রুটি বেলছে।পবন নিশ্চুপ এসে দাঁড়ালো পাক ঘরের সামনে।মেয়েটা দক্ষ হাতে গোল গোল রুটি বানিয়ে তাওয়ায় ছুড়ছে।দরজার পাশটায় অন্ধকার দেখে চকিতে তাকালো সালেহা।পবনকে দেখে খানিকটা চমকালো।সচারাচর পবন এই বাড়িতে আসে না।যখন কায়িম অসুস্থ হয় তখনি দেখতে আসে।তবে এত সকালে আসার তো কথা নয়।

– পবন বাবা হঠাৎ এলে যে?

– আংকেল কে দেখতে এসেছিলাম কেমন আছেন তিনি?

– মোটামুটি ভালো আছে।তুমি ঘরে যাও আমি আসছি।

পবন ঘরের দিকে গেলো।হাতে তার একটা শপিং ব্যাগ।আরমিন শেষ রুটিটি বেলে ঘরের দিকে যায়।পবন বসে ছিলো কায়িমের পাশে।

– পবন ভাই এত সকালে তো আপনি এই বাড়িতে আসার কথা না।বাবাকে দেখতে এলে বিকালে আসেন কিন্তু এত সকাল সকাল….

– তোকে বলে আসতে হবে নাকি এই বাড়িতে?আমার যখন ইচ্ছা আসবো।

পবনের ধমকে চুপসে যায় আরমিন।পিটপিট চোখে চেয়ে নিলো একবার ছেলেটাকে।পবন দ্বিধা নিয়ে তাকালো আরমিনের দিকে।

– ব্যাগটা নে।এখানে একটা শাড়ি আছে।এটা কিন্তু চাচীর শাড়ি।

– এটা দিয়ে আমি কি করবো?

– এখন তো সাড়ে সাতটা বাজে,সকাল নয়টায় শাড়ি পড়ে তৈরি হয়ে রাস্তার মোড়ে থাকবি।

– কেন?

– আমার বন্ধু আজ ট্রিট দিবে।আমি আন্টিকে যাওয়ার আগে বলে যাবো তোকে যেতে দিবে।

পবন উঠে দাঁড়ালো,দরজার কাছাকাছি যেতেই আবার ফিরে আসে,

– এই শুন রঙ মেখে একদম সং সাজবি না।না হয় সেদিনের মতো কাঁদায় ছুড়ে ফেলবো।

আরমিন তাজ্জব বনে তাকিয়ে রইলো পবনের দিকে শাড়ি পড়বে অথচ সাজবে না।এই ছেলে বোঝে কি সাজগোছের।ঠিকি সাজার পর মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকবে।আবার অন্য কেউ তাকিয়ে থাকলে বলবে,’এই আরমিন ওই ছেলে তাকিয়েছে কেন তোর দিকে?তুই চিনিস ওকে।দাঁড়া ওই ব্যাটাকে সাইজ করে আসি’।
_
আজ আকাশে রোদের দেখা নেই।সূর্যটা আড়াল হয়ে আছে মেঘের দাপটে।ক্ষণে ক্ষণে সুযোগ পেলে যাও রোদের ঝলক দিচ্ছে মাঝখানে মেঘ যেনো তেড়ে এসে আবার আড়াল করে নিচ্ছে তাকে।

রাস্তার মোড়ে সিএনজি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পবন।ছেলেটার পড়নে কালো শার্ট, ক্লিন শেভিং করায় মুখটা আজ চকচক করছে।আরমিন শাড়ি তুলে পিলপিল পায়ে হাটছে।পবনের কাছে এগিয়ে আসতে ছেলেটা তাকে আগাগোড়া দেখে নিলো একবার।

– আসতে এতক্ষণ লাগে?

– আমি তো আর তোমার মতো শার্ট-প্যান্ট পরিনি আমি পরেছি শাড়ি।বাকি রা আসে নাই পবন ভাই?

– না আসে নাই।আমার সাথে চল।যা গিয়ে সিএনজিতে বস।

– আমি তোমার সাথে যেতে চাইছি না,টুম্পা আপু কই?তার সাথে যাবো আমি।তোমার সাথে কেউ দেখলে ভাববে আমরা বোধহয় ইয়ে ইয়ে।

– ইয়ে ইয়ে মানে?

পবন কালো চশমাটা খুলে ভ্রু কুচকে তাকালো।আরমিন আড়চোখে তাকিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে নেয়।

– মানে গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রন্ড।

– ভাবলে ভাবুক!
কথাটা আস্তে বলে শেষ করলো পবন। সরু রাস্তার দিকে তাকিয়ে থেকে ঘুরে তাকালো আরমিনের দিকে।মেয়েটা সন্দিহান চোখে তাকিয়ে আছে।পবন কথা ঘুরাতে রোষ নিয়ে বলে,

– এই শোন কেশবপুরের মানুষ জানে এই পবনের চয়েজ অত খারাপ না।বেশি বকবক করলে এখানেই রেখে চলে যাবো।

অপমানে থমথমে হয়ে গেলো আরমিনের মুখখানা।পবন দ্রুত গিয়ে সিএনজিতে বসতেই, আরমিন রাগ নিয়ে সিএনজিতে বসে একদম কোন ঠাসা হয়ে।

– মাঝখানে কার জন্য ফাঁকা রেখেছিস?তোর শাওন আসবে নাকি?এত চেপে যে বসেছিস পড়ে আ-হ-ত হলে ফের আমার নামি পড়বে।

আরমিন খানিকটা কাছে ঘেসে বসলো।পবন দৃষ্টি সরিয়ে নেয় বাইরে।
.
প্রায় চল্লিশ মিনিট পর কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌঁছালো দু’জনে।পবন ভাড়া মিটিয়ে দিলে গাড়ি নিয়ে উলটো পথে চলে গেলো লোকটি।আরমিন তাজ্জব বনে তাকিয়ে রইলো চারপাশে।এখানে নেই কোন রেস্টুরেন্টে,নেই কোন পার্ক সামনে শুধু একটা খোলা মাঠ দেখা যাচ্ছে।সম্ভবত বৃষ্টির দরুনে মাঠে এখন কিয়দংশে পানি জমে আছে।

– এখানে কেন আনলে আমায়?তোমার বন্ধুরা কই?

– কেউ আসবে না।শুধু তুই আর আমি।

খানিকটা অবাক হলো আরমিন।সন্দিহান চোখে ঘুরে তাকালো পবনের দিকে।মনের ভেতরে আপনা আপনি বাজে চিন্তা ভাবনা ভর করেছে।তবুও মনকে বোঝালো ‘ না পবন ভাই খারাপ কিছু করবেন না।তিনি বিশ্বাসযোগ্য’।আরমিনের চাহনী পালটে গেছে ভীতু হয়ে গেছে নিষ্পাপ মুখখানা।

– তুই ভয় পাচ্ছিস আরমিন?

– ন…না মানে।

– সুহাইলের সাথে এত রাতে কেশবপুরে আসতে পেরেছিস তখন ভয় লাগেনি?অচেনা অজানা ছেলে।আর আমার সাথে কেশপুরের মাটিতেই আছিস তবে ভয় কেন?নাকি তোর বিশ্বাস অর্জন করতে পারিনি?

পবনের কন্ঠ ছিল বেশ গম্ভীর।সে যেনো পুরোনো কোন রাগ মিটিয়েছে এই কথার মাধ্যমে।

– আমি তখন ঘোরে ছিলাম তাই উনিশ বিশ না ভেবেই চলে আসি।তিনি তো আমার সাথে খারাপ কিছু করেনি।

– তবে কী আমি করবো ভাবছিস?

আরমিন বিব্রত হলো।যেন পবন বেশ অপমান বোধ করেছে।

– না না এমন টা ভেবো না পবন ভাই।আসলে টুম্পা আপু তোমার সাথে আমাকে দেখলে রাগ করে।যদি জানে আমরা এখানে এসেছি তবে পুনরায় রেগে যাবে।

– টুম্পার বিয়ে হয়ে গেছে।

কথাটা যেন আরমিনের কানে বজ্রের মতো শোনালো বিস্ময় চাহনীতে তাকালো পবনের দিকে।পবন যতটা সহজে কথাটা বললো ততটা সহজে হজম করতে পারলো না সে।

– মানে?তুমি না তাকে ভালোবাসো?

– না বাসি না।আজকের দিনে ওসব কথা তুলে আমি সময় নষ্ট করতে চাই না।আয় আমার সাথে।

পবন এগিয়ে গেলো সামনের দিকে।আরমিনো তার পিছু পিছু গেলো।মাঠে বিভিন্ন ছোট ছোট গাছ জন্মে আছে,এর সাথে ঘাস সব মিলিয়ে আগাছার মতো হয়ে আছে।শাড়ি তুলে মাঠের মাঝখানটা গিয়ে আরমিন বুঝতে পারলো ডানে মোড় কাটলে একটি বিল আছে।দূর থেকে সেই বিলে লাল আভা ছড়িয়ে আছে।আরমিন ডেকে উঠলো পবনকে।পায়ের কনুইয়ের পানি এবার পায়ের উপরে উঠে এসেছে এর মানে মাঠের মাঝে আরো পানি বেশি।

– পবন ভাই আমাকে কি ওই বিলে নিবে?

– হ্যা নিবো কিন্তু তুই মাঝখান দিয়ে হাটছিস কেন?আমার পেছন পেছন আয় বেকুব মেয়ে।কিনারায় পানি তেমন নেই।

আরমিন বাধ্য হয়ে পবনের পিছন পিছন গেলো।জুতা,ব্যাগ হাতে মাঠ পেরুনোর পর সে ক্লান্ত হয়ে একটা ঝাউ গাছের গোড়ায় বসে যায়।তার পেছন পেছন বসে পড়ে পবন।সামনে তাকাতে চোখে পড়ে মন্ত্রমুগ্ধকর পরিবেশ।বিলে ফুটে আছে সারি সারি লাল শাপলা।কানায় কানায় শাপলা পূর্ন।তার সাথে কয়েকজন মাঝি ডিঙি নৌকা নিয়ে বসে আছে।

– পবন ভাই আমাকে এখন আনলে কেন?আগে জানলে রাতেই আসতাম।রাতের অন্ধকারে নৌকায় ঘুরতাম।

– তাও ঠিক বলেছিস।শাপলা ফোটে রাতের স্নিগ্ধতায় আর দিনের আলোতে আস্তে আস্তে বুজে যায়।এই লাল শাপলা গুলো দেখছিস এগুলোকে আরেক নামেও ডাকা হয়।

– কী নামে?

– রক্তকমল।

– বাহ কি সুন্দর নাম রক্তকমল! চলো আমরা নৌকায় উঠি।

পবন তার হাত বাড়িয়ে দিলো আরমিনের দিকে।আরমিন হাত ধরে উঠে দাঁড়ায়।দুজনে নৌকায় উঠলেই মাঝি নৌকা চালাতে শুরু করে।পবন ঠিক আরমিনের পেছনটায় বসেছে।আরমিনের বাম হাতটা নিজের বাম হাতে আকড়ে ধরেছে।পবনের শ্বাস প্রশ্বাস ঠেকছে আরমিনের ঘাড়ে।কানে এসে বারি লাগছে নিশ্বাসের শব্দ।মুহূর্তটায় আরমিন যেন নিজের মাঝে নেই,এই পরিবেশটার ঘোরে পড়েছে সে,হাত আকড়ে ধরে থাকা মানুষটার ঘোরে পড়েছে যে।পবন বাইরে থেকে সম্পূর্ন স্থির হয়ে তাকিয়ে আছে বিলের দিকে।তবে অন্তঃকরনে প্রেমের আনন্দোলন জাগ্রত হয়েছে কিয়ৎক্ষণে।প্রণয়িনীর হাতের ছোঁয়ায় তার অবারিত প্রেমতরঙ্গ ক্ষণিকেই জাগ্রত হলো।হালকা বাতাসের দাপটে দিঘল কেশ উড়ে বাঁধা পায় পবনের মুখে।মধ্য বিলে দূর থেকে প্রস্ফুটিত শাপলা দেখতে অনেকটা আলোকরশ্মি বিচ্ছুরিত নক্ষত্রের মতো।অবশ্য এখানে লাল শাপলা হওয়া লালভাব ছড়িয়ে আছে যদি সাদা শাপলা হতো তবে নক্ষত্রের মতোই লাগতো।পবন শাপলা তোলার বাহানায় এগিয়ে এলো তখনি প্রণয়িনীর পিঠ ঠেকে তার পাঁজরে।আরমিন নড়লো না সেভাবেই বসে রইলো।এভাবে ব্যয়িত সময় তাদের অগণ্য।আরমিন খানিকটা নড়ে বসলো, গুটিয়ে রাখা পা ডুবিয়ে দিলো বিলের জলে।আরমিনের সচলতায় নড়েচড়ে বসলো পবন।

– পা উঠাও বিলেতে সাপ থাকে।শাপলার ডাটে পেচিয়ে থাকে তুমি বুঝতেও পারবেনা এমন সুন্দর পরিবেশে সাপ থাকতে পারে।

তৎক্ষনাৎ ঝাকরা দিয়ে পা তুলে নিলো আরমিন।পবনের কন্ঠে কেমন যেন ঘোর ছিল।ছেলেটার কথার ধাঁচ পালটে গেছে।তুই থেকে তুমিতে পালটে নিলো সম্বোধন।আরমিন মাথাটা তুলে ঘাড় বাঁকিয়ে তাকালো পবনের দিকে।

– কি হয়েছে তোমার পবন ভাই?

– কিছুনা।

আরমিন মাথা নামিয়ে নেয়।মাঝির দিকে তাকিয়ে আরমিন ছেলেটার বয়স বোঝার চেষ্টা করে।বেশি নয় উনিশ-বিশ বছরের ছেলে হবে।মাঝি ধীরে ধীরে নৌকার দাঁড় বাইতে থাকলো।আরমিন একটা শাপলা ছিড়ে হাতে নেয় ছেলেটার দিকে তাকিয়ে উচ্ছ্বাসিত কন্ঠে শুধালো,

– আমি ছবিতে দেখেছি মাঝিরা গান গাইতে পারে আপনি কি গান গাইতে পারেন?

ছেলেটা চকিতে তাকালো আরমিনের দিকে।এক গাল হাসি দিয়ে মিনমিনিয়ে বলে,

– না আফা।গানটান শিখতাম ফারি নাই।

– ওওও,তবে এখন গান শুনতে পেলে মন্দ হতো না তাই না পবন ভাই?

পবন মিহি হাসলো।এই মুহূর্তে মেয়েটাকে সবচেয়ে নিশ্চিন্ত,সুখী লাগছে,সুখী লাগছে পবনের নিজেরো।লোকে বলে যে প্রেমে পড়ে সে বুঝে।অনামিক অনুভূতিরা দোলাচলচিত্ত নিয়ে থাকে সব সময়।পবনেরো আজ সেই দশা হয়েছে।মেয়েটার সুখ দু’গুন বাড়াতে সে সর্বদা প্রস্তুত।

– তুই গান শুনবি?

– হ্যা।

পবন পকেট থেকে ফোন বের করলো।ই’উ’টিউব থেকে গান বাছাই করে ফুল সাউন্ডে চালিয়ে দিলো,

একটা ছিল সোনার কন্যা,
মেঘ বরণ কেশ
ভাটি অঞ্চলে ছিল
সেই কন্যার দেশ
দুই চোখে তার আহারে কী মায়া
নদীর জলে পড়ল কন্যার ছায়া
তাহার কথা বলি,
তাহার কথা বলতে বলতে
নাও দৌড়াইয়া চলি।।

কন্যার ছিল দীঘল চুল,
তাহার কেশে জবা ফুল।।
সেই ফুল পানিতে ফেইলা
কন্যা করল ভুল,
কন্যা ভুল করিস না
ও কন্যা ভুল করিস না
আমি ভুল করা কন্যার লগে
কথা বলব না।

এভাবে কতটা সময় ব্যয় হলো তাদের ধারনা নেই।পবন পেছন থেকে তাকিয়ে আছে আরমিনের দিকে,আরমিনের স্নিগ্ধ চাহনী আবদ্ধ বিলের মাঝে।সে সময়টায় মেঘ কেটে যায়।সূর্য নিজের দাপট নিয়ে ছড়িয়ে দিলো মিষ্টি রৌদ্র।রোদের ঝলক এসে পড়লো আরমিনের মুখে।সোনা রোদ যেন আজ প্রফুল্লচিত্তে হাসছে তাদের মেলবন্ধনে।
_

মুহূর্তটা আজ দিব্যি কেটেছে দুজনের।পবন সাহস করে এখনো বলতে পারেনি তার মনের কথা।মাঠ পেরিয়ে রাস্তায় উঠতে আরমিন আবদার করে বসে এই ভাঙ্গাচোরা পিচ ঢালা রাস্তায় সে হেটে যাবে।দু’পাশে গাছের সারি বেশ সুন্দর পরিবেশ।দুজনে হাটছে নিশব্দে।কিয়ৎক্ষণে নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে দিলো আরমিন,

– পবন ভাই তুমি কী আমায় ভালোবাসো?

মাঝ রাস্তায় লাহমায় দাঁড়িয়ে গেলো পবন।চোরা চোখে তাকালো আরমিনের দিকে।খানিকটা দ্বিধায় বলে,

– বাসলে কোন সমস্যা আছে নাকি?বাসলেও বাসতে পারি!

– ভণিতা করো না পবন ভাই।তুমি আমায় ভালোবাসো।

পবন উত্তর দিলো না।সে নিশ্চুপ পা চালালো।নিরবতার মাঝে আবারো বললো,

– ধরে’নে ভালোবাসি।এখন তুই কি বলবি?

– কিছু মানুষকে চাইলেও ভালোবাসা যায় না পবন ভাই।তারা প্রিয় থাকে,সম্মানের চোখে থাকে তবে তাদের ভালোবাসা যায় না।হাজারটা দিক ভাবলে ফলাফল একই দাঁড়ায় সেই প্রিয় মানুষটাকে ভালোবাসা যাবে না।

– কেন যাবে না?

পবন ভ্রু কুচকে মাঝ রাস্তায় দাঁড়ায়।তাদের আশেপাশে দ্রুত সাই সাই করে ছুটে যাচ্ছে চলমান গাড়ি।

– তোমার বিষয়টাই ধরো।জাবির আংকেল আর নাহার আন্টি আমার মনের কোন জায়গায় আছে সেটা তোমাকে বোঝানো যাবে না।তুমি আর আমি লুকিয়ে প্রেম করলাম।তারপর আন্টি আংকেল যখন জানবে আমি এমন একটা কাজ করেছি তখন আমার অবস্থানটা তাদের মনে কোথায় থাকবে বুঝতে পারছো?তাদেরো স্বপ্ন থাকতে পারে আপনাকে নিয়ে হয়তো বা বিয়েও ঠিক করে রেখেছে।তাই সব মিলিয়ে আমি দুঃখিত তোমার অনুভূতির মূল্য দিতে পারলাম না।

আরমিন স্বাভাবিক ভঙ্গিমায় পুরো কথাটা বলে শেষ করে।পবন স্থির চিত্তে তাকিয়ে আছে মেঝের দিকে।

– মনে কর আব্বা আম্মা মেনে নিবে তাহলে?

– তবে সেটা বরাতজোর।

পবন খানিকক্ষণ চুপ থাকলো।অতঃপর মিটমিটিয়ে হেসে উঠলো সে।তার হাসি দেখে ভড়কালো আরমিন।

– তুই কি ভেবেছিস এই পবন তোর প্রেমে পড়েছে।মারাত্নক ভুল ভাবছিস।আমি তোর প্রেমে পড়িনি এমনিতেই ঘুরতে এনেছিলাম।আমারো ইচ্ছে করছিলো তাই।

পবন ভেবেছিলো আরমিন মনমরা হয়ে যাবে কিন্তু না আরমিন উচ্ছ্বাসিত হাসলো।

– বাহ!আমি ভেবেছিলাম সত্যি সত্যি প্রেমে পড়লে তবে জানো আমার ধারনা সত্য হলে আমি নিজের ইচ্ছায় তোমার সামনে পড়তাম না আর কোন দিন।কারন জড়তা কাজ করতো।আমি নিজেই দূরত্বে এনে দিতাম আমাদের মাঝে।

আরমিন খুশি মনে হাটতে থাকে।পবন আর তাকে ঘাটালো না।কারন এতে আরমিন আর তার মাঝে দূরত্ব তৈরি হবে।এদিকে পবনের মুখটায় আঁধার নেমে আসে।আরমিন ভেবেই নিলো পবন মজা করছে তার জন্য মনে কোন অনুভূতি নেই।অথচ মেয়েটা জানে না তার পাশাপাশি হাটা ছেলেটি তার জন্য কতটা ব্যাকুলতায় দিন কাটাচ্ছে।

#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here