#মায়াপ্রপঞ্চ,৩২,৩৩
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৩২]
_________________
ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে কয়েক ঘন্টা থেকে।পারিপার্শিক অবস্থা আজ শীতল।আকাশের বুকে লেপ্টে আছে ফালি ফালি কালো মেঘ তার সাথে সাদা মেঘের আনাগোনা।কেশবপুর ছেড়েছে গাড়ি প্রায় ৩ ঘন্টা আগেই।যানজট হীন গাড়ি চলছে নিজ উদ্যমে।সুহাইলের গায়ে থাকা শার্টটা ঘামে আঠা আঠা লাগছে বিধায় বোতাম খুলে ছেড়ে দিয়েছে।জানলার সাথে ঠেস দিয়ে আরমিন ঘুমে কাবু।সুহাইল মিনিটে মিনিটে তাকাচ্ছে তার দিকে।এতক্ষণ তার ফ্যাচ ফ্যাচ কান্নার আওয়াজে অতিষ্ঠ হয়ে যায় সুহাইল।কিছুতেই কান্না থামানো যায়নি মেয়েটাকে।কান্নার মাঝেই ঘুমিয়ে গাড়িতে এনে দিয়েছে নিস্তব্ধতা।
– ভাইয়া শরীরটা ম্যাজম্যাজ করছে।সকালের নাস্তা ভালোভাবে হয়নি চলোনা নাস্তা করি।
সিয়ামের কথায় সম্মোতি জানায় ড্রাইভার।সুহাইল একবার তাকালো আরমিনের দিকে।মেয়েটার ঘুম ভাঙ্গানো ঠিক হবে না এই মুহূর্তে।
– সামনে রেস্টুরেন্ট পেলে দাঁড় করাও।তোমরা নেমে খেয়ে নিও।আমার জন্য একটা চা হলেই চলবে।
– তুমি খাবেনা?
– খিদে নেই।আমার এই মুহূর্তে গাত্র থেকে শার্টটা ছুড়ে ফেলতে পারলে বেশি খুশি হতাম।আঠা আঠা লাগছে সারা শরীর বাড়ি ফিরতে এখনো বহু দূর বাকি।
– এভাবে কেউ বিয়ে করতে যায় ভাই?আমি অন্তত বাস্তব জীবনে দেখিনি।এক কাপড়ে ছুটে বেরিয়ে এলে বাড়ি থেকে।ভাবীর জন্য কেনা ভারী গয়না, ভারী লেহেঙ্গাটাও আনা হলো না।নরমাল শাড়িটা এনেছো তাহলে এত দামী জিনিস কেনো কেনা হলো আমাদের?ধ্যতত্তেরি বিয়েতে কোন ইঞ্জয় করিনি যাস্ট আতংকে ছিলাম।
সিয়ামের অফসোসে গা দুলিয়ে হাসলো সুহাইল।আরমিনের দিকে তাকিয়ে বলে,
– বিয়েটা হয়েছে এটা তোদের দশ পুরুষের ভাগ্য।মাফী যদি আমাকে আপডেট না দিতো এইদিন আর দেখতে হতো না।মামী আমাকে এখনো বিশ্বাস করেনি,ইনশাআল্লাহ তার মেয়েকে এমন সুখে রাখবো এই সুহাইল বলতে অজ্ঞান থাকবেন তিনি।
– আমি অত শত বুঝিনা তোমার বিয়েতে বড় করে অনুষ্ঠান চাই ব্যস।ভাইয়ের বিয়ে নাচবো গাইবো।
– করবো আরমিনের ফাইনাল এক্সম শেষ হোক।
কথার মাঝেই ড্রাইভার রাস্তার পাশে ব্রেক কষে।
– চলেন নাস্তা সেরে নি এখানকার রেস্টুরেন্টা বেশ ভালো।পাশেই জামা কাপড়ের শো রুম আছে আপনি চাইলে শার্ট কিনে চেঞ্জ করে আসতে পারেন।
ড্রাইভারের কথায় মাথা নেড়ে সম্মোতি জানায় সুহাইল।
– আপনারা নাস্তা সেরে আসুন।আপনারা আসলেই আমি যাবো।মরিয়ম গাড়িতে একা।
সিয়াম ড্রাইভার দুজনেই চলে গেলে রেস্টুরেন্টের ভেতর।কিছুক্ষণ পর একজন ছেলে এসে সুহাইলকে চা দিয়ে যায়।প্লাসটিকের চায়ের কাপটার শেষ চুমুকে তার কানে আসে আবারো আরমিনের কান্নার আওয়াজ।ঘুরে তাকাতেই দেখতে পেলো চোখ বন্ধ করেই কাঁদছে আরমিন।
– আমি বিয়ে করবো না আম্মা।বিয়ে…..
– বিয়ে হয়ে গেছে আর কাকে বিয়ে করবে তুমি?
আরমিন তড়িৎ গতিতে চোখ খুললো পাশাপাশি সুহাইলকে দেখে খানিকটা ভড়কে গেলো।
– আ..পনি আম্মার কই?
– ঘুম থেকেই উঠেই মাথায় এত চাপ দিতে হয় না বোকা মেয়ে।চুপচাপ থাকো আর ভাবো গত রাতের কথা।
আরমিন নির্বোধ বনে চেয়ে রইলো সুহাইলের দিকে।খানিক্ষণ বাদেই নাক টেনে আবারো কেঁদে উঠে।
– উহ্,কাঁদছো কেন?আমার সাথে থাকলে কোনো ভয় রাখবেনা মনে,জড়তাও না।যদি জড়তা রাখো তবে কিসের সম্পর্ক আমাদের?আমরা এখন স্বামী-স্ত্রী।তুমি যেমন আমার উপর নির্ভরশীল আমিও তোমার উপর নির্ভরশীল।যা হয়েছে তার জন্য আল্লার কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া।
আরমিন প্রত্যুত্তর করলো না,কালবিলম্বে আবারো কেঁদে উঠলো সে,
– এই তুমি কি মকবুলকে বিয়ে করতে চাইছিলে?বলো, বলো আমায়।আমার সাথেই তো বিয়ে হয়েছে তবে এত কান্না কিসের?নাকি আমি তোমার স্বামী হিসেবে যোগ্য নই?
সুহাইল কথাটা বেশ ব্যথিত স্বরে বলে।আরমিন চোখ মুছলো বাইরের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টি দেখছে সে।
– আম্মা কেমন আছেন?আম্মা কি আমার জন্য কাঁদছে?নাকি রেগে আছে আমার উপর?
– মামি ফোন করেছে।ক্ষমা চেয়েছে আমার কাছে।বলেছে বাড়ি ফিরে ফোন করতে।
– আম্মার নিরাপত্তার দরকার মকবুলরা নিশ্চই কোন অঘটন ঘটাবে।
– তুমি চিন্তা নিও না।আমি এসব জানি বুঝি, মামির দায়িত্ব দিয়ে এসেছি জাবির আংকেলের কাছে।
দুজনের মাঝেই তৈরি হলো গাঢ় নিরবতা।সুহাইল মাথা এলিয়ে দিতেই আরমিন তার দিকে দৃষ্টি রাখলো,
– আমার শাড়ি পড়ে থাকতে অস্বস্তি লাগছে।বাড়ি পৌছাবো কখন?
– সময় লাগবে আরো দু’ঘন্টার বেশি।তুমি শাড়ি চেঞ্জ করবে?
আরমিন দ্বিধা চোখে তাকালো।অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে ঢোক গিললো।পরিবেশটা আজ শীতল তাতেও লাভ হলো না আরমিনের।মনে হচ্ছে গরমে কান দিয়ে ধৌয়া উড়ছে।
– লজ্জা পাচ্ছো মরিয়ম?লজ্জার কিছু বলেছি আমি?সামনেই শপিংমল সিয়াম আসুক তারপর আমরা যাবো।
আরমিন মাথা ঘুরালো বৃষ্টি আবারো ঝরছে।মাথায় ঘুরপাক খেয়ে যাচ্ছে নানান চিন্তা ভাবনা।ফুফা,ফুফি কেমন আচরণ করবে তার সাথে?সুহাইল তার বিশ্বাসযোগ্য মানুষ কিন্তু ফুফা ফুফিকে বিন্দু পরিমানেও বিশ্বাস নেই তার।
– আপনার বাবা আমাকে মেনে নিয়েছেন?আমাকে দেখলে তার নিশ্চই মাথা গরম হয়ে যাবে?
– ওসব বাদ দাও।তোমার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অংশ জুড়ে আমি থাকবো।আমি ভালো তো সব ভালো।সিয়াম,মা ওদের নিয়ে ভাবতে হবে না।বাবাও ইদানীং দেখলাম বিয়ে নিয়ে বেশ ইন্টারেস্ট হয়তো তিনিও পজেটিভ থিংকিং এ আছেন।
কথার মাঝেই ড্রাইভার এবং সিয়াম এগিয়ে এসলো।আরমিনকে জেগে থাকতে দেখে এক গাল হাসলো সিয়াম।
– ভাবী বেটার ফিল করছো তো?
– জি!
সুহাইল গাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লো।শরীরটা টানটান করে বাইরের পরিবেশটা পর্যবেক্ষণ করলো আজ আর রোদ ওঠার সম্ভবনা নেই।
– বাইরে এসো মরিয়ম ড্রেস চেঞ্জ করে কিছু খেয়ে নিবো।
আরমিন জড়তা নিয়ে বাইরে বের হলো।সিমসাম বউ সাজে সুহাইলের পিছু পিছু চললো শপিং মলে।সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে একটু অদ্ভুত ভাবে।সুহাইল আরমিনের জন্য নরমাল কুর্তি নিয়ে নিজের জন্য পোলো শার্ট কিনে নেয়।ট্রায়াল রুমে ড্রেস চেঞ্জ করে, রেস্টুরেন্টে থেকে খাবার খেয়ে আবারো গন্তব্যর উদ্দেশ্য পাড়ি জমায়।
.
সুহাইল ভেবেছিলো আরমিন আর কাঁদবে না কিন্তু দুঃখের বিষয় তাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে আরমিন তার ফ্যাচফ্যাচ কান্না আবার শুরু করে।সুহাইল,সিয়াম প্রথম প্রথম বেশ বোঝালেও পরবর্তীতে তারা আশাহত মুখে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে।আরমিনের কান্নার গতি ক্ষণে ক্ষণে যেন বাড়ছে।
– ভেরি বেড মরিয়ম কাঁদছো মানলাম চোখে পানি নেই কেন?ওহ তুমি চাইছো আমি আরো কাছে এসে বলি কাঁদে না কাঁদে না বাবু কাঁদে না।
সুহাইলের কথায় ঠোঁট টিপে হাসছে সিয়াম।আরমিন অবাক হয়ে সুহাইলের দিকে তাকিয়ে চোখ পাকিয়ে তাকায়।
– খবরদার কাছে আসবেন না।দূরে থাকুন।
আরমিন আবার কান্নায় মনোনিবেশ করে।সুহাইল মাথাটা হেলিয়ে তাকায় মেয়েটার দিকে।
– আমাদের মরিয়ম কাঁদে কেন?চকলেট লাগবে?নাকি আইসক্রিম?নাকি ললিপপ বাবু?
– ভাইয়া ভাবীর বোধহয় তোমাকে লাগবে।
সিয়ামের কথায় উপস্থিত তিনজনেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠে।রাগে জেদে কান্না আরো দি’গুন বেড়ে গেলো আরমিনের।
– ড্রাইভার সাহেব দুঃখের একটা গান দাও
তো, আমার বউয়ের যেন গানের তালে তালে কাঁদতে সুবিধা হয়।
ড্রাইভার এতক্ষণ দুই ভাইয়ের কান্ড দেখে হাসছিলো।সুযোগ বুঝে তিনিও রাগিয়ে দিলেন আরমিনকে।হাই ভলিউমে গান ছাড়লেন তৎক্ষণাৎ।
গাজার নৌকা পাহাড়তলী যায় ও মিরাবাই
গাজার নৌকা পাহাড়তলী যায়
গাজার নৌকা পাহাড়তলী যায় ও মিরাবাই
গাজার নৌকা পাহাড়তলী যায়
গাঁজা খাব আঁটি আঁটি
মদ খাবো বাটি বাটি
ফেন্সি খেলে টাস্কি খেয়ে যাই ও মিরাবাই
গাঁজার নৌকা পাহাড়তলী যায়
আফিম খেলে মাথা ধরে
কোকেনে বুক ধরফড় করে
হিরু খেলে টাস্কি খেয়ে যাই ও মিরাবাই
গাঁজার নৌকা পাহাড়তলী যায়।
সিয়াম খিটখিটিয়ে হেসে উঠলে সুহাইল সহ বাকিরাও তাল মেলায় তাতে।আরমিন আহাম্মক বনে তাকিয়ে আছে সবার দিকে এরা কত নিষ্ঠুর তার কান্না নিয়ে মজা নিচ্ছে।পরিস্থিতি যেন এখন তার বিরুদ্ধে।লাহমায় শব্দে করে কেঁদে উঠে আরমিন।সুহাইল আর বেচারিকে রাগালো না।আগলে নিলো কাছে।আরমিনের বাম হাতটা আকড়ে ধরে শক্ত করে।আরমিনের কান্না তখন প্রায় থেমেই যায়।সামনে পুলিশের চেক পোস্ট দেখে ঘাবড়ে যায় সিয়াম।
– ভাই দ্রুত ভাবীর কান্না থামা।কেঁদে-কে’ট মুখের যে বেহাল দশা করছে নির্ঘাত কি/ড/ন্যা/পের মামলায় আমাদের জেলে ডুকিয়ে ছাড়বে পুলিশ।
– আমার মনে হচ্ছে না বিয়ে করে বাড়ি ফিরছি।মনে হচ্ছে কারো মেয়ে কি/ড/ন্যা/প করে বাড়ি ফিরছি।
সুহাইল আফসোস ভঙ্গিতে কথাটা বলে আরমিনের দিকে তাকালো।আরমিনো তার দিকে তাকিয়ে দ্রুত ওড়ার সাহায্য চোখ মুখ মুছে নেয়।
_
দুপুরের সময় বাড়ি ফিরলো তারা।ক্লান্ত শরীর নিয়ে সবাই যে যার ঘরে চলে।সুহাইল যাওয়ার আগে আরমিনকে নিজের রুমে নিয়ে যায়।আলিশান বাড়িটার ভেতরের অংশটাও বেশ চমকপ্রদ।সুহাইলের রুমটা সম্পূর্ণ সিমসাম ভাবে সাজানো।সফেদ বিছানায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে জামাকাপড় সহ নানান প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।
– মরিয়ম বসো এক কোনায় আসলে যাওয়ার সময় তাড়া হুড়ো করে গেছিলাম তো তাই রুমটা গোছাগাছ করা হয়নি।
– সমস্যা নেই।
সুহাইল সবটা নিজেকের হাতে সাজিয়ে নিলো।আরমিন অল্প সময়ে পর্যবেক্ষণে বুঝে নিয়েছে কাজের হাত সুহাইলের কাঁচা।আলমারি,কার্বাডের সব জামাকাপড় দলা পাকিয়ে আছে।
– আমার আলমারির গোছগাছ আম্মু করে।আমি এসবে পাকাপোক্ত নই।
আরমিন চুপচাপ তাকিয়ে রইলো উত্তর দিলো না তার কথার।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ফ্রেশ হয়ে আরমিন এবং সুহাইল ঘুমিয়ে পড়ে।একি বিছানার বিস্তার ফারাক দুজনের মাঝে।ক্লান্ত শরীরটা এবার বিশ্রামের প্রয়োজন।
_
সন্ধ্যারপর আরমিন এবং সুহাইল একসাথেই রুম থেকে বের হয়।আরমিনের গায়ে লং সুতির গাউন ওড়নাটা গলায় পেচিয়ে নিয়েছে।বিয়ে উপলক্ষে টুকটাক জামাকাপড় কেনায় আরমিনের বেশি বেগ পোহাতে হয়নি।
ফারজানাকে দেখে শুধালো সুহাইল,
– আম্মু বাবা কোথায়?
– সন্ধ্যায় বেরিয়েছে টুকটাক বাজার করবে।বাড়ির নতুন বউকে নিয়ে একসাথে ডিনার হবে আজ।
– আমরা বের হবো আম্মু।টুকটাক কেনাকাটা আছে।
– কি কিনবা?ওইদিনেই তো বস্তা ভরে নিয়ে এলে সব।
সিয়ামের প্রশ্নে সুহাইল মিহি হাসলো আরমিনকে চেয়ারে বসতে ইশারা করে নিজেও বসলো।ততক্ষণে তাদের সামনে চা এগিয়ে দিলেন ফারজানা।
– ভাবছি দুজন মিলে ঘুরতে যাবো।কুয়াকাটায় যাবো।
আরমিন সবে গাল ভরে পানি মুখে পুরলো।সুহাইলের কথাতে মুখ ছিটকে পানি সব বেরিয়ে এলো।এই মানুষটার সাথে একা ঘুরতে কিছুতেই যাবেনা সে।
– আমি যাবো না।আপনি সিয়াম ভাইয়াকে নিয়ে যান।
– বিয়ে আমি কাকে করেছি?যাকে করেছি তাকে নিবো।
– কিন্তু সে যেতে ইচ্ছুক নয়।
– সময় বলে দেবে কে ইচ্ছুক আর কে অনিচ্ছুক।
আরমিন প্রত্যুত্তর করলো না।তৃপ্তি নিয়ে চায়ে চুমুক বসালো।
#চলবে
#মায়াপ্রপঞ্চ
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৩৩]
________________
হাতে থাকা আইসক্রিমটা গলে জামায় পড়ছে।সেদিকে খেয়াল নেই মেয়েটার।গাড়ির জানলা দিয়ে তাকিয়ে দেখতে ব্যস্ত বৃষ্টিমুখর শহরটা।রাত আটটার পর তুমুল বর্ষণ শুরু।তখন অবশ্য আরমিন শপিং মলেই ছিল।সুহাইল নিজ হাতে গাদা গাদা শপিং করেছে।ঘুরতে যাবে বলে একটা মানুষ এত শপিং করতে পারে সুহাইলকে না দেখেই বুঝতেই পারতো না সে।কিছুক্ষণ আগেই রিহানা এবং সালেহার সাথে কথা শেষ করেছে এতে যেন মনটা আরো বেশি খারাপ হয়ে গেলো।বাড়ির জন্য মনটা বড্ড আঁকুপাকুঁ করছে।সুহাইল গাড়ি ড্রাইভিং করছে,কানে ব্লুটুথ হেডফোন।ইংরেজিতে কার সাথে অনর্গল কথা বলেই যাচ্ছে।
– মরিয়ম ড্রেসটা নষ্ট হয়ে গেলো।
আরমিন চকিতে তাকালো পাশে।সুহাইল দ্রুত গতিতে ব্রেক কষে।কানের হেডফোটা রেখে ট্যিসু নিয়ে দ্রুত মুছে দেয় জামা।বাকি কয়েকটা ট্যিসু এগিয়ে দেয় তার হাতে।উদ্দেশ্য হাতটা পরিষ্কার করার।আরমিন নির্নিমিখ চেয়ে সুহাইলের ব্যবস্তা দেখছে।
– হুশ কোথায় ছিলো তোমার?
– খেয়াল করিনি স্যরি।
– দ্রুত শেষ করো।ভেবেছিলাম ডিনার করে ফিরবো কিন্তু তোমার শশুড়ের ইচ্ছে সবাই আজ একসাথেই ডিনার করবে তাই আর হলো না।আমরা বরং অন্যদিন ডিনার করবো।
‘শুশুড়ের ইচ্ছে’ কথাটা শুনে কেমন যেন লাগলো আরমিনের।শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গেলো শীতল বাতাস।আরমিন চুপচাপ আবারো বাইরে তাকালো।আলোকসজ্জার ঢাকা শহরে রাতের বৃষ্টি দেখতে অন্যরকম সৌন্দর্য।প্রতিটি ফোটার সাথে যেন আলোর ঝলকানি চোখে সাদৃশ্য হচ্ছে।আইসক্রিম শেষ করে সুহাইলের দিকে ঘুরলো আরমিন।
– সত্যি করে বলেন তো আমরা কোথায় যাবো?আপনি যে এত শপিং করলেন।
– কুয়াকাটা!
আরমিন হকচকালো।ব্যতিব্যস্ত হয়ে ঘুরে বসে আগ্রহ নিয়ে বলে,
– কুয়াকাটা!হঠাৎ এই এমন সিদ্ধান্ত?
– হঠাৎ নয় আগে থেকেই চলছিলো প্লানিং।ভেবেছিলাম বিয়ের পর যাবো।মাফী আর তার স্ত্রীও যাবে আমাদের সাথে।কিন্তু বিয়েটা হুট করেই হয়ে গেলো তাই আমি দেরি করতে চাইনি এবার আমাদের মুভ অন করা উচিত।কাল রাতেই দুই দুম্পত্তি কুয়াকাটার উদ্দেশ্য বাড়ি ছাড়বো।
.
তারা বাড়ি ফিরলো প্রায় এগারোটার কাছাকাছি।সব শপিং ব্যাগ গাড়ি থেকে নিয়ে দু’জনেই সদর দরজায় প্রবেশ করে।ততক্ষণে দেখা গেলো ডাইনিং টেবিল সাজিয়ে বসে আছে সবাই তাদের সাথে মাফী এবং তার স্ত্রী রাত্রিও উপস্থিত।
– কিরে তোরা কখন এলি?তোরা না কাল আসবি?
সুহাইলের প্রশ্নে মাফী এগিয়ে এলো তার সাথে কোলাকুলি করে হাসি মুখে বলে,
– কাল জার্নি করে আসবো আবার জার্নি করে কুয়াকাটা যাবো একটু বেশি টাফ হয়ে যায় তাই আজকেই চলে এলাম।সিয়াম তো আমাকে আসার জন্য বেশি তাড়া দেখালো।সে নাকি একা হাতে সবটা করতে পারবে না।
– সিয়াম একা হাতে কি করবে?
– না কিছু না।তুই আর রুমে যাইস না দোস্ত চল নিচতলার ওয়াশরুম থেকে হাত মুখ ধুয়ে৷ নে।এই রাত্রি আরমিনকে নিয়ে এসো।
দু’জনে ফ্রেশ হয়ে সবার সাথে খাবার খেয়ে উপরে চলে যায়।সিয়াম,মাফী দুজনে জোর করে সুহাইলকে সিয়ামের রুমে নিয়ে যায়।
– তোরা করছিস কি বলবি আমায়?
– এই নে পাঞ্জাবিটা পর।
– দেখ আমি বাচ্চা পোলাপাইন না সোজাসাপটা বল কি চাইছিস তোরা।
– বাসর সাজাইছি তোর জন্য এবার রেডি হ।
মাফীর কথায় থমমকে যায় সুহাইল।পাঞ্জাবিটা আলসে ভঙ্গিমায় হাত থেকে নামিয়ে বলে,
– দেখ মরিয়ম এবার সিনক্রিয়েট করবে।সে কিন্তু এখনো বিয়ের ট্রামা কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
– একদম ঢং করিস না।আজ বাদে কাল হানিমুনে যাচ্ছে আর তিনি আসছেন বিয়ের ট্রামা দেখাতে।সোজা রুমে যাবি দরজা বন্ধ করে দিবি এরপর দেখবি ট্রামা গায়েব।
– উফফ আমি হানিমুনে যাচ্ছি নাকি আমরা যাস্ট একে অপরকে বুঝবো,একান্ত সময় কাটাবো।হানিমুনে যাচ্ছিস তুই আর রাত্রি আমরা না।
– সেই একই।যে লাউ সেই কদু।
সুহাইলের তর্কের মাঝে বিরক্ত হলো সিয়াম।দ্রুত সুহাইলকে পাঞ্জাবি পরিয়ে রুমের সামনে নিয়ে যায় সেখানে উপস্থিত ছিল রাত্রি।সুহাইল রাত্রিকে দেখে থমকে দাঁড়ায়।
– দেখুন ভাইয়া রুমে যাবেন একটাই শর্তে আগে আমাদের হাত ভরাতে হবে।
– এক থাবা গোবর এনে হাত ভরাবো নাকি?
সুহাইলের কথা শুনে তৎক্ষণাৎ থতমত খেয়ে যায় মেয়েটা।
– দেখুন ভাইয়া টাকা ছাড়া রুমে যাও নিষিদ্ধ।এবার আপনি ভেবে দেখুন কি করবেন।
– এই মাফী তুই বরং ভাবীকে নিয়ে রুমে যা।তোর একাউন্ট থেকে ভাবী যত চায় দিয়ে দিস।
সুহাইলের কথায় একগাল হাসলো মাফি এবং সিয়াম।দুজনেই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ভাব নিয়ে বলে,
– তোমায় আমরা চিনি না।আমরা এখন মেয়ে পক্ষের লোক ভালোয় ভালোয় পঞ্চাশ হাজার দিয়ে রুমে যাও।
অনেক্ষণ যাবৎ তর্কবির্তকের পর টাকা দিয়ে রুমে প্রবেশ করে সুহাইল।সবার সাথে হাসি মুখ তর্কবির্তক করলেও ভেতরটা তার মরে আছে।আরমিন তাকে দেখে কি রিয়েকশন দেবে ভাবতেই দম বন্ধ লাগে।
.
শীতল রুমটায় বিন্দু বিন্দু ঘামের সঞ্চার হলো সুহাইলের গায়ে।পুরো রুমটা ফুল দিয়ে সাজানো।ছোট ছোট মরিচ বাতির আলো ফুটে আছে রুম জুড়ে।আরমিন বিছানার এক কোন বসে চিন্তিত ভঙিতে পা দোলাচ্ছে।
– মরিয়ম!
আরমিন ঘুরে তাকায়।আবছা আলোতে মুখটা ঠিক ভালোভাবে দেখা গেলো না তার।সুহাইল এগিয়ে এসে বসলো তার মুখোমুখি মেঝেতে।বাম হাতটা বিছানায় তুলে আয়েশ ভঙ্গিমায় পর্যবেক্ষণ করে আরমিকে।মেয়েটার অস্থিরতা এই মুহূর্তে দু’গুন বেড়ে গেছে।নিরবতা কাটিয়ে তুললো আরমিন নিজেই।নিজেকে দোষশূন্য প্রমান করতে জড়তা নিয়ে বলে,
– আমি সাজতে চাইনি।আর এভাবে বসে থাকতেও চাইনি।রাত্রি ভাবী জোর করে এসব করেছেন।শেষে ফুফু এসে কেঁদে-কেটে অস্থির হয়ে পড়লেন।তাই তাদের কথাটা না রেখে পারলাম না।
– আমিও জানতাম না ওরা এসব করবে,তুমি কি ভাববে তাই রুমেও আসতে চাইনি।কিন্তু আমাকেও জোর করে পাঠালো।
দুজনের মাঝে তৈরি হলো আবার নিরবতা।আরমিন ডান হাতের আঙুল দিয়ে বাম হাত খুটছে।সুহাইল সেদিকে তাকিয়ে ছিলো কয়েক সেকেন্ড।মেয়েটার অস্থিরতা বেশ ভালোভাবেই টের পেলো সে।সুহাইল উঠে বসলো আরমিনকেও ঘুরে বসতে বলে।আরমিনের দু’হাত নিজ হাতের মুঠোয় নিয়ে স্বগোতক্তিতে বলে,
– যা হয়েছে একদম ভালোর জন্য হয়েছে।আজ যদি এমন একটা মুহূর্ত না পেতাম তবে সারাজীবনের আফসোস থেকে যেতো।
– কিন্তু আমি প্রস্তুত নই!
তড়বড়িয়ে কথাটা বলে শেষ করলো আরমিন।বুকের ভেতরটা দামামা বাজাচ্ছে কেউ।এমন অস্থিরতায় কখনো যে সে মূর্ছা যায় নিজেও যানে না।সুহাইল তার দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হাসলো।এই হাসিতে আরো শত গুন লজ্জা বেড়ে যায় মেয়েটার।
– অনুমতি ছাড়া কিছু হবে না ভয় নেই।তোমার অসুবিধা হলে শাড়ি পালটে ঘুমিয়ে পড়ো।
– আর আপনি?
– আমার ঘুম হবে না।দিনে ঘুমিয়েছি কী না!
আরমিন বিছানা থেকে নামলো।গায়ে থাকা ফুলের পাপড়ি গুলো সরিয়ে শুধালো,
– ফুফু বলেছে নামায পড়ে নিতে।আমি শাড়ি পালটে অযু করে আসি।আপনিও বরং তৈরি হন।
সুহাইল মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো।আরমিনকে এতটা সতেজ থাকতে দেখে সে বেশ অবাক হলো।সে তো ভেবেই নিয়েছিলো হয়তো ঝগড়া বিঁধে যাবে দুজনের।
.
আরমিন নামায শেষ করে জানালার পাশে দাড়ালো।গায়ে তার নরমাল থ্রিপিস।তুমুল বর্ষণ এখনো থামেনি বৃষ্টির ঝাপটা হঠাৎ এসে এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে আরমিনকে।পবন নিচে নামে খাবার পানির জন্য।রুমে এসে দেখে আরমিন খানিকটা ভিজে গেছে।
– মরিয়ম ভিজি যাচ্ছো তুমি।
আরমিন ঘুরে তাকালো হেয়ালি ভাবে আবারো মনোযোগ দিলো বাইরে।
– কথা কানে তুলবে না?
– বিরক্ত করবেন না প্লিজ আমার ভালো লাগছে।
সুহাইল ওয়াটারপট রেখে এগিয়ে দাড়ালো আরমিনের কাছে।পেছন থেকে জড়িয়ে নিলো আরমিনকে।দুজনের মুখেই ঝাপটে আসছে বৃষ্টির ফোঁটা।তার সাথে মনে জমে থাকা গাঢ় অনুভূতিরা যেন খেলছে।সুহাইলের জড়িয়ে ধরাতে আরমিন প্রথমে প্রতিক্রিয়া করলেও ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যায়।আরমিনের বাম হাটা ধীরে ধীরে নিজের আয়ত্তে এনে গাঢ় ভাবে ওষ্ঠ ছোঁয়ায়।আরমিন কেঁপে উঠে খানিকটা,কয়েক সেকেন্ডে হাতের অনামিকা আঙুলে সাদৃশ্য হয় একটি হিরের আংটি।আরমিনের জীবনে সুহাইলের কাছ থেকে পাওয়া দ্বিতীয় উপহার এই হিরের আংটি।সর্বপ্রথম পেয়েছিলো গায়ে হলুদে বেলফুলের মালা।অজস্র বর্ষণ তার সাথে দমকা বাতাস ভিজিয়ে দিচ্ছে দুজনকে।এভাবে কেটে যায় বেশ খানিকটা সময়।সুহাইলের অস্থিরতা ক্রমশ বাড়তে আরমিনকে ঝটকায় সরিয়ে আনে।
– প্লিজ জামা পালটে ঘুমাতে আসো।জ্বর এসে পড়লে কালকের দিনটা বরবাদ হয়ে যাবে।আমি জানালা অফ করছি।
আরমিন সায় দিলো।সুহাইলের শীতল চাহনীতি ঢোক গিলে হাত ছাড়িয়ে সরে দাড়ালো।
_
অন্ধকার রুমটায় আলোর ব্যবস্থা করলেন নাহার বেগম।গতকাল সবার আনাগোনায় বিরক্ত হয়ে পবন রুমের লাইন খুলে ভে-ঙ্গে ফেলেছে।সে একা অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকতে চায়।কারো লেকচার শুনতে তার মোটেও ভাল্লাগেনা।প্রতিটা মানুষের কথা যেন তার কাছে বি-ষের সমতুল্য।একমাত্র মণিরার কারনে দরজাটা খোলা ছিলো,বাচ্চা মেয়েটা প্রফুল্ল পবনের এমন পরিবর্তনে বেশ আতংকিত।মাঝে মাঝে চোখ কচলে কেঁদে উঠে আর্তনাদ করে সুর তুলে,’আমি পবন ভাইয়ার কাছে যাবো।’।শত হলেও বাচ্চা মেয়েটাকে অবহেলা করা যায় না তাই পবন শুধুমাত্র মণিরাকে রুমে আসার অনুমতি দিলো।রাত নয়টার পর প্রায় দেড় ঘন্টা পবনের পাশে শুয়ে পবনের ফোনে কার্টুন দেখছিলো সে।পবন তখন তাকিয়ে ছিলো সিলিংয়ের দিকে।না চাইতেও মনের ভেতর কত শত ভাবনা খেলেছে।গত রাতটা ছিলো তার জীবনে সবচেয়ে ভয়ংকর।কেননা সেদিন রাতে ছিলো আরমিনের বাসর।পবন দ্বিধাদ্বন্দে সারারাত গলা কা-টা মোরগের মতো ছটফটালো।আরমিনের মাথাটা কি সুহাইলের বুকে ঠেকেছে?হাতটাকি আকড়ে ধরেছে দুজনে!আসীম ভাবনার মাঝে নিশ্চুপ কেঁদে উঠতো সে।কি এক নিদারুন যন্ত্রণা তাকে কতল করছে।মণিরা যাবার পর চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলো পবন।ঘরে আলোর ছটাকে তড়িৎ গতিতে চোখ খুলে।নাহার বেগম কাঁদছে ঢলে পড়েছে পায়ের কাছে।পবন অতি দ্রুত উঠে বসে ঠোঁটের কোনে ডাঁটিয়াল হাসি।
– আমার আব্বা তুই কবে ঠিক হবি?এমন কেন করস,আম্মার কথা ভাব একবার।
– হিসসস আমার কথা ভেবো না আম্মা।বংশ মর্যাদার কথা ভাবো,কোন মেয়েটার বাপের বিশাল অর্থ সম্পদ তাকে খুঁজে বের করো।আমাকে বিয়ে দিবে না!দিবে না আমায় বিয়ে?
– তুই সত্যি বিয়ে করবি?
নাহার বেগমের মুখে যেন আলোর দ্যুতি ছড়ালো।তিনি খুশি হয়ে গেলেন মুহূর্তে।
– তুমি বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করবে আম্মা,খুশিও হবে তবে সেই খুশি ক্ষণিকেও থাকবে না।অন্ধকারাচ্ছন্ন রুমটায় ছেলের লা-শ পাবে, সইতে পারবে তো?অবশ্য তোমার ছেলে তো মনের দিক থেকে মরেই গেছে শুধু শ্বাসটা আছে।
নাহার বেগম আতকে উঠলেন।দরদর করে ঘামছেন তিনি।পবন মায়ের মুখটা দেখে হো হো শব্দে ডা-কা-তের মতো হেসে উঠলো সেই হাসি ছিলো ভয়ংকর।গা শিউরে ওঠার মতো।
.
রাত প্রায় এগারোটার কাছাকাছি।বাসের মাঝের সারিতে বসে আছে সুহাইল এবং আরমিন।তাদের পেছনেই মাফী এবং তার স্ত্রী রাত্রি।তাদের উদ্দেশ্য আজ কুয়াকাটার যাত্রা।গতকালের তোড়জোড়ে আরমিন তার শরীরে বেশ জ্বরজ্বর অনুভব করে।তবুও বিষয়টা বুঝতে দিলো না সুহাইলকে। ছেলেটা যদি একবার জানে তার জ্বর আসবে তবে তাকে পুরো রাস্তা বকুনি দিতে দিতে যাবে।
সুহাইল তার কোলে থাকা ব্যাগ থেকে একটা ওষুধের পাতা এবং পানির বোতল বের করে এগিয়ে দিলো আরমিনের দিকে,
– দ্রুত ওষুধটা খাও।যেকোন সময় জ্বর হানা দেবে।
আরমিন প্রথমে অবাক হলেও পরে সুহাইলের কথা মতো ওষুধ হাতে নেয়।
বাস চলছে সরু পিচ ঢালা রাস্তা মাড়িয়ে।বাতাসের শনশন হাওয়া দাপিয়ে ডুকছে জানলা দিয়ে।আরমিন মুগ্ধ হয়ে রাতের শহরটা দেখছে গভীর রাত হওয়ায় অনেকেই ঘুমিয়ে পড়েছে।আরমিনের হাতে চিপ্সের প্যাকেট।সুহাইল পেছন থেকে আলতো ভাবে তার কোমড় জড়িয়ে ধরে আছে।বেফাঁস চুলগুলো উড়ে এসে হুটোপুটি খেলছে সুহাইলের গালে।সুহাইল বিরক্ত হলো না বরং তার থুতনিটা বিঁধে রাখলো আরমিনের মাথায়।আরমিনের নড়চড় নেই মেয়েটা স্থির ভঙ্গিতে বাইরের দৃশ্য দেখতে ব্যস্ত।
– আমার চুল আপনায় বেশি বিরক্ত করছে দাড়ান মাথায় কাপড় দিয়ে দি।
– উহ প্রয়োজন নেই আমার ভালো লাগছে।তুমি এর আগে দূরে কোথাও গিয়েছিলে?
– লাস্ট মাফী ভাইয়ার বিয়েতেই গেছিলাম।রিহানাকে বড্ড মিস করেছিলাম,আজো করছি।ঘোরাঘুরি আমার বোনটার বড্ড শখের।
– তোমার ফাইনাল এক্সাম শেষ হোক তবে আমরা আবার পুরো পরিবার মিলে ঘুরতে আসবো।তখন সবারি মনে ইচ্ছে পূর্ণ হবে।
আরমিন মনে মনে বেশ খুশি হলো তবে সেটা প্রকাশ করলো না।নিরিবিলি রাস্তাটায় একপাশে মানুষজনের আনাগোনা দেখা গেলো আরমিন মাথা হেলিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো রাস্তার ধারে কি চলছে।সেখানে একটা বাস উলটে পড়ে আছে।এ-ক্সি-ডে-ন্ট হয়েছে নিশ্চই।
– দেখলেন একটা বাস উলটে পড়ে আছে।এইজন্যই আমার জার্নি ভয় লাগে কখন জানি অঘটন ঘটে যায়।
– এসব উলটো পালটা কথা মাথায় আনো কেন?এবার ঘুমাও।
আরমিন শেষ করা চিপ্সের প্যাকেট বাইরে ছুড়ে মারলো।থুতনিটা রাখলো জানালার কাছটায়।পরিবেশটা বেশ ইঞ্জয় করছে সে।
– ধরুন এখন একটা এ-ক্সি-ডে-ন্ট হলো আর তার মাঝে আমি মরে গেলাম আপনি কি করবেন?
আরমিন মজা করেই কথাটা বললো।তবে কে জানতো সুহাইলের মাথা গরম হয়ে যাবে।আরমিনের কটিদেশে থাকা হাতটা সরিয়ে আগলে বসলো।আবছা অন্ধকারে দেখা গেলো তার থমথমে মুখখানা।তার রাগটা যে মুখচ্ছবিতে ভেসে উঠলো তা ধরতে পারলো।আরমিন।পুনরায় থমথমে মুখেই শুধালো সুহাইল,
– ঘুমিয়ে পড়ো।
– আপনার ভাবভঙ্গিমা পালটে গেলো কেন?
– তোমার আজেবাজে কথা শুনলে কার ভাবভঙ্গিমা ঠিক থাকবে?
আরমিন মিহি হাসলো জানালার বাইরে আবারো দৃষ্টি রাখলো।সুহাইল রাগ দেখিয়ে জানলাটা বন্ধ করে দেয়।
-আপনার বর জানালার বাইরে নয় বাসের ভেতরেই আছে।সুতরাং বাইরে তাকানোর প্রয়োজন দেখছিনা।
#চলবে