মিথ্যে অভিনয় পর্বঃ ১১ | ভালোবাসার কষ্টের গল্প

0
3453

মিথ্যে অভিনয় পর্বঃ ১১
লেখকঃ আবির খান

মাইরার ধৈর্য্যের বাঁধ যেন ভেঙে যাচ্ছে৷ তাহসান এখনো বাসায় ফিরছে না৷ ও কি করবে তাও বুঝতে পারছে না৷ কিন্তু হঠাৎই বেল বেজে উঠলো। মাইরা এক সেকেন্ড সময় না লাগিয়ে দরজা খুলে দেখে তাহসান দাঁড়িয়ে আছে। ও শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে তাহসানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। তাহসান মাইরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মাইরা কান্নাসিক্ত কণ্ঠে বাচ্চাদের মতো করে বলে,

~ আপনি কোথায় গিয়েছিলেন? কতশত বার কল দিয়েছি একটাবারও রিসিভ করেন নি। আপনি দয়া করে আমাকে বিশ্বাস করেন আমি রাতুলের কাছে কখনোই যাই নি। ওর সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই এবং ছিলও না৷ বিশ্বাস করুন প্লিজ।

তাহসান মাইরাকে নিয়ে বাসার ভিতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে ওর হাত ধরে ওদের রুমে চলে আসে। তারপর রুমের দরজা লাগিয়ে দেয়। মাইরা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ও কিছুটা ভয় পাচ্ছে। তাহসানকে কেমন জানি লাগছে। ও ওর বাসার জামা কাপড় নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়। মাইরার খুব ভয় করছে। ওর মনে হচ্ছে খুব খারাপ কিছু হতে যাচ্ছে। ঝড় আসার আগে যেমন নিরবতা থাকে, তেমন এখন সেই নিরবতা বিরাজ করছে ওদের মাঝে। তাহসান কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে বের হয়। ও বাইরে এসে দেখে মাইরা আগের জায়গায়ই দাঁড়িয়ে আছে। ওদের চোখাচোখি হয়। তাহসান মাইরার দিকে তাকিয়ে হাত মুখ মুছতে থাকে। মাইরা ভীতু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ও আস্তে করে বলে,

~ খাবার দিবো?

তাহসান একটা মুচকি হাসি দেয়। হাসিটা যেন মাইরার কাছে তীরের মতো মনে হয়। রহস্য ঘেরা একটা তীর। কি কারণ হতে পারে এই হাসির পিছনে? মাইরা জানে না। কিন্তু ওকে জানতে হবে৷ তাহসান তোয়ালেটা রেখে বেডে উঠে মাইরাকে ইশারায় কাছে ডাকে। মাইরা কিছুই বুঝতে পারছে না। তাও ও ভয়ে ভয়ে বেডে উঠে। তাহসান ওকে টান মেরে কাছে আনে। ওকে বসিয়ে মাইরাকে একদম অবাক করে দিয়ে ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। আর বলে,

– মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। মাথাটা জিম ধরে আছে।

স্বামীর বাধ্য স্ত্রীর মতো মাইরা সুন্দর করে তাহসানের সেবা করছে। আর তাহসান চোখ বন্ধ করে সেবা নিচ্ছে। দুজনের মাঝে চরম নিরবতা। কেউ কিছু বলছে না। মাইরা ওর কাজ করেই যাচ্ছে। একদম মন প্রাণ সব দিয়ে। কিছুক্ষণ পর তাহসান মাইরাকে থামিয়ে উঠে বসে মাইরার ঠোঁটে আঙুল রেখে বলে,

– ব্যথা পেয়েছিলে বেশী?

মাইরা বাচ্চাদের মাথা নাড়িয়ে না বলে। তাহসান মনমাতানো মুচকি একটা হাসি দিয়ে মাইরার ঠোঁটে আঙুল রেখেই বলে,

– সরি। একটু বেশী করে ফেলেছিলাম তখন।

মাইরা চুপ করে আছে। ও কিছু বলছে না। তাহসান মাইরা ঠোঁট ছেড়ে ওর একদম কাছে এসে গায়ের সাথে মিশে বসে বলে,

– কি হলো চুপ কেন? এতক্ষণ তো কত কিছু বলছিলে। এখন কি হলো?
~ আমার খুব ভয় করছে। আপনি কি আমাকে দূরে সরিয়ে….

মাইরা আর কিছু বলার আগের তাহসান ওকে আটকে দেয়। আর সেটা কিভাবে নাই বা বলি। মাইরা বেশ অবাক হয়। কিন্তু অনেক খুশীও। ও লজ্জা পাচ্ছে। তবে অজান্তেই ওর চোখ থেকে অশ্রু ঝরছে। এটা খুশীর অশ্রু। এটা ভালবাসার মানুষকে ফিরে পাবার অশ্রু৷ তাহসান ওকে ছেড়ে দিয়ে চোখ দুটো মুছে দিতে দিতে বলে,

– বারবার তোমার মিষ্টি ঠোঁটের স্বাদ নিতে ভালোই লাগে। কিন্তু তোমার চোখের পানি আমার সহ্য হয় না। আর যে তোমাকে কাঁদাবে কিংবা কষ্ট দিবে আমি এত সহজে তাকে ছাড়বোও না। কখনো না।

মাইরা কি রিয়েকশন দিবে বুঝতে পারছে না। তবে ছোট্ট করে বলে,

~ আপনি এতক্ষণ কই ছিলেন?

তাহসান মাইরার সামনে বসে ওর গাল দুটো ধরে ওর চোখে চোখ রেখে বলে,

– এবার তাহলে আসল কথায় আসা যাক। আমি এতক্ষণ কই ছিলাম তাই তো? আমি এতক্ষণ ছিলাম মিশনে৷
~ মিশন! কিসের মিশন?(অনেক অবাক হয়ে)
– রাতুলকে ধরতে গিয়েছিলাম। ওর কাছ থেকে আমি ছবিগুলো নিয়ে অনেকক্ষণ ভালো করে দেখেছি। ছবিগুলো দেখে ৯৯% রিয়েল মনে হচ্ছিলো। কিন্তু ১% বাকি ছিল। ও আমাকে অনেক কিছু বলেছে। আমি সব শুনেছি। তোমাদের মাঝে যেকোনো একজন আমাকে মিথ্যা বলছিল। সেটা আমি বুঝতে পেরেছি। কিন্তু প্রশ্ন ছিল কে মিথ্যা বলছে। কে মিথ্যে অভিনয় করছে? এটা আমাকে জানতে হবে। তাই দুপুরে আমি তোমাকে ওভাবে ধরি। রাতুল তোমার কি হয় আমি জানতাম না। আমার মনে অনেক কিছু ঘুরপাক খাচ্ছিলো। খুব খারাপ লাগছিল। কিন্তু তুমি খেয়াল না করলেও আমি পুরোটা সময় তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। মানুষের মনে কি চলছে তার চোখ তা সব বলে দেয়। তুমি যখন রাতুলের সম্পর্কে বলছিলে আমি তোমার চোখ পড়ার চেষ্টা করেছি। সেখানে সত্য ছাড়া আর কিছুই পাইনি। কারণ যে মিথ্যা কিংবা বানিয়ে বলে সে সবসময় আশেপাশে চায়। কিন্তু তুমি একবারও আমার চোখে থেকে চোখ সরাও নি। আমি তখনই বুঝতে পেরেছি রাতুল কালপ্রিট। আর তোমার ঠোঁটে কামড়টা দিয়েছি আমাকে রাতুলের কথা আগে বলো নি বলে। তাহলে ওর শাস্তিটা আগেই হতো।
~ শাস্তি!
– হ্যাঁ। রাতুল এখন কই জানো?
~ কোথায়?
– জেলে।
~ কিহ! কিভাবে?
– দুপুরে বের হয়ে আমার ক্লোজ ফ্রেন্ড যে পুলিশের উচ্চ পদে আছে তার কাছে যাই। ছবিগুলো দেখাই। আর সব খুলে বলি। ওরা স্ক্যান করে বলে এগুলো ফটোশপ করা। আমরা আর দেরি না করেই সাথে সাথে রাতুলকে গিয়ে ধরি। কারণ ও মারাত্মক অপরাধ করেছে। ওর মাথায় বড়ো ধরনের খারাপ কিছু করার প্ল্যান ছিল। কিন্তু তার আগেই ওকে ধরে উত্তম মাধ্যম দিয়ে ওর কাছ থেকে সব জানতে পারি। তুমি ওকে মেনে নেও নি বলে ও তোমার জীবন নষ্ট করতে চাচ্ছিলো। শুধু তাই না ও অনেক মেয়ের জীবন অলরেডি নষ্ট করেছে। পুলিশ সব বের করছে। এখন হয়তো অনেক মেয়ের জীবন বেঁচে যাবে৷ তোমার মতো আর হ্যারিস হবে না। আমার মাইরাকে দূরে সরানোর প্ল্যান করছিলও। ওকে এমন দূরে পাঠিয়ে দিয়েছি যে ওর আসতে আসতে আমরা বুড়ো হয়ে যাবো। হাহা।

মাইরা ভীষণ ভাবে অবাক হয়। ও কল্পনাও করে নি তাহসান এত কিছু করবে৷ মাইরা নিজেকে সামলাতে পারে না৷ ও অঝোরে কান্না করতে করতে তাহসানকে জড়িয়ে ধরে। তাহসান মাইরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,

– কি ভেবেছিলে তুমি? তোমাকে রেখে ওই লম্পটটাকে বিশ্বাস করবো আমি? তোমাকে দূরে সরিয়ে দিব? কখনো না। যে মেয়ে আমার সব কষ্টকে নিজের করে আমার মুখে হাসি ফুটিয়েছে সে কখনোই আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না। আর তোমার প্রতিটি স্পর্শ, প্রতিটি অনুভব আমাকে জানান দেয় তুমি আমাকে কতটা চাও। আমাকে খুশী করার জন্য কতকিছু করো। আমি সব বুঝি। আসলে নিজের সাথে লড়াই করেছি আজকে। রাতুল এমন ভাবে আমাকে তোমার সম্পর্কে বলেছে, যেমনটা তমা আমার সাথে করেছিল। তাই মনটা বেশী খারাপ ছিল। আমার সব কিছু তোমাকে দোষারোপ করলেও আমার মনটা কেন জানি বলছিল তোমার কোন দোষ নেই। কেন আমি থার্ড পার্সনের কথায় তোমার উপর একটু একটু করে জমানো অনুভূতি গুলো মুহূর্তেই শেষ করে দিব! কখনোই না। আজ সারাদিন তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করিনি কারণ আমি নিজেকে সময় দিয়েছি। ঠান্ডা মাথায় ভেবেছি সব। তারপর অ্যাকশন নিয়েছি। দিন শেষে তোমার বিশ্বাসটুকু আমি ধরে রেখেছি। হারিয়ে যেতে দেই নি। আর কখনো দিবও না৷ স্বামী স্ত্রীর মধ্যে এটাই তো আসল, একে অপরের প্রতি দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস রাখা। আমি পেরেছি মাইরা আমি পেরেছি। আর সব কিছুর জন্য সরি। আমাকে মা…

তাহসান আর কিছু বলার আগে মাইরা ওকে থামিয়ে দেয় মাথা নাড়িয়ে না বলে। তাহসান মাইরার চোখ মুছে দেয়৷ মাইরা কান্নাসিক্ত কণ্ঠে বলে,

~ আপনি আমার বড়ো। আপনাকে অনেক বেশী সম্মান করি। এত বড়ো একটা ধাক্কা খেয়েও আপনি কখনো আমার সাথে বিন্দু পরিমাণ খারাপ আচরণ করেন নি।যাতে আপনাকে মাফ চাইতে হবে৷ তবে হ্যাঁ আপনি খুব পঁচা। অনেক অনেক পঁচা। আমার সুন্দর গোলাপি ঠোঁটটা কামড়ে লাল করে দিয়েছেন। এটার জন্য রাগ করছি। অনেক অনেক বেশী রাগ করছি। হুহ।

তাহসান হেসে দেয় মাইরার অভিমানী কথা শুনে৷ ও মাইরাকে কাছে টেনে ওর ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আবার আঙুল রেখে বলে,

– জানো এই মিষ্টি ঠোঁটটাই তো আমাকে শান্ত করেছে। আমার ভিতরে তোমার প্রতি বিশ্বাসটা আর শক্ত করেছে৷ আমি যখন তোমাকে কামড় দিয়েছি তুমি আমাকে দূরে সরিয়ে দেও নি বা এমন কিছু করো নি যাতে আমি দূরে সরে যাই। ঠিক তখনই আমি বুঝেছি তুমি চাও না আমি দূরে সরে যাই। তাতে তুমি কষ্টও সহ্য করতে রাজি। তুমি যদি মিথ্যে বলতে তাহলে এগুলো কখনো সহ্য করতে না। এটাও একরকম পরীক্ষা ছিল তোমাকে। সাথে আমি একটু মিষ্টিমুখও করেছি। হাহা।

মাইরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তাহসানের দিকে। তবে ওর মুখখানা লজ্জায় গোলাপি হয়ে গিয়েছে। তাহসান ওর মায়াবী চোখের দিকে তাকিয়ে একটা চোখ টিপ দিয়ে দ্রুত একটা মিষ্টি পরশ ওর ঠোঁটে বুলিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়ে হাসতে হাসতে। মাইরার এখন খুব ভালো লাগছে। বুকটা অনেক হালকা লাগছে। ও মনে মনে শুকরিয়া আদায় করছে। তাহসান ওকে টান মেরে শুয়ে দিয়ে ওকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে,

– আজ রান্নাটা অনেক বেশী মজা হয়েছিল। কিন্তু আমার মাথায় অনেক কিছু তখন ঘুরছিল। তাই কিছু বলতে পারিনি। সত্যি খুব মজা লেগেছিল আমার।
~ আপনি না সত্যিই অন্যরকম। ঠিক মানিয়ে নিতে পারেন সবাইকে। সবার থেকে একদম আলাদা। আপনার মতো কেউই হয় না।
– সে যা হোক। তবে আমি বারবার শুধু তোমাকে চাইবো আমার স্ত্রী হিসেবে। তোমার মতো স্ত্রী কোটিতেও একটা হয় না। আচ্ছা ওয়েট দেখি তোমার মুখটা একটু।

তাহসান মাইরাকে ভালো করে দেখে। মাইরা লজ্জা পাচ্ছে। এরপর তাহসান যা করলো মাইরা তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না৷ ও উঠে মাইরার পেটে কান পাতে। মাইরা কিছুই বুঝতে পারছে না৷ ওর খুব লজ্জা লাগছে৷ তাহসান উঠে হাসি দিয়ে বলে,

– এই তোমার পেটে দেখি বাবু।
~ কিইইইই? (ভিষণ আশ্চর্য হয়ে)

মাইরা এক লাফে উঠে বসে। আর ভয়ে ভয়ে বলে,

~ মানে বাবু কই থেকে আসলো?(পেটে হাত দিয়ে)

তাহসান আস্তে করে মাইরার কানের কাছে এসে বলে,

– কেন তোমাকে চুমু দিছি না। তাই মনে হয় আমাদের বাবু চলে আসছে।

মাইরা অবাক হয়ে বলে,

~ যাহ! চুমু দিলে বাবু হয় না আমি জানি।
– তাই নাকি? তা কিভাবে হয় শুনি?
~ বলবো না৷ কারণ আমিও জানি না। (মুখ বাকিয়ে)

তাহসান হাসতে হাসতে শেষ। মাইরার এই বাচ্চামিটা ওর খুব ভালো লাগে। ওর সব চিন্তা, দুঃখ, কষ্ট সবই মুহূর্তে হারিয়ে যায়। তাহসানকে হাসতে দেখে মাইরার হাসছে। হঠাৎই তাহসান বেড ছেড়ে দাঁড়িয়ে বলে, আসো।

~ কই?
– আগে সাথে আসো তো সাথে তাহলেই বুঝবা৷
~ আচ্ছা৷

মাইরাও বেড ছেড়ে নেমে আসে। এরপর তাহসান ওকে নিয়ে কিচেনে যায়। ওকে একজায়গায় চুপ করে বসায়৷ ফ্রিজ থেকে খাবার সব বের করে ওভেনে গরম করতে থাকে। মাইরা বোকার মতো তাকিয়ে সব দেখছে। ও কিছুই বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে এগুলো। তাহসান খাবার সব গরম করে মাইরার পাশে এসে বসে। তারপর খাবার মাখিয়ে এক লোকমা মাইরার দিকে তুলে দিয়ে বলে,

– নেও এবার হা করো তো আমার পিচ্চি বউরানী টা।

মাইরা ভীষণ ভাবে অবাক হয়। সাথে অনেক অনেক বেশী খুশীও হয়। ও তাহসানের কথা মতো হা করে খাবারটা মুখে নিয়ে খায়। তাহসান দ্বিতীয় লোকমা রেডি করতে করতে বলে,

– তুমি যে না খাইয়ে ছিলে তোমার মুখ দেখেই বুঝেছি। তাই ভাবলাম আমার বউটাকে আজ নিজ হাতেই খাইয়ে দি। আমি খেলাম আর আমার বউটা আমার জন্য না খেয়ে থাকবে তা কি করে হয়৷

মাইরা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। ওর মুখে কোন ভাষা নেই। ও শুধু মন ভরে খাচ্ছে। ওর মনে আর কোন কষ্ট নেই। ও এমন একজনকে পেয়েছে যে ঠিক একদম ওর মতোই। মাইরা মুচকি হাসছে আর তাহসানের হাতে খাচ্ছে৷ পুরোটা সময় জুড়ে মাইরা তাহসানের দিকে তাকিয়ে ছিল। একটুও অন্যদিকে তাকায় নি। খাওয়া দাওয়া শেষ হলে ওরা ওদের রুমে চলে যায়। কিন্তু এদিকে আড়ালে দুজন দুষ্টু ওদের দিকে তাকিয়ে ছিল। তারা হলো রাহুল আর সাথী। তাহসান আর মাইরা ওদের রুমে গেলে সাথী অভিমানী স্বরে বলে,

~ নিজের ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে কিছু শিখো। কত সুন্দর করে বউয়ের যত্ন করে। আর তুমি! হুহ।
– তাই? আমি তোমার যত্ন করি না? (সাথীকে জড়িয়ে ধরে)
~ একদম না।
– ও। তাহলে রুমে চলো একটু যত্ন করি। হাহা।
~ এই দুষ্টু ছাড়ো। মাইর দিব কিন্তু।

রাহুল আর সাথী ওদের রুমে চলে যায়। ছোট ভাইটাকে আবার হাসিখুশী দেখে রাহুল মনে মনে অনেক হ্যাপি। ভাইয়ে ভাইয়ে সম্পর্ক এমনই হওয়া উচিৎ। একজন দুঃখী হলে অন্যজন খেয়াল রাখবে৷ আবার একজন সুখী হলে অন্যজনও সুখী হবে৷ তাহলেই তো সুন্দর একটা পরিবার হয়ে উঠবে৷ রাহুল আর তাহসান বাবা-মার বাধ্য দুই ছেলে। তাহসানের মনে এত কষ্ট থাকা স্বত্ত্বেও ও ওর বাবা-মাকে কষ্ট দিতে চায় নি। তাদের কথা মতো মাইরাকে বিয়ে করেছে। আর আজ ও সবচেয়ে বেশী সুখী। অনেক অনেক বেশী সুখী। কারণ ওরা দুজন বাবা-মার কথা শুনেছে। ওদের বাবা-মাও যথেষ্ট ভালো। যেমন রাহুল যখন সাথীর কথা ওর বাবা-মাকে বলে তারা তার ছেলেকে নিরাশ করে নি। দ্রুত ওদের বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। এভাবেই ওদের পরিবারটা সুন্দর হয়ে উঠেছে। আমাদেরও উচিত তাহসান আর রাহুলের মতো সন্তান হওয়া। যারা বাবা-মার জন্য সব করতে পারবে। তবে এখন তাহসান কথায় আসা যাক। ওর মনের মধ্যে এখন একটা বিষয়ই ঘুরপাক খাচ্ছে। ও আর অপেক্ষা করতে চায় না। মাইরাকে কালই সবচেয়ে বড়ো একটা সারপ্রাইজ দিবে। কারণ এই সারপ্রাইজে পর ওদের সম্পর্ক একদম পরিবর্তন হয়ে যাবে। তাহসান শুধু কালকের অপেক্ষায় আছে। কারণ ও সারপ্রাইজ এর সব কাজ শেষ করে এসেছে আজকে। এখন অপেক্ষা শুধু কালকের।

চলবে..?

আগামী পর্বে আপনাদের এই পছন্দের কিংবা অপছন্দের গল্পটির ইতি টানছি। সে পর্যন্ত সবাই সাথে থাকবেন আর কেমন লেগেছে আজকের পর্বটি তা জানাতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।

আগের এবং পরবর্তী পর্বের লিংক কমেন্টে দেওয়া হবে৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here