#মিস্টার_মাফিয়া
#পর্ব_২
#লেখিকাঃতানজিলা_খাতুন_তানু
রিকানঃকি হলো চুপ করে আছিস কেন,বল।
রুহানঃআসলে দাদাভাই আমি মিস্টার রায়ের মেয়েকে তুলে আনতে বলেছিলাম, কিন্তু লোকগুলো এই মেয়েটাকে তুলে এনেছে।
রিকানঃসেটা বুঝলাম ভুল হয়েছে কিন্তু তুই মেয়েটাকে এই বাড়িতে নিয়ে এসেছিস কেন?
রুহানঃতোর জন্য
রিকান রুহানের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
রুহানঃনা মানে তোর সেক্রেটারি লাগবে বলছিলে তো তাই ভাবলাম মেয়েটাকে যদি করা যায়।
রিকানঃতুই এখন যা এখান থেকে।
রুহান রিকানের কথা শুনে অবাক হয়,রিকান ওকে কিছু না বলে চলে যেতে বললো এটা ঠিক ওর হজম হলো না।রুহান কোনো কথা না বলে,মনে হাজারটা প্রশ্ন নিয়ে চলে গেলো।ওর দাদার রাগ নিয়ে ওর যথেস্ট ভালো ধারনা আছে ওহ জানে ওর দাদা রেগে গেলে কি করবে,তাই চলে গেলো।
রুহান চলে যেতেই রিকান ঘরের দরজাটা বন্ধ করে, সিগারেটে টান দিতে দিতে বারান্দায় গিয়ে বসলো।আজকে অনেক দিন পর অনেক বছর পর ওর মনে অনুভূতি জন্ম নিচ্ছে,ওহ জানে না এই অনুভূতির মানে কি।
ছোটো বেলা থেকে অনেক অবেহেলা পেয়ে বড়ো হয়েছে, কখনো কারোর ভালোবাসা পাইনি,অবহেলা পেতে পেতে পাথরে পরিণত হয়েছে আর তৈরি হয়েছে মাফিয়া কিং।
কিছুক্ষন পর…….
রুহান নিজের রুমে ছিলো তখন সার্ভেন্ট এসে বললো – স্যার মেয়েটার জ্ঞান ফিরেছে।
রুহানঃওহ আমি যাচ্ছি,আর দাদাভাই কোথায়।
সার্ভেন্টঃস্যার তো নিজের রুমেই আছেন।
রুহানঃওহ,তুমি যাও।
সার্ভেন্ট চলে যায়,রুহান গেস্ট রুমে যায়। গিয়ে দেখে মেয়েটি বিছানায় জড়ো হয়ে বসে আছে।
রুহানঃহ্যালো
মেয়েটা ওর দিকে তাকায়,রুহানকে দেখে মেয়েটি ভয় পেয়ে আরো জড়ো হয়ে বসে।
রুহানঃভয় পাবার কোনো কারন নেয়,আমি তোমার কোনো ক্ষতি করবো না।তোমার নাম কি বলো।
মেয়েটাঃফাবিয়া
রুহানঃকি কর তুমি,কোথায় থাকো।
ফাবিয়াঃপড়াশোনা অর্নাস থার্ড ইয়ার,গার্লস হোস্টেলে থাকি।( আসতে করে)
রুহানঃআর তোমার বাবা মা
ফাবিয়াঃকেউ নেয় আমার।
রুহানঃওহ।আচ্ছা তুমি ওদের ওখানে কি করে গেলে।
ফাবিয়াঃআসলে আমি কলেজ শেষ করে হোস্টেলে ফিরছিলাম,তখন কয়েকজন গুন্ডা আমাকে জোড় করে গাড়িতে তুলে আর আমরা কাঁধে কিছু একটা ফুটিয়ে দেয় আর আমি অজ্ঞান হয়ে যায়।
রুহানঃওহ
ফাবিয়াঃকিন্তু আপনি কে আর আমাকে এখানে কোথায় এনেছেন
রুহানঃ আমি রুহান, আর গ্রুপ অফ কোম্পানির মালিক রিকান রায়হানের ছোটো ভাই।
ফাবিয়াঃ রিকান রায়হান মানে যার পেছনে হাজারটা মেয়ের লাইন সেই ছেলেটা।
ফাবিয়ার কথা শুনে রুহান ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো,ফাবিয়ার খেয়াল আসে ওহ কি বলতে কি বলেছে তাই চুপ করে যায় লজ্জায়।
রুহান কিছুক্ষন ফাবিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর বলেঃ হ্যা সেই রিকান রায়হান।
ফাবিয়াঃওহ,আমাকে এখানে কেন এনেছেন
রুহানঃআমি তোমাকে ওদের থেকে উদ্ধার করে আনলাম,এখন আর তোমার কোনো ভ’য় নেয়। তুমি এখানে পুরোপুরি সেফ।
ফাবিয়াঃ ধন্যবাদ,আচ্ছা এবার কি আমি ফিরে যেতে পারি।
রুহানঃ তুমি যেতে পারো কিন্তু
ফাবিয়াঃ কি( ভ্রু কুঁচকে)
রুহানঃ তোমাকে আমি একটা কাজের অফার দিতে চাইছি তুমি চাইলে সেটা নিতে পারো।
ফাবিয়াঃ কি কাজ
রুহানঃ রিকান রায়হান এর পার্সোনাল সেক্রেটারী।
ফাবিয়া অবাক হয়ে রুহানের দিকে তাকালো,রিকান রায়হান ওর মতো সাধারণ মেয়ের কাছে শুধু একটা স্বপ্ন সেখানে তার পার্সোনাল সেক্রেটারী হয়ে থাকার সুযোগ পাবে এটা ফাবিয়ার কল্পনার বাইরে ছিল।
রুহানঃ কি হলো
ফাবিয়াঃ কিছু না
রুহানঃ রাজি নয় নাকি
ফাবিয়াঃ হ্যা রাজি কিন্তু একটা প্রশ্ন ছিলো
রুহানঃ কি প্রশ্ন
ফাবিয়াঃ আমাকে কেন সেক্রেটারি হবার অফার দিচ্ছেন আপনি তো আমাকে চেনেন ওহ না।
রুহানঃ আমরা যাদের কাজে নেয় তাদের তো আগে থেকে চিনি না তাই বলে কি তাদের নেয়না।
ফাবিয়াঃ সেটা নয় কিন্তু।
রুহানঃ আমি বুঝতে পারছি তোমার কনফিউশন এর কারন টা।
ফাবিয়াঃ হু
রুহানঃ আসলে আমার দাদাভাই মানে রিকানের যে হারে সেক্রেটারি চেঞ্জ হয় মনে হয় এতো জামাকাপড় ওহ মানুষ চেঞ্জ করে না।
ফাবিয়াঃ কেন
রুহানঃ রাগী মানুষ তো,একটু কিছু ভুল হলেই সোজা বার করে দেয়।কোনো ছেলে রাগের কারনে ওর সেক্রেটারি হতে চাই না,মেয়েরা আসে কিন্তু একদিনের বেশি কেউ টিকে না।আমাদের অফিসে প্রতিদিন সেক্রেটারি নিয়োগ চলে।
ফাবিয়াঃ ওহ।
রুহানের কথাগুলো শুনে ফাবিয়ার মনের মধ্যে একটা ভয় সৃষ্টি হলো ঠিকিই কিন্তু নিজের ক্রাশ বয়কে এতকাছ থেকে দেখার সুযোগ ওহ কিছুতেই হাত ছাড়া করতে চাই না।
রুহানঃ তোমার শরীর যদি ভালো লাগে তাহলে তুমি বাড়ি চলে যেতে পারো।
ফাবিয়াঃ আমি বাড়ি যাবো।
রুহানঃ ওকে তুমি যাও, কিন্তু মনে রেখো কালকে অফিসের প্রথম দিন,সকাল ১০টাই চলে আসবে দেরি করবে না দাদাভাই কিন্তু দেরি একদম পছন্দ করেনা।
ফাবিয়াঃ ঠিকাছে।
ফাবিয়া রুহানের থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়।
পরেরদিন সকালে….
খাবার টেবিলে…
রিকানঃ রুহান আজকে সেক্রেটারি নতুন কাউকে ঠিক করেছিস তো
রুহানঃ হুম
রিকানঃ কাদেরকে ধরে আনিস কে জানে,একটাও ঠিক মতো কিছু করতে পারবে না,এবার ওহ যদি কোনো ভুলভাল কাউকে সেক্রেটারি করিস এবার আমি তোকে বের করে দেবো বলে দিলাম।
রুহানঃ এবার কোনো ভুল নয় একদম ঠিক জনকেই নিয়োগ করেছি।
রিকানঃ ঠিক হলেই ভালো নাহলে তোর কপালে দুঃখ আছে।
রুহানঃহুম
রিকান ব্রেক ফাস্ট করে চলে যায়।
রুহানঃ আল্লাহ গো এবার জেনো দাদাভাই এর সেক্রেটারি পছন্দ হয় নাহলে আমি শেষ।
অফিস….
ঘড়ির কাঁটাতে ১০ টা বেজে ১০মিনিট রুহান রিকানের কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে পায়চারি করছে আর দাঁত দিয়ে নখ কাটছে। ওহ এতটাই চিন্তিত যে মনে হয় নখটাই খেয়ে ফেলবে।
রুহানঃ ম্যানেজার মেয়েটা আসলো।
ম্যানেজারঃ না স্যার।
রুহানঃওহ।
রুহান খালি পায়চারি করছে,এর মাঝে পিয়ন এসে বললোঃরুহান স্যার আপনাকে রিকান স্যার ডাকছে।
রুহানঃ আজকে আমার দিন শেষ।( ম্যানেজারের দিকে তাকিয়ে)
ম্যানেজারঃ তাড়াতাড়ি জান আবার রেগে যাবে।
রুহানঃ হুম ,দোয়া করবেন আমার জন্য যাতে আমি উপড়ে গিয়ে জান্নাত বাসি হতে পারি।
ম্যানেজারঃ আমিন,এবার যান।
রুহানঃ হুম।
রুহান ভয়ে ভয়ে রিকানের কেবিনের দরজা খুলে বললোঃ মে আই কাম ইন
রিকানঃ নো ওখানেই দাঁড়িয়ে থাক তুই
রুহানঃ কেন
রিকানঃ আবার বলছিস কেন,তোকে বের করে দেয়নি তোর ভাগ্য ভালো
রুহানঃ দাদাভাই
রিকানঃ তোর নিয়োগ করা মানুষটা কোথায়,একদম পারফেক্ট তাই না,এই তার পারফেক্টের নমুনা। ১০টা বেজে ১৫ মিনিট হয়ে গেলো এখনো পাত্তা নেয়।
রুহান কিছু বলেনা কারন ওর কথা বলার মতো কোনো মুখ নেয়।
রিকানঃ আমার না রাগ উঠছে,তুই এখান থেকে যা।
রুহানঃ দাদাভাই
রিকানঃ যা এখান থেকে।
রুহান চুপচাপ চলে যায়,রিকান চেয়ারে বসে কাজ করতে থাকে।
রুহান আবার দরজায় টোকা মারে।
রিকানঃকে
রুহানঃ আমি
রিকানঃআবার এসেছিস কেন
রুহানঃ রেগে আছিস আমার উপর।
রিকানঃ তুই যা এখান থেকে নাহলে মার খাবি।
রুহান চলে যায়। কিছুক্ষন পর আবার দরজায় টোকা পড়ে।
রিকানঃ তুই কি আমার হাতে মার খাবি এখন।
রিকান কথাটা বলে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো কেউ নেয়,ওহ আবার কাজ করতে লাগলো।
২মিনিট পর,
– মে আই কাম ইন
কারোর কন্ঠ শুনে রিকান মাথা তুলে তাকিয়ে সামনের মানুষটাকে দেখে ধমকে গেলো।
#চলবে……