#মিস্টার_মাফিয়া
#পর্ব_৩
#লেখিকাঃতানজিলা_খাতুন_তানু
রিকান তাকিয়ে দেখলো সেদিনের মেয়েটা অর্থাৎ ফাবিয়া দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
ফাবিয়াঃ মে আই কাম ইন স্যার।
রিকানঃ ইয়েস
ফাবিয়া ভেতরে আসে।রিকান বুঝতে পারছেনা ফাবিয়া এখানে কেন!
রিকানঃ আপনি এখানে।
ফাবিয়া একনজর রিকানের দিকে তাকালো রিকান একটা ব্ল্যাক লুকে আছে,ফর্সাতে কালোটা খুব সুন্দর লাগছে,ফাবিয়া এই প্রথম রিকান কে এত কাছ থেকে দেখছে। ফাবিয়া নিজেকে সামলে নিয়ে বললো।
ফাবিয়াঃ আমি ফাবিয়া, আপনার সেক্রেটারি।
রিকান চমকে উঠলো।ফাবিয়াকে একনজর ভালো করে দেখলো- ফাবিয়া একটা সাদা রঙের সালোয়ার কামিজ পড়েছে, চুলগুলো বেনী করা,মুখে সাজ নেয় কিন্তু চোখে হালকা করে কাজল দেওয়া।ফাবিয়ার এই সাধারণ সাজই রিকানের মনে অন্যরকম অনুভূতির সৃষ্টি করছে।
রিকানঃ ওহ, তা এতো লেট করে আসলেন কেন
ফাবিয়াঃ আসলে স্যার রাস্তায় জ্যাম ছিলো খুব তাই দেরি হয়ে গেলো।
রিকানঃ ও আপনি এখন একটু বাইরে যান,আর হ্যা রুহান মানে আমার ভাইকে একবার ডেকে দেবেন।
ফাবিয়াঃ ওকে।
ফাবিয়া বাইরে বেড়িয়ে দেখে রুহান দাঁড়িয়ে আছে।
রুহানঃ প্রথম দিনেই লেট দাদাভাই তোমার সাথে আমাকেও বের করে দেবে।
ফাবিয়াঃ সরি
রুহানঃ আর বলে কি হবে,ভেতরে কি হলো বলো
ফাবিয়াঃ আমাকে বাইরে আসতে বললো আর আপনাকে ভেতরে যেতে বললো।
রুহান ঢোক গিললো।
রুহানঃ আবার আমাকে কেন
ম্যানেজারঃ মনে হয় এটাই বাতিল হয়ে গেলো।
রুহানঃ হুম সাথে আমি ওহ।
রুহান মুখ কালো করে রিকানের কেবিনে ঢোকে।
রিকানঃ ওটা কাকে নিয়োগ করেছিস তুই
রুহানঃ সরি ভুল হয়ে গেছে এবারের মতো মাফ করে দে
রিকানঃ ওকে।
রুহানঃ আমি মেয়েটাকে এখনি বের করে দিচ্ছি।
রুহান তাড়াতাড়ি করে বের হতে গেলে রিকান বলেনঃ কোথায় যাচ্ছিস।
রুহানঃ ফাবিয়াকে বের করতে
রিকানঃ আমি বলেছি।
রুহানঃ মানে
রিকানঃ মানে মেয়েটা থাকুক,ওকে সব কাজগুলো ভালো করে বুঝিয়ে দে যাতে কোনো না ভুল হয় ওকে।
রুহানঃ ওকে।
রুহান কেবিন থেকে বের হয় মুখ ভার করে।
ম্যানেজারঃ কি হলো স্যার
রুহানঃ যা হবার তাই হলো
ম্যানেজারঃ ওই কে আছিস আবার সেক্রেটারি খোঁজ কর
রুহানঃ তার দরকার নেয়
ম্যানেজারঃ কেন
রুহানঃ কারন ফাবিয়াই থাকবে এখন।
ম্যানেজারঃ অ্যা
রুহানঃ অ্যা নয় হ্যা,ফাবিয়া চলো তোমাকে সব কাজগুলো বুঝিয়ে দেয়।
ফাবিয়া আর রুহান চলে যায়।
ম্যানেজারঃ কি হলো এটা রিকান স্যার মেয়েটা দেরি করে আসা সত্ত্বেও মেয়েটাকে রেখে দিলো কেসটা কি হলো।( মাথা চুলকে)
কয়েকদিন কেটে যায়,
ফাবিয়া মন দিয়ে কাজ করছে,রুহান আর ওর মাঝে একটা ভালো বন্ধুত্ব সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। রিকান ফাবিয়ার সাথে দরকার ছাড়া কোন কথা বলেনা। অফিসের সবাই অবাক কারন এই প্রথম কোনো সেক্রেটারি এতদিন আছে তাও আবার একজন মেয়ে।
ম্যানেজারঃ ফাবিয়া
ফাবিয়াঃ হ্যা বলুন
ম্যানেজারঃ এই ফাইলটাই স্যারের সাইন লাগবে,স্যার আজ অফিসে আসবে না তাই বাড়িতে গিয়ে সাইনটা করাতে হবে।
ফাবিয়াঃ আমাকে বলছেন কেন
ম্যানেজারঃ তোমাকে বলবো না তো কাকে বলবো,তুমিই তো যাবে স্যারের বাড়ি।
ফাবিয়াঃ আমাকে যেতে হবে।
ম্যানেজারঃ হা,গাড়ি নীচে আছে যাও
ফাবিয়াঃ ওকে।
ফাবিয়া রিকানের বাড়িতে আসে,ওকে দেখে সবাই অবাক হয়।
সার্ভেন্টঃ আপনি
ফাবিয়াঃ হ্যা আমি, রিকান স্যার আছেন।
সার্ভেন্টঃ হা উপড়ে আছে।
ফাবিয়াঃ কোন রুমটা
সার্ভেন্টঃ উপড়ে গিয়ে ডানদিকের প্রথম রুমটা।
ফাবিয়া উপড়ে উঠে যায়। ফাবিয়া রিকানের রুমে গিয়ে দেখে কেউ নেয়, ফাবিয়া খেয়াল করলো গোটা রুমটা ব্ল্যাক কালারের ডেকোরেশন করা।
ফাবিয়াঃ বাবা গো সবটা ব্ল্যাক,মনে হচ্ছে রুমে নয় একটা অন্ধকার জগতে এসে পড়েছি।( বিরবির করে)
ফাবিয়া এদিক ওদিক খুঁজে দেখে কেউ নেয়।
ফাবিয়াঃ কোথায় গেলো স্যার, আমি নীচে চলে যায়।
ফাবিয়া রুম থেকে বের হবে বেরোচ্ছে তখনি কারোর সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যেতে গেলে কেউ ওকে ধরে নেয়।
ফাবিয়া তাকিয়ে দেখে রিকানের গোটা গা ভিজে দেখে মনে হচ্ছে এই মাত্র গোসল করেছে,চুল থেকে টপটপ করে পানি ফাবিয়ার মুখে পড়ছে,ফাবিয়া দেখে রিকান ওর দিকে তাকিয়ে আছে একধ্যানে।
ফাবিয়াঃ স্যার
রিকানের ধ্যান ভাঙ্গে ফাবিয়ার ডাকে,ওহ তাড়াতাড়ি ফাবিয়াকে দাঁড় করিয়ে দেয়।
রিকানঃ তুমি এখানে
ফাবিয়াঃ একটা ফাইলে সাইন করানোর ছিলো,আপনি আসুন আমি নীচে গিয়ে বসছি।
ফাবিয়া তাড়াতাড়ি ওখান থেকে চলে যায়।বেচারি এখনো শক থেকে বের হতে পারেনি রিকানের ওই লুক দেখে ওর হাওয়া বেড়িয়ে গেছে।
ওদিকে রিকান ফাবিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে একটা ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিলো,কেন এমন হলো,কারনটা ওর অজানা,ওসব কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে রেডি হয়ে নীচে গেলো।
রিকান নীচে গিয়ে দেখলো রুহান আর ফাবিয়া হেসে হেসে কথা বলছে,ওর একটু রাগ হলো,বুকের মাঝে চিনচিন করছে।
রিকানঃ রুহান এখানে কি করছিস
রুহানঃফাবিয়ার সাথে একটু আড্ডা মারছিলাম।
রিকানঃ কাজ নেয় তোর
রুহানঃ না এখন আমি ফাবিয়ার সাথে আড্ডা মারবো।
রিকানঃ যা ইচ্ছা কর।
রিকান রাগ করে চলে যেতে গেলে ফাবিয়া ডাক দেয়ঃ স্যার দাঁড়ান
ফাবিয়ার কথা শুনে রিকান দাঁড়িয়ে যায়।
রিকানঃ কি বলো
ফাবিয়াঃ স্যার আপনার সাইন লাগবে।
রিকান ফাবিয়ার হাত থেকে ফাইল গুলো নিয়ে সাইন করে দিয়ে চলে যায়।
রিকান চলে যেতে রুহান ফাবিয়ার সাথে কথা বলতে থাকে। এটা কেন জানি রিকানের সহ্য হচ্ছে না।
রাত্রিবেলা…
রুহানঃ দাদাভাই ডেকেছো
রিকানঃ হুম,সব প্ল্যান ঠিকঠাক তো
রুহানঃ হুম,সবটা হয়ে গেছে।
রিকানঃ গুড
রুহানঃ দাদাভাই একটা কথা বলবো
রিকানঃ কি বল
রুহানঃ দাদাভাই আমাদের কেন মাফিয়া জগতের সাথে যুক্ত আছো,আমাদের তো কোনো কিছুর অভাব নেয়,তবুও তুমি কেন ওই খারাপ জগতটার সাথে যুক্ত আছো, কিন্তু আমাকে তুমি সবটা থেকে দূরে রেখেছো কেন?
রিকান রুহানের এমন প্রশ্নে চুপ করে যায়।
রুহানঃ দাদাভাই বলো,আমি তোমার ভাই হয়ে জানিনা, তুমি মাফিয়া জগতে কেন আছো, তুমি তো কোনো বেআইনি কাজ করো না।তাহলে কেন নিজেকে ওই জগতটার সাথে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছো বলো দাদাভাই।
রিকানঃ রুহান কি হচ্ছে এসব বাদ দে
রুহানঃ না দাদাভাই আজ আমাকে সবটা বলতেই হবে বলো তুমি।
রিকান কিছু ক্ষন চুপ থেকে রুহানের দিকে তাকিয়ে বললোঃ কি জানতে চাস তুই।
রুহানঃ তুমি ব্ল্যাক কিং,মাফিয়া জগতের ব্ল্যাক কিং যাকে গোটা জগতের সবাই ভয় করে, কিন্তু তুমি আসলে কি করো,মাফিয়া কিং এর আসল কাজ কি? আমার বিশ্বাস আমার দাদাভাই যে কিনা আমাকে সৎ পথে থাকার শিক্ষা দিয়েছে,অন্যায় থেকে দূরে রেখেছে সেই দাদাভাই অন্যায় কাজ করে এটা আমি বিশ্বাস করি না।
রিকানঃমাফিয়া এমন একটা জগত যেখানে কেউ একবার ঢুকলে আর বেড়িয়ে আসতে পারেনা,আমি ওহ পারিনি তৈরি হয়ে গেছি মাফিয়া জগতের ব্ল্যাক কিং। আমি কখনো চাইনি তুই এসবের সাথে জড়িয়ে যা তাই সব সময় তোকে এসব থেকে দূরে রেখেছি।তোকে সঠিক শিক্ষা দিয়েছি আর আমি পেরে ওহ ছি,তুই মানুষের মতো মানুষ হয়েছিস আমি আর কিছু চাই না কিছু না।
রিকান কথাগুলো বলেই চলে যায় ওখান থেকে।
রুহানঃ দাদাভাই আজ ওহ এড়িয়ে গেলি তুই,আসলে তুই কি করিস সেটা তো আমি জানবোই।
#চলবে…