#মিস্টার_মাফিয়া
#পর্ব_৪
#তানজিলা_খাতুন_তানু
পরেরদিন অফিসে….
রুহানের মন খারাপ রিকানের মাফিয়া কাজের ব্যাপারে কোনো ইনফরমেশন ওহ পাচ্ছে না,ব্ল্যাক ওয়ার্ল্ড এর আন্ডারে কাজ করা লোক বা কাজকর্ম গুলো সম্পর্কে কেউ কিছু জানে না।
রুহানের ধ্যান ভাঙ্গে ফাবিয়ার ডাকেঃ হ্যালো স্যার
রুহানঃ হ্যালো ফাবিয়া,কেমন আছো
ফাবিয়াঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি
রুহানঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো
ফাবিয়াঃ স্যার আপনার কি মন খারাপ
রুহানঃ কই না তো
ফাবিয়াঃ ওহ
রুহানঃ হুম
ফাবিয়াঃ স্যার একটা কথা আপনাকে বলার ছিলো
রুহানঃ কি
ফাবিয়াঃ আমার ক্লাস আছে আজকে আমাকে যেতে হবে আর কালকে আমি অফিস আসতে পারবো না।
রুহানঃ কেন
ফাবিয়াঃ কলেজে একটু দরকার আছে।
রুহানঃ ওহ,এখন কলেজ যাবে তো
ফাবিয়াঃ হুম
রুহানঃ চলো তোমাকে নামিয়ে দিয়ে আসি
ফাবিয়াঃ তার কোনো দরকার নেই
রুহানঃ আমাকে তুমি বন্ধু ভাবতে পারো নি এখন ওহ তাই না।
ফাবিয়াঃ চলুন
রুহানঃ যেতে পারি কিন্তু একটা শর্তে
ফাবিয়াঃ কি শর্ত
রুহানঃ আমাকে অফিসের বাইরে তুমি বলে ডাকতে হবে আর রুহান বলতে হবে।
ফাবিয়াঃ ওকে( মিস্টি করে হেসে)
রুহানঃ চলো
ফাবিয়া আর রুহান চলে যায়।এই সবটা দেখছিলো রিকান ল্যাপটপে বসে বসে। ওরা কি বলছিলো সেটা শুনতে পাইনি কিন্তু ফাবিয়া রুহানের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে এটা মানতে পারছে না।
রিকানঃ আমার এমন লাগছে কেন,তাহলে আমি কি ফাবিয়াকে,না এটা হতে পারেনা,রিকান রায়হান কাউকে ভালোবাসতে পারেনা কারোর প্রতি নিজের দূর্বলতা প্রকাশ করতে পারে না,পারে না।( উত্তেজিত হয়ে)
ওদিকে……
রুহান ফাবিয়ার কলেজের সামনে গাড়ি দাঁড় করায়।
রুহানঃ ম্যাম আপনার কলেজে চলে এসেছি
ফাবিয়াঃ থ্যাঙ্কস
রুহানঃ ওয়েলকাম
ফাবিয়াঃ চলো আমার বন্ধুর সাথে দেখা করাই সে তোর বিরাট বড়ো ফ্যান।
রুহানঃ ওহ তাই নাকি তাহলে তো দেখা করতেই হচ্ছে।আমি গাড়িটা পার্কিং করে আসছি তুমি দাঁড়া একটু।
রুহান গাড়ি পার্কিং করে ফাবিয়ার কাছে আসে।
রুহানঃ চলো
ফাবিয়াঃ হুম
ফাবিয়া রুহানের সাথে কলেজে ঢুকে,সবাই রুহান কে এখানে দেখে তার উপর ফাবিয়ার সাথে দেখে অবাক হয়।সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। ফাবিয়া সেসব পাত্তা না দিয়ে ওর বন্ধুর কাছে রুহান কে নিয়ে আসে।
রুহিঃ ফাবিয়া,কিরে কোথায় ছিলি এতদিন কোনো খোঁজ খবর নেয়।
ফাবিয়াঃ বলছি সবটা আগে দেখতো আমার পাশে কে?
রুহি ফাবিয়ার পাশে রুহান কে দেখে অবাক হয় ওহ বিশ্বাস করতে পারছে না ওটা সত্যি রুহান,নিজের চোখকে ভালোকরে ঘষে আবার তাকিয়ে দেখতে লাগলো ওটা সত্যি রুহান কিনা,রুহির এমন কান্ডে রুহান হেসে ফেললো,রুহানের হাসির শব্দে রুহি রুহানের দিকে তাকিয়ে ক্রাশ খেয়ে যায়।
ফাবিয়াঃ এই রুহি।
ফাবিয়ার ডাকে রুহির জ্ঞান ফিরে আসে।
রুহিঃ হ্যা বল
ফাবিয়াঃ কি করছিস এসব তুই।
রুহিঃ আমি বিশ্বাস করতে পারছি না,আমার সামনে রুহান রায়হান দাঁড়িয়ে আছে।
রুহানঃ আমি সত্যি রুহান,রুহানের মতো দেখতে অন্য কেউ নয়।
রুহি রুহান এর কথা শুনে লজ্জা পেয়ে যায়।
রুহির লজ্জা মাখা মুখ দেখে রুহানের বুকে চিনচিন ব্যথা করতে লাগলো।
ফাবিয়াঃ রুহান ওহ হলো রুহি
রুহানঃ হ্যালো
রুহিঃ হ্যালো।
রুহানঃ ফাবিয়া আমি তাহলে এবার আসি আবার আমাকে অফিস যেতে হবে নাহলে দাদাভাই রেগে যাবে।
ফাবিয়াঃ ওকে যাও।
রুহানঃ বাই
রুহান ওদের বিদায় জানিয়ে চলে গেল।
রুহিঃ ফাবিয়া রুহানের সাথে তোর রিলেশন টা ঠিক আমি বুঝলাম না।
ফাবিয়াঃ সব বলবো,চল।
ফাবিয়া পুরো ঘটনাটা রুহিকে বলে ,রুহি সবটা শুনে হা করে তাকিয়ে থাকে।
রুহিঃ ফাবিয়া তুই তো
ফাবিয়াঃ চুপ এটা কেউ না জানে( রুহিকে থামিয়ে দিয়ে)
রুহিঃ ঠিকাচ্ছে,ওই একটা কথা বলবো।
ফাবিয়াঃ বল
রুহিঃ আমার সাথে রুহান এর লাইন করিয়ে দিবি
ফাবিয়া হা করে রুহির দিকে তাকায়।
রুহি ওর দিকে ফাবিয়াকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলেঃ কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন
ফাবিয়াঃ রুহি কি বলছিস এসব তুই আমি রুহানের সাথে তোর রিলেশন করাবো,আমি তো নিজেই করতে পারিনা।
রুহিঃ কি?( অবাক হয়ে)
ফাবিয়াঃ হ্যা আমি নিজেই তো রিকানের উপর লাট্টু হয়ে আছি কিন্তু মশাই তো আমাকে পাত্তাই দেয় না।
ফাবিয়ার কথা শুনে রুহি একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
রুহিঃ বাঁচালি ভাই,আমি ভাবলাম তুই রুহান কে পছন্দ করিস আমার তো হার্ড বেরিয়ে যাচ্ছিল।
ফাবিয়াঃ পাগলি।
পরেরদিন রত্রিবেলা…..
রিকানঃ ফাবিয়া কি হলো দুদিন অফিসে আসলো না,শরীর- টরীর খারাপ করলো না তো।
রিকান কিছু একটা ভেবে বললোঃ আমি কেন এত উত্তেজিত হচ্ছি,হ্যা আমি বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি ফাবিয়াকে ওকে আমি কিছুতেই ছাড়তে পারবো না।
পরেরদিন সকালে……..
ফাবিয়া এখনো অফিসে আসেনি,রিকানের এবার সত্যি সত্যি চিন্তা হচ্ছে ফাবিয়ার জন্য।
রিকানঃ রুহান একবার আমার রুমে আয়।
রুহান কিছুক্ষন পর রিকানের কেবিনে আসে।
রুহানঃ দাদাভাই ঠাকছিলি
রিকানঃ হুম, বলছি আমার সেক্রেটারি কোথায় গেলো
রুহানঃ ওহ তোকে তো বলা হয়নি,ফাবিয়ার কলেজে দরকার আছে তাই কালকে অফিসে আসেনি আর বললো আজকে আসবে কিন্তু একটু দেরি হতে পারে।
রিকান রুহানের দিকে তাকিয়ে বললঃ সেটা আমাকে আগে বলতে নেয়।
রুহানঃ আমি জানি তোকে বলেছে ফাবিয়া যে কাল আসবে না,আর আজকে আসতে দেরি হবে সেটা ফোন করে বলেছে সকালে।
রিকানঃ ওহ।ওই শোন আমার মিটিং আছে আমি বেড়িয়ে যাচ্ছি,তুই ফাবিয়াকে বলে দে ওখানে চলে যেতে।
রুহানঃ ওকে।
রিকান মিটিং এর জন্য বেড়িয়ে যায়,রুহান ফাবিয়াকে ফোন করে বলে দেয় যে ওহ যেন সরাসরি মিটিং এর জায়গায় চলে যায়।
মিটিং টা হচ্ছে একটা ফাইভস্টার হোটেলে।ফাবিয়া মিটিং শুরু হবার ৩ মিনিট আগে চলে আসে।
ফাবিয়াঃ একটু আগে এসেছি নাহলে স্যার তো আমাকে কিমা বানিয়ে ছাড়তো( দম নিয়ে,মনে মনে)
রিকান ফাবিয়াকে আড়চোখে একবার দেখে মিটিং চালু করে।
মিটিং শেষে…..
সবাই চলে যায় থাকে শুধুমাত্র রিকান আর ফাবিয়া।
ফাবিয়াঃ স্যার যাবেন তো
রিকান ফাবিয়াকে কিছু না বলে,ওর দিকে এক পা এক পা করে এগিয়ে যেতে লাগলো,ফাবিয়া রিকানের এমন কান্ডে খুব অবাক হয়।রিকানের ওর দিকে আগানো দেখে ওহ পেছাতে থাকে।
ফাবিয়াঃ স্যার আপনি এভাবে আগিয়ে যাচ্ছেন কেন?
রিকানঃ তুমি পেছাচ্ছো কেন
ফাবিয়াঃ মানে
ফাবিয়া পেছাতে পেছাতে দেয়ালের সাথে নিজের পিঠ ঠেকায়,সাইট কাটিয়ে বের হতে যাবে তখন রিকান ওর দুটো হাত দেয়ালে রাখে ফাবিয়াকে আটকে দেয়।
ফাবিয়ার বুক কাপতে লাগলো,রিকানের এত কাছে ওহ আর কিছু ভাবতে পারছেনা,মনে হচ্ছে এখনি হার্ট এ্যাটাক হবে
ফাবিয়া কাঁপা কাঁপা গলায় বললঃ স্যার কি করছেন।
রিকান নিজের মুখটা ফাবিয়ার মুখের সামনে আগাতে থাকে ফাবিয়া ভয়েতে চোখ বন্ধ করে নেয়,রিকান আলতো হেসে ফাবিয়ার মুখে ফুক দিয়ে মুখের সামনে পড়া থাকা চুলগুলো উড়িয়ে দেয়,রিকানের এমন কাজে ফাবিয়া চোখ গুলো আরো শক্ত করে বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে।
রিকান ফাবিয়ার কান্ড দেখে হাসতে থাকে।রিকানের হাসির শব্দ শুনতে পেয়ে ফাবিয়া চোখ খুলে তাকিয়ে রিকানের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে এই প্রথম ওহ রিকানকে হাসতে দেখছে।
রিকান ওর দিকে ফাবিয়াকে তাকিয়ে থাকতে দেখে হাসি থামিয়ে বললোঃ কি দেখছো
ফাবিয়াঃ আপনার হাসি
ফাবিয়া কথাটা বলে দিয়ে লজ্জায় পড়ে যায়,আর রিকানের ফাবিয়ার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে।
কয়েকদিন পর….
রিকান ফাবিয়াকে প্রতি মূহুর্তে বুঝিয়ে দিচ্ছে ওহ ফাবিয়াকে পছন্দ করে,ফাবিয়া রিকানকে আরো ভালোবেসে ফেলেছে। ওদিকে রুহান তো রুহির প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।রুহান ফাবিয়াকে
রুহানঃ ফাবিয়া আমার একটা কাজ করতে পারবে
ফাবিয়াঃ কি কাজ
রুহানঃ রুহিকে নিয়ে …. কফিশপে আসতে পারবে,বিকাল ৫টার সময়।
ফাবিয়াঃ কেন
রুহানঃ প্লিজ প্রশ্ন করো না,এইটা করো সবটা বুঝতে পারবে
ফাবিয়াঃ ওকে নিয়ে যাবো।
রুহানের কথা মতো রুহিকে নিয়ে ফাবিয়া …. কফিশপে উপস্থিত হয়।
রুহিঃ এখানে আনলি কেন?
ফাবিয়াঃ একটু ওয়েট কর সবটা বুঝতে পারবি
রুহিঃ ওকে
রুহানঃ হাই
রুহান কে এখানে দেখে রুহি খুব অবাক হয়।
ফাবিয়াঃ হ্যালো
রুহানঃ চলো বসি।
ফাবিয়াঃ হুম
রুহানঃ কি কফি নেবে
ফাবিয়াঃ কোল্ড কফি,রুহি কি নিবি
রুহিঃ কোল্ড কফি ( মেকি হাসি দিয়ে)
রুহি কিছুই বুঝতে পারছে না রুহান এখানে কেন,আর ফাবিয়া ওকে এখানে নিয়ে এসেছে কেন,সব গুলিয়ে যাচ্ছে।
রুহান তিনটে কোল্ড কফি অর্ডার দেয়।তারপর…
রুহানঃ আমার একটা কল এসেছে দরকারি একটু আসছি।
রুহান চলে যায়,রুহি ফাবিয়াকে জিজ্ঞাসা করতে যায়,তখনি ফাবিয়ার ফোনে একটা মেসেজ আসে।
ফাবিয়াঃ রুহি তুই একটু বস আমি এখনি আসছি।
রুহিঃ আরে কোথায় যাচ্ছিস
ফাবিয়াঃ আসছি
ফাবিয়া ওহ চলে যায়,রুহি কিছুই বুঝতে পারলো না সবটা মাথার উপর দিয়ে চলে গেলো।
ওদিকে…..
রুহানঃ এসেছো
ফাবিয়াঃ হুম আমাকে ডাকলে কেন এখানে।
রুহান যা বললো তাতে ফাবিয়া অবাক হয়…
#চলবে….