#মিস্টার_মাফিয়া
#পর্ব_৬
#তানজিলা_খাতুন_তানু
রুহানঃ ওহ তোকে তো নামটাই বলা হয়নি আমি যে মেয়েটাকে ভালোবাসি ওর নাম রুহি,আমাদের ফাবিয়ার ফ্রেন্ড।
রিকান রুহানের কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লো।রুহানের ফোন আসাই ওহ চলে যায়
রিকানঃ অ্যা এটা কি হলো,আমি ফাবিয়াকে ভুল বুঝেছি।
রিকান নিজের ভুলটা বুঝতে পেরে মাথা চাপড়াতে লাগলো।
পরেরদিন,
ফাবিয়া পুরো রেগে আগুন হয়ে আছে।
পিওনঃ ম্যাম আপনাকে স্যার ডাকছে।
ফাবিয়াঃ কেন
পিওনঃ আমি কিভাবে বলবো।
ফাবিয়াঃ ওহ।
১ঘন্টা পর,
পিওনঃ স্যার ডাকছে আপনাকে
ফাবিয়াঃ বলো যেতে পারবো না।
পিওন হা হয়ে যায় ফাবিয়ার কথায়।
ফাবিয়াঃ হা করে না দাঁড়িয়ে থেকে চলে যাও।
পিওনঃ আচ্ছা।
পিওন গিয়ে রিকানকে ভয়ে ভয়ে বললোঃ স্যার ম্যাম আসবে না বলেছে।
রিকান পিওনের কথা শুনে মাথা তুলে তাকায়, তারপর বললোঃ তুমি যাও।
পিওন রিকানের কথা শুনে অবাক হয়,উনি ভেবেছিলেন রিকান রেগে যাবে কিন্তু এতটা শান্ত থাকবে ভাবতে পারেনি।
পিওন চলে যায় রিকান কি যেন একটা ভেবে ফাবিয়ার কেবিনের দিকে যায়।
ফাবিয়া কেবিনে বসে কাজ করছে,রিকান গিয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে বললোঃ ফাবিয়া
ফাবিয়াঃ কে
কথাটা বলে মাথা তুলে তাকিয়ে অবাক হলো রিকানকে এখানে দেখে।
ফাবিয়াঃ স্যার আপনি
রিকানঃ হুম কি করবো আর তুমি তো গেলে না তাই আমিই এলাম।
ফাবিয়াঃ ওহ কি দরকার বলুন
রিকানঃ সরি
ফাবিয়াঃ অ্যা
ফাবিয়া রিকানের কথাই শক খেয়ে রিকানের দিকে তাকিয়ে থাকল।
রিকানঃ হুম সরি আমার তোমার বিয়ের কথা বলা ঠিক হয়নি।
রিকান চলে যায়,ফাবিয়া চেয়ারে বসে পড়লোঃ আমি ঠিক শুনলাম স্যার আমাকে সরি বললো।
ফাবিয়া একটু ভেবে বললোঃ হা ঠিকই তো শুনলাম।
ওদিকে রিকান কি যেন একটা ভেবে আবার ফাবিয়ার কেবিনে আসলো,এসে শুনতে পেলো যে….
রিকান ফাবিয়ার কেবিনে গিয়ে শুনতে পেলো ফাবিয়া বলছেঃ সালা কাঠবিড়ালি, ইঁদুর, আরশোলা তোকে আমি আছাড় মারবো,তোর সাহস কি করে হয় আমার বিয়ের কথা বলার,আমাকে এভয়েড করার আবার আমাকে এখন সরি বলছিস তোকে তো আমি
রিকানঃ কি
ফাবিয়াঃ কে রে
ফাবিয়া পেছনে তাকিয়ে রিকানকে থেকে থতমত খেয়ে গেল।
ফাবিয়াঃ স্যার আপনি
রিকানঃ কি যেন বলছিলে বলো( গম্ভীর মুখে)
ফাবিয়াঃ কিছু নয় স্যার।
ফাবিয়া দৌড়ে নিজের কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো,ফাবিয়া চলে যেতেই রিকান হট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। ফাবিয়া কারোর হাসির শব্দ শুনতে পেয়ে নিজের কেবিনে উঁকি দিয়ে রিকান কে হাসতে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো।
রিকান হাসি থামিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে চলে যাবে তখন ফাবিয়াকে দেখে থেমে যায়।
ফাবিয়াঃ স্যার আপনি হাসছিলেন কেন
রিকানঃ কই কিছু না তো
ফাবিয়াঃ ওহ
রিকান ওখান থেকে কিছু না বলে চলে যায়।
রাত্রিবেলা,
ফাবিয়াঃ হ্যালো রুহি
রুহিঃ কি খবর বল
ফাবিয়াঃ কেমন আছিস
রুহিঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুই
ফাবিয়াঃ আলহামদুলিল্লাহ
রুহিঃ কি করছিস
ফাবিয়াঃ একটা কথা ভাবছি
রুহিঃ কি
ফাবিয়াঃ রিকানকে কিভাবে বলবো
রুহিঃ আমি একটা কথা বলবো তুই বলে দে ওকে আমার যতদূর মনে হয় তোকেও ভালোবাসে
ফাবিয়াঃ আচ্ছা বলে দেবো কিন্তু আমার ভয় লাগছে।
রুহিঃ হূম
পরেরদিন….
আজকে অফিস বন্ধ,ফাবিয়া রিকানদের বাড়িতে এসেছে।
রুহানঃ তুমি এখানে
ফাবিয়াঃ কেন আস্তে পারিনা।
রুহানঃ না সেটা নয়।
ফাবিয়াঃ রিকান স্যারের সাথে একটু দরকার ছিলো
রুহানঃ ওহ তুমি তাহলে থাকো আমি যায়
ফাবিয়াঃ কোথায়
রুহানঃ তোমার বন্ধু কে নিয়ে একটু বের হবো
ফাবিয়াঃ ওকে
রুহান চলে যায়,রিকানের রুমে গিয়ে ফাবিয়া বললোঃ স্যার আসবো
রিকান ফাবিয়ার গলা শুনে এদিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো।
রিকানঃ তুমি এখানে
ফাবিয়াঃ হুম আপনার সাথে একটু দরকার ছিলো
রিকানঃ কি দরকার।
ফাবিয়াঃ আপনাদের বাড়িটা ঘুরতে ঘুরতে বলি।
রিকানঃ আচ্ছা চলো
রিকান ওদের বাড়িটা ঘুরিয়ে দেখাতে লাগলো বাড়ি নয় পুরো রাজপ্রাসাদ
রিকানঃ কি বলবে বলো
ফাবিয়াঃ আসলে স্যার
রিকানঃ কি
ফাবিয়াঃ আমি আপনাকে ভালবাসি ( চোখবন্ধ করে একদমে)
রিকান অবাক হয়ে ফাবিয়ার দিকে তাকালো ফাবিয়া এই কথাটা বলবে ওহ ভাবতেও পারেনি।
রিকান কিছু না বলে ওখান থেকে নিজের রুমের দিকে চলে যায়।ফাবিয়া রিকানকে কিছু না বলে চলে যেতে দেখে রিকানের পেছন পেছন যায়।
রিকান নিজের রুমের বারান্দায় গিয়ে বসলো।ফাবিয়া রিকানের সামনে দাঁড়িয়ে বললোঃ কি হলো আপনি আমাকে কিছু না বলে চলে এলেন
রিকান অদ্ভূত দৃষ্টিতে ফাবিয়ার দিকে তাকিয়ে বললোঃ বসো
রিকানের গলার স্বর,চোখের দৃষ্টি ফাবিয়ার কাছে অজানা,রিকানের এমন হঠাৎ পরিবর্তন এর কারন ফাবিয়ার অজানা,ফাবিয়া রিকানের কথা মেনে নিয়ে চেয়ারে বসে পড়লো।
রিকান ফাবিয়ার দিকে তাকিয়ে বললোঃ ভালো বাসো আমায়।
ফাবিয়া রিকানের পাল্টা প্রশ্নে অবাক হলো, মাথা নাড়িয়ে বললোঃ হ্যা।
রিকানঃ কি জানো আমার সম্পর্কে যে আমাকে ভালোবাসলে।
ফাবিয়া আবারও চমকে উঠে রিকানের দিকে তাকালো।
রিকানঃ বলো।
ফাবিয়া কিছু বললো না। রিকানের দিকে শুধু তাকিয়ে থাকলো।
রিকানঃ তুমি ওহ জানো যতটা সবাই জানে ঠিক ততটা এর থেকে বেশী কিছু জানো না।জানো না আমার অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যত।
ফাবিয়াঃ মানে
রিকানঃ মানে হলো এটাই যে আমাকে যতটা ভালো ভাবো আমি ততটা ভালো নয়।আমি আজকের রিকান রায়হান এই জায়গায় এসেছি অনেক কস্ট করে। বাবা একজন আদর্শ স্কুল শিক্ষক ছিলেন আর মা একজন সৎ উকিল।বাবা- মা সৎ, আদর্শের পথে থাকতে গিয়ে প্রান হারিয়েছেন তবুও আমাদের দুভাই কে বলেছিলেন আমরা যেন সবসময় সৎ পথে থাকি।
রিকানের চোখটা পানিতে ভরে উঠলো,চোখের পানিটা মুছে বলতে লাগলোঃ বাবা-মা কে হারিয়ে অনাথ দুভাই রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে থাকি,রুহান তখন অনেক ছোটো কিছু বোঝে না কিন্তু আমি সবটা বুঝতে পারি,লোকের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেরিয়েছি একটু খাবারের জন্য, যেখানে আদর,বিলাসিতায় মানুষ হওয়া ছেলেটা। বড়ো দামি গাড়ি, দামি স্কুলে পড়াশোনা করতাম কিন্তু ভাগ্যের ফেরে আমারাই হয়ে যায় পথের ভিখারি।একদিন একটা লোক আমাদের ভালো খাবার দেবে বলে নিয়ে আসে আমি,আমার ছোট ভাইটা ভাল খাবার পাবে তাই আমি আর না করেনি। লোকটা আমাকে সত্যি খাবার দিতো কিন্তু আমাকে দিয়ে কিছু জিনিস অন্য লোকের কাছে পাঠাতো প্রথমে বুঝতে না পারলেও পড়ে বুঝতে পারি লোকটা বেআইনি কাজের সাথে যুক্ত। রুহানকে নিয়ে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারিনি রুহানকে মেরে ফেলার ভয় দেখায়,নিজের ভাইটাকে বাঁচানোর জন্য ওদের সব বেআইনি কাজের সাথে যুক্ত হয়ে যায় বাবা- মার শেষ কথা রাখতে পারিনি।
ফাবিয়া তাকিয়ে আছে রিকানের দিকে এতটুকু বয়সে ছেলেটার উপর দিয়ে কত না কত ঝড় বয়ে গেছে।
রিকানঃ যত বড় হতে লাগলাম তত আরো বেশি জড়িয়ে যেতে লাগলাম মাফিয়া জগতের সাথে,নিজের ইচ্ছা ছিলো পড়াশোনা করে মানুষের মত মানুষ হবো রুহান কে একটা ভালো স্কুলে ভর্তি করেছিলাম,নিজে স্কুলে না যেতে পারলেও পরিক্ষা গুলো দিতাম। প্রতিটা পরিক্ষায় ভালো নাম্বার পেতাম, কিন্তু কখনো মাফিয়া জগত থেকে বের হতে পারেনি এভাবে থাকতে থাকতে একসময় হয়ে উঠি মাফিয়া জগতের কিং।
রিকান কে চমকে দিয়ে ফাবিয়া বলে উঠলো
#চলবে….