#মিস্টার_মাফিয়া
#পর্ব_৭ (অন্তিম পর্ব)
#তানজিলা_খাতুন_তানু
ফাবিয়াঃব্ল্যাক ওয়ার্ল্ড দলের কিং, অর্থাৎ ব্ল্যাক কিং তাই তো।
রিকান ফাবিয়ার দিকে অবাক হয়ে তাকালো চোখে কৌতুহল।
রিকানঃ তুমি কিভাবে জানলে
ফাবিয়াঃ #মিস্টার_মাফিয়া আমি আপনার সম্পর্কে আরো অনেক কিছুই জানি।
রিকানঃ কিভাবে তুমি কে?
ফাবিয়াঃ আমি কে সেটা না জানলেও চলবে কিন্তু তুমি কে সেটা আমি খুব ভালো করে জানি।
ফাবিয়া একটা পিস্তল বের করে রিকানের দিকে তাক করে,রিকান খুব অবাক হয় ফাবিয়ার কাজে
রিকানঃ ফাবিয়া এসব কি
ফাবিয়াঃ কি এসব সেটা পড়ে বুঝবেন এখন আপনি আমার সাথে চলুন,কোনোরকম চালাকি করার চেস্টা করবেন না।
রিকান হেসে উঠলো,ফাবিয়া রিকানের হাসির মানে বুঝতে পারলো না।
রিকানঃ ফাবিয়া তুমি এত বোকা কেন
ফাবিয়া হকচকিয়ে বললোঃ মানে
রিকান ফাবিয়ার হাত থেকে পিস্তল টা নিয়ে নেয়,তারপর ফাবিয়ার দিকে তাক করে বললোঃ বলো তুমি কে,তোমার আসল পরিচয় কি?
ফাবিয়াঃ আমাকে মেরে ফেললেও আমি বলবো না কিছু।
রিকানঃ দ্যাখো ফাবিয়া আমার ভালো লাগছে চুপচাপ সত্যি টা বলে দাও নাহলে আমার রাগ উঠছে আমি রাগের বশে কি করবো আমি জানি না।
ফাবিয়াঃ মেরে ফেলবেন তো মেরে ফেলুন কোনো অসুবিধা নেয়।
রিকান রাগটা বেড়ে যায়,রাগের সাথে ফাবিয়াকে বললোঃ লাস্ট বার বলছি বলো
ফাবিয়াঃ বলবো না ।
ফাবিয়ার একগুঁয়েমি দেখে রিকান নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে পারেনা,হামলা করে ফাবিয়ার ……
ঠোঁটের উপর। আচমকা আক্রমনে ফাবিয়া শক,কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে উঠতে পারলো না।যখন বুঝতে পারলো তখন নিজেকে ছাড়াবার চেষ্টা করতে লাগলো কিন্তু পারলো না,শেষে ব্যথ হয়ে চুপচাপ হয়ে যায়।
রিকান পাক্কা ১৫ মিনিট পর ফাবিয়াকে ছাড়লো। দুজনেই হাঁপাচ্ছে।
ফাবিয়াঃ কি হলো
রিকানঃ রাগ উঠালে কেন
ফাবিয়াঃ তা বলে আপনি।
রিকানঃ হুম বেশি কথা বলবে না আবার নাহলে
ফাবিয়া তাড়াতাড়ি নিজের ঠোঁটে হাত দিয়ে দিলো।রিকান ফাবিয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো।
রিকানঃ এবার বলো চুপচাপ
ফাবিয়াঃ কি বলবো
রিকানঃ কে তুমি তুমি কিভাবে জানলে আমি ব্ল্যাক কিং।
ফাবিয়াঃ আসলে।
রিকানঃ দ্যাখো ফাবিয়া আমি ওহ তোমাকে সব সত্যিটা বলতে গিয়েছিলাম কিন্তু তুমি সবটা আগে থেকেই জানো,কিভাবে জানলে সত্যি টা বলো।
ফাবিয়াঃ আমি বলতে পারবো না।
তখনি ফাবিয়ার ফোন বেজে উঠলো,ফাবিয়া ধরার আগেই রিকান ফোনটা হাত থেকে নিয়ে নেয়।
রিকান ফোনের স্ক্রিনে ভেসে ওঠা নামটা দেখে চমকে উঠলো – ড্যাড
রিকান ফাবিয়ার দিকে তাকিয়ে বললোঃ ড্যাড কে?
ফাবিয়া কিছু বললো না,রিকান ধমকের সুরে ওকে জিজ্ঞাসা করলোঃ ফাবিয়া বলো ড্যাড কে?
ফাবিয়া রিকানের ধমকে ভয়ে ভয়ে বললোঃ আমার বাবা
রিকান অবাক হলো কারন সে জানতো ফাবিয়া একজন অনাথ মেয়ে।
রিকান ফোনটা রিসিভ করে বললোঃ হ্যালো
ওপাশ থেকে কি বললো বোঝা গেলো না।
রিকানঃ আপনার মেয়েকে যদি সুস্থ দেখতে চান তাহলে …..এই ঠিকানায় তাড়াতাড়ি আসুন,আর শুনুন কোনোরকম চালাকি করার চেষ্টা করবেন না তাহলে মেয়েকে আর পাবেন না
রিকান ফোনটা কেটে দেয়,ফাবিয়া বললোঃ আপনি ড্যাডকে এখানে ডাকলেন কেন
রিকান বাঁকা হেসে বললঃ ওনার জানা উচিত ওনার মেয়ে ঠিক কি কি করেছে।
রুহান কে ফোন করে তাড়াতাড়ি বাড়িতে আসতে বললো রিকান।
কিছুক্ষন পর,
ফাবিয়ার বাবা হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন রিকানদের বাড়িতে।
ড্যাডঃ আমার মেয়ে কোথায়।
ফাবিয়া ওর বাবাকে দেখে তাড়াতাড়ি গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন।
ড্যাডঃ মা তোকে কে এখানে আটকে রেখেছে।
রিকানঃআমি
ফাবিয়ার বাবা ফাবিয়া কে ছেড়ে রিকানের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো,সাথে রিকান ওহ।
ড্যাডঃ রিকান তুমি
ফাবিয়া চমকে উঠে জিজ্ঞাসা করলোঃ ড্যাড তুমি ওনাকে চেনো।
পাশ থেকে রুহান আসতে আসতে বললোঃ রিকান রায়হানকে কে না চেনে।
সবাই রুহানের দিকে তাকায়।
রুহান একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললঃ উনি কে ওনাকে তো ঠিক চিনলাম না।
রিকানঃ উনি ফাবিয়ার বাবা।
রুহানের চোখে মুখে কোনো পরিবর্তন দেখা গেলো না,যেন ওর কাছে এটা স্বাভাবিক।
রুহান শান্ত স্বরে বললঃ হুম
রিকান একটা অবাক হলো,তারপর বললোঃ ফাবিয়া আমাদের মিথ্যে বলেছে,আমাদের ঠকিয়েছে।
রুহানঃ ফাবিয়াকে আমি সমস্ত সত্যিটা বলেছিলাম।
রিকান চরমতম অবাক হয়ে যায়।
রিকানঃমানে
রুহানঃ ফাবিয়াকে আমি সমস্ত সত্যিটা বলি যেদিন ওকে কলেজে ছাড়তে গিয়েছিলাম।
ফ্ল্যাশব্যাক…
রুহানঃ ফাবিয়া আমি কি তোমাকে বিশ্বাস করে সত্যি টা বলতে পারি
ফাবিয়াঃ বলো যদি আমাকে বিশ্বাস যোগ্য মনে হয়।
রুহানঃ জানি না তুমি বিশ্বাসযোগ্য কিনা কিন্তু তুমি আমার দাদাভাই কে ভালোবাসো এটা জানি তাই তোমার সত্যি টা জানার অধিকার আছে।
ফাবিয়াঃ কি সত্যি
রুহানঃ আমার দাদাভাই রিকান রায়হান হলো মাফিয়া কিং।
রুহান যতটা ভেবেছিলো ততটা অবাক মনে হয় ফাবিয়া হলো না।
রুহানঃ ফাবিয়া
ফাবিয়াঃ হুম বলো
রুহানঃ কলেজ চলে এসেছি।
ফ্ল্যাশব্যাক শেষ….
বর্তমান –
রুহানঃআর দাদাভাই আমরা যেই মেয়েটাকে তুলে আনতে বলেছিলাম সেই মেয়েটি হলো আসলে ফাবিয়া
রিকানঃ মানে
রুহানঃ সিবার লোকরা ঠিক মেয়েটাকেই তুলে নিয়ে এসেছিলো।
রিকানঃ কিন্তু আমরা তো অন্য জনের ছবি দিয়েছিলাম।
রুহানঃ না দাদাভাই আমরা তো মিস্টার ফারুক আহমেদ এর মেয়েকে তুলে আনতে বলেছিলাম।
ফাবিয়ার বাবাঃ তোমরা আমার মেয়েকে তুলে আনতে চেয়েছিলে কেন?আমার সাথে তোমাদের কি শত্রুতা।
রুহানঃ আপনার সাথে আমাদের কোন শত্রুতা ছিলো না আর না আছে কিন্তু
ফাবিয়ার বাবাঃ কি
রুহানঃ আপনার মেয়ের সাথে আছে
বাবাঃ মানে
রুহানঃ ফাবিয়া হলো একজন আন্ডার কভার অফিসার।
সবাই চমকে উঠলো।
বাবাঃ কি
রুহানঃ হ্যা,আপনার মেয়ের উপর দায়িত্ব দেওয়া হয় যে মাফিয়া কিং কে সেটা খুঁজে বের করার,ওহ দাদাভাই বিরুদ্ধে অনেক কিছু তথ্য জেনে যায় যেটা দাদাভাই গোপন সূত্রে খবর পাই,আর এটা জানতে পারে যে মেয়েটা আপনার মেয়ে তাই ওকে তুলে আনার জন্য গুন্ডা ঠিক করা হয়, এবং তারা ঠিক মানুষটাকে তুলে আনে কিন্তু আমরা চিনতে পারি নি কারন
রিকানঃ অন্য একটা মেয়ের ছবি আমরা আপনার মেয়ের ছবি হিসাবে পাই।
রুহানঃ হুম সেটা রুহির ছবি ছিলো।
বাবাঃ রুহি
রুহানঃ হুম রুহিকে আমরা জানতাম আপনার মেয়ে হিসাবে কিন্তু সেটা ভুল তথ্য ছিলো।
ফাবিয়া অবাক হয়ে বললোঃ তারমানে
রুহানঃ হা সেদিন কলেজে আমি রুহিকে দেখেই চিনতে পারি এবং রুহিকে প্রোপস করি প্রধানত সমস্ত সত্যিটা জানার জন্য।
ফাবিয়াঃ তুমি রুহিকে ঠকাচ্ছো
রুহানঃ না আমি সত্যি রুহিকে ভালোবাসি
ফাবিয়াঃ আমি বিশ্বাস করিনা
রুহানঃতোমার বিশ্বাস করাই কিছু যায় আসে না, আমি রুহির থেকেই তোমার ব্যাপারে সবটা জেনেছি।
ফাবিয়া রেগে যায়ঃ আমি রুহিকে বারন করেছিলাম।
বাবাঃ রুহি তো ঠিক করেছে সত্যিটা বলে কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না তুই কিভাবে আন্ডার কভার অব হয়ে গেলি।
ফাবিয়াঃ আসলে ড্যাড
বাবাঃ তোর কোন কথা আমি শুনতে চাই না।
ফাবিয়ার বাবা রাগ করে চলে যান।
রুহানঃ তোমরা পুলিশ,মাফিয়া নিজেদের মধ্যে ব্যাপারটা বুঝে নাও আমি গেলাম।
রুহান ওহ চলে যায়।
রিকানঃআমি তোমাকে বিশ্বাস করে সত্যি টা বলতে গিয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমার সাথে প্রতারনা করলে ,আমার বিশ্বাস নিয়ে খেলা করলে। তোমার যেটা ভালো মনে হবে সেটাই করো আমি বারন করবো না আমার ভালো থাকাটা তোমার উপর নির্ভর করছে।
রিকান চলে যায় ফাবিয়া কি করবে বুঝতে পারে না একদিকে নিজের ভালোবাসা অপর দিকে নিজের ডিউটি।
ফাবিয়া নিজের অফিসে যায়।
ফাবিয়াঃ মে আই কাম ইন স্যার
স্যারঃ ইয়েস
ফাবিয়া ভেতরে আসে।
স্যারঃ তোমার কাজ কতদূর।
ফাবিয়াঃ স্যার আমার কাজ কমপ্লিট আমি জানতে পেরে গেছি কে সেই কিং।
স্যার ফাবিয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলোঃ কে
ফাবিয়াঃ রিকান রায়হান( বলার সময় গলাটা কেঁপে উঠলো একটু)
স্যার ফাবিয়ার দিকে তাকালেন তারপর অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন,ফাবিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
ফাবিয়াঃকি হলো স্যার
স্যারঃ ভেতরে এসো
ফাবিয়া স্যারের কথা শুনে দরজার দিকে তাকিয়ে অবাক হলো।
স্যারঃ চেনো একে।( ফাবিয়াকে উদ্দেশ্য করে)
ফাবিয়া চমকে উঠে বললোঃ রিকান
রিকান ফাবিয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো।
স্যারঃ হুম রিকান। রিকান তোমার অফিস তোমার দায়িত্বে দিয়ে দিলাম,আমি আসি।
স্যার চলে যায়।রিকান চেয়ারে বসে পড়লো ফাবিয়ার মাথায় কিছু ঢুকছে না সব উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে।
রিকানঃ কি হলো হা করে তাকিয়ে আছো কেন
ফাবিয়াঃ আমি কিছু বুঝতে পারছি না আপনি এখানে কেন
রিকানঃতুমি আমার ব্যাপারে যা জানো সবটা সত্যি কিন্তু তার বাইরেও আরো কিছু সত্য কথা আছে।
ফাবিয়াঃকি কথা
রিকানঃআমি মাফিয়া কিং ঠিকিই কিন্তু সাথে একজন আন্ডার কভার অফিসার ওহ।
ফাবিয়া আকাশ থেকে পড়লো।
রিকানঃ আমি ইচ্ছা করেই তোমাকে মাফিয়া কিং কে খোঁজার দায়িত্ব দিয়েছিলাম আর দেখতে চেয়েছিলাম তুমি কি করো।আর কালকে তোমাকে ওই কথাটা বলেছিলাম দেখবো বলে তোমার কাছে কোনটা আগে নিজের দায়িত্ব না ভালোবাসা।
ফাবিয়া অবাকের পর অবাক হচ্ছে।
রিকানঃ তুমি পরিক্ষায় পাশ করে গেছো।
ফাবিয়াঃ হুম
রিকানঃ তোমার কাছে কেন আমাদের সকলের কাছেই এটা হওয়া উচিত।নিজের দায়িত্ব আগে তারপর অন্যকিছু।এভাবেই নিজের দায়িত্ব পালন করো।
ফাবিয়া মাথা নাড়লো। কিছুক্ষন সব চুপচাপ ফাবিয়া দাঁড়িয়ে নিজের নখ ঠুকরাচ্ছে।
রিকানঃভালোবাসি
রিকানের এমন কথা শুনে ফাবিয়া মাথা তুলে তাকালো।
ফাবিয়াঃ অ্যা
রিকানঃ হুম ভালোবাসি,বিয়ে করবে আমাকে।
ফাবিয়া কিছু বলে না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।
রিকানঃ ফাবিয়া ( করুন কন্ঠে)
ফাবিয়া রিকানের এই ডাক অতিক্রম করতে পারে না ,রিকানকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
রিকান হেসে বলল ঃ পাগলী
ফাবিয়াঃ হুম শুধু তোমার।
রিকানঃ ভালোবাসি
ফাবিয়াঃ আমি ওহ ভালোবাসি #মিস্টার মাফিয়া।
রিকান আলতো হেসে আরো শক্ত করে ধরলো ফাবিয়াকে,আর ফাবিয়া ওহ। বেঁচে থাকুক সকল ভালোবাসা।
#সমাপ্ত—