মি_পার্ফেক্ট,০৪,০৫,০৬

0
2348

#মি_পার্ফেক্ট,০৪,০৫,০৬
আতাউর রহমান হৃদয়
পর্বঃ ৪

— হুম…নামটা বললেন না কিন্তু…?
— আমার নামটা নাহয় এখন নাই-বা জানলে…
— এখন জানলে কি হবে…?(অবুঝের ভাষায়…)
— এতদিন যে জানতে না তখন কি কিছু হয়েছে… তাই এখন না জানলেও কিছু হবে না…(সুন্দর এক মন কাড়া হাসি দিলেন ওনি…চাঁদের আবছা আলোয় তার মুখটা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে…)
— হুহ৷ (মন খারাপ করে…)
— তোমার ফোনটা কই….?(ওনি)
— কেনো..?রুমে…(আমি)
— নিয়ে আসো তো…

ফোনটা এনে ওনার হাতে দিয়ে ওনার পাশেই দাঁড়িয়ে আছি।

— বসো ওখানটায়…(আমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বোধয় ওনার পাশেই বসতে বললেন)
— হুম…(একটু দুর থেকে ফোনের স্কিনের দিকে নজর দিতে চেস্টা করছি….ব্যাপার টা মনে হয় ওনার চোখ এড়ালো না…)
হুট করে আমার কোমরে হাতে দিয়ে এক হেঁচকা টানে ওনার শরীরের সাথে মিশিয়ে বসালেন আমায়…
— আমার স্পর্শ তোমার জন্যে অস্বাভাবিক কিছু না…তোমাকে অশালীন কিছু করছি না আমি….অন্তুত একটু ছোঁয়া তো পেতে পারি নাকি…? (ব্যাটা এত লজ্জা কেমনে দিতে জানে নিজেই জানে না হয়তো…আমারও যে ওনাকে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে না তা কিন্তু নয়…)
— হুম…(লজ্জা পেয়ে)
— দেখতে চাইছিলে না আমি কি করছি…দেখো…(ফোনের স্কিন টা একটু আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে একটা নাম্বার টাইপ করছেন…ওনার শরীরের সাথে আমার শরীরটা লেগেই আছে…আমার কাছে তো ভালই লাগছে জানিনা ওনার কাছে কেমন লাগছে…হয়তো ওনার কাছেও ভালো লাগছে তাই তো এতটা কাছে ওনি আমায় টেনে নিয়েছেন..)

— বাহ নাম্বারটাও সেভ করা হয় নি…?(ওনি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললেন)
— কার নাম্বার…?( প্রশ্নাতীত হয়ে)
— এইযে…(আমার মুখের সামনে ফোনের স্কিন টা তুলে ধরলেন…বাহ..নিজের নাম্বার টা আমার ফোনে বর নামে সেভ করে দিলেন)
— তবুও নামটা বললেন না….(অসহায় ভাব নিয়ে)
— কেনো এই নামে ডাকতে বুঝি কোন অসুবিধা হবে…?(একটু হতাশ হয়ে)
— না না..অসুবিধা কেনো হবে…আমি তো এটাতেই ডাকবো সর্বজনম…?(আমি)
— তাই…?(একটু খুশি হয়ে বললেন)
— হুম তাই…তবে..
— তবে কি…?
— নাম জানার আক্ষেপ টা রয়েই গেলো…?
— এতটা আক্ষেপ থাকতে নেই বুঝলে…(ওনি)
— হুম..(মন খারাপ করে)
— তবুও মাঝে মাঝে কিছু আক্ষেপ থাকতে হয় এতে মনের মাঝে একটু ভাল লাগা কাজ করে… (ওনি)
— হুম…
— শোনো না…
— বলুন…
— অধিকার চাই…
— কিসে..?(আমি)
— তোমাকে ছুঁয়ে দেখার… (আবেগী হয়ে)
— হুম..
— জোর করে চাই না কিন্তু..? (ওনি)
— তো কিভাবে চান..?(আমি)
— তোমার ইচ্ছেয়..বিশ্বাসে.. ভালবাসায়…(রোমান্টিক সূরে)
— দুদিনে ভালবাসা যায়…?
— যায় না.. তবে আমি যে এখুনি চাচ্ছি তা কিন্তু নয়… আর তুমি যে ছুঁয়ে দেখার কথা ভাবছো আমি কিন্তু সেই ছুঁয়ে দেখার কথা বলছি না…(ওনি)
— কোনটার কথা বলছেন তাহলে…?(প্রশ্ন দুষত হয়ে)
— তোমাকে জড়িয়ে ধরার..? (ওনি)
— (চুপ করে রইলাম…লোকটা যে এমন কিছুর কথা বলছে ভাবতে পারি নি…)
— চুপ করে থাকা কিন্তু সম্মতির লক্ষ্মণ… (আমার দিকে পুরোটা ফিরে বসলো..)
— হুহ…(লজ্জায় তো আমি শেষ…মাথা টা নিচু করে আছি)
— দেখি একটু তাকাও তো আমার দিকে…(আমার থুতনীতে হাত দিয়ে মাথা টা উচু করে নিলেন)
— (নিশ্চুপ)
— লজ্জা নারীর ভুষণ…বিষয় টা তোমায় মানায় তো বেশ….(রোমান্টিক হয়ে)
— (ইশ রে আর কত লজ্জা দিবেন…এমনিতেই আমি শেষ এদিকে ওনি শুধু লজ্জা দিচ্ছেন)
— একটা কথা মনে আছে তোমার..?(আমার মুখে এসে পড়া চুল গুলো কানের পিছনে ঘুছে দিলেন)
— কি কথা…?
— আমাদের কিন্তু বাসর হয় নি…(ওনি)
— হুম…(ওএমজি…আমি শেষ এই কেউ আমারে এক গ্লাস পানি দে খাইয়া বেহুষ হয়ে যাই…লজ্জায় আমি শেষ)
— করে নিবো নাকি…(একটু দুস্টুমির ছলে)
— এই না নাহ..(বলেই আমি ভৌ দৌড় দিলাম কিন্তু দৌড়াতে আর পারলাম কই…আমার হাত টেনে ধরে ফেললেন ওনি..বসা থেকে দাড়িয়ে পড়লেন..)
— আরে মিস.. পালাচ্ছেন কই..? আজ তো তোমার রক্ষে নেই…

(বলেই আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলেন আলতো করে…কাল থেকে আজ পর্যন্ত ওনার প্রতি যতটা ভালো লাগা সৃস্টি হয়েছে সব তো দেখি এক নিমিষেই ওনার বলা এক বাক্যে শেষ হয়ে গেলো..ওনাকে বিষের মত লাগছে… অসহ্য লাগছে মনে হচ্ছে ওনিও নিজেকে আমার কাছে পুরুষ বলে প্রমান করবেন…কিন্তু এতে আমার বিন্দু মাত্র বিদ্রুপ থাকতো না যদি না আমি অসুস্থ থাকতাম…ওনি তো জানেন ব্যাপার টা তবুও কেনো চাচ্ছেন এসব করতে…তাহলে ওনিও কি আট দশটা পুরুষের মত বউয়ের কাছে চাহিদা পূরন করতে আসবেন… বউয়ের ইচ্ছের কোন দাম দিবেন না..
গত কাল রাতে তাহলে শুধু মাত্র তার সহানুভূতি টাই ছিলো…ইচ্ছে করছে ওনাকে এক ধাক্কায় আমার সামনে থেকে সরিয়ে দিয়ে আড়াল হয়ে যাই ওনার কাছ থেকে। তবুও যেতে পারছি না একটা শেকলে বাঁধা আমি…)

— (অসহায় দৃস্টিতে ওনার চোখের দিকে চেয়ে আছি…ওনার চোখে আমি নেশা দেখতে পাচ্ছি কিন্তু কিসের নেশা আমি বুঝতে পারছি নে)
— কি গো ভয় পেলে মনে হচ্ছে..?
— (একটা হাসি দিলাম…ভয় নয়। কিছুটা ঘৃণা কাজ করছে)
— ভাবলে কি করে..তোমার কাছে এত সহজে আমি চাইবো তোমার শ্রেষ্ঠ সম্পদটা..জানি আমি তুমি অসুস্থ তবুও কেনো…?আরে পাগলি কিছুটা হলেও তো ভালবাসি…এতটা অমানবিক আমি হয় নি..তবে.হ্যাঁ সব টা না চাইলেও কিছুটা হলেও তোমায় কাছে চাই…(কথা গুলো বলতে বলতে আমার কোমরে হাত দিলেন..রীতিমত আমার কোমরে তার আঙুল দিয়ে স্লাইড করছেন…)
(নাহ এখন ওনার স্পর্শ আমার কাছে খারাপ লাগছে না..অনুভব করছি..ওনার প্রতিটা স্পর্শে আমার পুরোটা শরীর শিহরিত হয়ে উঠছে..)

— চোখ বন্ধ করে আছি…
ওনি আমার কপালে একটা চুমু খেলেন… বন্ধ চোখের পাপড়িতে…দুগালে দু’টো চুমু খেলেন…ভালোই লাগলো…আরো কয়টা চুমু যেনো খান ওনি এই প্রার্থনা করছি মনে মনে…কিন্তু না..ওনি আমার কাছে মুখটা এনে বলে উঠলেন…
— ঘুমাবে না…
— হুম..(দুর ভালো লাগে আর…আরো কয়টা দিলে কি হতো…)

হেঁটে বিছানার দিকে যাবো তখনই ওনি আমাকে টান দিয়ে পাজো কোলে তুলে নিলেন….

(ইশ কি লজ্জা সাথে এত্ত গুলা ভালো লাগা৷ লোকটা এতটা রোমান্টিক কেনো…?)

বিছানায় আমাকে শুইয়ে দিয়ে নিজেও আমার পাশে শুয়ে পড়লেন…

ইশ ঘুম যেনো আসছেই না.. কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো মনের মাঝে হানা দিচ্ছে… ইশয় তখন ওনার সম্পর্কে কতটা খারাপ ভাবনায় না ডুকে গেলাম..ভাবতে অপরাধী মনে হচ্ছে নিজেকে…

ঘুম আসছে না দেখে এপাশ ওপাশ করছি…দেখে ওনি হুট করেই আমাকে….

চলবে…

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

#মি_পার্ফেক্ট
পর্বঃ ৫

ঘুম আসছে না দেখে এপাশ ওপাশ করছি দেখে ওনি হুট করেই আমাকে টান দিয়ে ঘনিষ্টতায় নিয়ে নিলেন। জড়িয়ে ধরে আছেন। তবে মুখে কোনো কথা নেই। ওনার নিশ্বাস আমার ঘায়ে লাগছে… ওনার নিশ্বাস গুলো গরম হাওয়ায়।

অসম্ভব ভালো লাগার অনুভুতি কাজ করছে মনের মাঝে। এই বুঝি সবটা সুখ পৃথিবীর আমার দুনিয়ায় বিরাজ করছে।

মাত্র দুদিনের পরিচয়ে কেনো..এত আপন লাগছে তাকে…?

কি আছে এতে…?

হয়তো পবিত্রতা..যেখানে জ্বিনা বলতে কোনো শব্দ নেই…

হয়তো নিজের ভাবনার জগতের সেই রাজা টাকে তার মাঝে খুজে পাচ্ছি বলে।

হয়তো তার আচরনে মুগ্ধ হচ্ছি বলে…

আমার অনেক বান্ধবী প্রেম করে বিয়ে করেছে…তাদের মাঝে কয়েকজনে বিয়ের কিছু দিন পর ফোন দিয়ে সংসার জগত নিয়ে হতাশার বিচিত্র তুলে ধরেছিলো…তাদের হতাশার কথা শুনে আমিও হতাশায় ছিলাম এই ভেবে..আমারও কি এমন হবে তাদের মত..? তাহলে আমিও কি পাবো না আমার মনের রাজ্যে সাজানো সেই মানুষ টাকে…?

কিন্তু না আজ সেই হতাশা গুলো আর আমার মাঝে কাজ করছে না… আজ আমার মনে আছে এক প্রশান্তি চিহ্ন।

কখন যে ওনার জড়িয়ে ধরার উষ্ণতায় বিভোর হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি জানা নেই…

সকালে শাশুড়ী মায়ের সাথে রান্না ঘরে বসে আছি… সাথে ননদিনীও আছে… পুচকি টাও এই বয়সে কাজ করতে জানে…

তাদের কে হেল্প করতে চাইলাম দিলো না…

বললো যে তাকিয়ে থাকতে..আর দেখতে কিভাবে কাজ করছেন ওনারা….

শাশুড়ী মা বলে উঠলেন…

— বউমা শুনছো…
— জ্বি আম্মু বলেন..(আমি… এই মেয়েদের একটা গুন ভালোই আছে এদের কেউ শিখিয়ে দিতে হয়না শুশুর বাড়িতে কাকে কি বলে ডাকতে হবে। জীবনে যেখানে নিজের মাকে ছাড়া অন্য কাউকে মা বলে ডাকা হয় নি সেখানে হুট করে এসেই অন্যের মাকে মা বলে ডেকে ফেলা..এটা তে এতটা সহজ বিষয় নয়..তবুও এরা যে অতি সহজে বলে ফেলে)
— যাও তো ইফতিকে ডেকে নিয়ে আসো…ও আবার ঠান্ডা হয়ে যাওয়া খাবার খেতে চায় না..?(শাশুড়ী আম্মু)
— জ্বি আম্মু…(উঠে যাচ্ছিলাম কিন্তু হুট করে থেমে গেলাম…এই ভেবে ইফতি টা কে..?)
— কি হলো ভাবি থেমে গেলে কেনো…?(ননদীনি)
— ইফতি…(আমতা আমতা করে)
— হুম ভাইয়ার কি হয়েছে…রুমেই তো আছে..(ননদী)

আর কিছু না বলে দ্রুত রান্না ঘর প্রস্থান করিলাম….

রুমে এসে…

— মি. ইফতিইইই..(একটু ভাব নিয়ে ডাক দিলাম…ইফতি সাহেব কি যেন লিখছিলেন)
— হুহ…(মাথা তুলে আমার দিকে তাকালেন একটু অবাক হলেন বোধয়)
— আপনি কি ভেবেছেন আপনি না আমি আপনার নাম জানতে পারবো না…( নাক টেনে শরীর ঝাকি দিয়ে বললাম..এতে বুঝালাম যে আমিও পারি মানুষকে অবাক করতে)
— হুহহহহ(আমার দিকে ঘুরে তাকালেন)
— যতটা বোকা আমায় আপনি ভেবেছেন আমায় ততটা বোকা আমি নই…ছোটবেলা আমি গুনে গুনে একটা সেরিলাকস খেয়েছি…হুহ(ভাব টা যে খানদানী)
— বুঝতেই পারছি…ছোটবেলায় যে তুমি সেরিলাকের সাথে ছাগলের দুধও খেয়েছো তাই তো তোমার মাথায় এত বুদ্ধি.. যার কারণে নিজের বরের নাম জানতে এক যুগ কাটিয়ে দিয়েছো….(ওনি)
— হা হা হা…আপনি বোধয় অংকের ক্লাস গুলো ঠিক ভাবে করেন নি…আপনাকে কে শিখিয়েছে এই অংক…(হাসতে হাসতে আমি শেষ)
— হোয়াট .? (একটু রাগ হলেন বোধয়…তাতে আমার কি হাসতে যেহেতু শুরু করেছি আমায় আর থামায় কে..)
— ভালো মত অংক শিখে নিবেন..যদি না পারেন চাইলে আমার কাছ থেকে শিখতে পারেন…আমি এসএসসিতে অংকে এ+ পেয়েছি…(ভাব নিয়েই কথা গুলো বললাম)
— রান্না ঘর থেকে আম্মু তোমাকে কেনো পাঠিয়েছে সেটা বলো….?(রাগী হয়ে)
— ওও হ্যা আপনাকে খেতে ডাকছে…?(ভুলোক্কর একটা আমি)

আর কোন কথা না বলে ওনি হাঁটা ধরলেন রান্না ঘরের দিকে।

— কি ব্যাপার ভাবি তোমাকে খুশি খুশি লাগছে…?(আমার মুখে হাসি জমে আছে বলে হয়তো তাই জিজ্ঞেস করলো)
— আপনার ভাই বোধয় স্কুলে গিয়ে ফাঁকি বাজি করছে…?(আমি)
— তা যদি আর বলতে বউমা…ওর মত দুস্টু হয়তো ওর স্কুলের শিক্ষকদের হাতে তার জন্মেও পড়ে নি…(শাশুড়ী)
— সে জন্যই তো এই অবস্থা…? (আমি)
— কি হয়েছে ভাবি…?(ননদী)
— ঐ যে দুদিন কে তিনি এক যুগ বলছে…?(আমি)
— ভাবি তোমার ভুলছ হচ্ছে… ভাইয়া যদিও দুস্টু ছিলো তবে সে পড়াশোনায় ভালো ছিলো…(ননদী)
— ওও তো ওনার রেসাল্ট কি…?(আগ্রহ হলো)
— এ+
— ওও..কিহ…(অবাক হলাম..আমার রেসাল্ট তো মাত্র ৪.১৮ ছিলো)

আজকে আমাদের বাড়ি যেতে হবে।। এই যাওয়াটাকে আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় হিরানি যাওয়া বলে। বর আমার এক গাট্টি বাজার শদাই নিয়ে আমাকে সাথে করে উপস্থিত হলেন। সন্ধ্যার আগে আবার আমাদের ফিরতে হবে।
আমরা দুজন..ননদী পুচকি…ছোট মামা শুশুর.. তার মেয়ে ও ছোটা চাচা শুশুর সাথে ছোট ছেলে।

আমাদের বাড়িতে নতুন জামাইকে সেই সমাদরে ব্যস্ত সবাই। আমার কাছেও ভালো লাগছে। মেয়েদের বিয়ের পরে হয়তো এটাই বাবার বাড়িতে সবচেয়ে বড় চাওয়া যখন তার আর বাবার বাড়িতে আসবে তার সমাদরে যেন কোন ত্রুটি না থাকে। এতেই যেনো তারা প্রশান্তি পায়।

কয়েকজন কাজিনের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছি। বর আমার তার শুশুরের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত। আমার একটা ছেলে কাজিনের গায়ে পড়া স্বভাব..কথায় কথায় গায়ে হাত দেয়। আজও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে ব্যাপার টা হয়তো মি. ইফতির নজর এড়ালো না…

রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমাকে ইশারায় তার কাছে ডাক দিলো…

— কিছু বলবেন…?(তার সামনে এসে)
— পানি খাবো…?(মুখের মাঝে প্রচন্ড রাগের চাপ তবে সেটা লুকানোর ব্যর্থ চেস্টা করছেন ওনি)
— হুম…

সন্ধ্যার আগেই আবার শুশুর বাড়ী ফিরে আসলাম…
বাসায় এসেই ওনি বেরিয়ে গেলেন…শাশুড়ির কাছ থেকে জানলাম ব্যবসায়ের কাজে বেরিয়েছেন। কিন্তু তিনি কিসের ব্যবসা করেন তা আর জানা হলো না….

রাত এগারো টা…

— শোনো..(ওনি)
— হুম বলুন…(চুল বাধছিলাম)
— খোলাই থাক না…(ওনি)
— ভালোই লাগছে…
— হুম ওকেহ…( আমার চুল বাঁধতে ইচ্ছে করছে না)
— আর একটা কথা মনে রাখবে…(কঠোর হয়ে)
— কি কথা…?
— তোমাকে ছোয়ার অধিকার শুধুমাত্র আমার… অন্য কেউ ছুয়েছে না তোমায় কি হবে জানিনা…আমি চাই তুমি এই ব্যাপার টা মাথায় রাখবে…?(কঠোর গলায় কথা গুলো বললেন ওনি)
— হুম(মাথা টা নিচু করে)
— এই শোনো তোমার না কি যেনো ইচ্ছে আছে…?(ওনি একটু রোমান্টিক হয়ে)
— কিহ…?
— রাতে বরের হাত ধরে বাহিরে হাঁটার..
— হুম..
— যাবে..?(ওনি)
— হ্যাঁ যাবো তো…(উৎফুল্ল হয়ে)
— এটা তো শহর নয় যে রাস্তায় হাটবো…এখানে হাঁটতে হলে বাগান টায় হাটা যেতে পারে…
— চলবে..চলুন..(ওনার হাত ধরে টেনে নিয়ে আসলাম)

বাহিরে হাটছি। পায়ে জুতো নেই।

হাঁটার মাঝে হুট করে ওনি আমাকে…

চলবে…

গতকালকের প্রশ্নটার উত্তর দুটো অপশনের মাঝে একটাও নয়…
উত্তর টা হলো…

“লেখকের কল্পনা ও তার দেখা কিছু মানুষের বাস্তব চরিত্র থেকে নেওয়া”

বিঃদ্রঃ গত পর্বে তেমন অনুপ্রেরণা পাই নি। তাই হয়তো আজকে লেখায় মনোযোগী হতে পারি নি। এতে হয়তো আজকের পর্ব টা খারাপ হয়েছে।

আপনাদের এক একটা কথা আমাকে হাজারো অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করিয়ে দেয়। তাই প্লিজ কারো যদি কেনো পরামর্শ থেকে থাকে জানাবেন।

ভুলত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন।

ধন্যবাদ

#মি_পার্ফেক্ট
পর্বঃ ৬
বাহিরে হাটছি। পায়ে জুতো নেই।

পাশে প্রিয় মানুষটি…..অন্যরকম ভালো লাগা…

হাতটা ধরতে ইচ্ছে করছে খুব… কিন্তু পারছিনা ধরতে। মনের মাঝে এখনো কিছু টা জড়তা কাজ করছে৷

আচ্ছা মানুষটা কি আসলেই এমন যেমন টা আমি দেখছি…? এমনও তো হতে পারে ভোর হতে তার আচরণ বদলে যাবে…হয়তো আরো ভালো কিছু দেখতে পাবো নয়তো অসহ্যনীয় কিছু।

আচ্ছা ওনি কি বুঝছেন..আমি প্রতিনিয়ত মুগ্ধ হচ্ছি ওনার প্রতিটি কার্যে..

নাকি আমার মনের সব কথা ওনার অজানা…?

জানবেন কি করে জানিয়েছি নাকি আমি ওনাকে আমার কোন কথা…?

মানুষ চেহারা দেখে সাময়িক কোন কিছুর আগ্রহ বুঝতে পারে…মনের কথা নয়…

মানুষ কারো চেহারা দেখে হতাশা বুঝতে পারে…হতাশ হওয়ার কারণ নয়…

ওনি হয়তো আমার মন বুঝতে পারেন কিংবা বোঝার ক্ষমতা রাখেন… তাই বলে যে ওনি আমার মনের সব কথা বুঝতে পারবেন তা কিন্তু নয়…

— কি ভাবছো এত…?(ধীর পায়ে হাটছি তার সাথে তাল মিলিয়ে…তিনি হুট করেই কথা টা বলে উঠলেন)
— কিছুনা…(আমি)
— কিছু একটা ভাবছো…সেই তখন থেকে আমি বেশ খানিক যাবত মার্ক করছি…(ওনি)
— হুম আমি কিছু একটা ভাবছিলাম।। তবে কি ভাবছিলাম আমি নিজেও জানি না…
— হুহ…(অবাক হয়ে)
— আসলে আমি এমনি…কখন যে কি করি কি ভাবি নিজেও জানি না….(হতাশ হয়েই বললাম)
— তাই নাকি…অসুবিধে নেই…সব গুলিয়ে ফেলো আমার কোন এত্রাজ নেই।।।শুধু সবসময় আমাকে মনে রাখলেই চলবে….(খুবই অনুরোধী গলায় কথা গুলো বললেন ওনি.)
— হুম..আচ্ছা একটা কথা বলবেন প্লিজ..?(আমি)
— হ্যাঁ বলো…
— কিছু মনে করতে পারবেন না…(স্ট্রিক্ট ভাবে)
— মনে করার মত কথা হলে তো অবশ্যই মাইন্ড করবো…(তাচ্ছিল্যের সাথে)
— যান বলবোই না…(মনটা খারাপ করে)
— আচ্ছা যাও কিছু মনে করবো না বলো…
— নাহ বলবো না…(মুখটা ঘোমরা করে আছি)
(লেখক আতাউর রহমান হৃদয়)
— আরেহ…
— (আমি দাড়িয়ে আছি অন্যদিকে মুখ করে)
— আচ্ছা থাক বলা লাগবে না..ঐ দিক টায় গাছের মোটা শিকড় আছে ওখান টায় বসি…(ওনি)
— (দাড়িয়ে আছি দম ধরে)
— ওরে বাপরে রাগও তো আছে দেখি….ব্যাপার না.. ভাঙিয়ে নেবো….(বলেই ওনার কুনি আঙুল টা আমার কুনি আঙুলের মাঝে পেছিয়ে ধরলেন)
— (ওনার দিকে ফিরে তাকালাম..)
— রাঙ্গাপরী লাগছে তোমায়.. রাগলে তো বেশ ভালোই লাগে…জানো ইচ্ছে করছে কি..?(ওনি)
— হুহ..(ইশারায় জিজ্ঞেস করলাম)
— তোমার রাগ না ভাঙিয়ে এভাবে বসিয়ে এক ফলকে চেয়ে থাকি….মন ভরে না যেনো…(কথাগুলো বলতে বলতে আমাকে টেনে গাছের শেকড়ের উপর বসিয়ে আমার সামনে হাটু গেড়ে বসে পড়লেন)
(লেখক আতাউর রহমান হৃদয়)
— ওমা আপনি মাটিতে কেনো বসছেন…?(এই যা রাগ আমার গেলো কই…)
— আরে তোমার সৌন্দর্য করেছে মোরে ঘায়েল।
কি করে যে থাকিবে মোর ধ্যান৷
কোথা থাকি কোথা বসি নাহি বুঝিতে পারি।
ইচ্ছে করে মোর চেয়ে থাকি তোমার পানে
এই জনমে অনন্তকালে।
ভাবছি আমি তোমায় কত
কোথায় ছিলে তুমি গতদিন
বৃথা ছিলো তোমায় বহিন
আমার প্রতিটা দিন।
এই বুঝি ফিরে পেলাম
আমার অন্তরে বাস করা
রূপ না দেখা অস্পরীর।
থাকতে চাই আমি তোমার চারিপাশে
প্রতিটা ক্ষণে তোমার প্রেমে বিভোর হয়ে।

( মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি আমি। ওনার এই মাত্র বলা কথা গুলো বুঝার চেস্টা করছি। শেষে একটা কথা ভালো লাগলো। ওনার মনে রাজ্যে কারো বসবাস ছিলো না। ওনি স্বপ্ন দেখতেন কাউকে নিয়ে যার অস্তিত্ব ছিলো না ওনার জীবনে। আমি হয়তো তার জীবনে সেই অস্তিত্ববিহীন মানুষটা আসতে পেরেছি)

দুজনের মাঝে নিরবতা কাজ করছে…

— তুমি কি যেনো বলতে যেয়েও বলো নি…(ওনি)
— হুম..(আমি)
— বলো না শুনি।।
— না বলবো না…
— দেখো তুমি আমার প্রিয়ুসী। তোমার মনে থাকা প্রতিটা কথা আমি শুনতে চাই অতি মনোযোগে। হোক কথাগুলো অতি গুরুত্বের। আর নাহি বা হোক কোনো কাজের। তবুও আমি শুনতে চাই। বুঝতে চাই তোমায়….(কাব্যিকি হয়ে)
— শোনেন….(আমি)
— কি…(ওনি)
— আপনার কাব্যের ভাষা না আমি বুঝি না যা বলার স্ট্রেটলী বলেন…(দুঃখ আমি কই রাখি….তার প্রেমের ভাষা আমি বুঝতে পারছি না।। এর চেয়ে হতভাগী দুঃখ এই মুহুর্তে আমার কাছে হতে পারে না)
— বুঝবে বুঝবে…যখন প্রেমে পড়বে দেখবে কাব্যের ভাষায় কথা বলা কতটা আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায় যা আর কোথায়ও খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়…(ওনি…এতটা মধুর ওনার কন্ঠে কাব্য। না শুনলে বুঝতেই যে পারতাম না..আমিও যে পড়ে যাচ্ছি তারি প্রেমে। হয়তো কিছুক্ষনে আমিও শুরু করে দিবো তারি মত করে কাব্যের ভাষায় নিজের মনের ভাব করাতে)

— তুমি না কি যেনো বলবে বলছিলে.. (ওনি…কোন কথাই তো দেখি ওনি ভুলেন। ছোটবেলায় নিশ্চয়ই ভেড়ার দুধ খাইছেন। নাহয় এতটা স্মৃতি শক্তি আসে কোথা থেকে)
— হুম…( আমি)
— বলো না..অতি আগ্রহে আমার মন অপেক্ষা করছে তোমার মুখ বেরিয়ে আসা মনের কথা শুনতে…(হায়রে আমি কি করি এ লোকটা কি শুরু করলো..)
— বলবো তার এই কবি গিরি বন্ধ করুন…( ধমকের সূরে…ওমা),
— হুম করলাম…( নড়ে চড়ে বসলেন)
(গল্পের মাঝে থাকা লেখকের নামের কথা কেউ প্রকাশ করবেন না প্লিজ। এটা অতি সিক্রেট)
— আপনি কি কাউকে কখনো ভালোবেসেছেন….? (আমি)
— বুঝলাম না..(ওনি)
— আমি আপনার জীবনে আসার আগে অন্য কেউ কি আপনার মনের রাজ্যের সিংহাসনে আসন করেছিলো …?
— নাহ… আর তুমি আমার জীবনে এসেছো যে কতদিন হয়েছে সেটা কি জানো…?(ওনি)
— আজকে সহ ৩ দিন হলো….(সিম্পল উত্তর)
— হাহ…নাহ..(তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিলেন..)
— মানে..? নাহ মানে? আমাদের বিয়ে হলো আজ তিন দিন।। তাহলে আমিও আপনার জীবনে এসেছি যে তিন দিনই তো হলো তাই না…?(আমি)
— বললাম তো তুমি নাহ…এই প্রশ্নের উত্তর আমি এখন দিতে পারবো না….?(অন্যরকম ভাবেই কথা টা বললেন… কথাটা বলে দাঁড়িয়ে গেলেন)
— না আমি এখনই শুনবো…(ত্যাড়ামী শুরু অনুর…আমিও দাঁড়ালাম)
— এখন মনে নেই…(ওনি..)
— আরেহ…ঐ শোনেন বলেন না প্লিজ… (ভদ্র আমি)

কোন কথা না বলে হুট করেই ওনি আমাকে হেচকা টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে আমার কথা বলাই বন্ধ করে দিলেন। কথা বলবো কি করে ওনি যে আমাকে কিস করছেন…

ভালই লাগছে ওনার এই টাচ টা…কিছুক্ষণের মধ্যে মনে হলো আমায় ছেড়ে দিচ্ছেন মনে হতেই আমি ওনাকে টেনে নিলাম। চোখ বন্ধ করে আছি। ওনার পায়ের উপর পা রাখা আমার। লোকটা আমার থেকে বেশ খানিকটা লম্বা যার ফলে ওনাকে ঝুঁকে কিস করতে হচ্ছে। ইস সময় টা যদি ধমকে। ধমকে যেতো পৃথিবীর সকল পিছুটান। আমি তখন অনুভব করতে পারতাম এই মুহুর্ত টাকে অনন্তকাল। ওনি আমার হালকা সাড়া পেয়ে আমার গায়ে হাত দিয়ে নিজের সাথে সম্পূর্ণ মিষিয়ে নিলেন।

সত্যিই যখন মনের মাঝে অনুভুতি থাকে তখন এসকল মুহুর্ত গুলো শ্রেষ্ঠত্ব মুহুর্ত গুলোর মাঝে লিপিবদ্ধ করা যায়। আজকের এই সময় টা সারাজীবন আমার কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে৷ ওনার প্রথম ছোঁয়া। যদিও কালকে ছুঁয়েছে। আমি তো আর ছুইনি।

মাথা টা নিচু করে আছি।।।

— কি হলো রাগ করলে বুঝি…(ওনি আদুরে গলায়)
— উহুহু..(মাথা ঝাঁকিয়ে) (লজ্জা করছে করছে ভিষণ)
— হায়রে আমার বউটা লজ্জাও পায় দেখছি….
(ওনি কথা টা বলেই হুট করে আমাকে…বাগানের মাঝে…

চলবে…..

★ ছোট্ট একটা কথা…

“যা আপনার তা ধরে রাখুন আকড়ে। নাহয় অন্য কেউ চিনিয়ে নিয়ে যাবে”

ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

ধন্যবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here