#মি_পার্ফেক্ট,১৬,১৭,১৮
আতাউর রহমান হৃদয়
পর্ব ১৬
ওনার ডায়রি টা আবারে হাতে নিলাম।
চতুর্থ পৃষ্ঠা
মেয়েটার নাম জানতে পেরেছি।।অসম্ভব সুন্দর নাম তার..
— বউমা….(শাশুড়ী)
দুর এসময়ে ওনার ডাকার সময় হলো.৷
— হ্যা আম্মু বলো…?(আমি)
— আজকে কি রান্না করতে বলে গেলো ইফতি..? (শাশুড়ী)
— ওনি বলে যাবেন কেনো…?আপনিই তো বলবেন কি রান্না করবো…?(আমি)
— ইফতি বাসা থেকে বের হওয়ার সময় লক্ষ করছো..? (শাশুড়ী)
— কেনো…?(আমি)
— আরে বউমা..ওও রেগে আছে আজকাল।।। আর ও রেগে থাকলে নিজের ইচ্ছার তরকারি ছাড়া ভাত খায় না…?(শাশুড়ী)
— ওও
বাপরে এ কেমন মানুষ ওনি…? আমার বুঝার বাহিরে।
ওনার ডায়েরি টা আর পড়া হলো না… ইস জানতে ইচ্ছে করছে মেয়েটার নাম।
আবার মেজাজ টাও খারাপ হচ্ছে।
আজ দুদিন মোবাইলটা ধরতে মন চায় না…শুধু ডায়েরির কথাটা মাথায় ঘুরে। ওনিও দেখি আজকাল আমার কাছে ঘেষছেন না। কি হয়েছে ওনার…?
সন্ধ্যায় বসে আছি। মন টা ভালো লাগছে না। ওনাকে মিস করছি। ইসস যখন বাবার বাড়ি ছিলাম ওনি কতবার কল দিতেন। আবার এখানে থাকতেও তিনি কিছুক্ষণ পর পর কল দিতেন। কিন্তু আজকাল কোনো খোজই থাকে না। শুধু রাতে বাসায় আসেন। মাঝে মাঝে দুপুরে আসেন খেয়ে আবার চলে যান।
শুধু ওনি যে কল দিতেন এটা কিন্তু নয়। আমিও দিতাম।
এখন ওনি না দিলে কি হয়েছে আমি তো দিতে পারি।
ওনাকে কল দিলাম। সময় তখন রাত ৯.৩০টা।
— হ্যালো কোথায় আপনি…? (আমি)
— হুহ…আছি… (ওনি)
— এত শব্দ কিসের..?(ওনার ওখান থেকে অনেক শব্দ শুনা যাচ্ছে)
— অনেক লোকজন আছে এখানে…?(ওনি)
— কি করছেন এত লোকের মাঝে…?(আমি)
— কেরাম খেলছি…(ওনি)
— বাসায় বউ রেখে বাহিরে আড্ডা দিচ্ছেন…?(আমি)
— বাসায় তো বউ একা নয় তার তো আমি ছাড়া অন্য একটা সংসার আছে…?(ওনি…অনেকটা তাচ্ছিল্যের সাথে বললেন…কথাটা আমাকে হস্তক্ষেপ করলো)
— ওও সেটাও তো। (আমি)
— হুম.. সংসারে মন দাও নাহয় ভেঙ্গে যাবে…বাবু গুলা রাগ করবে…?(ওনি)
— হুহ..একটু তাড়াতাড়ি আসা যায় না…?(আমি)
— নাহ…বাজি খেলছি…যখন খেলা শেষ হবে তখনই আসা যাবে।।এর আগে নয়…হয়ত রাতে ফিরা হবে না…?(ওনি)
— ওহ..
মনটা খারাপ হয়ে গেলো ওনার কথা গুলো শুনে…ওনার বলা কথা গুলো কোনটাই যুক্তিহীন নয়। দোষটা আমারি। আমিই তো ওনাকে দুরে সরিয়ে দিয়েছি।
— আম্মু…? (শাশুড়ী শুয়ে আছেন ওনার পাশে শুয়ে ওনাকে জড়িয়ে ধরলাম)
— হুম বলো…?(আম্মু)
— আপনার ছেলে কি আগে থেকেই এমন ছিলো…?(আমি)
— কেমন..?(আম্মু)
— এই যে রাতে কেরাম খেলে…?(আমি)
— আজকাল কি এমন করছে…?(আম্মু)
— হুম একটু আগে কল করছি ওনি বললো কেরাম খেলছে…?(আমি)
— ও তো এমন ছিলো অনেক আগে যখন কলেজে পড়ত। এখন তো এসব করে না…আজকাল আবার কি হয়েছে…? (আম্মু)
— জানিনা..?(আমি..মন খারাপ করে)
— শোনো বউমা..ছেলেরা সচারাচর বিয়ের পর বাহিরে থাকতে চায় না..এরা কাজ শেষ করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাসায় ফিরতে চায়।কিন্তু তখন বাসায় ফিরতে চায় না যখন এরা বাসায় সুখ খুজে পায় না…(আম্মু)
— ওও…
আম্মুকে জড়িয়ে ধরেই শুয়ে আছি। ওনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। ওনার এমন আচরণের দায়ভার টা আমার।
শাশুড়ীর সাথেই ঘুমিয়ে পড়েছি। শান্তি আছে এতে। আমার মাকে খুঁজে পাই ওনার আঁচলে।
রাত ১২ টার দিকে ওনি আসলেন…
না খেয়েই ওনি শুয়ে পড়েছেন। আমাকে শাশুড়ীর সাথে খেতে হয়েছে। আমি না খেলে ওনিও খেতেন না। ওনার ঔষধ আছে না খেলে আবার অসুস্থ হয়ে যাবেন।
ওনার পাশেই শুয়ে আছি। রুমে আসার পর থেকে কোনো কথাই ওনি বলেন নি। খুব খারাপ লাগছে। ওনার এই নিস্তব্ধতা।
ওনাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে কিন্তু ধরার সাহস পাচ্ছি না। দুর সাহসের কি আছে। ওনি তো আমারই। জড়িয়ে ধরে ওনার বুকে মাথা টা গুছে দিলাম।।।ইয়াক কি গন্ধ। এত সিগারেট খান ওনি। জানতাম না। কি বিশ্রী। তবুও ধরে আছি জড়িয়ে। গন্ধ টা নাকে লাগছে তবে মনের মাঝে শান্তি লাগছে। ওনি ঘুমিয়ে পড়েছেন। তাই ওনার কোনো প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি না। জেগে থাকলে হয়ত আরো মিশিয়ে নিতেন নাহয় দুরে ঠেলে দিতেন। যাক ভালোই হয়েছে অন্তত দুরে ঠেলে দিতে পারছেন ঘুমের ঘোরে।
ওনাকে জড়িয়ে ধরার কিছু সময় পর।নিমিশেই ঘুমিয়ে পড়েছি।
সকালে উঠে দেখি ওনি বাহিরে বের হওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছেন। আমি বুঝি না। এত তাড়াতাড়ি বের হন কেনো ওনি। দিনমজুর রাও তো ৭-৮টা বাজে ঘর থেকে কাজে বের হন। কি কাজ ওনি করেন আমার বুঝা বড় দায়।
— শুনছেন…?(বিছানা থেকেই বললাম)
— (আমার দিকে ঘুরে তাকালেন..মুখে কোনো কথা বলছেন না ওনার এই নিশ্চুপ থাকাটা আমার ভিতররা কুঁকড়ে উঠছে)
— বলছি আজ এত তাড়াতাড়ি কেনো..?(আমি)
— (চুপ ওনি)
— আসার সময় আমার জন্য একটা জিনিস আনতে পারবেন..? (আমি)
— (কিহ..ইশারায়)
— একটা ফেয়ার এন্ড লাভলী..?(আমি)
কিছু না বলে উনি বেরিয়ে পড়লেন।
সকালের কাজ গুলো শেষ করে ওনার ডায়েরি টা নিয়ে বসলাম।
মেয়েটার নাম অনুরীমা।
খুব সুন্দর। তার চোখের অসম্ভব মায়ার মত তার নানটাও নেশায় ভরা। তার এক বান্ধবীর(রিনি) কাছ থেকে তার নাম্বার সংগ্রহ করেছি তবে কল দেওয়ার সাহস হয়ে উঠছে না। তার চোখ জোড়াই দেখতে মন চায়। রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে সে।
পেজ ৫
আজকে নাকি অনুকে দেখতে এসেছিলো…বিয়েটা যদিি ঠিক হয় নি। তবুও মনের মাঝে আশঙ্কা টা গড়ে উঠলো। আমাকেও তো বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। মোটামুটি নিজের পজিশন টা আর ব্যবসাগুলোও ভালো দাঁড় করিয়েছি। এখন বিয়েটা করা যায়। কিন্তু কথা হলো বাসায় বলি কি করে অনুকে আমার পছন্দ।
পেজ ৬
বোন আজকে একটা মেয়ের পিক দেখিয়ে বললো৷ মেয়েটা নাকি আমার জন্য দেখেছে৷ মেয়েটার মুখের দিকে তাকানো হয় নি। তার চোখ জোড়ায় গভীর ভাবে তাকালাম। নাহ কোনভাবেই অনুর চোখের সাথে মিলছে। অনুর চোখে অসম্ভব মায়া আর গভীরতা আছে আমার চোখে অন্য কারো কাছে পাচ্ছি না।
বোনকে নিষেধ করে দিলাম এই মেয়েটা হবে না। কিন্তু সে তো নাছোড়বান্দী। মেয়েটার রূপের গুনগান গেয়েই চলেছে। আমার মাথায় কি এসব ডুকে। আমার তো ঐ মায়াবী চোখের অধিকারীনী অনুকে চাই…
পেজ ৭
বোনকে আজ
হুট করেই কে যেন রুমে ডুকলো…আমার তো কলিজার পানি শুকিয়ে গেলো এই বুঝি ওনি এসে পড়লেন ওনার তো আবার কোনো স্টেশন নেই। হুট হাট করে কখন চলে আসেন।
ডায়েরিটা লুকানোর ব্যর্থ চেস্টা করে মাথাটা তুলে তাকাতেই আমার কলিজাটা..
চলবে…
#মি_পার্ফেক্ট
পর্ব_১৭
বোনকে আজ
হুট করেই কে যেন রুমে ডুকলো…আমার তো কলিজার পানি শুকিয়ে গেলো এই বুঝি ওনি এসে পড়লেন ওনার তো আবার কোনো স্টেশন নেই। হুট হাট করে কখন চলে আসেন।
ডায়েরিটা লুকানোর ব্যর্থ চেস্টা করে মাথাটা তুলে তাকাতেই আমার কলিজাটা একটু শান্তি পেলো…
নীলু এসেছে।।।
— ঐ তুমি রুমে কি করো…?(নীলু রাগী ভাবে)
— এইতো বসে আছি…তুমি কখন আসছো…?(আমি)
— আসছি কখন সেটা বাদ দাও…আগে এটা বলো…কেমন আছো তুমি..?(নীলু…বাপরে এতো ঘুরিয়ে কথা কেমনে এই পিচ্ছি টা)
— হ্যাঁ মামনী আমি ভাল আছি তুমি কেমন আছো..?(আমি…নীলুকে জড়িয়ে নিলাম আমার কোলে)
— ভালো…মামা কোথায়…?(নীলু)
— বাহিরে..
ননদ আর নীলু আসছে। নীলু মেয়েটা যে কতটা দুস্টু আজকে তা বুঝতে পারছি। তবে একটা বিষয় লক্ষ করছি। নীলু আসার পর থেকে শাশুড়ী মায়ের মুখে হাসি টা একটু সরছে না। তিনি তো তার নাতনী কে নিয়ে ব্যস্ত। নাতনী কি খাবে কি করবে এগুলো নিয়েই ওনি ব্যস্ত।
রান্না ঘরে রান্না করছি। এমন সময় ননদী বলে উঠলো…
— কি গো ভাবি চলছে কেমন..?(ওনার প্রশ্নটার ঠিক অর্থ টা বুঝে উঠতে পারলাম না..)
— (প্রশ্নাতীত হয়ে তার দিকে দৃষ্টিপাত করলাম)
— ভাই আমার কেমন?? এতদিনে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছো…?(আপু)
— আপনার ভাইকে বুঝবে তাও আবার আমি..?(আমি)
— কেনো না বুঝার কি আছে…?(আপু)
— ওনাকে বুঝতে বোধয় আমার পুরো জনম টাও কম পড়ে যাবে…?(আমি)
— তাই..? (আপু)
— তবে আপু একটা কথা বলো তো..?(আমি)
— কি..?(আপু)
— আপনার ভাই এত রাত করে কেনো বাসায় ফিরে..?(আমি)
— কেনো ও ১০ টার আগেই বাসায় ফিরে..?(আপু)
— কালকে ১ টায় আসছেন..?(আমি)
— এতরাত পর্যন্ত কি করছে..?(আপু)
— কেরাম খেলছে সাথে অনেক সিগারেটও খাইছে…?(আমি)
— কেরাম তো খেলা চেয়ে দিয়েছে অনেক আগেই এখন তো এসব চেয়ে দিয়েছে এখন আবার কেনো..?যদিও সিগারেট টা ছাড়ে নি তবে এত বেশি খায় না…(আপু)
— জানিনা..তবে ইদানিং খুব বেড়ে গেছে…? (আমি)
— ওকে একটু সময় দাও বুঝতে চেস্টা করো দেখবা বুঝে যাবে…জানো আমার ভাইটা কেমন ছিলো…?(আপু)
— কেমন..?(আমি)
— ওও অনেক বেখায়ালী ছিলো খেলাধুলা আড্ডা এসব ছাড়া আর কিছু বুঝতোই না…আম্মু খুব চিন্তায় ছিলো একদিন আম্মু ওকে নিয়ে চিন্তা করতে করতে কেঁদে দিয়েছে।।ও আম্মুর কান্না টা সহ্য করতে পারে নি…এরপর থেকে সব চেয়ে দিয়েছে।।। ওও যে এতটা বদলে যাবে এতটা কেয়ারফুল হবে এটা ওকে দেখে তখন কেউই বলতো না..এইযে ওর এত ব্যবসা দেখছো ওও এসব নিজ হাতে দাড় করিয়েছে।। সব কিছু শুন্য ছিলো। বুঝোই তো বাবা আমাদের ছেড়ে ছোটবেলায়ই পরলোক গমন করেছেন।।(আপু অনেকটা নরম হয়ে)
— ওও(কি বলব বলার মত কোন শব্দই যে খুজে পাচ্ছি না)
— তোমার কাছে একটাই অনুরোধ আমার ভাইটাকে কখনো কস্ট পেতে দিও না। কস্ট কি জিনিস এটা কখনো সে বুঝে নি। পুরুষ হিসেবে কর্ম ক্ষেত্রে কেউই এত টা কস্ট করে না। তবে সংসারের কস্ট টা কখনো সে পায় নি। ভালবাসার ব্যর্থ হওয়ার কস্ট টাও কখনো অনুভব করে নি।কারণ ওও প্রেম ভালবাসার বয়সে সংসার আর কর্ম ব্যস্ততায় কাটিয়েছে।(আপু)
— হুম।।
— এইযে ওর শরীরটা দেখছো না কতটা শুকনো..ওটা দেখলে যে কেউ বলবে ওও জিম করে…(আপু)
— ওনি তো জিম করেনই..(আমি)
— নাহ..ও কখনোই জিম করে নি…(আপু)
— তো জিম না করলে ওনার শরীর টা এমন হলো কি করে??
— এখন তো কোনো ভারী কাজ করে না…শুধু ঘুরে ঘুরে দেখা শোনা করে।।তবে প্রথম প্রথম ওও নিজেই কাজ গুলো করত…কঠোর পরিশ্রমের কারণে ওর শরীর টা এমন হয়ে গেছে জিম করার দরকার পড়ে নি…
— ওওও(আমি অবাক লোকটা এতটা পরিশ্রমী…যে কেউ দেখলে বলবে শৌখিন মানুষ)
— আরে ওও তো এখন একটু ভালো ভাবে চলে…আগে তাও চলত না।।।আমার বকুনি খেয়ে সোজা হয়েছে। আর বাকিটা নীলুকে দিয়ে করিয়েছি আর বাকিটা তুমি করবা…(আপু)
— ওকেহ আপু….(আমি)
আপুর বলা কথা খুব করে মনে গেধেছে। লোকটা কখনো কাউকে ভালবাসে নি তবুও কতটা প্রেমিক পুরুষ তিনি।যদি কখনো কাউকে ভালো ওনি বাসতো তাহলে কতটা রোমান্টিক তিনি হতেন। যাই হোক তার জীবনের প্রেমিকা বা বউ হিসেবে প্রথম ভালবাসা হতে পেরেছি এর চেয়ে আর বেশি কিছু আর কি চাই। এখন শুধু একটাই চাওয়া তার জীবনের শেষ প্রান্তে শেষ ভালবাসা হয়ে থাকতে চাই।
রাতে ওনি আজকে তাড়াতাড়িই বাসায় ফিরেছেন। আপুরা আসার পর থেকে পুচকি টা অনেক বার কল দিয়েছেন ওনাকে। ওনি আসাতেই পুচকি টা তার মামুকে ঘিরে ধরেছে। দুনিয়ার যতসব আজঘুবি কথা আছে তারা মামু ভাগনী বলে চলেছেন।।
— আপু এরা এসব কোথা থেকে পায়..?(আমি)
— দেখতেই পাচ্ছো…? (আপু)
— ভেড়ার দুধ কেউ খায়….?(আমি)
— পাবে কোথায়..?(আপু)
— ঐ যে ওরা বলছে…?(আমি)
— আরে ওদের কথায় কান দিও না তো তুমি তোমার কাজে মনোযোগ দাও…
খেতে বসেছি। শাশুড়ী আর ওনার মাঝখানে নীলু বসেছে সে কোনো প্লেট নেয় নি….নানু আর মামুর কাছে থেকেই খাচ্ছে। নীলু এদের মধ্যমনি। নীলুকে পেলে মা আর ছেলের আর কিছু লাগে না। আর পুচকি টাও এদের কে মায়া লাগিয়ে রেখেছে। দেখতে ভালোই লাগছে। আসলে বাড়ীর ছোট বাচ্ছা গুলো ঘর মাতিয়ে রাখে।
রুমে বসে আছি। ওনি রুমে এসে একটা ব্যাগ থেকে এক গাট্টি টাকা বের করলেন।
— ওমা এত টাকা..?(আমি অবাক হলাম)
— কি হয়েছে…? (ওনি)
— এত গুলো টাকা..?(আমি)
— আরে সকালে একজন কে দিতে হবে তাই নিয়ে আসছি…(ওনি)
ঘুমাতে আসলাম। ওনার বুকে যে না মাথা রাখতে যাবো তখনই…
চলবে…
#মি_পার্ফেক্ট
১৮
ঘুমাতে আসলাম। ওনার বুকে যে না মাথা রাখতে যাবো তখনই ওনি ঘুরে গেলেন কেমনট লাগে….জেগেই তো আছেন ওনি…ইচ্ছে করেই করছেন এসব৷বাহরে আমারো তে একটা আত্মসম্মান আছে দুর ধরলাম না ওনাকে জড়িয়ে। আমিও পাশ ঘুরে শুয়ে পড়লাম।
দুর ঘুম বাবাজি ধরা দিচ্ছে না চোখে। মনটা চায় ওনাকে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু ওনি তো ওপাশ হয়ে শুয়ে আছে। আমারতো একটা সম্মান আছে। দুর ওনার সাথে আমার আবার সম্মান টম্মান। ওনি তো আমার আমি ওনার এতে ওনি চান বা না চান আমার ইচ্ছে করছে জড়িয়ে ধরব এতে কি কার কি? যা হবার হবে? আমার বর-ই তো।
ওনাকে জড়িয়ে ধরলাম। কোনো এক্সপ্রেশন পেলাম না ওনার। হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছেন। নয়তো জেগে রয়েও ঘুমিয়ে থাকার অভিনয় করছেন। যদি ওনি জেগে থেকে থাকেন, তাহলে তো নিশ্চয়ই ওনি অনুভব করছেন আমায়। তবে কেনো এতটা এড়িয়ে চলেছেন ওনি আমায়।
এতক্ষণ যদিও ওনাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে ছিলাম তবে এখন ওনাকে খুব শক্ত করে ধরলাম। এ যেনো এক রাজ্য প্রশান্তি ভর করেছে আমার মাঝে। ইসস এতটা সুখ কেনো প্রিয় মানুষটাকে কাছে পাওয়ার মাঝে। যদি কখনো প্রশ্ন টার উত্তর পেতাম খুব ভালো হতো বটে।
এমনভাবে জড়িয়ে আছি ওনার মাঝে, কেউ দেখলে বলবে না যে আমরা দুজন এই বিছানায়৷ নির্ঘাত বলবে এখানে একজন।
ইসস আমি ওনাতে মিশে গেছি। এতটা মিশে গেছি যে, দুজনায় এখন একজনেতে পরিপূর্ণ।
ইসস রে যদি না, ওনিও সাড়া দিতো আমার ছোঁয়ায়। তাহলে অনুভুতি টা কেমন হতো। এতে আরো কতশত গুন পূর্ণতা পেতাম আমরা দুজন।
একটা দিক থেকে ভালোই হয়েছে। ওনি সাড়া দিচ্ছেন না আমায়। এতে আমি মিস করছি ওই অনুভূতি গুলোকে। এই মিস করা টার মাঝেও যে অন্যরকম এক ভালো লাগা কাজ করে। এই ভালো লাগাটা অনুভুবিত হতোনা। যদি ওনিও আমায় আস্ঠেপিস্টে নিতেন।
ওনাতে মিশে কখন যে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমিয়েছি তার কোনো হুদিশ নেই আমার। ভোরে আজানের ডাকে ঘুম ভাঙলো। ওনি আমার আগেই উঠে মসজিদে চলে গেছেন হয়তো। হয়তো না চলেই গেছেন।
<
নামাজ পড়ে ওজিবা পড়ছিলাম। শাশুড়ী দিয়েছেন ওজিবা টা। তখনই দেখলাম ওনি রুমে ডুকলেন হাতে একটা কাপ।
চা খাচ্ছেন ওনি। বিছানার এক পাশে বসে আছেন।
-- একটু জোরে পড়লে ভালো হতো...(হুট করেই চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বললেন ওনি)
আমিও একটু জোরে পড় শুরু করলাম। ওনি মনযোগ দিয়ে শুনছেন আমার তিলোওয়াত।
পড়ায় মনোযোগ ছিলো এতক্ষণ। আমার ওনার দিকে খেয়ালই ছিলো। ওজিবা বন্ধ করে ওনার দিকে তাকাতেই আমি অবাক৷ লোকটা চায়ের কাপটা বিছানার এক পাশে রেখেই ঘুমিয়ে পরেছেন। পুরো চা-টা শেষও করেন নি। চায়ে দেখি লেবু, দারুচিনি, তেজ পাতা, এলাচি আর আদা দেওয়া। বাহ রং চায়ের টেস্ট বুঝেন ওনি। ভাবছি এত ফর্মুলা ব্যবহার করে ওনাকে চা টা কে বানিয়ে দিলো এত সকাল।
লোকটা ঘাটের মধ্যখানে বালিশ ছাড়াই শুয়ে আছে৷ পা দুটো বিছানার নীচে। এমনভাবে কেউ ঘুমায়। কেউ ঘুমায় না। তো কি হয়েছে ওনি তো ঘুমায়। কত টা ভিন্ন ধরনের লোকটা৷ বুঝা বড় দায়।
একটা বালিশ নিয়ে ওনার মাথার নীচে দিয়ে দিলাম। সোজা করে শুইয়ে দিলাম। বাপরে ব্যাটা টা চিকনা হলেও ওজন আছে৷ সোজা করতে গিয়ে পুরাই হাফিয়ে গিয়েছি।
ঘুমিয়ে আছেন গভীরভাবে। তার পানে চেয়ে আছি অপলকে। কতটা নিষ্পাপ লাগে মানুষ ঘুমিয়ে থাকলে। মানুষ যতই খারাপ হোক না কেনে..? ঘুমিয়ে থাকলে সবাইকেই নিষ্পাপ লাগে।
ওনার মাথা হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। আর তার চেহারা দেখছি। বাম গালের মধ্যিখানে একটা কালো তিল আছে যেথায় একটা চুলও বিদ্যমান। যেটা যেকোনো মানুষ সাধারন ভাবে দেখলে বুঝতে পারবে না। আমিও মাত্র দেখলাম।
লোকটা কালো নয়। তবে শ্যাম বর্নের। ছেলে হিসেবে পার্ফেক্ট।
শ্যাম বর্ণ হওয়াতে তিল টা ফুটে উঠে নি। তবে যদি সুন্দর হতেন খুব করে ফুটে উঠতো৷ তবে ফুটে উঠে নি দেখে আমার কাছেই ভালো লাগছে কারণ আমার মানুষটার সৌন্দর্য আমি এত সহজে অনুভব করতে চাই না৷ গভীর ভাবে তার মাঝে হারিয়ে অনুভব করতে চাই। যেমন টা এখন করছি। আরো কতটা সৌন্দর্য তা তার মাঝে আছে আমার জানা টা বাহুল্য তবে। ধীরে ধীরে জানতে। চাই আমি তার প্রেমে পড়তে খুবই স্বল্প স্বল্প করে। যাতে পুরো জীবনটা আমার লেগে যায় তাহাতে মুগ্ধ হতে হতে। শেষ বিদায় যে অনুধাবিত হয় মন যে পড়েছি আমি তার প্রেমে পরিপূর্ণ ভাবে।
আলতো করে তার তিলটায় চুমু খেলাম।
এভাবে বসে বসে তাকে দেখলে তো আর চলবে না। সংসারের কাজও তো করতে হবে। সংসার টা তো আমারই। আপু আছেন বাসায়। ওনার যতনে ত্রুটি হলে যে খারাপ লাগবে আমার মনে। লাগবে তার ভাইয়েরও৷ কেনোনা খুব ভালবাসেন তিনি তার এই ছোট্ট পরিবার টাকে যার জন্য তিনি বিসর্জন দিয়েছেন তার খারাপ দিকগুলো কে। এতে তো আমারই ভালো হয়েছে কারণ আমি পেয়েছি আমার #মি_পার্ফেক্ট কে।
<
রান্না ঘরে নাস্তা বানাচ্ছি। সাথে শাশুড়ী ননদী দুজনই আছেন। নীলু এখনো ঘুমে।
হুট করেই বলে উঠলাম..
-- আম্মু ভোরে ওনাকে চা টা কে বানিয়ে দিয়েছেন?? (আমি)
-- কেউই বানিয়ে দিতে হয় নি...?(আপু)
-- তো ওনি চা টা পেলেন কই...?(আমি)
-- কেনো ঘরে কি চা বানানোর জিনিসপত্র নেই নাকি..?(আপু)
-- আছে তো...থাকলে তো হয় না চা বানাতে হয়। কিন্তু কেউ বানিয়ে না দিলে ওনি চা পাইলেন কই...?(আমি(
-- আরে ভাবি তুমি হয়তো জানো না আমার ভাই চা বানাতে পারে..?(আপু)
-- ওও তাই নাকি...তবে ওনি খুব চা বানান। রং চা বানাতে যা লাগে সবই তো দিয়েছেন দেখছি...কিন্তু এসব তো আমি খুজে পেতে কস্ট হয়ে যায়। একবার খুজতে গেলে সব এলোমেলো করে ফেলি আর ওনি সবই খুজে নিয়েছেন একটা জিনিসও জায়গা থেকে নড়ে নি বরংচ সব জায়গা মত আছে...?(আমি অবাকের স্বরে)
-- আরে ভাবি আমার বাজার করে এনে সব কিছু নিজ হাতে ঘুছিয়ে রাখতো। তাই ওকে খুজে নিতে কস্ট হয়নি।।।বিয়ের পর যদিও এসব কিছু করার সময় পাচ্ছে না। ব্যাংকের কাজে কারণে।(আপু)
-- ওও তাই নাকি..(বিস্ময়কর হয়ে)
-- তুমি তো এখনো কিছুই জানো না।। আমার ভাই সব ধরনের রান্না জানে। ওর হাতের বিরিয়ানি খেলে তুমি সারাজীবন জ্বালাইবা ওর হাতে রান্না করা বিরিয়ানি খাওয়ার জন্য।(আপু গর্বের সাথে)
-- ওও তাই নাকি তাহলে তো খেতে হয়।।আজই বলব..ওনাকে বিরিয়ানি রান্না করতে কি বলো...?(আমি উৎফুল্ল হয়ে)
-- জ্বি না।।।ও কখনোই কেউ বললে রান্না করবে না। কারণ ওর যখন ইচ্ছা হবে তখনই রান্না করবে...(আপু)
-- ওওও(মনটা খারাপ হয়ে গেলো)
-- তবে একটা কাজ করতে পারো...(আপু)
-- কি কাজ..?(একটু আশা নিয়ে)
-- স্বপ্নীল কে দিয়ে বলিয়ে দেখতে পারো..ভাইয়া আবার তার ছোট্ট মায়ের আবদার না পূরণ করে থাকতে পারে না।।।।(আপু)
-- তাই করবো..(খুশি হলাম)
নাস্তা শেষে দেখলাম ওনি রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ছেন তখনই শাশুড়ী মা জিজ্ঞেস করলেন...
-- কিরে তোর না আজ কোনো কাজ নেই...?(আম্মু)
-- হুহ ছিলো না...মাত্র কল আসলো একটা লোক থেকে কিছু পাওনা টাকা আনতে হবে..
-- ওও আচ্চা ঠিক আছে যা। সাবধানে যাস।।
ওনি বেরিয়ে যাওয়ার পর একটু অবসর হলাম। মোটামুটি সকালের কাজ গুলো শেষ ঘণ্টা খানেকের মত ফ্রি তাই ভাবলাম ওনার ডায়েরির একটা পেজ পড়ে নি...
যখন ডায়েরি টা হাতল নিবো তখনই....
চলবে...