মি_পার্ফেক্ট,২৫,২৬,২৭

0
952

#মি_পার্ফেক্ট,২৫,২৬,২৭
আতাউর রহমান হৃদয়
২৫

— ওই সবকিছু বুঝে না বুঝার ভান কেনো করছেন…? (আমি)
— তো কি করবো….আর বাচ্চা আমার কাছে কেনো চাচ্ছো….?(ওনি)
— তো কার কাছে চাইবো…আমার কি আরো কয়টা বর আছে নাকি…?(আমি)
— সেটা তো তুমিই জানো….যাও না তোমার সেই বন্ধুর কাছে চাও… (ওনি অভিমানের সূরে বললেন)
— আমার আবার বন্ধু আসলো কোথা থেকে…?(আমি
— ওমা ভুলে গেছো নাকি… তোমার সেই বন্ধু কলেজ জীবনের যে তোমার প্রেমে অন্ধ ছিলো রাস্তা ঘাটে উস্টা খেয়ে পড়ত…যার সাথে মেসেঞ্জারে সংসার করছো….(ওনি….ব্যাটা টা আসলেই একটা মানুষ নাকি অন্য কিছু… কথাটা তার এখনো মনে আছে…)
— ঐ আমি কার সাথে কাকে আমি ভালবাসি সেটা জানেন আপনি?? (ওনাকে বিছানাতে ধাক্কা মেরে শুইয়ে দিয়ে ওনার বুকের উপর বসে কথাটা বললাম আমি)
— কেনো তোমার সেই বন্ধু কে…?(ওনি)
— আর একবার কথাটা বললেন তো আমি আপনাকে…নাহ আপনাকে না আমি নিজেকেই শেষ করে দিবো…জানেন না আপনি আমি কতটা ভালবাসি আপনাকে….আপনি যদি একটা মুহুর্ত ঠিক ভাবে আমার সাথে কথা না বলেন আমি থাকতে পারি না। ধম বন্ধ হয়ে আসে আমার…(অশ্রু সিক্ত নয়নে কথা বলছি আমি)
— হুহ…(ওনি)
— জানেন আপনি আমার জীবনে স্বপ্নের সেই পুরুষ যাকে আমি এতদিন আমি আমার স্বপ্নের রাজ্যে রাজ মুকুটে কল্পনা করতাম…(আমি ওনার বুকে শুয়ে)
— হুহ(ওনার চোখে এখনো আমি অভিমান দেখতে পাচ্ছি। তবে একটা স্বস্তির ব্যাপার হলো মানুষ তার সাথেই অভিমান করে তার সাথেই অভিমান করে।)
— আচ্ছা বলুন না আমি কি করলে আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন…. (আমি)
— জানিনা…(ওনি)
— তাহলে কি জানেন…?(আমি)
— তুমি তোমার বন্ধু কে ভালবাসো…?(ওনি)
— (কোন কথা না বলে ওনার মুখটাই বন্ধ করে দিলাম আলতো একটা চুমু দিয়ে বলে উঠলাম) শুনুন আমি না বুঝে কাজ টা করে ফেলেছিলাম…
— হুহ তো…এখন বুঝছো তো।।। এখন বুঝেই করো…(ওনি)
— উহু বুঝছি…এখন শুধু আমি আপনার ভালবাসায় সিক্ত থাকতে চাই….আপনার প্রতিটি ছোয়া নতুন ভোরে নতুন করে নতুন ভাবে অনুভব করতে চাই…(ওনার চোখের তাকিয়ে আছি)
— ওও তাই নাকি…(তাচ্ছিল্যের সাথে)
— হুহ তাই….আপনার সংসারের রানী হতে চাই…?(আমি)
— এখন নেই নাকি…?(ওনি)
— হ্যাঁ আছি তো তবে আপনার রাজ্যের রাজরানী হয়ে সিংহাসন টার পাশেই দাড়িয়ে আছি বসার অনুমতি পাচ্ছি না….(আমি….একটা জিনিস লক্ষ করলাম আমার বরের চোখের মাঝে অসম্ভব একটা মায়া আছে। লোকে বলতো মানুষ রূপের চেয়ে চোখের প্রেমে পড়ে বেশি কথাটা আমার বিশ্বাস হতো না।কিন্তু কথাটা সম্পূর্ণ রূপে আমার বিশ্বাস হচ্ছে আজ ওনার চোখের দিকে তাকিয়ে। আমি সত্যিই ওনার চোখের প্রেমে পড়ে গেছি। এভাবে যদি কেউ আমাকে অনন্তকাল থাকতে বলে আমি পারবো থাকতে এতে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই)
— পেয়েছিলে যখন তখন বসো নি….এখন কেনো এত উতলা হয়ে যাচ্ছো…?(ওনি)
— বসেছি তো কিন্তু শয়তানের কুতকুতানিতে উঠে দাড়িয়ে আজ আমি এতটা পস্তাচ্ছি….(আমি)
— হুহ..(ওনি)
ওনার গালে একটা চুমু দিলাম..
— আচ্ছা আপনার একটু ইচ্ছে করে না…?(আমি)
— কি…? (ওনি)
— আমাকে নিয়ে ভালবাসার গভীরতায় হারিয়ে যেতে…?(আমি)
— হারিয়ে গেলে তো আমার এত ব্যবসা দেখাশোনা করবে কে…?(ওনি)
— উপপ আপনি সব বুঝেও না বুঝার ভান করছেন কেনো….?(আমি)
— আমি এতকিছু বুঝি না….(ওনি)
— আচ্ছা শুনুন না…?(আমি)
— কি…(ওনি)
— ভালবাসি…. (আমি)
— তোমার বন্ধুটাকে না….?(ওনি)
— উহ…আপনাকে…(ওনার বুকে কিল দিলাম হালকা করে.. যেন ব্যাথা না পায়)
— আহহহ….(বুকে হাত দিয়ে)
— কি হয়েছে…? (আমি)
— এত জোরে কেউ মারে…এমনিতে আজকাল বুকটায় ব্যাথা করে এখন তুমি মারলে…(ওনার চোখে আমি অশ্রু দেখতে পাচ্ছি….তবে ওনি যে আমার এই হালকা মারের আঘাতে ব্যাথা এতটা ব্যাথা পেয়েছেন তা নয়…কিন্তু কেনো এত ব্যাথা ওনার বুকে)
— কি বলেন…?(আমি…অনেকটা হতাশ আর অস্থির হয়েই বললাম)
— হুহ…কিছুদিন একজন কে বুকে নিয়েছিলাম পরে হুট করেই সে বুকটা খালি করে দিয়ে অন্যকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতো….তার এই বুকে না থাকাটা আমাকে প্রচন্ড পরিমানে কস্ট দিয়েছে সেই কস্ট হতেই হয়ত আজকাল ব্যাথা টা আসছে…(ওনি খুবই ইমোশনাল হয়ে কথা বলছেন…)
— ওওও…কিন্তু এখন তো সে চায় এই বুকটা সারা জনম থাকতে…কিন্তু এই বুকটায় তাকে নিচ্ছেন না কেনো…?(আমি)
— হাহ…ভয় হয় যদি দু-চারদিন থেকে আবার অন্য কাউতে মগ্ন হয়ে যায় তাহলে এবার আর সহ্য করতে পারবো না…(ওনি)< -- এবার যে সে সত্যিই অনেক টা অনুশোচিত সেটা কি বুঝতে পারছেন না...?(আমি) -- তাতে কি...? মানুষের মন পরিবর্তিত হতে যে বেশি সময় লাগে না...প্রথম কয়দিন তো সে অনেকটাই সে মগ্ন ছিলো আমার মাঝে কিন্তু হুট করেই সে বদলে গেলো...এখন যে আবার এমনটা হবে না তার নিশ্চয়তা কি আদো আছে....?(ওনি..অনেক গভীরভাবে কথা বলছেন ওনি এতটা গভীরভাবে কথা বলতে আমি ওনাকে কখনো দেখি নি...) -- এখন যদি সে আবার এমন করে চিরতরে বিদায় করে দিবেন আপনার থেকে... (আমি) -- নাহ পারবো না আমি এমন টা করতে...আমার মা আমাকে সব শিখালেন কেনো যে কস্ট সহ্য করাটা শিখালেন না আমি আদো বুঝলাম না....জীবনে একটা জিনিস শিখার বাকী ছিলো হয়ত তাও শিখিয়ে দিলো...এর থেকে বেশি কস্ট সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই.... মরে যাবো...এর থেকে একটুও যদি মনে আঘাত পাই.।।এখনও যে সহ্য ক্ষমতা আছে সেটাও নয়...একেকটা রাত খুব কস্টে কাটে যখন নিজের মানুষটা নিজের পাশে থেকেও অন্যের সাথে কথার ছলে মজা করাতে ব্যস্ত থাকে....হয়ত এর চেয়ে বেশি বেদনাদায়ক মুহুর্ত আমার জীবনে আসে নি...(ওনার কথা গুলো বলতে খুবই কস্ট হচ্ছে...মনে হচ্ছে ওনার বুকে কিংবা মুখের মাঝে অনেক বড় একটা পাথর রাখা। ওনার চোখ দিয়ে যদিও অশ্রু বেড়ে পড়ছে না। তবে আমার চোখ দিয়ে পড়ছে। এতটা কস্ট আমি ওনাকে দিছি। ওনি যে এখনো আমাকে ওনার বুকে শুয়ে থাকতে দিয়েছেন এটাও যে আমার কাছে এখন অনেক বেশি কিছু মনে হচ্ছে। আমি তো এটাও পাওয়ার যোগ্যতা রাখি না...) -- আসলে আমি....(আমি কিছু বলব তার আগেই ওনি বলে উঠলেন) চলবে।।। #মি_পার্ফেক্ট ২৬ -- আসলে আমি....(আমি কিছু বলব তার আগেই ওনি বলে উঠলেন) -- কোনো অজুহাত আমি শুনতে চাই না আমি। (ইমোশনাল হতে স্ট্রিক হয়ে কথা বললেন ওনি) -- (ওনার এই কথাটা শুনে আমার কাছে অনেক খারাপ লেগে উঠছে।) আমার কথা গুলো ওনার কাছে অজুহাত মনে হচ্ছে। আহ কতটা কস্ট আমি ওনাকে দিয়েছি। অন্য কেউ হলে আমাকে কত কথা শুনিয়ে দিতো কিন্তু ওনি কোন কিছুই বলেন নি। নীরবে সব কিছু সয়ে গেছেন। তবে ওনি যদি আমাকে তৎক্ষনাৎ কিছু বলতেন তাহলে হয়ত অন্য কিছুই হয়ে যেতো। হীতে বিপরীত বলতে একটা কথা আছে না ওই কথাটাই হয়তো প্রযোজ্য হয়ে যেতো।যদি তখন ওনি কথা গুলো আমায় বলতেন। ওনি খুব ভালো করেই জানেন গরম গরম কিছু খেতে গেলে জিহ্বা পুড়ে যায়। তাই তো তিনি আমার অনুভুতি বুঝে আজ কথা গুলো বললেন। তাও আবার আমাকে কিছুই বললেন না। শুধু ওনার কস্ট হওয়াটা আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। তবে একটা কথা ভেবে স্বস্তির নিশ্বাস আসছে আমার। ওনি আমার আচরণে কস্ট পান আবার সুখিও হন। ভালো ব্যবহারে ওনি সুখ অনুভব করেন আর আমার খারাপ আচরণ টায় কস্ট পান। এতে আমি স্পস্ট বুঝি ওনি আমায় কতটা ভালবাসেন। যদিও এখন কিছুটা অভিমান করে আছেন। তাতে কি। আমি ভাঙিয়ে নিবো তার মনে গড়া অভিমানের পাহাড়। তার অভিমানের এই পাহাড়কে আমি করে নিবো ভালবাসার এক অনবদ্ধ পাহাড়। যে খানে থাকবে ভালবাসায় পরিপূর্ণ এক জীবন আমাদের। কতটা স্মার্ট ওনি। কতটা বুঝেন ভালবাসার অনুভুতি গুলো কে। তবে একটা বিষয় হলো। মানুষ তখনই নিজেকে পরিপূর্ণ এক সুখী মানুষ মনে করে যখন সে পরিবারের ভালবাসার সাথে সাথে জানতে পারে কেউ তাকে অগনিত পরিমানে ভালবাসে। আমিও ঠিক এই অনুভুতি অনুভব করছি। সেই সুখের সুখি আমি। ওনার বুকেই ঘুমিয়ে পড়লাম। কাল থেকে আমার একটাই চাওয়া ওনার অভিমান ভাঙ্গানো। খুব করে কস্ট দিয়ে ফেলেছি আমার মি. পার্ফেক্ট কে। সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে মুখে ফেয়ার এন্ড লাভলী লাগাচ্ছি। নিজের রূপ চর্চা বলতে ফেসওয়াস আর এই ফেয়ার এন্ড লাভলী টাই ব্যবহার করি। অন্য আধুনিকতার কোন রূপ চর্চা ভালো লাগে না। জানিনা ওনি কেমন টা পছন্দ করেন আধুনিকতা নাকি এমন সাদামাটা। মনটা ফুরফুরে রাত থেকেই। মনে হচ্ছে কেউ আমাকে তার চোখ দিয়ে অনন্ত ভাবে দূষ্টিপাত করছে। ওনার দিকে তাকাতেই বুঝলাম ওনি ঘুমিয়ে আছে তবে কেনো মনে হলো ওনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। তাহলে কি আমার অনুমান টা ভুল ছিলো নাকি আমার মনের ভাবনা। ওনার পাশে বসে তার চুল গুলো তে বিলি কাটছি আর ঘুৃমান্মীত চেহারায় তাকিয়ে আছি। নিজে নিজেই বলছি একটু জোরে। -- কেনো আপনি এমন করছেন? একটু অভিমান করেছেন? তাই বলে একটুও আপন করে নেওয়া যায় না?? চাইলেই তো সব পারেন, কেনো করেন না???জানেন না আপনি কতটা ভালবাসি আপনাকে?? আচ্ছা আপনি এতটা কেয়ারিং ছিলেন এখন নেই কেনো..? নাকি ইচ্ছে করে নিজেকে ঘুটিয়ে রেখেছেন...? জানেন আপনি আপনার কেয়ার, আপনার ছোঁয়া, আপনার দায়িত্ববোধকতা আমাকে আকৃষ্ট করে তুলে আপনার প্রতি? আপনার ঠোঁট গুলো এত কালো কেনো...? জন্মগতভাবেই এমন নাকি বাজে অভ্যাসে হয়েছে এমন??? আপনার এমন ঘুটিয়ে থাকা টা কত কস্ট দেয় আমায় জানেন আপনি??নাকি প্রতিশোধ নিচ্ছেন...আমার প্রতি...আমাকে অনুভাবিত করাচ্ছেন ভালবাসায় কস্টটা কতটুকু??? তবে সবটা অনুভব করার শক্তি বোধয় আমার নেই....তবে যতটা কস্ট অনুভব করছি এর চেয়েও কি বেশি কস্ট ভালবাসায়...? নাকি এতটাই ভালবাসায় কস্টের শেষ ধাপ...?(দেখি ওনি চোখটা খুলে নিলেন...তার মানে ওনি জেগেই ছিলেন...?) -- কতটা কস্ট পাচ্ছো...? আমার এই ঘুটিয়ে থাকাতে...?(ওনি) -- অনেক অনেক কস্ট...আপনি জেনে বুঝেই আমায় কস্ট দিচ্ছেন তাই না...?(আমি...অশ্রুসিক্ত নয়নে...?) -- এমনটা না....তবে এর চেয়েও বেশি কস্ট অনুভব হয় তখনই যখন আপন মানুষ টা এড়িয়ে যায়...আমি তো তোমার পাশেই আছি... আর আরো বেশি কস্ট হয় তখনই যখন ভালবাসার মানুষ টা পাশে থেকে অন্য কারো সাথে ভালবাসাময় কথোপকথনে আসক্ত থাকে...? থাকে বিভোর...? বাংলা চলচিত্রের একজন মানুষ হুমায়ুন ফরিদী বলেছিলেন... কাউকে ভালবাসতে হলে এক বুক সমুদ্র কস্ট সহ্য করার ক্ষমতা থাকতে হয়...তবেই ভালবাসা যায়....তুমি আমাকে সেই এক বুক কস্ট সহ্য করিয়েছো...জানিনা আজো তোমায় ভালবাসতে পেরেছি কি না...?(ওনি) -- কতটা ভালবাসেন আমহ বুঝতে পেরেছি তাই তো আপনার ভালবাসায় বিভোর হতে আমি পাগল হয়ে আছি...(আমি) -- আমার ভালবাসা সহজে পেয়ে গিয়েছিলে তো তাই একটু বেশিই অবহেলার পাত্র করে নিয়েছিলে আমায়...?(ওনি) -- বলছি তো আমার ভুল হয়ে গিয়েছে এবার আর একবার ভালবাসায় সিক্ত করে নিন আমায়...কথা দিচ্ছি ত্রুটি আমি থাকতে দিবো আমাদের মাঝে...(আমি) -- এতটা সহজ নয় তো...পুনরায় মনে ভালবাসা জাগিয়ে তোলা...তবে এতটা অসম্ভব নয়(বলেই ওনি উঠে চলে গেলেন) ওনার বলা শেষ কথাটায় আমি স্বস্তি ফিরে পেলাম। অসম্ভব নয় ওনার মনের নিবু নিবু ভালবাসার প্রদীপ টা আবারো সতেজ ভাবে জ্বালিয়ে তোলা টা....এখনো তো চিলে ফোঁটা হয়ে জ্বলছে একটু তেল আমায় দিতে হবে। তবে একটু সময় তো দিতে হবে। জীবন টা তো সবে শুরু। পুরো জীবন তো তার ভালবাসা পাবো। এখন নাহয় একটু কস্ট করলাম। আজ ওনি কোথায়ও যান নি...কারণ আমরা আমার এক কাজিনের বিয়েতে যাবো।পুরো তিনদিন থাকতে হবে সেখানে.... হলুদ,,বিয়ে,,বৌভাত।।। হলুদ অনুষ্টানের জন্য তৈরি হচ্ছি...হলুদ শাড়ী পড়ছি আমি...ওনাকে কত করে বললাম একটা হলুদ পাঞ্জাবী পড়তে না ওনি পড়বেন না...আমিও হাল ছাড়ার পাত্রী নাকি...পাঞ্জাবি তো আনিয়ে রেখেছি আব্বু দিয়ে...আমার শাড়ীটা ওনিই নিয়েছেন...কিছুটা কারুকাজের আচল টা সবুজ রঙের। আর বাকীটা হলুদ। ইসস ওনিও যদি পাঞ্জাবি টা পড়েন তাহলে আমাদের একদম হিমু-রূপা লাগবে। ভাবতেই মনের মাঝে লাড্ডু ফুটছে। সন্ধ্যা থেকে ওনার দেখা পাচ্ছি না...শাড়ী তো পড়ে নিয়েছি। কিন্তু রুম থেকে বেরুচ্ছি না।। শাড়ীটা কি আদো পড়া হয়েছে নাকি কোথায়ও ত্রুটি আছে। ওনি তো এক ঝলক দেখলেই বুঝতে পারতেন। কয়েকবার কলও করেছি ওনাকে কিন্তু ফিকআপ করলেন না... অনিকের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম শালা দুলাভাই কেরাম খেলতেছে....ওরে বললাম দ্রুত বাসায় আসতে।।তবুও আধা ঘন্টা লাগলো। এর ফাঁকে আর কি করবো ওনার ফেবু আউডিটা ঘুরে দেখলাম। যা বুঝলাম ওনার আউডি দেখে একসময় খুব ফেসবুক চালাতেন তবে একটা সময় পর আর ডুকেন না। এখন মাঝে মাঝে হয়ত ডুকেন। কলেজে যখন পড়তেন তখন কিছু পোস্ট করেছেন বন্ধুদের নিয়ে। কিন্তু এর পর যা কিছু পোস্ট করলেন সব ছিলো জীবন নিয়ে। অনেক মানুষ তার ফ্রেন্ডলিষ্টে আছেন। একটা বিষয় লক্ষ করলাম ওনার কলেজ জীবনে অনেক মেয়ে বন্ধু ছিলো। তবে ছেলে বন্ধুর তুলনায় অনেক কম। ওনি রুমে ডুকেই বলে উঠলেন... -- কত সুন্দর খেলা টা জমে উঠলো তোমার চাচার সাথে এর মাঝে দিলে তুমি ব্যাঘাত ঘটিয়ে। (ওনি) -- আমি ব্যাঘাত ঘটালাম তাই না...আর আমি যে এখানে বসে আছি আপনার অপেক্ষায় সে দিকে কি আপনার খেয়াল আছে...?(আমি) -- ওওও সরি... (ওনার সরি বলার ভঙ্গি টা অনেক কিউট ছিলো ইচ্ছে করছিলো ওনাকে জড়িয়ে ধরি কিন্তু নাহ এমন করলে চলবে না...ওনাকে আগে পাঞ্জাবি টা পড়াতে হবে তাই নিজে সংযত করলাম) -- হুম এখন যান ফ্রেস হয়ে আসেন...আর এটা পড়ে আসেন....(বলেই ওনাকে ওয়াসরুমে পাঠালাম...হাতে সাদা পাঞ্জাবী টা দিয়ে.) ওনি বের হতেই বললাম... -- সোজা হয়ে দাড়িয়ে থাকেন একটু নড়াচড়া করবেন তো খবর আছে.... ওনি ছোট বাবুর মত দাঁড়িয়ে থাকলেন আমি ওনাকে পাঞ্জাবী টা পড়িয়ে দিলাম।।। -- ওয়াও আমার ইফতিটাকে আজ একদম হিমুর মত লাগছে... (আমি মুখে হাত দিয়ে.) -- তাই...তোমাকেও লাগছে রূপা...(ওনি...যাক অবশেষে ওনার নজরে পড়লো) -- আই লাভ ইউ(ওনাকে জড়িয়ে ধরে বললাম) -- হুহ....দেখি শাড়ীর কুঁচি গুলো ঠিক হয়নি...(ওনি) ওনি আমার শাড়ীর কুঁচি গুলো ঠিক করে দিলেন। আমি তো ইচ্ছে করেই এমনটা করেছি। জানতাম আমি আমার মানুষ টার চোখ এড়াবে না এটা। সত্যিই হলো আমার ধারনা। ওনি রুম থেকে বেরুবেন তখনই ওনাকে টেনে বললাম দাঁড়ান... ওনার সাথে মিশে গিয়ে হাতের মুঠোফোন টা বের করে সেলফি তুলছি। ওনার বুকে মাথা টা রেখে একটা তুললাম। ওনাকে কিস করছি একটায়। ওনি আমার হাত থেকে ফোনটা নিলেন। নিয়ে ওনি নিজেই তুললেন কয়েকটা... হলুদ অনুষ্ঠানে ওনি একটা সাইডে আর আমি অন্য পাশে দাড়িয়ে আছি। লক্ষ করলাম। বর পক্ষ থেকে আসা কয়েকটা মেয়ে আমার হিমু কে কোন কিছুর সিগনাল দিচ্ছে...বিষয়টা আমার নজর এড়ালো না...ওনিও দেখি মজা নিচ্ছেন।।।দাড়া আমিও মজা দেখাচ্ছি...< আমি ওনার পাশে গিয়ে ওনাকে... চলবে.. #মি_পার্ফেক্ট ২৭ হলুদ অনুষ্ঠানে ওনি একটা সাইডে আর আমি অন্য পাশে দাড়িয়ে আছি। লক্ষ করলাম। বর পক্ষ থেকে আসা কয়েকটা মেয়ে আমার হিমু কে কোন কিছুর সিগনাল দিচ্ছে...বিষয়টা আমার নজর এড়ালো না...ওনিও দেখি মজা নিচ্ছেন।।।দাড়া আমিও মজা দেখাচ্ছি... -- হাই....(ওনার পাশে দাঁড়িয়ে ওনাকে হাই বললাম...নতুন করে রিলেশন করবো আজ ওনার সাথে...) -- কিহ....(ইশারায় জিগাইলেন ওনি) -- ফোন নাম্বার টা....?(ইশারায়..আমি.) -- কার...?(বাপরে ওনি তো ইশারায় ভালো কথা বলতে পারেন...) -- আপনার...?(আমিও কম কিসে) কোন কিছু না বলে অনুষ্ঠানে মনোনিবেশ করলেন....ওনি হয়ত বুঝতে পেরেছেন ওনার এমন আচরণ কেনো করেছি আমি...তাই হয়ত এরি জন্নে মেয়ে গুলোর দিকে একবারো তাকালেন না...তবে মেয়ে গুলারে মন চাইতাছে আমার আস্ত গিলে খাই। আমার কলিজার দিকে নজর দেয়। তাও আবার কেমন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছো দেখছো নি গো জরিনা মা। আমার তো মন চাইতাছে ওই শাঁকচুন্নি গুলার সাথে রেসলিং খেলি।।। লুচু মাইয়ারা।।। তোদের ঘরি বর বিএপ নাই।।।।।আমার বরের দিকে কি??? আমি তো একনজরে তাকিয়েই আছি ওই মাইয়া গুলারে মন চাইতাছে উগান্ডার গন্ডারের কাছে পাঠাইয়া দিই।।। শালীর ঘরে শালী ওগল। তোগো রে তো আমি আইজ বাংলাদেশ থেইকা নোয়াখালী পাঠামু দাড়া।।।। এটা ভেবে যখনি আমি দাঁত কটমট করতে করতে মেয়েগুলোর দিকে পা বাড়াবো তখনি ওনি আমার হাত টা চেপে ধরলেন.... -- কিহ...(ওনার চেহারার দিকে তাকিয়ে দাঁত কটমট করতে করতে মাথা ঝাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম) -- এত রাগ কিসে...?(ওনি।।মৃদু হাসি দিয়ে।।উপপ এই হাসিটা যদি রুমের মধ্যে থাকতে দিতেন তাহলে নির্ঘাত ওনি একটা চুমু ফ্রী পেতেন তবে আপসুস এক এটা পাবলিক প্লেস দুই আমি এখন প্রচন্ড রাগী মোডে আছি ওই মাইয়া গুলারে নোয়াখালী পাঠামু তাই) -- ওরা এমন ভাবে কেনো তাকিয়ে আছে আপনার দিকে...? (রাগ তো কমারই নয়) -- তাতে কি...? আমি কি তাকাচ্ছি নাকি...?(ওনি) -- ওরা কেনো তাকাবে...?(চোখটা হয়ত লাল হয়ে গেছে।।।বোধয় মুখটাও লাল হয়েছে আমার। রাগলে আমার ঠোঁট গাল আর চোখগুলো নাকি লাল হয়ে যায়।।।আম্মু বলে।।তবে আমি কখনো এটা দেখি নি। কারণ রাগ উঠলে কি আর আয়না দেখি তখন তো কি করি না করি নিজেই জানিনা...) -- ওরা তাকাচ্ছে তাকাক না...আমি কি তাকাচ্ছি নাকি...?(ওনি) -- ওরা আমার বরের দিকে কেনো নজর দিবে.... আমার বর আমি তাকাবো ওরা কেনো...?(আমি) -- ওও তাই নাকি.... (তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিলেন ওনি।। এই হাসির রহস্য টা আমি বুঝতে পেরেছি....) -- হুহ তাই।।।। কিছুক্ষণ পর মেয়েগুলো আর সাথে আসা বর পক্ষের মেহমান গুলোও চলে গেলো। এখন শুধু আমরাই আছি। আমরা বলতে শুধুমাত্র কনে পক্ষের মানুষ গুলো। আমার কাজিন না অনেকে নাচগান করছে....একটা সময় ছিলো যখন আমিও এমন অনুষ্টানে নাচতাম তবে আজ নাচা টা হলো না। আমার বর টা কি না মনে করে বসে....আজ যদি বিবাহিত না হতাম তাহলে নির্ঘাত আমিও নাচতাম।।।। হুট করে কয়েকজন মিলে ঘিরে ধরলো আমায় নাচার জন্য।।।। ওদের কে যতই নিষেধ করছি তারা কি আমার কথা শুনে।।।। বারবার ওনার দিকে তাকাচ্ছি।।। ওনি দেখি কিছুই বলছে না।।।। হুট করে একজন বলে উঠলো।।। ওনাকেও নাকি আমার সাথে নাচতে হবে।। মানে এখন আমাদের কাপল ডান্স করতে হবে।।। এবার বুঝো ঠ্যালা।।।। শালীদের ঠ্যালা সামলাও বাপু।।।।আমি তো বসে বসে মুচকি মুচকি হাসছি।।।।হাসছি এ কারণে আমি তো জানি এরা কেমন।।।একবার যখন কাপল ডান্স দেখবে তা তো দেখেই ছাড়বে।।। -- ভাইয়া আজ আপনাদের নাচতেই হবে...(অনুরোধের সাথে আমার চাচাতো বোন রিয়া) -- আরে আমি তো জীবনে গানই শুনি নি নাচবো কি করে..../(বাপরে কি ডাহা মিথ্যা কথা সারাদিন দেখি দ্বিধান্বিতা গানটা শুনে।।।আরো গানও শুনে তবো দ্বীপান্বীতা একটু বেশীই শোনেন।।।আর এখন বলতেছেন গানই শোনেন না)) -- তা আমরা জানতে চাই না....এই শালীদের একটাই আবদার।।।।মোদের দুলাভাইয়ের নাচ চাই।।।(কাজিন আমার জেসিকা) -- আরে আমি সত্যিই নাচ জানি না...(ওনি) -- মানি না,,,,মানবো না,,,আমাদের মানতে হবে।।মানতে হবে।। মানতে হবে।। আমাদের দাবি মানতে হবে।।।।( সবাই মিলে স্লোগান ধরছে।।।।এদের তো আমি ভালো করেই চিনি।।।।এরা যখন ঠায় নিয়েছে আমাদের কাপল ডান্স দেখবে।।।।তো এরা আমাদের আজ নাচিয়েই ছাড়বে।।।এটা আমি ভালো করেই বুঝতে পেরেছি))) -- ওকেহ ওকেহ...তবে একটা শর্ত প্রযোজ্য... (যাক ওনি তাহলে রাজী হলেন।।।।রাজী না হয়ে কি উপায় আছে।।। -- কিহ শর্ত...?(সবাই মিলে) -- আমি শুধু তোমাদের বোনের সাথে দাড়িয়ে থাকবো আর ও নাচবে....ওকে....?(ওনি) -- হুহ... গান চাড়লো ওরা হিন্দি গান একটা।।।। আমি নেচেই চলেছি ওনি তো রোবটের মত দাড়িয়েই আছেন।।।কত চেস্টা করছি ওনার সাথে তাল মিলিয়ে নাচতে।।। কিন্তু তা আর পারছি কই...একা চাইলেই কি কাপল ডান্স করা যায়।।।।কাপল ডান্স করতে হলে দুজনকে সমান তালে তাল মিলাতে হয়। এতক্ষণ মেয়ের শিল্পির গাওয়া লিরিক্স গুলো নাচছিলাম।।।যখনই ছেলের লিরিক্স এলো...ওনি নাচতে শুরু করলেন.... এমন ভাবে ওনি নাচছেন মনে হচ্ছে কোনো হিরোও হার মানাবে তার এই পারপোমেন্সে।।।।ভারতে শ্রেষ্ট ডান্সার।।।যার কোমড় ঢুলানোতে ছোট বড় যুবক বুড়ো সবাই কোমর ঢুলাইতো সেই গোবিন্দ কেও হার মানাবে নাচকে।।।আমাকে ঘীরে নেচে চলেছেন তিনি।।।আমিও তাকে যতদুর সম্ভব সঙ্গ দিতে চেস্টা করছি।।।এতক্ষণ ভাবছিলাম ওনি আমাকে সঙ্গ দিতে পারছেন না।।।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমি পারছি তো তার পরপম্যান্সে সঠিকভাবে সঙ্গ দিতে।।।। গান চলছে.... সোনা কিতনা সোনা হে সোনে জেছা ত্যারা মান সুন ঝারা সুন ক্যায়া ক্যাতি হে দিওয়ানি কী দিল ধারকান।। সোনা কিতনা সোনা হে সোনে জেছা ত্যারা মান সুন ঝারা সুন ক্যায়া ক্যাতি হে দিওয়ানি দিল ধারকান।।।। তু মেরা তু মেরা হিরো নাম্বার ওয়ান।।। হিরো তু মেরা হিরো হে ভিল্লেন জেচা কাম এনা কার। স্বপ্নো কি ইচ রানী কো এচে বদমান তু না মানআনা কর আন্দার কিতনী গরমী হে বাহার কিতনী সর্দী হে।।।। সোনা কিতনা সোনা হে সোনে জেছা ত্যারা মান সুন ঝারা সুন ক্যায়া ক্যাতি হে দিওয়ানি দিল ধারকান।।।। মে ত্যারা মে ত্যারা মে ত্যারা হিরো নাম্বার ওয়ান।।। তু মেরা মপরা হিরো নাম্বার ওয়ান।(পুরো গান মনে নেই।) লাস্টের লিরিক্সে ওনি গানের সাথে মিলিয়ে যতটা সুন্দর করে নেচেছেন।। আমি মুগ্ধ।।। নাচের সাথে সাথে ওনি কি ওনার ভালবাসা টা আমার কাছে তুলে ধরেছেন।।।সবাই তো তাই ভাবছে হয়ত।।।। নাচ শেষে ওনি এক মিনিটও দাঁড়ালেন না।।।চলে আসলেন রুমে।।। -- কি হলো চলে আসলেন যে...?(আমি) ওনার উত্তর টা শুনে তো আমি অবাক... চলবে....

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here