মি_পার্ফেক্ট,৩৪,৩৫,৩৬

0
941

#মি_পার্ফেক্ট,৩৪,৩৫,৩৬
আতাউর রহমান হৃদয়
৩৪

দরজার দিকে নজর দিতেই মেজাজ টা সম্পূর্ণ খারাপ হয়ে গেলো এর বুঝি আসার আর সময় হলো না…

— সরি সরি….(রিয়া এসে নিজেই লজ্জা পেলো…)
— হু বল কি জন্য এসেছিস…?(আমি)
— নববধুর বিদায়ের সময় তোরা এদিকে রুমে বসে আছিস… (রিয়া)
— তো কি করবো বল…???(আমি)
— কি করবি মানে তোরা সেখানে বর বউকে মিস্টি খাওয়াবি না….?(রিয়া)
— রাখ তোর মিস্টি খাওয়ানো….?(রাগিভাবে)
— তুই তো মিস্টি খেতে ব্যস্ত তও আবার এই সেই মিস্টি নাকি….(রিয়া)
— আরে রাখ তো এসব…তোর দুলাভাইকে সেখানে নিলেই তো সমস্যা..? (আমি)
— কি সমস্যা..? (রিয়া)
— ঐ মাইয়া গুলা আমার বর নিয়া টানাটানি শুরু করে দিয়েছে….(আমি)
— কি করছে…?(রিয়া)
— ওরা আমার বরের দিকে নজর দিছে…মন চাইতেছে ওই ডাইনি গুলা রে তেলাপোকার জুস খাইয়ে নর্থ সাউথ উগান্ডায় পাঠাই দিই….(রাগে কটমট করতে করে)
— বোইন তোর পুরোনো ফর্মে যাস না।।। নাহয় আমি বমি ধরে রাখতে পারবো না…(রিয়া)
— হুহ…(আমি)
— তবে তুই বর পেলি একটা ভাগ্য করে….তোর মত একটা এলিয়েন কে যে সহ্য করছেন ওনি…(রিয়া)
— কিহ আমি এলিয়েন…(রাগী ভাবে)
— তা নয় কি… তুই যে পরিমান ডিসের রেসিপি জানিস আমার তো মনে হয় না কেক্কা আপাও এতটা রেসিপি জানেন…(রিয়া অবাক হওয়ার ছলে)
— হুহ এখন কি যাবি..(মুখ বাকা করে)
— হুহ চল…

আমাদের আজগুবি সকল কথা বার্তার এক নিরব দর্ষক হয়ে দাড়িয়ে সকল সিন মনোযোগ সহকারে আমার মি. দেখছিলেন।।
রুমে থেকে বেরুবো তখনই রিয়া বলে উঠলো….
— আরে দুলা ভাই আপনি কি এমনভাবেই বেরুবেন…?(রিয়া)
— হুহ..(ওনি)
— এভাবে গেলে সমস্যা কি…?(আমি অবাকের ছলেই বললাম)
— আরে বোইন দুলাভাইয়ের সাথে তুই রোমান্স করেছিস এটা তো আমি জানলাম এখন কি দুনিয়ার সবাইকে জানাইবি নাকি….(ওর কোন কথাই আমার মন্ডুতে আসলো না…)
— কিসব বলছিস আমার কল্লার উপর দিয়া যাইতাছে…(আমি)
— আরে বোইন তোর জামাইয়ের ঠোঁটের স্বাদ তো নিলি এবার একটু তাকিয়ে দেখ কি অবস্থা করে রেখেছিস…(ইশশ রে সাজুগুজু করে যে ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়েছি ঐ লিপস্টিক টা ওনার ঠোঁটেও লেগে আছে।।)
— এই তুই যা তো আমি আসছি….(রিয়া কে রুম থেকে ধাক্কা মেরে বের করে দিয়ে দরজা টা বন্ধ করে দিলাম। এটা আবার রাগী ধাক্কা না যে রিয়া মাইন্ড করবো ফাইজলামি আর কি)

ওনার দিকে তাকিয়ে দেখি লজ্জায় আমার মানুষ টা একবারে লুতুপুতু হয়ে আছে।।। ইচ্ছা করতাছে আবার কিস করি।।।কিন্তু আজকাল আমার হয়েছি কি।।।।ওনার কাছে যেতে লজ্জা লাগে।।।চাই বেশি ওনিই স্পর্শ করুক আমায়।।।আবার ওনার প্রতিটা স্পর্শে আমি শিহরিত হয়ে যাই।।।।

— এই মিঃ দাড়িয়ে না থেকে ঠোঁট টা তো ক্লিয়ার করুন…( আমি এই কথা বলা মাত্রই ওনি আমাকে হেচকা টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন)
— আরে লজ্জা তো যা দেওয়ার তোমরা দু বোনে দিয়েই দিলে।।। এখন আর মুছে কি হবে…তবে লজ্জা যেহেতু পেয়েছি…এবার একটু বেশি করেই স্বাদ নিই…কি বলো…(ওনার কথা শুনে আমি তো শেষ ব্যাটা আমারে দিলো বিপাকে পেলে…কেমনটা লাগে কও তো দেহি)
— প্রতিশোধ নিচ্ছেন…?(আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে বললাম)
— কিসের প্রতিশোধ..?(ওনি)
— নিজে লজ্জা পেয়েছেন বলে আমাকেও দিচ্ছেন…?(আমি)
— তোমাকে কখন লজ্জা দিলাম…?(ওনি অবুঝের ভাষায়)
— এই এসব বলে…(মাথা টা নিচু করে আছি)
— তাহলে আর বলব না কখনো…(ওনি রাগ করলেন নাকি…)
— এই না না…(আমি উজ্জাসীত হয়ে)
— কেনো..?(ওনি)
— আমার লজ্জা হয় ঠিক আছে তবে এর চেয়েও বেশি ভালো লাগে….(আমি)
— ওমা তাই নাকি….(বলেই ওনি আমার থুতনীতে হাত দিয়ে নিজের আরো কাছে টেনে নিয়ে আমার অনেক আপন করে নিলেন…সত্যিই অতি অসাধারণ ভালো লাগা কাজ করছে আমার মাঝে।।।

এতদিন খুব মিস করছিলাম ওনার এমন করে ছোঁয়া গুলোকে।।।জানিনা কেনো এমন লাগে ওনার স্পর্শ গুলো।।।তবে এতটুকু অনুভব করি পবিত্র স্পর্শে যেমন ভয় নেই তেমনি সুখও বহু গুন।।।। জীবনে প্রেমের অনুভুতি অনুভব করি নি।।।।কাউকে নিজের কাছে ঘেষতে দিই নি বলে হয়ত আজ এজন্যই উপরওয়ালার আমার আপন জন করে আমাকে মিলিয়ে দিয়েছেন আমার কাছে।।। সত্যিই যারা উপরওয়ালার উপর আস্থা রাখে তারা কখনো ঠকে না।।।তাই তো আমি ঠকি নি।।।

আমার মত কয়জন মেয়েই বলতে সে ভাগ্যবতি।। কয়জন মেয়েই বা বিয়ের পর নিজের বরকে পেয়ে বলতে পারে সে সন্তুষ্ট।।।তারা পায় না হয়ত এ কারণেই যে তারা বিয়ের আগেই যে প্রেমের স্বাদ গ্রহন করে নেয়।।।নতুন কিছু চায়।।।কিন্তু প্রেমের যে নতুন ছোয়া নেই।।তা তো ধীরে ধীরে নতুন আসে।।।বিয়ের পর যা আসে তো তারা বিয়ের আগেই নিয়ে নেয়।।তাই হয়ত তাদের ঐ সব পুরোনো লাগে।।তবে আমি নতুন অনুভব করি।।।নিজে পিওর ছিলাম বলে হয়ত ওনার মত পিওর কাউকে পেয়েছি।।।

বাহিরে দাঁড়িয়ে আছি।।।নববধুর কি যে কান্না।।। কান্না করাটা স্বাভাবিক।। নতুন জীবন নতুন সঙ্গী।।। নতুন নতুন সকল পরিবারের মানুষ গুলো।।তারা কেমন হবে???এক অনাকাঙ্ক্ষিত দিন।।।।আমি জানি কতটা ভয় কাজ করে এ মুহুর্তে।।। আমি তো তখন এই মুহুর্তে জানতাম আমার মিঃ এত ভালো হবে।।।তখন আমি এই চিন্তাতেই বেশি কেঁদেছি ওনি কেমন হবেন…? আজও আমার চাচাতো বোনের মনে একই আখাঙ্কা কাজ করছে।।তাই তো সে এতটা কেদে চলেছে…

যাই হোক বর পক্ষ থেকে আসা মেয়ে গুলো যাওয়ার সময় আমার হাতে একটা কাগজ দিয়ে গেলো…. আর বললো..
— আপু প্লিজ এই কাগজ টা ওই ওনাকে দিয়ে দিবেন…(অনেক আকুতি মিনতি করে আমার মিঃ কে দেখিয়ে বললো)
— আমিই কেনো…?আমি দিলে কি ওনি নিবেন…?(আমি)
— ওপস আপু একটু দিয়ে দিয়েন প্লিজ আপনি পারবেন।।।(বলেই মেয়েটা ভৌ দৌড়)

কাগজ টা খুলে দেখে তো আমার রাগ চরম পর্যায়ে….

চলবে…

#মি_পার্ফেক্ট
৩৫

— আপু প্লিজ এই কাগজ টা ওই ওনাকে দিয়ে দিবেন…(অনেক আকুতি মিনতি করে আমার মিঃ কে দেখিয়ে বললো)
— আমিই কেনো…?আমি দিলে কি ওনি নিবেন…?(আমি)
— ওপস আপু একটু দিয়ে দিয়েন প্লিজ আপনি পারবেন।।।(বলেই মেয়েটা ভৌ দৌড়)
কাগজ টা আর খুললাম না।।।হাতের মুঠোয় রেখে দিলাম।।।।
বৌ বিদায়রে পর সবাই মিলে জোড় তুললো ঘুরতে যাবে কই যাওয়া এই নিয়ে মহা টেনশন।।একেক জন একেক জায়গার নাম বলে বেড়াচ্ছে…কেউ বলছে এটা তো কেউ বলছে ওটা।।।শুধু ডিসিশন টা নেওয়া হচ্ছে না।।।আমি মক্কেল দাড়িয়ে তাদের কান্ড দেখে বেড়াচ্ছি…..এর পাকে আমার ওনি যে কোন ফাঁক দিয়ে কোথায় হারিয়ে গেলো টেরই পেলাম।।আর এদিকে সবার হুইহুল্লোতে আর কোথায়ও যাওয়া হলো….যে যার মত গল্প বলে বেড়াচ্ছে।।। সবাই মিলে মজলিশ বসিয়েছে।।।।যে যার যার প্রেমে গল্প বলছে।।।।আমি শালার প্রেমের গল্প কোত্থেকে থাকবে আমি তো প্রেমই করি নি তাই কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করার সুযোগই পাচ্ছে না।।।।হুট করে একজন বলে উঠলো ওনার সাথে ঘটে যাওয়া বা ওনার সম্পর্কে কিছু বলতে….

— ওনাকে নিয়ে কি বলবো..আর কি-ই বা না-ই বলব..ওনাকে নিয়ে যতই বলি না কেন কম পড়ে যাবে।।।আমার শব্দভান্ডারে থাকা শব্দ গুলো যে অতি তুচ্ছ ওনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে।।।তবে এতটুকুই বলব আমার সেই শৈশব থেকে রাজপুত্রের স্বপ্ন ছিলো তা পূরণ হয়েছে।।। এখন শুধু ছোটো ইচ্ছে গুলো পূরণ করার পালা।।।(অনেক টা ভাবনার জগতে থেকে বলছি আমি হয়ত নিজের মাঝেও নেই))
— তার মানে তুই তোর রাজার রানী…(রিয়া)
— নাহ তো…রাজরানী আমি….(আমি)
— ওমা তাই বুঝি…
— হুম

ওরা শালা দুলাভাই নাকি খেলতে গিয়েছিলো…..
— আপু তোর জামাই কি করছে জানচ…?(অনেক অবাক হয়ে অনিক বললো)
— কিহ করছে…?
— আমার সাথে মাঠে গেলো…পরমালিটি মেইনটেইন করতে জিগাইলাম খেলবে ওনিও বললেন খেলবেন।।। পরে দেখি হালায় বোলিং যেমন তেমন ব্যাটিং তো সেই করে…পুরাই আগুন।।।।।তোর জামাই এত ভালো খেলে আগে বলবি না..তাহলে কি আর আমার চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা মিস করতাম এবার….(অনেক উৎফুল্ল হয়ে বললো অনিক বললো)
— ওও যে এত ভালো খেলে তোর থেকেই জানলাম….ওও কয়টা গোল করছে রে….?(অবাক হয়ে জিগাইলাম…আমার জামাই যে মাঠেরও খেলোয়াড় জেনে অবাক হলাম ভাবছিলাম ব্যাটা লুতুপুতু)
— ওই আপু তোর মাথা কি গেছে…তুই না আমার সাথে সবসময় খেলা দেখিস…? (অনিক আমার মাথায় একটা ঝাকি দিয়ে বললো)
— হুহ
— তাহলে তুই ক্রিকেট খেলায় গোল কই পাইলি… (অনিক)
— ওহহ।।তার মানে ওও আজকে মেসির মত ছক্কা মেরেছে তাই না…(খুশি হয়ে বললাম)
— আপা তুই ইশ্বর্দী পাবনা যা…তোর জন্য ডাক্তাররা অপেক্ষা করছে…

কথা টা বলেই অনিক চইলা গেলো…বুইঝতেই পারিলাম না আমি কি ভুল কহিলাম যে এমন রিয়েক্ট করল সে….আমি তো ঠিকই বলিলাম…নেইমার বল করে আর রোনালদো ছয় মারে….

রুমে বসে আছি আর ভাবছি।।।।আমার বরটাকে সারপ্রাইজ দিবো একটা কিন্তু কিভাবে দেওয়া যায়….কোনো আউডিয়াই মাথায় আসছে না।।।।উপস আমার মাথাটায় আজকে কি হয়েছে কিছুই আসছে…হুট করেই ওনি কোথায় থেকে আসলেন এসেই বললেন চলো….
— কোথায় যাবো….?(আমি)
— বাহিরে যাবো আজকে তোমাকে তো আমি..?(ওনার চোখ লাল হয়ে আছে…)
— আমাকে কি…?(কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম।।ভয়ে তো আমার যায় যায় অবস্থা।।।ওনি হুট করে এমন ভাবে রেগে গেলেন কেনো? কি করেছি আমি??ওনাকে এতটা রাগ করতে তো কখনো দেখি নি..?)
— তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো…?(সুন্দর একটা মুচকি হাসি দিলেন।।এই হাসিটার প্রশংসা আমি অন্য যেকোনো মুহুর্তে হলে নির্ঘাত এক পৃষ্টার উপরে লিখেও শেষ করতে পারতাম না তবে এখন পারছি না কিছু বলতে।।।সিচুয়েশন টাই যে এমন..)
— ওহহ…কই যাবেন…?(বড় করে একটা নিশ্বাস নিলাম…আমি সারপ্রাইজ দিবো ভাবছিলাম ব্যাটা এসে আমাকেই সারপ্রাইজড করে দিলো)
— হুম…

ওনি আর আমি হাত ধরে রাস্তার ধার ধরে হাটছি।।।পিছনে অনেকেই আছে।।। ওনিই ওদের সাথে করে নিয়ে এসেছেন।।।।হাত ছেড়ে ওনার বাহুটাকে জড়িয়ে নিলাম।।। খুব সুন্দর একটা অনুভূতি কাজ করছে মনের মাঝে।।।জানিনা ওনার কেমন লাগছে।।। হুট করে দাড়িয়ে গেলেন ওনি….সম্ভবত তিনি ৩০ সেকেন্ড দাঁড়ালেন এই ৩০ সেকেন্ডে খুব আলতো করে আমার কপালে একটা চুমু খেয়ে আবারো আমার হাতটা কে জড়িয়ে ধরে হাঁটতে শুরু করলেন।।।।প্রকৃতিও বোধয় আমার অনুভুতিটা বুঝতে পারলো।।।তাইতো মৃদু বাতাস বয়ে উঠছে।। মানুষ হয়ত একটা মানুষের সকলের কাজে মুগ্ধ হয় তখনই সে সেই মানুষটাকে অসম্ভব ভাবে ভালোবেসে উঠে।।।চাঁদ টাও আজ তার পরিপূর্ণ রূপে রূপান্তরিত হয়েছে।।যাকে পূর্ণিমার চাঁদ বলে।।।এই পূর্ণ চাঁদনী রাতে তার হাতে হাত রেখে হাঁটার আরো একটি অপূর্ণ ইচ্ছে আমার পূর্ণ হলো।।। এই মুহুর্তে নিজেকে ঐ পূর্ণিমা চাঁদের মতই লাগছে।। ঐ খোলা আকাশে থাকা চাঁদটাকে হাজারো তারা পাহারা দিয়ে যাচ্ছে তবে আমাকে পাহারার একটা তারাই যথেষ্ট।।। যে হাজার তারার চেয়েও শ্রেষ্ট আমার মানুষ।।। এই পথটা যদি না শেষ হতো।।।।।ইসসস ইচ্ছে করছে জুতো খুলে ফেলতে।।।।তাই অনিককে কাছে ডেকে তার জুতো গুলো দিয়ে বললাম দুরে সরে যেতে।।।
হুট করেই মাথায় ভুত চাপলো ওনার পায়ে পা রেখে তার কাঁধে হাত রেখে আমি তার উপর ভর রেখে দাড়িয়ে থাকবো ওনি হাঁটবেন।।। যেই ভাবা সেই কাজ…ওনিও দেখি কিছু না বলে আমার কোমরে জড়িয়ে হেঁটে চলেছেন।।।।দ্রুত হাঁটতে পারছেন না তবে হেঁটে যাচ্ছেন।।।।তার ধীরগতির কারণে পিছনের সবাই আমাদের নিকটে চলে আসলো তবে তারা কথা বলছে না।।।বলবে কেনো এমন দৃশ্য হয়ত তারাও উপভোগ করছে।।।ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।।।।

আমাদের এলাকার চা-দোকান টার কাছাকাছি আমাদের দাঁড় করিয়ে দুই শালা আর দুলাভাই গিয়ে ওয়ান টাইম কাপে করে চা নিয়ে আসলো।।।ইসসস এমন খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে প্রিয় মানুষটার হাতে হাত রেখে একই কাপে চা খাওয়ার মুহুর্ত টাই অন্যরকম।।।কেউ এমন মুহুর্ত অনুভব করে থাকলে সে বলতে পারবে তখন মনের অবস্থা টা কেমন হয়।।।।

রুমে

ওনি বিছানায় বসে মোবাইলে গেমস খেলছেন।।আর আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছি তখন নজর গেলো টেবিলের উপর রাখা ভাজ করা সেই মেয়ের দেওয়া কাগজ টার উপর।।। ইসসস মনের বেখেয়ালি তে ভুলেই গেছি।।।কাগজ টা হাতে নিয়ে ওনার কাধের উপর মাথা রেখে কাগজ টার ভাজ খুলতে খুলতে বললাম…
— দেখুন ঐ মেয়ে গুলোর মধ্যে একজন আমাকে যাওয়ার সময় আপনার জন্য এটা দিয়ে গেছে…
— তাই নাকি…কি লিখেছে একটু পড়ে শোনাও তো…(ওনি)
— হুহ..

প্রিয়,,,

অন্তরের অন্তরাল থেকে অশেষ ভালবাসা নিও।।।তোমার নামটা জানা হয় নি।।।তবে গতকাল যখন তোমাকে প্রথম দেখেছি তখনই আমার আখি জোড়া দমকে গিয়েছে।।।দমকে গিয়ে তখন হলুদের আসরে থাকা হানি সিং হের গান।।।শুধুই আমি দেখেছি তোমার প্রতি আমার পিছুটান।।জানিনা কে তুমি??কি তোমার পরিচয়??জানার মত সুযোগ হয়ে তোমাকে জিজ্ঞেস করার ভাষা খুজে পাই নি।।।যখনই পড়েছে নজর আমি তো হয়ে গেছি তোর।।।তোমার দৃষ্টিতে দমকে দাঁড়িয়েছে আমার সকল কর্ম।।।শুধু চেয়ে দেখেছি।।।শুধু এতটুকু তোমায় বলতে পারি তোমাকে প্রথম দেখায় হয়ে গেছে আমার লাভ অ্যাট পার্স্ট সাইড।।তোমার অনুভুতি জানার অপেক্ষা রইলাম।।।আমার টা তো আমি ব্যক্ত করলাম।।।যদিও এই কয়েক বাক্যে আমি আমার অনুভুতি ব্যক্ত করতে পারি নি কারণ সারাজীবন এমন করে হাজারো বাক্যও যদি আমি তোমার প্রেমের রচনা করি তবুও বোধয় আমার মনের প্রেমের অনুভুতি ব্যক্ত করা হবে না।।।

ইতি
০১৩১৬৭২৩**

চিঠি টা পড়েছি অনেক কস্টে।।।রাগে আমার পুরো শরীর টা গজগজ করছে…

— এই মাইয়ারে তো আমি খাইছি….ওরে আমি কালকে কি যে করবো…?ওরে তো আমি কাশের ঔষধ পুরোটা একসাথে খাওয়াবো।।।শালী শাঁকচুন্নি হিরো আলমের ১৪ নাম্বার বউ…তোরে আমি কাল তেলপোকার জোল খাওয়াবো…কেচোর মরিচ খাওয়াবো।।।।কুত্তি আমি তোরে তো টিকটিকির জুস খাওয়াবো দাঁড়া এখনি ধরছি আমি টিকটিকি…(কথা বলে বিছানা থেকে উঠতে যাবো তখনই ওনি আমার হাত ধরে ফেললেন)
— এগুলো কি ছিলো??(ওনি আমার দিকে বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন)
— কিহ…?(আমি রাগে আমার পুরো মুখ বোধয় লাল হয়ে গেছে)
— যাই ছিলো এখন ঘুমও কাল বৌভাতে গেলে যা করার কইরো…এখন ঘুমাও(বলেই আমাকে ওনার বুকের মাঝে নিয়ে মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন…)
— নাহ আমি এখনি টিকটিকির জুস রেডি করে রাখবো..বাসি হলে এটা সুস্বাদু হবে…(উঠতে গেলাম)
— ঐ ঘুমাও কিসব বকে বেড়াচ্ছে….আর এক বার এসব বললে তোমাকেই খাওয়াবো আমি…(মিস্টি ভাবে একটা ধমক দিলেন আমাকে)
— ইয়াক থু….এসব মানুষ খায়…?(আমার…বমির অবস্থা)
— তো তুমি ওরে খাওয়াবে কেনো..?(ওনি]
— ওও তো মানুষ না ও তো আস্ত একটা হিলু বিড়াল।।। ওও খেতে পারবে…কত বড় সাহস বেডি টার আমার বরকে প্রেমপত্র আবার নাম্বারও দিয়েছে…দাড়া তোকে এখনি আমি কল করে ফোনের বিতরই কেলাবো…?(ফোনটা হাতে নিতে যাবো)
— ঐ রাখো তোমার এসব ঘুমাও….(ফোনটা কেড়ে নিলেন আমার হাত থেকে)
— নাহ আমি… (আর কিছু বলতে পারলাম না ওনি আমার মুখটাই বন্ধ করে দিলেন…)

বৌভাতে এসে মাইয়াটারে না বেডি টারে খুঁজতেছি…হুট করেই কোথাকে এসে ওনাকে জড়িয়ে ধরে বসলো….এই অবস্থা তো দেখে তো আমার সেন্টিমিটার হাই বোল্টেজে রূপান্তরিত মাইয়াটার চুলের মুস্টি ধরে টান দিতে যাবো তখনই…

চলবে…

#মি_পার্ফেক্ট
৩৬

সকালে বিছায় বসে আছি

— কি ব্যাপার ম্যাডাম মোড অপ কেনো..((বুঝে গেলো তাহলে….)
— কই নাতো…(লুকানোর ব্যর্থ চেস্টা)
— তাই…আমি দেখতে এখানে কারো হৃদয় পোড়ার গন্ধে ভেসে আসছে…(ওনি)
— (চুপচাপ)
— আহারে তবে যার হৃদয় টা পুড়ছে তার হৃদয়ে আগুন টা ধরালোটা কে আর কেমনে…?(ব্যাটায় আমারে নিয়া মজা নিতাছে)
— আপনার খুব ভালো লাগে তাই না…?(চোখের কোণে এক বিন্দু জল এসে পাড়ি বাঁধলো… এই বুঝি তারা বাঁধ ভেঙে ঢলে পড়বে)
— আমার আবার কি ভালো লাগে…?(ওনি)
— কত মেয়ে আপনার প্রেমে পাগল…আপনাকে যেই দেখে সেই আপনাকে পেতে চায়…?(নাকটা বন্ধ আসছে)
— আমি কি করবো…এখানে আমার কি দোষ…?(ওনি)
— নাহ দোষ টা তো আপনার না…দোষ টা তো আমার আপনাকে বিয়ে করে আপনার দিওয়ানীদের পথের কাটা হয়ে আছি…(কথা গুলো বলছি ঠিকই তবে বুকের ভিতর টা ফেটে যাচ্ছে।।।সত্যিই খুব কস্ট হয় যখন নিজের মানুষটাকে নিয়ে কেউ টানাটানি শুরু করে। যখন তার কাছে অপশন বলে মনে হয় নিজেকে।। সবচেয়ে বড় কস্ট তো তখনই হয় যখন নিজের মানুষটার জন্য নিজের হাতে চিঠি তুলে বলে প্লিজ এটা ওনাকে দিয়ে দিবেন।।।।তখন মনে হচ্ছিলো এই বুঝি কেউ আমার কলিজাটা বের করে নিয়ে বলছে তাকে দিয়ে দিতে।।।জানিনা কেমন হয় এমন বারে বারে।।কি দোষ করেছি বিধাতার কাছে)
— ওমা তাই নাকি….(ওনি খুব অবাক হয়ে বললেন…যেন আসলেই আমি তার পথের কাটা হয়ে আছি।।।সত্যিউ যদি এমন হয় তাহলে মরে গিয়ে সরে যাবো…সুইসাইড করা লাগবে।।।যদি এমন টা ঘটার কোনো পূর্ভাবাস পাই যে তার সাথে থেকে তার ভালবাসার অনুভুতি হতে পারবো তখনই হয়ত দম বন্ধ হয়ে মরে যাবো।।)
— তাই তো মনে হচ্ছে।।। আপনি যদি চান তাহলে এখুনি সরে যা…(বাকিটা বলতে পারলাম না হুট করেই একটা চড় পড়লো আমার গালে…একটু জোরেই দিলেন।।।তবে চড়ের ব্যাথাটা কিছুই না।।।তবে মনে যে অনেল আঘাত পেয়েছি।।।। তার চড়টা আমাকে আরো এগিয়ে দিলো এটা বুঝতে যে আমি তার জন্য কিছু না।।।যদি কিছু না-ই বা হয়ে থাকি তাহলে এতদিন এতকিছু।।নিত্যনতুন অনুভুতির জন্ম কেনো দিলেন তিনি।।কেনোই বা এত স্বপ্ন আমায় দেখালেন…?)
— কি সমস্যা তোমার..?(ওনি)
— আমার তো কোনো সমস্যা নেই… সমস্যা তো আপনার হচ্ছে আমার জন্য… (চোখের জল মানে না বাধা যখন হয়ে যায় মনের ব্যাথা।।।।চাইলেও যে আটকে রাখা যায় না…অশ্রুজলের ধারা।।।দৃষ্টিকে চাইলে সরানো যায় তবে অশ্রু কে চাইলেও আটকানো যায় না)
— আরো একটা দিবো নাকি…?(হাতটা উচু করে বললেন…চোখে মুখে রাগের চাপ।।।বুঝলাম না উনার তো খুশি হওয়ার কথা রেগে যাওয়ার তো কথা না)
— হুম মারুন না….মারলেই বা কি…একটু ব্যাথাই তো পাবো…এর চেয়ে কত বড় ব্যাথা যে সহ্য করছি…(কান্নার আমেজ টা বেড়ে গেলো যতই চাচ্ছি কান্না টাকে দমিয়ে রাখতে।। পারছি না কিছুতেই)
— ঐ তুমি এতটা জেলাস হচ্ছো।। বিষয় টা সত্যিই আমার কাছে অনুভুতিময়…আর ভাবলে কি করে একটা মেয়ে হুট করে এসে আমাকে একটা চিঠি দিলো আর আমিও তার জন্য উঠে পড়ে লাগবো…?(ওনি হুট করেই আমাকে জড়িয়ে নিলেন।।।গায়ে আলতো করে একটা চুমুও দিলেন তবুও আমার মন কিছুতেই মানছে না…)
— একবার দিয়ে সে সার্থক না হলে আবার যে দিবে না তা কিন্তু আপনিও যে সাড়া দিবেন না তার ডাকে এমনটাও না…(ওনি জড়িয়ে নেওয়া তে আমার কান্না টা আরো বহু গুনে বেড়ে গেলো…হেঁচকি এসে গেছে)
— দেখো তো আমার বউয়ের অবস্থা টা।।।কোথা থেকে একটা মেয়ে এসে কি না কি বললো আর সে এটা নিয়ে কেঁদে সাগর বানিয়ে ফেলতেছে…(আমার চোখের জল মুছে দিলেন)
— তো কি করব আপনাকে হারানোর কথা যে চিন্তা করলেই আমার দম বন্ধ হয়ে আসে…আর…(বাকিটা বলতে দিলেন না)
— হিসসস…আর কোন কথা নয়….তুমি আমার।।। আমি তো তোমারই।।আছি থাকব।।।তাই ম্যাডাম এত কিছু ভাবারও দরকার নেই…(খুব মিস্টি ভাষায় বললেন)
— আমি যে কিছুতেই শান্ত থাকতে পারছি না….(আমি)
— কি করতে ইচ্ছে করতেছে…আর মাইয়া টাকে আস্ত করে কিলাইতে মন চাইতাছে…(আমি)
— কান্না করবা ঠিক আছে। কিন্তু মেয়েটাকে মারবে কেনো…?(ওনি)
— ওই মাইয়ার কত বড় সাহস আমার বরকে প্রেম পত্র দেয়….তখন যদি নগদে বুঝতে পারতাম এমন কিছু লিখা ছিলো ওই কাগজে তাহলে তখনই তারে রাম দোলাই দিতাম…(আমার কান্নার মাঝে রাগের চাপ সৃষ্টি হলো)
— থাক যা হওয়ার হয়েছে.. এখন এত কিছু ভেবে লাভ নেই…একটু রেস্ট নাও।।কিছুক্ষণ পর বৌভাতে যেতে হবে…(ওনি আমার চোখের জল মুছে দিয়ে বললেন)
— উহু আমি এখন কান্না করব আমার কান্না পাচ্ছে… আপনি শোন তো….(বলেই ওনাকে ধাক্কা মেরে বিছানায় শুইয়ে দিলাম)

ওনার বুকে মাথা রেখে কান্না করছি।।। ওনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।।খুব কস্ট হচ্ছিলো।।।ওনাকে হারাতে পারবো না।।।জানিনা কেনো এত ভালবাসি আমি আমার বর টাকে।।।শুধু এতটুকুই জানি ওনাকে ছাড়া আমার একটা মুহুর্তও চলবে না।।।

— ঐ শুনুন…?(ওনার বুকে মাথা রেখেই বললাম)
— হুম বলো…(ওনি)
— আপনাকে কাছে চাই…? (আমি)
— এখন কই আছি আমি…আর কতটা কাছে যাওয়া যায় এর চেয়ে…?(ওনি)
— উহু এমন টা…আই মিন…?(আমি)
— ইউ মিন কি…?(ওনি)
— আপনি বুঝছেন না…?(আমি)
— নাহ তো বুঝতে পারছি না….?(ওনি)
— আমি.. (দুর লজ্জার জন্য বলতেও পারছি না)
— শোনো যেমন টা চাও তেমন টা করো আমি কি নিষেধ করছি নাকি…তোমার যা ইচ্ছা করবে তাই করবে শুধু আমি ছাড়া অন্য কারো কথা না ভাবলেই।।আর আমি কস্ট পাবো এমনটা করতে পারবে না।।।যদি আমাকে কস্ট দিয়ছো তো…(ওনি)
— তো কি…?

বলেই ওনার মাঝে হারিয়ে গেলাম।।যেমন টা চেয়েছিলাম ঠিক তেমন টাই।।। বহুদিন পর ওনার ওমন স্পর্শ অনুভব করেছি।।।অনেক ভালবাসা পেয়েছি।।।কিছুক্ষণ আগের পাওয়া কস্ট গুলো একদম বিলীন হয়ে গেছে।। সত্যিই মনে যত কস্টই থাকুক না কেনো প্রিয় মানুষটার আলতো ভালবাসায় সকল কস্ট ধুয়ে মুছে যায়।।।ওনাকে কপালে একটা চুমু দিয়ে ধন্যবাদ বলে চলে আসলাম…

বৌভাতে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছি তখনই ওনি এসে আমাকে বললেন…
— দেখি সরে আমার বউটাকে আমি নিজ হাতে সাজাবো…

খুব সুন্দর করে ন্যাচালার ভাবে আমাকে সাজিয়ে দিলেন।।।ওনার রুচি এতটা ন্যাচারাল জানা ছিলো না।।।আজকাল কার ছেলে যে এতটা ন্যাচারাল পছন্দ করে আমার জানা ছিলো না।।।।আমাকে সাজিয়ে তুলে কপালে একটা চুমু খেয়ে বলে উঠলেন

— মাশাল্লাহ আমার বউকে একদম হুরের মত লাগছে।। আখিরাতে আল্লাহর কাছে তোমাকেই চাইবো কোনো হুরের প্রয়োজন পড়বে না শুধু তুমি হলেই চলবে।।চলবে না তোমাইকেই চাইবো(নিজের বরের মুখে এমন করে নিজের প্রশংসা আর তার এমন চাওয়ার কথা শুনলে সত্যিই প্রতিটা মেয়ে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভাগ্যবতী মনে করবে।।ঠিক আমিও নিজেকে অনেক ভাগেবতী মনে করছি।।ওনাকে নিজের স্বামী হিসেবে পেয়ে)
বৌভাতে এসে মাইয়াটারে না বেডি টারে খুঁজতেছি…হুট করেই কোথাকে এসে ওনাকে জড়িয়ে ধরে বসলো….এই অবস্থা তো দেখে তো আমার সেন্টিমিটার হাই বোল্টেজে রূপান্তরিত মাইয়াটার চুলের মুস্টি ধরে টান দিতে যাবো তখনই…

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here