#মি_পার্ফেক্ট,৩৯,৪০
আতাউর রহমান হৃদয়
৩৯
সেখানে আরো অনেক কিছুই হলো কোনো কিছুই গায়ে মাখালাম না।।।ওনি তো আমারই।।।তবুও আজ ওমার খবর আছে…
রুমে এসে শাড়ী খুলতেছি তখনই ওনি এসে আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলেন….
— খুলছো কেনো…ভালোই তো লাগছে….(আমার ঘাড়ে তার নাক ঘষতে ঘষতে বললেন)
— গরম লাগছে….দেখি ছাড়ুন…(আমি)
— উহু আমি ছাড়বো না…(তার দুস্টুমি চলছেই…তবে এই মুহুর্তে এসবকিছু আমার একদমি ভালো লাগছে না)
— ছাড়ুন তো সবসময় ন্যাকামি ভালো লাগে…(বিরক্তি নিয়ে বললাম
ওনিও দেখি কিছু না বলে ছেড়ে দিলেন।।।। ফ্রেস হয়ে এসে ওনি শুয়ে আছেন বোধয় ঘুমিয়ে পড়েছেন।।।
রান্না ঘরে আম্মু কাজ করছে….রাতের খাবার কি করবে তার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে…
— আম্মু আমার বিয়ের সময় আপনাদের জামাইকে কে কে দেখেছিলো…?(আমি আম্মুকে জিগাইলাম)
— সবাই তো দেখেছে…জামাই কি আর মুখোশ পড়ে বিয়ে করতে আসছিলো নাকি যে কেউ দেখতে পাবে না…(হায়রে খোদা আমি কি জিগাই আর ওনি কি উত্তর দেয়)
— আরে বিয়ের দিন না তো…বিয়ের আগে দেখাশোনা করছিলো না…যে ছেলে ভাল কি না…?ছেলে কি করে?? মানে ছেলের সম্পর্কে এসব কিছু কে দেখেছে…?(আমি)
— ওও তোর আব্বু আর অনিকই তো সব দেখলো…? তুই এখন এসব কিছু কেনো জানতে চাইছিস…?(আম্মু অনেক টা অবাক হয়ে বললেন)
— ওদের কি কোনো কান্ডজ্ঞাব নেই..?(আমি)
— আরে কি হয়েছে সেটা তো বলবি…?(আম্মু বিরক্ত হয়ে বললেন)
— কি হয় নাই সেটা বলো…?(আমি কান্নার ভাব নিয়া বললাম)
— আরে বলবি তো জামাই কি করছে…?(আম্মু একটু ভয় পেলেন আমার কান্নার আমেজের কারণে)
— নাহ ওনি কিছু করেন নাই…(আমি)
— জামাই কিছু না করলে কে কি করছে??আর তুই কাঁদছিস কেনো…?(আম্মু)
— আরে গত দুদিন ধরে কত কিছু ঘটে গেলো… আমি কাদবো না তে কি করব..?(আমার চোখের জল বেড়িয়ে পড়লো)
— কি ঘটেছে সেটা তো বলবি…?(আম্মু)
— আপনাদের জামাই যে দিকেই যায় সেদিকেই সব মেয়েরা তার দিকে তাকিয়ে থাকে…ওনাকে নিয়ে কত কথা বলে… (আমার সে কি কান্না)
— মেয়েরা তাকিয়ে থাকলে কি হয়েছে…? (আম্মু অবাক হলেন) <
-- হুহ শুধু কি তাকিয়ে থাকে...ওরা আপনাদের জামাইয়ের সাথে প্রেমও করতে চায়...(আমি)
-- ওমা কি বলিস...?জামাই কি বলছে...?(আম্মু এবার অনেক অবাক হলেন বটে)
-- নাহ ওনি তো কোনো মেয়ের দিকে তাকাই না....আর এসব কিছুতে তো কানও দেয় না..(আমি)
-- তাহলে ঠিক আছে... এত চিন্তা করিস না তো...জামাই আর তুই ঠিক থাকলেই চলবে...
একটা বরই গাছ থাকলে পথের লোকেও ঢিল মারে....তাই এসব নিয়ে এত চিন্তা করে লাভ নাই...তুই গিয়ে দেখ জামাই রুমে আছে কি না....থাকলে,,, চা টা নিয়ে যা....(আম্মু আমাকে পাঠিয়ে দিলেন রুমে)
আম্মুর কথা একটু স্বস্তি মিললো।।আমার এতটা ভয় পাওয়ার কারণ যখন বৌ ভাত থেকে আসছিলাম তখন কয়েকটা মেয়ে ওনার কাছে এসে ওনার ফোন নাম্বার চেয়ে বসলো।।আমি তার পাশেই ছিলাম।।।যদিও ওনি মেয়ে গুলো এড়িয়ে চলে আসলেন তবুও আমার মনে একটা অজানা ভয় কাজ করতে লাগলো।।।আমি উপস্থিত ছিলাম বলে হয়ত তিনি এড়িয়ে গেলে,,কিন্তু আমার অনুপস্থিতিতে যে ওনি এড়িয়ে তা আমার বুঝে আসছে না....
এতটুকু বিশ্বাস কেনো যে আমি করতে পারছি না ওনাকে...আমার মাথায় আসছে না???ভালাবাসা কিংবা যে কোনো সম্পর্ক ঠিকে থাকে বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে।।।আমার তো তার প্রতি অঘাত বিশ্বাস রয়েছে কিন্তু আজ কেনো নয়...?হয়ত গত দুদিন আমার সামনে দিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো আমাকে বিষন্ন করে তুলছে।।।।
এ আমি কি করছি আমার মানুষটা কে আমি সন্দেহ করছি...? কি করে ভাবছি আমি ওনি আমার অঘোছরে কাউকে নিজের আঙিনায় ঠাই দিবেন..?
রুমে এসে দেখি ওনি এখনো ঘুমিয়ে আছেন.... ওনাকপ জেগে তুললাম না....নিজেও তার পাশে শুয়ে পড়লাম....ওমা দেখি ব্যাটায় আমাকে জড়িয়ে ধরলো....সাথে একটু সুড়সুড়িও দিলো....
-- আউচচচ।..(আমি)
-- কি হলো...ব্যথা পেলে নাকি....?(ঘুম ঘুম কন্ঠে....ঘুমের কন্ঠে যে ওনার ভয়েস টা এতটা রোমান্টিক লাগে আগে জানতাম না...উপসস ক্রাস খেলাম)
-- কুতুকুতু কেনো দেনন..?(আমি)
-- আর একটু দিই...?(ওনি একটা মুচকি হাসি দিলেন)
-- এ না না....(বলেই আমি দৌড়ে চলে যেতে লাগলাম ওনি আমাকে টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন)
-- পালাচ্ছো কেনো গো...?(ওনি)
-- তো কি করব..?আপনি সুড়সুড়ি কেনো দিচ্ছেন...?(আমি)
-- আচ্ছা দিবো না এখন আর...?(ওনি)
-- তার মানে পরে আবারো দিবেন...?(স্যাড মুড নিয়ে)
-- হুহ..(ওনি)
-- নাহ এই বিচার জনগণ সহ্য করবে না...(আমি)
-- জনগনের সহ্য করার দরকার নেই আমার বউ আমার অনু সহ্য করলেই হবে....(ওনি)
-- উহহ আসছে সহ্য করাতে..(আমি)
ওনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে ফ্রেস হতে গেলেন...আমি এই ফাঁকে চা টা আনতে গেলাম....
-- তৈরি হয়ে নাও....(ওনি চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন)
-- কেনো...?(আমি)
-- বাড়ি যেতে হবে না...?(ওনি)
ওনার হাত থেকে চায়ের কাপ টা নিয়ে আমিও একটু খেলাম ওনার চুমুক দেওয়া জায়গাটায় চুমুক দিলাম মনে এক অন্যরকম অনুভুতির জন্ম নিল।।
-- আর দুদিন থাকি না এখানে...?(অনুরোধের ভাষায় বললাম)
-- আর তো থাকা সম্ভব হচ্ছে না...ব্যবসা গুলো তলিয়ে যাবে আর একদিন যদি এখানে থাকি...(ওনি)
-- দুদিন থেকে গেলে কি এমন হবে...?(আমি)
-- অনু দেখো তুমি চেয়েছো বলে আমি গত তিনদিন থেকে গেলাম কিন্তু আর যদি এখানে থাকি তো লোকসান গুনতে হবে অনেক...ঐ ব্যবসা গুলোই দিনশেষে আমাদের পেটের খোরাক জোগায়...(ওনি)
-- যাই হোক আমি যাবো না...আমি আরো দুদিন থাকবো....আর আপনাকেও থাকতে হবে...(আমি খুবই কড়া গলায় বললাম...)
-- অনু একটু বুঝতে চেস্ট করো....(ওনি আমাকে অনুরোধ করছেন)
-- আমি কিছুই বুঝতে চাই না....(আমি)
-- আচ্ছা তুমি থাকো আমি যাচ্ছি... (ওনি)
-- নাহ হবে আপনিও থাকতে হবে...(আমি)
-- আমি থাকছি না তুমি থাকো....(ওনি)
-- এত তাড়া কিসের....কেউ অপেক্ষা করছে নাকি...?(আমি)
-- কি...?(ওনি)
-- আপনার জন্য তো কত জনেই পাগল হয়ে যায়...অনেকেই তো অপেক্ষা করতে পারে আপনার জন্য।।। তার জন্যই বুঝি এত তাড়াহুড়ো...?(আমি)
-- কিসব বলছো??একবার বললাম না আমার ব্যবসা গুলো দেখার মত আমি ছাড়া আর কেউ নেই...?(ওনি)
-- ব্যবসা তো বাহানা মাত্র...ব্যবসার নামে যে কারো সাথে প্রাইভেট টাইম স্পেন্ড করবেন না তার গ্যারান্টি কি...?(আমি)
-- অনু তুমি এসব কি বলছো...?(ওনি)
-- ঠিকই তো বলছি আপনার তো নাগরিনীর অভাব নেই...?(আমি)
-- তুমি কিন্তু সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছো অনু...?(ওনি..)
-- সত্যি কথা বললে সীমা অতিক্রম হয়ে যায় তাই না..?(আমি)
-- এসব কি শুরু করলে তুমি...? (ওনি)
-- আমি নয় আপনি শুরু করেছেন...?(আমি)
-- অনু...(ওনার চোখ গুলো যে লাল হয়ে গেছে)
-- কিহ...আপনার লজ্জা করে না বউ থাকতে পরকি.........-------
বাকিটা বলতে পারি নি এর আগেই ওনি আমার...
চলবে......
#মি_পার্ফেক্ট
৪০
-- কিহ...আপনার লজ্জা করে না বউ থাকতে পরকি.........-------
বাকিটা বলতে পারি নি এর আগেই ওনি আমার গালে তার হাতের আলতো ছোঁয়া দিলেন। যা হয়ত দেখতে চড়ের মত দেখায়। তবে ব্যাথা অনুভব হয় নি আমার। তার এমন টা করার উদ্দেশ্য বোধয় আমাকে চুপ করানোর জন্যই ছিলো....
-- তুমি যা কয়দিন ইচ্ছে থাকো....আমাকে যেতে হবে প্লিজ বিষয় টা বুঝতে চেস্টা করো....(আমার দু গালে হাত দিয়ে নিজের কপাল টা আমার কপালের সাথে ঠেকিয়ে বললেন)
-- কিছুই বলছি না আমি...
আম্মু আব্বুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ওনি চলে গেলেন।। আমি রুমেই বসে আছি।। ভালোই লাগছে না কিছু।।।কিসব বলে ফেলেছি তাকে।।।আমার এসব কিছু বলা যে একদমই ঠিক হয় নি।।। তখন যে আমার কি হয়ে গেছিলো নিজেই জানি না।।।একটা মানুষ আমাকে কতটা ভালবাসে সে নিজেও প্রকাশ করতে পারে না।।।আর আমি কি না সেই মানুষটা কে কি থেকে কি বলে ফেলেছি।।।
-- আসসালামু আলাইকুম আপু(ননদী কে কল দিলাম....আমরা যেদিন আমরা এই বাড়িতে এসেছি তার আগের দিনই ওনি আপুকে ফোন দিয়ে বাড়িতে আসতে বলেছেন।।। নিজের মাকে একা কখনো বাড়িতে থাকতে দেন না..)
-- কেমন আছো ভাবি...?(আপু)
-- আলহামদুলিল্লাহ আপনি কেমন আছেন..? (আমি)
-- আলহামদুলিল্লাহ...তুমি আসো নাই যে.....(আপু)
-- আসলে আপি আমার না...(আমাকে বলতে না দিয়ে আপু বলে উঠলেন)
-- বুঝতে পেরেছি তোমার থাকতে ইচ্ছে করছে....থাকো...আমারো ইচ্ছে করে বাবার বাড়ি থাকতে...এমনটা সব মেয়েরই হয় তবে হ্যাঁ বেশি থেকো না। যেহেতু ভাইয়া বাড়িয়া বাড়িতেই থাকে....(আপু খুব সুন্দর করে বুঝলেন। আমাকে এটাও বুঝিয়ে দিলেন এই কিছু কথার মাঝে যে,,, বেশিদিন এখানে থাকলে স্বামীর অযত্ন হবে যেটা ভালো দেখায় না)
-- আচ্ছা আপু...(আমি...ভদ্র মেয়ের কন্ঠে)
-- হুম...
-- আম্মু কেমন আছেন..?(আমি)
-- ভালো তোমাদের বাড়ির সবাই কেমন আছেন..? (আপু)
-- হুম ভাল...আপু আপনার ভাই কোথায়..?(আমি)
-- ওহহ হ্যাঁ ভাল কথা...ভাইয়ার মেজাজ খারাপ দেখলাম...?(আপু)
-- কেনো..?(আমি)
-- প্রশ্ন টা তো আমারও তোমার সাথে কোন ঝামেলা হয়েছে নাকি...?(আপু)
এই আপু কিছু বুঝে ফেললো নাকি...)
-- কই নাতো....?(আমি লুকানোর চেস্টা করলাম)
-- ওহ...দেখলাম বাসায় আসলো আম্মুর সাথে দেখা করে। তাড়াহুড়ো করে কয়েকটা ফাইল নিয়ে দ্রুত চলে গেলো...(আপু)
-- ওও হ্যাঁ যাওয়ার সময় আমাকে বললো ওনার ব্যবসার কি যেন ঝামেলা হয়েছে.... (আমি)
-- কি ঝামেলা হয়েছে বললো কিছু তোমায়..?(আপু)
-- না তো আপু...(আমি)
-- এই ভাইয়াটার না একটা রোগ কাউরে কিছু কইতে চায় না...সব নিজে সহ্য করবে তবুও বলবে না....
( এই আম্মু তুমি কার সাথে কথা বলছো)
নীলু কোথা থেকে আপুকে প্রশ্ন টা ছুড়ে মারল আমি ফোনের এপাশ থেকে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি
-- তোমার মামির সাথে....(আপু বললো)
-- এই মামি তুমি আসলে না কেনো...(নীলু বোধয় ওর মায়ের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বললো)
-- তোমার মামা আমাকে নিয়ে গেলো না আমি আসব কি করে বলো...(আমি)
-- আচ্ছা দাড়াও মামু আমার আজ আসুক বাসায় তাকে বুঝাচ্ছি মজা...(নীলু খুব সুন্দর করেই বললো)
-- কি বুঝাবেন আম্মু.. (আমি)
-- আমার শাশুড়ী কেনো আনলো না...?(নীলু)
-- আমি আবার তোমার শাশুড়ী হলাম কবে...?(পুচকি টার কথা শুনে আমি হতবাক)
-- হও নাই তবে হবে....(নীলু)
-- ওমা তাই নাকি...?(অবাক হয়ে বললাম)
-- হুম তুমি তাড়াতাড়ি আমার বর কে নিয়ে আসবে...(হুকুম করছে)
-- আমি কিভাবে আনবো....?(আমি ওর কথা গুলে শুনছি আর অবাক হচ্ছি)
-- সেটা তুমি জানো... (নীলু)
-- আমাকে না বলে তোমার মামা কে বলো। সে-ই চাইলেই তুমি তোমার বর কে পাবে...(আমি)
-- আচ্ছা আমি মামাকে বলছি....
-- আচ্ছা গো মাই ডিয়ার প্রিন্সেস (আমি)
-- মামি তাড়াতাড়ি এসো মিস করছি তোমাকে....(নীলু মন খারাপ করেই বললো)
-- আমিও তোমাকে করছি মামণী..(আমি)
-- আচ্ছা শোনো নানুর কাছে যেতে হবে একা বসে আছে আমার সতীন টা(কথা টা বলেই ফোনটা কেটে দিলো সে)
বাড়ির ছোট পিচ্ছি গুলাই মাঝে মাঝে মন টা ভালো করে দিতে জানে।।এদের মাঝে আলাদা একটা জাদু থাকে।।আর নীলু টা তো একটা কিউটের ডিব্বা।।।যেমন সুন্দর করে কথা বলে তেমনি তার চোহারা।।। আমি একটা কথা বুঝলামনা ? আমার বরের পরিবারের সবাইর গায়ের রং দুধে আলতা আমার বর টা কোথা থেকে এমন কালো হলো।।।যদিও এতটা কালো নয় তবে ওদের পরিবারের অন্যদের তুলনায় সে কালোই বটে।।।যতই সে কালো কিংবা শ্যাম বর্নের হোক তার মাঝে আলাদা একটা মায়া আছে।।।।
রাতের সময় বোধয় ১১ টা।
খাওয়া শেষ করে ছাদের এক কোণায় বসে আছি।।। আজকে চাঁদ মামা নেই হয়ত সে বিশ্রামে আছে।।গত কদিন আগেই যে পূর্ণিমা গেছে।। চাঁদ মামা নেই তবে তার প্রহরী রা ঠিকই তার জন্য অপেক্ষা করছে।।।আকাশে হালকা কালো মেঘের আবছা দেখা যাচ্ছে।।। হয়ত কিছুক্ষণের ভিতর পূর্ণ কালো মেঘে ঢেকে যাবে আকাশ টা।।।
ঝিঁঝি পোকাদের ছোট ছোট শব্দ গুলো একত্রিত হয়ে একধরনের ঝিঝি শব্দ তৈরি হচ্ছে।। গভীর রাতে এই শব্দ গুলোর সাথে সময় কাটানোর মাঝে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে।।।আগে যখনই রাতে মন খারাপ হতো তখনই এমনটা করতাম আমি।।আজও তার ব্যতিক্রম হলো না।।। হুট করেই ফোনটা বেজে উঠলো...
-- আসসালামু আলাইকুম... (ওনি ফোন দিয়েছেন)
-- ওয়ালাইকুম সালাম... কি করছো... (ওনি খুব মিস্টি ভাষায় কথা বলছেন...)
-- হুম বসে আছি...আপনি...(আমি)
-- এত রাতে ছাদে কেনো...?(ওনি বুঝলেন কি করে)
-- আপনি কি করল বুঝলেন...? (অনেক অবাকই হলাম...ওনি বুঝলেন কি করে আমি এখন ছাদে আছি..)
-- গভীর রাতে ছাদ প্রিয় মানুষ টাকে বলতেছো কি করে বুঝলাম...(ওনি)
-- তাই নাকি...তবুও বুঝলেন কি করে..?(আমি)
-- ঝিঁঝি পোকাদের শব্দ শুনে।ফোনের এপাশ থেকে খুব স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে..(ওনি)
-- ওও(আমি)
-- খাওয়া খাইছো নাকি খালি পেটেই মেঘলা আকাশের আগমনের অপেক্ষা করছো...?(ওনি)
-- খেয়েছি... আপনি খেয়েছেন..?(আমি)
-- হুম খেলাম...মন খারাপ করে আছো কেনো এখনো...?(ওনি)
-- জানিনা...আচ্ছা আপনি কখন ছাদে যান নিশ্চয়ই মন খারাপ থাকলে...তাহলে তো আপনিও মন খারাপ থাকে...?(আমি)
-- হুম...(ওনি)
-- নিজের যে মন খারাপ এটা বলছে না আমাকে জিজ্ঞেস করতেছে আমার কেনো এখনো মন খারাপ...?(আমি)
-- আমার তো মন খারাপ হওয়ার একটা কারণ আছে তোমার মন খারাপ হওয়ার কারণ কি...?(ওনি)
-- আপনার মন খারাপ কেনো...?(আমি)
-- বউ টা যে পাশে নেই..(ওনি)
-- ওও
-- তোমার কেনো..?(ওনি)
-- আমারো বর কাছে নেই তাই...(আমি)
-- মিস করছো বুঝি..(রোমান্টিক সূরেই বললেন..এমন করে কথা বলা শুনলেই মনটা জুড়িয়ে যায়)
-- হুম..
-- জানো আকাশ টাও না হয়ত আমার মনের আমেজ টা বুঝতে পেরেছে তাই তো সেও আমার আগমনের সাথে সাথে নিজেকে আমার মনের সাথে মিলিয়ে নিলো...(ওনি)
-- জানেন ইচ্ছে করছে আপনাকে এই মুহুর্তে কাছে পেতে।।আপনার কাধে মাথা টা রেখে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ টায় একটা একটা করে মেঘের আড়ালে হারিয়ে যাওয়া তারা গুলো গুনতে(আমি)
-- ইসস আজ থেকে যাওয়া উচিত ছিলো বউটার এমন ইচ্ছা টা তো অন্তত পূর্ণ হতো...(ওনি আপসোসের ভাষায় বললেন)
-- পূর্ণ হবে বলেই তো চলে গেলেন...ও হ্যাঁ আপনার ব্যবসায়িক ঝামেলা মিটল(আমি)
-- হুম মিটেছে..তবে কালকে একটু ব্যাংকে ঝামেলা আছে...ম্যানেজার গড়মিল পেতে রেখেছে আমাদের শেয়ারদারদের হিসেবে..(ওনি)
-- ওহহ..শুনুন না...(আমি আস্তে করে অনুরোধের ভাষায় বললাম)
-- হুম বলো...(ওনি)
-- সরি তখনকার ব্যবহারের জন্য... (আমি)
-- সরি না বলে ভালবাসি বললে খুশি হতাম..আর তোমার ওমন ব্যবহারে যদি কস্ট পেয়েও থাকি ওটা আমার ভালবাসার কাছে পরাজিত হয়ে এতক্ষণে ভালবাসার পাহাড় হয়ে গেছে...আর তুমি এমনটা ভালবাসার দিক থেকেই করেছো...হয়ত একটু বেশিই ভালবাসো তাইতো আমার পাশে কাউকে সহ্য হয় না...(ওনি...ইসস োকটা এমন কেনো..?কতটা বুঝের মানুষ।।চাইলেই তো অন্যভাবে নিতে পারতেন।।অন্য কেউ হলে বিষয়টাকে খুব বড় কিছু করে ফেলতো।।কিন্ত ওনি খুব সহজেই পজিটিভ ভাবে নিয়ে নিলেন)
-- আপনার পাশে কেনো..?আপনার দিকে কেউ নজর দিলেও সহ্য হয় না...(আমি)
-- তাই নাকি..তাহলে এক কাজ কইরো.. আমাকে তোমার আঁচলে বেঁধে রেখো...(ওনি)
-- প্রয়োজনে তাই করব...দরকার পড়লে হিজাব বেঁধে আপনাকে বাহিরে পাঠাবো..(আমি)
-- থাক বাবা এমন টা করার দরকার নেই।।।মাক্স পড়ে ঘুরবো...এতে চলবে তো..(ওনি)
-- হুম চলবে...(আমি)
-- হুহ...
-- ভালবাসি আপনাকে...(আমি)
-- আমিও....(ওনি)
-- আমিও কি...?(আমি)
-- ভালবাসি নীলু মামি কে...?(ওনি)
ওনার সাথে সাথে বলতে রুমে চলে আসলাম।।।কখন যে রাত তিনটে বেজে গেলো খেয়ালই হয় নি।।। আসলে প্রিয়জন যখন দুরে যায় তখন তার শূন্যতায় ভালবাসার উপলব্ধি টা বেশি কাজ করে।।।বিকেল থেকে যদিও মন টা খারাপ থাকে এখন ঘুমানোর সময়ে মনটা আনন্দে ভরে আছে। ভেবেছিলাম ওনি হয়ত কলই দিবেন না।।আমার সাথে কথা তো দুরে থাকুক।।কিন্তু না আমার ভাবনা টাকে ওনি আবারো ভুল প্রমাণিত করলেন।।
সারাদিন সবার সাথে এদিক সেদিক ঘুরে আর হইহুইল্লোই ব্যস্ততায় দিনটা কেটে গেলো।। এর মাঝে ওনার সাথে বার কয়েক কথাও হয়েছে।।।
মাগরিবের আজান দিবে তখনই হুট করে আমার চোখটা আমাদের বাড়ির রাস্তা টায় আটকে গেলো নিজের চোখ টাকে বিশ্বাস করতে পারছি না...
চলবে..