#মি_পার্ফেক্ট
পর্বঃ ০১,০২,০৩
আতাউর রহমান হৃদয়
০১
পিরিয়ড অবস্থায় বাসর ঘরে বসে আছি। অসহ্য লাগছে। ন্যাপকিন টাও বোধয় ড্যামেজ হয়ে আসছে। সময় টা হয়তো সাড়ে এগারো টা ছুই ছুই। বর টাও আসার কোন খবর নেই। চৈত্র মাসের প্রায় শেষদিক চলছে। আজকে হয়তো কালবৈশাখী ঝড় উঠতে। আমার আবার একটা ঝড়ের সময় ভয়টা একটু বেশিই লাগে। আজ প্রথম রাত বিয়ের। মানুষটাকে আজই প্রথম দেখেছি বিয়ের সময় আর দেখা হয় নি। বাবাই বিয়ের সব কথা পাকাপোক্ত করেছেন। বাবার প্রতি বিশ্বাস ছিলো এবং আছে। তিনি আমার কোন খারাপ মানুষকে চুজ করতে পারেন না। তবুও এই অবস্থায় নিশ্চয়ই তিনি যদি তার পুরুষত্বের প্রভাব টা ঘাটায় তাহলে অনেক কস্টকর হয়ে যাবে। বিশ্বাস তো আর করা যায় না।
খুব অসস্তি লাগছে। সেই এগারো টা বাজে এই বদ্ধ ঘরটায় আমায় রেখে গেছেন আমার ননদী। তার আচরণ টা তে বুঝতে পেরেছি আটদশ টা ননদের মত তিনি নন। বাকীটা পরে বুঝা যাবে।
মনে আশঙ্কা। শরীর টাও ভালো লাগছে না। মনে এতটা আশঙ্কা থাকতো না। যদি না শরীর টা ভালো থাকতো। আতঙ্ক টা ক্ষনে ক্ষনে বেড়েই চলেছে। অচেনা একজন মানুষ। তার উপর ওনার পুরো অধিকার আছে আমার উপর। যদিও আমারও আছে তার প্রতি। তবুও সে যদি চায় আমি কি না করতে পারবো। সে তো আর একটা মেয়ের এই অসহ্যনীয় যন্ত্রণার কথা টা বুঝতে পারবে না। সে তো নিজের ক্ষুদা টা নিবারন করবে। এতে যে আমার জীবনটা বেরিয়ে যাওয়ার মত অবস্থা হয়ে যাবে।
ঘড়ির কাটা এখন এগারো টা বেজে পঞ্চাশ মিনিট। বাহিরে ঝুম বৃষ্টি সাথে অতি বেগে বাতাসও বইছে। একলা ঘরে বসে আছি। ঘরটা মোটামুটি ভালো করেই ফুল দিয়ে সাজানো। খুব সুন্দর সুগন্ধ আসছে ফুলের।
হুট করেই ঘরের দরজা টা খুলে কেউ একজন কাকভেজা হয়ে রুমে প্রবেশ করলো। হাতে একটা বাক্স আর একটা শফিং ব্যাগ।
দেখেই বুঝতে পারলাম এতক্ষণ যার জন্য এই একলা ঘরে অপেক্ষা করছিলাম ওনিই সে মানব।
আমার হাতে শফিং দিয়ে বলে উঠলো…
ওনিঃ ওয়াসরুমে গিয়ে চেঞ্জ করে আসো।
মুখ দিয়ে কিছু না বলে মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ সম্মতি জানিয়ে ওয়াসরুমে আসলাম।
ব্যাগটা খুলে দেখলাম। একটা সুতি ওয়ান পিচ জামা সাথে একটা প্লাজু সাথে একটা প্যাকেট করা জিনিস। প্যাকেট খুল দেখি যে একটা ন্যাপকিনের প্যাকেট। কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ হয়ে ঠাই দাড়িয়ে রইলাম। মাথায় কিছুই আসছে না। লোকটা বুঝলো কি করে…?
আর কিছু ভাবতে পারবো না…বেরিয়ে একবারে জিগ্যেস করে নিলে জানা যাবে। এই মুহুর্তে আমার কাজ আমি করি।
চেঞ্জ করে এসে দেখি ওনিও ভেজা জামা চেঞ্জ করে একটা সেন্টু গেঞ্জি গায়ে দিয়েছেন। সাথে একটা লুঙ্গি পড়েছেন পুরোই বাঙালী।
বডি টাও জোস বানিয়েছে। শ্যাম বর্ণের মানুষ টা। মুখে তেমন দাড়ি নেই। থুতনিতে হালকা কিছু দাঁড়ি ছোট ছোট।
ফোনে কি যেন করছিলো।
উহুম…
এভাবে গলা ঝাকা না দিয়ে মুখ দিয়ে কথা বলতে কি কোনো সমস্যা..? (ওনি)
নাহ তা না…
তাহলে…
কিছু না…
কিছু বলবে..?
হুহ..
বলো..
আমার যে ওটা লাগতো।। আপনি বুঝলেন কি করে???(আমি)
বিয়ের সময়…তোমার অস্থিরতার দ্বারাই বুঝতে পেরেছি…
অস্থিরতাটা হয়তো অন্য দিক থেকে ছিলো…?
তবে বসতে আনইজি ফীল করাটা..?(ওনি)
হুম…
বসা থেকে উঠে টেবিলের উপর থাকা বাক্স টা খুলে। আমায় কাছে ডাকলো।।।
একটা কেক রাখা।
শুভ জন্মদিন মিস অনু…
অবাক হয়ে লোকটার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম…লোকটা জানলো কি করে যেখানো আমি নিজেই ভুলে গিয়েছি আজ আমার জন্মদিন।
পরপর দুইটা বিস্ময় আমায় বিস্মিত করে দিয়েছে।
সরি তোমাকে একটু বেশিই ওয়েট করতে হয়েছে। শুধু কেকটা হলে বন্ধু দের বললে ওরা নিয়ে আসতো তবে তোমার অতি প্রয়োজনীয় জিনিস টা তো ওদের দিয়ে আনাতে পারি না…(ওনি)
আপনি জানলেন কি করে আজ আমার জন্মদিন…? (অবাকের স্বরে)
নিকাহ নামাতে স্বাক্ষর করার সময় তোমার জন্মতারিখ টা আমার চোখে পড়েছিলো….ভাবলাম আজ রাত টা এই বিষয় নিয়ে অন্তত স্মৃতিময় করা যেতে পারে….
(ওনি)
লোকটার কথা বলার অঙ্গিভঙ্গি গুলো দেখছি আর অবাক হচ্ছি। অবাক হওয়া কি সত্যের নাকি তাকে আমার মনে ধরেছে।
কেকটা কেটে একে অপরকে খাইয়ে দিলাম।
শোনো ঘুমিয়ে পড়ো তোমার ঘুমানোর দরকার…(ওনি)
আপনি ঘুমাবেন না….
হুম
দুজন ঘুমিয়ে পড়েছি।
সকালে ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথেই অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম কিছু বলার ভাষা আমার নেই…
চলবে…
ইনশাআল্লাহ
#মি_পার্ফেক্ট
পর্বঃ ২
আতাউর রহমান হৃদয়
সকালে ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথেই অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম কিছু বলার ভাষা আমার নেই…
লোকটা কোলবালিশ টাকে জড়োসড়ো ভাবে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে মনে হচ্ছে এইটাই তার স্ত্রী আমি কেউ না। তবে যাই হোক অসম্ভব লাগছে। ইচ্ছে করছে গালে একটা চুমু খাই বাট খাইতে পারছি না।
উঠে ফ্রেস হয়ে নিলাম…ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে আছি গুনগুন গান গাইছি।।।। নিজেকে অনেকটা খুশি খুশি লাগছে। কেনো লাগছে জানি না।
সকাল ৬ টা বেজে ৩০ মিনিট লোকটা উঠে ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে গেলো শাশুড়ী মা খেয়ে যেতে বললো খেলো না….
শাশুড়ী মা কাজ করছে ওনি ডেকে ওনার পাশে বসালেন।
— খারাপ লাগছে নাকি বউমা…?(শাশুড়ী)
— নাহ…(কিছুটা কাঁপা কাঁপা গলায়…নতুন জায়গায়…নতুন মানুষ কাউকেই চিনি না…শাশুড়ী মা আসার পর থেকে এই প্রথম বাক্যের কথাটি আমার সাথে বললো। তাও কি একটা প্রশ্ন)
— বুঝলে বউমা…তুমি হয়তো মুখে না বলছো তবে আমি বুঝতে পারছি…এক সময় আমিও তোমার এই বাড়িতে নতুন বউ হয়ে এসেছিলাম। আমারও মনের মাঝে একটা জড়তা কাজ করেছে। একটা সময়ের পর দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। আর শোনো আমার ছেলেটাকে নিয়ে বেশি ভাবতে যেয়ো না….
(শাশুড়ীর চেহারার দিকে তাকিয়ে রইলাম কি বললেন ওনি বুঝতে চেস্টা করছি)
— বুঝতে পারো নি তো…জানো আমার ছেলেটা অতি দুস্টু আবার গম্ভীর ওকে বুঝা আমার বড় দায়। কোনো দায়িত্বে তার বাবার দিক থেকে কম নয়। বাড়ির সব টা সে সামলো নিতে পারবে। তুমি শুধু ঘরটা সামলাতে পারলেই হবে। ধীরে ধীরে সব বুঝে যাবে।
— হুহ(মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি পোষণ করলাম)
— ঐ যে লবনের কোটো টা দাও তো…
— শোনো বউমা…আমার ছেলেটা রুটি গুলো পাতলা আর গোল সাথে নরম খেতে পছন্দ করে। তাই ও খেতে আসলে তারপর তা দিয়ে গরম গরম খেতে দিবা। আজ বলে দিলাম। মনে রাখবে কথাটা। সে কিন্তু খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে খুব সেনসেটিভ। নিজের মত করে খায়।
(লোকটার ব্যাপারে এই প্রথম কোন কথা জানলাম তার অভ্যাসের। শাশুড়ী মায়ের কথা শুনে বুঝলাম শাশুড়ী মা আমার থেকেও বেশি শিক্ষিত। ভালোও বটে নাহয় এরকম সান্তনা হয়তো কোনো শাশুড়ী তার পুত্র বধুকে প্রথম দিনেই দেয় না। ওনার কথা গুলো শুনে মনের মাঝে থাকা ডিপ্রেশন গুলো কিছুটা কমেছে।)
হুট করে একটা বাচ্ছা মেয়ে বয়স ৬ কি ৭ বছর হবে দৌড়ে এসে আমার হাত ধরে বললো “ঐ উঠো.. ”
শাশুড়ীর সামনেই বসা আমি…
— হোনা তুমি এটা কি করছো..?
— ঐ সতীন তুমি কথা বলবা না..আমি আমার ছেলের বউকে নিয়ে ঘুরবো…তুমি কথা বলার কে..?
— যাও বউমা ওর সাথে যাও। ও হ্যাঁ এটা কিন্তু আমার ছেলের মা…অর্থাৎ তোমার ননদীর মেয়ে…
— তোমাকে আর ইন্ট্রোডাকশন দিতে হবে না।।।আমি আমার পরিচয় জানি…চলো তো মামি….
( মেয়েটার মুখের ভাষা আর মাধুর্যতা দেখে আমি অবাক…কত সুন্দর করে কথা বলে এতটুকু বাচ্ছা একটা মেয়ে..)
— তোমার নাম কি গো আম্মু…?(আমি)
— সাদিয়া ইসলাম স্বপ্নীল…মামা আমাকে নীলু বলে ডাকে…তবে তুমি যে আম্মু বললে না মামাও বেশিসময় আম্মু বলেই ডাকে…
— আর আমার নাম…(আমাকে ধামিয়ে দিয়ে বলে উঠলো)
— অনুরীমা…
— তুমি জানলে কি করে..?
— তোমাকে প্রথম দেখতে আমি আর আম্মুই গেছিলাম…জানে মামা আম্মু জিগ্যেস করে নি তার পছন্দ হয়েছে কি না তোমাকে…আমাকে জিগ্যেস করেছিলো যে মামি হিসেবে তোমাকে পছন্দ হয়েছে কি না.. তুমি তো আমাকে চিনার কথা চিনলে না।।।চিনবে কি করে..বাবু তার কি লজ্জা!!! লজ্জায় তো ওনি মাথাটাও তুলতে পারে না।।।
(কোন কথা না বলে এই পাকনা বুড়িটার কথা গুলে শুনছি আর অবাক হচ্ছি)
— কিহহ…মামাকে খুঁজছো..?(মুখ বাঁকা করে)
— নাহ তো…?(লজ্জা পেয়ে। এই টুকু বাচ্ছা মেয়েটা আমাকে কি লজ্জা টা না দিলো।।ওও বুঝলো কি করে আমার মন তাকে খুঝছে..?)
— খুঁজেও লাভ নেই…ভাই আমার এখন প্রচন্ড ব্যস্ত…বাসায় সাধারণ কোন মেহমান আসলে সে কোন খাতেরদারিতে কমতি রাখে না সেখানে তো তোমায় বাড়ি থেকে নতুম মেহমান আসবে এখানে কোনো কমতি রাখবে কি করে বলো তো ভাবি…?(ননদী রুমে ডুকতে ডুকতে কথাটা বললো হাতে একটা নাস্তার ট্রে)
— মানে ওনি তো বোধয় নাস্তা টাও করে নি….?
— আগে তুমি নাস্তা করো…আমার মামা খিদে সহ্য করতে পারে না…ঠিক খেয়ে নিবে…(ট্রে তে রাখা একটা পিঠা হাতে নিয়ে বললো নীলু)
— ওও(আমি)
রুমে নীলুর সাথে কথা বলছি…ভালই লাগছে পুচকি টার কথা গুলো শুনতে। জিজ্ঞেস করলাম তোমাকে এতটা সুন্দর করে কথা বলা শিখিয়েছে কে…?
সে বললো…তার মামা তাকে প্রতিদিন রাতে পড়াতে বসায়.. সেখান থেকে নতুন নতুন শব্দ শিখায় তাকে…
বাবার বাড়ি থেকে অনেক লোকজনই আসলো। মা আসে নি শুধু…ভাইটা এসে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো…
/
কিরে কাঁদিস কেনো..?(আমি)
/
তোকে ছাড়া ঘরটা ফাঁকা ফাকা লাগে..
/
সবসময় তো বলতি আমার বিয়ে হলেই শান্তি..
ভাইটা আর কিছু বলে নি বেরিয়ে গেলো রুম থেকে হয়তো আমার সামনে অশ্রুপাত করতে চায় নি..
বাবা এই বাড়ির মুরুব্বিদের সাথে কথা বলছে…
সকালে ঘুম থেকে উঠার পর হতে এইমাত্র লোকটার দেখা মিললো। মেহমান দের আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত।
ননদী কে জিজ্ঞেস করলাম…
/
আচ্ছা আপু যা বুঝলাম আমি.. ওনি হয়তো নিজের সব দিকটা সামলিয়েছেন…
/
হুম..
/
এখানে তো দেখছি অনেকেই আছে তারা কি পারতো না এই কাজ গুলো সামলাতে…?
/
ভাইয়া দেয় নি…
/
কেনো?
/
কোনো মেহমানের আপ্যায়নে যদি কোনো ত্রুটি থেকে যায় এতে তো আমারদেরই বদনাম তাই না..তাই ভাইয়া নিজেই সব দিক সামলাচ্ছে যাতে কেউ কোনো কথা বলতে না পারে…
/
ওও
রাতে সব কাজ শেষে.. ওনি রুমে আসলেন এগারো টায়…রুমে থাকলে সময়ের হিসেব টা রাখা যায় ভালো। ঘরে দেয়ালে একটা দেয়াল ঘড়ি আছে বলে।
/
কেমন আছো…?(ওনি)
/
হুহ..(মাথা ঝাঁকিয়ে উত্তর দিলাম)
/
মুখে কি কেউ কস্টেপ লাগিয়ে দিয়েছে…? (রাগী স্বরে)
/
নাহ তো….
/
তাহলে মুখে উত্তর না দিয়ে মাথা ঝাঁকাচ্ছ কেনো..?
/
এমনিই..
/
শরীরটা কেমন..?
/
এই তো ভালো..
/
বারান্দায় চলো…
/
কেনো.?
/
জোৎসনা বিলাস করবো..? কেনো কেনো অসুবিধা আছে..?
/
না না..(উৎফুল্ল হয়ে..আমার তো এটাই চাওয়া বরের সাথে প্রতি রাতে জোৎসনা বিলাস করা। চাঁদনী রাতে তার হাত ধরে হাঁটা.. কিন্তু কথা হলো ওনি বুঝলেন কি করে যে আমার জোৎসনা দেখতে ভাল লাগে)
বারান্দায় একটা টুল রাখা। অনেকটা লম্বা আবার চড়াও। চাইলে একটা মানুষ এখানে শুয়েও থাকতে পারবে…কিছু ফুল গাছও আছে…ফুল ফুটেছে..সুন্দর ঘ্রান বেসে আসছে নাকে…
হুট করে ওনি একটা কথা বলে উঠলেন…
তোমার কি কোনো……
চলবে…
#মি_পার্ফেক্ট
পর্বঃ ৩
আতাউর রহমান হৃদয়
হুট করে ওনি বলে উঠলেন…
–কখনো কাহারো প্রেমে বিভোর হইয়াছো…?(অনেকটা নরম স্বরে। বারান্দায় লাগনো সদ্য ফুটা গোলাপের দিকে চেয়ে থেকে বললেন কথাটি।।।আমি কি উত্তর দিবো। খুঁজে পাচ্ছি না।)
— নাহ…(কি আর বলবো কখনো কোনো পুরুষের দিকে চেয়ে দেখি নি। বিভোর হবো কি করে কাহারো প্রেমে??তবে হয়েও যেতে পারি এখন।)
— তাই নাকি….. সবারই একটা স্বপ্নের পুরুষ থাকে…? (ওনি)
— থাকে তো। আমারও আছে…তবে বাস্তবতায় কোনো পুরুষকে নিয়ে ভাবা হয় নি…(আমি)
— স্বপ্নের পুরুষ আছে তবে বাস্তবতায় নেই…এর অর্থ আমার বোঝার ক্ষমতার বাহিরের হয়ে গেলো…(ওনি)
[বাহ..এত বুঝের মানুষ টার আবার ক্ষমতার বাহিরের কথাও আমার কাছে আছে। যাক তাহলে মাঝে মাঝে তাকে আমি কথা দিয়ে হারিয়ে দিতে পারবো]
— আপনি নাও বুঝতে পারেন.??..(আমি।।অবাক হয়ে)
— বুঝিয়ে বললে কিন্তু বুঝা যায়…(ওনি)
— হুম তাও ঠিক…আসলে বিষয়ে টা হচ্ছে আমি সবসময় ভাবনায় এমন একটা মানুষ কে চাহিতাম যে আমাকে বুঝবে। তাকে বুঝানোর জন্য আমাকে সব খুলে বলতে হবে না..সে নিজেই বুঝে নিবে…(আমি)
— তাই…
— হুম..
— তো কাউকে ভালোবেসেছো নিশ্চয়ই…?(ওনি)
— নাহ.. (আমি)
— দেইখো কিন্তু… (ওনি।।।একটু কঠোর করেই বললেন। বললে কি হলো আমি তো কখনো কোনো ছেলের সাথে বন্ধুত্বই করি নি। ভালবাসবো কোথা থেকে)
— হুম…
— দেখো অনু তোমার অতীত নিয়ে ঘাটতে আমি চাই না…তবে হ্যাঁ তোমাকে নিয়ে বাঁচবো সারাজীবন…শুধু এই মুহুর্তে চাই তোমার সম্মতি…তুমি কি চাও আমার সাথে কাটাতে সারাজীবন..? (অনেক টা রোমান্টিক হয়ে কথাগুলো বললেন ওনি)
[ব্যাটা টা তো আমারে পুরাই বিপাকে ফেলে দিলো। কি বলবো ওনাকে….]
— (চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম…)
— ঐ যে গোলাপ টা দেখতে পাচ্ছো…?
— হুম..
— তুমি ঠিক ঐ সদ্য ফুটা গোলাপের মত তুমি…গোলাপ টা হয়তো দুদিন পর ঝরে পড়ে যাবে। যাবে তার সৌন্দর্যতা নস্ট হয়ে…তবে তোমার সৌন্দর্যতা আমার কাছে সারাজীবন এই সদ্য ফুটা গোলাপটার মতই থাকবে। যাহার সৌন্দর্যতার বাহার সারাজীবন একই থাকবে…(ওনি…)
[ ওপস লোকটাও না..কিছুই মুখে আটকায় না দেখছি….]
— (চুপ করে থাকা ছাড়া আমার যে কোনো প্রতিউত্তর দেওয়ার মত ভাষা নেই)
— শোনো আজ একটা কথা বলি…(ওনি)
— (চুপ করে আছি)
— কি হলো…মুখে কি কাঁঠালের আঠা বাঁধছে নাকি..?(ওনি)
— নাহ তো…
— তাহলে কথা কেনো বলছো না…(ওনি)
— শুনছি তো আপনি বলুন…(আমি)
— নিজেকে কখনো ছোট করবা না….তবে হ্যাঁ সব ক্ষেত্রে নয়..বিশেষ করে আম্মুর সামনে…কারণ ওনি তোমাকে বকাঝকা করবেন ঠিকি দেখবে কিছুক্ষণ পর ওনি নিজেই তোমাকে নিজ হাতে লোকমা তুলে খাইয়ে দিবে…
— আচ্ছা..
— আর হ্যাঁ মায়ের সামনে বেশি শিক্ষিত গিরি দেখাতে যাবে না…কারণ আমার মা নব্বই দশকের উচ্চমাধ্যমিক পাশ…তো বুঝতেই পারছো কেমন শিক্ষিত মা আমার…কিছুদিন পরে দেখবে…কিছুদিন পরে কেনো কালকেই দেখবে মা আমাকে আর বোনকে একত্রে ধরে পিঠাচ্ছে…এটা মায়ের শাসন..আদর.. ভালবাসা.. এটাকে কখনো বিদ্রুপ করবা না…মা বকবে.. শাসন করবে..আদর করবে..ভলবাসবে…তোমাকে ভুল শোধরাতে বলবে…মায়ের ভুল কখনো ধরতে যেও না….এতে মা কস্ট পাবে…মনে রাখবে আমার মায়ের পায়ের নিচে আমার বেহেস্ত….
— হুম…(কথাগুলো মন দিয়ে শুনছি)
— আর শোনো বোন আমার একটু চঞ্চল। ওও কিন্তু সবার মুখের উপর সব কথা বলে দেয়…তাই ওও কখনো কোনো কথা বললে ওর মুখের উপর একটা হাসি দিয়ে দিবা দেখবে সেও হেসে দিবে…
— এমনটা কেনো…? (অবাক হয়ে কথা টা জিজ্ঞেস করলাম)
— ওকে কখনো জিজ্ঞেস করে নিও…
— আচ্ছা..
— শুধু কি আমিই বলে যাবো নাকি তুমিও কিছু বলবে…??(কিছুটা হতাশ হয়ে)
— আমি আর কি বলবো…?(আমি)
— তুমি নিজের স্বপ্নের পুরুষকে নিয়ে সবসময় ভাবতে… এখন নাহয় আমায় ওখান থেকে কিছুটা শোনাও…দেখি তোমার ভাবনার জগতের স্বপ্নের মানুষটা হতে পারি কিনা…(ওনি)
— আমার কিছুই মনে নেই এখন…(লজ্জায় পালাই দিলো রে ব্যাটা টা.)
— বুঝছি..জড়তাটা এখনো কাটে নি…
— (বুঝে নিলো ব্যাপার টা)
(ইস কিছুটা গরম লাগছে…যদিও বারান্দায় মৃদু ঠান্ডা বাতাস বইছে..এই মুহুর্তে আইসক্রিম হলে ব্যাপার টা জমতো ভালো)
— বসো তুমি। একটু আমি আসছি…just a minute..
বলেই লোকটা চলে গেলো…
লোকটার সম্পর্কে আমার কিছুই জানা নেই…গত একদিনে যা দেখছি বুঝছি ওটা হলো ওনার চলাফেরার প্রকৃতি কিন্তু ওনি কি কাজ করেন কোথায় করেন কিছুই জানি না….
বাহ খুব সুন্দর একটা ব্যাপার ঘটে গেলো আমি বুঝতেই পারলাম না…
আজ দুইদিন হতে চললো ওনার সাথে আমার নিকাহ হয়েছে কিন্তু আমি তার নামটাই জানিনা।।। .বাহ কি জ্ঞানী আমি…নিজেকে নিয়ে গর্ভ হয় মাঝে মাঝে…
এতটা কেয়ারফুল আমি।।
বাহ বাহ… কি করে পারি আমি এসব…??
একটা বক্স হাতে আসলেন ওনি…
— এই নাও…ইচ্ছে করছিলো না তোমার…(ওনি)
— কিহহ এটা…?(আমি)
— নিজের পছন্দের জিনিস কেউ দুর থেকে দেখলে বুঝে যায় আর তুমি এতটা কাছে থেকেও বুঝতে পারছো না…(ওনি)
— নাহ তো ( এখনো বুঝতে না পারা আমি)
— হাতে নিয়ে খুলে দেখো…(আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন..)
— ওয়াও আইসক্রিম…(অনেক অবাক হয়ে গেলাম…)
— হুম..
— আপনি বুঝলেন কি করে আমার এখন আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে.. (অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম)
— একটা মৃদু হাসি দিলেন ওনি…
আঙুল দিয়ে খেতে শুরু করতে যাচ্ছি তখনই ওনি বলে উঠলেন..
— শুনেছি তুমি ছোট থেকে আইসক্রিম খাও কিন্তু আজ পর্যন্ত এটা শিখলে না কিভাবে খেতে হয়..?
— অবুঝের মত তাকিয়ে রইলাম….
— এই নাও…(একটা চামচ এগিয়ে দিলেন)<
কিছুটা খেয়ে ওনাকে দিলাম...ওনি অল্প একটু খেয়ে রেখে দিলেন...
-- খুশি তো...?(ওনি)
-- হুম...
-- মুখটা মুছে নাও...( রুমালটা দিয়ে)
-- আচ্ছা একটা কথা বলি যদি কিছু না বলেন...( অনুরোধী গলায়)
-- হুম বলো...(ওনি)
-- কিছু বলতে পারবেন না কিন্তু...? ( আহ্লাদী হয়ে)
-- ওকে বলবো না...
-- আপনার নামটা না আমার জানা হয় নি...?(অনেকটা অপরাধী হয়ে)
-- কিহ...(অবাক হয়ে)
-- কিছু বলবেন না বলেছেন কিন্তু(স্ট্রিক্ট ভাবে)
-- হুকুম করছো...?
-- কোন সমস্যা.. আমি কি করতে পারি না...?(আমি)
-- হুম আমি এটাই চাই...তবে যা শুধু এই রুমের ভিতর প্রযোজ্য.. (ওনি)
-- হুম ঠিক আছে...
-- মনে থাকবে...?(ওনি)
-- হুম...নামটা বললেন না কিন্তু...?
-- আমার নামটা....
চলবে নাকি দৌড়াবে....???
পাথরের বুকে ফুল গল্পটা পাওয়া যাচ্ছে না কেন?