মি_পার্ফেক্ট সিজন২,পর্ব ০১,০২

0
1642

#মি_পার্ফেক্ট সিজন২,পর্ব ০১,০২
আতাউর রহমান হৃদয়
০১

তার নিখোঁজ হওয়ার আজ পনেরো দিন হয়ে গেলো।।। কোনো হুদিস নেই।। কোথায় আছে? কেমন আছে? কি করছে? এমন হাজারো প্রশ্নের অজানা উত্তরের খোঁজে নির্বোধ হয়ে বসে থাকে অনু।। বাড়ির সবাই যে অনেক দিশেহারা হয়ে আছে। ইফতির মা তো অনেক টা বাক শক্তিই হারিয়ে বসে আছেন। একমাত্র ছেলে তার। একমাত্র অবলম্বন। দুটো সন্তানের জননী তিনি। মেয়েটাকে যতটা না ভালবাসেন তার থেকে হাজার গুন হয়ত ছেলে কে ভালবাসেন। ছেলেটাও ঠিক তেমন। সব দিক থেকে সবার খেয়াল রাখে।
নীলু তো আজ-কাল কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছে। যে বাচ্চা মেয়েটা পুরু বাড়িটা মাথায় তুলে রাখতো সে আজ কতটা শান্ত হয়ে বসে রয়। মামার কিনে দেওয়া ফোনটায় মামার সাথে তোলা পিক গুলো দেখে আর কাঁদে। এতটুকু বাচ্চা ইফতির শোকে কাতর হয়ে গেছে সেখানে বড়দের কি অবস্থা সেটা বলার বোধগম্য তা রাখে না।
ইফতির বোন তো নিজেকে কিছুতেই ক্ষমা করতে পারছে না….কেনো যে সে তার ভাইকে পাঠালো বাড়ির বাহিরে…যদি না সে না পাঠাতো আজ তাহলে এমন টা হতো না…
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেলো ইফতির সাথে কারোরই কোন শত্রুতা নেই। বরং তার শুভাকাঙ্ক্ষীই বেশি। সবার সাথে হেঁসে খেলে কথা বলতেন। ছোট বড় সবার সাথেই তার সম্পর্ক বিদ্যমান। কারো সাথে দাদা-নাতি তো কারো সাথে কাকু-ভাতিজা আবার সাথে ভাইয়ের সম্পর্ক।

ওনার আলমারি টা খুললো অনু…তার কত জামা যে নিথর হয়ে পড়ে আছে। কখনো তো এই প্যান্ট গুলো পড়তে দেখে নি ইফতিকে অনু কে।। দেখবে কি করে কাজের চাপে যে ছেলেটা নিজের স্মার্টনেসতাই ভুলে গিয়েছে।।। একসময় খুব করে শৌখিনতায় চলতো সে যখন দায়িত্ব নিতে শিখেছে এর পর থেকেই যে নিজেকেই ভুলে গিয়েছে।।। শফিং তো করেই ঠিকই তবে পড়া যে হয় না।। তার আলমারিতে থাকা প্রায় সব ড্রেস গুলো তার বোনের চয়েজে কিনা। ছেলেটা বোনকে অনেক ভালবাসে তার আচরনে খুব করে প্রকাশ পায়।

পড়ার টেবিলের ড্রয়ার টা খুলতেই কয়েকটা ডায়েরি চোখে পড়লো অনুর। তিনটে ডায়েরি। একটাতে লিখা সিনস ২০১৪-১৫। দ্বিতীয় টায় সিনস ২০১৫-১৭। শেষ টায় সিনস ২০১৮।
ইফতি যে নিজের মাঝে থাকা অব্যক্ত কথা গুলো তার ডায়েরি গুলোর সাথে কথোপকথনে আসক্ত থাকতো তা খুব করে বুঝতে পারলো অনু। শেষ ডায়েরিটা যে অনুকে নিয়ে সে তো জানে।

শেষ ডায়েরিটা হাতে নিলো অনু।।

প্রথম ১৩ পৃষ্টা তো তার পড়া হয়েছেই…

পৃষ্ঠা ১৪

তার কথা শুনে তো আমি অবাক না হয়ে থাকার কোন বিস্ময় খুজে পাচ্ছি না। এই মেয়ে আমার বউ হয়ে আমারই সাথে সংসার করছে আজ দুদিন ধরে কিন্তু আদৌ সে আমার নামটাই জানে না।।বিয়ের পাকাপোক্ত কথা বার্তায় মধ্যেই বিয়ের আগে পরিচয় তার পরিবারের সাথে এক মাস আগ থেকে। কিন্তু সে আমার নামটা পর্যন্ত জানতে পারলো না। নাকি কখনো জানার প্রয়োজন মনে করে নি সে।। নাকি তার এই বিয়েটাতেই মত নেই।।

আমার বউ টা যখন লজ্জা পায় না,,ইসস তখন তাকে দেখার মত লাগে। ইচ্ছে করে নিজের মিশিয়ে নিই তাকে। এমন ছাহনীর প্রেমে বারে বারে পড়তে চাই। নতুন করে নতুন ভোরে।।লজ্জমাখা মুখে আমার বউটাকে যতটা সুন্দরী লাগে তার চেয়ে হাজার গুনে বেশি রাগান্বিত ফেসে লাগে। কিছু কথা তাকে বলতে চাই তবে বলতে পারি না। লজ্জা যে শুধু নারীদেরই থাকে তা কিন্তু নয় লজ্জা পুরুষদেরও থাকে। যখন কোন পুরুষ তার স্ত্রীর প্রেমে পড়ে তখন তার লজ্জা অটো পাসের মতই অটো হয়ে চলে আসে।

তবে আমার বউ অনুর কাছে আমার গভীর ভালবাসার অধীর প্রকাশ করতে পারি তবে ভয় হয়,

এই দুদিনে যে সে আমার ভালবাসা আর আমাকে সাধরে গ্রহন করে নিবে তা কিন্তু নয়। আমার ভালবাসা নাহয় বহু পুরনো দিনের কথা কিন্তু সে তো আমাকে চিনে আজ দুদিন। যেখানে সে আমার নামটাও আজ পর্যন্ত জানে না সেখানে ভালবাসার অধিকার চাওয়া টা নিখাত বোকামি।

ঘুমাতে এলাম কিন্তু ঘুমের রানী যে আমার পানে নাহি দেখা দেয়। বউ যখন পাশে থাকে তখন কি কোলবালিশে কাজ হয়। বউয়ের পরম উষ্ণতা তো মিস করা যায় না। বউটাও যে আমার ঘুমিয়ে পড়েছে তা তো নয়। তারও যে ঘুম আসছে খুব বুঝতে পারছি। কি আর করা দুজনের যখন একই দশা তখন তো আর চাঁদের দশা হতে দেওয়া যায় না। বউকে নিলাম নিজের বাহুডোরে। আহ বউকে যখন বুকের মাঝে নিয়ে ঘুমানোর আনন্দ আর অনুভূতি টা এমন আগে জানলে বিয়ে টা আরো আগেই করে নিতাম। এতদিন শুধু শুধুই কোলবালিশে আনন্দ খুঁজেছি। মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব সুখ আমার আনন্দের দরজায় কড়া নাড়ছে।।।

অনু চোখের অশ্রুতে ডায়েরির পাতা গুলো ভিজে উঠছে। এমন করেও কেউ ভালবাসতে পারে?? আজ তার এত কস্টের মাঝেও মুখের কোনে এক চিলতে হাসির রেখার দেখা মিলছে। এই ভেবে তার হাসি পাচ্ছে যে,, বিয়ের দুদিন হয়ে যাওয়ার পরও সে তার ARF নামটা জানতে পারে নি। নাম তিন বান্দা মিন।

পৃষ্টা ১৫

শুনেছি মেয়েরা বিয়ের পর বাবার বাড়ি যেতে পারলে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়। বিয়ের পর যখন মেয়েরা বাপের বাড়ি যেতে পারে তখন তাদের কাছে ঈদের খুশি টাও হার মানে এই খুশির কাছে। এই বিষয়টা আজ অনুকে দেখে তার বাস্তবিক অভিজ্ঞতাও অর্জন করলাম।
রাতে যখন বাড়ি ফিরলাম…

অনু তার চুল গুলো বাঁধতে চেয়েছিলো তবে নিষেধ করলাম তারে। ভালোই লাগছিলো। খোলা চুলে তার সৌন্দর্যতা বহু গুনে বেড়ে গেলো।জানিনা তখন যদি সে চুল গুলো বেঁধে ফেলতো কেমন লাগতো??তবে আমার কাছে খোলা চুলেই তাকে সুন্দর লাগছিলো। যেমন করেই দেখি তাকে তেমন করে নতুন ভাবে তার প্রেমে পড়ি বারে বারে। শুনেছিলাম মানুষ নাকি তার প্রেমিকার প্রেমে নতুন করে বারে বারে পড়ে। আমি তো আমার বউয়ের প্রেমে পড়েই বারে বারে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছি।

অনুর চোখের আর লেখা গুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। অশ্রুতে ঝাপসা হয়ে এসেছে। ডায়েরি টা বুকে নিয়ে বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিলো। খুব খালি খালি লাগে আজকাল রুম টায়। চোখটা বুজলেই মনে হয়ে এই তো তার বর তাকে এসে ডাক দিলো….এই তো তিনি পড়ার টেবিলটায় কাজের ফাইল গুলোতে চোখ বুঝে আছেন।

ডায়েরি টা বুকে নিয়ে কখন যে অনু ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতে পারলো না। হুট করে কোন কিছুর শব্দে অনুর ঘুম টা ভেঙ্গে গেলো…

চলবে…

#আতাউর_রহমান_হৃদয়

#মি_পার্ফেক্ট
#সিজন২

আতাউর রহমান হৃদয়
সার্বিক সহযোগিতায়ঃ #হুমায়রা_আপু

ক্ষিব্ধ নিঝুম রাত্রি পেরোড়। আসে আলোকিত উজ্জল শিখা। অন্ধকারময় কালোকে অবস্বাদ মুক্ত করে শুভ্র সাদা বা নীলাভা আকাশ। গ্লাণি ক্লান্তির অবসান হয়। আসে নতুন পরশ। নতুন আলো, নতুন সম্ভনা।

সবকিছুরই আমেজ আনন্দ নিত্যনতুন থাকলেও। চলমান বহমান এক গতির ব্যাটারি বিহীন ঘড়ির মতই যেন থেমে গেছে অনুর জীবনের নতুন পথচলা। যে অনিন্দ সুন্দর বহমান নতুন জীবনের ব্যাটারি ছিলো তার ইফতি।

ছলনা, গঞ্চনা, মান-অভিমান ইফতি-অনুতে চললেও হুট করেই থেমে যাবে বা কোন কালো অন্ধকার যে গ্রাস করে নিবে অনুর ছন্দময় জীবন টাকে একলা করে দিবে তা স্বপ্নেও কখনো ভাবে নি অনু।

গতিপথ কোন এক অজানা ভাষায় আটকে যাবে, একলা, সঙ্গিহারা হয়ে জীবনের কোন পথ পাড়ি দিবে তা হয়ত অনু কখনো কল্পনাই করে নি…..

ছলনায়ও হয়ত কখনো কল্পনায় আনে নি ইপতি এমন পরিস্থিতি কে….

কারণ অনেক আগেই থেকে হোক কিংবা পরে তারা দুজনা দুজন কে যে বড্ড বেশিই ভালবাসে….

কোন এক কাক ডাকা ভোরে অজানা আতঙ্কে হুট করেই উঠে বসে যায় অনুরীমা। বুকের ভেতরটা ধপ করে কেঁপে উঠে পাশের বালিশ টা ফাঁকা দেখে।

নতুন প্রায় মাস দু-আড়াই মত দেখা এই খাট তার নিজের রুম। যেই রুমে নিথর হয়ে পড়ে আছে ইফতির পড়ার টেবিল। পাশে এক আলমারি। এরই পাশে অনুর নিজের পছন্দ করা তালতলা থেকে কিনে আনা মাটির তৈরি একটি ফুলদানি। ইফতি প্রায়ই চমকে দিতো নিত্য নতুন মৌসুমী ফুল এনে তাতে সামান্য পানি ভিজিয়ে রাখতো ইফতি। আর অনু হঠাৎ রুমে এসে ফুলের মৌ মৌ সুগন্ধে ইফতির ভালবাসায় মিষ্টি মধুর হয়ে যেতো।

আর তার পাশেই রয়েছে অনুর জন্য কিনে আনা ড্রেসিং টেবিল টা। অনুর বাবা দিতে চাইলেও ইফতি নেয়নি। নিজেই কিনে এনেছে। যা আজ নিথর হয়ে পড়ে আছে। অথচ বিগত দু-সপ্তাহ আগেও অনু এই ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ইফতির সনিপুন শাড়ী পড়ানো দেখছিলো।

ইফতি অনেক যতনে আর সুন্দর করে শাড়ী পড়ায় অনুকে। এতে ভালাবাসা বৃদ্ধি পায় বলে অনু নিজেও শাড়ী সনিপুন ভাবে পড়তে পারলেও ইফতির হাতেই শাড়ী পড়ত।

বালিশ ভিজা হয়ে যায় এসব স্মৃতিচারনে ভাবতে ভাবতে। বিছানা ছেড়ে উঠে অনু। পরক্ষনে মনে পড়লো ধীরে ধীরে সব। কক্সবাজার হতেই ইফতিকে নিখোঁজের খোঁজে খুঁজতে খুঁজতে মামা শ্বশুরের বাড়িতে আসে সে। অর্থাৎ শ্বশুর বাড়ি।

এসে অনুর শাশুড়ির হা করা শুষ্ক মুখ দেখে অনুর নিজ থেকপ খুব অপরাধ বোধ হচ্ছিলো। বার বার নিজেকে অলুক্ষণে এক মেয়ে হচ্ছিলো। যে কি না জামাইকে নিজ বাহু ডোরে নিয়ে গেলেও আঁচলে বেধে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে পারে নি।

অজানা এক আতঙ্ক গ্রাস করে নিলো অনুর ছোট্ট মব টাকে। এক-চিৎকার দিয়ে দৌড়ে ছুটে যেতে চাইলো শাশুড়ী মায়ের কোলে।

কিন্তু মায়ের কাছে আর যাওয়া হলো না। বরং শাশুড়ী, ননদ, ননদের বর আর নীলু তারা ফিরে এলো অনুর কক্ষে।
তারা এসে অনুকে আবিস্কার করলো মেঝেতে লেপ্টে পড়ে থাকা অবস্থায়।

ধরাধরি করে সবাই অনুকে খাটে এনে শোয়ালো।

কিছুক্ষণ পর অনুর হুশ ফিরলো।

ছোট্ট পুচকি নীলু তার মামাকে না পেয়ে যতটা না কাতর হয়ে তার চেয়েও দ্বিগুন বেশি তার মামীর দুর্বলতা দেখে কস্ট পাচ্ছে। কস্ট পাচ্ছে তার মামীর অবসাদ গ্রস্থ চেহারা দেখে।

অনু বলে উঠলো

– মা; আপনি আমার রুমে আমি কতটা অপরাগ মা; না পারলাম আপনার ছেলে কে আঁচলে বেধে আপনার কোলে ফিরিয়ে আনতে না পারলাম আপনার কাছে এখন যেতে….(কান্না আর হতাশা গ্রস্থ অবস্থায় বললো অনু)

ছোট্ট নীলুর কথা শুনে অনু অবাক না হয়ে পারলো না। নীলু বললো…

– হ্যাঁ মামীমা…উঠ..তোমাকে উঠতেই হবে…তুমি-ই পারবে কি? মামী-মা তুমি পারবে না আমার মামাকপ ফিরিয়ে আনতে??

অনু অবাক হয়ে শুয়ে শুয়ে সবার মুখের পানে চেয়ে রয়। বেশি অবাক হয় নীলুর মুখে মামী-মা ডাক টা শুনে…এমন ডাকে শেষে মা বলে আজ অবধি কেউই ডাকে নি অনুকে। নীলুও তার ছোট্ট নিষ্পাপ মনের হাজার অক্লান্তি নিয়ে এমন ডাকে অনুর মন আর দেহ দুটাই নাড়া দিয়ে উঠে…

চলবে…

#আতাউর_রহমান_হৃদয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here