#মি_পার্ফেক্ট ২,৯,১০,১১
আতাউর রহমান হৃদয়
০৯
কথাটা বলেই ওনি আমাকে পাজো কোলে করে হাঁটা দিলেন…
তবে আমায় কোলে নিয়ে ওনি একটু যেতেই ওনি আহহহহ বলেই একটা শব্দ করে উঠলেন….বুঝতে পারলাম ওনি কোথায়ও আঘাত পেয়েছেন…
— কি হলো.?(আমি….ওনি আমাকে কোল থেকে নামিয়ে দিলেন..)
— কিছু না…(কথা বলতে ওনার খুব কস্ট হলো।।।খুব জড়ালো ভাবেই আঘাত পেয়েছেন।। কিন্তু কি করে…?)
— কি হয়েছে বলুন না…?(ওনার কথার আওয়াজ টায় বিপদের গন্ধ ভেসে আসছে….আমার চোখের কোনেও যে পানি টলমল করছে..)
— পায়ে হালকা ব্যাথা পেয়েছি…. চলো (চলো বলেই ওনি যেমনই পায়ের কদম বাড়ালেন তখন আবারো আহহহ বলে শব্দ করে উঠলেন….ওনার এখনকার আহহ করা টা আর সামান্য আওয়াজে বিদ্যমান ছিলো না। মনে হলো কেউ কাউকে যখন কোন জোরালো আঘাত করে তখন আক্রান্ত ব্যক্তি যেভাবে চিৎকার করে উঠে ঠিক এরচেয়েও বেশি জোরালো চিৎকার বলে মনে হলো…ওনার এমন চিৎকারে আমা ভয়ে মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না….কোন মতে নিজেকে সামলিয়ে ওনাকে ধরলাম নাহয় যে নিচে পড়ে যেতেন ওনি)
ওনাকে ধরে নিচে নামাচ্ছি….ওনার এক হাত আমার কাঁধে অন্য হাত দিয়ে ওনার আরেকটা হাত ধরে আছি…হাঁটতে খুব কস্ট হচ্ছে ওনার…. ডান পা মোটেও নাড়াতে পারছেন না…তবুও হালকা ভাবে আস্তেধীরে সিড়ি বেয়ে নামছেন…এখানে তো সারা রাত কাটানো যাবে না…
বাসার সবাই হয়ত ঘুমিয়ে গেছে।। রাত তো আর কম হলো না। রাত প্রায় দেড়টা ছুঁই ছুঁই।
হুট করেই আমার হাতে পানির পোঁটা পড়ার মত কিছু অনুভব করলাম…
ওনি কাঁদছেন…
পুরুষ মানুষ তো সহজে কাঁদে না…ওনি কাঁদছেন এরমানে খুব জোরালো ব্যাথা পেয়েছেন ওনি।।।আজ আমার জন্যই এমন হলো…ওনি অসুস্থ তবুও ওনার কোলে উঠতে হলো আমার?? ওনি নাহয় নিয়েছেন তাই বলে আমাকেও উঠতে হবে…একটাবার নিষেধও করলাম না…যদি না আমি ওনার কোলে উঠতাম তাহলে তো এখন মাঝরাতে এমন একটা বিপদ হতো না….কি এখন আমি…?
— সব দোষ আমার…আমার কারণেই আজ এমন হয়েছে…?(কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলছি আমি)
— (ওনি কিছু বলছেন না…হয়ত কথা বলার শক্তি টুকুও নেই ওনার মাঝে…থাকবে কি করে অল্প ব্যাথা তো আর পান নি….কতটা গভীর ব্যাথা পেয়ে থাকলে ওনার মত এত শক্ত মনের একটা মানুষ কাঁদতে পারে…)
— সবসময়ই আমার মনের ইচ্ছা গুলো একটু বেশিই আতিক্ষেতা হয়ে যায়…..(নিজেই নিজেকে বকছি….)
— চুপ করো তো…তোমার কারণে ব্যাথা পেয়েছি একথা কে বললো…?(আমার চাইতেও বেশি ওনার কথায় কান্নার চাপ)
— আমার কারনে নয় তো কার কারণে…? আমি যদি আপনার কোলে না উঠতাম তাহলে কি আর এমন টা হতো…?(আমি)
— চুপ করো…? ব্যাথাটা এখন কার না…?(ওনাকে খাটে বসিয়ে দিলাম)
— কখনকার ব্যাথা এটা..? আর আপনি আজ দুদিন তো ঠিকই ছিলেন….তাহলে ব্যথা টা এখনকার নাহলে কখন কার…? (আমি)
— আছে একসময় কার…তবে আমি তোমার মায়ায় এতোটাই বিবর্তিত হয়ে গেছিলাম যে ভুলেই গেছিলাম যে আমার পা টা….(ওনি এতটুকু বলেই থেমে গেলেন…)
— আপনার পা টা কি…?(আমি খুবই আতংকিত হয়ে বললাম)
— কিছু না….?(ওনি…কথা টা এড়িয়ে যেতে চাইলেন)
— বলুন না…?(আমি)
— ব্যাথা আজকের নয়…আর তোমাকে তো আমি নতুন কোলে নিই না…? যে তোমাকে কোলে নেওয়াতে আমার পায়ে ব্যাথা পাবো…?(ওনি)
— আজকের নাহলে কখন কার…? আর আপনি এর আগে যতবার আমাকে কোলে নিয়েছেন ততবারই আপনি শারীরিক ভাবে ফীট্ ছিলেন….আজকে তো ফীট ছিলেন না…(আমি)
— আজকেও ফীট ছিলাম তবে পা তো ঐ…(ওনি কিছু তো লুকাচ্ছেন…কিন্তু কি…?ওনার নিখোঁজে সময় ওনার সাথে কি এমন ঘটেছিলো যার কারণে ওনার সবকিছু উলটপালট হয়ে গেছে)
— ঐ কি…বলুন না প্লিজ….কি হয়েছে আপনার…..?(ওনার কাধে হাত রেখে কেঁদে উঠলাম আমি)
— কেঁদো না তো প্লিজ… যতটা না পায়ের ব্যাথায় কস্ট পাচ্ছি তার চেয়েও অনেক বেশি তোমার চোখের জল দেখে কস্ট পাচ্ছি….(আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললেন)
— আপনার সাথে কি এমন হয়েছে?? যা বার বার বলতে গিয়েও থেমে যাচ্ছেন…? (আমি)
— কিছুই হয় নি তো…(ওনি)
— নাহ কিছু তো হয়েছে…? নাহয় আমার বর টা এতটা ফীট ছিলো সবকিছুতে….আমাকে কোলে নিয়ে ঘন্টার উপরেও দাড়িয়ে ছিলো…আর আজ সেই বর টাই আমাকে কোলে নিয়ে এক কদম এগোতেই এমন করে পায়ে ব্যাথা পেয়ে গেলো…?(আমি)
— আরে বাদ দাও তো… ঐ যে ওখানে এক পাতা ঔষধ আছে ওখান থেকে একটা ঔষধ দাও আমাকে….(আমাকে ওনার ড্রয়ার টা দেখিয়ে দিয়ে বললেন)
— কিসের ঔষধ এটা…?(আমি।।। ওনার হাতে ঔষটা আর পানি দিয়ে বললা )
— ঘুমের…? (বলেই খেয়ে এক ঢোকে খেয়ে ফেললেন..ওনার হাত থেকে ঔষধ টা নিবো তার জন্য একটা সেকেন্ড সময়ও দিলেন না)
— আপনি ঘুমের ঔষধ কেনো খেলেন..?(আমি খুবই হতাশা ভাবে বললাম)
— বাহ রে এমন চোট পেয়েও ব্যাথায় সারারাত নির্ঘুমে কাটুক তাই না..??(ওনি)
— তাই বলে ঘুমের ঔষধ… আপনি জানেন না…ঘুমের ঔষধ খাওয়া স্বাস্থ্য আর হার্টের জন্য ক্ষতিকর।।। (আমি)
— হুম জানি…(ওনি)
— তবুও খেলেন কেনো…? আর ঘুমের ঔষধ এখানে কোথায় থেকে আসলো…?এরমানে কি আপনি সবসময় ঘুমের ঔষধ খান.???কয়েকটা ঔষধ তো দেখলাম খালিও.(আমি)
— সবসময় কিসের জন্য খাবো.? আর ঔষধ টা মাস দেড়েক আগে এনেছিলাম..তখন দু তিনটা খেয়েছিলাম…তবে বাকি গুলো যে এমন ভাবে কাজে লাগবে তা ভাবি নি(ওনি)
সকাল বেলা ঠিক আটটার দিকে দেখলাম একটা সিএনজি এসে বাড়ির উঠোন টায় থামলো।।।।তার ঠিক কিছুক্ষণ পর ওনাকে দেখলাম বেরিয়ে আসছেন খোয়া খোয়া পায়ে হেঁটে চলেছেন… খুব কস্টে ওনি হাটছেন…
শাশুড়ী মা আর আপু রান্না ঘরে। নীলু ঘুমাচ্ছে.. এর ফাঁকে ওনি বেরিয়ে গেলেন।।।ওনারা হয়ত ওনার এমন করে হাঁটা দেখে তুলকালাম বাঁধিয়ে ফেলতেন….
ঘন্টা খানেক পরে দেখলাম ওনি এসেছেন সিএনজি তে করে….
তবে যেমন ভাবে তেমন ভাবে আসেন নি…কি হয়েছে ওনার…?
ওনার এই অবস্থা দেখে তে আম্মুর চিৎকারে পুরো বাড়ি কেঁপে উঠল…
চলবে…
#আতাউর_রহমান_হৃদয়
#মি_পার্ফেক্ট২
১০
আতাউর রহমান হৃদয়
ঘন্টা খানেক পরে দেখলাম ওনি এসেছেন সিএনজি তে করে….
তবে যেমন ভাবে তেমন ভাবে আসেন নি…কি হয়েছে ওনার…?
ওনার এই অবস্থা দেখে তে আম্মুর চিৎকারে পুরো বাড়ি কেঁপে উঠল…
একি ওনার ডান পা হাঁটু থেকে পায়ের তালু পর্যন্ত পুরো টাই প্লাস্টার দিয়ে ব্যান্ডেজ করা।
— কিরে বাবা কি হয়েছে তোর….? পায়ের এই অবস্থা কেনো…?(মা কান্নারত অবস্থায় ওনাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন…)
— কিছু না আম্মু হালকা ব্যাথা পেয়েছিলাম…..(গাড়ী চালক ওনাকে ধরে ঘরে নিয়ে আসলেন)
কারো মুখে কোন কথা নেই….কি এমন হয়েছে ওনার যার জন্য এমন করে পা প্লাস্টার করতে হলো….? গত কাল রাতে তো এমন কোন জোরালো আঘাত পান নি ওনি যার জন্য এতটা গভীর ভাবে আঘাত পাবেন ওনি…? হয়ত হালকা পা মচকে যেতে পারে….কিন্তু হালকা মচকে গেলে তো এমন হওয়ার কথা না…
— ঐ দাড়া…?(আম্মু গাড়ী চালক কে…ডাক দিলেন)
— হ্যাঁ চাচী বলেন…?(চালক)
— ইফতির কি হয়েছে সত্যি করে বল..?(খুব কড়া গলায় বললেন আম্মু)
— আসলে চাচী কি করে পায়ের এমন অবস্থা সেটা তো ভাই ডাক্তারকেও বলে নি….তবে পায়ের অবস্থা গুরুতর… (চালক)
— পায়ের অবস্থা গুরুতর মানে…?(আতঙ্কিত হয়ে হয়ে মা জিজ্ঞেস করলেন)
— ওনার পায়ে কেউ হয়ত জোরালো কিছু দিয়ে বাড়ি দিয়েছে যার জন্য ওনার হাঁটুর নিচে হাড় পেটে গেছে….তবে একেবারে ভাঙ্গে নি….কিছুদিন রেস্ট করলে আর ঠিক মত চিকিৎসা করলে ঠিক হয়ে যাবে…(চালক একথা বলে চলে গেলো)
মা হতাশ হয়ে চেয়ারে বসে পড়লেন। তার ছেলের এমন অবস্থা দেখে হয়ত তিনি সহ্য করতে পারছেন না….
— আম্মু আপনি এমন ভয় কেনো পাচ্ছেন…. ওনি তো বললেন ঠিক মত চিকিৎসা করলে ঠিক হয়ে যাবে…(আম্মুকে তো শান্তনা দিচ্ছি তবে আমাকে কে শান্ত করবে..?
নিজের ভিতর টা যে কুঁড়ে খাচ্ছে ভয়…কি করে এমন হলো ওনার….কে আঘাত করবে ওনাকে এমন করে…? ওনার মত একজন মানুষের তো কোন শত্রু থাকার কথা….যে মানুষটা কখনো অন্যায় কাজ করে না অন্যায় কে প্রশ্রয় দেয় না তার কি করে কোন শত্রু থাকতে পারে…? পয়েন্ট আছে…হয়ত ওনি কখনো কোথায়ও কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন যার কারণে ওনার শত্রু তৈরি হয়েছে… কিন্তু কে..?)
রুমে এসে হুট করে দরজা টা বন্ধ করে দিলাম….মনের মাঝে যতটা না তার থেকেও বেশি রাগ নিয়ে প্রবেশ করলাম…আজ আমার জানতেই হবে কি হয়েছে আর হচ্ছে এসব..?
ওনি চোখ বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে আছেন।
— ওই…?(খুবই রাগী ভাবে ওনাকে ডাক দিলাম…)
— হুম…এত রাগ কেনো…?(ওনি)
— আমি আপনার কি হই…?(আমি)
— অর্ধাঙ্গিনী… (ওনি)
— জীবনসঙ্গী নই কি…?(আমি)
— ওই একই কথা…কিন্তু হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেনো বেগম সাহেবা…?(আমার হাত ধরে ওনার পাশে বসাইলেন)
— আপনার সুখের ভাগীদার যদি আমি হই দুঃখের ভাগীদার কে…? নাকি আরো কেউ আছে আপনার বেগম…?(আমি)
— তুমি ছাড়া আর কেউ কি আছে আমার জীবনে বেগম হয়ে..?(ওনি)
— তাহলে আপনার দুঃখ গুলো কেনো আমি ভাগে পাই না(অনেকটা কান্নার ছলে)
— আমার আবার কিসের দুঃখ… যার এমন একটা কিউট আর সুন্দরী বউ আছে তার কি করে কোন দুঃখ থাকতে পারে বলো…?(ওনি শুয়ে থেকেই আমাকে ওনার বাহুডোরে জড়িয়ে ধরে বললেন)
— আপনার কোন দুঃখ নেই…তবে এসব কি হচ্ছে আপনার সাথে…?(আমি)
— এটা একটা দুর্ঘটনা মাত্র….(ওনি)
— কিন্তু কি করে হলো এসব…?(আমি)
— হয়েছে কোন এক ভাবে বাট তুমি আগে এটা বলো…যে এসব কারণেই কি তোমার মন খারাপ…? (ওনি)
— বাহ রে…আমার কলিজার মানুষটার এমন অবস্থা দেখেও আমার মনটা ফুরফুরে উলালা হয়ে থাকবে কি করে বলুন…?(আমি)
— দুর পাগলী এতটা প্যানিকড হওয়ার কিছু নেই…পায়ে হালকা আঘাত পেয়েছিলাম যার কারনে হাঁটুর নিচে হাড়টা হালকা পেটে গেছে…যার জন্য পুরো পা প্লাস্টার করা লাগছে…আর দু-বার প্লাস্টার খুলে নতুন করে প্লাস্টার করতে হবে আর ঔষধ তো চলবে…ঠিক হয়ে যাবে কিছু দিনের মধ্যে… এতটা ভয়ের কিছু নেই…(ওনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন…কোথায় আমি ওনাকে আমি সান্তনা দিবো তা না ওনি উল্টো আমাকে শান্তনা দিচ্ছেন..বাহ কি মানুষ ওনি)
— হু…(কান্না যে আর ধমিয়ে রাখতে পারছি না)
— জানো ওই কিছুদিন খুব মিস করেছি তোমাকে…কি জন্য জানো…?(ওনি)
— কি জন্য..? (মুখটা তুলে ওনার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম)
— এই জন্য… (বলেই ওনি আমার ঠোঁট জোড়া নিজের আয়েত্বে নিয়ে নিলেন…আহ কতদিন পর এমন পরম সুখের দেখা পেলাম….আমার কপালে গালে কত শত চুমু ওনি দিলেন তার কোন ইয়াত্বা নেই…)
— আচ্ছা বউ তোমার কি মনে হয় না…?(ওনি)
— কি..?(আমি)
ওনার মুখের কথা টা শুনে আমার লজ্জায় মাটির নিচে ডুকে যেতে ইচ্ছে করছে….তবে তার চেয়েও বেশি খুশি লাগছে কারণ ওনার মুখ থেকে এই কথা টা শোনার জন্য অনেক টা অধীর আগ্রহ আমার মনে কাজ করছিলো গত কিছুদিন যাবত…তবে এমন হুট করে এই পরিস্থিতিতে ওনি এমন কথা বলে ফেলবেন কল্পনাও করতে পারি নি…মাঝে মাঝে ওনাকে বুঝে উঠা আমাদ দায়…তবুও ওনি আমার আমি ওনার… ভালবাসি ওনাকে নিজের চেয়েও বেশি.।।।।
চলবে…
#আতাউর_রহমান_হৃদয়
#মি_পার্ফেক্ট২
১১
আতাউর রহমান হৃদয়
— আচ্ছা বউ তোমার কি মনে হয় না…?(ওনি)
— কি…?(আমি)
— তোমার কিছুদিন পর মা ডাক শোনা দরকার…(ওনার মুখের হাসি টা দেখার মত ছিলো…খুব স্নিগ্ধ একটা হাসি দিলেন।।বর্তমান যুগে যাকে ফরমালিন মুক্ত হাসি বলে।)
ওনার মুখের কথা টা শুনে আমার লজ্জায় মাটির নিচে ডুকে যেতে ইচ্ছে করছে….তবে তার চেয়েও বেশি খুশি লাগছে কারণ ওনার মুখ থেকে এই কথা টা শোনার জন্য অনেক টা অধীর আগ্রহ আমার মনে কাজ করছিলো গত কিছুদিন যাবত…তবে এমন হুট করে এই পরিস্থিতিতে ওনি এমন কথা বলে ফেলবেন কল্পনাও করতে পারি নি…মাঝে মাঝে ওনাকে বুঝে উঠা আমার দায়…তবুও ওনি আমার আমি ওনার… ভালবাসি ওনাকে নিজের চেয়েও বেশি.।।।।
— যাহ কিসব বলেন না আপনি….?(আমি লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে)
— কেন তোমার কি মা ডাক শুনতে ইচ্ছে করে না…?(ওনি)
— নাহ…?(সম্পূর্ণ মিথ্যে বললাম ইচ্ছে করে নয়…লজ্জায় সত্য টা বলতে পারি নি…মেয়েরা বোধয় এমনই হয়…যখনই মা হওয়ার কথা টা শোনে পৃথিবীর সকল লজ্জা বোধয় এদের মাঝে এসে ভর করে)
— তোমার ইচ্ছে নাহলেও আমার তো ইচ্ছে হয়…(ওনি আমার মুখ টা ওনার দিকে তুলে বললেন)
— কি মা ডাক শোনার।।। (দুস্টু একটা হাসি দিয়ে বললাম)
— আরে দুর… আমার তো অনেক ইচ্ছে হয় আমাদের একটা ছোট্ট বেবী হবে সে আমাকে আব্বু বলবে আর তোমাকে আম্মু বলবে…আমরা দুজন তাকে নিয়ে আমাদের স্বপ্ন সাজাবো….(খুব গভীর ভাবে তিনি কথা গুলো বললেন…এতে বুঝা যায় ওনি খুব আগ্রহী হয়ে আছেন বাবা হওয়ার জন্য)
— তাই নাকি…(আমি)
— জ্বি তাই…তবে…(ওনি)
— কি…?(আমি)
— তুমি প্রস্তুত আছো প্রেগ্ন্যাসির জন্য…?(ওনি)
— হুম তবে এখন কিছু হবে না…(আমি)
— কেনো এখন কি সমস্যা…? (ওনি)
— আগে আপনি ভাল মত সুস্থ হোন…নাহয়…(আমি)
— না-হয় কি..?(ওনি)
— আপনি এমন অসুস্থ থাকা অবস্থায় কনসিভ করলে পরে আপনাকে নিয়ে চিন্তা হলে বেবীর প্রবলেম হবে…এতে করে আপনার আমার দুজনেরই মন খারাপ হবে… (আমি)
— ওও তাই নাকি… আর আমি দেখো সুস্থই আছি…তোমার সাথে বসে কত ভাল ভাবে কথা বলছি…(ওনি)
— হুম কতটা সুস্থ আছেন দেখতেই পাচ্ছি…শুয়ে থেকে বলছেন বসে কথা বলছি….(আমি)
— আহ হা ওটা তো কথার কথা….(ওনি)
— আমি এত কিছু বুঝি না….আপনি আগে সুস্থ হোন তার পর দেখা যাবে কি হয়…?(আমি…রাগী ভাবেই বললাম)
— আচ্ছা বাবা ঠিক আছে রাগ করো কেনো…?(ওনি আমাকে টেনে ওনার বুকে জড়িয়ে বললেন)
— হুহ আমার আর রাগ…(আমি)
— কেনো তোমার রাগের আবার কি হলো…?(ওনি)
— আমি রাগ করি আর অভিমান করি কারো কি কোন কিছুতে যায় আসে…?(আমি খুবই অভিমানী হয়ে বললাম)
— আহারে কে তোমাকে কি বলেছে…আজ তার অস্তি রাখবো না বলো একবার…?(হুংকার দিয়ে বললেন যদি কথার আওয়াজ স্লো ছিলো)
— কেউ কিছু বলতেই চায় না…যেন আমি তার কিছুই না…?(আমি অভিমানি হয়ে বললাম)
— সরি গো বউ…বলার মত তো কিছুই নেই….(ওনি)
— কিছু নেই মানে…? মনে আছে আপনার সেদিনের কথা…?(আমি)
— কোনদিনের..?(ওনি)
— রিয়ার বিয়ের পর দিন আমি থাকতে চেয়েছিলাম বাট আপনি থাকেন নি কি যেন ইমার্জেন্সি কাজের জন্য চলে এসেছিলেন…?(আমি)
— হুহ মনে আছে তো… (ওনি)
— সেদিনও আপনি আমাকে বলেন নি…কি কাজ পড়েছিলো আপনার…? আপনি যদি আমাকে কাজের কথাটা খুলে বলতেন তাহলে কি আর আমি আপনাকে আটকানোর চেস্টা করতাম… যেতেই তো দিতাম বরং আপনার প্রতি রাগ টা আর হতো না…?(আমি খুবই আহ্লাদী হয়ে বললাম)
— সেদিন যদি তোমার কথা শুনে চলে আসতাম তাহলে কি আজ এত কিছু হতো….(ওনি অন্য মনস্ক হয়ে বললেন…)
আমি ওনাকে পাল্টা কিছু বলব তার আগেই শাশুড়ী মা ডাক দিলেন….
কাজের চাপে ওনার বলা শেষ কথাটা ভুলেই অনু..
কাজ শেষ করে রুমে এসে দেখি ওনি মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত। ফেসবুক চালাচ্ছেন…
ওনার পাশে শুয়ে পড়লাম। ওনি আমাকে নিজের বাহুতে জড়িয়ে নিয়ে মোবাইল নিয়েই আছেন।।আমিও আর কি করব ওনার ফেসবুকিং দেখছি।।।
হুট করে কি যেন মনে হলো ওনার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিলাম।।
ওনার প্রোফাইলে ডুকে দেখলাম। বাহ নাম টা খুব সুন্দর করেই দিয়েছেন। নিজের তিন নামের একটা বাদ দিয়ে ফেসবুক নেম দিয়েছেন ইফতি রহমান..সবার শুরুতে থাকা নামটা বাদ।
খুব সুন্দর সুন্দর ছড়া পোস্ট করেন ওনি… আগে কখনো ওনার প্রোফাইল দেখা হয় নি। দেখবো কি করে ওনি যে ফেসবুক ব্যবহার করেন তা-ই তো জানতাম না।
অনেকদিন আগের একটা মেমোরিস শেয়ার করেছেন–
“বড় আপুদের? প্রেমে ❤পড়ার
যদি কোন ক্লাস থাকে,?
তাহলে আমি সেখান কার স্টুডেন্ট?। ”
স্টাটাস টা বোধয় তার কলেজ জীবনের হবে।
বাহ বেটা তো অনেক স্মার্ট ছিলো।
হুট করে ওনার ইনবক্সে আসা একটা মেসেজ দেখে খুবই শকড খেলাম। মেসেজের চাইতে মেসেজ করা মানুষটার নাম দেখে অবাক হলাম।।
কিন্তু এটা…
চলবে…
#আতাউর_রহমান_হৃদয়