#মুখোশের অন্তরালে
#পর্ব ১৫,১৬
#কঠোর ভাবে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য
#সম্প্রীতি রায়
১৫
“খুনি সব্যসাচী”নিস্তব্ধতা ভেঙে বলে উঠলো দুর্জয়..”আগরওয়ালের ক্যারোটিড আর্টারি দুটো একই সাথে নিপুণভাবে কেটে..”
হঠাৎ গুনগুনিয়ে ভেসে আসা চলতি হিন্দি গানের কলি তাকে থামিয়ে দিল মাঝপথেই,গানের উৎস খুঁজতে গিয়ে চোখটা চলে যায় রিক্তর দিকে.. মনের সুখে গ্রাম বাংলার সৌন্দর্য দেখতে দেখতে গুনগুনিয়ে চলেছে সে..
~”রিক্ত!”
~”হ্যাঁ বল,” দুর্জয়ের স্বরে গতরাত্রের সুখস্বপ্নটা ভেঙ্গে গেলো ওর,
দিয়ার উন্নত ভরাট স্তন,সুগভীর কোমল নাভি,নির্মেদ টানটান দুধসাদা শরীরটা ওর মানসপটে এখনও জীবন্ত..
দু-মুহূর্ত ওকে দেখে নিয়ে দুর্জয় বলে উঠলো
~”মৃত্যুর আগে আগরওয়ালের উপর এনাস্থেশিয়া অ্যাপ্লাই করা হয়েছিল,may be ক্লোরোফর্ম..তারপর একইসাথে ক্যারোটিড আর্টারি দুটো ছিড়ে দেওয়া হয়,পাঁচ দশ মিনিটের মধ্যেই ভদ্রলোক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন..
~”But খুনি আগরওয়ালের বাংলো অব্ধি পৌঁছালো কি করে!”দুর্জয়ের কথার মাঝেই বলে ওঠে রিক্ত..
~”দীপান্বিতাই সব প্রশ্নের উত্তর ,আর হ্যাঁ,
পাবলিক প্রচন্ড ক্ষেপে আছে,কাল অরিন্দম এর মৃত্যুর পর যেটুকু সহানুভূতি দেখিয়েছিল.. আজ তার বিন্দুমাত্র অবশিষ্ট নেই,
হাইপ্রোফাইল ন্যাশনাল চ্যানেল গুলো কভার করছে নিউজটা, দিল্লি থেকে মহিলা কমিশনের একটা দল আসবে আজই,
May be কেসটা সিবিআই-এর কাছে ট্রান্সফার করার জন্য সুপারিশ করবে, ক্রিমিনাল পিটিশন ও ফাইল করতে পারে..ডিপার্টমেন্টে corrupted পুলিশের সংখ্যা নেহাত কম নয়, তা ওদের অজানা নয় মোটেই..”
ওদের কথোপকথনের মাঝে রিক্তর ফোনটা কর্কশধ্বনিতে বেজে উঠলো,ডিজিটাল অক্ষরে চোখ বুলিয়েই ফোনটা কেটে দিল ও..
সেদিনের কথা কাটাকাটির পর এই প্রথম অনুসূয়া দেবী তাকে ফোন করলেন,
আবার বাজছে!
~”তুই বলতে থাক দুর্জয়..”
কলটা আবারো কেটে সোজা ব্ল্যাকলিস্টে চালান করে দিল রিক্ত,”থাকো তুমি তোমার অহনাকে নিয়ে, বিড়বিড় করে উঠলো রিক্ত,
ওর ভ্রুকুটি নজর এড়ালো না দুর্জয়ের, হালকা গলাখাকরি দিয়ে বলে উঠলো,
~” CBI ইনভেস্টিগেশন হলে আমাদের মুখোশ খুলতে বাধ্য ..অরগানাইজেশনের কর্মকাণ্ডে সরাসরি যুক্ত থাকার সুবাদে দু’জনকেই জেলের হাওয়া খেতে হবে!”
~”কিন্তু ফাইল,ডাটাগুলো মিডিয়াতে লিক হলো কি করে!” অস্ফুটে বলে উঠলো রিক্ত,
~”রুলিং পার্টি নিজেও কনফিউজড এই ব্যাপারটা নিয়ে,বিশ্রী ভাবে ফেঁসে গিয়েছে ওরা.. সামনের ইলেকশনে এর প্রভাব পড়বে ভালোই, গদি উল্টে গেলেও অবাক হব না..”
“হু!”চিন্তিত ভাবে উত্তর দিলো রিক্ত,রুলিং পার্টির প্রাক্তন প্রতিনিধি অরিন্দম চৌধুরীকে নিয়ে যে মাতামাতি হবে এটাই স্বাভাবিক,
খুনী যে কতটা ধুরন্ধর এবার টের পাচ্ছে রিক্ত, প্রথমে ধৈর্য ধরে ধরে এভিডেন্স গুলো কালেক্ট করছে,তারপর সুযোগ বুঝে মেরে ফেলছে আর এমন দিনগুলোতে মারছে যাতে কেসটা ওদের দিকে ঘুরে যায়.. মেরে ফেলার পর পরই এভিডেন্স গুলোকে সামনে আসছে, প্রতিটা মুহূর্তকে নিপুণভাবে কাজে লাগিয়েছে খুনী,
তীব্র শারীরিক যন্ত্রণা দিয়ে মারার পরেও যশ-খ্যাতি সব ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছে!”
~”হলদিবাড়ির পরেই তো তোদের গ্রাম তাইনা?”গুমোট পরিবেশটা কাটানোর জন্য বলে উঠলো দুর্জয়..
~”হু!”সংক্ষেপে উত্তর টা দিয়ে সিটে শরীরটা এলিয়ে স্মৃতির পাতায় ডুব দিল রিক্ত..
এই গ্রামেই ওর বেড়ে ওঠা, হলদিবাড়ি হাইস্কুলে পাশ আউটের পর কলকাতার নামী কলেজে ভর্তি …অহনার সাথে পরিচয়ও সেই কলেজেই,
সোশ্যালে জিওগ্রাফি ডিপার্টমেন্টের মেয়েটাকে দেখেই আঠারো বছর বয়সী সদ্য যুবা ছেলেটির বুকে যে কিরকম তোলপাড় হয়েছিল,তা এখনো স্মৃতির মানসপটে জীবন্ত …
লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট বোধহয় ওটাকেই বলে!গ্রামের ছেলে হওয়ার সুবাদে রিক্ত ইংরেজিতে তখনো সড়গড় ছিল না,
তার জন্য প্রথম প্রথম জনসমক্ষে কম অপদস্থ হতে হয়নি ওকে!বোকা বোকা গ্রাম্য সরল ছেলেটাকে তখন থেকেই অহনার আগলে রাখার পর্ব শুরু,
সমবয়সি হওয়ার সুবাদে অহনার মিষ্টি শাসনের বাঁধন ছিল বড়ই মজবুত,
কবে যে রিক্তর কাছে সেই বাঁধনই গলার ফাঁস হয়ে বসেছিল কে জানে!
ডিপার্টমেন্টের অন্য ছেলেদের সাথে অহনার সামান্য কথোপকথনটুকু ওকে দিশেহারা করার জন্য যথেষ্ট ছিল..কি পড়বে, কি খাবে, কোথায় যাবে, সবকিছুতে রিক্তর একচেটিয়া প্রভুত্ব বিনা প্রশ্নে মেনে নিত মেয়েটা..
আচ্ছা,রিক্তর শার্টে লিপস্টিকের দাগ দেখে অহনার চোখের জল পড়াটা কী খুব ভুল ছিল,
অযাচিত প্রশ্ন করে বসায় অনাথ মেয়েটাকে নির্মম ভাবে মারতেও তো বাঁধেনি ওর.. নাকি নিজের সিদ্ধান্ত অন্যের উপর চাপিয়ে দেওয়াতেই ওর সুখ?উত্তর খুঁজে পায় না রিক্ত…
একটা ফুটফুটে মেয়ের শখ তো ওরই ছিল, যার মুখের দিকে তাকিয়ে জীবনের সব অপ্রাপ্তিগুলো ভুলে থাকা যায়..সারাদিন খেলবে, বকবক করবে!
কিন্তু বিয়ের পর পর কনসিভ করার অপরাধে অহনাকে চেকআপ করানোর নামে abort করার পরিকল্পনাও রিক্তরই ছিল,
দুজনের আকাশকুসুম স্বপ্নের বুনোট ছিড়ে রিক্ত যে কখন অহনাকে একাকিত্বের বেড়াজালে বন্দি করে দিয়েছিল কে জানে!
নাকি সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে নিজেকেই একাকিত্বের জালে বেঁধে ফেলেছে সে?
মন খুলে কথা বলার জন্য তো অহনাকেই পাশে পেয়েছিলো কেবল..বাদবাকি তো সবই…
~”এবার কোন দিকে?” তেমাথা মোড়টার সামনে অডিটা দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করে উঠলো দুর্জয়,
অঙ্গুলিলেহনে দিক নির্দেশ করে বাইরে উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল রিক্ত,
সামনের বিস্তৃত মাঠে রাতের পর রাত অহনার কোলে মাথা রেখে নিভৃত অভিসারযাপনে ব্যস্ত থাকত রিক্ত,বিয়ের পরও..
তাতে অনুসূয়া দেবী বিরক্তও হতেন না একটুও,বরং তার দৃষ্টিতে স্নেহমিশ্রিত প্রশ্রয় লেগে থাকত…অহনাও মা বলতে পাগল ছিল, অনুসূয়া দেবীর আদর শিশুর মতো উপভোগ করত,
শাশুড়ি বৌমার ভালোবাসা দেখে পাড়ার মেয়ে বৌরা তো হিংসা করত রীতিমতো!
আজ সেই মায়ের সাথেই তার সব বার্তালাপ বন্ধ..
সাফল্যের শিখর ছুঁতে গিয়ে নিজেই শিকড়টাই উপড়ে যায়নি তো! নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে বসে রিক্ত,
~”হারাধন তোর গ্রামের লোক ছিল না!”সামনের গাড়িটাকে ওভারটেক করতে করতে বলে উঠল দুর্জয়..
~”হুমম.. ঠাকুরদার আমল থেকেই ওদের পরিবার আমাদের সাথে যুক্ত,” একটু থেমে যোগ করল রিক্ত, “ঠাকুরদার সবথেকে বিশ্বস্ত ভৃত্য ছিল ওর বাবা,সেই পরম্পরা হারাধনও বজায় রেখেছিল..”
~”তো ওদের পরিবারের সদস্যের কথা তুই জানিস না!”দুর্জয় গলায় অবিশ্বাসের সুর..
~”আহ!জানিনা কখন বললাম,এখন কেউ জীবিত নেই এটাই বললাম,সেবারের বন্যায় একমাত্র হারাধন আর দুই মেয়ের একজন বেঁচে গেছিলো..”বিরক্তি ঝরে পড়লো ওর গলাতে “তাড়াতাড়ি চালাতো!ফাঁকা রাস্তা,গরুর গাড়ির মতো এগোচ্ছে!” প্রসঙ্গটা আরো ভাল লাগছিল না ওর..দীপান্বিতা মাহাতোর পরিচয় ওকে জানতেই হবে!
মিনিট দশেক পর একটা জীর্ণ বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল অডিটা, বাড়ি না বলে তাকে ঘর বলাই ভালো অবশ্য..
আগাছার জঙ্গলে উঠোনটা ঢেকে গিয়েছে প্রায়,
শৈশবে,রিক্ত হারাধনের দুই মেয়ের সাথে কত খেলেছে এই বাড়িতে,ছোট্ট একফালি জমিতে গাছ লাগিয়ে নিয়মিত পরিচর্যা করতে হারাধন কাকা..বাড়ি ছোট হলেও ঝকঝকে তকতকে করে রাখতেন তিনি, স্ত্রী বিয়োগের পরও সেই নিয়মের অন্যথা হয়নি..
~”কতদিন রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি কি জানে!” দুর্জয়ের কথায় সম্বিত ফিরল রিক্তর”চল এগুনো যাক”ঝোপঝাড় পেরিয়ে এগোতে লাগল দুজনেই।
~”এই বাড়িতে এখন কে থাকবে!”অস্ফুটে বলে উঠল দুর্জয়,”সিম টাওয়ার লোকেশন তো এখনো এখানে দেখাচ্ছে…”
ঝট করে দাঁড়িয়ে গেল রিক্ত,”খুব সাবধান..পাখি যেন না পালায়,খুনী নিরাপদ জায়গা হিসাবে বেছে নিয়েছে এই আস্তানাকে..”
অতি কষ্টে ঝোপঝাড় পেরিয়ে দুজনে ঘরে ঢুকে যা দেখল তার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিল না.. আসবাবহীন হতশ্রী ঘরের মধ্যিখানে একটা হ্যান্ডসেট সযত্নে রাখা,তার পাশে ধুলোমাখা একটা ফটো ফ্রেম..
অবাক হয়ে মুখ চাওয়াচাওয়ি করতেই ল্যাটেক্স গ্লাভসটা পড়ে নিল দুর্জয়,অতি সন্তর্পনে মোবাইলটা হাতে পুরে ফটো ফ্রেম এর ধুলো ঝাড়তে লাগলো সে..
হারাধন কাকার যুবক বয়সের ছবি, স্ত্রীয়ের কোলে মেয়েদুটোকে বসিয়ে স্ত্রীর পাশে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছেন ফটো ফ্রেমে!
~”এটা কি ড্রামা হচ্ছে!” উত্তেজনায় এবার ফেটে পড়ল রিক্ত, “এতটা পথ এলাম একটা পাতি হ্যান্ডসেট আর ভাঙাচোরা ফটো ফ্রেম দেখার জন্য!
ব্লাডি ক্রাপ!”উত্তেজনায় মেঝেতেই সজোরে পা ঠুকে বসলো রিক্ত,
~”নাহ্ এই ফোনটাতেও কিছুই নেই.”হতাশায় দুর্জয় বসে পড়লো নোংরা মেঝেতেই.. এতোখানি পরিশ্রম কি বিফলে গেল তবে!
~”ওই মালবিকাকে আমি ছাড়বো না!ওকে নরকদর্শন না করিয়েছি আমি জ্যান্ত অবস্থায়,তাহলে আমার নামও রিক্ত বাসু নয়!”বলে দুর্জয়ের অপেক্ষা না করেই কাঁটা ঝোপ ঝাড় মাড়িয়ে অডির দিকে ছুটে গেল রিক্ত,পিছু পিছু ওকে অনুসরণ করল দুর্জয়..
ব্লু মেটালিক অডিটা যখন বহুতল বিল্ডিং এর সামনে থামল, ক্লান্তিতে শরীর ভেঙ্গে পড়েছে দুজনারই,
~”চল!”তাড়া দিয়ে উঠলো ওকে দুর্জয়..
~”ওয়েট!দিয়া এখনও অ্যাপার্টমেন্টে,ওকে ওর ফ্ল্যাটে ড্রপ করিয়ে তারপর যা করার করা যাবে, তুই আপাতত তোর ফ্ল্যাটে ফিরে যা! বিকেলের মধ্যে ডেকে নেব তোকে,”
~”রামু! এই রামু!” উচ্চস্বরে রামশরণকে ডাকতে ডাকতে কলিং বেল টিপলো রিক্ত,কোন সাড়াশব্দ নেই!
~”কাজের সময় যে কোথায় থাকে!” বলে দরজাটা হাল্কা চাপ দিতেই খুলে গেল..
“একি!ভরদুপুরে দরজাটা খোলা রেখেছিস,”ঝেজিয়ে উঠলো রিক্ত..
মেঝেতে পা দিয়ে যেন চমকে গেল ও, সারা বাড়িময় যেন ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেছে! আসবাবপত্র সব উল্টানো, দরকারি ফাইল কাগজ পত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে একাকার, সোফার কুশন ছিড়ে তুলো অব্ধি বেরিয়ে এসেছে!
~”দিয়া!” সর্বশক্তি দিয়ে চিৎকার করে উঠলো রিক্ত, কোনো জবাব নেই!
পাগলের মতো ছুটে গেল ওদের বেডরুমে..ঘর খা খা করছে, দিয়া কোত্থাও নেই..
হঠাৎ শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত নেমে গেল রিক্তর,
মালবিকা দিয়াকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যায় নি তো !কিন্তু বাঁধন খুলবে কি করে…
পাগলের মত পা ফেলে মালবিকা ঘরের দিকে এগিয়ে গেল রিক্ত,পকেট থেকে চাবিটা বের করতেই দেখে তালাটা ভেঙে ফেলেছে কেউ,ভিতর থেকে গোঁ গোঁ করে আওয়াজ ভেসে আসছে একটা..
চরম আক্রোশে চাবিটা মেঝেতে ছুড়ে ফেলে দরজার পাল্লাটা খুলতেই ধপ করে মেঝেতে বসে পড়লো রিক্ত,
গরাদের পাশে দড়ি তেমন ভাবেই পড়ে আছে,কিন্তু বাঁধন কাটা..
মালবিকা তাতে আটকা নেই আর,
পালিয়েছে!
ঘরের অন্য কোনায় চোখ পড়তেই দেখে রামশরণকে বেঁধে রেখে গেছে শক্ত করে,মুখে সেই রুমালটাই গোজা!
হঠাৎই চোখটা চলে গেল ঘরের মেঝেতে,
কাঠের ফ্রেম দিয়ে চাপা দেওয়া চারকোনা ভাঁজ করা কাগজ পড়ে আছে সেখানে,
এক পা দু পা করে এগিয়ে গেল রিক্ত সেদিকে,
কাঁপা হাতে কাগজটা খুলতেই সর্বাঙ্গ ভয়ে কেঁপে ওঠে ওর.. গোটা গোটা অক্ষরে যেখানে লেখা আছে
ওয়েলকাম টু দ্যা ওয়ার্ল্ড OF AIDS,মিস্টার রিক্ত বাসু..
তোমার শরীরে এইচআইভির ভাইরাস ঢোকানোর জন্য দুঃখিত।
ইতি তোমার ফিয়ন্সে দিয়া
(দীপান্বিতা মাহাতো)
দিয়া! তার ফিয়ান্সে.. দিয়াই দীপান্বিতা মাহাতো !
মাথাটা কেমন টলে উঠলো ওর, ধপ করে বসে পড়ল মেঝেতেই,
তাই হয়ত শারীরিক সম্পর্কে এগোনোর চাপটা দিয়ার তরফ থেকেই এসেছিলো,!
প্রবল কামোত্তোজনায় রিক্ত তো কাল প্রটেকশন নিতেই ভুলে গেছিল!
দিয়া এইডস-এ আক্রান্ত …
নিঃশর্ত আত্মনিবেদনের কারণ রীক্তকেও মারণ রোগের নাগপাশে বেধে ফেলা!
ওহহ এত ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র!
হঠাৎই পিছন থেকে সজোরে রিক্তর নাকে একটা ভিজে রুমাল চেপে ধরল কেউ,
সুমিষ্ট গন্ধে কেমন আচ্ছন্নের মত নেতিয়ে গেলো রিক্ত..
আঁধারের অতলে তলিয়ে যেতে যেতে সুমিষ্ট কন্ঠটা কানে ভেসে এলো ওর,”মালবিকাকে মুক্ত করার জন্য ছলনাটা যে করতেই হল my dear ফিয়ান্সে!
মাথার নাগাল তুমি পেয়ে গেলেও, তা তোমার ধরাছোঁয়ার বাইরেই সোনা…
#মুখোশের অন্তরালে
#পর্ব ১৬
#কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য
#সম্প্রীতি রায়
রুদ্ধ আলো-বাতাসহীন ঘরের মধ্যিখানে বিবস্ত্র এক যুবতী মৃতের ন্যায় পড়ে রয়েছে, দৃষ্টি দরজার ফাঁক দিয়ে আসা এক চিলতে রোদ্দুরের দিকে স্থির..
হঠাৎই গাড়ি থামার আওয়াজে সচকিত যুবতীটি হামাগুড়ি দিয়ে ঘরের কোনায় সঁপে দেয় নিজেকে,নোনতা ধারায় সিক্ত গালদুটো গুঁজে দেয় দুই করতলের মাঝে…
মারুতি ওমনিটা এসে থামতেই শশব্যস্তে দরজাটা খুলে সালাম জানায় ছয়ফুট দীর্ঘদেহী ষন্ডামার্কা লোকটি..
~”আজকের ইনজেকশন পড়েছে?” সাদা পাঞ্জাবি পাজামা পাঞ্জাবি পরিহিত ভদ্রলোকটি গাড়ি থেকে নেমে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় তার দিকে,
~”এক লডকী খানা ছুয়া ভি নহি, ইসলিয়ে ডোজ নেহি দে সকা,লে নেহি পায়গী ও”
~”তোদের কী পুষি এসব এক্সপ্লানেশন দেওয়ার জন্য? খাচ্ছে না তো খাওয়াতে হবে জোর ..”
“দরকার হলে থার্ড ডিগ্রি অ্যাপ্লাই করতে হবে,ভুলিস না নিলাম হতে আর সপ্তাহখানেক বাকি!গায়ে-গতরে না বাড়লে কে কিনবে ওদের আর বেশিদিন এক জায়গায় ফেলে রাখাও রিস্কি..”কথার মাঝেই বলে ওঠে ইউনিফর্ম পরিহিত আরেকজন, ইতিমধ্যেই তিনজনের দলটা গাড়ি থেকে বের হয়ে এসেছে..
~”চল দেখি..
খাবেনা!ওসব নখরা এখানে পোষাবে না,” বলে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলেন করিডোরের দিকে,
নির্দিষ্ট ঘরের সামনে দাঁড়াতেই গুঙিয়ে ওঠা কান্নার আওয়াজটা শোনা যাচ্ছিল ভালোমতো..
~”তোরা এখানেই দাড়া!” ইউনিফর্ম পরিহিত অল্পবয়সেই ছেলেটা পা বাড়াতেই থামিয়ে দিলেন পাজামা পাঞ্জাবি পরিহিত ভদ্রলোকটি,
ভিতরে ঢুকে দরজাটাকে বন্ধ করে দিলেন সশব্দে,
“লাইটটা জ্বালাও!”নির্দেশ দেওয়া মাত্র ঘরের একমাত্র incandescent বালবটা জ্বলে ওঠে..ততক্ষনে ঘরের কোনায় সেধিয়ে গেছে যুবতীটি,দুই হাত দিয়ে নিজের প্রস্ফুটিত দেহবল্লরী ঢাকার আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে..
~”আরে ভয় পাচ্ছিস কেন! আমি কি তোর কি খেয়ে ফেলবো নাকি,”বলতে বলতে মেয়েটার পাশে বসে পড়েন তিনি..বিবস্ত্র যুবতীর উন্মুক্ত পিঠ কোমরে নিজে আদর বাসা ঢালতে থাকেন সযত্নে..
~”প্লিজ আমাদের ছেড়ে দাও!বাবা-মা চিন্তা করছে.. আমি ছাড়া ওদের কেউ নেই,আমায় ছাড়া মরে যাবে ওরা!”গুঙ্গিয়ে ওঠে যুবতীটি,”আমরা যে আপনাদের বিশ্বাস করেছিলাম”।
মুখ দিয়ে চুকচুক শব্দ করতে করতে আরো এগিয়ে যান ভদ্রলোক,”এইভাবে কাঁদতে আছে বল তোরাই তো রীক্তকে অনুরোধ করলি চাকরির জন্য,পয়সা কমানোর জন্য এর থেকে কী আর সহজ রাস্তা আছে বল?” বলে হাতটা নামাতে থাকেন আরো নিচে..
~”আমরা আর কিচ্ছু চাইনা.. চাকরি টাকা-পয়সা কিচ্ছুনা,তোমাদের পায়ে পড়ি আমাদের যেতে দাও,”আবারো গুঙিয়ে ওঠে মেয়েটি,
কান্নার দমকে কেঁপে কেঁপে উঠছে ওর উন্মুক্ত কিশোরী স্তনজোড়া, চোখটা সেখানে নিবদ্ধ রেখে বলে ওঠেন,”কোথায় যাবি? গ্রামে ?
তোদের বাড়ি..” কুটিল হাসি খেলে যায় তার চোখে-মুখে,
“এই নরক থেকে কেউ বের হতে পারে না..ভোগ্যপণ্যা নারীরা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মূলস্রোতে দিনের আলোতে অশুচি অস্পৃশ্যা বলে গণ্য হয়.. কি ফিরিয়ে নেবে তোকে!তোর বাপ!”আচমকাই মেয়েটির হাতের আগল সরিয়ে উন্মুক্ত স্তনজোড়া সজোরে পিষ্ট করতে থাকে অভ্যস্ত হাতে..”এটাই তোদের দুই বান্ধবীর ভবিতব্য”।
“ওয়াক থু!” বলে একদলা থুতু লোকটার মুখে ছুড়ে চকিতে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় যুবতীটি, ঘৃণায় ভয়ে তার চোখমুখ কুঁচকে গিয়েছে..
~”তবে রে!” ভদ্রবেশীর মুখোশটা খসে পড়ে নিমেষেই, বাঁ হাতের চেটো দিয়ে থুতুটা মুছে ঝাঁপিয়ে পড়ে তিনদিনের অনাহারক্লিষ্ট শরীরটার উপর..
দুর্বলের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুই হাতের শক্ত বাঁধনে বেঁধে সজোরে নিজেকে চালনা করতে শুরু করে সদ্য কুমারীত্ব খোয়ানো নারীদেহের অভ্যন্তরে..
~”দুর্জয়! আগরওয়াল, come ইনসাইড..”বলে বজ্রকন্ঠে চিৎকার করে ওঠেন তিনি,”আমার পর তোদের পালা! Be রেডি” বলে সর্বশক্তি দিয়ে নিজেকে চালনা করতে থাকেন তিনি”
ততক্ষণে লোলুপ হাসি খেলে গিয়েছে বাকি দুজনের মুখেও..
অনাহারক্লিষ্ট দুর্বল মেয়েটির আপ্রাণ বাধাদানের চেষ্টাকে গুঁড়িয়ে নিজেদের পৌরুষত্ব জাহির করে উঠে দাঁড়ায় তিন জন,ইতিমধ্যেই সদ্য ধর্ষিত যুবতীর যোনিপথ থেকে নির্গত রক্তের সরু রেখা মেঝেটা ভিজিয়ে দিচ্ছে ক্রমশ..
~”এবার তোর প্রিয়সখীর পালা! দেখবো কতক্ষণ থাকে তোদের দুজনের দেমাক,” বলে এক দলা থুতু মেয়েটার মুখে ছুড়ে পাজামা আটকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি..
রক্তের সরু রেখাটা মাড়িয়ে মৃতপ্রায় মেয়েটিকে ওই অবস্থাতেই ফেলে রেখে দরজাটা বন্ধ করে দেন সশব্দে..
~”ঘন্টাখানেক বাদে দেখবি তো রাজি হলো কিনা!তারপর ওর প্রিয়সখিকে রাজি করানোর পালা!”বলে অন্য ঘরগুলো ঘুরে দেখতে উদ্যত হলেন তিনি,
~”এক ঘন্টার অপেক্ষা কেন? এখনি দেখে নাও”ইউনিফর্ম পরিহিত যুবকটির যেন আর তর সইছেনা!
~”তোমার মত টগবগিয়ে ছুটতে তো পারিনা বাপু! জাদুদণ্ডকে বিশ্রাম দিতে হবে তো..বয়স হচ্ছে বলে কথা!” খিকখিক করে হেসে পা বাড়ান সামনের দিকে,
একে একে ঘরগুলোকে পর্যবেক্ষণ করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত ভদ্রলোকটি,
হরমোনাল ইনজেকশনে কাজ দিচ্ছে ভালোই ,একমাসেই এতটা ইমপ্রুভমেন্ট হবে ভাবতে পারেননি তিনি, টুসটুসে ডাঁসা পেয়ারা হয়ে উঠেছে সবগুলো..
দিল্লি মুম্বাইয়ে পাচার করলে কমসে কম লাখখানেক তো আরামসে পকেটে ঢুকবেই,যদিও কুমারী কিশোরী মেয়েদের চাহিদা সর্বাধিক তবুও গায়ে-গতরে যা বেড়েছে,খরিদ্দার একবাক্যে রাজি হতে বাধ্য..
যদিও এই মেয়েগুলোর দাম আরবিয়ান কান্ট্রিগুলোতে কোটি ছড়াবে, তবুও ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে হুজ্জতি অনেক,বিপদ ওত পেতে রয়েছে সর্বত্র,
সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা বোধহয় এটাই!নামমাত্র মূলধনে লাভ আশাতীত,
~”অরিন্দম, এবার যাওয়া যাক!”ঘোরটা কেটে গেল সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত ভদ্রলোকের, কব্জিটা উল্টে হাতঘড়িটা দেখে পা বাড়ালেন তিনি,
পাল্লাটাই খুলতেই ভীষণরকম ধাক্কা খেলেন তিনি !মেয়েটা মেঝেতে পড়ে রয়েছে ওই ভাবেই, মুখটা হাঁ করে নগ্ন নিষ্প্রাণ চাহনি মেলে আছে সিলিঙের দিকে ..
~”এ তো মর গয়ী!” সঙ্গের নাদুসনুদুস ভদ্রলোকটি আর্তনাদ করে উঠলেন প্রায়,
রক্তের সরু ধারাটা কখন যে পুরো মেঝেটা ভিজিয়ে জবজবে করে দিয়েছে কে জানে!
ঠান্ডা শরীরটাকে দুহাতে ধরে ঝাঁকাতে ঢাকাতে ঝাকাতে বলে উঠলো,”এ শালী উঠ!উঠ না রেন্ডি!” নাহ্,কোনো সাড় নেই, ধুকপুকানিও শোনা যাচ্ছেনা ..কাঁপতে কাঁপতে বডিটাকে একঝটকায় মেঝেতে ফেলে পিছনে হাটতে শুরু করলেন তিনি,
কম তো জীবনে অপরাধ করেনি, গুন্ডাবাজী,মারদাঙ্গা,পাচার-ধর্ষণ কিচ্ছু বাদ রাখেনি, তাই বলে একেবারে খুন! তাও আবার ধর্ষণ করে খুন!
রুলিং পার্টি জানতে পারলে জ্যান্ত পুঁতে দেবে একেবারে,খবরটা মিডিয়া পাবলিকেও গোগ্রাসে গিলে খাবে..
পাচার হয়ে যাওয়া মেয়েদেরকে নিয়ে জনতা ততটা মাথা না ঘামালেও
“নির্মমভাবে ধর্ষণের পর খুন”
খবর টা ধামা চাপা দেওয়া কি এতই সোজা!
আর যাই হোক বিক্রি করে দেওয়ার পর দায়িত্বের বোঝা শেষ,কিন্তু এই পাপের বোঝা কার উপর চাপাবেন তিনি!পুড়িয়ে দেবেন.. নাকি ভাসিয়ে দেবে গঙ্গায়..ভবিষ্যৎ কি হবে এই লাশটার!
ক্রিংক্রিং
মুঠোফোনে কর্কশ শব্দে সম্বিত ফিরল তার,
~”সর্বনাশ হয়ে গেছে রিক্ত, সবকিছু শেষ হতে বসেছে!” হাউমাউ করে উঠলেন তিনি,”যে মেয়ে দুটোকে তুই পাঠিয়েছিস তার মধ্যে একজন মারা গেছে!এটার কিছু ব্যবস্থা কর,যা টাকা লাগবে আমি দেবো..”
ওপ্রান্তের নির্দেশ শুনে স্বস্তির চিহ্ন ফুটে উঠল তার চোখে-মুখে,কলটা ডিসকানেক্ট করে বলে উঠলেন “সব মেয়েগুলোর গায়ে জামা-কাপড় চাপিয়ে ট্রাকে তুলে দে,
দুর্জয়,আগরওয়াল ওদেরকে গাইড কর, কাগজপত্র রেডি রাখ,কুইক!”
এমন সময়,
~”শাহাব একঠো লারকি মিসিং hain, টোটাল বিশ থি, ও নয়ী লডকি মরনে কে বাদ উন্নিশ বচি থি,লেকিন অভি আঠাড়া hain! কাহা…”কথাটা শেষ করার আগেই সজোরে থাপ্পড়টা এসে পড়ে ষন্ডামার্কা লোকটার গালে,”শুয়োরের বাচ্চা! মাসমাইনে তোর পিছনে তাতিয়ে গুঁজে দেব বাবাগো বলার সময় পাবিনা! খোঁজ খোঁজ, সর্বনাশ হয়ে যাবে আমার,এত বড় সাহস অরিন্দমের কবল থেকে পালাচ্ছে!”
মিনিট দশেকের মধ্যেই হর্নের আওয়াজ শোনা যেতেই সবাই যে যার পজিশনে রেডি, ততক্ষণে গোটা বাড়িটাকে শ্মশান পুরীর করাল নিস্তব্ধতা গ্রাস করেছে,
~”দিপু!আমার দিপু মা, কোথায় আছিস তুই!” গাড়ি থেকে নেমে কাঁদতে কাঁদতে ছুটতে উদ্যত হন মধ্যবয়স্ক ক্ষয়াটে রোগা চেহারার লোকটি,
~”হারাধন কাকা, দাড়াও দাড়াও,”বলে তাকে নিরস্ত করার চেষ্টা করে ওঠেন সঙ্গের স্যুটেড-বুটেড ভদ্রলোকটি..
~”রিক্তবাবা আমায় আমার মেয়ে খুঁজে দাও!ও কিছুতেই বুড়ো বাপটাকে ফেলে পালাতে পারেনা, আমি ছাড়া যে আর কেউ নাই ওর,”কাঁদতে কাঁদতে মুখের শিরা উপশিরাগুলো ফুলে উঠেছে প্রায়,”কোথায় গেলি মা,বুড়ো বাপটার উপর এত রাগ!”বলে রিক্ত কে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেই মিষ্টি ডিজে রুমাল সজোরে তার নাকে চেপে ধরে কেউ..ওহহ ,
আঁধারের অতলে তলিয়ে যেতে যেতে অস্ফুটে বলে ওঠেন “দীপান্বিতা..মা আমার!”
~”লোকটা কি তোর গ্রামের বাসিন্দা? কদ্দিয়ে জোগাড় করলি একে,”মেঝেতে শায়িত হারাধনের দিকে নির্দেশ করে বলে ওঠে সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত ভদ্রলোক,”আর কার নাম ধরে ডাকছিল!”
~”যে মেয়েদুটোকে পাঠালাম তাদের একজনের বাবা হারাধনকাকা,বাড়ির ভৃত্য,মেয়েকে ডাকছিল.. সবগুলোকে ট্রাকে ভরা হয়ে গেছে?” সিপ দিতে দিতে বলে ওঠে রিক্ত..
~”কিভাবে টেনে আনলি লোকটাকে!”অবাক হয়ে জানতে চাইলেন পুলিশের ইউনিফর্ম পরিহিত ভদ্রলোকটি,
~”বললাম যে তোমার মেয়ের খবর পেয়েছি,সেই বুঝিয়েই নিয়ে আসলাম! খুঁজে পেলি যে মিসিং ছিল,”প্রসঙ্গ টা যেনো এড়িয়ে যেতে চায় স্যুটেড-বুটেড ভদ্রলোকটি,
“হ্যাঁ এই লোকটার মেয়েটাই পালাচ্ছিল, জানালার গরাদ ভেঙে লাফিয়ে পড়েছিল পিছনের ঘাসজমিতে,ভাগ্যিস দেখেছিল বলবীর! হাসতে হাসতে বলে উঠলো সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত ভদ্রলোকটি, “যাক বাবা সব ভালো যার শেষ ভালো!
নরকে প্রবেশের পরও বাবাকে শেষবারের মতো দেখতে তো পারবে!”হো হো করে হেসে ওঠে চারজনেরই,”অন্য মেয়েগুলোর ভাগ্যে তো এটাও থাকে না!”
পাশের ঘরে বন্দীনি মেয়েটার কানে ভেসে আসে সবকিছুই,চোয়াল শক্ত করে কান্নাটা আটকানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে ওঠে দিপু..
~”তবে শাস্তি তো কমই দিয়েছি!”
~”শাস্তি!”
~”আমাদের সাথে লুকোচুরি খেলার শাস্তি! বলবীরের রাতের খাবারের জন্য ওকে বরাদ্দ করা হয়েছে,
কমের উপর দিয়েই যাবে, চাখবি নাকি?”বলে গুটকা চিবানো দাঁতটা বার করে হেসে ওঠে,
~”না!” সংক্ষেপে উত্তর দিয়ে চুপ করে গেল স্যুটেড-বুটেড লোকটা,
সাত আট বয়সের পর থেকে দিপুর সাথে আর খেলাধুলা না করলেও স্মৃতির পাতা থেকে মুছে ফেলতে পারেনি তাকে,
যতই হোক,দিপু তার ছেলেবেলার খেলার সাথী,তাকে ভোগ করতে নিজের বিবেকে বাধে বৈকি,
কিন্তু অরিন্দমের কমিশন ছাড়া ফিল্মটা প্রডিউস করা একপ্রকার অসম্ভব.. তাই মা যখন ওই দুই মেয়ের চাকরির সুপারিশ করেছিল রিক্তর কাছে,তখন দুবার ভাবতে বসেনি সে, সোজা পাঠিয়ে দিয়েছিল অরিন্দমের কাছে,
~”আর হারাধন কাকার জ্ঞান ফিরবে কখন?” হালকা গলায় বলে উঠলো রিক্ত..
~”আর বেশিক্ষণ বাকি নেই!যখন জ্ঞান ফিরবে তখন আমরা ভুস!” বলে ফ্লাইং বার্ডের ভঙ্গি উঠল সাদা পাঞ্জাবি, “জ্ঞান ফেরার সাথে সাথেই পুলিশকে ইনফর্ম করার দায়িত্ব তোর,দুর্জয়!” বলে ইনফর্ম পরিহিত ছেলেটির দিকে নির্দেশ করেন তিনি..”মাঝখানে লোকটা নিজের মেয়ের বান্ধবীকে ধর্ষণ করার দায়ে ফেঁসে যাবে!”
~”আর আমার কমিশন! আগের বারের থেকে অনেক বেশি চাই, একটা বিগ বাজেটের মুভি প্রডিউস করার ইচ্ছা রয়েছে..” একটু থেমে যোগ করল,”যতই হোক এবার আমি না থাকলে তোকে কিন্তু কেউ বাঁচাতে পারত না!”
~”জো হুকুম মেরে আকা! বলতে বলতে মেঝেতে পড়া হারাধনের অজ্ঞান দেহটার দিকে তাকিয়ে নিল একবার,”মেয়ের ডাসা বান্ধবীকে ধর্ষণেচ্ছা হয়তো অনেকের’ই অবচেতনের লুকিয়ে থাকে, দুমুহূর্ত থেমে আবার বলে উঠলেন,”আদালতে কিন্তু এটাই প্রমান করতে হবে রিক্ত!
লাগে টাকা দেবে অরিন্দম!
আর হ্যা,আমরা চার জন ছাড়া কেউ যেন এই ব্যাপারে বিন্দুবিসর্গ জানতে না পারে,কেউ না!”
পাশের ঘরে বন্দিনী মেয়েটা নিঃশব্দে ঠোঁটটাকে কামড়ে কান্নাটা আটকানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে ওঠে..
~”সত্যি রিক্তর জুড়ি মেলা ভার!গ্রামের সরল সাদাসিদে মেয়েগুলোকে চাকরির প্রলোভন দিয়ে এখানে পাঠানো তো বুঝলাম, কিন্তু তারপরে ধর্ষিতার খুনের দায় ধর্ষিতার বান্ধবীর বাবার উপর চাপানো!উফফ splendid!”
~”ঘন্টা পেরোতে আর দেরি নেই,হারাধনের জ্ঞান ফিরলো বলে!তোমরা গাড়িতে ওঠো সব,” বলে তাড়া দিয়ে উঠলো ইউনিফর্মড ভদ্রলোকটি
—- —– ——– ——————————— —–
চোখের পাতার টা খুলতেই ঝাপসা দৃষ্টিতে চারপাশটা ধোঁয়ার মতো লাগছিল রীক্তর,
ক্লোরোফর্মের প্রভাব একটু একটু করে কেটে উঠতে শুরু করেছে,
চশমাটা ধস্তাধস্তিতে কোথায় ছিটকে গিয়েছে! ওটা খোঁজার জন্য হাতড়াতেই চ্যাটচ্যাটে পদার্থে আঙ্গুলের ডগা টা ভিজে উঠলো,
চোখের দৃষ্টি তখনও ঝাপসা,হাতটাকে নাকের কাছে এনে বোঝার চেষ্টা করতেই গাটা গুলিয়ে উঠলো যেন,
এ যে রক্ত! জমাট বাঁধা রক্ত!
হড়বড় করে উঠতে যেতেই চ্যাটচ্যাটে নোনতা তরলে পিছলে মুখ থুবড়ে পড়ল নোংরা মেঝেতে
আশা করি ভালো লাগছে সবার,সাথে থাকবেন সবাই,
(দিয়াকে রিক্ত চিনতে কেন পারেনি সেই রহস্য উন্মোচন হবে আগামী পর্বে)